রবিবার, ১০ নভেম্বর, ২০১৩

এ কোন গন্তব্যে বাংলাদেশ!


১৯৯০-উত্তর সময়টা বিবেচনায় এনে জনপ্রিয়তার মাপকাঠিতে যদি বলি তবে বলতে হয় এ দেশে প্রধান দুই জনপ্রিয় রাজনৈতিক নেত্রী হচ্ছেন শেখ হাসিনা ও বেগম খালেদা জিয়া। তাদের জনপ্রিয়তা প্রশ্নাতীতভাবে সুপ্রমাণিত। এদের একজন দুইবারের প্রধানমন্ত্রী ও তিনবারের বিরোধীদলীয় নেত্রী। অপরজন তিনবারের প্রধানমন্ত্রী ও দুইবারের বিরোধীদলীয় নেত্রী। অতএব তাদের উভয়ের রয়েছে কমপক্ষে এই দুই যুগের দেশ পরিচালনার বাস্তব অভিজ্ঞতা। কিন্তু এ দেশের সাধারণ মানুষও বোঝেÑ এই দুই নেত্রীর মধ্যে বিদ্যমান পারস্পরিক আস্থাহীনতা। আজ গোটা জাতি পুরোপুরি দুই মেরুতে বিভক্ত। এই আস্থাহীনতা যে শুধু অকারণ, তা কিন্তু বলা যাবে না। অথচ নাগরিক সাধারণের স্বাভাবিক প্রত্যাশা ছিলÑ দুই নেত্রী তাদের অর্জিত অভিজ্ঞতার আলোকে সব ধরনের ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক বিভেদ ভুলে আমাদের উপহার দেবেন একটি ঐক্যবদ্ধ জাতি, ঐক্যবদ্ধ জাতীয় আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মসূচি; যে কর্মসূচি সূত্রে দেশ এগিয়ে যাবে সমৃদ্ধির স্বর্ণশিখরে। কিন্তু বাস্তবে দেখছি ঠিক তার উল্টো। দুই মেরুতে বিভক্ত তাদের নেতৃত্বাধীন দল-গোষ্ঠী আজ লিপ্ত চরম হানাহানিতে। এ বিভাজন মিটিয়ে সমঝোতায় পৌঁছা দুই নেত্রীর জন্য কঠিন কোনো ব্যাপার নয়। শুধু প্রয়োজন দুই নেত্রীর আন্তরিক উদ্যোগ। এ জন্য কে কতটুকু দায়ী তা নিয়ে আমরা দীর্ঘ বিতর্কে জড়াতে পারি, কার্যত বিভিন্ন গণমাধ্যমে সে বিতর্কেরই ছড়াছড়ি। কিন্তু সমঝোতা আর সঙ্কটের সমাধানের জন্য আমাদেরকে অপেক্ষায় থাকতে হয় বছরের পর বছর। সঙ্কটের পর সঙ্কট তাড়া করে গোটা জাতিকে। 
আজকে গোটা জাতি যে রাজনৈতিক সঙ্কটের মুখোমুখি, সে সঙ্কট নিয়ে শুধু দেশের মানুষই নয়, বিদেশীরাই চরম উদ্বিগ্ন, উৎকণ্ঠিত। দুই নেত্রীকে দেশের উদ্বিগ্ন বিবেকবান নাগরিকেরা একটা সমঝোতার তাগিদ দিচ্ছেন। তাতেও কোনো কাজ হচ্ছে না। বরং সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে আজ সঙ্ঘাত-সংঘর্ষ অনিবার্য হয়ে উঠেছে। এখানে একটা কথা বলা দরকার, এ সঙ্ঘাত-সংঘর্ষের পরিস্থিতিতে জাতিকে বাঁচানোর দায়িত্ব আমাদের সবার। তাই বলে গুরুদায়িত্ব যে সরকারপক্ষের, তা বোধ হয় অস্বীকার করার কোনো অবকাশ নেই। কিন্তু আমাদের সরকারের উপলব্ধিতে সে সত্যের অনুধাবন আছে বলে মনে হয় না। গত শুক্রবার বিএনপির কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় নেতাকে আটক করে হরতাল-সংশ্লিষ্ট সহিংসতার বায়বীয় অভিযোগ তুলে মামলা দায়ের এবং রাজধানীসহ সারা দেশে বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতাদের গ্রেফতারের জন্য বাড়ি বাড়ি পুলিশি অভিযান চালানোর ঘটনা দেশবাসীকে বিস্মিত করেছে। এখন জনমনে স্থির ধারণা জন্মেছে, বিএনপিকে বাইরে রেখে সরকার ছোট ছোট দল নিয়ে সর্বদলীয় সরকারের লেবাসে একদলীয় নির্বাচন সম্পন্ন করার ব্যাপারে স্থির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সাধারণ মানুষ এখন ভাবছে, সরকার এ কাজটি সম্পন্ন করার জন্যই সংবিধানকে নিজের মতো করে কাটাছেঁড়া করেছে। আরপিও সংশোধন করেছে, সংসদীয় আসনের সীমানা পরিবর্তন করেছে, বিএনপিকে ভেঙে দলছুটদের এনে বিএনএফের ব্যানারে নির্বাচনের প্রয়াস চালাবে। দলীয়করণ করা প্রশাসনকে কাজে লাগাবে নির্বাচনী ফলাফল দলের পক্ষে টানার জন্য, বিরোধী দলের অনেক নেতাকে মামলার মাধ্যমে নির্বাচনের অযোগ্য করে তোলা হবে, সমালোচনার মুখ বন্ধ করার জন্য গণমাধ্যমের ওপর সরকারের দমন-পীড়ন বাড়বে। যেসব দল এ পর্যন্ত বলে আসছে শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে নাÑ যেমন বিকল্প ধারা, জাতীয় পার্টি এরশাদ, কৃষক শ্রমিক জনতা পার্টিসহ আরো অনেক দলÑ তাদেরকে নানা প্রলোভন দেখিয়ে কিংবা ক্ষমতার নানা কলকাঠি নেড়ে নির্বাচনে অংশ নেয়ার চেষ্টাও চলবে। যাবতীয় প্রয়াস চলবে বিএনপিকে একঘরে করে নির্বাচনের বাইরে ঠেলে দিতে। বিএনপির শীর্ষ নেতাদের হয়তো পাঠানো হবে কারাগারে। তাদের বিরুদ্ধে তোলা হবে নানা বায়বীয় অভিযোগ। যেসব অভিযোগের নাম হবে সহিংসতা, দেশদ্রোহিতার অপরাধ ও উসকানিদাতা-পরিকল্পনাকারী। তা ছাড়া সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা বলছেন, হরতালে সহিংসতা চালালে বিরোধী দলের যেকোনো নেতাকেই আটক করতে সরকার দ্বিধা করবে না। অতএব বেগম খালেদা জিয়াও এই হুমকির আওতার বাইরে নন। দেশের বিবেকবান নাগরিকেরা সরকারের সমঝোতার পথ ছেড়ে বিরোধী দলের নেতা-নেত্রীদের দমন-পীড়ন করে তাদের ওপর কোনো রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়ার প্রয়াসকে ভালো চোখে দেখছেন না। তারা বলছেন, বিরোধী দলের নেতাদের এ ধরনের ঢালাও গ্রেফতার মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের পরিপন্থী। 
কিন্তু শান্তিপ্রিয় বিবেকবান মানুষের মধ্যে এ বোধও আছে, বিএনপি কোনো জনবিচ্ছিন্ন দল নয়। বিএনপিকে অস্তিত্বহীন করার জন্য এরশাদ আমলের ৯ বছরের স্বৈরশাসনীয় প্রয়াস, আওয়ামী লীগের আমলের দমন-পীড়ন, মইন-ফখরুদ্দীনের অবৈধ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ের অপপ্রয়াস এ দেশের মানুষের চোখের সামনেই ঘটেছে। তার পরও এ দলটি কখনোই কোনো নির্বাচনে ৩৫ শতাংশের কম ভোট পায়নি। ভোটে জিতে সরকার গঠনের সময় অবশ্যই আরো বেশি ভোটারের সমর্থন ছিল বিএনপির পক্ষে। যদি কমের অঙ্কটিও বিবেচনা করি, তবে বলতে হবে কমপক্ষে দেশের এক-তৃতীয়াংশ মানুষের পরীক্ষিত জনসমর্থন রয়েছে বিএনপির পক্ষে, দলটির চরম দুর্দিনেও। আর আজকে এ দলের জনপ্রিয়তা বলতে হয় তুঙ্গে। কয় মাস আগে পাঁচ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন ও গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচন এর বাস্তব প্রমাণ। তা ছাড়া সরকারের নীতি সমর্থন পত্রপত্রিকায় যেসব জনমত জরিপের ফলাফল পাওয়া গেছে, তাতেও বিএনপির জনপ্রিয়তার উত্থান এবং আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তার ধসই পরিলক্ষিত হয়েছে। সর্বসাম্প্রতিক ডেইলি স্টার ও এশিয়া ফাউন্ডেশনের জনমত জরিপের ফলাফল প্রকাশিত হয় গত ২ নভেম্বর। এতে বলা হয়, যদি এ মুহূর্তে নির্বাচন হয় তবে আওয়ামী লীগ পারে ২৮ শতাংশ ভোট ও বিএনপি পাবে ৫৫ শতাংশ ভোট। এক-দুই শতাংশ কম-বেশির হিসাব আমলে না নিলে আলাদাভাবে সারা দেশে, গ্রাম এলাকায়, শহর এলাকায়, মহিলাদের মধ্যে, পুরুষদের মধ্যে ও যুবসমাজের মধ্যে এ জরিপ মতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির জনপ্রিয়তার হারটা এসব ক্ষেত্রে মোটামুটি এমন। উপরোল্লিখিত ভোটের হারটি আসনের সংখ্যা বিবেচনা করলে মনে হয় এখন নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ যত আসন পাবে, বিএনপি পারে এর দ্বিগুণ। অন্তত ডেইলি স্টার ও এশিয়া ফাউন্ডেশনের জরিপকে সত্য ধরলে এ ঘটনাটি ঘটতে পারে। সেখানে বিএনপিকে বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগ দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের যে প্রয়াসে প্রয়াসী, তাকে চরম বোকামি ছাড়া আর কী অভিধায় অভিহিত করা যায়। তা ছাড়া একই জরিপে জনমতে রায় ৭৭ শতাংশ মানুষ চান নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন হোক। আর মাত্র ১৯ শতাংশ মানুষ চান না তত্ত্বাবধায়ক সরকার। আওয়ামী লীগ দলটিকে গণতন্ত্রের লালন-পালনকারী দল হিসেবে দাবি করে (যদিও এ নিয়ে আছে নানা বিতর্ক), তবে জনমতের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে হলেও বিরোধী দলের নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি মেনে নিয়ে জনমতের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর পথেই হাঁটবে, ভিন্ন কোনো পথে নয়, এমনটিই জনপ্রত্যাশা। গণতন্ত্রের তাগিদও তাই। 
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ইস্যুটি এভাবে ঝুলিয়ে রেখে আমরা দেশটাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছি, তা আমাদের অনেকের বোধে নেই। আমরা শুধু হরতাল, অবরোধে সহিংসতা নিয়ে সমালোচনায়ই জনগণের দৃষ্টি সীমাবদ্ধ রাখছি। হরতাল-অবরোধে কোনো ধরনের সহিংসতা কারো কাম্য হতে পারে না, তাতে কোনো বিতর্ক থাকার সুযোগ নেই। কিন্তু হরতাল-অবরোধ যাতে না হয়, তার উপায় খোঁজার চেষ্টা না করে, শুধু সহিংসতার জন্য বিরোধী দলকে সমালোচনা করে জনমনে হেয় করতে চাইছে আমাদের সরকার। এবং সরকার এ জন্য বিরোধী দলের সদস্যদের দায়ী করে মামলা করে তা বন্ধ করার পথ বেছে নিয়েছে। এটি সঠিক পথ নয়। রাজনৈতিক সমস্যা রাজনৈতিকভাবে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের মধ্যেই রয়েছে সবার কল্যাণ আর সরকারের কৃতিত্ব ও সাফল্য। কিন্তু তা না করে সরকার সে কৃতিত্ব-সাফল্য অর্জনের পথ ছেড়ে বিরোধী দল দমন-পীড়নের পথ বেছে নিয়ে দেশকে এমন একপর্যায়ে ঠেলে দিচ্ছে, যার ফলে বাংলাদেশ হচ্ছে নানা দেশের হাতের খেলার পুতুল। আমাদের দেশে রাজনৈতিক সঙ্কট সমাধানে ফর্মুলা সূত্রায়নে বিদেশী কূটনীতিকেরা সভা করে কূটনৈতিক আলাপ-আলোচনা করেন ভিন্ন দেশের রাজধানী শহরে। কোনো কোনো সময় দলবিশেষকে কোন জোটে থাকতে হবে, কোন জোটে যাওয়া যাবে নাÑ এমন চাপও আসে বাইরে থেকে। এ ধরনের খবরাখবর আমাদের দেশের পত্রপত্রিকায় ছাপ হয়। এগুলো কোনো বিবেচনায়ই দেশের জন্য মঙ্গলজনক নয়, তা সচেতন উপলব্ধিতে রাখতে হবে আমাদের প্রধান দুই নেত্রী ও তাদের দলের শীর্ষ নেতা-নেত্রীদেরকে। ব্যক্তিগত ও দলীয় বিভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে জাতীয় সমৃদ্ধি, জাতীয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে হবে। জাতীয় স্বকীয়তা রক্ষা করতে হবে। নিজেদের সমস্যা নিজেরাই সমাধান করবÑ এমন মানস জাতীয়ভাবে গড়ে তুলতে হবে। যারা নির্বাচনে অংশ নেবে না তারা দেশের গণতন্ত্রের ও সংবিধানের শত্রু। যারা বিএনপি করে তারা স্বাধীনতার শত্রু, বাংলাদেশের শত্রু এ ধরনের কথাবার্তা ও ভাবনাচিন্তা সরকারি দলকে ছেড়ে বিভাজনে পথ পরিহার করে নতুন করে গড়তে হবে জাতীয় ঐক্যের মহাসড়ক। যে মহাসড়কে পথ চলেই নিশ্চিত হবে আমাদের জাতিকে বিশ্বের বুকে একটি গর্বিত জাতিতে পরিণত করার আরাধ্য কাজটি। 
আমাদের দেশের রাজনৈতিক বিভাজন এবং সেই বিভাজন সূত্রে সৃষ্ট নতুন নতুন রাজনৈতিক সঙ্কটের সুযোগে আমরা ক্রমেই আমাদের রাজনৈতিক স্বকীয়তা হারাচ্ছি। এর ফলে বাংলাদেশকে নিয়ে আধিপত্যবাদীরা কষছে নানা হিসাব, তৈরি করছে নানা পরিকল্পনা। আর এসব ক্রিয়া-প্রক্রিয়া ও পরিকল্পনা নিশ্চিতভাবেই স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত হানবেÑ এমন আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না। এক সময় দেখা যাবে, আমরা বিভিন্ন দেশের অ্যাপল অব ডিসকর্ডে পরিণত হয়েছি। বিভিন্ন দেশ এরই মধ্যে এ পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নেমে পড়েছে। এ ধরনের খবর এখন আর গোপন থাকছে না। সম্প্রতি আসামের একটি পত্রিকার খবরে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতায় বসাতে দিল্লি খরচ করে এক হাজার কোটি ভারতীয় রুপি। এই অর্থ আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পেছনে খরচ করা হবে। খবর মতে, এ ব্যয়ের প্রস্তাব পাস করে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে উদ্ধৃত করে সম্প্রতি এ খবর দিয়েছে আসাম থেকে প্রকাশিত দৈনিক নববার্তা প্রসঙ্গ। গত ২১ অক্টোবর এ পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে বলা হয়, বাংলাদেশের পুরো পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা র। গত নির্বাচনে ভারত সরকার খরচ করে ৮০০ কোটি রুপি। এ রিপোর্টে আরো বলা হয়, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর থেকে ইন্দিরা গান্ধী সৃষ্ট র’-এর মাধ্যমে প্রতিটি নির্বাচনে দিল্লি সমর্থিত দলের জন্য আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়। এবং এখনো তা অব্যাহত আছে। এ ধরনের খবর দেশের মানুষকে উদ্বিগ্ন করে বৈ কি। 
ঘটনার এখানেই শেষ নয়। গত ১ নভেম্বর ভারতীয় পত্রিকা হিন্দুস্থান টাইমসে সুবীর ভৌমিকের একটা লেখা ছাপা হয়। এ লেখায় লেখক ভারত সরকারের প্রতি আহ্বান জানান, ভারত সরকার যেন সামরিক হস্তক্ষেপ করে বাংলাদেশের ওপর, যাতে শেখ হাসিনার সরকারকে আগামীতে ক্ষমতায় রাখা যায় এবং বিএনপি ও এর মৌলবাদী জোট ক্ষমতায় না আসতে পারে। হিন্দুস্থান টাইমস নিছক একটি সাধারণ পত্রিকা মাত্র নয়, এটি নয়াদিল্লির মতামত তৈরির অনুঘটকও। এ ধরনের একটি পত্রিকায় এ ধরনের অভিমত বাহক একটি লেখা প্রকাশ করা সত্যিই আমাদের অবাক করে। আমাদের বিশ্বাস, ভারতের কোনো বিবেকবান মানুষ তা পছন্দ করেননি। সুবীর ভৌমিক তার এ লেখায় উল্লেখ করেছেন ভারত ঢাকায় একটি হোস্টাইল গভর্নমেন্ট দেখতে পারে না। তাই ১৯৭১-এর মতোই এখন ভারত সামরিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে হবে। কিন্তু সুবীর ভৌমিককে উপলব্ধি করতে হবে, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে ভারতের সামরিক হস্তক্ষেপ ছিল স্বাধীনতাকামী জনতার পক্ষে। আর এবার যদি তেমনটি ঘটে, তবে এ সামরিক হস্তক্ষেপ হবে বাংলাদেশের গোটা জনগণের বিরুদ্ধে। এবারের এ ধরনের হস্তক্ষেপ যাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে। অতএব এর বিরুদ্ধে যাবে জনমত। এ বাস্তবতা মাথায় রাখতেই হবে। যেখানে জাতিসঙ্ঘসহ পৃথিবীর সব দেশের কূটনীতিকে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রশ্নে প্রধান দুই দলকে আলোচনার মাধ্যমে একটা সমঝোতায় পৌঁছানোর তাগিদ দিচ্ছে বারবার; সেখানে সুবীর ভৌমিক ভারত সরকারকে উসকানি দিচ্ছেন বাংলাদেশে শেখ হাসিনার বন্ধু সরকারকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে সামরিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে। আর ভারত সরকারও কোনো রাখঢাক না করে হাজার হাজার কোটি রুপি আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পেছনে খরচের পরিকল্পনা তৈরি করে বসে আছে। 
জানি না এই প্রক্রিয়া বাংলাদেশকে কোন গন্তব্যে নিয়ে পৌঁছবে। স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব আমাদের কতটুকু রক্ষা পাবে, বাংলাদেশকে নিয়ে খেলার জন্য কারা কারা এগিয়ে আসবে, আমরা হবো কার হাতের খেলার পুতুলÑ এসব বিষয় কী আমাদের সরকার ভেবে দেখছে?


0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads