আমরা খবরের কাগজ এবং টিভিতে দেখলাম জামায়াতের মিছিলের ভেতর থেকে এক লোক পুলিশের কাছে থেকে বন্দুক কেড়ে নিয়ে পুলিশকে বেধড়ক পিটাচ্ছে। বলা হচ্ছে, লোকটা জামায়াতের। কারণ সে জামায়াতের মিছিলের ভেতরেই ছিল। এটা একটি সাদামাটা খবর। এখন লোকটা কোথায়? সে কি ধরা পড়েছে? না খালাস হয়ে গেছে? পুলিশের গায়ে হাত তোলা মানে রাষ্ট্র ও সরকারের গায়ে হাত তোলা। ওই লোকটা রাষ্ট্রদ্রোহী। তার বিচার অবশ্যই হওয়া দরকার। কে এই পাষণ্ড যে, রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গায়ে হাত তোলে। দেশবাসী লোকটাকে দেখতে চায়। আমি ব্যক্তিগতভাবেও মনে করি, তার দ্রুত বিচার হওয়া দরকার। পুলিশের আহত সেই ভদ্রলোকই বা কোথায় গেলেন? তিনি কি হাসপাতালে আছেন? কই, তাকে দেখতে তো কেউ গেলেন না। আমরা তো সব সময়ই দেখি, সরকারি দল বা পুলিশের কেউ আহত হলে মন্ত্রী-শান্ত্রীরা হাসপাতালে তাকে বা তাদের দেখতে যান। হতে পারে হয়তো সবই হয়েছে, আমি জানতে পারিনি বা বুঝতে পারিনি।
পুলিশ নিয়মিত ওষুধের ডোজের মতো রাস্তায় রাজনৈতিক দলের কর্মীদের ওপর হামলা চালাচ্ছে। এটা আমরা নিয়মিত টিভি ও পত্রিকার সংবাদে দেখতে পাই। যেন এটা একটা স্বাভাবিক দৃশ্য। পুলিশ শুধু রাজনৈতিক কর্মীদের পেটায় না, রিকশাওয়ালা, পথযাত্রীসহ আরো অনেককেই পেটায়। মাঝে বিচারপতিদেরও হেনস্তা করেছে। সাংবাদিকদের পেটানো তো পুলিশের নিয়মিত ডিউটিতে পরিণত হয়েছে। একসময় চৌকিদার ছিল সরকার বা রাষ্ট্রের প্রতীক। চৌকিদারের গায়ে হাত দিলেই রাষ্ট্রদ্রোহিতা। সাথে সাথেই চৌকিদারের রশি কোমরে লেগে যাবে। সে সময় ব্রিটিশ রাজের প্রতীক চৌকিদারকে দেখলেই সাধারণ মানুষ ভয় পেত। গ্রামে গেলে এখনো অনেক চৌকিদার-দফাদারবাড়ি দেখতে পাওয়া যায়। নামী-দামি দারোগাবাড়িও আছে। এখন দেশের মানুষ নিত্যদিন পুলিশ, দারোগা, সরকারি গোয়েন্দা, র্যাবের ভয়ে অসহায় থাকে। তার ওপর রয়েছে আয়কর বিভাগ, পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস, খাজনা অফিস ও সিটি করপোরেশনের জ্বালাতন। এসব সরকারি বা আধা-সরকারি অফিসের লোকেরা কিছু বাড়তি টাকা না পেলে ন্যায্য কাজটা করে দেয় না।
পুলিশ আর জামায়াতের মারামারির দৃশ্য এখন প্রতিদিন টিভি ও খবরের কাগজে দেখা যায়। ইদানীং দেখতে পাচ্ছি, ছাত্রলীগের সোনার ছেলেরাও পুলিশকে পেটাচ্ছে। পুলিশমন্ত্রী ম খা আলমগীর বলেছেন, ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও পুলিশ দলবেঁধে জামায়াত আর শিবিরকে প্রতিহত করবে। যুবলীগ নেতারা বলছেন, ওটা আমাদের কাজ নয়, পুলিশের কাজ। ম খা আলমগীর একজন সাবেক আমলা। তিনি এক সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান। তার ডক্টরাল থিসিস ডেডিকেট করেছিলেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে। একসময় তিনি ছিলেন জিয়া সাহেবের ভক্ত। মওলানা সাহেবের ভক্ত ছিলেন এমন বহু আমলা পরে বঙ্গবন্ধু ও এরশাদের ভক্ত হয়ে গেছেন। ম খা আলমগীর নাম করেছেন জনতার মঞ্চ করে। কী কারণে তিনি বেগম জিয়ার ওপর গোস্বা হয়েছিলেন তা অবশ্য আমরা জানি না। যা হোক, তিনি এখন পুলিশের মন্ত্রী। ব্রিটিশরা তো পুলিশ তৈরি করেছিল পরাধীন ভারতবাসীকে পেটানোর জন্য, মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসিতে ঝোলানোর জন্য। পুলিশের ব্রিটিশ তৈরি আইন এখনো বলবৎ আছে। একজন পুলিশ সিপাহি যেকোনো সময় রাস্তায় যেকোনো নাগরিককে পেটাতে পারে, হাতে হ্যান্ডকাফ লাগাতে পারে। এতে আইনের কোনো বরখেলাপ হবে না। ব্রিটিশদের তৈরি ওই পুলিশ আইন দিয়ে পাকিস্তান চলেছে, এখন বাংলাদেশও চলছে। আমাদের মহাগণতান্ত্রিক নেতা ও বুদ্ধিজীবীরা ওই আইন বদলাতে চান না। তাতে নাকি সরকার বা রাষ্ট্র চলে না। রাষ্ট্র একটি প্রতিষ্ঠান, যাকে জনগণের হাত থেকে রা করার জন্য সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিজিবি, র্যাব, আনসার, গ্রামপুলিশ, গোয়েন্দা বিভাগ লাগে। এই যন্ত্র আজ পুলিশমন্ত্রীকে সালাম দিচ্ছে, পাহারা দিচ্ছে, আবার কাল লাঠিপেটা করছে। আজ যাকে দেশপ্রেমিক বলছে, কাল তাকে রাষ্ট্রদ্রোহী বলছে। বঙ্গবন্ধু ব্রিটিশ পুলিশের হাতে নির্যাতিত হয়েছেন, পাকিস্তানি পুলিশের হাতেও নির্যাতিত হয়েছেন। কিন্তু মতায় এসে তিনি রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে প্রতিপকে জেলে দিয়েছেন, অত্যাচার করেছেন, হাজার রাজনৈতিক কর্মীকে হত্যা করেছেন। মতায় আসার পর বহুদলীয় গণতন্ত্র আর ভালো লাগেনি। একদলীয় রাজনীতি চালু করেছিলেন। নিজের অনুগত রীবাহিনী চালু করেছিলেন। তিনি সবকিছুই করেছিলেন রাষ্ট্র বা সরকারকে রা করার জন্য। সব সরকারই এ কাজটা করে থাকে। এর মানে হচ্ছেÑ রাষ্ট্র বা সরকার জনগণের চেয়ে অনেক বেশি বড় ও দেশপ্রেমিক। সরকারকে রা করার জন্য প্রয়োজনে লাখ লাখ নাগরিককেও হত্যা করা যায়। আওয়ামী লীগের নেতাদের অনেকেই বলে থাকেন, আইন-আদালত মেনে দেশ স্বাধীন করিনি, প্রয়োজনে আইন-আদালত না মেনেই দেশের স্বাধীনতা রা করব। প্রসঙ্গটা হচ্ছে পুলিশকে রাস্তায় কিছু লোক পেটাচ্ছে। এই দৃশ্য দেখতে টিভি দর্শকেরা অভ্যস্ত নন। সবাই সব সময় দেখেন পুলিশ পাবলিককে পেটাচ্ছে। এই পেটানোটাকেই স্বাভাবিক মনে করা হয়। হঠাৎ দেখা গেল পুলিশকে পেটাচ্ছে। এর আগে প্রকাশ্য রাস্তায় টিভি ক্যামেরার সামনে পাবলিক পুলিশকে পেটায়নি। তবে বঙ্গবন্ধুর আমলে কিছু লোক থানা লুট করেছে, পুলিশের অস্ত্র লুট করেছে, পুলিশকেও হত্যা করেছে। সে সময় ব্যাংকও লুট হয়েছে। ’৭১ সালেও নানা ধরনের লুট হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর আমলে সরকারের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করেছিল জাসদ। থানা আক্রমণ করেছে তারা। পুলিশমন্ত্রীর বাড়ি আক্রমণ করেছে, ভারতীয় দূতাবাস আক্রমণ করেছে। একসময় জাসদ নিষিদ্ধ হতে চলেছিল। জাসদের হাজার হাজার কর্মীকে রীবাহিনী হত্যা করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে, আর নেতাদের গ্রেফতার করেছে নির্বিচারে।
’৭২ থেকে ’৭৫ সাল পর্যন্ত ধর্মীয় সব রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ ছিল। জিয়া সাহেব মতা গ্রহণ করে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেন। এই উপমহাদেশের কোনো দেশেই ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ নয়। ’৭২ সালের আগে পাকিস্তান আমলে ধর্মবিরোধী রাজনৈতিক দল কমিউনিস্ট পার্টিগুলো নিষিদ্ধ ছিল। রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করা নতুন কোনো ঘটনা নয়। মধ্যপ্রাচ্য ও আরব দেশগুলোতে ইসলামিক রাজনৈতিক দলগুলো যুগের পর যুগ ধরে নিষিদ্ধ ছিল। সাম্প্রতিক গণবিােভের ফলে বহু দেশে নিষেধাজ্ঞা উঠে যায়। এমনকি অনেক দল নির্বাচনে জয়ী হয়ে মতায় এসেছে। যারা ধর্মীয় দলগুলো নিষিদ্ধ করেছিলেন, তারাও মুসলমান নেতা। কিন্তু ইসলামিক শক্তিকে ভয় পেতেন। একসময় পশ্চিমা পুঁজিবাদী দেশগুলোতে কমিউনিস্ট পার্টিগুলো নিষিদ্ধ ছিল। আবার বহু কমিউনিস্ট দেশে কমিউনিজমের পতন হয়েছে। পুঁজিবাদী অর্থনীতিও পুরনো ঘুণে ধরা গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় ফিরে এসেছে। তথাকথিত সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোর নেতা সোভিয়েত রাশিয়া এখন আর নেই। সেখানে এখন অনেক দেশের সৃষ্টি হয়েছে। গণচীনেও খোলাবাজার ও মুক্ত অর্থনীতি চালু হতে চলেছে। রাজনীতির ইতিহাসে কোনো কিছুই স্থবির হয়ে থাকে না। মুসলিম লীগ থেকে আওয়ামী মুসলিম লীগ। তারপর শুধুই আওয়ামী লীগ। নামের অর্ধেক উর্দু আর বাকি অর্ধেক ইংরেজি। মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠা করেছেন ঢাকার নবাব স্যার সলিমুল্লাহ আর আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠা করেছেন মওলানা ভাসানী। শুধু আওয়ামী লীগ দ্বারা চলছে না বলে বঙ্গবন্ধু একদলীয় রাজনীতির জন্য বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। বাকশাল বাদ দিয়ে জিয়ার আমলে আবার আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা হলে তার নেতৃত্বে আসেন বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা। বাকশালের সমাজতান্ত্রিক নীতি ত্যাগ করে ধনতান্ত্রিক পথে যাত্রা শুরু করেন তিনি। আমেরিকার সাথেও বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দেন। বর্তমান আওয়ামী লীগ মানে শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ মনে হয় খুবই বিভ্রান্তির মাঝে দিনাতিপাত করছে, যা বঙ্গবন্ধুর সময় ছিল না। বঙ্গবন্ধু খুবই সুস্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, তিনি বাঙালি এবং মুসলমান। আর এই বিশ্বাস থেকেই তিনি ওআইসি সম্মেলনে অংশগ্রহণের জন্য পাকিস্তান গিয়েছিলেন। কিন্তু শেখ হাসিনার পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। তিনি সিপিবিসহ অন্যান্য বাম চিন্তাধারার জনবিচ্ছিন্ন কিছু লোক ও গোষ্ঠীর চক্করে পড়ে গেছেন। সরকারে এখন ওদের প্রভাব-প্রতিপত্তি বেশি। বুঝতে পারছেন না তিনি কোন পথে চলছেন। ফলে তিনি দিন দিন মুসলিম স্বার্থবিরোধী কাজকর্মে জড়িয়ে পড়ছেন। বাংলাদেশের ৯০ ভাগ মানুষ মুসলমান। এর ১০ ভাগ মানুষ হয়তো জামায়াতকে সমর্থন করে বা ভোট দেয়। তারা জামায়াত ইসলামের রকও নয়, সোল এজেন্টও নয়। জামায়াতবিরোধী বহু ইসলামি দল বাংলাদেশে আছে। তারাও আওয়ামী লীগকে সমর্থন করে না। কারণ তারা আওয়ামী লীগকে ইসলাম ও মুসলমানবিরোধী রাজনৈতিক দল মনে করে। আওয়ামী লীগের বুদ্ধিজীবীরা দিনরাত ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে কথা বলছেন ও কলম ধরে চলেছেন।
এখন তো বিশ্বব্যাপী ইসলামবিরোধী একটা জজবা চলছে। সেই জজবার নেতৃত্ব দিচ্ছে আমেরিকা। ইসলামকে জঙ্গি ধর্ম বানানোর জন্য আমেরিকা বিশ্বব্যাপী টাকা খরচ করছে। আমেরিকার এই ইসলামবিরোধী যুদ্ধের আওতায় বাংলাদেশও অন্তর্ভুক্ত। আমেরিকা বিন লাদেন তৈরি করেছে সহযোগী হিসেবে, পরে তাকে হত্যা করেছে। শেখ হাসিনা জামায়াতের সাথে লেনদেন করেছেন। গোলাম আযম সাহেবকে মুরব্বি বলে সম্মান করেছেন। এখন সেই মুরব্বিকে আইনের আওতায় হত্যা করার জন্য দিনরাত জিগির করছেন। শেখ হাসিনা হয়তো মনে করছেন, জামায়াত নেতাদের ফাঁসি দিলেই দলটি দুর্বল হয়ে যাবে অথবা এই দলের রাজনীতি শেষ হয়ে যাবে। আসলে আদর্শবাদী দল কি কখনো মরে যায় বা ধ্বংস হয়ে যায়? যায় না, ইতিহাসে এর ভূরি ভূরি দৃষ্টান্ত আছে। সোভিয়েত রাশিয়ায় প্রায় শত বছর ধর্মচর্চা নিষিদ্ধ ছিল। মসজিদগুলোতে তালা লাগানো ছিল। এখন সেখানে ধর্মচর্চা আবার শুরু হয়েছে। ভারতে এখনো বহু মসজিদে তালা ঝুলছে। এসব মসজিদে সরকার তালা লাগায়নি। মসজিদ এলাকায় মুসলমান নেই। তাই নামাজ পড়ার লোক নেই। একসময় ছিল। স্পেনে বহু মসজিদ শরাবখানা হয়ে গেছে। মুসলমানেরা স্পেন শাসন করেছে সাত শ’ বছর ধরে। মুসলমান হত্যা কর্মসূচির কারণে সেখানে এখন মুসলমান নেই। ভারতেও প্রায় এক হাজার বছর মুসলমানদের রাজনৈতিক উপস্থিতি ছিল। এখন নেই। পৃথিবীতে মুসলমানের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। একমাত্র ধর্ম ইসলাম, যার বিস্তৃতি ঘটছে অবিরাম। হয়তো এ কারণেই আমেরিকা এবং তার বন্ধুরা ইসলামকে প্রতিহত করার জন্য এখনই অভিযান শুরু করেছে। পৃথিবীতে মুসলমানের সংখ্যা দুই-তিন শ’ কোটি হলেও আমেরিকা ও তার বন্ধুদের কোনো আপত্তি নেই যদি না তারা রাজনৈতিক মতা বিস্তার করতে চায়। ইসলামকে তারা পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান হিসেবে মানতে রাজি নয়। আওয়ামী লীগও ইসলামকে পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান হিসেবে মানতে রাজি নয়। ফলে আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগীরা ইসলামভিত্তিক রাজনৈতিক দলকে সহ্য করতে চায় না। জামায়াতের জন্ম হয়েছে ৭২ বছর আগে। এখন পর্যন্ত উপমহাদেশের কোনো দেশে তারা মতায় আসতে পারেনি। জনগণই জামায়াতকে এখনো রাজনৈতিক মতা হিসেবে গ্রহণ করেনি। সাধারণ মানুষ তামাশা করেই বলে, জামায়াত আওয়ামী লীগের পে থাকলে স্বাধীনতার পরে শক্তি, না থাকলে রাজাকার। আওয়ামী লীগকে সমর্থন করলেই মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ না করলেও চলবে।
ভারত, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে জামায়াত রাজনৈতিক দল হিসেবে আছে। কিন্তু সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত হচ্ছে পাকিস্তান ও বাংলাদেশে। বাংলাদেশে আরো বহু ইসলামিক রাজনৈতিক দল আছে, তারা তেমন শক্তিশালী নয়। সংসদে তাদের কোনো প্রতিনিধি নেই। বাম, ডান ও মধ্যপন্থী গ্রুপেও বহু রাজনৈতিক দল আছে, যাদের সংসদে কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। তাদের প্রেস রিলিজের মাধ্যমে খবরের কাগজের পাতায় দেখা যায়। ইনু, মিনু, বড়ুয়াদের কোনো সিট নেই। তারা এবার বহু বছর পরে আওয়ামী লীগের কাঁধে ভর করে সংসদ সদস্য হয়েছেন, মন্ত্রী হয়েছেন। তাদের সারা জীবন কাঁধে ভর দিয়ে চলতে হবে। বাংলাদেশে চারটি রাজনৈতিক দল আছে, যাদের সংসদে প্রতিনিধিত্ব আছে। যাদের লাখ লাখ ভোটার আছে। তন্মধ্যে জামায়াত একটি। শুনেছি জামায়াতের ৯০ লাখ ভোটার আছে। জামায়াত ’৭০ সাল থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে আসছে। ’৭১ সালে মুসলিম লীগসহ ধর্মীয় দলগুলো অখণ্ড পাকিস্তানের অস্তিত্বকে সমর্থন করেছে। ’৪৭ সালেও বহু মুসলমান রাজনৈতিক দল পাকিস্তানকে সমর্থন করেনি। কিন্তু পরে তারা পাকিস্তানের অস্তিত্বকে মেনে নিয়েছেন এবং পাকিস্তানে এসে রাজনীতি করেছেন। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে লাখ লাখ মুসলমান-হিন্দু প্রাণ দিয়েছে ব্রিটিশদের হাতে। সেই ব্রিটিশ এখন ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের বন্ধু। ১৯০ বছর ব্রিটিশরা এ দেশকে লুণ্ঠন করেছে। লাখ লাখ মুক্তিকামী দেশপ্রেমিককে হত্যা করেছে। ভারতবর্ষের সম্পদেই ব্রিটেন ধনী হয়েছে। ১৯০ বছরের শোষণ, শাসন, লুণ্ঠন ও হত্যাযজ্ঞের জন্য ব্রিটেন আজো কারো কাছে মা চায়নি। বরং এখন আমরা ব্রিটেনের কাছ থেকে সাহায্যের জন্য তাদের দুয়ারে ধরনা দিই। ব্রিটেন স্যার বা ওবিই খেতাব দিলে খুশিতে নাচতে থাকি। এখনো অনেকের জন্মবৃত্তান্তে দেখি, তিনি বা তারা অমুক খান বাহাদুর, নবাব বা জমিদারের নাতি বা পুতি। এসব গৌরব আমাদের মগজে স্থায়ী হয়ে গেছে। অনেকেই আনন্দের সাথে বলে থাকেন, কলোনিয়াল হ্যাংওভার। আওয়ামী লীগের রাজনীতির প্রধানতম সমস্যা দেশ বা রাষ্ট্রের চেয়ে দলকে এবং দলীয় সরকারকে বেশি গুরুত্ব দেয়া। ’৭৪ সালেই পাকিস্তান বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছে। জুলফিকার আলী ভুট্টো বাংলাদেশ সফর করেছেন বঙ্গবন্ধুর আমন্ত্রণে। বঙ্গবন্ধু বুঝতে পেরেছিলেন, পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করতে হবে। পাকিস্তান বাংলাদেশের চিরস্থায়ী শত্রু হতে পারে না। আমেরিকা ’৭১ সালে পাকিস্তানকে সমর্থন দিলেও বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার সাথে সাথেই স্বীকৃতি দিয়েছে। কোনো রাষ্ট্রই চিরস্থায়ীভাবে অন্য কোনো রাষ্ট্রের সাথে বৈরিতা পোষণ করতে পারে না।
জামায়াত আর পুলিশের ভেতর মারামারিটা দেখে দেশের মানুষ বিস্মিত হয়েছে। হঠাৎ করে জামায়াত পুলিশকে পেটাচ্ছে কেন? আগেই বলেছি, যে ছেলেটা পুলিশের কাছ থেকে বন্দুক ছিনিয়ে নিয়ে পুলিশকে পেটাচ্ছে, সেই ছেলেটা এখন কোথায়? আমাদের মিডিয়া ওই ছেলেটার কোনো হদিস দেশবাসীকে দিতে পারেনি। ছেলেটা কি জীবিত আছে? পুলিশটাই বা কোথায়? তিনি কি কোনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন? ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুলিশ এখন প্রতিদিন জামায়াত ও শিবিরকর্মীদের আটক করছে, রিমান্ডে নিচ্ছে। সারা দেশে এখন জামায়াত ও শিবির পাকড়াও করো কর্মসূচিতে ইতোমধ্যেই কয়েক হাজার কর্মী গ্রেফতার হয়েছে। জামায়াত নামে বা জামায়াত বলে পরিচিত কর্মীদের মিছিল অব্যাহত রয়েছে, পুলিশও নিয়মিত মার খাচ্ছে আর কর্মীদের আটক করছে।
জামাত-পুলিশ লাঠালাঠি বা মারামারির উদ্দেশ্য ও ল্য স্পষ্ট হতে শুরু করেছে। সংসদে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার দাবি তুলেছে আওয়ামী লীগ সংসদ সদস্যরা। আইনমন্ত্রী বলেছেন, নির্বাচন কমিশন জামায়াতের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। দেশের মানুষ মনে করছে, জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার জন্যই রাস্তায় জামায়াত-পুলিশ লাঠালাঠির নাটক সাজানো হয়েছে। প্রশ্ন হলো, জামায়াত নিষিদ্ধ হলে জামায়াতের রাজনীতি কি বন্ধ হয়ে যাবে? ইসলামে বিশ্বাসী তরুণেরা যদি নতুন নাম নিয়ে রাজনীতি শুরু করে, তাহলে সরকার কী করবে? আরব বসন্ত যারাই শুরু করুক না কেন, এর সুবিধা পেয়েছে ইসলামি দলগুলো। যারা জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানাচ্ছেন, তারা কিন্তু শেখ হাসিনা বা আওয়ামী লীগের মিত্র নয়। জামায়াত নিষিদ্ধ হলেও বামপন্থী বা তথাকথিত সেক্যুলারিজম বা ধর্মনিরপেতায় বিশ্বাসীরা মতায় আসতে পারবেন না।
লেখক : কবি ও সাংবাদিক
ershadmz40@yahoo.com
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন