এরশাদ মজুমদার
সোনালী ব্যাংক, যা এর আগে ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান ছিল, তার সাথে এক সময় আমার খুব ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান ছিল সরকার নিয়ন্ত্রিত। প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল পূর্ব পাকিস্তানের প্রধান রফতানি সম্পদ পাট শিল্পে অর্থায়নের জন্য। পূর্ব পাকিস্তানে এর প্রথম শাখা নারায়ণগঞ্জে খোলা হয়। যদিও সদর দফতর ছিল করাচিতে। ন্যাশনাল ব্যাংক সরকারের ট্রেজারি হিসেবেও কাজ করত। এক সময় বাঙালি উদ্যোক্তারা পাটকল স্থাপনের উদ্যোগ নিলে ন্যাশনাল ব্যাংক অর্থায়ন করে। বাংলাদেশ হওয়ার পর এটা ষোল আনা সরকারি মালিকানায় সোনালী ব্যাংক হিসেবে যাত্রা শুরু করে। পাকিস্তান আমলে এটা ছিল সরকারি ও বেসরকারি মালিকানার যৌথ প্রতিষ্ঠান। সমাজতান্ত্রিক চিন্তাচেতনার কারণে সরকার তখন সব ব্যাংক-বীমা জাতীয়করণ করে মালিকানা সরকারের হাতে নিয়ে নেয়। আর যায় কোথায়? শুরু হলো ব্যাংকগুলোর দুর্গতি। অর্থ মন্ত্রণালয় সরকারের প থেকে মালিকানা দেখাশুনা করেন। লাভ-লোকসানের ব্যাপার নেই সরকারের কথা শুনলেই হলো। সরকারের কথা মানে সচিবের কথা, মন্ত্রীর কথা, এমপির কথা আর সর্বশেষ একান্ত সচিব ও সহকারী সচিবের কথা। এভাবেই ৪২ বছর ধরে সরকারি ব্যাংকগুলো চলছে। ইউনিয়ন নেতাদের কথা বলতে ভুলে গিয়েছিলাম। ইউনিয়ন নেতারাও দামি গাড়িতে চলাফেরা করেন। বিচারপতি সাত্তারের আমলে ব্যাংকগুলোকে জিম্মি করে ফেলেছিলেন ইউনিয়ন নেতারা। বিচারপতি সাত্তার এক হাজার ১০০ কর্মচারীকে এক দিনে বরখাস্ত করে ইতিহাস সৃষ্টি করেছিলেন। তারপর নেতারা কিছুটা দমে গিয়েছিলেন। কিন্তু রাজনৈতিক প্রভাব থেকে ব্যাংকগুলো কখনই মুক্ত হয়নি। বেসরকারি বা প্রাইভেট ব্যাংকগুলোকে নিয়মিত চুষে খাচ্ছেন পরিচালকেরা। আর সরকারিগুলোকে খাচ্ছেন সরকারি লোকেরা। এখন সরকারি ব্যাংকগুলো রক্তশূন্য হয়ে পড়েছে। হয়তো বেশি দিন আর বাঁচবে না। ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কায় বহু সরকারি ব্যাংক আছে। সেখানে কেউ ব্যাংকগুলোকে চুষে খাচ্ছে না। সরকারি ব্যাংকগুলোর সম্পদ ও দায়দেনার হিসাব করলে এগুলোতে এখন আর তেমন কিছু নেই। চাহিবামাত্র সাধারণ মানুষের আমানতের টাকা ফেরত দিতে পারবে না।
আপনি যদি কখনো সোনালী বা অন্য যেকোনো সরকারি ব্যাংকে যান দেখতে পাবেন কিছু মৃত মানুষ বসে আছেন, তাদের জীবনী শক্তি ফুরিয়ে গেছে। আমানতকারী বা গ্রাহক দেখলে এরা বিরক্ত হন। তাদের জীবনহীন জীবনের হয়তো কোনো কারণ আছে। বেসরকারি ব্যাংকের তুলনায় এরা অনেক কম বেতন পান। ফলে তারা হয়তো হতাশায় ভোগেন। অপর দিকে বেসরকারি ব্যাংকের তরুণ অফিসারেরা বলেন, এরা সরকারি ব্যাংকের অফিসারদের তুলনায় ১০ গুণ বেশি কাজ করেন। দেশের প্রথম বেসরকারি ব্যাংক ন্যাশনাল ব্যাংক প্রতিষ্ঠার সময়ে আমি এর সাথে জড়িত ছিলাম আমার মুরুব্বি হায়দার চৌধুরীকে সহযোগিতা করার জন্য। ব্যাংক শুরু হওয়ার আগেই প্রথম নিয়োগ পায় আমার বন্ধু মোহাম্মদ আলী পান্নু। সে উত্তরা ব্যাংক ছেড়ে হায়দার চৌধুরীর সাথে যোগ দিয়েছিল। ব্যাংক শুরু করার প্রাথমিক কাজগুলো করার ব্যাপারে পান্নু হায়দার চৌধুরীকে সহযোগিতা করেছিল। এ সময়ে হায়দার চৌধুরী সম্পর্কে দু’টি কথা না বললে অবিচার করা হবে। তিনিই ন্যাশনাল ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা। তিনিই সরকারি ব্যাংকের চাকরি ছেড়ে ব্যাংক প্রতিষ্ঠার জন্য উদ্যোগী হন। ন্যাশনাল ব্যাংকের উদ্যোক্তাদের বেশির ভাগই ছিলেন ফেনীর ব্যবসায়ী। কারণ চৌধুরীর বাড়ি ফেনী। চট্টগ্রাম থেকে উদ্যোক্তা জোগাড় করেছেন গোলাম রহমান। তিন কোটি টাকার পরিশোধিত মূলধন জোগাড় করতে মাথার ঘাম পায়ে ফেলতে হয়েছে। এ জন্য ২৬ জন উদ্যোক্তা নিয়ে ন্যাশনাল ব্যাংকের যাত্রা শুরু হয়েছিল। মাত্র কয়েকজন উদ্যোক্তা ২৫ লাখ টাকা করে দিয়েছিলেন। বেশির ভাগই দিয়েছেন ১০ লাখ টাকা করে। ফেনী ও চট্টগ্রামের উদ্যোক্তাদের ভেতর দলাদলির ফলে ব্যাংকটি এখন ফরিদপুরের শিকদার গ্রুপের কাছে চলে গিয়েছে। শিকদার গোপনে বাজার থেকে বহু শেয়ার কিনেছেন। এখন তো একটি ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করতে ৪০০ কোটি টাকা লাগে। এটা হলো মূলধন। এর বাইরে অনুমতি লাভের জন্য খরচ করতে আরো ৪-৫ শ’ কোটি টাকা। অনেকেই ২৫ কোটি টাকার শেয়ার কিনেছেন ১০০ কোটি টাকা দিয়ে। এটাই প্রমাণ করে, গত ২৫ বছরে ব্যবসায়ীরা কী পরিমাণ সম্পদ বা টাকা জমিয়েছেন। বেশির ভাগ টাকাই হলো সরকারের পাওনা কর ও শুল্ক ফাঁকি দেয়ার টাকা। ১৯৮২-৮৩ সালের অনেকেই ১০ লাখের সাদা টাকা দেখাতে অম হয়েছেন। তখন বলা হয়েছিল ব্যাংক প্রতিষ্ঠায় বিনিয়োগ করলে সাদা টাকা লাগবে না। সরকারি ব্যাংক যত দরিদ্র হচ্ছে বেসরকারি ব্যাংকের মালিক বা উদ্যোক্তারা তত ধনী হচ্ছেন। বহু উদ্যোক্তা সরকারি ব্যাংক থেকে টাকা নিয়েও ব্যাংক করেছেন। পরে সরকারি ব্যাংকের কর্তাব্যক্তিদের নিজেদের ব্যাংকে চাকরি দিয়েছেন। আবার অনেক ব্যবসায়ী হাউজ বা গ্রুপ অবসর নেয়ার পর ব্যাংকারদের নিজেদের কোম্পানিতে চাকরি দিয়েছে। একজন ব্যাংকারকে আমি চিনি, যিনি বেসরকারি ব্যাংকের দ্বিতীয় বা তৃতীয় ধাপের অফিসার থাকার সময়ে নিজে ব্যাংক প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। ভদ্রলোক এখন আর জীবিত নেই। কিন্তু তার আত্মীয়স্বজন সবাই এখন ব্যাংকের ডিরেক্টর।
আজ এমন একটা সময়ে আমরা অতিক্রম করছি, যখন জনসেবা কাকে বলে আমরা ভুলতে বসেছি। যে দিকে তাকাবেন, দেখবেন আপনি অথৈ সমুদ্রে হাবুডুবু খাচ্ছেন। মন্ত্রীরা বলেন, তারা জনগণের প্রতিনিধি। সরকারি কর্মচারীরা বলেন, তারা জনগণের খাদেম। জনগণের খেদমত করাই তাদের কাজ। বলুন দেখি কোন অফিসে গেলে আপনি দেখবেন একজন সেবক এগিয়ে এসে বলবেন, ‘সালাম, আমি আপনার জন্য কী করতে পারি’। স্কুল, কলেজ, মাদরাসা, মক্তব, হাসপাতাল, পোস্ট অফিস, সঞ্চয় অফিস, তহশিল অফিস, জমির জমা খারিজ অফিস যেখানেই যান না কেন, আপনাকে টাকা দিয়ে কাজ করাতে হবে। এমনকি ওয়াসা অফিস, গ্যাস অফিস বা বিদ্যুতের অফিসের কথা আর কী বলব। এই দেখুন না, গ্যাসের কানেকশন বন্ধ, কিন্তু কানেকশন হচ্ছে নিয়মিত। আপনার ডিমান্ড নোট জমা দেয়া থাকলে দালাল আপনার বাড়িতেই আসবেন। বলবেন স্যার আমরা কানেকশন নিয়ে দেবো, একটু বেশি টাকা লাগবে। সেই বেশি টাকাটা হলো কয়েক লাখ টাকা। ওই দিকে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান সাহেব বলছেন, বাসাবাড়িতে কানেকশন দেয়ার মতো গ্যাস তাদের আছে। কিন্তু সবজান্তা সাবেক সিএসপি অফিসার, যিনি এখন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা তিনি বলছেন, আমরা এখন বাড়িতে গ্যাস দিতে পারব না। এখন চার দিকে গুঞ্জন উঠেছে নির্বাচনের আগে ভোটের জন্য সরকারের গ্যাস কানেকশনের আরোপিত নিষেধাজ্ঞা উঠে যাবে।
১৯৭২ সালে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগের সীমা ছিল মাত্র ১০ লাখ টাকা। কারণ, তখন বঙ্গবন্ধু দেশের সমাজতন্ত্র কায়েম করতে চেয়েছিলেন অসমাজতান্ত্রিক আওয়ামী কর্মীদের দিয়ে। আমার আজো বিশ্বাস হয় না শেখ মুজিব এমন একটা কাজ করতে পারেন। ভারত তখনো সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির দিকে যায়নি। ফলে যা হওয়ার তাই হলো। সে সময়েই এস মুজিবুল্লাহ নামে এক ভদ্রলোক ইত্তেফাকে লিখলেন, ‘দে মা তবিলদারি, লুটে পুটে খাই।’ সমাজতন্ত্রের নামে দেশে শুরু হয়ে গেল লুটপাট। যারা পান দোকান চালাতে পারেন না তাদের করা হলো বড় বড় মিলের প্রশাসক। রাতারাতি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা হয়ে উঠলেন ধনবান। তখন বেসরকারি বিনিয়োগের সীমা ১০ লাখ টাকা রাখলে চলে না। এবার করা হলো তিন কোটি টাকা। শুরু হলো পুঁজির বিকাশ। স্বাধীনতার সুফল হলো গত ৪০ বছরে এক শ’ টাকার মালিক এক লাখ টাকার মালিক হয়েছেন। রাজনীতিবিদেরাও যেকোনোভাবেই হোক সুখে শান্তিতে আছেন। মতায় থাকলে নিজেরাই কিছু করে নিচ্ছেন। মতার বাইরে থাকলে ব্যবসায়ীরা তাদের কিছু করে দেন। গত ৪০ বছরে দেশে দরিদ্রের সংখ্যা বেড়েছে। দৈনিক মজুরি দুই টাকার জায়গায় দুই শ’ টাকা হয়েছে। তবে যারা দুই টাকার সময়ে দিনমজুর হিসাবে কাজ করতেন, এখনো করেন। আগে তাদের বউয়েরা বাইরে কাজ করতেন না, এখন করেন। বার্ষিক প্রবৃদ্ধি যদি ছয় পার্সেন্ট হয়, গরিবের প্রবৃদ্ধি হয় এক পার্সেন্ট। ফলে দারিদ্র্য বেড়েই চলেছে। বার্ষিক বাজেট যদি দুই লাখ কোটি টাকার মতো হয় সেখান থেকে ঘুষ ইত্যাদি বাবত ব্যবসায়ী ও সরকারি কর্মচারীদের পকেটে চলে যায় ৫০ হাজার কোটি টাকা। পাকিস্তান আমলে আমরা লেখালেখি করেছি পূর্ব পাকিস্তানের পুঁজির বিকাশের জন্য। ৪০ বছরে পুঁজির বিকাশ ভালোই হয়েছে। জাতীয় নির্বাচনে এক হাজার লোক অংশ নিলে প্রত্যেককে এক কোটি টাকা করে দেয়ার মতো লোক এখন আছে। পুরো সংসদকে নিজের প্রভাবে রাখার মতো প্রভাব প্রতিপত্তি অনেকের আছে। রাষ্ট্র এখন ধনীদের খেদমতে ব্যস্ত। ফাঁকে বেশ খেদমত পাচ্ছেন রাজনীতিক ও সরকারি কর্মচারী। যে কথা বলে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল, তার কিছুই হয়নি। হাসপাতালে চিকিৎসা নেই, স্কুলে সিট নেই, শিতি বেকারদের চাকরি নেই। চার দিকে অশ্লীল কদর্য অর্থ দেখলে মাথা খারাপ হয়ে যায়। গুলশান মেইন এভিনিউতে নাকি প্রতি কাঠা জমি দশ-পনেরো কোটি টাকায় বিক্রি হয়। কোনো দরাদরি নেই, একেবারেই গোপনে লেনদেন হচ্ছে। মতিঝিলেও নাকি একই অবস্থা। কিন্তু রাজউক বা সরকারিভাবে জমির দাম এখনো কয়েক লাখ টাকা। এমনকি পূর্বাচল বা ঝিলমিলে জমির বরাদ্দপত্র বিক্রি হয় কাঠা পাঁচ লাখ টাকা করে।
যেমন ধরুন, বর্তমান সরকার রাজনৈতিক কারণে ছয়-সাতটা ব্যাংক স্থাপনের অনুমতি দিয়েছে। যারা অনুমতি পেয়েছেন, তারা কেউই ব্যবসায়ী নন। তারা প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। ব্যাংকের অনুমতিপত্রের কাগজ বাজারে বেচা হচ্ছে। যিনি অনুমতি পেয়েছেন তার এক পয়সাও পুঁজি লাগবে না। এর মানে তিনি রাতারাতি ২০-২৫ কোটি টাকা মালিক হয়ে যাবেন। ৪০ বছর ধরে রাষ্ট্র কিছু লোকের মাধ্যমে ব্যবহৃত হচ্ছে ও শোষিত হচ্ছে। কিন্তু কারো কোনো হুঁশ নেই। অন্ধভাবে কেউ এ দল সমর্থন করছে, কেউ ওই দল সমর্থন করছে। সাধারণ মানুষের কথা বাদ দিলাম। শিতি লোকেরাও বহু ভাগে বিভক্ত। বাংলাদেশের পে আমি কাউকে দেখতে পাই না। বিদেশে গিয়েও বাংলাদেশের লোকেরা বিভিন্ন দলে বিভক্ত। লেখাটি শুরু করেছিলাম আমাদের রাষ্ট্রের জনসেবা নিয়ে কিছু কথা বলব বলে। শুধু জনসেবার কথা বলতে পারলাম না। রাষ্ট্রটাই যখন কিছু মানুষ দখল করে নিয়েছে তখন জনসেবা আর কে করবে। বহু স্বপ্নের দেশ আমাদের এই বাংলাদেশ। নেতা ও মুরুব্বিরা আমাদের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন পাকিস্তান হলে এ দেশের মানুষ সুখী হবে, বিশেষ করে গরিব মুসলমানেরা বঞ্চনা থেকে মুক্তি পাবেন। কিন্তু স্বপ্ন ভঙ্গ হলো। দুই মুসলমান একসাথে থাকতে পারলেন না। হিসাব-নিকাশ পাওনা-দেওনা নিয়ে মারামারি লেগে গেল। শেষ পর্যন্ত যুদ্ধ বেধে গেল। পূর্ব পাকিস্তানের মুসলমান বা বাঙালি নেতারা ভাবলেন দেশ স্বাধীন হলে কেউ আর বাঙালিদের শোষণ করতে পারবে না। এবারো স্বপ্নভঙ্গ হলো বা হতে চলেছে। ৪০ বছরেও সাধারণ মুসলমান বা বাঙালিদের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয়নি, যা হওয়ার কথা ছিল। কারণ দেশ বা রাষ্ট্রটা এখন খুব শক্ত লুটেরাদের হাতে পড়ে গেছে। ১৯৭২ সালে লুটেরাদের সাইজ ছিল ইঁদুরের মতো। এখন হাতির মতো। এক শ্রেণীর রাজনীতিক আর লুটেরা মিলে দেশটাকে দুর্নীতির স্বর্গরাজ্য বানিয়ে ফেলেছে। এই তো দেখুন না, চলমান সরকারের আমলে দুর্নীতি রাষ্ট্রীয় নীতিতে পরিণত হয়েছে। লুটেরারা দাঁত বের করে হাসছে। দেশের মানুষকে পরাজিত করে এ যেন যুদ্ধের বুটি। এ সরকার দুর্নীতির সাগরে ডুবে গেছে। কিন্তু তবুও কোনো শরম নেই। বিশ্বব্যাংকের কাছে ঋণ চায় আবার বিশ্বব্যাংকের বিচার চায়। হলমার্কের ডাকাতেরা ব্যাংক থেকে সবার অনুমোদন নিয়ে চার হাজার কোটি টাকা নিয়ে গেল, সেই নিয়েও সরকারি দল রাজনীতি করছে। রামু বা উখিয়াতে বৌদ্ধমন্দিরগুলো জ্বালিয়ে দিয়ে সারা বিশ্বের কাছে জাতি হিসেবে আমাদের হেয় করেছে, সেখানেও সরকারি দল রাজনীতি করছে। প্রধানমন্ত্রীর বলা উচিত ছিল এমন হিন কাজ যারা করেছে তাদের আমরা শাস্তি দেবো এবং বিশ্ববাসীর কাছে মা চাচ্ছি। কিন্তু তিনি তা করেননি। বরং তিনি বিরোধী দলকে দোষী সাব্যস্ত করে ভাষণ দিচ্ছেন।
ডেসটিনি মার্কা কোম্পানিগুলো অনেক দিন ধরে বাংলাদেশে চালু রয়েছে। এর আগে যুবকের ঘটনা ঘটেছে। ডেসটিনির ঘটনাটি খুবই বিস্ময়কর। এর প্রধান হলেন জেনারেল হারুন। তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামী পন্থী। সরকারের চোখের সামনেই ডেসটিনি কাগজ বের করেছে, টিভি খুলেছে, বাগান বানাচ্ছে, এয়ারলাইন খুলেছে। সব কিছুই করতে পেরেছে রাজনীতির ছায়াতলে।
দুর্নীতি নিয়ে দুদকের চেয়ারম্যান গোলাম রহমান মাঝে মধ্যে ইদানীং প্রতিদিন যা বলেন, তাতে দেশবাসী অবাক ও বিস্মিত হন। ক’দিন আগে আবুল সাহেবকে তিনি সার্টিফিকেট দিয়েছেন। তারই ভিত্তিতে প্রধানমন্ত্রী আবুলকে দেশপ্রেমিক বলেছেন। দুদক সুরঞ্জিত বাবুকেও ভালো মানুষের সনদ দিয়েছে। এখন বলছে, পিয়ন চাপরাশির কথায় বিচার চলে না। পিয়ন তো একজন নাগরিক, একজন ভোটার। আইনে কি কোথাও লেখা আছে পিয়ন হলে সাী নেয়া যাবে না বা ভোট নেয়া যাবে না। ড্রাইভার আজমের রহস্য হলো, সে বেশ কিছু দিন গা ঢাকা দিয়ে ছিলেন। হঠাৎ করে একেবারে সরাসরি আরটিভিতে গিয়ে উপস্থিত। এই টিভির মালিক আবার আওয়ামী পন্থী মোরশেদুল আলম। তিনি জেনারেল মঈনের সরকারের আমলে এটির মালিক হয়েছেন। কেমন করে মালিক হয়েছেন সে রহস্য এখনো কেউ জানে না। সেই মোরশেদুল আলিমের টিভিতে গিয়ে হাজির ড্রাইভার আজম। কে তাকে সেখানে নিয়ে গেলেন? এত দিন তিনি কোথায় ছিলেন? তাহলে সরকারের ভেতরে কি কোনো অদৃশ্য সরকার আছে? তাহলে কি আজমকে টোপ হিসেবে রাখা হয়েছে? সময়মতো কাজে লাগানো হবে।
পদ্মা সেতুতে কোনো দুর্নীতি হয়নি। এটি প্রধানমন্ত্রীর সাফ কথা। তবে দুর্নীতিবাজদের সরানোর ব্যাপারে সরকার রাজি হলেন কেন? এক দিকে বলছেন বিশ্বব্যাংক দুর্নীতিবাজ। অপর দিকে বিশ্বব্যাংকের টাকা পাওয়ার জন্য নানা রকম লবি করছেন। নিউ ইয়র্কে বসেই প্রধানমন্ত্রী বলে দিলেন বিশ্বব্যাংকের ঋণ বন্ধ করার জন্য যারা চেষ্টা করেছেন তাদের খুঁজে বের করা হবে। এ কথা বলার পরই বিশ্বব্যাংক ঘোষণা করল, তারা নিজেরাই দুর্নীতির তদন্ত করবেন। প্রধানমন্ত্রীর নানা ধরনের কথায় অনেকের মনে ধারণা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী নিজেই বিশ্বব্যাংকের ঋণ চান না। যদি চাইতেন তাহলে তিনি এত কথা বলতেন না। অপর দিকে যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এখনো বলছেন মালয়েশিয়া পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন করবে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেছেন, বিশ্বব্যাংকের তদন্ত কমিটি গঠিত হওয়ায় তিনি খুশি হয়েছেন। হয়তো তিনি আন্তরিকভাবেই চান বিশ্বব্যাংকের ঋণ আসুক।
লেখক : কবি ও সাংবাদিক
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন