শুধু মুসলমানরাই নন, সংখ্যালঘুরাও বাংলাদেশের নাগরিক। মৌলিক অধিকার ও নিরাপদে জীবনযাপনের অধিকার থেকে কেউ তাদের বঞ্চিত করতে পারে না। কিন্তু রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের কারণে এবং সুশাসনের অভাবে পরিস্থিতি বর্তমানে এমন পর্যায়ে উপনীত হয়েছে যে, সংখ্যাগুরু -সংখ্যালঘু নির্বিশেষে নাগরিকদের মৌলিক অধিকার ও নিরাপত্তা এখন বিপর্যস্ত। কিন্তু এখানে একটি বিষয় লক্ষণীয় যে, বাংলাদেশের কোথায়ও সংখ্যালঘুদের ওপর কোনো হামলা হলে কোনো তদন্ত ও তথ্য ছাড়াই ঘটনার দায় অতি দ্রুত জামায়াত-বিএনপি’র ওপর চাপানোর চেষ্টা চালানো হয় এবং বিশেষ মহল উদ্দেশ্যমূলক কিংবা সামাজিক দুর্বৃৃত্তপরায়ণদের এসব বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে অবলম্বন করে প্রচারণা চালায় যে, বাংলাদেশ একটি সাম্প্রদায়িক ও জঙ্গি রাষ্ট্রের দিকে ধাবিত হচ্ছে। আসলে কি তাই? বাংলাদেশের মানুষ কি সাম্প্রদায়িক? বিভ্রান্ত ও বিদেশী ষড়যন্ত্রকারীদের কতিপয় এজেন্টের কিছু সন্ত্রাসী কার্যকলাপকে পুঁজি করে কখনোই এ কথা বলা যাবে না যে, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক কিংবা জঙ্গি রাষ্ট্রের দিকে ধাবিত হচ্ছে। কারণ সেক্যুলার ও ইসলামী আদর্শভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর এজেন্ডায় সাম্প্রদায়িকতা কিংবা জঙ্গিবাদের মত কোনো বিষয় নেই। তবে দুঃখের বিষয় হলো, কোথায়ও কোনো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটলে ব্লেমগেমের চিত্র লক্ষ্য করা যায়। রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য একে অপরকে দোষী সাব্যস্ত করার তৎপরতায় তিক্ততা বৃদ্ধির পাশাপাশি বিদেশে ও দেশের ইমেজ বিনষ্ট হয়।
আসলে বিষয়টি হলো, দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত না হলে হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে সাধারণ নাগরিক তথা দুর্বলদের জানমাল ও ইজ্জতের নিরাপত্তা থাকে না। যারা ক্ষমতায় থাকে কিংবা যারা ক্ষমতাবান, তাদের দাপট ও সন্ত্রাসে সাধারণ মানুষকে সন্ত্রস্ত থাকতে হয়। এমন ঘটনা আমরা সম্প্রতি লক্ষ্য করেছি পাবনার বনগ্রামে। সরকারি দলের সন্ত্রাসীরা চাঁদা না পেয়ে গুজব রটিয়ে বাবলু সাহার বাড়িতে হামলা চালায়। এর জন্য জামায়াত-বিএনপিকে দায়ী করার চেষ্টা চালানো হয়। অথচ জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান এবং সিপিবি-বাসদের তদন্ত দল সরকারি দলের লোকজনকে ঘটনার জন্য দায়ী করেন। তারা স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ধিক্কারও জানান। আর বাবলু সাহাও স্পষ্ট করেই জানিয়ে দিয়েছেন যে, ঘটনার সাথে জামায়াত-বিএনপি জড়িত নয়। আসলে গণতান্ত্রিক চেতনার বদলে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন প্রশ্রয় পাওয়ায় এমন ঘটনা ঘটছে। তাই এমন ঘটনাকে কেন্দ্র করে একথা বলা যাবে না যে, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক কিংবা জঙ্গি রাষ্ট্রের দিকে ধাবিত হচ্ছে। প্রকৃত বিষয় হচ্ছে, ক্ষমতা ও ধনোপার্জনের গণতন্ত্র তথা রাজনৈতিক দৃর্বৃত্তায়নের কারণে বাংলাদেশে হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে সাধারণ মানুষ নিজেদের নিরাপদ ভাবতে পারছে না।
আরো অবাক ব্যাপার হলো, সামাজিক ও ব্যবহারিক কারণে সংঘটিত ঘটনাগুলোকেও সাম্প্রদায়িক ঘটনায় রূপ দেওয়ায় তৎপর রয়েছে একটি মহল। মিডিয়ায়ও তেমন প্রপাগান্ডা লক্ষ্য করা যায়। এসব ঘটনা যে শিক্ষা-দীক্ষা, নৈতিকতা ও মানবিক চেতনার অভাবে ঘটছে তা আমরা বিবেচনায় আনতে চাই না। দোষারোপের রাজনীতিই যেন এখন মুখ্য বিষয় হয়ে উঠেছে। এ প্রসঙ্গে বরিশালের কালীখোলা গ্রামের ঘটনা উল্লেখ করা যায়। খেলা নিয়ে সেখানে খুনের ঘটনা ঘটে। হিন্দু তরুণরা এখানে শক্তিশালী হওয়ায় তাদের হাতে নিহত হয় মুসলিম তরুণ। এ ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় নিহতের স্বজন ও কতিপয় গ্রামবাসী হত্যাকারীদের বাড়িতে হামলা চালায়। এ ঘটনায় হত্যাকারীরা মুসলিম হলেও কি একই রকম ঘটনা ঘটতো না? কিন্তু আমরা কোনো ঘটনায়ই চাইবো না যে, মানুষ আইনকে নিজের হাতে তুলে নেবে। তবে এমন পরিবেশ সৃষ্টির জন্য সুশাসন প্রতিষ্ঠা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। দলীয় শাসনে কাক্সিক্ষত সেই পরিবেশ অর্জন সম্ভব নয়। আমাদের সরকার ও রাজনীতিবিদরা বিষয়টি উপলব্ধি করলে মঙ্গল।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন