ছোটবেলায় গ্রামে দেখতাম, একদল লোক বানর দিয়ে হাসি কৌতুকের খেলা দেখিয়ে মানুষকে বেশ হাসাত এবং বিনিময় কিছু পয়সা কামাই করত জীবিকা নির্বাহের জন্য। তারা ডুগডুগি বাজিয়ে বানরকে দিয়ে নানা কসরত করত এবং মুখে গানের সুরে বলত ‘লাগ লাগ লাগ ভেলকি লাগ’ মানুষ সেসব তামাশা দেখে প্রচুর আনন্দ পেত এবং খুশি হয়ে বানরের হাতে টাকা-পয়সা তুলে দিত। সাময়িকভাবে নিরান্দ মানুষগুলো কিছু আনন্দ পেত, মন্দ কী? পেটে ভাত না থাকলে কী? তারা গ্রাম্য পরিবেশের উপযোগী হালকা ধরনের জাদুও দেখাত। হাতের কারসাজিতে এক টাকাকে ৫০, ১০০ টাকা বানিয়ে দেখাত। এতে গরিব মানুষগুলো প্রলুব্ধ হতো এই টাকা তারাও যদি বানাতে পারতেন! কিন্তু তা হওয়ার নয়।
এ ভেলকিবাজির খেলা অতি পুরনো। পাঠক জানেন, রোম শহর পুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে, শত্রুরা আক্রমণ করে দেশ দখল করে নিচ্ছে আর তখন রোমের সম্রাট নিরো সমুদ্র তীরে বসে মনের সুখে বাঁশি বাজাচ্ছেন। জনগণ ও প্রজারা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, তাতে ভ্রƒক্ষেপ নেই। তার মন যা চায় তাই তিনি করবেন, তাতে প্রজাদের এত মাথাব্যথা কেন? তিনি প্রজাদের ভেলকিবাজি দেখাতেই পারেন। বাংলাদেশ চরম নৈরাজ্যের মধ্যে চলছে। মানুষ গুম, খুন, জ্বালাও-পোড়াও, গ্রেফতার, নির্যাতন, হামলা ইত্যাদিতে অতিষ্ঠ। জীবনের কোনো নিরাপত্তা নেই। কারণ শুধু একটাইÑ ‘বিচার মানি কিন্তু তালগাছটা আমার।’ ক্ষমতা সাধারণ নিয়মে ভোটের মাধ্যমে অর্জন করা যাবে কি না, সে সন্দেহ থেকে চলমান রাজনৈতিক লড়াই।
আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে কিভাবে ক্ষমতায় আসে, তা সবার জানা। মইনুদ্দিন-ফখরুদ্দীনরা যখন ক্ষমতা দখল করেন, তখন শেখ হাসিনা গর্বের সাথে বলেছিলেন, এই সরকার হলো আমাদের আন্দোলনের ফসল। আর তিনি ঘোষণা করলেন, ক্ষমতায় গেলে মইনুদ্দিন-ফখরুদ্দীন সরকারের বৈধ-অবৈধ সব কর্ম সংসদে পাস করে নেবেন। সংসদে ব্রুট মেজরিটি সদস্যের বলে তা করিয়ে নেয়া হলো।
বিগত পাঁচ বছরে সরকার দেশের এমন কোনো যুগান্তকর ভালো কাজ করেনি যাতে মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত হয়ে ভোট দিয়ে ক্ষমতাসীনদেরই বিজয়ী করবে। দলের কর্মীরা, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, কৃষক লীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ দেশটাকে যেভাবে লুটপাটে করে খেয়েছে, তাতে ভোটের আশায় গুড়েবালি। তাই উপায়? ১৯৯৬ সালে খলেদা জিয়ার সরকারের বিরুদ্ধে চরম আন্দোলন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে বাধ্য করা হলো। পরিস্থিতি যে পর্যায়ে চলে গিয়েছিল, তাতে নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারই বাংলাদেশের জন্য উত্তম পদ্ধতি ছিল। ১৯৯৬ ও ২০০১-এ দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে। দেশে বিদেশে তার ভূয়সী প্রশংসাও করা হয়েছে। কিন্তু এই সরকারের কর্মকাণ্ডে দেশ যেমন সঙ্কট পড়েছে, তেমনি বিদেশী মুরব্বিদের আদেশ-নির্দেশ মোতাবেক দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে করিডোর, ট্রানজিট, শুল্কবিহীন মালামাল আমদানি, সাংস্কৃতিক আগ্রাসন প্রভৃতি পাকাপোক্ত করা হয়েছে। মহাজোট বুঝতে পারছে তার পায়ের তলায় মাটি নেই। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন নির্বাচন হলে ভরাডুবি হবে। তাই ফন্দি এঁটে কাউকে দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধানের ওপর মামলা ঠুকে হাইকোর্ট থেকে বিতর্কিত রায় নিয়ে নেয়া হলো। ব্রুট মেজরিটি সদস্যের ভোটে সংসদে এক কথায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে দেয়া হয়েছে। প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকের সে বিতর্কিত রায়েও কিন্তু পরবর্তী দু’টি নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হওয়ার নির্দেশ ছিল। কিন্তু তা মানলে তো গদি থাকবে না। তারা নিজেদের সরকারের অধীনে নির্বাচন দিয়ে ১৯৭৩ সালের ইলেকশনের মতো ‘ম্যানেজ’ করে ক্ষমতা ধরে রাখতে চান। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনার প্রথম ভেলকিবাজি হলো আপনি ঘোষণা করেছেন আপনি প্রধানমন্ত্রীর পদ চান না। তবে আপনি চানটা কী? বিরোধী দলের দাবি তো একটাইÑ আপনি প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক বা নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিন। কেন আপনি সেটা মানছেন না? আপনি পদত্যাগ করলে দেশ এক মুহূর্তে শান্ত হয়ে যাবে। কোনো হরতাল, আগুন, বোমাবাজি থাকবে না। কিন্তু আপনার মুখের কথামতো কাজ করছেন না বলেই তো দেশে এই নৈরাজ্য।
দ্বিতীয় ভেলকিবাজি হলো, মন্ত্রিসভার সদস্যদের পদত্যাগপত্র নিয়েছেন। অথচ তারা মন্ত্রীর পদে বহাল তবিয়তে। বিশ্বে এমন কোনো নজির আছে? সর্বদলীয় সরকারে বিরোধী দলের সামনে টোপ ফেলছেন? দেশের মানুষ অত বোকা নয়। ইচ্ছামতো সর্বদলীয় সরকার করতে চাইলে যেদিন যে সর্বদলীয় (!) সরকার করবেন সেদিনই মন্ত্রীদের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করতে পারতেন।
আরেক ভেলকিবাজি হচ্ছে, জনসভায় প্রচুর মানুষ যায়। কেন যায় সেটা প্রশ্নবিদ্ধ। প্রতি সভায় তাদের দুই হাত তুলে আপনার দলকে ভোট দিতে বলেন। এসব সভায় কিছু লোক যায় এনামের বিনিময়, কিছু যায় হুজুগে। হাত তোলাওয়ালারা সবাই আপনার দলকে ভোট দেবে? সরকার পক্ষের পত্রিকার জরিপেও মহাজোট সরকার ভোট পেতে পারে শতকরা ২৮ ভাগ আর ১৮ দল নাকি পেতে পারে শতকরা ৬৭ ভাগ। এসবি, এনএসআই, ডিবি তাদের প্রতিবেদনে কী বলে?
এ দেশের শতকরা ৯০ ভাগ ঈমানদার মুসলমান। তারা স্বাধীনতার সময় আল্লার নাম নিয়ে যুদ্ধ করেছেন। তারা ঈমান আমলে মুসলমানই থাকতে চান। কিন্তু ১৯৭২ সালে যে শাসনতন্ত্র তৈরি করা হয়েছিল তা কি এ দেশের মানুষের মনোভাব ও ইচ্ছাকে সম্মান দেখিয়ে করা হয়েছিল? আপনার দল মূলনীতি হিসেবে ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্র, শাসনতন্ত্রে ঢুকিয়েছেন; তার সাথে এ দেশের মানুষের ঈমান আকিদার কোনো সম্পর্ক আছে? আপনি আরেক ভেলকিবাজি দেখালেন পঞ্চম সংশোধনীর বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম, এক আল্লায় বিশ্বাস এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার এক ধাক্কায় ফেলে দিয়ে পুনরায় সমাজতন্ত্র তথা রাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ সংবিধান ঢুকালেন। কাদের স্বার্থে তা করছেন, মানুষ বোঝে। প্রথম সংবিধান তৈরি করেছে আপনার দল ভারত ও রাশিয়ার নির্দেশে। তাতে জনগণের সমর্থন ছিল না। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, গণমানুষের মনোভাব বোঝার জন্য রাজনীতিবিদ, শিক্ষক, ছাত্র-যুবক, শিল্পী, সাহিত্যিক, সুশীলসমাজ ও গণমাধ্যমের মতামত নিয়েই সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী এনেছিলেন। দেশের মানুষের কাছে উপস্থাপন করে রেফারেন্ডাম দিন, দেখেন তারা কী মত দেন।
ভেলকিবাজির তো শেষ নেই। জনসভায় নেতানেত্রীরা বলে বেড়ান অমুক নেত্রী পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন, কুরআন শরিফ পড়েন। কিন্তু ইসলাম ধর্মের অবমাননামূলক নানা পদক্ষেপ কেন? শিক্ষাব্যবস্থার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তর থেকে ইসলাম ধর্মকে অনেকটাই সরিয়ে দেয়ার মতো কাজ হয়েছে। ধর্মীয় শিক্ষা মানুষকে চরিত্রবান করে। তারা দেশের সুনাগরিক হয়ে সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে জাতির সেবায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। শিক্ষার সাথে নৈতিকতার সংযোগ না হলে ভালো মানুষ হওয়া যায় না। আর ভালো মানুষ না হলে তারা ছাত্রলীগ, যুবলীগ মার্কা লোক হবে। শিক্ষাব্যবস্থাকে আধুনিক করতে হবে কিন্তু তাতে বেহায়াপনা ও উলঙ্গপনা থাকবে না। মাদরাসা শিক্ষার মধ্যে সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ আবিষ্কার করে বেড়াচ্ছেন কোন উদ্দেশ্যে। সরকার সন্ত্রাসের অজুহাতে ঢোল পিটিয়ে যেভাবে সারাবিশ্বে নাড়া দিচ্ছে, তাতে কিছু উগ্র লোক সন্ত্রাসের দিকে ঝুঁকে পড়তে পারে। সরকার দেশের প্রশাসন, আইন বিভাগ দলীয়করণ করে ফেলেছে ও মেধাহীন করছে, তাতে দেশের দফারফা হওয়ার জোগাড়। আর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, বিশেষ করে পুলিশ বাহিনীকে পেটোয়া বাহিনীতে পরিণত করছে। একদিন এদের দ্বারা নিজেদেরও হেনস্তা হতে হবে। সমস্যা হলো রাজনীতিবিদেরা এই মোক্ষম কথাটাই বুঝতে চান না।
অহঙ্কার ছেড়ে দিয়ে বাস্তবতাকে মেনে নিন। ভেবে দেখেছেন, সংবিধানটির খোলনলচে কিভাবে পাল্টিয়েছেন? তখন কি মনে হয়নি সংবিধান যখন তখন পরিবর্তন করা ঠিক নয়। পশ্চিমা দেশের কথা প্রায়ই বলে থাকেন। সেখানে চলতি সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়। অথচ সেসব দেশে গণতন্ত্র স্থায়ী হতে কারো ২০০ বছর পর্যন্ত পার হয়েছে। সেসব দেশে সরকার ও বিরোধী দলে এরকম চুল ছেঁড়াছিঁড়ি আছে কি?
এ ভেলকিবাজির খেলা অতি পুরনো। পাঠক জানেন, রোম শহর পুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে, শত্রুরা আক্রমণ করে দেশ দখল করে নিচ্ছে আর তখন রোমের সম্রাট নিরো সমুদ্র তীরে বসে মনের সুখে বাঁশি বাজাচ্ছেন। জনগণ ও প্রজারা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, তাতে ভ্রƒক্ষেপ নেই। তার মন যা চায় তাই তিনি করবেন, তাতে প্রজাদের এত মাথাব্যথা কেন? তিনি প্রজাদের ভেলকিবাজি দেখাতেই পারেন। বাংলাদেশ চরম নৈরাজ্যের মধ্যে চলছে। মানুষ গুম, খুন, জ্বালাও-পোড়াও, গ্রেফতার, নির্যাতন, হামলা ইত্যাদিতে অতিষ্ঠ। জীবনের কোনো নিরাপত্তা নেই। কারণ শুধু একটাইÑ ‘বিচার মানি কিন্তু তালগাছটা আমার।’ ক্ষমতা সাধারণ নিয়মে ভোটের মাধ্যমে অর্জন করা যাবে কি না, সে সন্দেহ থেকে চলমান রাজনৈতিক লড়াই।
আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে কিভাবে ক্ষমতায় আসে, তা সবার জানা। মইনুদ্দিন-ফখরুদ্দীনরা যখন ক্ষমতা দখল করেন, তখন শেখ হাসিনা গর্বের সাথে বলেছিলেন, এই সরকার হলো আমাদের আন্দোলনের ফসল। আর তিনি ঘোষণা করলেন, ক্ষমতায় গেলে মইনুদ্দিন-ফখরুদ্দীন সরকারের বৈধ-অবৈধ সব কর্ম সংসদে পাস করে নেবেন। সংসদে ব্রুট মেজরিটি সদস্যের বলে তা করিয়ে নেয়া হলো।
বিগত পাঁচ বছরে সরকার দেশের এমন কোনো যুগান্তকর ভালো কাজ করেনি যাতে মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত হয়ে ভোট দিয়ে ক্ষমতাসীনদেরই বিজয়ী করবে। দলের কর্মীরা, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, কৃষক লীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ দেশটাকে যেভাবে লুটপাটে করে খেয়েছে, তাতে ভোটের আশায় গুড়েবালি। তাই উপায়? ১৯৯৬ সালে খলেদা জিয়ার সরকারের বিরুদ্ধে চরম আন্দোলন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে বাধ্য করা হলো। পরিস্থিতি যে পর্যায়ে চলে গিয়েছিল, তাতে নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারই বাংলাদেশের জন্য উত্তম পদ্ধতি ছিল। ১৯৯৬ ও ২০০১-এ দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে। দেশে বিদেশে তার ভূয়সী প্রশংসাও করা হয়েছে। কিন্তু এই সরকারের কর্মকাণ্ডে দেশ যেমন সঙ্কট পড়েছে, তেমনি বিদেশী মুরব্বিদের আদেশ-নির্দেশ মোতাবেক দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে করিডোর, ট্রানজিট, শুল্কবিহীন মালামাল আমদানি, সাংস্কৃতিক আগ্রাসন প্রভৃতি পাকাপোক্ত করা হয়েছে। মহাজোট বুঝতে পারছে তার পায়ের তলায় মাটি নেই। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন নির্বাচন হলে ভরাডুবি হবে। তাই ফন্দি এঁটে কাউকে দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধানের ওপর মামলা ঠুকে হাইকোর্ট থেকে বিতর্কিত রায় নিয়ে নেয়া হলো। ব্রুট মেজরিটি সদস্যের ভোটে সংসদে এক কথায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে দেয়া হয়েছে। প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকের সে বিতর্কিত রায়েও কিন্তু পরবর্তী দু’টি নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হওয়ার নির্দেশ ছিল। কিন্তু তা মানলে তো গদি থাকবে না। তারা নিজেদের সরকারের অধীনে নির্বাচন দিয়ে ১৯৭৩ সালের ইলেকশনের মতো ‘ম্যানেজ’ করে ক্ষমতা ধরে রাখতে চান। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনার প্রথম ভেলকিবাজি হলো আপনি ঘোষণা করেছেন আপনি প্রধানমন্ত্রীর পদ চান না। তবে আপনি চানটা কী? বিরোধী দলের দাবি তো একটাইÑ আপনি প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক বা নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিন। কেন আপনি সেটা মানছেন না? আপনি পদত্যাগ করলে দেশ এক মুহূর্তে শান্ত হয়ে যাবে। কোনো হরতাল, আগুন, বোমাবাজি থাকবে না। কিন্তু আপনার মুখের কথামতো কাজ করছেন না বলেই তো দেশে এই নৈরাজ্য।
দ্বিতীয় ভেলকিবাজি হলো, মন্ত্রিসভার সদস্যদের পদত্যাগপত্র নিয়েছেন। অথচ তারা মন্ত্রীর পদে বহাল তবিয়তে। বিশ্বে এমন কোনো নজির আছে? সর্বদলীয় সরকারে বিরোধী দলের সামনে টোপ ফেলছেন? দেশের মানুষ অত বোকা নয়। ইচ্ছামতো সর্বদলীয় সরকার করতে চাইলে যেদিন যে সর্বদলীয় (!) সরকার করবেন সেদিনই মন্ত্রীদের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করতে পারতেন।
আরেক ভেলকিবাজি হচ্ছে, জনসভায় প্রচুর মানুষ যায়। কেন যায় সেটা প্রশ্নবিদ্ধ। প্রতি সভায় তাদের দুই হাত তুলে আপনার দলকে ভোট দিতে বলেন। এসব সভায় কিছু লোক যায় এনামের বিনিময়, কিছু যায় হুজুগে। হাত তোলাওয়ালারা সবাই আপনার দলকে ভোট দেবে? সরকার পক্ষের পত্রিকার জরিপেও মহাজোট সরকার ভোট পেতে পারে শতকরা ২৮ ভাগ আর ১৮ দল নাকি পেতে পারে শতকরা ৬৭ ভাগ। এসবি, এনএসআই, ডিবি তাদের প্রতিবেদনে কী বলে?
এ দেশের শতকরা ৯০ ভাগ ঈমানদার মুসলমান। তারা স্বাধীনতার সময় আল্লার নাম নিয়ে যুদ্ধ করেছেন। তারা ঈমান আমলে মুসলমানই থাকতে চান। কিন্তু ১৯৭২ সালে যে শাসনতন্ত্র তৈরি করা হয়েছিল তা কি এ দেশের মানুষের মনোভাব ও ইচ্ছাকে সম্মান দেখিয়ে করা হয়েছিল? আপনার দল মূলনীতি হিসেবে ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্র, শাসনতন্ত্রে ঢুকিয়েছেন; তার সাথে এ দেশের মানুষের ঈমান আকিদার কোনো সম্পর্ক আছে? আপনি আরেক ভেলকিবাজি দেখালেন পঞ্চম সংশোধনীর বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম, এক আল্লায় বিশ্বাস এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার এক ধাক্কায় ফেলে দিয়ে পুনরায় সমাজতন্ত্র তথা রাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ সংবিধান ঢুকালেন। কাদের স্বার্থে তা করছেন, মানুষ বোঝে। প্রথম সংবিধান তৈরি করেছে আপনার দল ভারত ও রাশিয়ার নির্দেশে। তাতে জনগণের সমর্থন ছিল না। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, গণমানুষের মনোভাব বোঝার জন্য রাজনীতিবিদ, শিক্ষক, ছাত্র-যুবক, শিল্পী, সাহিত্যিক, সুশীলসমাজ ও গণমাধ্যমের মতামত নিয়েই সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী এনেছিলেন। দেশের মানুষের কাছে উপস্থাপন করে রেফারেন্ডাম দিন, দেখেন তারা কী মত দেন।
ভেলকিবাজির তো শেষ নেই। জনসভায় নেতানেত্রীরা বলে বেড়ান অমুক নেত্রী পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন, কুরআন শরিফ পড়েন। কিন্তু ইসলাম ধর্মের অবমাননামূলক নানা পদক্ষেপ কেন? শিক্ষাব্যবস্থার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তর থেকে ইসলাম ধর্মকে অনেকটাই সরিয়ে দেয়ার মতো কাজ হয়েছে। ধর্মীয় শিক্ষা মানুষকে চরিত্রবান করে। তারা দেশের সুনাগরিক হয়ে সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে জাতির সেবায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। শিক্ষার সাথে নৈতিকতার সংযোগ না হলে ভালো মানুষ হওয়া যায় না। আর ভালো মানুষ না হলে তারা ছাত্রলীগ, যুবলীগ মার্কা লোক হবে। শিক্ষাব্যবস্থাকে আধুনিক করতে হবে কিন্তু তাতে বেহায়াপনা ও উলঙ্গপনা থাকবে না। মাদরাসা শিক্ষার মধ্যে সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ আবিষ্কার করে বেড়াচ্ছেন কোন উদ্দেশ্যে। সরকার সন্ত্রাসের অজুহাতে ঢোল পিটিয়ে যেভাবে সারাবিশ্বে নাড়া দিচ্ছে, তাতে কিছু উগ্র লোক সন্ত্রাসের দিকে ঝুঁকে পড়তে পারে। সরকার দেশের প্রশাসন, আইন বিভাগ দলীয়করণ করে ফেলেছে ও মেধাহীন করছে, তাতে দেশের দফারফা হওয়ার জোগাড়। আর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, বিশেষ করে পুলিশ বাহিনীকে পেটোয়া বাহিনীতে পরিণত করছে। একদিন এদের দ্বারা নিজেদেরও হেনস্তা হতে হবে। সমস্যা হলো রাজনীতিবিদেরা এই মোক্ষম কথাটাই বুঝতে চান না।
অহঙ্কার ছেড়ে দিয়ে বাস্তবতাকে মেনে নিন। ভেবে দেখেছেন, সংবিধানটির খোলনলচে কিভাবে পাল্টিয়েছেন? তখন কি মনে হয়নি সংবিধান যখন তখন পরিবর্তন করা ঠিক নয়। পশ্চিমা দেশের কথা প্রায়ই বলে থাকেন। সেখানে চলতি সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়। অথচ সেসব দেশে গণতন্ত্র স্থায়ী হতে কারো ২০০ বছর পর্যন্ত পার হয়েছে। সেসব দেশে সরকার ও বিরোধী দলে এরকম চুল ছেঁড়াছিঁড়ি আছে কি?
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন