সিরাজুর রহমান
শান্তিপূর্ণভাবে এবং মীমাংসার ভিত্তিতে দেশের সঙ্কট সমাধানের আর
কোনো পথ অবশিষ্ট রইল না। রাষ্ট্রপতিও রাজনীতিকে সড়কে ঠেলে দিয়েছেন। বিএনপি নেত্রী
খালেদা জিয়া ১৮ দলের জোটের একটি প্রতিনিধিদল নিয়ে মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) সন্ধ্যায়
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের কাছে আপিল করতে গিয়েছিলেন। রাষ্ট্রের তিনি অভিভাবক। তিনি
সংসদ ভেঙে দেয়া এবং তফসিল ঘোষণা বিলম্বিত করতে পারতেন, সাহসী হলে তিনি নিজেই নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান হয়ে একটি
নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সুনিশ্চিত করতে পারতেন।
কিন্তু উল্টো তিনি শেখ হাসিনাকেই নির্বাচনী সরকারের প্রধানের দায়িত্ব পালন করতে বলেছেন, যদিও তিনি ভালোভাবেই জানেন, বাংলাদেশের মানুষ তার অধীনে নির্বাচন চায় না। সংসদ ভেঙে দেয়া হয়েছে। প্রয়োজনবোধে সংবিধানের ছোটখাটো সংশোধনও আর সম্ভব নয়। আবদুল হামিদ জেলাপর্যায়ের উকিল ছিলেন। ডেপুটি স্পিকার কিংবা স্পিকার হিসেবে তিনি দলীয় স্বার্থের ওপরে উঠতে পারেননি। জঙ্গি আওয়ামী লীগদলীয় বিতর্কিত একজন বিচারপতির কাছে পরাজয় স্বীকার করলেন। রাষ্ট্রপতি হয়েও তিনি জেলা আওয়ামী লীগের কর্মী এবং স্থানীয় উকিলই রয়ে গেলেন। ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের অব্যাহতি দিলেন। সবচেয়ে বড় কথা, দেশ যখন কোন দিকে যাচ্ছে কেউ জানে না, সেই মহাসঙ্কটেও তিনি সমাধানের উদ্যোগ নিতে এবং জাতিকে আশ্বাস দিতে এগিয়ে এলেন না। ুদ্র দলীয় আনুগত্যের ওপর উঠতে পারেননি রাষ্ট্রপতি। পরম দুঃখ ও আফসোসের কথা। উচ্চ দায়িত্ব অনেক সময় সাধারণ মানুষকেও মহানুভবতা দেয়। তবে সব সাধারণ মানুষ তো আর এক নয়!
তবু বিএনপি এবং ১৮ দলের জোট বঙ্গভবনে ব্যর্থ মিশনে গিয়ে অত্যন্ত ভালো কাজ করেছে। শেষ মুহূর্তেও তারা শান্তিতে ও সমঝোতার ভিত্তিতে সঙ্কটের অবসান করতে চেয়েছিল। দেশের মানুষ তার অকাট্য প্রমাণ পেল। এরপর যা ঘটবে সে দায়িত্ব আর খালেদা জিয়া কিংবা ১৮ দলের নয়। সে দায়িত্ব সম্পূর্ণরূপে শেখ হাসিনা এবং তার ভারতীয় পৃষ্ঠপোষকদের।
একটি সন্দেহ আমার মনে উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে। ক্ষমতা কি এখন সত্যি সত্যি শেখ হাসিনার হাতে? হাব-ভাবে পঙ্কজ শরণকে এখন দিল্লির ভাইস রয় বলেই মনে হয়। কলকাঠি তিনি নাড়ছেন। হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে তিনি বৈঠকে ডাকছেন, বিশ্ব বেহায়া, বিশ্ব বেঈমান এরশাদের সাথে একের পর এক বৈঠক করছেন, বৈঠক করছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজিনার সাথেও এবং হয়তো দিল্লির নির্দেশনামাগুলো পৌঁছে দিচ্ছেন শেখ হাসিনাকে।
তিন বছর আগে সংসদে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী পাস হওয়ার সময় থেকেই পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল হাসিনা গদি ছাড়তে রাজি নন, আর তার ভারতীয় পৃষ্ঠপোষকেরাও তাকে গদি ছাড়তে দেবেন না। একটা আপাত বিরোধিতা আছে এখানে। ভারতে আমার মিডিয়া বন্ধুদের কেউ কেউ আমাকে বলেছেন, শেখ হাসিনাকে দিল্লির নেতারা সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি মনে করেন না। বস্তুত এক-এগারোর পরে আওয়ামী লীগে নেতৃত্ব পরিবর্তনের চেষ্টা করেছিল ভারত। তৎকালীন অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখার্জি ঢাকায় এসে তোফায়েল আহমেদ, আমীর হোসেন আমু ও সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের সাথে দীর্ঘ গোপন বৈঠক করেছেন। সে খবর হাসিনাও জানতে পেরেছিলেন। তোফায়েল আর আমু সে জন্যই ২০০৯ সালের মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়েছিলেন। এখন যে তাদের আবার নির্বাচনী মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে তার পেছনেও দিল্লির নির্দেশ আছে বলে সন্দেহ করা হয়। হাসিনার প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে দিল্লির চোখে তারা সম্ভাব্য রিজার্ভ টিম হয়ে রইলেন।
বিএনপিকে বাদ দিয়ে নির্বাচন
কোনো সন্দেহ আর অবশিষ্ট রইল না যে, হাসিনা বিএনপিকে বাদ দিয়েই নির্বাচন করতে চান। ২৬ অক্টোবরের আগেও চূড়ান্তভাবে সে সিদ্ধান্ত তিনি নেননি। বিএনপি তখন ৭২ ঘণ্টার হরতাল ডাকায় তিনি শঙ্কিতও হয়েছিলেন। কিন্তু তারপর থেকে তিনি বুঝে গেছেন বিএনপির ৭২ কিংবা ৮৪ ঘণ্টার মেয়াদি হরতাল তিনি হ্যান্ডেল করতে (সামলাতে) পারবেন। প্রচুর সময়ের নোটিশ দিয়ে এবং ঢাকঢোল পিটিয়ে সীমিত মেয়াদের হরতালকে হাসিনা এখন মান-অভিমানের হরতালের মতোই অর্থহীন বিবেচনা করছেন। বিএনপিকে তোয়াজ ও সাধাসাধি করার প্রয়োজন তিনি আর দেখছেন না। বিএনপি সম্বন্ধে সুস্পষ্ট পরিকল্পনা হাসিনার আগেও ছিল। বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ জিয়াউর রহমান ও তার পরিবারকে চিরতরে বিদায় করা না গেলে তার বাকশালী মসনদ কখনোই নিরাপদ হবে না। প্রধানমন্ত্রিত্বের প্রথম মেয়াদে সংসদে তার গরিষ্ঠতা যথেষ্ট ছিল না। দ্বিতীয়ত, দিল্লির কাছ থেকেও তখন তিনি কিয়ারেন্স পাননি।
বিএনপি নেতৃত্বের সবাই সার্বিক পরিস্থিতির মূল্যায়ন বোঝেন কি না, আমার সন্দেহ আছে। ভোট পড়–ক কিংবা নাই পড়–ক, কোনো মতে যদি একটি নির্বাচন হাসিনা করে ফেলতে পারেন ভারত অবিলম্বে সে সরকারকেই স্বীকৃতি দেবে। ওয়াশিংটন ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও চীন স্বীকৃতি দিতে গড়িমসি করবে। নিউ ইয়র্ক টাইমসের সম্পাদকীয় থেকে মনে হতে পারে তেমন অবস্থায় ওয়াশিংটন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ‘স্যাঙ্কশাসন’ (শাস্তিমূলক নিষেধাজ্ঞা, অবরোধ, ইত্যাদি) আরোপ করার কথাও চিন্তা করছে। বিএনপি এতকাল কূটনীতিকদের ওপর আস্থার ডিমের ঝুড়িটা ছেড়ে দিয়ে মারাত্মক ভুল করেছে। আমেরিকা একটি বিশ্বশক্তি। কিন্তু তারও হাজার রকমের এবং মাঝে মাঝে পরস্পরবিরোধী স্বার্থ ছড়িয়ে আছে পৃথিবীর সর্বত্র। সোভিয়েট ইউনিয়নের ঘনিষ্ঠতম মিত্র হিসেবে যে ভারত এককালে ওয়াশিংটনের শত্রু ছিল, ওয়াশিংটন এখন তার সাথেই বন্ধুত্ব করেছে, প্রেসিডেন্ট ওবামা মাত্র সম্প্রতি বলেছেন সে বন্ধুত্ব তিনি নষ্ট করতে চান না।
ভারত ছাড়া আর কাউকে চেনেন না হাসিনা
ভারতের খুঁটির ওপর শেখ হাসিনার এমনই ভরসা যে, ড. ইউনূস ও গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যাপারে সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল কিনটন, বর্তমান প্রেসিডেন্ট ওবামা, তার প্রথম পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি কিনটন অর্থাৎ কোনো মার্কিন নেতার অনুরোধ-উপরোধকে পাত্তা দেননি। হিলারি নিজে এসেছিলেন ঢাকায়। তাতেও কাজ হয়নি। সহকারী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লেক ঢাকায় এসেছিলেন কিন্তু হাসিনা তাকে দর্শন দান করেননি, রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনা চার-পাঁচ মাস ধরে চেষ্টা করে হাসিনার সাথে দেখা করতে পারেননি। প্রথমে জাতিসঙ্ঘের সহকারী মহাসচিব তারাঙ্কুর ঢাকায় এসেছিলেন এবং পরে স্বয়ং মহাসচিব বান কি মুন টেলিফোনে নির্বাচন সম্বন্ধে সংলাপের অনুরোধ জানিয়েছিলেন। সারা দুনিয়ার কূটনীতিকেরা, ইউরোপীয় পার্লামেন্ট, ব্রিটিশ ও মার্কিন সংসদ এবং বাংলাদেশের জ্ঞানী-গুণী ও মানী ব্যক্তিদের প্রায় সবাই সে উপদেশ প্রধানমন্ত্রীকে দিয়েছেন। তিনি শুনেছেন কারো কথা? তার একমাত্র ঈশ্বর দিল্লি। দিল্লির ছাড়া আর কারো উপদেশ শেখ হাসিনা শুনবেন না।
আওয়ামী লীগের প্রতি রাষ্ট্রপতি হামিদের চূড়ান্ত আনুগত্যের পর রাজনীতি কিংবা সংবিধানসংক্রান্ত সব বিষয়েরই সমাধান এখন রাজপথেই হতে হবে। সরকার তাদের রাজনৈতিক বিরোধীদের পিঠ দেয়ালে ঠেকিয়ে দিয়েছে। এখন তারা শুধু সর্বশক্তি নিয়ে সামনেই এগোতে পারে। বিশ্বের মানুষ আগেই জেনে গেছে, বাংলাদেশে এতকাল যারা বুঝতে অস্বীকার করে এসেছেন এখন তাদেরও বুঝতে এবং বিশ্বাস করতে হবে যে, এই মর্মান্তিক অবস্থার জন্য দায়ী শেখ হাসিনা এবং পেছন থেকে যারা পুতুলের মতো তাকে সামনের দিকে ঢেলে দিচ্ছে সেই ভারত।
ভারত প্রকৃত প্রস্তাবে বাংলাদেশটাকে ‘অ্যানেক্স’ (আত্মস্থ করা, গ্রাস করা) করে নিতে চায়। হাসিনার দ্বিতীয় মেয়াদে তারা এশীয় হাইওয়ে, সড়ক ও রেল ও নদীপথে ট্রানজিট, চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর, সর্বোপরি বাংলাদেশের পানি হাতিয়ে নিয়েছে এবং সবই বিনামূল্যে। তাদের পরিকল্পনা হচ্ছে হাসিনার তৃতীয় মেয়াদে বাংলাদেশকে তারা পুরোপুরি ভারতের সাথে যুক্ত করে নেবে। সে জন্যই হাসিনাকে যেকোনোভাবে গদিতে রাখতে দিল্লি মরিয়া হয়ে উঠেছে।
বিএনপির দুর্বোধ্য স্ট্র্যাটেজি
২০১১ সালে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী পাস হওয়ার পর থেকে বিএনপির স্ট্র্যাটেজি বোঝার অনেক চেষ্টা করেছি, বুঝে উঠতে পারিনি। স্ট্র্যাটেজি সম্বন্ধে দলের ভেতরেও বহু মত আছে বলে মনে হয়। তা ছাড়া প্রায়ই আমার মনে হয়েছে, এ দলের ভেতরে ‘র’ ও আওয়ামী লীগের চর আছে, ‘যখন যেমন তখন তেমন’ সুবিধাবাদীরা আছেন। হয়তো সাবোটিয়ারও (অন্তর্ঘাতী) আছেন কিছু। শত ব্যর্থতা এবং হতাশা সত্ত্বেও তারা বুঝে উঠতে পারেন না যে, সুবিধা মতো ধীরেসুস্থে জিরিয়ে জিরিয়ে আন্দোলনে জনমত সৃষ্টি করা যায় কিন্তু একটা প্রতিষ্ঠিত এবং বিদেশী মদদপুষ্ট সরকারকে উৎখাত করা যায় না। শেখ হাসিনা জনমতকে পাত্তা দিয়েছেন বলে শুনেছেন কেউ? নোয়াখালীর আঞ্চলিক কথায় ‘জামাইয়ের জন্যও পরান পোড়ে, মুরগির জন্যও পরান পোড়ে’। জামাই এসেছে, মুরগি জবাই করে খাওয়াতে হবে, কিন্তু মুরগিটাও যে খুব আদরের! বিএনপির আন্দোলন হচ্ছে সেভাবে।
অনেক আন্দোলন করেছে, হরতাল করেছে বিএনপি। জনসাধারণের অসুবিধার কথা ভেবে আবার সে হরতাল তুলে নিয়েছে। মাঝখান থেকে নিজেদের কর্মীরা আওয়ামী লীগের খুনিদের, পুলিশের, র্যাবের আর বিজিবির হাতে মার খেয়েছে, প্রাণ দিয়েছে। স্বভাবতই সে আন্দোলনে কাজ হয়নি, আবার হরতাল ডাকতে হচ্ছে। বারবার হরতাল করে দেশের মানুষের এবং নিজেদের ভোগান্তি না বাড়িয়ে একবারেই আন্দোলন করে সরকার হটিয়ে দেয়া অনেক সহজ হতো। অনেক কম ত্যাগ স্বীকার করতে হতো তাতে। হাসিনা গর্ব করেন বিএনপিকে আন্দোলন তার কাছ থেকে শিখতে হবে।
সেটা অবশ্যই সত্যি কথা। হাসিনা কখনো কিস্তিতে কিস্তিতে, পথের ধারে বসে পান-তামাক খেয়ে আন্দোলন করেছেন? একটানা হরতাল, পরিবহন অবরোধ আর মানুষ হত্যা করে তিনি কি তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতি আদায় করে নেননি? তার লগি-লাঠি-বৈঠার আন্দোলন ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর শুরু হয়ে এক-এগারো (২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি) পর্যন্ত চলেনি? খালেদা জিয়া এ কথা বুঝতে পারেন না, যে গণ-আন্দোলন সংগঠিত হলেই অবিলম্বে শেষ আঘাত হানতে হয়। নইলে আন্দোলন জুড়িয়ে যায়, নতুন করে চাগিয়ে তুলতে অনেক বেশি সময় লাগে।
আবারো সেই পুরনো খেলা?
বঙ্গভবনের অপমানকর অভিজ্ঞতার পর আবারো বিএনপি এবং ১৮ দলের জোট সেই পুরনো খেলা খেলছে বলে মনে হয়। সরকার ও আওয়ামী লীগকে প্রস্তুতির জন্য পাঁচ দিন সময় দিয়ে বিএনপি চার দিনের হরতাল দেবে বলে শোনা যাচ্ছে। সংসদ ভেঙে দেয়ার মুহূর্ত থেকে তাদের উচিত ছিল অবিরাম হরতাল আর সড়ক রেল ও নদীপথ অবরোধ করে দেশ অচল করে দেয়া। এ ঘোষণা দিয়ে দেয়া যে, শেখ হাসিনার গদত্যাগ এবং নির্দলীয় সরকার গঠন পর্যন্ত এই হরতাল, এই অবরোধ চলতেই থাকবে। ভালো-মানসী আন্দোলন অনেকে দেখেছে দেশের মানুষ তাদের কাছ থেকে। তেমন আন্দোলনে তারা আর আগ্রহী নয়।
বিএনপিতে কেউ কেউ হয়তো ভয় করছেন যে, পথের আন্দোলনে হাসিনাকে হটানোর চেষ্টা দুর্বল হয়ে উঠলে ভারত হয়তো বাংলাদেশে সৈন্য পাঠাতে পারে। সে আশঙ্কা কিছুকাল আগে পর্যন্ত হয়তো বাস্তব ছিল। কিন্তু পরিস্থিতির এখন গুণগত পরিবর্তন হয়েছে। সাম্প্রতিককালে বিশ্ব জনমত এবং কূটনৈতিক বিশ্বের সমর্থন ঘুরে গেছে বিএনপির দিকে। এ অবস্থায় বাংলাদেশে সৈন্য পাঠানো ভারতের বন্ধু ওয়াশিংটনও সমর্থন করবে না। সে অবস্থায় বাংলাদেশকে সমর্থন দিতে গণচীনও এগিয়ে আসবে। বিশেষ করে এ কারণে যে, হিমালয়ের গায়ে অরুনাচলে বিস্তীর্ণ বিবদমান এলাকা নিয়ে ভারত-চীন উত্তেজনা বেড়ে গেছে। যেকোনো সময় সেখানে ১৯৬২ সালের মতো প্রচণ্ড যুদ্ধ শুরু হয়ে যেতে পারে। ভারতও সেটাই মনে করে। মাত্র দু’দিন আগে খবর বেরিয়েছে যে, ভারত জরুরিভাবে সে অঞ্চলে আরো ৮০ হাজার সৈন্য পাঠাচ্ছে।
আওয়ামী লীগ যদি ভোটারবিহীন হলেও কোনো নির্বাচনে জয়ী হতে পারে, শেখ হাসিনা যদি আবার প্রধানমন্ত্রীর গদিতে বসতে পারেন, তাহলে কী হতে পারে বাংলাদেশে? বেগম খালেদা জিয়ার সন্তানেরা বাংলাদেশে ফিরতে পারবেন না। খালেদাকে নির্বাসনে যেতে হবে, নয়তো খুন করা হবে। বিএনপির বহু নেতাকর্মী হালুয়া-রুটির লোভে চুপিসারে গিয়ে আওয়ামী লীগে কিংবা অন্য কোনো দলে যোগ দেবে। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের বিএনপি অবলুপ্ত হবে। সবচেয়ে বড় লোকসান, স্বাধীন বাংলাদেশ বলে কিছু অবশিষ্ট থাকবে না, তিন লাখ মুক্তিযোদ্ধার আত্মদান বিফলে যাবে। তার আগে বাংলাদেশের যা কিছু সম্পদ অবশিষ্ট আছে হাসিনার তাঁবেদারেরা লুটেপুটে নিয়ে যাবে।
কিন্তু উল্টো তিনি শেখ হাসিনাকেই নির্বাচনী সরকারের প্রধানের দায়িত্ব পালন করতে বলেছেন, যদিও তিনি ভালোভাবেই জানেন, বাংলাদেশের মানুষ তার অধীনে নির্বাচন চায় না। সংসদ ভেঙে দেয়া হয়েছে। প্রয়োজনবোধে সংবিধানের ছোটখাটো সংশোধনও আর সম্ভব নয়। আবদুল হামিদ জেলাপর্যায়ের উকিল ছিলেন। ডেপুটি স্পিকার কিংবা স্পিকার হিসেবে তিনি দলীয় স্বার্থের ওপরে উঠতে পারেননি। জঙ্গি আওয়ামী লীগদলীয় বিতর্কিত একজন বিচারপতির কাছে পরাজয় স্বীকার করলেন। রাষ্ট্রপতি হয়েও তিনি জেলা আওয়ামী লীগের কর্মী এবং স্থানীয় উকিলই রয়ে গেলেন। ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের অব্যাহতি দিলেন। সবচেয়ে বড় কথা, দেশ যখন কোন দিকে যাচ্ছে কেউ জানে না, সেই মহাসঙ্কটেও তিনি সমাধানের উদ্যোগ নিতে এবং জাতিকে আশ্বাস দিতে এগিয়ে এলেন না। ুদ্র দলীয় আনুগত্যের ওপর উঠতে পারেননি রাষ্ট্রপতি। পরম দুঃখ ও আফসোসের কথা। উচ্চ দায়িত্ব অনেক সময় সাধারণ মানুষকেও মহানুভবতা দেয়। তবে সব সাধারণ মানুষ তো আর এক নয়!
তবু বিএনপি এবং ১৮ দলের জোট বঙ্গভবনে ব্যর্থ মিশনে গিয়ে অত্যন্ত ভালো কাজ করেছে। শেষ মুহূর্তেও তারা শান্তিতে ও সমঝোতার ভিত্তিতে সঙ্কটের অবসান করতে চেয়েছিল। দেশের মানুষ তার অকাট্য প্রমাণ পেল। এরপর যা ঘটবে সে দায়িত্ব আর খালেদা জিয়া কিংবা ১৮ দলের নয়। সে দায়িত্ব সম্পূর্ণরূপে শেখ হাসিনা এবং তার ভারতীয় পৃষ্ঠপোষকদের।
একটি সন্দেহ আমার মনে উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে। ক্ষমতা কি এখন সত্যি সত্যি শেখ হাসিনার হাতে? হাব-ভাবে পঙ্কজ শরণকে এখন দিল্লির ভাইস রয় বলেই মনে হয়। কলকাঠি তিনি নাড়ছেন। হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে তিনি বৈঠকে ডাকছেন, বিশ্ব বেহায়া, বিশ্ব বেঈমান এরশাদের সাথে একের পর এক বৈঠক করছেন, বৈঠক করছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজিনার সাথেও এবং হয়তো দিল্লির নির্দেশনামাগুলো পৌঁছে দিচ্ছেন শেখ হাসিনাকে।
তিন বছর আগে সংসদে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী পাস হওয়ার সময় থেকেই পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল হাসিনা গদি ছাড়তে রাজি নন, আর তার ভারতীয় পৃষ্ঠপোষকেরাও তাকে গদি ছাড়তে দেবেন না। একটা আপাত বিরোধিতা আছে এখানে। ভারতে আমার মিডিয়া বন্ধুদের কেউ কেউ আমাকে বলেছেন, শেখ হাসিনাকে দিল্লির নেতারা সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি মনে করেন না। বস্তুত এক-এগারোর পরে আওয়ামী লীগে নেতৃত্ব পরিবর্তনের চেষ্টা করেছিল ভারত। তৎকালীন অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখার্জি ঢাকায় এসে তোফায়েল আহমেদ, আমীর হোসেন আমু ও সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের সাথে দীর্ঘ গোপন বৈঠক করেছেন। সে খবর হাসিনাও জানতে পেরেছিলেন। তোফায়েল আর আমু সে জন্যই ২০০৯ সালের মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়েছিলেন। এখন যে তাদের আবার নির্বাচনী মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে তার পেছনেও দিল্লির নির্দেশ আছে বলে সন্দেহ করা হয়। হাসিনার প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে দিল্লির চোখে তারা সম্ভাব্য রিজার্ভ টিম হয়ে রইলেন।
বিএনপিকে বাদ দিয়ে নির্বাচন
কোনো সন্দেহ আর অবশিষ্ট রইল না যে, হাসিনা বিএনপিকে বাদ দিয়েই নির্বাচন করতে চান। ২৬ অক্টোবরের আগেও চূড়ান্তভাবে সে সিদ্ধান্ত তিনি নেননি। বিএনপি তখন ৭২ ঘণ্টার হরতাল ডাকায় তিনি শঙ্কিতও হয়েছিলেন। কিন্তু তারপর থেকে তিনি বুঝে গেছেন বিএনপির ৭২ কিংবা ৮৪ ঘণ্টার মেয়াদি হরতাল তিনি হ্যান্ডেল করতে (সামলাতে) পারবেন। প্রচুর সময়ের নোটিশ দিয়ে এবং ঢাকঢোল পিটিয়ে সীমিত মেয়াদের হরতালকে হাসিনা এখন মান-অভিমানের হরতালের মতোই অর্থহীন বিবেচনা করছেন। বিএনপিকে তোয়াজ ও সাধাসাধি করার প্রয়োজন তিনি আর দেখছেন না। বিএনপি সম্বন্ধে সুস্পষ্ট পরিকল্পনা হাসিনার আগেও ছিল। বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ জিয়াউর রহমান ও তার পরিবারকে চিরতরে বিদায় করা না গেলে তার বাকশালী মসনদ কখনোই নিরাপদ হবে না। প্রধানমন্ত্রিত্বের প্রথম মেয়াদে সংসদে তার গরিষ্ঠতা যথেষ্ট ছিল না। দ্বিতীয়ত, দিল্লির কাছ থেকেও তখন তিনি কিয়ারেন্স পাননি।
বিএনপি নেতৃত্বের সবাই সার্বিক পরিস্থিতির মূল্যায়ন বোঝেন কি না, আমার সন্দেহ আছে। ভোট পড়–ক কিংবা নাই পড়–ক, কোনো মতে যদি একটি নির্বাচন হাসিনা করে ফেলতে পারেন ভারত অবিলম্বে সে সরকারকেই স্বীকৃতি দেবে। ওয়াশিংটন ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও চীন স্বীকৃতি দিতে গড়িমসি করবে। নিউ ইয়র্ক টাইমসের সম্পাদকীয় থেকে মনে হতে পারে তেমন অবস্থায় ওয়াশিংটন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ‘স্যাঙ্কশাসন’ (শাস্তিমূলক নিষেধাজ্ঞা, অবরোধ, ইত্যাদি) আরোপ করার কথাও চিন্তা করছে। বিএনপি এতকাল কূটনীতিকদের ওপর আস্থার ডিমের ঝুড়িটা ছেড়ে দিয়ে মারাত্মক ভুল করেছে। আমেরিকা একটি বিশ্বশক্তি। কিন্তু তারও হাজার রকমের এবং মাঝে মাঝে পরস্পরবিরোধী স্বার্থ ছড়িয়ে আছে পৃথিবীর সর্বত্র। সোভিয়েট ইউনিয়নের ঘনিষ্ঠতম মিত্র হিসেবে যে ভারত এককালে ওয়াশিংটনের শত্রু ছিল, ওয়াশিংটন এখন তার সাথেই বন্ধুত্ব করেছে, প্রেসিডেন্ট ওবামা মাত্র সম্প্রতি বলেছেন সে বন্ধুত্ব তিনি নষ্ট করতে চান না।
ভারত ছাড়া আর কাউকে চেনেন না হাসিনা
ভারতের খুঁটির ওপর শেখ হাসিনার এমনই ভরসা যে, ড. ইউনূস ও গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যাপারে সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল কিনটন, বর্তমান প্রেসিডেন্ট ওবামা, তার প্রথম পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি কিনটন অর্থাৎ কোনো মার্কিন নেতার অনুরোধ-উপরোধকে পাত্তা দেননি। হিলারি নিজে এসেছিলেন ঢাকায়। তাতেও কাজ হয়নি। সহকারী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লেক ঢাকায় এসেছিলেন কিন্তু হাসিনা তাকে দর্শন দান করেননি, রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনা চার-পাঁচ মাস ধরে চেষ্টা করে হাসিনার সাথে দেখা করতে পারেননি। প্রথমে জাতিসঙ্ঘের সহকারী মহাসচিব তারাঙ্কুর ঢাকায় এসেছিলেন এবং পরে স্বয়ং মহাসচিব বান কি মুন টেলিফোনে নির্বাচন সম্বন্ধে সংলাপের অনুরোধ জানিয়েছিলেন। সারা দুনিয়ার কূটনীতিকেরা, ইউরোপীয় পার্লামেন্ট, ব্রিটিশ ও মার্কিন সংসদ এবং বাংলাদেশের জ্ঞানী-গুণী ও মানী ব্যক্তিদের প্রায় সবাই সে উপদেশ প্রধানমন্ত্রীকে দিয়েছেন। তিনি শুনেছেন কারো কথা? তার একমাত্র ঈশ্বর দিল্লি। দিল্লির ছাড়া আর কারো উপদেশ শেখ হাসিনা শুনবেন না।
আওয়ামী লীগের প্রতি রাষ্ট্রপতি হামিদের চূড়ান্ত আনুগত্যের পর রাজনীতি কিংবা সংবিধানসংক্রান্ত সব বিষয়েরই সমাধান এখন রাজপথেই হতে হবে। সরকার তাদের রাজনৈতিক বিরোধীদের পিঠ দেয়ালে ঠেকিয়ে দিয়েছে। এখন তারা শুধু সর্বশক্তি নিয়ে সামনেই এগোতে পারে। বিশ্বের মানুষ আগেই জেনে গেছে, বাংলাদেশে এতকাল যারা বুঝতে অস্বীকার করে এসেছেন এখন তাদেরও বুঝতে এবং বিশ্বাস করতে হবে যে, এই মর্মান্তিক অবস্থার জন্য দায়ী শেখ হাসিনা এবং পেছন থেকে যারা পুতুলের মতো তাকে সামনের দিকে ঢেলে দিচ্ছে সেই ভারত।
ভারত প্রকৃত প্রস্তাবে বাংলাদেশটাকে ‘অ্যানেক্স’ (আত্মস্থ করা, গ্রাস করা) করে নিতে চায়। হাসিনার দ্বিতীয় মেয়াদে তারা এশীয় হাইওয়ে, সড়ক ও রেল ও নদীপথে ট্রানজিট, চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর, সর্বোপরি বাংলাদেশের পানি হাতিয়ে নিয়েছে এবং সবই বিনামূল্যে। তাদের পরিকল্পনা হচ্ছে হাসিনার তৃতীয় মেয়াদে বাংলাদেশকে তারা পুরোপুরি ভারতের সাথে যুক্ত করে নেবে। সে জন্যই হাসিনাকে যেকোনোভাবে গদিতে রাখতে দিল্লি মরিয়া হয়ে উঠেছে।
বিএনপির দুর্বোধ্য স্ট্র্যাটেজি
২০১১ সালে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী পাস হওয়ার পর থেকে বিএনপির স্ট্র্যাটেজি বোঝার অনেক চেষ্টা করেছি, বুঝে উঠতে পারিনি। স্ট্র্যাটেজি সম্বন্ধে দলের ভেতরেও বহু মত আছে বলে মনে হয়। তা ছাড়া প্রায়ই আমার মনে হয়েছে, এ দলের ভেতরে ‘র’ ও আওয়ামী লীগের চর আছে, ‘যখন যেমন তখন তেমন’ সুবিধাবাদীরা আছেন। হয়তো সাবোটিয়ারও (অন্তর্ঘাতী) আছেন কিছু। শত ব্যর্থতা এবং হতাশা সত্ত্বেও তারা বুঝে উঠতে পারেন না যে, সুবিধা মতো ধীরেসুস্থে জিরিয়ে জিরিয়ে আন্দোলনে জনমত সৃষ্টি করা যায় কিন্তু একটা প্রতিষ্ঠিত এবং বিদেশী মদদপুষ্ট সরকারকে উৎখাত করা যায় না। শেখ হাসিনা জনমতকে পাত্তা দিয়েছেন বলে শুনেছেন কেউ? নোয়াখালীর আঞ্চলিক কথায় ‘জামাইয়ের জন্যও পরান পোড়ে, মুরগির জন্যও পরান পোড়ে’। জামাই এসেছে, মুরগি জবাই করে খাওয়াতে হবে, কিন্তু মুরগিটাও যে খুব আদরের! বিএনপির আন্দোলন হচ্ছে সেভাবে।
অনেক আন্দোলন করেছে, হরতাল করেছে বিএনপি। জনসাধারণের অসুবিধার কথা ভেবে আবার সে হরতাল তুলে নিয়েছে। মাঝখান থেকে নিজেদের কর্মীরা আওয়ামী লীগের খুনিদের, পুলিশের, র্যাবের আর বিজিবির হাতে মার খেয়েছে, প্রাণ দিয়েছে। স্বভাবতই সে আন্দোলনে কাজ হয়নি, আবার হরতাল ডাকতে হচ্ছে। বারবার হরতাল করে দেশের মানুষের এবং নিজেদের ভোগান্তি না বাড়িয়ে একবারেই আন্দোলন করে সরকার হটিয়ে দেয়া অনেক সহজ হতো। অনেক কম ত্যাগ স্বীকার করতে হতো তাতে। হাসিনা গর্ব করেন বিএনপিকে আন্দোলন তার কাছ থেকে শিখতে হবে।
সেটা অবশ্যই সত্যি কথা। হাসিনা কখনো কিস্তিতে কিস্তিতে, পথের ধারে বসে পান-তামাক খেয়ে আন্দোলন করেছেন? একটানা হরতাল, পরিবহন অবরোধ আর মানুষ হত্যা করে তিনি কি তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতি আদায় করে নেননি? তার লগি-লাঠি-বৈঠার আন্দোলন ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর শুরু হয়ে এক-এগারো (২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি) পর্যন্ত চলেনি? খালেদা জিয়া এ কথা বুঝতে পারেন না, যে গণ-আন্দোলন সংগঠিত হলেই অবিলম্বে শেষ আঘাত হানতে হয়। নইলে আন্দোলন জুড়িয়ে যায়, নতুন করে চাগিয়ে তুলতে অনেক বেশি সময় লাগে।
আবারো সেই পুরনো খেলা?
বঙ্গভবনের অপমানকর অভিজ্ঞতার পর আবারো বিএনপি এবং ১৮ দলের জোট সেই পুরনো খেলা খেলছে বলে মনে হয়। সরকার ও আওয়ামী লীগকে প্রস্তুতির জন্য পাঁচ দিন সময় দিয়ে বিএনপি চার দিনের হরতাল দেবে বলে শোনা যাচ্ছে। সংসদ ভেঙে দেয়ার মুহূর্ত থেকে তাদের উচিত ছিল অবিরাম হরতাল আর সড়ক রেল ও নদীপথ অবরোধ করে দেশ অচল করে দেয়া। এ ঘোষণা দিয়ে দেয়া যে, শেখ হাসিনার গদত্যাগ এবং নির্দলীয় সরকার গঠন পর্যন্ত এই হরতাল, এই অবরোধ চলতেই থাকবে। ভালো-মানসী আন্দোলন অনেকে দেখেছে দেশের মানুষ তাদের কাছ থেকে। তেমন আন্দোলনে তারা আর আগ্রহী নয়।
বিএনপিতে কেউ কেউ হয়তো ভয় করছেন যে, পথের আন্দোলনে হাসিনাকে হটানোর চেষ্টা দুর্বল হয়ে উঠলে ভারত হয়তো বাংলাদেশে সৈন্য পাঠাতে পারে। সে আশঙ্কা কিছুকাল আগে পর্যন্ত হয়তো বাস্তব ছিল। কিন্তু পরিস্থিতির এখন গুণগত পরিবর্তন হয়েছে। সাম্প্রতিককালে বিশ্ব জনমত এবং কূটনৈতিক বিশ্বের সমর্থন ঘুরে গেছে বিএনপির দিকে। এ অবস্থায় বাংলাদেশে সৈন্য পাঠানো ভারতের বন্ধু ওয়াশিংটনও সমর্থন করবে না। সে অবস্থায় বাংলাদেশকে সমর্থন দিতে গণচীনও এগিয়ে আসবে। বিশেষ করে এ কারণে যে, হিমালয়ের গায়ে অরুনাচলে বিস্তীর্ণ বিবদমান এলাকা নিয়ে ভারত-চীন উত্তেজনা বেড়ে গেছে। যেকোনো সময় সেখানে ১৯৬২ সালের মতো প্রচণ্ড যুদ্ধ শুরু হয়ে যেতে পারে। ভারতও সেটাই মনে করে। মাত্র দু’দিন আগে খবর বেরিয়েছে যে, ভারত জরুরিভাবে সে অঞ্চলে আরো ৮০ হাজার সৈন্য পাঠাচ্ছে।
আওয়ামী লীগ যদি ভোটারবিহীন হলেও কোনো নির্বাচনে জয়ী হতে পারে, শেখ হাসিনা যদি আবার প্রধানমন্ত্রীর গদিতে বসতে পারেন, তাহলে কী হতে পারে বাংলাদেশে? বেগম খালেদা জিয়ার সন্তানেরা বাংলাদেশে ফিরতে পারবেন না। খালেদাকে নির্বাসনে যেতে হবে, নয়তো খুন করা হবে। বিএনপির বহু নেতাকর্মী হালুয়া-রুটির লোভে চুপিসারে গিয়ে আওয়ামী লীগে কিংবা অন্য কোনো দলে যোগ দেবে। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের বিএনপি অবলুপ্ত হবে। সবচেয়ে বড় লোকসান, স্বাধীন বাংলাদেশ বলে কিছু অবশিষ্ট থাকবে না, তিন লাখ মুক্তিযোদ্ধার আত্মদান বিফলে যাবে। তার আগে বাংলাদেশের যা কিছু সম্পদ অবশিষ্ট আছে হাসিনার তাঁবেদারেরা লুটেপুটে নিয়ে যাবে।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন