সোমবার, ৪ নভেম্বর, ২০১৩

প্রসঙ্গ : ৫ বছরে আওয়ামী মামলার খড়গ


(গতকালের পর  এসব মামলার মধ্যে মতিঝিল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোঃ শাহজাহানকে হত্যার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় ২৪৭ জন আসামির মধ্যে হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরীসহ সংগঠনটির শীর্ষ নেতাদের ছাড়াও স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাবিব উন নবী সোহেল, সাধারণ সম্পাদক সরাফত আলী ও সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল বারী, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম, বিএনপির সহছাত্রবিষয়ক সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দীন (টুকু), ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আজিজুল বারী, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি আবদুল কাদের ভূঁইয়াসহ বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের ২০ জন নেতাকে আসামি করা হয়।
আর জামায়াত নেতা হামিদুর রহমান আযাদ এমপি, রফিকুল ইসলাম, শফিকুল ইসলামসহ (মাসুদ) জামায়াত-শিবিরের ৪৬ জন নেতাকে আসামি করা হয়।
যুবদল সভাপতি এডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ৮ মে ২০১৩ মুক্তি পেলে তাকে আবার গ্রেফতার করা হয়। আইন-শৃঙ্খলার অবনতি হতে পারে এমন তথ্যের ভিত্তিতেই তাকে আবার গ্রেফতার-দাবি করে পুলিশ। জামিনে মুক্তির পর কারাগারের গেট থেকেই আবার গ্রেফতার করা হয়। ওইদিন রাত পৌনে ১১ টার দিকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) তাকে গ্রেফতার করে মিন্টু রোডের ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যায়। এর আগে রাত ১০টার দিকে কাশিমপুর পার্ট-১ কারাগার  থেকে তিনি জামিনে মুক্তি পান। শেষ পর্যন্ত নতুন কোন মামলায় গ্রেফতার না দেখানোর উচ্চ আদালতের নির্দেশের প্রেক্ষিতে তিনি মুক্তি পান।
কোনো মামলা ছাড়াই ১৫ মে ২০১৩ নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে বের হবার পর বরকত উল্লাহ বুলু এমপিকে আটক করে নিয়ে যায় পুলিশ। পরে তাকে মামলায় জড়ানো হয়। কিছুদিন আগেই কারামুক্ত হবার পর তিনি ফের  গ্রেফতার হন। পরে এমপি হিসেবে সংসদের অধিবেশনে যোগ দিতে জামিন পান।
১৬ মে ২০১৩ বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও সাবেক মন্ত্রী সালাউদ্দিন আহমেদকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ফটক  থেকে পনরায় গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশ। জামিন পাওয়ার পর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বের হওয়ার পর সাদা পোশাকের গোয়েন্দা সদস্যরা তাকে গ্রেফতার করে। এরপর শেরেবাংলানগর ও তেজগাঁও থানায় পুলিশের দায়ের করা মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। এর আগে ৮ এপ্রিল বিএনপি নেতা মোর্শেদ খানের গুলশানের বাসা থেকে বের হওয়ার পর সালাউদ্দিন আহমেদকে গ্রেফতার করেছিলেন সাদা পোশাকে গোয়েন্দারা। পরে ১ এপ্রিল রাজধানীর পল্টন থানায় দায়ের করা গাড়ি পোড়ানো ও ককটেল বিস্ফোরণের একটি মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে ৩ দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। ওই মামলায় জামিন লাভের পর ১৬ মে দুপুরে কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন সালাউদ্দিন আহমেদ। শেষ পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া অন্য কোন মামলায় গ্রেফতার না দেখানোর উচ্চ আদালতের নির্দেশনা এবং গ্রেফতার দেখানো মামলায় জামিন নিয়ে তিনি কারা মুক্ত হয়েছিলেন।
বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে রাজধানীর পল্টন থানায় দায়েরকৃত মামলায় বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান ও মোহাম্মদ শাহজাহান এবং বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেনকে ১৬ মে ২০১৩ ছয় মাসের জামিন দেয় হাইকোর্ট। পরে তিনজনকেই ফের কারাফটক থেকে আটক করে পুলিশ। পরে অবশ্য তারা উচ্চ আদালতের কঠোর আদেশে জামিন লাভ করেন।
১৮ মে ২০১৩ গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে বিএনপির ৫৩ জন নেতা-কর্মী জামিনে বেরিয়ে আসার পর পুলিশ পুনরায় তাদের আটক করে। বিএনপির কোনো কোনো নেতার বিরুদ্ধে ৫০টিরও বেশি মামলা দিয়েছে পুলিশ। গ্রেফতার হওয়া বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের মধ্যে রয়েছেন শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি এমপি, প্রফেসর আবু তাহের, বিল্লাল হোসেন, মোঃ বশিরুল হক, মেহেদী হাসান, মোঃ শাহজাহান, তোজাম্মেল হক, কাশেম মজুমদার, আশরাফুল ইসলাম, মুজিবুর রহমান, আবদুল কাদির জিলানী, আজগর আলী, এশাখুল ইসলাম, নাসির উদ্দিন, ইমরুল কায়েস, জিয়াউল হক, জুলফিকার আলী ভূঁইয়া, আসাদুজ্জামান, আনোয়ার হোসেন, জুয়েল ও ওমর ফারুক । এরমধ্যে যুবদল সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের বিরুদ্ধে ৭৮টি মামলা দেয়া হয়েছে।
জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও রাজশাহী মহানগর আমীর আমীর আতাউর রহমান ১৬ জুন ২০১৩ জামিন মুক্তি পেয়ে কাশিমপুর কারাগার থেকে বের হলে কারাফটক থেকে আবারো গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ১৯ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর শ্যামলী থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার জামিনে মুক্তির পর ৬ আগস্ট ২০১৩ তাকে ফের গ্রেফতার করে কারাগারে প্রেরণ করা হয়। জেলখানা ঘাটে মিছিল করা, রিকশা ভাঙচুর, পুলিশের ওপর হামলা করে তিন পুলিশ সদস্যকে আহতের ঘটনায় তাকে পুলিশ পুনরায় হয়রানিমূলক গ্রেফতার করে।
খুলনা সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আলী আকবর বাদী হয়ে খুলনা মহানগর জামায়াতের আমীর মাওলানা আবুল কালাম আজাদ ও ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি সাইদুর রহমানসহ ১৪ জন এবং অজ্ঞাতনামা ৫০-৬০ জনের বিরুদ্ধে এ মামলা দায়ের করেন।  জেলগেট থেকে আটক করা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আতহার উদ্দিন ও কলেজ ছাত্র ইব্রাহিমকেও উক্ত মামলায়  গ্রেফতার দেখানো হয়। অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার খুলনা সদর থানার ২০১০ সালের দ্রুত বিচার আইনে ও পুলিশের কাজে বাধাদানের মামলায় জামিন লাভ করেন। এরপর তাকে খুলনা সদর থানায় মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। পরে এই মামলায়ও তিনি হাইকোর্ট থেকে জামিন লাভ করেন। পরবর্তীতে তাকে সোনাডাঙ্গা মডেল থানার মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। এ মামলায়ও  তিনি ৮ জুলাই হাইকোর্ট থেকে জামিন লাভ করেন। ৬ আগস্ট তিনি খুলনা জেলা কারাগার থেকে দুপুরে বের হবার সাথে সাথে কারাগারের প্রধান ফটকের ভেতর থেকে তাকে গোয়েন্দা পুলিশের জিপে করে খুলনা মহানগর পুলিশের (কেএমপি) সদর দফতরে নিয়ে যাওয়া হয়। ২০১২ সালের ১২ নবেম্বর সন্ধ্যার পর ঢাকা মহানগর  গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ  রাজধানীর গুলশান এলাকা থেকে অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরোয়ারকে গ্রেফতার করে। ওইদিন রাজধানীর পল্টনে ছিল ১৮ দলীয় জোটের গণমিছিল। মিছিল পূর্ব সমাবেশে মিয়া গোলাম পরওয়ার উপস্থিত ছিলেন। এরপর তিনি গণমিছিলে অংশ  নেন। মিছিল শেষে সন্ধ্যার পর গুলশান এলাকায় যান। সেখান থেকেই ডিবি পুলিশের উত্তর বিভাগ তাকে গ্রেফতার করে ডিবি অফিসে নিয়ে যায়।
৫ বার জামিন পেয়েও কারামুক্তি পাননি ডেমরার ডগাইর দারুচ্ছুন্নাত ফাজিল মাদরাসার আরবি প্রভাষক মাওলানা আবু হানিফ। বিনা কারণে গ্রেফতার হওয়ার ৭ মাসের মধ্যে আদালত থেকে ৫ বার জামিন পেলেও যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশ তাকে জেলগেট থেকে প্রতিবারই গ্রেফতার করে। নবজাতক সন্তানের মুখও তিনি দেখতে পাননি। এবারের ঈদ-উল-ফিতরও কাটে থানা হাজতের চার দেয়ালের মধ্যেই। ডায়াবেটিক, বাতজ্বর ও ঠান্ডাজনিত রোগসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত আবু হানিফ দিন দিন আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি জেলে থাকায় তার পরিবার পড়েছে মহাসংকটে। তার একটি স্টেশনারী কাম লাইব্রেরী ব্যবসা রয়েছে। ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ জামায়াতে ইসলামী আহূত হরতালের দিন সকাল সাড়ে সাতটায় তার ডগাইর বাজারের দোকান থেকে তাকে ডেমরা থানা পুলিশ গ্রেফতার করে। পরের দিন ৫ ফেব্রুয়ারি  তার বিরুদ্ধে ডেমরা বাঁশের পুলে গাড়ি পোড়ানোর মামলা দিয়ে আদালতে পাঠায়। আদালত তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে জেল-হাজতে পাঠায়। প্রায় দীর্ঘ দু’মাস পর এপ্রিল মাসে আদালত থেকে জামিন দিলে কাশিমপুর কারাগারের গেট থেকে যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশ তাকে আবার গ্রেফতার করে দু’টি মামলা দেয়। এর পর মে মাসে আবার জামিন পেলে আবারও কাশিমপুর কারাগার থেকে তাকে আটক করে তার বিরুদ্ধে যাত্রাবাড়ী থানার অন্য একটি মামলায় আবার গ্রেফতার দেখানো হয়। এর পর জুন মাসে আবার জামিন লাভ করলে ঢাকা  কেন্দ্রীয় কারাগারের গেট থেকে আবারও গ্রেফতার করে যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশ। রমযান মাসে দু’বার তিনি আদালত থেকে জামিন লাভ করলে দু’বারই তাকে ঢাকা কারাগারের গেট থেকে গ্রেফতার করা হয়। সর্বশেষ তিনি ৭ আগস্ট আদালত থেকে জামিন লাভ করলে ঈদের দিন বিকেল পাঁচটায় কারাগার থেকে মুক্তি লাভ করলে আবার যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে আসে। ঈদের দিন থেকে তাকে থানা হাজতেই আটক রাখে পুলিশ।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads