সংলাপ, সংলাপ, সংলাপ অনেক দিন ধরে বাংলাদেশের মানুষের আকাক্সা। দেশের মানুষ অধীর
আগ্রহে দুই নেত্রীর সংলাপের অপোয় ছিলেন। দেশের মানুষের সাথে আন্তর্জাতিক মহলও
সংলাপের ব্যাপারে আগ্রহী ছিলেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ
মজিনা তো সংলাপ সংলাপ করে কান্ত হয়ে পড়েছেন। পশ্চিমা কূটনীতিকদের সাথে মুসলিম
বিশ্বও বাংলাদেশের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। ওআইসি ও জাতিসঙ্ঘ পর্যন্ত রাজনৈতিক
অঙ্গনকে শান্ত ও স্থিতিশীল করতে উদ্যোগ নেয়। জাতিসঙ্ঘের সহকারী মহাসচিব তারানকো
সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে সমঝোতা প্রতিষ্ঠার ল্েয বাংলাদেশ সফর করেন। কিছু দিন
আগে জাতিসঙ্ঘের মহাসচিব বান কি মুন দুই নেত্রীর কাছে টেলিফোন করে তার উদ্বেগ জানান
ও দু’জনের মধ্যে সংলাপ আয়োজনের তাগিদ দেন। দেশ-বিদেশের
অনুরোধ, তাগিদ ও আকাক্সা বিবেচনায়
নিয়ে সরকার কোনো কার্যকর উদ্যোগ না নিয়ে বিরোধী দলকে দোষারোপ অব্যাহত রাখায় দেশে
সংলাপ অনুষ্ঠান সম্ভব হয়নি। সরকারি তরফ থেকে আমন্ত্রণ জানায়ে বিরোধী দলকে চিঠি
দেয়ার কথা বলা হলেও এখন পর্যন্ত কোনো চিঠি দেয়া হয়নি।
সরকারের মেয়াদ ২৪ অক্টোবর শেষ হওয়ার পর বেগম জিয়া ২৫ অক্টোবর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সমাবেশ থেকে ২৭-২৯ তারিখ পর্যন্ত টানা ৬০ ঘণ্টা হরতাল আহ্বান করেন। এটি ছিল ১৮ দলীয় জোটের কর্মসূচি। বেগম জিয়া ২৫ ও ২৬ তারিখ দুই দিন সময় দিয়ে হরতাল কর্মসূচি দেন। মনে রাখতে হবে দিন বলতে আমরা সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত গণনা করি, ক্যালেন্ডারের ২৪ ঘণ্টায় দিন নয়। তিনি পরিষ্কার বলেন, আজ ও কাল (২৫ ও ২৬) দুই দিনের মধ্যে নির্বাচনকালীন সরকার বিষয়ে দাবি নীতিগতভাবে মেনে নিলে হরতাল দিতে হবে না। এর আগে প্রধানমন্ত্রীর সর্বদলীয় সরকারের প্রস্তÍাবের বিপরীতে বেগম জিয়া ২১ তারিখে সংবাদ সম্মেলন করে নির্দলীয় সরকারের প্রস্তÍাব দেন। বিএনপি মহাসচিব আওয়ামী লীগ মহাসচিবকে চিঠি দিয়ে সংলাপ আয়োজনে উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানান। আওয়ামী লীগ মহাসচিব বিএনপি মহাসচিবকে টেলিফোন করে চিঠিপ্রাপ্তি স্বীকার করে প্রধানমন্ত্রীর সাথে পরামর্শ করার কথা বলেন; কিন্তু হায়! কী পরামর্শ হয়েছে জানা যায়নি। নির্বাচনের তিন মাস সময় বাকি থাকায় বিরোধীদলীয় নেতা একান্ত বাধ্য হয়ে হরতাল কর্মসূচি দেন। কারণ সরকার সমঝোতার কোনো উদ্যোগ না নেয়ায় স্বাভাবিকভাবে বিরোধী দল কঠোর কর্মসূচির দিকে যায়। সরকারের কর্তাব্যক্তিরা আন্দোলন করার মুরোদ নেই বলে অনেকবার বিরোধী দলকে কটা করেছেন। তাদের কথাবার্তায় কখনো সমঝোতার সুর শোনা যায় না, বরং আন্দোলন-সংগ্রামকে ইনভাইট করা হয় বলে আমার প্রতীতি হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী এক ঢিলে দুই পাখি মারতে চেয়েছিলেন। এক দিকে দেশের মানুষের সাথে আন্তর্জাতিক মহলের মন রা করা ও আরেক দিকে হরতাল বানচাল করে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের মনোবল নষ্ট করা। তিনি আন্তরিক হলে ও সদিচ্ছা থাকলে বেগম জিয়া তো ২৯ তারিখের পর যেকোনো দিন সংলাপে সম্মতি দিয়েছিলেন। নতুন করে বেগম জিয়ার কাছে সংলাপের দিনণ চাওয়া অযৌক্তিক। প্রিয় পাঠক, আমার বন্ধু আমাকে একটি নির্দিষ্ট দিন ও সময় উল্লেখ করে দাওয়াত দিলেন। আমার যৌক্তিক অসুবিধার কারণে বললাম নির্দিষ্ট দিন বাদ দিয়ে যেকোনো দিন আমি দাওয়াত রা করতে রাজি। এরপর কি আমি নতুন করে দিন ঠিক করে দাওয়াত চাইতে পারি, না এটি করা যৌক্তিক হবে? বন্ধুর উচিত হবে নির্দিষ্ট দিন পর দিনণ ঠিক করে আমাকে জানিয়ে দেয়া। এরপর আমি দাওয়াত গ্রহণ না করলে দোষী হবো। সরকার আন্তরিক হলে অক্টোবর ৩০, ৩১ ও ১ থেকে ৩ নভেম্বরের মধ্যে যেকোনো দিন সময় করে প্রস্তÍাব দিতে পারত। জনগণের দুর্ভোগ লাঘবে সরকারি উদ্যোগ ল করা যায়নি।
শেখ হাসিনা দেশের স্বার্থে জনগণের স্বার্থে হরতাল প্রত্যাহার করার অনুরোধ জানালে বেগম জিয়া দৃঢ়কণ্ঠে একই স্বার্থের কথা উচ্চারণ করেন। তিনি যথার্থই জনগণের স্বার্থ উদ্ধারে নিরলসভাবে সংগ্রাম করছেন বলে জনগণ বিশ্বাস করেন। মাগুরার নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি তুলে আওয়ামী লীগ জামায়াত ও জাতীয় পার্টিকে সাথে নিয়ে ১৭৩ দিন হরতাল করেছেÑ বেগম জিয়া শেখ হাসিনাকে স্মরণ করে দেন। ভোলা উপনির্বাচনে ভোট জালিয়াতির কথাও স্মরণ করে দিয়ে বেগম জিয়া নির্দলীয় সরকারের দাবি পুনর্ব্যক্ত করেন। তা ছাড়া বিরোধী দলের প্রতি অত্যাচার, নির্যাতন, সমাবেশ না করতে দেয়া, যথাসময়ে সমাবেশের অনুমতি না দেয়া, প্রয়োজনমতো মাইক লাগাতে না দেয়া ইত্যাদি অভিযোগ করেন। প্রধানমন্ত্রী অপ্রাসঙ্গিকভাবে মানুষ খুন করার অভিযোগ আনলে বেগম জিয়া আবার দৃঢ়কণ্ঠে অভিযোগ অস্বীকার করে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের খুনের কথা বলেন। এ েেত্র বেগম জিয়ার অভিযোগের সত্যতা জনগণ প্রত্য করেছেন। হরতালে দলীয়কৃত পুলিশ বাহিনীর সাথে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের অস্ত্রধারী মাস্তÍানদের ছবি বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় দেখা যায়। হরতালে বিএনপি-জামায়াতের কর্মীদের সাথে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের ক্যাডার বাহিনীর ত্রিমুখী সংঘর্ষে অনেক মানুষকে জীবন দিতে হয় ও শত শত আহত হয়। বিশ্বজিতের হত্যার লোমহর্ষক চিত্র এ দেশের মানষের স্মৃতিপটে এখনো ভেসে ওঠে। বেগম জিয়া এসব কথার সাথে তার ও তার পরিবারের প্রতি যে অবিচার ও অন্যায় হয়েছে তা-ও স্মরণ করিয়ে দেন। বেগম জিয়া তার সামনে পার্টি অফিসে পুলিশ বাহিনী যে অবাঞ্ছিত আচরণ করেছে তা-ও স্মরণ করিয়ে দেন। তার সামনে থেকে সাবেক ছাত্রদল নেতাকে গ্রেফতার করা হয়। এসব অগণতান্ত্রিক আচরণের অভিযোগ আনেন। সম্পূর্ণ রাজনৈতিক কারণে তারেক রহমানকে হেনস্তÍা করা হচ্ছে। তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ প্রমাণ করা যায়নি।
বেগম জিয়া হরতাল প্রত্যাহারে অসুবিধার ব্যাখ্যা দিলে শেখ হাসিনা একক সিদ্ধান্তে প্রত্যাহার করতে অনুরোধ করেন। বেগম জিয়া ১৮ দলের কর্মসূচি একক সিদ্ধান্তে প্রত্যাহার করে স্বৈরাচারী মনোভাবের পরিচয় দেননি। এটি গণতন্ত্রের সৌন্দর্য যা বেগম জিয়া মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন ও মেনে চলেন। টেলিফোনের একপর্যায়ে শেখ হাসিনা মাগুরা উপনির্বাচনের প্রসঙ্গ টানলে বেগম জিয়া ভোলা উপনির্বাচনের কথা বলেন। ভোলা উপনির্বাচনের পর বিএনপি তেমন কোনো আন্দোলন করেনি। কারণ সরকারের অগণতান্ত্রিক, অসহিষ্ণু ও আক্রমণাত্মক আচরণে অত আগে বিএনপি কোনো আন্দোলন করতে পারেনি এটি সত্য তবে ভোট চুরিতে আওয়ামী লীগ যে পারদর্শী এ কথা সবার জানা। ১৯৭৩ সালে বেশির ভাগ আসনে বিজয়ের পরও অন্তত পাঁচটি আসনে ব্যাপক কারচুপির মাধ্যমে ড. আলীম আল রাজী, আব্দুর রহমান মির্জা, শাজাহান সিরাজ, মেজর আব্দুল জলিল, রাশেদ খান মেনন প্রভৃতি ব্যক্তিকে ব্যাপক কারচুপি করে ঠকান হয়। শেখ মুজিবের সময় ভোট চুরির সংস্কৃতি চালু হয়।
আওয়ামী লীগের আগের শাসনামলে সফিপুর উপনির্বাচনে মাগুরার দশগুণ কারচুপির কথা বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী তার এক লেখায় বর্ণনা করেছেন। যা হোক, আওয়ামী লীগ গণতান্ত্রিক আচরণের চেয়ে স্বৈরাচারী আচরণে পারদর্শী দেশের মানুষ তার প্রত্য সাী।
প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতার কথোপকথনের সামান্য অংশ উদ্ধৃত করে ব্যাখ্যা দেয়া হলো। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দাওয়াতে কোনো আন্তরিকতা ছিল না বলে আমার মনে হয়েছে। তিনি আন্তরিক হলে ধান ভানতে শিবের গীতের মতো অপ্রাসঙ্গিক বক্তব্য টেনে আনতেন না। দু’জনের সংলাপ এ জাতির বাঁচা-মরার বিষয়। তাদের সংলাপের সফলতার ওপর এ দেশের মানুষের জীবন-জীবিকা, উন্নয়ন-অগ্রগতি, সম্পদহানি রোধ, ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার ভবিষ্যৎ, শান্তিশৃঙ্খলা বজায় থাকা, গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা অুণœ থাকা প্রভৃতি বিষয় নির্ভরশীল। প্রধানমন্ত্রী নিজের অতীত কর্মকাণ্ড ভুলে গিয়ে বেগম জিয়ার ৩০০ দিন হরতালের উল্লেখ করেন, যা সঠিক নয়। নিজে ১৭৩ দিন হরতাল দিয়ে নির্দলীয় সরকারের দাবি আদায় করে নিয়ে একই দাবিতে করা বেগম জিয়ার কর্মকাণ্ডের তুখোড় সমালোচনা শোভা পায় না। ১৭৩ দিন সহিংস হরতালে গানপাউডার দিয়ে মানুষ হত্যা করা, জ্বালাও-পোড়াও করে জনজীবন অতিষ্ঠ করা, দিনে দুপুরে লগি-বৈঠা দিয়ে মানুষ খুন করে লাশের ওপর নাচন কুচন করে এখন হরতালের সমালোচনা না করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে হরতাল করার কারণ দূর করার আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা শান্তি চাই।
বেগম জিয়া সংলাপ বিষয়ে সব সময় আন্তরিক। ২৯ অক্টোবরের পর সংলাপের জন্য পাঁচ দিন অপো করে আবার তিন দিন হরতাল দিয়েছেন। বিরোধী দলের পিঠ দেয়ালে ঠেকে যাওয়ায় ও বিকল্প কোনো পথ না পেয়ে তারা হরতাল দিয়ে চলেছেন। প্রতিটি হরতালে অনেক তাজা প্রাণ ঝরে যাচ্ছে। হাজার হাজার আহত ও পঙ্গু হচ্ছে। এর দায় বিরোধী দলের ওপরে চাপাতে চাইলেও জনগণ দেখছে ভিন্ন চিত্র। ত্রিমুখী সংঘর্ষে এসব অবাঞ্ছিত ও কষ্টদায়ক ঘটনা ঘটছে, যা ভিডিও চিত্রে দেখা যায়। বিএনপি সরকারের সময় ১৭৩ দিন হরতালে আহত ও নিহতের সংখ্যা ছিল হাতে গোনা। হরতাল প্রতিরোধের নামে সঙ্ঘাত সৃষ্টি করে হরতাল ঠেকানো তো যাচ্ছে না, বরং আহত ও নিহতের সংখ্যা বাড়ছে। যুক্তিহীন বক্তব্য না দিয়ে সরকারের উচিত এখনই সংলাপ আয়োজনের কার্যকর উদ্যোগ নেয়া। যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসম্যান স্টিভ শ্যাভটের নেতৃত্বে মার্কিন প্রতিনিধিদল বেগম জিয়ার সাথে সাাৎ করেন। বৈঠক শেষে তারা সব দলের অংশগ্রহণে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপে নির্বাচন দেখতে চান বলে জানান। আমাদের কথা হলো সংলাপের মাধ্যমে এ সঙ্কটের সমাধান করা হোক। লোকদেখানো টেলিসংলাপে এই জটিল সমস্যার সমাধান আসবে না। এ সঙ্কটের সমাধানের জন্য সদিচ্ছা, আন্তরিকতা ও সৎ মনোভাব আবশ্যক। সঙ্কট সমাধানের প্রাথমিক দায়িত্ব সরকারের। আর সে কারণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে শুভ উদ্দেশ্য নিয়ে সঙ্কট সমাধানের উদ্যোগ নিতে হবে। শুভ উদ্দেশ্যে পরিচালিত কর্মকাণ্ডের ফলাফল অশুভ হতে পারে না। বেগম জিয়ার বক্তব্যে সদিচ্ছা প্রকাশ পেয়েছে ও এখনো বিএনপি মহাসচিব বলছেন তারা ডাক পেলেই সংলাপে বসতে প্রস্তুত।
সরকারের মেয়াদ ২৪ অক্টোবর শেষ হওয়ার পর বেগম জিয়া ২৫ অক্টোবর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সমাবেশ থেকে ২৭-২৯ তারিখ পর্যন্ত টানা ৬০ ঘণ্টা হরতাল আহ্বান করেন। এটি ছিল ১৮ দলীয় জোটের কর্মসূচি। বেগম জিয়া ২৫ ও ২৬ তারিখ দুই দিন সময় দিয়ে হরতাল কর্মসূচি দেন। মনে রাখতে হবে দিন বলতে আমরা সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত গণনা করি, ক্যালেন্ডারের ২৪ ঘণ্টায় দিন নয়। তিনি পরিষ্কার বলেন, আজ ও কাল (২৫ ও ২৬) দুই দিনের মধ্যে নির্বাচনকালীন সরকার বিষয়ে দাবি নীতিগতভাবে মেনে নিলে হরতাল দিতে হবে না। এর আগে প্রধানমন্ত্রীর সর্বদলীয় সরকারের প্রস্তÍাবের বিপরীতে বেগম জিয়া ২১ তারিখে সংবাদ সম্মেলন করে নির্দলীয় সরকারের প্রস্তÍাব দেন। বিএনপি মহাসচিব আওয়ামী লীগ মহাসচিবকে চিঠি দিয়ে সংলাপ আয়োজনে উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানান। আওয়ামী লীগ মহাসচিব বিএনপি মহাসচিবকে টেলিফোন করে চিঠিপ্রাপ্তি স্বীকার করে প্রধানমন্ত্রীর সাথে পরামর্শ করার কথা বলেন; কিন্তু হায়! কী পরামর্শ হয়েছে জানা যায়নি। নির্বাচনের তিন মাস সময় বাকি থাকায় বিরোধীদলীয় নেতা একান্ত বাধ্য হয়ে হরতাল কর্মসূচি দেন। কারণ সরকার সমঝোতার কোনো উদ্যোগ না নেয়ায় স্বাভাবিকভাবে বিরোধী দল কঠোর কর্মসূচির দিকে যায়। সরকারের কর্তাব্যক্তিরা আন্দোলন করার মুরোদ নেই বলে অনেকবার বিরোধী দলকে কটা করেছেন। তাদের কথাবার্তায় কখনো সমঝোতার সুর শোনা যায় না, বরং আন্দোলন-সংগ্রামকে ইনভাইট করা হয় বলে আমার প্রতীতি হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী এক ঢিলে দুই পাখি মারতে চেয়েছিলেন। এক দিকে দেশের মানুষের সাথে আন্তর্জাতিক মহলের মন রা করা ও আরেক দিকে হরতাল বানচাল করে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের মনোবল নষ্ট করা। তিনি আন্তরিক হলে ও সদিচ্ছা থাকলে বেগম জিয়া তো ২৯ তারিখের পর যেকোনো দিন সংলাপে সম্মতি দিয়েছিলেন। নতুন করে বেগম জিয়ার কাছে সংলাপের দিনণ চাওয়া অযৌক্তিক। প্রিয় পাঠক, আমার বন্ধু আমাকে একটি নির্দিষ্ট দিন ও সময় উল্লেখ করে দাওয়াত দিলেন। আমার যৌক্তিক অসুবিধার কারণে বললাম নির্দিষ্ট দিন বাদ দিয়ে যেকোনো দিন আমি দাওয়াত রা করতে রাজি। এরপর কি আমি নতুন করে দিন ঠিক করে দাওয়াত চাইতে পারি, না এটি করা যৌক্তিক হবে? বন্ধুর উচিত হবে নির্দিষ্ট দিন পর দিনণ ঠিক করে আমাকে জানিয়ে দেয়া। এরপর আমি দাওয়াত গ্রহণ না করলে দোষী হবো। সরকার আন্তরিক হলে অক্টোবর ৩০, ৩১ ও ১ থেকে ৩ নভেম্বরের মধ্যে যেকোনো দিন সময় করে প্রস্তÍাব দিতে পারত। জনগণের দুর্ভোগ লাঘবে সরকারি উদ্যোগ ল করা যায়নি।
শেখ হাসিনা দেশের স্বার্থে জনগণের স্বার্থে হরতাল প্রত্যাহার করার অনুরোধ জানালে বেগম জিয়া দৃঢ়কণ্ঠে একই স্বার্থের কথা উচ্চারণ করেন। তিনি যথার্থই জনগণের স্বার্থ উদ্ধারে নিরলসভাবে সংগ্রাম করছেন বলে জনগণ বিশ্বাস করেন। মাগুরার নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি তুলে আওয়ামী লীগ জামায়াত ও জাতীয় পার্টিকে সাথে নিয়ে ১৭৩ দিন হরতাল করেছেÑ বেগম জিয়া শেখ হাসিনাকে স্মরণ করে দেন। ভোলা উপনির্বাচনে ভোট জালিয়াতির কথাও স্মরণ করে দিয়ে বেগম জিয়া নির্দলীয় সরকারের দাবি পুনর্ব্যক্ত করেন। তা ছাড়া বিরোধী দলের প্রতি অত্যাচার, নির্যাতন, সমাবেশ না করতে দেয়া, যথাসময়ে সমাবেশের অনুমতি না দেয়া, প্রয়োজনমতো মাইক লাগাতে না দেয়া ইত্যাদি অভিযোগ করেন। প্রধানমন্ত্রী অপ্রাসঙ্গিকভাবে মানুষ খুন করার অভিযোগ আনলে বেগম জিয়া আবার দৃঢ়কণ্ঠে অভিযোগ অস্বীকার করে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের খুনের কথা বলেন। এ েেত্র বেগম জিয়ার অভিযোগের সত্যতা জনগণ প্রত্য করেছেন। হরতালে দলীয়কৃত পুলিশ বাহিনীর সাথে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের অস্ত্রধারী মাস্তÍানদের ছবি বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় দেখা যায়। হরতালে বিএনপি-জামায়াতের কর্মীদের সাথে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের ক্যাডার বাহিনীর ত্রিমুখী সংঘর্ষে অনেক মানুষকে জীবন দিতে হয় ও শত শত আহত হয়। বিশ্বজিতের হত্যার লোমহর্ষক চিত্র এ দেশের মানষের স্মৃতিপটে এখনো ভেসে ওঠে। বেগম জিয়া এসব কথার সাথে তার ও তার পরিবারের প্রতি যে অবিচার ও অন্যায় হয়েছে তা-ও স্মরণ করিয়ে দেন। বেগম জিয়া তার সামনে পার্টি অফিসে পুলিশ বাহিনী যে অবাঞ্ছিত আচরণ করেছে তা-ও স্মরণ করিয়ে দেন। তার সামনে থেকে সাবেক ছাত্রদল নেতাকে গ্রেফতার করা হয়। এসব অগণতান্ত্রিক আচরণের অভিযোগ আনেন। সম্পূর্ণ রাজনৈতিক কারণে তারেক রহমানকে হেনস্তÍা করা হচ্ছে। তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ প্রমাণ করা যায়নি।
বেগম জিয়া হরতাল প্রত্যাহারে অসুবিধার ব্যাখ্যা দিলে শেখ হাসিনা একক সিদ্ধান্তে প্রত্যাহার করতে অনুরোধ করেন। বেগম জিয়া ১৮ দলের কর্মসূচি একক সিদ্ধান্তে প্রত্যাহার করে স্বৈরাচারী মনোভাবের পরিচয় দেননি। এটি গণতন্ত্রের সৌন্দর্য যা বেগম জিয়া মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন ও মেনে চলেন। টেলিফোনের একপর্যায়ে শেখ হাসিনা মাগুরা উপনির্বাচনের প্রসঙ্গ টানলে বেগম জিয়া ভোলা উপনির্বাচনের কথা বলেন। ভোলা উপনির্বাচনের পর বিএনপি তেমন কোনো আন্দোলন করেনি। কারণ সরকারের অগণতান্ত্রিক, অসহিষ্ণু ও আক্রমণাত্মক আচরণে অত আগে বিএনপি কোনো আন্দোলন করতে পারেনি এটি সত্য তবে ভোট চুরিতে আওয়ামী লীগ যে পারদর্শী এ কথা সবার জানা। ১৯৭৩ সালে বেশির ভাগ আসনে বিজয়ের পরও অন্তত পাঁচটি আসনে ব্যাপক কারচুপির মাধ্যমে ড. আলীম আল রাজী, আব্দুর রহমান মির্জা, শাজাহান সিরাজ, মেজর আব্দুল জলিল, রাশেদ খান মেনন প্রভৃতি ব্যক্তিকে ব্যাপক কারচুপি করে ঠকান হয়। শেখ মুজিবের সময় ভোট চুরির সংস্কৃতি চালু হয়।
আওয়ামী লীগের আগের শাসনামলে সফিপুর উপনির্বাচনে মাগুরার দশগুণ কারচুপির কথা বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী তার এক লেখায় বর্ণনা করেছেন। যা হোক, আওয়ামী লীগ গণতান্ত্রিক আচরণের চেয়ে স্বৈরাচারী আচরণে পারদর্শী দেশের মানুষ তার প্রত্য সাী।
প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতার কথোপকথনের সামান্য অংশ উদ্ধৃত করে ব্যাখ্যা দেয়া হলো। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দাওয়াতে কোনো আন্তরিকতা ছিল না বলে আমার মনে হয়েছে। তিনি আন্তরিক হলে ধান ভানতে শিবের গীতের মতো অপ্রাসঙ্গিক বক্তব্য টেনে আনতেন না। দু’জনের সংলাপ এ জাতির বাঁচা-মরার বিষয়। তাদের সংলাপের সফলতার ওপর এ দেশের মানুষের জীবন-জীবিকা, উন্নয়ন-অগ্রগতি, সম্পদহানি রোধ, ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার ভবিষ্যৎ, শান্তিশৃঙ্খলা বজায় থাকা, গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা অুণœ থাকা প্রভৃতি বিষয় নির্ভরশীল। প্রধানমন্ত্রী নিজের অতীত কর্মকাণ্ড ভুলে গিয়ে বেগম জিয়ার ৩০০ দিন হরতালের উল্লেখ করেন, যা সঠিক নয়। নিজে ১৭৩ দিন হরতাল দিয়ে নির্দলীয় সরকারের দাবি আদায় করে নিয়ে একই দাবিতে করা বেগম জিয়ার কর্মকাণ্ডের তুখোড় সমালোচনা শোভা পায় না। ১৭৩ দিন সহিংস হরতালে গানপাউডার দিয়ে মানুষ হত্যা করা, জ্বালাও-পোড়াও করে জনজীবন অতিষ্ঠ করা, দিনে দুপুরে লগি-বৈঠা দিয়ে মানুষ খুন করে লাশের ওপর নাচন কুচন করে এখন হরতালের সমালোচনা না করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে হরতাল করার কারণ দূর করার আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা শান্তি চাই।
বেগম জিয়া সংলাপ বিষয়ে সব সময় আন্তরিক। ২৯ অক্টোবরের পর সংলাপের জন্য পাঁচ দিন অপো করে আবার তিন দিন হরতাল দিয়েছেন। বিরোধী দলের পিঠ দেয়ালে ঠেকে যাওয়ায় ও বিকল্প কোনো পথ না পেয়ে তারা হরতাল দিয়ে চলেছেন। প্রতিটি হরতালে অনেক তাজা প্রাণ ঝরে যাচ্ছে। হাজার হাজার আহত ও পঙ্গু হচ্ছে। এর দায় বিরোধী দলের ওপরে চাপাতে চাইলেও জনগণ দেখছে ভিন্ন চিত্র। ত্রিমুখী সংঘর্ষে এসব অবাঞ্ছিত ও কষ্টদায়ক ঘটনা ঘটছে, যা ভিডিও চিত্রে দেখা যায়। বিএনপি সরকারের সময় ১৭৩ দিন হরতালে আহত ও নিহতের সংখ্যা ছিল হাতে গোনা। হরতাল প্রতিরোধের নামে সঙ্ঘাত সৃষ্টি করে হরতাল ঠেকানো তো যাচ্ছে না, বরং আহত ও নিহতের সংখ্যা বাড়ছে। যুক্তিহীন বক্তব্য না দিয়ে সরকারের উচিত এখনই সংলাপ আয়োজনের কার্যকর উদ্যোগ নেয়া। যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসম্যান স্টিভ শ্যাভটের নেতৃত্বে মার্কিন প্রতিনিধিদল বেগম জিয়ার সাথে সাাৎ করেন। বৈঠক শেষে তারা সব দলের অংশগ্রহণে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপে নির্বাচন দেখতে চান বলে জানান। আমাদের কথা হলো সংলাপের মাধ্যমে এ সঙ্কটের সমাধান করা হোক। লোকদেখানো টেলিসংলাপে এই জটিল সমস্যার সমাধান আসবে না। এ সঙ্কটের সমাধানের জন্য সদিচ্ছা, আন্তরিকতা ও সৎ মনোভাব আবশ্যক। সঙ্কট সমাধানের প্রাথমিক দায়িত্ব সরকারের। আর সে কারণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে শুভ উদ্দেশ্য নিয়ে সঙ্কট সমাধানের উদ্যোগ নিতে হবে। শুভ উদ্দেশ্যে পরিচালিত কর্মকাণ্ডের ফলাফল অশুভ হতে পারে না। বেগম জিয়ার বক্তব্যে সদিচ্ছা প্রকাশ পেয়েছে ও এখনো বিএনপি মহাসচিব বলছেন তারা ডাক পেলেই সংলাপে বসতে প্রস্তুত।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন