শনিবার, ৩ নভেম্বর, ২০১২

‘কুত্তা কামাল’ থেকে ‘চোখতোলা শাজাহান’



আ ব দু ল হা ই শি ক দা র
আমাদের দেশে অন্ধকার জগতের বাসিন্দাদের নিয়ে অনুসন্ধিত্সার অন্ত নেই। বিশেষ করে টপটেররদের নিয়ে সমাজের সর্বস্তরে রয়েছে নানা প্রকার ভীতি ও কৌতূহল। টপটেররদের বাহারি নামের রহস্য এবং মারেফাত নিয়েও সর্বত্র রয়েছে জিজ্ঞাসা। সমাজে প্রচলিত নামের যে কাঠামো, তাদের নামের একাংশ তার প্রতিনিধিত্ব করলেও, অপর অংশ প্রচলিত গড্ডালিকার একেবারে বাইরে। সে জন্যই যত কথা। কিছু উদাহরণ দেয়া যায় তাদের নামের— সুইডেন আসলাম, মুরগি মিলন, কালা জাহাঙ্গীর, পিচ্চি হান্নান, লেদার লিটন, শর্টগান সোহেল, কিলার খোরশেদ, গুঁজা বাদশাহ, ডিশ শাকিল, লেংড়া শাহীন, ডিজিটাল পিয়াস, ফ্রিডম রাসু, সোর্স আজমল, জঙ্গি মিলন, ইন্ডিয়ান বাবু, ডাকাত শহীদ, চশমা নাসির, চিটার জিল্লুর, টাওয়ার বাবুল, মামু শাহজাহান, আঙুল কাটা জগলু, টোকাই ফারুক, কুত্তা কামাল। আরও কত নাম।
আসলামের সঙ্গে সুইডেন কেন, মিলনের সঙ্গে মুরগি কেন, জগলুর সঙ্গে আঙুল কাটা কেন, লিটনের সঙ্গে লেদার কেন, কিংবা কামালের সঙ্গে কুত্তা কেন?—এগুলো কি নামকে বিকৃত করার জন্য, লোকগুলোকে ছোট করার জন্য? না কি অন্য কিছু?
পুলিশ জানায়, ‘নারে ভাই, বিকৃত করা কিংবা ছোট করার জন্য নয়। আসলে তাদের চেনার সুবিধার জন্য, তাদের কাজের ধরন ও পেশার ওপর ভিত্তি করে এভাবে নামকরণ করি আমরা। তাছাড়া এক নামে একাধিক টেরর থাকে অনেক সময়। সে জন্য একজনের সঙ্গে আরেকজনকে আলাদা করার জন্যই এই নামাবলী উত্সব। এতে খুব সহজেই আমরা তাদের শনাক্ত করতে পারি। যেমন ধরুন লিটন, ও বেটা করতো হাজারীবাগে লেদারের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ। তো হয়ে গেল লেদার লিটন। জগলুর কাজ ছিল প্রতিপক্ষকে ধরে তাদের হাতের আঙুল কেটে ফেলা, হয়ে গেল আঙুল কাটা জগলু। মিলন করতো মুরগি চোরাচালানের ব্যবসা, তো সে হলো মুরগি মিলন। খোরশেদের কাছে কিলিং হলো ডালভাত, তাই তো সে কিলার। বাবুর হেডকোয়ার্টার কলকাতায়, তাই ইন্ডিয়ান, কামালের সঙ্গে সবসময় কুকুর থাকতো, আর ওর মেজাজটাও ছিল কুকুরের মতো, সে জন্যই কুত্তা কামাল। বোঝা গেল বিষয়টা?
পুলিশকে ধন্যবাদ দিতেই হয়। কিন্তু এখন পুলিশ ও পাবলিক দু’তরফই মহাফাঁপরে। কারণ আন্ডার ওয়ার্ল্ডের এইসব কাজ-কারবারের কিছু কিছু এখন চলে এসেছে ওপেন ওয়ার্ল্ডে। ক্ষেত্রবিশেষে ওপেন ওয়ার্ল্ডের গড়পড়তা লেভেল ছাপিয়ে তা পৌঁছে গেছে একদম আপার ওয়ার্ল্ডে। সম্প্রতি খুব সারগর্ভে, অতি আড়ম্বরের সঙ্গে, একটি টিভি চ্যানেলের টক শোর মাধ্যমে, দেশের লক্ষ-কোটি মানুষকে সাক্ষী রেখে, আমাদের মাথার ওপরে অধিষ্ঠিত বর্তমান মহাজোট মন্ত্রিসভার একজন সম্মানিত সদস্য জনাব শাজাহান খান এক ‘অনন্য কীর্তি’ স্থাপন করে এই ধরনের খাতায় নাম লিখিয়েছেন। অনেক মহা মহা সংলাপ তিনি ঝেড়েছেন। পাঞ্জাবির হাতা গুটিয়েছেন। চক্ষুকে রক্তবর্ণে রঞ্জিত করেছেন। কণ্ঠকে সপ্তমে চড়িয়েছেন। শ্রাব্য, অশ্রাব্য, কথ্য, অকথ্য ভাষা ব্যবহার করেছেন। বেয়াদবের হাড্ডি বলে গালাগালি করেছেন। ঘুষি মারতে গেছেন। জুতাপেটা করতে চেয়েছেন। তারপর হুঙ্কার ছেড়েছেন ‘হারামজাদা তোর চোখ তুলে ফেলবো।’ তার এই টোটাল ‘বীরত্ব’ প্রদর্শনের মধ্যে আমার কাছে মনে হয়েছে ‘হারামজাদা তোর চোখ তুলে ফেলবো’ কথাটিই উত্তেজনার শীর্ষ শিখর। এটাই তার বক্তব্যের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর, রোমহর্ষক, ভীতিপ্রদ, রক্তপাতমূলক উচ্চারণ। একইসঙ্গে তার আচরিক জীবনেরও মূল নির্যাস। সে জন্য প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী যদি তাকে একটি নাম দিতেই হয়, তাহলে ‘চোখ তোলা শাজাহান’ নামটিই সবচেয়ে সুন্দর, পরিচয়জ্ঞাপক এবং সুপ্রযুক্ত হবে বলে আমার ধারণা। কারণ তার আগে ও পরে অনেক শাজাহান মন্ত্রী হিসেবে ছিলেন বা আসতে পারেন। সে ক্ষেত্রে এখনই তাকে এই বিশেষণে বিশেষায়িত না করলে ধন্ধে পড়ে যাবে আমপাবলিক ও পুলিশ। সাংবাদিকদের সমস্যা হবে সবচেয়ে বেশি। সেজন্যই এই নামজারি।
আমাদের ভেবে দেখতে হবে অন্যদের নাম পরিবর্তন বা সংযোজনের সময় কোনো আকিকা হয়েছিল কি না? বা কোনো উত্সব হয়েছিল কি না? যদি তা হয়ে থাকে, তাহলে শাজাহান খানের মতো একজন কীর্তিমান মন্ত্রীর নাম-যোজনার এই শুভ মুহূর্তে আমাদের অবশ্যই সেই উত্সবাদির আয়োজন করতে হবে। তাছাড়া তিনি একটা বিশেষ রেকর্ডেরও অধিকারী, হাজার বছরের বাংলাদেশের মন্ত্রীদের মধ্যে তিনিই একমাত্র মন্ত্রী, যিনি প্রতিপক্ষের চোখ তুলে ফেলতে চেয়েছেন এবং এই চোখ তোলার ব্যাপারে তার যে পূর্ব অভিজ্ঞতা আছে সে কথাও তিনি সারগর্ভে জাতিকে জানিয়ে দিয়েছেন।
মন্ত্রীর পুরো কর্মকাণ্ড পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এর আগেও ড্রাইভিং লাইসেন্স দেয়ার ব্যাপারে তিনি একটি ‘অসাধারণ বাণী’ জাতিকে উপহার দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ড্রাইভারদের শিক্ষাদীক্ষার দরকার কী, ট্রেনিং নিয়েই-বা বাড়াবাড়ির কী আছে। তারা গরু-ছাগল চিনতে পারে কি না সেটাই হলো মূল ব্যাপার। সে সময় অনেক সমাজসেবক ও চিন্তাবিদ তাকে ‘গরু-ছাগল শাজাহান’ নাম উপাধি দেয়ার জন্য চিন্তাভাবনা করেছিলেন।
আমাদের গাফিলতির জন্য, আমাদের কর্তব্যধর্ম পালনে গড়িমসির জন্য—তাকে সেটা দেয়া সম্ভব হয়নি। এবারে যাতে পূর্বের অলসতা জাতিকে গ্রাস না করে, সেদিকে তীক্ষষ্ট নজর রাখার জন্য ধর্ম বর্ণ দল নির্বিশেষে সবার কাছে দেশপ্রেমিক মানুষের আকুল আবেদন।
মন্ত্রী শাজাহান খানের কর্মকাণ্ড ও কথাবার্তা আসলেই আমাদের জাতীয় অগ্রগতির একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক। তার কল্যাণে সূচকের কাঁটা নিচ থেকে ক্রমাগত ওপরে উঠে আসছে। আন্ডার ওয়ার্ল্ডের জগদ্দল পাথর ভেদ করে তা এখন আপার ওয়ার্ল্ডে স্থান করে নিয়েছে। জাতি হিসেবে আমাদের অতি সৌভাগ্য যে, এই সূচকের কাঁটাকে ব্যক্তিগতভাবে মন্ত্রী শাজাহান খান সাহেব নিজে ওপরে নিয়ে এসেছেন। তার কল্যাণে দেশের মানুষ, শিশু, কিশোর, যুবক, যুবতী, বৃদ্ধ, বৃদ্ধা তো বটেই, বিশ্ববাসীও অবাক বিস্ময়ে আমাদের দিকে তাকাবার ফুরসত্ পেলেন। ড. ইউনূসের নোবেল বিজয়ের পর, বাংলাদেশ নিয়ে এত বড় বিস্ময় উপভোগ করার মওকা বিশ্ববাসী আর পাননি।
আমরা বড়ই অকৃতজ্ঞ জাতি। নইলে এই কীর্তি স্থাপনের জন্য দেশের প্রতিটি কোনা থেকে আওয়াজ উঠতো, মন্ত্রী শাজাহান খানকে এবার স্বাধীনতার পদকে ভূষিত করা হোক। দুর্ভাগ্য এই কথাগুলো কেউ বলছে না। সত্যি জগত্ বড়ই নিষ্ঠুর জায়গা।
দুই
১৯৭২-৭৫-এ মরহুম শেখ মুজিবের চামড়া দিয়ে জুতা বানিয়ে, সেই জুতা পায়ে দিয়ে বিপ্লব করার খায়েশ যারা দেখেছিলেন তাদের মধ্যে মাননীয় মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, নূরুল ইসলাম নাহিদ, হাসানুল হক ইনুর নাম না নিলেই নয়। আওয়ামী লীগে প্রচুর নেতাকর্মী এমনকি এমপি পর্যন্ত নিকাষ হয়েছে ইনু সাহেবদের বুলেট ও খড়গের নিচে। শাজাহান খান সাহেব ইনু সাহেবদের সেই শিক্ষায়ই শিক্ষিত মানুষ। তবে গুরুদের তুলনায় তিনি বিচক্ষণ ও বুদ্ধিমান বলে আগেভাগেই শিং ভেঙে ঢুকে পড়েছিলেন আওয়ামী লীগে। কিন্তু কয়লা ধুলে তো আর ময়লা যায় না। আর স্বভাবও বদলায় না। যতই তাকে চাপা দিয়ে রাখা হোক, সে সুযোগ পেলেই মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। এ কারণেই গত ২২ অক্টোবর বেসরকারি টিভি চ্যানেল আরটিভিতে সামান্য একটু বাতাস পেয়েই স্বমূর্তিতে আবির্ভূত হয়েছিলেন তিনি। এজন্য তাকে দোষ দেয়া খুবই ‘অসাংবিধানিক’ হবে। হাজার হোক মন্ত্রী বলে কথা। অনুষ্ঠানের অর্বাচীন উপস্থাপক অবশ্য মন্ত্রীকে দোষ দেনওনি। তিনি বলেছেন বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া কথার মাঝখানে কথা বলেছিলেন বলেই তো মন্ত্রী মহোদয় ক্ষেপে যান। নইলে তো তিনি ক্ষেপতেন না। ভাগ্যিস মন্ত্রী মহোদয় ক্ষেপে গিয়েছিলেন, সেজন্যই বহুদিন পর তার স্বমূর্তি দেখার এক বিরল সম্মান আমরা পেলাম।
তবে এত কথা বলার আগে আমাদের জেনে নেয়া দরকার কী হয়েছিল ওইদিন। আরটিভির টক শোর নাম ছিল ‘আওয়ার ডেমোক্রেসি’। এই শোতেই বৃহত্ পরিসরে আয়োজন করা হয় ‘ঈদ পূজায় নিরাপদে ঘরে ফেরা’ শীর্ষক গোলটেবিল। এতে অতিথি ছিলেন নৌ পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, আওয়ামী লীগের এমপি ইসরাফিল আলম, আরেক এমপি গোলাম মাওলা রনি, বিএনপির এমপি রাশেদা বেগম হীরা, নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের ইলিয়াস কাঞ্চন, পূজা পরিষদের বাসুদেব ধর, র্যাবের পরিচালক কমান্ডার সোহায়েল, পরিবেশ আন্দোলনের নেতা ইকবাল হাবীব, সাংবাদিক মনির হায়দার, জাকারিয়া কাজল, নিশাত দস্তগীর। সঞ্চালক ছিলেন রোবায়েত ফেরদৌস।
রাত সোয়া ১১টায় অনুষ্ঠান শুরু হলে নৌ পরিবহনমন্ত্রী তার বক্তব্যে উন্নয়নের এক দীর্ঘ বয়ান দিয়ে শুরু করেন। তারপর শুরু করেন বিএনপি ধোলাই। এ সময় ব্যারিস্টার রফিক বলেন, আমাদের সময় দুর্নীতি আর চাঁদাবাজি হয়েছে, কিন্তু এখন কি তা বন্ধ হয়েছে? আগে বেশি চাঁদাবাজি হতো, না এখন বেশি হচ্ছে? এখন তো লোকজন আপনাদের চোর বলছে।
আর যায় কোথায়। আগুনের মধ্যে পড়লো পেট্রোলের ফোঁটা। মন্ত্রী মহোদয়ের জামা-কাপড়ের মধ্যে লুকিয়ে থাকা তার পূর্বের সংহারক স্বভাব ফিরে এলো। তিনি নিজমূর্তি (আসল মূর্তি) ধারণ করলেন। তারপর পাঞ্জাবির হাতা গুটিয়ে বিরোধী দলের নেতাকে মারতে উদ্যত হলেন। আপনি থেকে সম্বোধনের স্তর নেমে এলো তুমিতে। তারপর ‘তুই’-এ। হারামজাদা বেয়াদবের হাড্ডি, তুই জানিস না একজন মন্ত্রীর সঙ্গে কীভাবে কথা বলতে হয়। তোকে আজ জুতাপেটা করবো। রফিক তুমি শাজাহান খানকে চেনো না। এই শাজাহান খান আগেও অনেক মানুষের চোখ তুলে ফেলেছে। আজ এখন তোর চোখও তুলে ফেলবো। শাজাহান খান সব পারে।
টিভি টক শোতে অকস্মাত্ এই নজিরবিহীন ঘটনায় অন্য অতিথিরা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েন। শ্বাসরুদ্ধকর এই ঘটনা সরাসরি টিভিতে প্রত্যক্ষ করে হতভম্ব হয়ে পড়েন দেশের মানুষ। তড়িঘড়ি করে আরটিভি কর্তৃপক্ষ সম্প্রচার ১০ মিনিটের জন্য বন্ধ করে দিলেও, ইসরাফিল এমপি কিন্তু যথার্থ অনুচরের মতো ‘বীর’ মন্ত্রীর পদাঙ্ক অনুসরণ করে ব্যারিস্টার রফিককেই গালাগালি করে নিমকহালালের পরিচয় দিয়েছেন।
১০ মিনিট বন্ধ থাকার পর অনুষ্ঠানটি আবার শুরু হয়ে যথাসময়ে শেষ হয়। পরের অংশে অবশ্য আর কাউকে যুদ্ধংদেহী
মনে হয়নি।
তিন
এই অবাঞ্ছিত, অনাকাঙ্ক্ষিত, অনভিপ্রেত, দুঃখজনক এবং দুর্ভাগ্যজনক ঘটনায় পুরো জাতি লজ্জায়, অপমানে, দুঃখে অধঃবদন হলেও অনুষ্ঠানের পরের অংশে দেখা গেল শাজাহান খান এবং ব্যারিস্টার রফিক আবার পাশাপাশি বসে আছেন! কথা বলছেন! অবশ্য চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন বলেছেন, ‘আসলে ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া ভয়ে অনুষ্ঠানে আর কোনো কথাই বলেননি। সুবোধ বালকের মতো অনুষ্ঠানে বসেছিলেন তিনি।’
সাংবাদিক মনির হায়দার বলেছেন, এমন ঘটনা আর কল্পনাও করতে চাই না। এককথায় ওটি ছিল এক ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা। সিনেমার দৃশ্যেও এমনটি দেখা যায় না।
ভয়ঙ্কর হোক আর নাই হোক, সিনেমায় দেখা যাক বা না যাক, অনুষ্ঠানের পরবর্তী অংশে ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া যে সুবোধ ‘বীরত্ব’ ও ‘সাহস’ প্রদর্শন করেছেন, তাও তুলনাবিহীন। অবশ্য এ ব্যাপারে তার ব্যাখ্যা আছে, মন্ত্রী শাজাহান খান আমাকে যেভাবে মেরে ফেলার হুমকি দিলেন, আমার নিরাপত্তার স্বার্থেই আমি সেখানে না থাকার সিদ্ধান্ত নিলাম। বের হয়ে আসার সময় আরটিভি কর্তৃপক্ষের অনুরোধে আবার অনুষ্ঠানে অংশ নিতে হলো। তবে আমি হতবাক হয়েছি। কোনো সভ্য মানুষ এ ধরনের ভাষায় কথা বলতে পারেন এটা বিশ্বাস হচ্ছে না। একজন মন্ত্রী হয়ে প্রকাশ্যে কোনো নাগরিককে যে ভাষায় হুমকি দেয়া হয়েছে তা বলতে লজ্জা হচ্ছে। রাজনীতি করতে গিয়ে মানুষকে শ্রদ্ধা করতে শিখেছি। অনুষ্ঠানে সংসদ সদস্য, সাংবাদিক ও র্যাবের একজন পরিচালক ছিলেন। তাদের সামনেই কাউকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়া কোনো সভ্য মানুষের পরিচয় হতে পারে না।
নেতার মতোই চমত্কার বীরত্ব প্রদর্শন করেছেন বিএনপির মহিলা এমপি রাশেদা বেগম হীরাও। তিনি ওই তুমুল সময়ে ‘সাহস’ করে বলেছিলেন, আমি প্রচণ্ড ভয় পেয়েছি। তাই আর বসতে চাই না।
এই ঘটনায় গোটা জাতির মাথা পায়ের পাতায় গিয়ে ঠেকলেও মন্ত্রী শাজাহান খানের চির উন্নত শির একবিন্দুও নিচু হয়নি। তিনি পরে বলেছেন, এটা কোনো বিষয় নয়। কাউকে সম্মান দিতে না জানলে জোর করে সম্মান পাওয়া যায় না। টক শোর শেষে আমি তার সঙ্গে হাত মিলিয়েছি। কোলাকুলি করেছি। এরপর আর কোনো অভিযোগ করার কথা নয়।
ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া এবং এমপি হীরা হয়তো বিষয়টা ‘কিছু নয়’ বলে চেপেই যেতেন। কিন্তু পরে মিডিয়ার কল্যাণে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়লে খানিকটা বেকায়দায় পড়েই যেন দ্বারস্থ হয়েছিলেন আদালতের। তাও আবার অন্যের মাধ্যমে। ফলে আদালত খারিজ করে দিল আবেদন।
ব্যস, নটে গাছটি মুড়ালো, আমাদের গল্প ফুরালো। যথা পূর্বং তথা পরং। সব চলছে ঠিকঠাকমতো। কেবল জাতির স্মৃতির আকাশে চিরজিজ্ঞাসার প্রতীক হয়ে ঝুলে রইলো করুণ ‘চন্দ্রবিন্দু’।
মন্ত্রী শাজাহান খান এবং ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়াও নিশ্চয়ই পাশাপাশি বসে দেখছেন এই চন্দ্রবিন্দুর উদয়। হাজার হোক, আরটিভি বলে কথা, তাদের অনুরোধ তো আর ব্যারিস্টার রফিক ফেলে দিতে পারেন না! তাতে মান বাড়ুক আর কমুক।
a_hyesikder@yahoo.com

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads