সুবীর ভৌমিক ও শেখর গুপ্ত ভারতীয় সাংবাদিক। এরা যতটা না সাংবাদিক, তার চেয়ে বেশি প্রোপাগান্ডিস্ট। এক দিকে বর্ণবাদী হিন্দু, আবার অন্য বর্ণবিদ্বেষীও। ভারতীয় স্বার্থ ও হিন্দুত্ববাদ সংরক্ষণে
এরা নিষ্ঠাবান। তাদের এই বৈশিষ্ট্য নিন্দনীয় নয়। তবে এরা মনে করেন মুসলিমবিদ্বেষ ও
প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর ওপর আধিপত্য বিস্তার করার চৈতন্য লালন করা তাদের
দেশপ্রেমের অংশ। এটা কোনো বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকের পেশাদারিত্ব হতে পারে না। ঢাকায়
ভারতীয় দূত পঙ্কজ শরণ একই জাতের মানুষ। এই কূটনীতিক প্রায় ভুলেই যানÑ তিনি একটি দেশের দূত, রাজনৈতিক কর্মী
নন। এরা কেউ নিজের চরকায় তেল দেন না। কথায় আছে ৩৩ কোটি দেবতার দেশ ভারত। প্রায় ৩০ কোটি
মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। হরিজন বা নমশূদ্র মিলে জাতপাতে পিষ্ট কোটি
কোটি মানুষ শোষণ-বঞ্চনায় পদদলিত। দেশটির রাজপথেও ধর্ষিতা নারীর আর্তনাদ শোনা যায়।
বিভিন্ন রাজ্যে নিরাপত্তাহীন জীবনের গ্লানি বহন করে চলে অসংখ্য মানুষ।
ভারতের নেতারা একধরনের কসমেটিক উন্নতির ডুগডুগি বাজান। বিনোদন বাণিজ্যের মাধ্যমে মুম্বাইয়া সংস্কৃতির কেতাদুরস্ত অবস্থা যে সব বাস্তবতা নয় তা কারো অজানা নয়। ভারতের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী পুরো গতর ঢেকে রাখার বস্ত্র পায় না। পরমাণু শক্তির ফুটানির তলে দারিদ্র্য মুখব্যাদান করে আছে। চিকিৎসার অভাব, স্যানিটেশন সুবিধার অপ্রতুলতা ও শিক্ষার অভাবে কোটি কোটি মানুষ অসহায় জীবন মেনে নিতে বাধ্য হচ্ছে। অনেকের ধারণা আমাদের দেশের অনেক মানুষ চিকিৎসার জন্য ভারত যায়। নিশ্চয় আহামরি কিছু। বাস্তবতা বিপরীত। বাংলাদেশের রোগী নিয়ে বাণিজ্যের জন্য ওসব হাসপাতাল, ভারতের গণমানুষের জন্য নয়। সভ্যতার সাধারণ আলোও পৌঁছেনি এমন জনপদ বেশুমার। আমাদের ঘরের কাছের সেভেন সিস্টার কেমন আছে তা তো আমাদের জানা। দেশটির মানচিত্রজুড়ে বিচ্ছিন্নতাবাদী কিংবা স্বাধীনতাকামীরা দিন দিন শক্তি সঞ্চয় করছে এমন গোষ্ঠীর সংখ্যা প্রায় অর্ধশত। সাম্প্রদায়িকতার বিষ ঢেলে দাঙ্গা বাধানোর মতো পশুপ্রবৃত্তি তাদের কিছু উগ্রবাদীর অস্থিমজ্জায়। সে দিকে তাদের নজর পড়ে না। তাদের যত জ্বালা ও মনোকষ্ট মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর চেষ্টায় অবিরাম সংগ্রামী বাংলাদেশী মানুষের জন্য। তাই দাবিয়ে রাখতে সচেষ্ট। তাদের ধারণা, বাংলাদেশ মাথা তুলে দাঁড়ানোর মানে তাদের স্বাধীনতাকামীদের আশকারা পাওয়া।
বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক সঙ্কটের জন্য প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রধানকে এরা অভিযুক্ত করে না। বরং বাংলাদেশের স্বার্থের প্রতিকূলে শেখ হাসিনার ভারতবান্ধব নীতি তারা বিশ্বস্ত বন্ধুত্বের নিদর্শন মনে করে। এই কৃতজ্ঞতা দেখাতেই তাদের মিডিয়া সোচ্চার। জয় ও শেখ রেহানার সাথে পঙ্কজ শরণের একান্ত বৈঠকের কারণও অভিন্ন। ভারতীয় দূত ও মিডিয়া এ কারণেই অভিযুক্ত করে দেশের স্বাধীনচেতা মানুষগুলোকে। আবহমান কাল ধরে যে শান্তিপ্রিয় ও আজন্ম অসাম্প্রদায়িক আলেমসমাজ সাম্প্রদায়িকতা রুখে আসছে, জঙ্গিবাদ ঠেকিয়ে দিচ্ছে, তারাও তাদের বিদ্বেষের টার্গেট হচ্ছেন। এই আমলে বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন অব্যাহত থাকলেও তারা শেখ হাসিনা সরকারকে দায়ী করে না, অভিযুক্ত করে প্রতিবাদী মানুষকে, ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের। প্রভাবশালী নিউ ইয়র্ক টাইমসের সম্পাদকীয়তে মন্তব্য করা হয়, বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল দৃশ্যত রাজনৈতিক বিরোধীদের শ্বাস রোধ করে হত্যার আরেকটি যন্ত্রে পরিণত হয়েছে। ভারতীয় দূত ও এসব বর্ণবাদী সাংবাদিক এ দিকে যেতে নারাজ। তারা ভাবেন, এর মাধ্যমে ভারতবিদ্বেষের শেকড় উপড়ে ফেলা হচ্ছে। অথচ ঐতিহাসিক সত্য হচ্ছে, ৯৩ হাজার পাকিস্তানি সৈন্য ও ১৯৫ জন চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীকে জামাই আদরে পাকিস্তান পাঠিয়েছে ভারত। নৈতিকতার বিচারে কতটা ঠগবাজ হলে তারা এখন প্রহসনের বিচারে উসকানি দিতে পারে।
নিউ ইয়র্ক টাইমসের ‘পলিটিক্যাল ক্রাইসিস ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক সম্পাদকীয়তে বলা হয়, চলতি বছরের শুরু থেকে হরতালে বাংলাদেশ অচল হয়ে পড়েছে, প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলগুলোর সহিংস সঙ্ঘাতে কয়েক শ’ লোক নিহত হয়েছেন। বিরোধী দলের শীর্ষ নেতা ও মানবাধিকারকর্মীদের গ্রেফতার করা হয়েছে। বিচারের মৌলিক মানদণ্ডের প্রতি তাচ্ছিল্য প্রদর্শনকারী আদালতগুলো বিরোধী দলের অনেক সিনিয়র নেতাকে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছে। একই সম্পাদকীয়তে মন্তব্য করা হয়েছে, বর্তমান সঙ্কটের জন্য এককভাবে দায়ী প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রধান শেখ হাসিনা। দৃশ্যত, শেখ হাসিনা জানুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় সাধারণ নির্বাচনের আগে দিয়ে ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে থাকতে এবং প্রয়োজনে যেকোনো পন্থায় বিরোধীদের অকার্যকর করতে বদ্ধপরিকর। ২০১১ সালে তিনি নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের সাংবিধানিক বিধানটি বাতিল করে দেন। এর বদলে তিনি তার নেতৃত্বে ‘সর্বদলীয়’ সরকার গঠন করেছেন।
বাংলাদেশের বাস্তব অবস্থার এ চিত্রটি ভারতীয় পত্রিকায় পাওয়া যাবে না। উল্টো ভারতীয় বর্ণবাদী সাংবাদিক গোষ্ঠী ও মিডিয়া জনগণ ও বিরোধী জোটকে অভিযুক্ত করতে তৎপর। শেখ হাসিনা সরকারকে টিকিয়ে রাখতে এরা ভারতীয় সেনাদের অভিযানের সুপারিশ করছে। বলছে, ইন্দ্রিরা গান্ধী সেনা প্রত্যাহার করে ভুল করেছেন। সেই ভুল আর নাকি করা ঠিক হবে না। কারণও নাকি এই সরকার টিকে না থাকলে ভারতীয় স্বার্থ জলে পড়ে ডুবে যাবে। ভারতীয় থিংকট্যাংকও মনে করে, শেখ হাসিনা ভারতের যে আস্থা ও বন্ধুত্ব অর্জন করেছেন তার প্রতিদান দেয়া ভারতের কর্তব্য। এই কর্তব্য এরা বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থে উৎসর্গ করতে নারাজ।
অরুন্ধতীরা যে অশিক্ষা, কুশিক্ষা, কুসংস্কার, সাম্প্রদায়িকতা, শ্রেণিবৈষম্য, বর্ণবাদ, দারিদ্র্য ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করছেন, আন্না হাজারেরা যে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার, মহাস্বেতা দেবীরা যে মানবতার জন্য লড়াই করেছেনÑ সেসব জায়গায় সুবীর ভৌমিক ও শেখর গুপ্তরা অনুপস্থিত। পঙ্কজ শরণরা সেসব আড়াল করতে আগ্রাসী ও আধিপত্যবাদী কূটনীতির আশ্রয় নিচ্ছেন। ভারতজুড়ে ক্ষতবিক্ষত ও লুণ্ঠিত হচ্ছে মানবধর্ম, প্রকৃত ধর্মাচার, নরেন্দ্র মোদিরা ছড়াচ্ছেন সাম্প্রদায়িকতা ও হিংসার বিষবাষ্প, অথচ এসব জ্ঞানপাপী এ দেশে মৌলবাদ ও জঙ্গিবাদের ভূত তাড়ানোর ভড়ং করছে। জঙ্গিবাদ ও মৌলবাদের অভয়ারণ্য বলে বাংলাদেশের মানুষকে ও বাংলাদেশকে ভুলভাবে উপস্থাপন করছে। দুর্ভাগ্য যে, আমাদের বামপন্থী ও সেকুলারদের একটি বিরাট অংশের এজেন্ডা ও ভারতীয় সরকারের এজেন্ডা এক হয়ে গেছে। পশ্চিমা দেশগুলো যখন বিশ্বজুড়ে দারোগাগিরি করে, তখন অসহ্য লাগে। তার পরও কথা থাকে, এটা তাদের বিদেশনীতি এবং সাম্রাজ্যবাদী চিন্তার নষ্ট ভাবনা। এরা নিজ দেশের মানুষের অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা, মানবাধিকার, মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে পেরেছে। নিজ জনগণের সামনে এরা কল্যাণরাষ্ট্রের ধারণা উপস্থাপন করেছে। সভ্যতা ও উন্নত জীবনের ছোঁয়া ও নিরাপত্তা দিয়েছে। ভারত এ ক্ষেত্রে কোন স্তরে রয়েছে তারা তা ভাবে না; ভারতের মানুষের জীবনযাপনের গ্লানি, সন্ত্রাস, হিংসা, বিদ্বেষ ও সাম্প্রদায়িকতার অভয়ারণ্যের নজির, ুধা, দারিদ্র্য-শ্রেণিবৈষম্য ও বর্ণবাদের দগদগে ক্ষত কিভাবে এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব। এক সাচার কমিটির রিপোর্ট ও বাবরি মসজিদ-সংক্রান্ত রায় বলে দেয় ভারতের সংখ্যালঘুরা কিভাবে আছেন।
নিউ ইয়র্ক টাইমস মনে করে, মানবাধিকার লঙ্ঘন অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে অবরোধসহ নানাবিধ চাপের মুখে পড়তে পারে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উচিত বাংলাদেশের বিচার বিভাগের স্বায়ত্তশাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা, মানবাধিকারকর্মীদের হয়রানি বন্ধ করা এবং আগামী নির্বাচনের আগে গ্রহণযোগ্য অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের উপায় খোঁজার জন্য বিরোধী দলগুলোকে সাথে নিয়ে কাজ করা। ব্যতিক্রম ছাড়া ভারতীয় কোনো মিডিয়ায় এ ধরনের দায়িত্বশীল ও বস্তুনিষ্ঠ তথ্য পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
লন্ডনের প্রভাবশালী পত্রিকা ইকোনমিস্ট ম্যাগাজিনের অনলাইন সংস্করণে গত সপ্তাহে বাংলাদেশী পলিটিকস : ট্রেঞ্চ ওয়ারফেয়ার শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা অনেকটা পড়ে গেছে। অথচ ভারতীয় মিডিয়া বলছে, শেখ হাসিনা আবার ক্ষমতার কাছাকাছি পৌঁছে গেছেন।
ওই রিপোর্টে আরো বলা হয়, বাংলাদেশে সরকার সাংবিধানিক। কিন্তু জনপ্রিয়তা খুবই কম। জনমত জরিপ বলে যে, এ দেশের পাঁচ ভাগের মধ্যে চার ভাগই নির্দলীয় নিরপে সরকারের প।ে
অবশ্য ভারতের দ্য হিন্দু পত্রিকার ‘ক্রিপলিং ডেডলক’ শিরোনামে প্রকাশিত সম্পাদকীয়তে স্বীকার করা হয়েছে, দেশটিতে চলমান সঙ্কটের সূচনা হয় ২০১১ সালে। ওই সময় শেখ হাসিনা সরকার সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা’ বাতিল করে দেয়।
পত্রিকাটির দায়িত্বশীল মন্তব্য হচ্ছে, বর্তমান অচলাবস্থা নিরসনে প্রধান দুই জোটকেই এগিয়ে আসতে হবে। এ ছাড়া শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক পন্থায় ক্ষমতা হস্তান্তরের আর কোনো উপায় নেই। বিএনপির নির্বাচন বয়কটের হুমকি বা আওয়ামী লীগের একতরফা নির্বাচনের প্রস্তুতি কোনোটাই সমস্যার সমাধান করবে না। অন্য দিকে হাসিনা সরকারের প্রতি নয়াদিল্লি সরকারের সহানুভূতি থাকলেও বর্তমান পরিস্থিতিতে কোনো দলের প্রতি সরাসরি সমর্থন দেয়া ভারতের উচিত হবে না। এটা সত্য যে, শেখ হাসিনা ভারতের একজন ভালো বন্ধু। কিন্তু নয়াদিল্লিকে এটা মনে রাখতে হবে, তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি ও সীমান্ত বিরোধসহ অনেক বিষয় এখনো দুই দেশের মধ্যে অনিষ্পন্ন রয়ে গেছে। এই বাস্তবতায় বাংলাদেশের মানুষ পানি সমস্যায় আজ দিশেহারা। সীমান্ত হত্যায় ুব্ধ। একতরফা সুবিধা হাতিয়ে নেয়ার কারণে ভারত সরকারের ওপর রুষ্ট। ভারতের প্রভাবশালী টাইমস অব ইন্ডিয়া গ্রুপের বাংলা দৈনিক এই সময়-এ গণতন্ত্রের ক্রান্তিকালে দাঁড়িয়ে আছে ঢাকা শিরোনামে সম্পাদকীয়টিও অংশত বস্তুনিষ্ঠ। অপর ভারতীয় সাংবাদিক সুনন্দ কে দত্তের লেখাটিও ভিন্ন মতসহ গ্রহণযোগ্য।
পঙ্কজ শরণ, সুবীর ভৌমিক কিংবা শেখর গুপ্তকে এতটুকু দায়িত্ববান হিসেবেও আমরা দেখতে পাই না। এর প্রধান কারণ তাদের সাম্প্রদায়িক ভেদবুদ্ধি। এরা নেহরু ও গুজরাল ডকট্রিন থেকে বের হয়ে প্রতিবেশী সার্বভৌম দেশগুলোর অস্তিত্ব স্বীকার করতে চান না, এরা ভাবেন প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে সিকিম ধরনের আচরণ করাই ভারতের স্বার্থরক্ষার একমাত্র উপায়। অথচ এই আগ্রাসী ও আধিপত্যবাদী নীতি অনুসরণ করতে গিয়েই নেপালে মাওবাদীদের উত্থান ও ভারতবিদ্বেষ জন্ম নিয়েছে। শ্রীলঙ্কাকে তামিল ইস্যু দিয়ে অস্থির ও অস্থিতিশীল করে রাখার জবরদস্তির কারণেই শ্রীলঙ্কার জনগণ বিগড়ে আছে। মালদ্বীপে ভারতপন্থী নাশিদকে অপছন্দ করার কারণও ভারতীয় বাড়াবাড়ি। অপর প্রতিবেশী পাকিস্তান ভারতের আজন্ম প্রতিপক্ষ। অবশ্য এর ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটও রয়েছে। আরেক প্রতিবেশী গণচীনকে ভারত প্রতিপক্ষে রেখে পররাষ্ট্রনীতি পরিচালনা করে। হালে মিয়ানমারে ভারত সমতার ভিত্তিতে লেনদেনের প্রক্রিয়ায় অগ্রসর হচ্ছে। বিলম্বিত এই বোধোদয় অবশ্যই ইতিবাচক। আমরা ভুলে যাইনি ভারত আমাদের পার্বত্য ইস্যু কিভাবে উসকে দিয়েছে। শান্তিবাহিনীকে দিয়ে আমাদের সার্বভৌমত্ব চ্যালেঞ্জ করিয়েছে। তার পরও ভারত আমাদের বন্ধুপ্রতিম। একাত্তরে সাহায্য করে তারা লাভবান হলেও আমরা অকৃতজ্ঞ হতে পারি না। কিন্তু বড় দাদার আসনে বসে দায়হীন কুর্নিশ আশা করলে বাংলাদেশকে তারা কোনো দিন সাথে পাবে না। জনগণের মন জয় না করে একটি অনুগত ও দালাল সরকারকে পৃষ্ঠপোষকতা দিলে সাত বোনের সাথে বাংলাদেশের মতো জনপদের শান্তিপ্রিয় প্রতিবাদী মানুষের স্বাধীনতার অহম অপ্রতিরোধ্য হয়ে দাঁড়াবে।
পঙ্কজ শরণকে বলব, বাংলাদেশের মানুষের মন ও আত্মা বোঝার চেষ্টা করুন। বাংলাদেশকে পূর্বাঞ্চলের আরেক পাকিস্তান ভাবলে ভারত শুধু ভুলই করবে না, ১৬ কোটি মানুষের রুদ্ররোষ প্রত্যক্ষ করবে। এরশাদ ও শেখ হাসিনা অবশ্যই বাংলাদেশের মানুষ, তাদের পাশে ভারত যতটা শক্ত অবস্থান নেবে জনগণের সন্দেহপ্রবণ মনে ভারতবিদ্বেষের বীজ আরো গভীরে প্রোথিত করে দেবেÑ যা আমরা চাই না। আমরা ভারতবিদ্বেষের সস্তা রাজনীতি সমর্থন করি না, বিশ্বাসও করি না। আমরা বিশ্বাস করি নীতি ও বন্ধু পাল্টানো যায়, প্রতিবেশী পাল্টানো যায় না। বাংলাদেশের জনগণ কোনো আধিপত্যবাদী সরকারকে নয়, ভারতের জনগণকে বন্ধু ভাবে। তা ছাড়া দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে দেশের বাইরে আমাদের বন্ধু আছে, প্রভু নেই। তাই কৃতজ্ঞ বন্ধুর কোনো যুদ্ধবিলাস নেই। ভারতেরও থাকা উচিত নয়।
একটি অযৌক্তিক ও অগ্রহণযোগ্য তফসিল ঘোষণা করে সিইসি জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলেন। বিতর্কিত সরকার ভাবছে এ যুদ্ধে তারা জিতে যাবে। ইতিহাস তা বলে না। বাংলাদেশের জনগণকে চিনতে ভারত যেমন ভুল করছে; এই সরকার এবং তাদের সাজানো নির্বাচন কমিশনও ভুল করল। এই ভুলের মাশুল গুনতে হবে দীর্ঘ দিন। ভারতীয় পত্রিকায় সাক্ষাৎকার দিয়ে জয় বলেছেন, ক্ষমতার যেতে হবে তাদের লাশের ওপর দিয়ে। অংশত সত্য, লাশের ওপর দাঁড়িয়েও সরকার শেষ রক্ষা করতে পারবে না। ইতিহাস এ মন্তব্যের
পক্ষে।
ভারতের নেতারা একধরনের কসমেটিক উন্নতির ডুগডুগি বাজান। বিনোদন বাণিজ্যের মাধ্যমে মুম্বাইয়া সংস্কৃতির কেতাদুরস্ত অবস্থা যে সব বাস্তবতা নয় তা কারো অজানা নয়। ভারতের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী পুরো গতর ঢেকে রাখার বস্ত্র পায় না। পরমাণু শক্তির ফুটানির তলে দারিদ্র্য মুখব্যাদান করে আছে। চিকিৎসার অভাব, স্যানিটেশন সুবিধার অপ্রতুলতা ও শিক্ষার অভাবে কোটি কোটি মানুষ অসহায় জীবন মেনে নিতে বাধ্য হচ্ছে। অনেকের ধারণা আমাদের দেশের অনেক মানুষ চিকিৎসার জন্য ভারত যায়। নিশ্চয় আহামরি কিছু। বাস্তবতা বিপরীত। বাংলাদেশের রোগী নিয়ে বাণিজ্যের জন্য ওসব হাসপাতাল, ভারতের গণমানুষের জন্য নয়। সভ্যতার সাধারণ আলোও পৌঁছেনি এমন জনপদ বেশুমার। আমাদের ঘরের কাছের সেভেন সিস্টার কেমন আছে তা তো আমাদের জানা। দেশটির মানচিত্রজুড়ে বিচ্ছিন্নতাবাদী কিংবা স্বাধীনতাকামীরা দিন দিন শক্তি সঞ্চয় করছে এমন গোষ্ঠীর সংখ্যা প্রায় অর্ধশত। সাম্প্রদায়িকতার বিষ ঢেলে দাঙ্গা বাধানোর মতো পশুপ্রবৃত্তি তাদের কিছু উগ্রবাদীর অস্থিমজ্জায়। সে দিকে তাদের নজর পড়ে না। তাদের যত জ্বালা ও মনোকষ্ট মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর চেষ্টায় অবিরাম সংগ্রামী বাংলাদেশী মানুষের জন্য। তাই দাবিয়ে রাখতে সচেষ্ট। তাদের ধারণা, বাংলাদেশ মাথা তুলে দাঁড়ানোর মানে তাদের স্বাধীনতাকামীদের আশকারা পাওয়া।
বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক সঙ্কটের জন্য প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রধানকে এরা অভিযুক্ত করে না। বরং বাংলাদেশের স্বার্থের প্রতিকূলে শেখ হাসিনার ভারতবান্ধব নীতি তারা বিশ্বস্ত বন্ধুত্বের নিদর্শন মনে করে। এই কৃতজ্ঞতা দেখাতেই তাদের মিডিয়া সোচ্চার। জয় ও শেখ রেহানার সাথে পঙ্কজ শরণের একান্ত বৈঠকের কারণও অভিন্ন। ভারতীয় দূত ও মিডিয়া এ কারণেই অভিযুক্ত করে দেশের স্বাধীনচেতা মানুষগুলোকে। আবহমান কাল ধরে যে শান্তিপ্রিয় ও আজন্ম অসাম্প্রদায়িক আলেমসমাজ সাম্প্রদায়িকতা রুখে আসছে, জঙ্গিবাদ ঠেকিয়ে দিচ্ছে, তারাও তাদের বিদ্বেষের টার্গেট হচ্ছেন। এই আমলে বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন অব্যাহত থাকলেও তারা শেখ হাসিনা সরকারকে দায়ী করে না, অভিযুক্ত করে প্রতিবাদী মানুষকে, ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের। প্রভাবশালী নিউ ইয়র্ক টাইমসের সম্পাদকীয়তে মন্তব্য করা হয়, বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল দৃশ্যত রাজনৈতিক বিরোধীদের শ্বাস রোধ করে হত্যার আরেকটি যন্ত্রে পরিণত হয়েছে। ভারতীয় দূত ও এসব বর্ণবাদী সাংবাদিক এ দিকে যেতে নারাজ। তারা ভাবেন, এর মাধ্যমে ভারতবিদ্বেষের শেকড় উপড়ে ফেলা হচ্ছে। অথচ ঐতিহাসিক সত্য হচ্ছে, ৯৩ হাজার পাকিস্তানি সৈন্য ও ১৯৫ জন চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীকে জামাই আদরে পাকিস্তান পাঠিয়েছে ভারত। নৈতিকতার বিচারে কতটা ঠগবাজ হলে তারা এখন প্রহসনের বিচারে উসকানি দিতে পারে।
নিউ ইয়র্ক টাইমসের ‘পলিটিক্যাল ক্রাইসিস ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক সম্পাদকীয়তে বলা হয়, চলতি বছরের শুরু থেকে হরতালে বাংলাদেশ অচল হয়ে পড়েছে, প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলগুলোর সহিংস সঙ্ঘাতে কয়েক শ’ লোক নিহত হয়েছেন। বিরোধী দলের শীর্ষ নেতা ও মানবাধিকারকর্মীদের গ্রেফতার করা হয়েছে। বিচারের মৌলিক মানদণ্ডের প্রতি তাচ্ছিল্য প্রদর্শনকারী আদালতগুলো বিরোধী দলের অনেক সিনিয়র নেতাকে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছে। একই সম্পাদকীয়তে মন্তব্য করা হয়েছে, বর্তমান সঙ্কটের জন্য এককভাবে দায়ী প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রধান শেখ হাসিনা। দৃশ্যত, শেখ হাসিনা জানুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় সাধারণ নির্বাচনের আগে দিয়ে ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে থাকতে এবং প্রয়োজনে যেকোনো পন্থায় বিরোধীদের অকার্যকর করতে বদ্ধপরিকর। ২০১১ সালে তিনি নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের সাংবিধানিক বিধানটি বাতিল করে দেন। এর বদলে তিনি তার নেতৃত্বে ‘সর্বদলীয়’ সরকার গঠন করেছেন।
বাংলাদেশের বাস্তব অবস্থার এ চিত্রটি ভারতীয় পত্রিকায় পাওয়া যাবে না। উল্টো ভারতীয় বর্ণবাদী সাংবাদিক গোষ্ঠী ও মিডিয়া জনগণ ও বিরোধী জোটকে অভিযুক্ত করতে তৎপর। শেখ হাসিনা সরকারকে টিকিয়ে রাখতে এরা ভারতীয় সেনাদের অভিযানের সুপারিশ করছে। বলছে, ইন্দ্রিরা গান্ধী সেনা প্রত্যাহার করে ভুল করেছেন। সেই ভুল আর নাকি করা ঠিক হবে না। কারণও নাকি এই সরকার টিকে না থাকলে ভারতীয় স্বার্থ জলে পড়ে ডুবে যাবে। ভারতীয় থিংকট্যাংকও মনে করে, শেখ হাসিনা ভারতের যে আস্থা ও বন্ধুত্ব অর্জন করেছেন তার প্রতিদান দেয়া ভারতের কর্তব্য। এই কর্তব্য এরা বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থে উৎসর্গ করতে নারাজ।
অরুন্ধতীরা যে অশিক্ষা, কুশিক্ষা, কুসংস্কার, সাম্প্রদায়িকতা, শ্রেণিবৈষম্য, বর্ণবাদ, দারিদ্র্য ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করছেন, আন্না হাজারেরা যে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার, মহাস্বেতা দেবীরা যে মানবতার জন্য লড়াই করেছেনÑ সেসব জায়গায় সুবীর ভৌমিক ও শেখর গুপ্তরা অনুপস্থিত। পঙ্কজ শরণরা সেসব আড়াল করতে আগ্রাসী ও আধিপত্যবাদী কূটনীতির আশ্রয় নিচ্ছেন। ভারতজুড়ে ক্ষতবিক্ষত ও লুণ্ঠিত হচ্ছে মানবধর্ম, প্রকৃত ধর্মাচার, নরেন্দ্র মোদিরা ছড়াচ্ছেন সাম্প্রদায়িকতা ও হিংসার বিষবাষ্প, অথচ এসব জ্ঞানপাপী এ দেশে মৌলবাদ ও জঙ্গিবাদের ভূত তাড়ানোর ভড়ং করছে। জঙ্গিবাদ ও মৌলবাদের অভয়ারণ্য বলে বাংলাদেশের মানুষকে ও বাংলাদেশকে ভুলভাবে উপস্থাপন করছে। দুর্ভাগ্য যে, আমাদের বামপন্থী ও সেকুলারদের একটি বিরাট অংশের এজেন্ডা ও ভারতীয় সরকারের এজেন্ডা এক হয়ে গেছে। পশ্চিমা দেশগুলো যখন বিশ্বজুড়ে দারোগাগিরি করে, তখন অসহ্য লাগে। তার পরও কথা থাকে, এটা তাদের বিদেশনীতি এবং সাম্রাজ্যবাদী চিন্তার নষ্ট ভাবনা। এরা নিজ দেশের মানুষের অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা, মানবাধিকার, মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে পেরেছে। নিজ জনগণের সামনে এরা কল্যাণরাষ্ট্রের ধারণা উপস্থাপন করেছে। সভ্যতা ও উন্নত জীবনের ছোঁয়া ও নিরাপত্তা দিয়েছে। ভারত এ ক্ষেত্রে কোন স্তরে রয়েছে তারা তা ভাবে না; ভারতের মানুষের জীবনযাপনের গ্লানি, সন্ত্রাস, হিংসা, বিদ্বেষ ও সাম্প্রদায়িকতার অভয়ারণ্যের নজির, ুধা, দারিদ্র্য-শ্রেণিবৈষম্য ও বর্ণবাদের দগদগে ক্ষত কিভাবে এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব। এক সাচার কমিটির রিপোর্ট ও বাবরি মসজিদ-সংক্রান্ত রায় বলে দেয় ভারতের সংখ্যালঘুরা কিভাবে আছেন।
নিউ ইয়র্ক টাইমস মনে করে, মানবাধিকার লঙ্ঘন অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে অবরোধসহ নানাবিধ চাপের মুখে পড়তে পারে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উচিত বাংলাদেশের বিচার বিভাগের স্বায়ত্তশাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা, মানবাধিকারকর্মীদের হয়রানি বন্ধ করা এবং আগামী নির্বাচনের আগে গ্রহণযোগ্য অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের উপায় খোঁজার জন্য বিরোধী দলগুলোকে সাথে নিয়ে কাজ করা। ব্যতিক্রম ছাড়া ভারতীয় কোনো মিডিয়ায় এ ধরনের দায়িত্বশীল ও বস্তুনিষ্ঠ তথ্য পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
লন্ডনের প্রভাবশালী পত্রিকা ইকোনমিস্ট ম্যাগাজিনের অনলাইন সংস্করণে গত সপ্তাহে বাংলাদেশী পলিটিকস : ট্রেঞ্চ ওয়ারফেয়ার শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা অনেকটা পড়ে গেছে। অথচ ভারতীয় মিডিয়া বলছে, শেখ হাসিনা আবার ক্ষমতার কাছাকাছি পৌঁছে গেছেন।
ওই রিপোর্টে আরো বলা হয়, বাংলাদেশে সরকার সাংবিধানিক। কিন্তু জনপ্রিয়তা খুবই কম। জনমত জরিপ বলে যে, এ দেশের পাঁচ ভাগের মধ্যে চার ভাগই নির্দলীয় নিরপে সরকারের প।ে
অবশ্য ভারতের দ্য হিন্দু পত্রিকার ‘ক্রিপলিং ডেডলক’ শিরোনামে প্রকাশিত সম্পাদকীয়তে স্বীকার করা হয়েছে, দেশটিতে চলমান সঙ্কটের সূচনা হয় ২০১১ সালে। ওই সময় শেখ হাসিনা সরকার সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা’ বাতিল করে দেয়।
পত্রিকাটির দায়িত্বশীল মন্তব্য হচ্ছে, বর্তমান অচলাবস্থা নিরসনে প্রধান দুই জোটকেই এগিয়ে আসতে হবে। এ ছাড়া শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক পন্থায় ক্ষমতা হস্তান্তরের আর কোনো উপায় নেই। বিএনপির নির্বাচন বয়কটের হুমকি বা আওয়ামী লীগের একতরফা নির্বাচনের প্রস্তুতি কোনোটাই সমস্যার সমাধান করবে না। অন্য দিকে হাসিনা সরকারের প্রতি নয়াদিল্লি সরকারের সহানুভূতি থাকলেও বর্তমান পরিস্থিতিতে কোনো দলের প্রতি সরাসরি সমর্থন দেয়া ভারতের উচিত হবে না। এটা সত্য যে, শেখ হাসিনা ভারতের একজন ভালো বন্ধু। কিন্তু নয়াদিল্লিকে এটা মনে রাখতে হবে, তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি ও সীমান্ত বিরোধসহ অনেক বিষয় এখনো দুই দেশের মধ্যে অনিষ্পন্ন রয়ে গেছে। এই বাস্তবতায় বাংলাদেশের মানুষ পানি সমস্যায় আজ দিশেহারা। সীমান্ত হত্যায় ুব্ধ। একতরফা সুবিধা হাতিয়ে নেয়ার কারণে ভারত সরকারের ওপর রুষ্ট। ভারতের প্রভাবশালী টাইমস অব ইন্ডিয়া গ্রুপের বাংলা দৈনিক এই সময়-এ গণতন্ত্রের ক্রান্তিকালে দাঁড়িয়ে আছে ঢাকা শিরোনামে সম্পাদকীয়টিও অংশত বস্তুনিষ্ঠ। অপর ভারতীয় সাংবাদিক সুনন্দ কে দত্তের লেখাটিও ভিন্ন মতসহ গ্রহণযোগ্য।
পঙ্কজ শরণ, সুবীর ভৌমিক কিংবা শেখর গুপ্তকে এতটুকু দায়িত্ববান হিসেবেও আমরা দেখতে পাই না। এর প্রধান কারণ তাদের সাম্প্রদায়িক ভেদবুদ্ধি। এরা নেহরু ও গুজরাল ডকট্রিন থেকে বের হয়ে প্রতিবেশী সার্বভৌম দেশগুলোর অস্তিত্ব স্বীকার করতে চান না, এরা ভাবেন প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে সিকিম ধরনের আচরণ করাই ভারতের স্বার্থরক্ষার একমাত্র উপায়। অথচ এই আগ্রাসী ও আধিপত্যবাদী নীতি অনুসরণ করতে গিয়েই নেপালে মাওবাদীদের উত্থান ও ভারতবিদ্বেষ জন্ম নিয়েছে। শ্রীলঙ্কাকে তামিল ইস্যু দিয়ে অস্থির ও অস্থিতিশীল করে রাখার জবরদস্তির কারণেই শ্রীলঙ্কার জনগণ বিগড়ে আছে। মালদ্বীপে ভারতপন্থী নাশিদকে অপছন্দ করার কারণও ভারতীয় বাড়াবাড়ি। অপর প্রতিবেশী পাকিস্তান ভারতের আজন্ম প্রতিপক্ষ। অবশ্য এর ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটও রয়েছে। আরেক প্রতিবেশী গণচীনকে ভারত প্রতিপক্ষে রেখে পররাষ্ট্রনীতি পরিচালনা করে। হালে মিয়ানমারে ভারত সমতার ভিত্তিতে লেনদেনের প্রক্রিয়ায় অগ্রসর হচ্ছে। বিলম্বিত এই বোধোদয় অবশ্যই ইতিবাচক। আমরা ভুলে যাইনি ভারত আমাদের পার্বত্য ইস্যু কিভাবে উসকে দিয়েছে। শান্তিবাহিনীকে দিয়ে আমাদের সার্বভৌমত্ব চ্যালেঞ্জ করিয়েছে। তার পরও ভারত আমাদের বন্ধুপ্রতিম। একাত্তরে সাহায্য করে তারা লাভবান হলেও আমরা অকৃতজ্ঞ হতে পারি না। কিন্তু বড় দাদার আসনে বসে দায়হীন কুর্নিশ আশা করলে বাংলাদেশকে তারা কোনো দিন সাথে পাবে না। জনগণের মন জয় না করে একটি অনুগত ও দালাল সরকারকে পৃষ্ঠপোষকতা দিলে সাত বোনের সাথে বাংলাদেশের মতো জনপদের শান্তিপ্রিয় প্রতিবাদী মানুষের স্বাধীনতার অহম অপ্রতিরোধ্য হয়ে দাঁড়াবে।
পঙ্কজ শরণকে বলব, বাংলাদেশের মানুষের মন ও আত্মা বোঝার চেষ্টা করুন। বাংলাদেশকে পূর্বাঞ্চলের আরেক পাকিস্তান ভাবলে ভারত শুধু ভুলই করবে না, ১৬ কোটি মানুষের রুদ্ররোষ প্রত্যক্ষ করবে। এরশাদ ও শেখ হাসিনা অবশ্যই বাংলাদেশের মানুষ, তাদের পাশে ভারত যতটা শক্ত অবস্থান নেবে জনগণের সন্দেহপ্রবণ মনে ভারতবিদ্বেষের বীজ আরো গভীরে প্রোথিত করে দেবেÑ যা আমরা চাই না। আমরা ভারতবিদ্বেষের সস্তা রাজনীতি সমর্থন করি না, বিশ্বাসও করি না। আমরা বিশ্বাস করি নীতি ও বন্ধু পাল্টানো যায়, প্রতিবেশী পাল্টানো যায় না। বাংলাদেশের জনগণ কোনো আধিপত্যবাদী সরকারকে নয়, ভারতের জনগণকে বন্ধু ভাবে। তা ছাড়া দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে দেশের বাইরে আমাদের বন্ধু আছে, প্রভু নেই। তাই কৃতজ্ঞ বন্ধুর কোনো যুদ্ধবিলাস নেই। ভারতেরও থাকা উচিত নয়।
একটি অযৌক্তিক ও অগ্রহণযোগ্য তফসিল ঘোষণা করে সিইসি জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলেন। বিতর্কিত সরকার ভাবছে এ যুদ্ধে তারা জিতে যাবে। ইতিহাস তা বলে না। বাংলাদেশের জনগণকে চিনতে ভারত যেমন ভুল করছে; এই সরকার এবং তাদের সাজানো নির্বাচন কমিশনও ভুল করল। এই ভুলের মাশুল গুনতে হবে দীর্ঘ দিন। ভারতীয় পত্রিকায় সাক্ষাৎকার দিয়ে জয় বলেছেন, ক্ষমতার যেতে হবে তাদের লাশের ওপর দিয়ে। অংশত সত্য, লাশের ওপর দাঁড়িয়েও সরকার শেষ রক্ষা করতে পারবে না। ইতিহাস এ মন্তব্যের
পক্ষে।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন