পুলিশ অথবা অন্য কারোর দায়ের করা মামলার ‘আসামি’ আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াবে এটাই স্বাভাবিক। পক্ষান্তরে যদি পুলিশের দায়ের করা মিথ্যা মামলায় জনগণের কাঠগড়ায় খোদ ক্ষমতাসীন সরকারকেই দাঁড়াতে হয়, তবে এটা রাষ্ট্রের জন্য যেমন ভীরুকাজ তেমন লজ্জাজনকও বটে।
পুলিশ প্রজাতন্ত্রের খাস কর্মচারী। জনস্বার্থে, জননিরাপত্তায় ও জনকল্যাণে সব ধরনের অপরাধ দমনই পুলিশের প্রধান কাজ। যদিও আধুনিক পুলিশ আর ব্রিটিশ পুলিশ অ্যাক্টের মধ্যে বিস্তর ফারাক বিদ্যমান। আজ সেই বর্ণনায় যাচ্ছি না। তাছাড়া আইনগত বিষয়ে কাউকে তালিম বা উপদেশ দেয়া আমার পক্ষে সমীচীন হবে না। খেটে খাওয়া মেহনতি জনগোষ্ঠীর জীবন-মান আইনগত নানা সমস্যায় জর্জরিত হলেও আমাদের দেশে আইনবিদদের পরিসংখ্যান বড়ই লম্বা এ কথা অস্বীকার করার নয়। সেকারণেই আইনগত কোনো পরামর্শ দিয়ে কোনো আইনবিদের দায়ের করা মামলায় নিজেকে জড়ায় এটা মোটেও কামনা নয়। আমার মতো দফায় দফায় জেল-হাজত খাটা ব্যক্তির আইনগত কোনো পরামর্শ কেউ যে সহসাই গ্রহণ করবে না তাতে সন্দিহান নয়, যথেষ্ট যুক্তিই রয়েছে। তবে বারবার জেল-হাজত খাটা সমাজে কু-খ্যাতি হলেও আমার পক্ষে নিস্তার পাওয়ার কিছুই নেই। নিজের খেয়েপরে পরের বেগারি খাটা স্বভাবটা সাংবাদিকতায় আবদ্ধ করে রাখায় দেশ তথা জাতি আমার নিকট এমনটা পাওয়ার শুভ সূচনার বহিঃপ্রকাশ মাত্র।
আদর্শ সমাজ বিনির্মাণে দেশ-তথা জাতির স্বার্থে সমাজের ঘটমান নীতিগত চিত্র গণমাধ্যমে প্রকাশ করে নিজের পেশা দায়িত্ব পালন করতে হয়। আবার সত্য ঘটনার খবর গণমাধ্যমে প্রকাশের দায়ে মাঝে মধ্যে অন্যের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দায়ের করা মামলায় কারাবাস করে আসতেও হয়। তাই সত্য লেখারও এখন আর খুব একটা ইচ্ছা করে না। কারণ সত্য খবর লেখার দায়ে জেল-হাজতে গেলে নিজেকে ভীষণ নিঃস্ব মনে হয়। এটা অবশ্যই পুলিশী গ্রেফতার কিংবা অন্য কারোর উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দায়ের করা মামলার ভয়ে নয়, বরং সাংবাদিকতার দায়ে পুরনো মামলার ঘানি টানতেই জীবন সংসারের তেরোটা বাজায় আজ এমন চিন্তার ফিকির। তারপরও জেল-হাজতের অভিজ্ঞতা আর জনগণের আয়-রোজগারের দেয়া খাজনায় খেয়েপরা ‘সেবক’ নামের পুলিশ বাহিনীর অনাকাঙ্খিত পুলিশী রোষানলের যাতনা আমাকে সব সময় আঁতকিয়ে তুলে। ভাবি, প্রজাতন্ত্রের খাস কর্মচারী হয়ে পুলিশ কেন হীন স্বার্থ চরিতার্থ করার মানসে মেতে ওঠে। পুলিশ কী জনগণের সেবক নাকি সেবক নামে শোষক? এমন অজ¯্র প্রশ্নবানে জর্জরিত বিবেকটাকে ‘সেবার সরল অঙ্ক’ বুঝানোর জন্যই আজকের এ লেখাটির মূলত উদ্দেশ্য।
পুলিশের নীতি বাক্যে বলা হয় ‘পুলিশ জনগণের বন্ধু, আর সেবাই পুলিশের ধর্ম।’ বাংলাদেশে এমন কোনো থানা নেই, যে থানায় গেলে এ নীতি বাক্যের সাক্ষাৎ মেলে না। পুলিশপাড়ায় অথবা থানা ভবনের একেবারে লোকচক্ষুর দৃশ্যমান দেয়ালে বড় বড় হরফে কারুকাজে খচিত ‘পুলিশ জনগণের বন্ধু, আর সেবাই পুলিশের ধর্ম’ একথাটি লেখা থাকে। সেই সঙ্গে লেখা থাকে ‘ঘুষ দেয়া আর নেয়া উভয়ই দ-নীয় অপরাধ’ ধূমপান ছেড়ে দিন, ফুলের সুবাস নিন, কেউ যদি মিথ্যা মামলা দায়ের করে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে’ এ রকম বাহারি-রকমারি কত প্রতিশ্রুতির কথাই না লেখা থাকে আমাদের দেশের থানা পাড়াতে।
আমাদের দেশে দেখা যায়, প্রায় সব মামলার বাদী পুলিশ নিজেই হতে পারে। এতে পুলিশের পক্ষে আইনগত তেমন কোনো সমস্যা হয় না। আবার এ সুযোগ কাজ লাগিয়ে অপরাধ দমনের অন্তরালে স্বীয় স্বার্থ হাছিল করতে এক শ্রেণীর পুলিশকে বেপেরোয়া হয়ে ওঠতে দেখা যায়। এতে বিভিন্ন মামলায় কিছু অতি উৎসাহী পুলিশ কর্মকর্তার তৎপরতার পরিণামে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হয়। পুলিশ কর্মকর্তাদের এরূপ হীনতৎপরতায় চাঞ্চল্যকর মামলাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আবার প্রকৃত অপরাধীদের শনাক্ত করাও সম্ভব হয় না। পুলিশের দায়ের করা মিথ্যা মামলার কলঙ্ক এ দেশের প্রতিটি সরকারের ললাটেই কম বেশি আছে। বিগত এবং বর্তমান সরকারের আমলে এ রকম বেশ কিছু ঘটনার নজির সৃষ্টি হয়েছে।
মহাজোট সরকারের আমলে কয়েকটি মামলায় বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মীদের জড়ানো হয়েছে। অথচ একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকার অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে জানা যায়, ওই সব মামলায় যাদের জড়ানো হয়েছে, তাদের মধ্যে কেউ কেউ ঘটনাস্থলেই ছিলেন না। তারা যে অন্য স্থানে ছিলেন, এর লিখিত দলিল-প্রমাণও রয়েছে। শুধু এখনই নয়, সব সরকারের আমলেই অতি উৎসাহী পুলিশ কর্মকর্তারা এভাবে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করতে নানা অপতৎপরতায় লিপ্ত থাকেন।
গত ২০১০ সালের ১৩ নবেম্বর পল্টন থানায় একটি মামলা দায়ের করে পুলিশ। এ মামলায় যুবদল-ছাত্রদল নেতাকর্মীসহ অন্যান্যের মধ্যে আসামী করা হয় ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) যুবদলের সাধারণ স¤পাদক রফিকুল ইসলাম মঞ্জুকে। মামলায় অভিযোগ করা হয়, মঞ্জু ও তার দলীয় লোকজন পল্টনের বিএনপি অফিসের সামনে একটি বিআরটিসি বাস ভাঙচুর করেছেন। একই সঙ্গে পুলিশের কর্তব্যকাজে বাধা দিয়েছেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, রফিকুল ইসলাম মঞ্জু ঘটনার দুই দিন আগে অর্থাৎ ওই বছরের ১১ নবেম্বর হজ্ব পালনের উদ্দেশ্যে সৌদি আরব যান। এজাহারের ওই ঘটনার সময় তিনি মক্কায় অবস্থান করছিলেন। আইনজীবীদের মতে, এতে এই মামলার ভিত্তিও অনেকটা দুর্বল হয়ে পড়েছে। কারণ পুলিশ সঠিক তথ্য না জানিয়ে হয়রানিমূলক মামলা করেছে বলেও মামলার অন্য আসামীরা প্রমাণ করার চেষ্টা করবেন।
একই দিন ১৩ নবেম্বর নটর ডেম কলেজের সামনে গাড়ি পোড়ানোর অভিযোগে পুলিশের পক্ষ থেকে মতিঝিল থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। ওই মামলায় জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগর আমীর রফিকুল ইসলাম খানকে গ্রেফতার দেখিয়ে অভিযোগে বলা হয়, তিনি ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে গাড়ি পোড়ানোয় উসকানি দিয়েছেন।
অথচ অন্য একটি মামলার নথি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ওই বছরের ২৪ আগস্ট রফিকুল ইসলাম খানকে গ্রেফতার করে পুলিশ। মামলায় উল্লেখিত ঘটনার আগে থেকেই তিনি ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি থাকেন। কারাগারে থাকা অবস্থায় তিনি কিভাবে ১৩ নবেম্বর গাড়ি পোড়ানোয় উসকানি দিয়েছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
একই বছরের ১৮ নবেম্বর রাত সাড়ে ৮টার দিকে প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের হেয়ার রোডের বাসভবন চত্বরে ককটেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় রমনা থানায় বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে ওই দিনই একটি মামলা দায়ের করা হয়। মামলায় সন্দেহভাজন আসামী করা হয় যুবদলের সভাপতি সাবেক এমপি এডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাবিব-উন নবী খান সোহেল, বিএনপির মানবাধিকার বিষয়ক স¤পাদক ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন অসীম, ছাত্রদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু ও বিএনপির তৎকালীন মহাসচিব প্রয়াত খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের ছেলে খোন্দকার আখতার হামিদ পবনকে।
ওই সময় রমনা থানার কর্তব্যরত এসআই মো. জাফর আলী মামলাটি দায়ের করেন। তিনি এজাহারে উল্লেখ করেন, ঘটনার সময় প্রধান বিচারপতির বাসভবনের দক্ষিণ-পশ্চিম গেট থেকে প্রায় ২০-২৫ গজ উত্তরে সীমানা দেয়ালের মধ্যে পরপর দুটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটে। সংবাদ পেয়ে তিনি রাত ৯টার দিকে সেখানে যান। পরে অপরাধীদের সন্ধানে তিনি ঘটনার আশপাশে বিভিন্ন এলাকায় তল্লাশি চালান। গোয়েন্দা নিয়োগ করেন। গোয়েন্দাদের দেয়া তথ্যমতে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাদের সন্দেহভাজন আসামী হিসেবে চিহ্নিত করেন। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ক্যান্টনমেন্টের বাসভবন সংক্রান্ত দায়ের করা মামলার শুনানি সামনে রেখে বিচারপতিদের ওপর মনস্তাত্ত্বিক চাপ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে এ ধরনের বোমা বিস্ফোরণের পরিকল্পনা ও ষড়যন্ত্র হতে পারে বলে এজাহারে সন্দেহ করা হয়। বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের এসব নেতাকে ঘটনার আগে ও পরে ঘটনাস্থলের আশপাশে ঘোরাঘুরি করতে দেখা গেছে বলেও এজাহারে উল্লেখ করা হয়।
ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন এ মামলায় হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিন নেন। তিনি সেখানে দলিল-প্রমাণ দাখিল করে বলেন, থাইল্যান্ড থেকে চিকিৎসা শেষে ঘটনার দিন তিনি দেশে ফেরেন। যখন প্রধান বিচারপতির বাসভবনে ককটেল বিস্ফোরিত হয়, তখন তিনি শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ছিলেন বলে প্রমাণিত হয়।
ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন অসীম গণমাধ্যমে জানান, তিনি থাইল্যান্ড থেকে বিমানে ফিরে বিমানবন্দরে অবস্থানের সময় প্রধান বিচারপতির বাসভবন এলাকায় বোমার বিস্ফোরণ ঘটে। অথচ তাকে এ সংক্রান্ত মামলায় সন্দিগ্ধ আসামী করাটা বিস্ময়কর। বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে হয়রানি করার জন্যই এ মামলায় তাকে জড়ানো হয়েছে উল্লেখ করে ঘটনার তদন্তের দাবি করে তিনি বলেন, প্রধান বিচারপতির বাসভবনে বোমা হামলার বিষয়টি ¯পর্শকাতর বিষয় হলেও এসব কারণে এ মামলার গ্রহণযোগ্যতা নষ্ট হয়েছে।
গত ২০১১ সালের মার্চের আগে পুলিশকে মারধর করার একটি মামলায় ঢাকার ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও বিএনপি নেতা চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব মনোয়ার হোসেন ডিপজলকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে তাকে বিভিন্ন থানায় দায়ের করা কয়েকটি মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। পল্লবী থানায় দায়ের করা একটি ছিনতাই মামলার বাদী এজাহারে উল্লেখ করেন, তাকে যে ছিনতাইকারীরা হামলা করেছিল, তাদের বয়স ছিল ২৫ থেকে ৩০ বছর। অথচ ওই মামলায় পঞ্চাশোর্ধ্ব ডিপজলকে সন্দিগ্ধ আসামী হিসেবে গ্রেফতার দেখানো হয়। আদালত পুলিশের এ ধরনের সন্দেহকে আমলে না নিয়ে ডিপজলকে জামিন দিয়ে দেন।
সব সরকারের আমলেই অতি উৎসাহী পুলিশ কর্মকর্তারা এ ধরনের কাজ করে থাকেন। ২০০৪ সালের ৫ জুন চারদলীয় জোট সরকারের আমলে আওয়ামী লীগের ২৪ ঘণ্টা হরতালের কর্মসূচি ছিল। আগের রাতে শেরাটন হোটেলের ক্রসিংয়ে বিআরটিসির একটি দোতলা বাসে কে বা কারা আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে ১১ বাসযাত্রী পুড়ে মারা যান। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করে। সাতজন পুলিশ কর্মকর্তা মামলা তদন্ত করলেও এখন পর্যন্ত দায়ী ব্যক্তিদের খুঁজে বের করতে পারেনি। তবে জোট আমলে কালু মিয়া নামের এক আসামিকে দিয়ে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি আদায় করে। ওই স্বীকারোক্তিতে আওয়ামী লীগ-যুবলীগের চার নেতার পরিকল্পনায় বাসে কালু মিয়া আগুন দেয় বলে জানায়।
পরে জানা যায়, কালু মিয়া বাসে আগুন ধরানোর কথা স্বীকার করলেও ঘটনার আগের দিন অন্য একটি মামলায় গ্রেফতার হয়ে সে ঘটনার দিন পুলিশ রিমান্ডে ছিল। মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ বিরোধী দলকে জব্দ করার জন্য কালু মিয়াকে দিয়ে জোর করে স্বীকারোক্তি করায় বলে প্রমাণিত হয়। এ ঘটনায় ওই তদন্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে হাইকোর্টের নির্দেশে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়। পুলিশের এই হীনকর্মটি ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয় ওই সময়। (তথ্য সূত্র : দৈনিক কালের কণ্ঠ-১৪.০৩.২০১১)
আমরা অতীত থেকে বাংলাদেশে দেখে আসছি, সব সরকারের আমলেই কিছু পুলিশ ক্ষমতাসীনদের বিশেষ নজরে পড়ার জন্য বিরোধীদলীয় নেতাদের হয়রানিমূলক মামলায় জড়াতে বেপোরোয়া হয়ে ওঠে। অবশ্য পুলিশের এ ধরনের হীন কর্মই পরবর্তীতে পুরো সরকারকে বেকায়দায় ফেলে। অন্যদিকে পুলিশের যথাযথ প্রশিক্ষণ ও দায়িত্ববোধ না থাকায় মামলার মেরিট নষ্ট হয়। সঠিক তদন্তের অভাবে প্রকৃত অপরাধীরা পার পেয়ে যায়। প্রাথমিক তদন্ত না করে পুলিশের পক্ষ থেকে এভাবে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে হীন চরিতার্থে মামলা করলে বা মামলায় গ্রেফতার করলে বিরোধী দল জব্দ হয় না। বরং সরকার সময়ে সময়ে বেকায়দায় পড়ে যায়। তৎসঙ্গে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হয়।
আমরা মনে করি, বিশেষ কারণে পুলিশ এসব করে। এক. সরকারের সুনজরে আসার জন্য। দুই. সরকারদলীয় প্রভাবশালীদের পরামর্শে অনেক সময় পুলিশ এটি করে। তিন. অনেক সময় বিরোধী দল সমর্থক পুলিশ কর্মকর্তারা ইচ্ছাকৃতভাবে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে এমনটি করে থাকেন। চার. স্বীয় উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য। পাঁচ. ক্ষমতার অপব্যবহারের জন্য। যার ফলে বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মীরা সত্যিকারের অপরাধ করলেও সেটা মানুষ বিশ্বাস করে না। কাজেই পুলিশকে অবশ্যই অত্যন্ত সচেতনভাবে কাজ করায় বাধ্য করতে সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে।
উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মিথ্যা ইনফরমেশন দিয়ে মামলা করে বা তদন্ত ছাড়াই বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার দেখালে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হয়। কিছু পুলিশ সদস্য ইচ্ছাকৃতভাবে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য অতি উৎসাহী হয়ে এভাবে মামলা দায়ের করেন। এ কারণে মামলাটি প্রমাণ করা যেমন কষ্টকর হয়ে পড়ে, তেমনি প্রকৃত অপরাধীদেরও শনাক্ত করা সম্ভব হয় না।
তবে পুলিশের এ ধরনের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হীন কর্মের ঘটনা পুলিশ প্রধানের জানা নেই। তবে তদন্ত করে যদি প্রমাণ পাওয়া যায়, পুলিশ যোগসূত্র ছাড়াই অতি উৎসাহী হয়ে কাউকে মামলায় জড়িয়েছে, তাহলে ওই পুলিশের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ রকম কত প্রতিশ্রুতিই না শুনে আসছে ভুক্তভোগীসহ সচেতন মহল। সাধুবীর ভঙ্গিতে ওইসব প্রতিশ্রুতি দিলেই পুলিশ প্রধানের দায়িত্ব শেষ হবে না। যদি তা বাস্তবায়ন না করা হয়। আমরা আশা করি, সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জনগণের আয়-রোজগারে খেয়েপরা ওইসব দোষী পুলিশদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে কুণ্ঠিতবোধ করবেন না। তাছাড়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এ বিষয়ে তদন্ত করে দায়ী পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন সময়ের দাবি। নচেৎ দোষী পুলিশদের রোষানলে কেউ না কেউ ভস্মীভূত হতেই থাকবে। যা একান্তই সবার জন্য অনাকাঙ্খিত এবং অপ্রত্যাশিত। আমরা পুলিশ বাহিনীকে জনগণের প্রকৃত সেবক হিসাবেই দেখতে চাই।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন