ড. রেজোয়ান সিদ্দিকী
বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের ৭১ ঘণ্টার অবরোধ শেষ হয়েছে
শুক্রবার ভোর ৫টায়। এই অবরোধে পুলিশের গুলিতে ও আওয়ামী হামলাকারীদের হামলায় ১৯ জন
নাগরিক শাহাদতবরণ করেছেন। আমরা দলবাজ আওয়ামী পুলিশ বাহিনীকে দেখেছি, কী বীরবিক্রমে এরা এ দেশের মানুষের ওপর নির্বচার গুলি চালিয়েছে, যে গুলি চালানোর অধিকার তাদের নেই। সরকার হয়তো নেপথ্যে সে অধিকার
তাদের দিয়ে দিয়েছে। আর দলীয়কৃত গোপালি পুলিশ বাহিনী নিজ উদ্যোগেও এই কাণ্ড
ঘটিয়েছে। এরা হয়তো মনে করছেন, এভাবে
নির্বিচার মানুষ হত্যার মাধ্যমে পুরস্কৃত হবেন, কিন্তু এ কথা
একবারও বোধ করি স্মরণে আসেনি যে, এভাবে সাধারণ
মানুষ হত্যার জন্য একদিন তাদের অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে, দাঁড়াতে হবে বিচারের কাঠগড়ায়। এর অন্য কোনো কারণ নেই। কারণ একটাই, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনন্তকাল ধরে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকতে চান।
কিন্তু ক্ষমতা চিরস্থায়ী নয়। আর তিনি অমর নন। জবাবদিহি সম্ভবত একদিন তাকেও করতে
হবে।
ধারণা করা হয়েছিল, বিএনপি বা ১৮ দলীয় জোটের এমন সাংগঠনিক শক্তি নেই যে, এরা ঘোষিত এই আন্দোলন সফল করতে পারবে। সরকার নিয়ন্ত্রিত মিডিয়া অবিরাম তা প্রচারও করছিল। এটা ছিল ১৮ দলীয় জোটের মনোবল ভেঙে দেয়ার একটা কৌশল মাত্র। জনগণ এই সরকারের বিরুদ্ধে এতটাই ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছে যে, এরা যেন একটি আহ্বানের অপেক্ষায় ছিল। সেই আহ্বান পাওয়া মাত্র দেশের সর্বস্তরের মানুষ একযোগে সর্বাত্মক ও সর্বব্যাপী প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
কথা ছিল, নির্বাচন কমিশন যদি একদলীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে তাহলে সেই মুহূর্ত থেকে দেশ অচল করে দেয়া হবে। আওয়ামী লীগ ১৮ দলীয় জোটকে এতই তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করেছিল যে, তারা ভাবতেও পারেনি, সত্যি সত্যি এই জোট দেশ অচল করে দেয়ার ক্ষমতা রাখে। তাদের ধারণা ছিল পেশিশক্তি, পুলিশ বাহিনী, বিজিবি এসব দিয়ে তারা বিরোধী দলের কর্মসূচিকে ডাণ্ডা মেরে ঠাণ্ডা করে দেবে। কিন্তু আওয়ামী লীগের লোকেরা জনতার রুদ্ররোষ কী প্রবল হয় সে কথা যেন একেবারেই ভুলে গিয়েছিল। প্রধান নির্বাচন কমিশনার প্রথম থেকেই নতজানু। স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে নির্বাচন সুষ্ঠু করার ক্ষেত্রে তার যে ক্ষমতা সেটি তিনি সরকারের কাছে হস্তান্তর করতে ব্যাকুল হয়ে উঠেছিলেন। তখন সংবাদপত্রগুলোতে নিন্দার ঝড় উঠেছিল। সরকার সমর্থক একটি পত্রিকায় এমন কার্টুনও ছাপা হয়েছিল, সিইসি নিজের হাত কেটে ডালায় তুলে সরকারকে উপহার দিচ্ছেন। এমন বেহায়া নির্বাচন কমিশন এ দেশে আর কখনো আসেনি। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ঠিকই বলেছেন, নির্বচন কমিশন এখন সেবাদাস থেকে সরকারের ক্রীতদাসে পরিণত হয়েছে। অবশ্য এ ধরনের তাঁবেদারি কারার জন্যই এমন আত্মমর্যাদাহীন ব্যক্তিকে আওয়ামী লীগ প্রধান নির্বাচন কমিশনারের আসনে বসিয়েছে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার আগে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে কোনোরূপ আলোচনার প্রয়োজন অনুভব করেননি। সরকার যেভাবে বলেছে, তিনি ঠিকঠিক সেভাবেই নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করে দিয়েছেন। এই তফসিল ঘোষণার পর মঙ্গলবার সকাল থেকেই ৪৮ ঘণ্টার রাজপথ-রেলপথ-নৌপথ অবরোধের ডাক দেয় বিরোধী দল। প্রধান নির্বাচন কমিশনার জাতির উদ্দেশে তার দেয়া ভাষণ শেষ করেন রাত ৮টায়। জনগণ এক মুহূর্তও অপেক্ষা করেনি। সাথে সাথেই সারা দেশে শুরু হয়ে যায় অবরোধ আর প্রতিরোধ। জনতা প্রায় সাথে সাথেই রাজপথ-রেলপথ-নৌপথ অবরোধ করে ফেলে। এবং কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সরকারকে বন্দী করে ফেলে রাজধানী ঢাকায়।
এর মধ্যে বিভিন্ন স্থানে জনসভা করতে গেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভাড়া করে আনা কিছু লোক জনসভায় হাত তুলেছে। শেখ হাসিনা তাদের সবার কাছে জানতে চেয়েছেন, অপনারা নৌকায় ভোট দেবেন তো? হাত তুলে দেখান। ভাড়াটে জনতা হাত তুলেছে। শেখ হাসিনা কী খুশি! এই জনতার কয় শতাংশ শেখ হাসিনাকে ভোট দেবে সেটা নিশ্চিত করে বলা যায় না। ডেইলি স্টার ও এশিয়া ফাউন্ডেশনের জনমত জরিপে দেখা গেছে, এখন ভোট হলে ৫৫ শতাংশ মানুষ বিএনপিকে ভোট দেবে। আর ২৮ শতাংশ মানুষ ভোট দেবে আওয়ামী লীগকে। এর আগেও প্রথম আলো ও যুগান্তরের জনমত জরিপে দেখা গেছে, ভোটের বিচারে অনেক পিছিয়ে আছে
আওয়ামী লীগ।
এরপরও ক্ষমতায় থাকার কী বুদ্ধি। সেটা হলো বিএনপি যেন আদৌ নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে। সেই বুদ্ধির অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী একদলীয় নির্বাচন করার অপকৌশল অবলম্বন করেন। সেটি তিনি এখন করেননি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের মধ্য দিয়ে তিনি তার পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যান। বিএনপির একটিই দাবি, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। শেষ পর্যন্ত এরা দাবি করল প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হবে। ওই পদে দিতে হবে নির্দলীয় কোনো ব্যক্তিকে। এটি শুনে প্রধানমন্ত্রী যেন আঁতকে উঠলেন। তিনি তড়িঘড়ি করে মন্ত্রীদেরও যাবতীয় ক্ষমতা নিজের হাতে তুলে নিলেন। মন্ত্রীদের এখন একজন পিয়নকেও বদলি করার ক্ষমতা নেই। আর সরকারি কর্মচারীদের হাতে রাখার জন্য তিনি দুদক আইনে পরিবর্তন আনলেন। সে পরিবর্তন হলো কোনো সরকারি কর্মকর্তা, কর্মচারীর বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন ছাড়া দুদক কোনো মামলা করতে পারবে না। অর্থাৎ নাগরিকদের মধ্যে তিনি এক ধরনের বিভেদ সৃষ্টি করলেন। দুদক যদি সরকারি কর্মচারীদের বিরুদ্ধে মামলা করতে না পারে তাহলে কোন এখতিয়ারে এই দুদকই একজন সাধারণ নাগরিকের বিরুদ্ধে মামলা করবে? অথচ সংবিধান অনুযায়ী প্রত্যেক নাগরিকই সমান।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার শেখ রকিবউদ্দিন হাওয়া থেকে যখন খবর পেলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফ ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মধ্যে কথা হয়েছে তখন তিনি বললেন, যদি সমঝোতা হয় তাহলে ২৪ তারিখের পরও নির্বাচন করা যেতে পারে। এরপর হুট করে তিনি ঘোষণা করে বসলেন, আর দেরি করা যায় না। অতএব নির্বাচনী শিডিউল ঘোষণা করা হলো। এ ক্ষেত্রেও মনে হয় বিরোধী দলকে নির্বাচনের বাইরে রাখার জন্য সরকারি মতলবের তিনি অংশীদার
হয়ে গেলেন।
কিন্তু জনগণ তো প্রস্তুতই ছিল। তারা তো এই সরকারকে আর এক মুহূর্তও ক্ষমতায় দেখতে চায় না। সেটি প্রমাণ হয়ে গেল। তফসিল ঘোষণার সাথে সাথেই ১৮ দলীয় জোটের কর্মসূচি ঘোষণার আগেই তারা রাজপথ-রেলপথ-নৌপথ অবরোধ করল। জনতার শক্তি এটাই। জনতা যখন জোয়ারের জলের মতো জেগে উঠে ফুঁসে উঠছে, তখন কোনো শক্তিই তাদের প্রতিহত করতে পারবে না।
ক’দিন ধরে শেখ হাসিনা বলছেন, অবরোধ ডেকে ঘরে বসে থাকেন কেন। রাস্তায় নেমে আসেন। দারুণ আহ্বান! রাস্তায় নেমে এলেই গ্রেফতার করা খুব সহজ হয়ে ওঠে। রাস্তায় ছিলেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, এম কে আনোয়ার, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, আ স ম হান্নান শাহ, মীর নাসির উদ্দিন, গোলাম আকবর খন্দকার। সাথে সাথেই তাদের ধরে জেলে পাঠিয়েছেন। আর বিরোধীদলীয় নেত্রীর উপদেষ্টা আবদুল আওয়াল মিন্টু নেত্রীর সাথে দেখা করতে গিয়েছিলেন। তখন মিন্টুকে ও বিরোধীদলীয় নেত্রীর বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসকে গ্রেফতার করে জেলে পাঠানো হয়েছে। আর শেখ হাসিনাসহ তার সব পারিষদ এখন চিৎকার করে বলছেন, আলোচনায় বসুন। সর্বদলীয় সরকারে আসুন। কোন মন্ত্রণালয় চান নিয়ে যান। কিন্তু শেখ হাসিনা থাকবেন প্রধানমন্ত্রী পদেই।
কিন্তু ১৮ দলীয় জোটসহ দেশের বাকি সব রাজনৈতিক দল, বুদ্ধিজীবীসমাজ একযোগে বলছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফিরিয়ে না আনলে এই সঙ্কটের কোনো সমাধান হবে না। অথবা শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী পদ ছাড়তে হবে। সমাধান সেখানেই। এ দিকে কেউ কর্ণপাত করছে না। বিরোধী দলকে অবরোধ ডেকে রাস্তায় নেমে আসার অহ্বান জানালেও সরকারি দলের অবস্থা এখন ত্রাহি মধুসূদন। এসব নেতাও কার্যত জনতার রোষে গৃহবন্দী। আওয়ামী লীগ অফিস অথবা বিবি এভিনিউতে তাদের যত হাঁকডাক। বহু সাবেক মন্ত্রী এলাকায় যেতেই সাহস পাচ্ছেন না। অনেকে যাচ্ছেন পুলিশ প্রোটেকশন নিয়ে। এমপিদের অবস্থাও তাই। ৩০ জন জেলা প্রশাসক ইতোমধ্যে নিরাপত্তা চেয়ে সরকারের কাছে চিঠি দিয়েছেন। অবস্থা কতটা করুণ যে, অবরোধের মধ্যে মোহাম্মদ নাসিম বললেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরো কঠোর হতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী লাগবে কেন? আপনারা মাঠে যান। গিয়ে এই জনতার মোকাবেলা করুন। দেখি। মাঠে গেলে জনতার রুদ্ররোষে ছিন্ন ভিন্ন হয়ে যাবেন।
এরই নাম জনতার জাগরণ। যখন তা ঘটে তখন জোয়ারের পানির মতো সব কিছু ভাসিয়ে নিয়ে যায়। এখন ঘটেছে জনতার সেই জাগরণ।
ধারণা করা হয়েছিল, বিএনপি বা ১৮ দলীয় জোটের এমন সাংগঠনিক শক্তি নেই যে, এরা ঘোষিত এই আন্দোলন সফল করতে পারবে। সরকার নিয়ন্ত্রিত মিডিয়া অবিরাম তা প্রচারও করছিল। এটা ছিল ১৮ দলীয় জোটের মনোবল ভেঙে দেয়ার একটা কৌশল মাত্র। জনগণ এই সরকারের বিরুদ্ধে এতটাই ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছে যে, এরা যেন একটি আহ্বানের অপেক্ষায় ছিল। সেই আহ্বান পাওয়া মাত্র দেশের সর্বস্তরের মানুষ একযোগে সর্বাত্মক ও সর্বব্যাপী প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
কথা ছিল, নির্বাচন কমিশন যদি একদলীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে তাহলে সেই মুহূর্ত থেকে দেশ অচল করে দেয়া হবে। আওয়ামী লীগ ১৮ দলীয় জোটকে এতই তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করেছিল যে, তারা ভাবতেও পারেনি, সত্যি সত্যি এই জোট দেশ অচল করে দেয়ার ক্ষমতা রাখে। তাদের ধারণা ছিল পেশিশক্তি, পুলিশ বাহিনী, বিজিবি এসব দিয়ে তারা বিরোধী দলের কর্মসূচিকে ডাণ্ডা মেরে ঠাণ্ডা করে দেবে। কিন্তু আওয়ামী লীগের লোকেরা জনতার রুদ্ররোষ কী প্রবল হয় সে কথা যেন একেবারেই ভুলে গিয়েছিল। প্রধান নির্বাচন কমিশনার প্রথম থেকেই নতজানু। স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে নির্বাচন সুষ্ঠু করার ক্ষেত্রে তার যে ক্ষমতা সেটি তিনি সরকারের কাছে হস্তান্তর করতে ব্যাকুল হয়ে উঠেছিলেন। তখন সংবাদপত্রগুলোতে নিন্দার ঝড় উঠেছিল। সরকার সমর্থক একটি পত্রিকায় এমন কার্টুনও ছাপা হয়েছিল, সিইসি নিজের হাত কেটে ডালায় তুলে সরকারকে উপহার দিচ্ছেন। এমন বেহায়া নির্বাচন কমিশন এ দেশে আর কখনো আসেনি। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ঠিকই বলেছেন, নির্বচন কমিশন এখন সেবাদাস থেকে সরকারের ক্রীতদাসে পরিণত হয়েছে। অবশ্য এ ধরনের তাঁবেদারি কারার জন্যই এমন আত্মমর্যাদাহীন ব্যক্তিকে আওয়ামী লীগ প্রধান নির্বাচন কমিশনারের আসনে বসিয়েছে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার আগে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে কোনোরূপ আলোচনার প্রয়োজন অনুভব করেননি। সরকার যেভাবে বলেছে, তিনি ঠিকঠিক সেভাবেই নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করে দিয়েছেন। এই তফসিল ঘোষণার পর মঙ্গলবার সকাল থেকেই ৪৮ ঘণ্টার রাজপথ-রেলপথ-নৌপথ অবরোধের ডাক দেয় বিরোধী দল। প্রধান নির্বাচন কমিশনার জাতির উদ্দেশে তার দেয়া ভাষণ শেষ করেন রাত ৮টায়। জনগণ এক মুহূর্তও অপেক্ষা করেনি। সাথে সাথেই সারা দেশে শুরু হয়ে যায় অবরোধ আর প্রতিরোধ। জনতা প্রায় সাথে সাথেই রাজপথ-রেলপথ-নৌপথ অবরোধ করে ফেলে। এবং কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সরকারকে বন্দী করে ফেলে রাজধানী ঢাকায়।
এর মধ্যে বিভিন্ন স্থানে জনসভা করতে গেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভাড়া করে আনা কিছু লোক জনসভায় হাত তুলেছে। শেখ হাসিনা তাদের সবার কাছে জানতে চেয়েছেন, অপনারা নৌকায় ভোট দেবেন তো? হাত তুলে দেখান। ভাড়াটে জনতা হাত তুলেছে। শেখ হাসিনা কী খুশি! এই জনতার কয় শতাংশ শেখ হাসিনাকে ভোট দেবে সেটা নিশ্চিত করে বলা যায় না। ডেইলি স্টার ও এশিয়া ফাউন্ডেশনের জনমত জরিপে দেখা গেছে, এখন ভোট হলে ৫৫ শতাংশ মানুষ বিএনপিকে ভোট দেবে। আর ২৮ শতাংশ মানুষ ভোট দেবে আওয়ামী লীগকে। এর আগেও প্রথম আলো ও যুগান্তরের জনমত জরিপে দেখা গেছে, ভোটের বিচারে অনেক পিছিয়ে আছে
আওয়ামী লীগ।
এরপরও ক্ষমতায় থাকার কী বুদ্ধি। সেটা হলো বিএনপি যেন আদৌ নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে। সেই বুদ্ধির অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী একদলীয় নির্বাচন করার অপকৌশল অবলম্বন করেন। সেটি তিনি এখন করেননি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের মধ্য দিয়ে তিনি তার পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যান। বিএনপির একটিই দাবি, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। শেষ পর্যন্ত এরা দাবি করল প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হবে। ওই পদে দিতে হবে নির্দলীয় কোনো ব্যক্তিকে। এটি শুনে প্রধানমন্ত্রী যেন আঁতকে উঠলেন। তিনি তড়িঘড়ি করে মন্ত্রীদেরও যাবতীয় ক্ষমতা নিজের হাতে তুলে নিলেন। মন্ত্রীদের এখন একজন পিয়নকেও বদলি করার ক্ষমতা নেই। আর সরকারি কর্মচারীদের হাতে রাখার জন্য তিনি দুদক আইনে পরিবর্তন আনলেন। সে পরিবর্তন হলো কোনো সরকারি কর্মকর্তা, কর্মচারীর বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন ছাড়া দুদক কোনো মামলা করতে পারবে না। অর্থাৎ নাগরিকদের মধ্যে তিনি এক ধরনের বিভেদ সৃষ্টি করলেন। দুদক যদি সরকারি কর্মচারীদের বিরুদ্ধে মামলা করতে না পারে তাহলে কোন এখতিয়ারে এই দুদকই একজন সাধারণ নাগরিকের বিরুদ্ধে মামলা করবে? অথচ সংবিধান অনুযায়ী প্রত্যেক নাগরিকই সমান।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার শেখ রকিবউদ্দিন হাওয়া থেকে যখন খবর পেলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফ ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মধ্যে কথা হয়েছে তখন তিনি বললেন, যদি সমঝোতা হয় তাহলে ২৪ তারিখের পরও নির্বাচন করা যেতে পারে। এরপর হুট করে তিনি ঘোষণা করে বসলেন, আর দেরি করা যায় না। অতএব নির্বাচনী শিডিউল ঘোষণা করা হলো। এ ক্ষেত্রেও মনে হয় বিরোধী দলকে নির্বাচনের বাইরে রাখার জন্য সরকারি মতলবের তিনি অংশীদার
হয়ে গেলেন।
কিন্তু জনগণ তো প্রস্তুতই ছিল। তারা তো এই সরকারকে আর এক মুহূর্তও ক্ষমতায় দেখতে চায় না। সেটি প্রমাণ হয়ে গেল। তফসিল ঘোষণার সাথে সাথেই ১৮ দলীয় জোটের কর্মসূচি ঘোষণার আগেই তারা রাজপথ-রেলপথ-নৌপথ অবরোধ করল। জনতার শক্তি এটাই। জনতা যখন জোয়ারের জলের মতো জেগে উঠে ফুঁসে উঠছে, তখন কোনো শক্তিই তাদের প্রতিহত করতে পারবে না।
ক’দিন ধরে শেখ হাসিনা বলছেন, অবরোধ ডেকে ঘরে বসে থাকেন কেন। রাস্তায় নেমে আসেন। দারুণ আহ্বান! রাস্তায় নেমে এলেই গ্রেফতার করা খুব সহজ হয়ে ওঠে। রাস্তায় ছিলেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, এম কে আনোয়ার, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, আ স ম হান্নান শাহ, মীর নাসির উদ্দিন, গোলাম আকবর খন্দকার। সাথে সাথেই তাদের ধরে জেলে পাঠিয়েছেন। আর বিরোধীদলীয় নেত্রীর উপদেষ্টা আবদুল আওয়াল মিন্টু নেত্রীর সাথে দেখা করতে গিয়েছিলেন। তখন মিন্টুকে ও বিরোধীদলীয় নেত্রীর বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসকে গ্রেফতার করে জেলে পাঠানো হয়েছে। আর শেখ হাসিনাসহ তার সব পারিষদ এখন চিৎকার করে বলছেন, আলোচনায় বসুন। সর্বদলীয় সরকারে আসুন। কোন মন্ত্রণালয় চান নিয়ে যান। কিন্তু শেখ হাসিনা থাকবেন প্রধানমন্ত্রী পদেই।
কিন্তু ১৮ দলীয় জোটসহ দেশের বাকি সব রাজনৈতিক দল, বুদ্ধিজীবীসমাজ একযোগে বলছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফিরিয়ে না আনলে এই সঙ্কটের কোনো সমাধান হবে না। অথবা শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী পদ ছাড়তে হবে। সমাধান সেখানেই। এ দিকে কেউ কর্ণপাত করছে না। বিরোধী দলকে অবরোধ ডেকে রাস্তায় নেমে আসার অহ্বান জানালেও সরকারি দলের অবস্থা এখন ত্রাহি মধুসূদন। এসব নেতাও কার্যত জনতার রোষে গৃহবন্দী। আওয়ামী লীগ অফিস অথবা বিবি এভিনিউতে তাদের যত হাঁকডাক। বহু সাবেক মন্ত্রী এলাকায় যেতেই সাহস পাচ্ছেন না। অনেকে যাচ্ছেন পুলিশ প্রোটেকশন নিয়ে। এমপিদের অবস্থাও তাই। ৩০ জন জেলা প্রশাসক ইতোমধ্যে নিরাপত্তা চেয়ে সরকারের কাছে চিঠি দিয়েছেন। অবস্থা কতটা করুণ যে, অবরোধের মধ্যে মোহাম্মদ নাসিম বললেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরো কঠোর হতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী লাগবে কেন? আপনারা মাঠে যান। গিয়ে এই জনতার মোকাবেলা করুন। দেখি। মাঠে গেলে জনতার রুদ্ররোষে ছিন্ন ভিন্ন হয়ে যাবেন।
এরই নাম জনতার জাগরণ। যখন তা ঘটে তখন জোয়ারের পানির মতো সব কিছু ভাসিয়ে নিয়ে যায়। এখন ঘটেছে জনতার সেই জাগরণ।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন