এক ব্যক্তির ইচ্ছার কাছেই কি জাতিকে বারবার জিম্মি হতে হবে? এ প্রশ্ন এখন সব মহলে। মাগুরার একটি উপনির্বাচনকে অজুহাত হিসেবে
দাঁড় করিয়ে ১৯৯৪ সাল থেকে তিনি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি
সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেন। সঙ্গী হিসেবে পেয়েছিলেন জামায়াত ও জাতীয়
পার্টিকে। ১৯৯৪ থেকে ’৯৬ দুই বছরের ওই আন্দোলন
এরশাদবিরোধী ৯ বছরের আন্দোলনকেও হার মানিয়েছিল। ১৭৩ দিন হরতাল দিয়েছিলেন শেখ
হাসিনা। এর মধ্যে ১৯ দিন ছিল লাগাতার অসহযোগ আন্দোলন। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার
প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে অসংখ্য মানুষের রক্ত ঝরানো হয়েছিল। পেট্রল বোমা মেরে
বাসযাত্রীদের নির্মমভাবে হত্যার নজির তখনই সৃষ্টি হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর
অসংখ্য হামলার ঘটনা ঘটে, তাতে অনেকে মারাও যান। কোটি
কোটি টাকার রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস করা হয়। বিশেষ করে চট্টগ্রামে নবনির্মিত আধুনিক
রেলস্টেশনটি ধ্বংসের ঘটনা ছিল নজিরবিহীন। দুই বছরের আন্দোলনে পোড়ানো হয়েছিল বহু
গাড়ি। রেলগাড়িতে আগুন দেয়া, রেললাইন উপড়ে ফেলা সবই ছিল ওই
আন্দোলনে। অফিসগামী সরকারি কর্মকর্তাকে প্রকাশ্য রাজপথে দিগম্বর করে ছেড়ে দেয়ার
ঘটনাও শেখ হাসিনার আন্দোলনের সৈনিকেরা তখন ঘটিয়েছিল। সহিংস ওসব হরতালে দুই বছরেরও
বেশি সময় মানুষকে কার্যত বন্দী জীবন কাটাতে হয়েছিল। দেশের অর্থনীতি ধ্বংসের
দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিল। আলোচনা, সমঝোতার দেশী-বিদেশী
সব আহ্বান আওয়ামী নেত্রী প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে
আন্দোলন করছিলেন। অথচ সহযোগী দল দু’টির সদস্যদের
সাথে নিয়ে তিনি দলীয় সদস্যসহ সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার প্রায় দেড় বছর আগে সংসদ থেকে
পদত্যাগ করে সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা প্রবর্তনের পথও বন্ধ করে
দিয়েছিলেন। বিএনপি সরকারকে তখন জাতীয় স্বার্থের কথা বিবেচনা করে একান্ত বাধ্য হয়েই
১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন করতে হয়েছিল। ওই নির্বাচন প্রতিহত করার জন্যও শেখ হাসিনা
সর্বশক্তি প্রয়োগ করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত ’৯৬-এর ১৫ ফেব্রুয়ারির
নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত ষষ্ঠ সংসদে বহুল আলোচিত নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক
সরকারব্যবস্থা সংবলিত সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী পাস করা হয়। এই সংশোধনী পাস হওয়ার
সাথে সাথেই তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া তার পূর্বঘোষণা অনুযায়ী সংসদ
ভেঙে দিয়ে নতুন নির্বাচনের পথ উন্মুক্ত করেছিলেন। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের
অধীনে প্রথম নির্বাচনটি হয় ’৯৬-এর ১২ জুন।
ওই নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ২১ বছর পর ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। শেখ হাসিনা প্রথমবারের
মতো প্রধানমন্ত্রী হলেন। নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে শেখ হাসিনা তত্ত্বাবধায়ক
সরকারব্যবস্থাকে বিশ্বের জন্য একটি মডেল হিসেবে অভিহিত এবং ওই ব্যবস্থা প্রবর্তনে
নিজের কৃতিত্বও জাহির করেছিলেন। জামায়াত উল্লেখ করেছিল, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উদ্ভাবক শেখ হাসিনা নন; তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ধারণা প্রথম দিয়েছিলেন তাদের নেতা গোলাম আযম।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য জাতিকে চরম মূল্য দিতে হয়েছিল। সর্বশেষ ২০০৮ সালের
২৯ ডিসেম্বর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ক্ষমতায়
এসে আদালতের রায়ের দোহাই দিয়ে সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা একতরফাভাবে বাতিল
করে দিলেন। সেইসাথে দলীয় সরকার তথা তার নিজের অধীনে নির্বাচন করার পাকা ব্যবস্থা
তিনি করে নিয়েছেন সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে। এখন তিনি বলছেন নির্দলীয়
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা গণতান্ত্রিক চেতনাবিরোধী। এই চেতনা কি তার ’৯৬ সালে ছিল না? নিজে ক্ষমতায়
থেকে নির্বাচন করার জন্য তার জেদের কারণে দেশ আবার সেই গভীর সঙ্কট ও অনিশ্চয়তার মধ্যে
পড়েছে। ১৬ কোটি মানুষ আজ জিম্মি হয়ে পড়েছে। দেশ চলে যাচ্ছে মহাবিপর্যয়ের দিকে।
আওয়ামী লীগ ছাড়া দেশের সব রাজনৈতিক দল, সুশীলসমাজ, জনগণ, বিদেশী বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর
প্রায় সবাই (নিকট প্রতিবেশী একটি রাষ্ট্র ছাড়া) চাচ্ছে সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ এবং সব দলের অংশগ্রহণে
একটি শান্তিপূর্ণ নির্বাচন। এমন নির্বাচন একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনেই
কেবল করা সম্ভব। কিন্তু শেখ হাসিনা না দেশের মানুষের, না বিদেশী বন্ধুদেরÑ কারো কথাই
শুনছেন না। তার একই কথা, তিনি যেভাবে (নিজের ইচ্ছামতো)
সংবিধান সংশোধন করেছেন, সেই সংশোধিত সংবিধানের আলোকে
অর্থাৎ তার নিজের অধীনেই নির্বাচন করবেন। এ থেকে তিনি এক চুলও নড়বেন না। কিছুটা
চাপে পড়ে অসাংবিধানিক সর্বদলীয় সরকারের নতুন তত্ত্ব দিয়েছেন। এই সরকারের প্রধানও
তিনিই।
২০০৬ সালে সংবিধান অনুযায়ী অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি কে এম হাসানের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিচারপতি হিসেবে যথেষ্ট খ্যাতি থাকা সত্ত্বেও তার মধ্যে বিএনপির গায়েবি গন্ধ আবিষ্কার করে তাকে প্রধান উপদেষ্টা না মানার ঘোষণা দিয়ে লগি-বৈঠার আন্দোলন শুরু করেন শেখ হাসিনা। ২৮ অক্টোবর ২০০৬ পল্টন মোড়ে প্রকাশ্য দিবালোকে তার কর্মীরা লগি-বৈঠা দিয়ে পিটিয়ে পাঁচজন জামায়াত-শিবির কর্মীকে হত্যা করে। লগি-বৈঠার আন্দোলনের সূত্র ধরেই পরবর্তীকালে ১/১১-এর সৃষ্টি হয়। মইন উদ্দিন-ফখরুদ্দীনরা ক্ষমতা দখল করে দুই বছর দেশবাসীকে অঘোষিত সামরিক শাসনের যাঁতাকলে পিষ্ট করেছিলেন। ’৯৪ সালে শেখ হাসিনা মনে করেছিলেন নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন না হলে হয়তো তিনি ক্ষমতায় যেতে পারবেন না। এবার তিনি মনে করছেন, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে (দুর্নীতি ও দুঃশাসনের কারণে) তার দলের পুনরায় ক্ষমতায় যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। তাই এখন তিনি সবার মত উপেক্ষা করে নিজের অধীনে নির্বাচন করার অনড় অবস্থান নিয়েছেন। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগেÑ নিজেদের ক্ষমতায় যাওয়া ও থাকার জন্য যখন যে ব্যবস্থা সুবিধা হবে সেটাই জাতির ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হলে জাতিকে সেটা মেনে নিতে হবে কেন? জ্ঞানীগুণীরা কেউ তার মতের বিরুদ্ধে কথা বললে তিনি তাদের অপদস্থ করতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করেন না। স্ববিরোধী কথাবার্তা এবং ক্রমাগত ওয়াদা ভঙ্গের কারণে আওয়ামী লীগ দেশের মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়ে ফেলেছে। ’৮৬ সালে শেখ হাসিনা ঘোষণা করলেন এরশাদের অধীনে নির্বাচনে যাবেন না। যে যাবে সে হবে জাতীয় বেঈমান। ৪৮ ঘণ্টাও পার হতে পারল না নির্বাচনে চলে গেলেন। ’৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে সংসদে দাঁড়িয়ে বললেন, আওয়ামী লীগ আর কখনো হরতাল করবে না, এমনকি বিরোধী দলে গেলেও না। ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের বিরুদ্ধে তিনি ম্যারাথন হরতাল করেছিলেন। একই সময় ঘোষণা করেছিলেন ৫৭ বছর বয়সে রাজনীতি থেকে অবসর নেবেন। এখন তার বয়স ৬৭। কিন্তু তিনি এখনো অবসর নেননি। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত অবসর নেবেন কি না কেউ জানে না। মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশের ওপর রাতের আঁধারে ক্র্যাকডাউন চালানোর পর ধর্মপ্রাণ মানুষের ক্ষোভকে প্রশমিত করার জন্য বললেন দেশ চলবে মদিনা সনদ অনুযায়ী। দেশ কিন্তু চলছে আমাদের দেশীয় সংবিধান অনুযায়ী। সে সংবিধানের গণতান্ত্রিক চরিত্রের মারাত্মক হানি ঘটেছে এ আমলে। পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংসদ বহাল রেখে আরেকটি সংসদ নির্বাচন করার বিধান করার পর সমালোচনার ঝড় যখন বাড়তেই থাকল, তখন প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিলেন ২৫ অক্টোবরের পর সংসদ ভেঙে দেয়া হবে। অথচ এখন তিনি সংসদ বহাল রেখেই নির্বাচন করার জোর প্রস্তুতি গ্রহণ করে চলেছেন। শেখ হাসিনার ক্রমাগতভাবে বলে যাওয়া এতসব অসংলগ্ন কথাবার্তায় দেশের মানুষ বিস্মিত ও বিরক্ত।
২০০৬ সালে সংবিধান অনুযায়ী অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি কে এম হাসানের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিচারপতি হিসেবে যথেষ্ট খ্যাতি থাকা সত্ত্বেও তার মধ্যে বিএনপির গায়েবি গন্ধ আবিষ্কার করে তাকে প্রধান উপদেষ্টা না মানার ঘোষণা দিয়ে লগি-বৈঠার আন্দোলন শুরু করেন শেখ হাসিনা। ২৮ অক্টোবর ২০০৬ পল্টন মোড়ে প্রকাশ্য দিবালোকে তার কর্মীরা লগি-বৈঠা দিয়ে পিটিয়ে পাঁচজন জামায়াত-শিবির কর্মীকে হত্যা করে। লগি-বৈঠার আন্দোলনের সূত্র ধরেই পরবর্তীকালে ১/১১-এর সৃষ্টি হয়। মইন উদ্দিন-ফখরুদ্দীনরা ক্ষমতা দখল করে দুই বছর দেশবাসীকে অঘোষিত সামরিক শাসনের যাঁতাকলে পিষ্ট করেছিলেন। ’৯৪ সালে শেখ হাসিনা মনে করেছিলেন নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন না হলে হয়তো তিনি ক্ষমতায় যেতে পারবেন না। এবার তিনি মনে করছেন, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে (দুর্নীতি ও দুঃশাসনের কারণে) তার দলের পুনরায় ক্ষমতায় যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। তাই এখন তিনি সবার মত উপেক্ষা করে নিজের অধীনে নির্বাচন করার অনড় অবস্থান নিয়েছেন। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগেÑ নিজেদের ক্ষমতায় যাওয়া ও থাকার জন্য যখন যে ব্যবস্থা সুবিধা হবে সেটাই জাতির ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হলে জাতিকে সেটা মেনে নিতে হবে কেন? জ্ঞানীগুণীরা কেউ তার মতের বিরুদ্ধে কথা বললে তিনি তাদের অপদস্থ করতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করেন না। স্ববিরোধী কথাবার্তা এবং ক্রমাগত ওয়াদা ভঙ্গের কারণে আওয়ামী লীগ দেশের মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়ে ফেলেছে। ’৮৬ সালে শেখ হাসিনা ঘোষণা করলেন এরশাদের অধীনে নির্বাচনে যাবেন না। যে যাবে সে হবে জাতীয় বেঈমান। ৪৮ ঘণ্টাও পার হতে পারল না নির্বাচনে চলে গেলেন। ’৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে সংসদে দাঁড়িয়ে বললেন, আওয়ামী লীগ আর কখনো হরতাল করবে না, এমনকি বিরোধী দলে গেলেও না। ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের বিরুদ্ধে তিনি ম্যারাথন হরতাল করেছিলেন। একই সময় ঘোষণা করেছিলেন ৫৭ বছর বয়সে রাজনীতি থেকে অবসর নেবেন। এখন তার বয়স ৬৭। কিন্তু তিনি এখনো অবসর নেননি। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত অবসর নেবেন কি না কেউ জানে না। মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশের ওপর রাতের আঁধারে ক্র্যাকডাউন চালানোর পর ধর্মপ্রাণ মানুষের ক্ষোভকে প্রশমিত করার জন্য বললেন দেশ চলবে মদিনা সনদ অনুযায়ী। দেশ কিন্তু চলছে আমাদের দেশীয় সংবিধান অনুযায়ী। সে সংবিধানের গণতান্ত্রিক চরিত্রের মারাত্মক হানি ঘটেছে এ আমলে। পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংসদ বহাল রেখে আরেকটি সংসদ নির্বাচন করার বিধান করার পর সমালোচনার ঝড় যখন বাড়তেই থাকল, তখন প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিলেন ২৫ অক্টোবরের পর সংসদ ভেঙে দেয়া হবে। অথচ এখন তিনি সংসদ বহাল রেখেই নির্বাচন করার জোর প্রস্তুতি গ্রহণ করে চলেছেন। শেখ হাসিনার ক্রমাগতভাবে বলে যাওয়া এতসব অসংলগ্ন কথাবার্তায় দেশের মানুষ বিস্মিত ও বিরক্ত।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন