মাকসুদুল আলম
দেশের বাইরে থেকে স্বভাবতই ভালো কোনো খবর শুনলে আনন্দে বুক ভরে
যায়। তেমনি খারাপ কিছু শুনলে দুশ্চিন্তা হয়। উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠায় থাকতে হয়। দেশের
সার্বিক পরিস্থিতি মোটেই ভালো নয়। যুক্তরাষ্ট্র,
যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, কানাডাসহ বিদেশী রাষ্ট্রগুলো ইতোমধ্যে নিজ নিজ দেশের নাগরিকদের
বাংলাদেশ ভ্রমণের েেত্র সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছে। রাষ্ট্রগুলো নিজেদের
ওয়েবসাইটে তাদের নাগরিকদের বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেণের
অনুরোধ জানিয়েছে। এর অর্থ, বিদেশী নাগরিকদের জন্য
বর্তমানে বাংলাদেশ কিছুটা হলেও বিপজ্জনক। স্বাভাবিক চলাফেরায় সতর্কতা অবলম্বনের
যথেষ্ট প্রয়োজন রয়েছে। জীবনের নিরাপত্তায় ঝুঁকি রয়েছে। এটা আমাদের দেশের জন্য
সম্মানজনক নয়। বরং অপমানজনক। জানা যায়, নব্বইয়ের
অন্দোলনের পর থেকে দেশে রাজনৈতিক সহিংসতায় আড়াই হাজারেরও বেশি মানুষ প্রাণ
হারিয়েছে। রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস, রাস্তাঘাট
অবরোধ, যানবাহনে ইটপাটকেল ছোড়া, সাধারণ নাগরিকের গাড়িতে নাশকতা চালানো দাবি আদায়ের গ্রহণযোগ্য
মাধ্যম হতে পারে না। সহিংসতা ও নাশকতাকে কখনোই বরদাশত করা যায় না। জীবন বাজি রেখেই
খেটে খাওয়া মানুষকে আতঙ্কের মধ্যে চলাফেরা করতে হয়। জানের মায়া ছেড়ে রাস্তায় বের
হতে হয়। বাসায় আদৌ ফেরা যাবে কি না ভাবতে হয়। হরতালে তিগ্রস্ত হচ্ছে ব্যবসায়ী ও
উদ্যোক্তারা। সমাপনী পরীা নিয়ে ভোগান্তিতে রয়েছেন প্রাথমিক শিার্থীদের অভিভাবকেরা।
এবার শেষ পর্যন্ত কতজন নিরীহ মানুষের প্রাণ যায়,
কত কী ঘটে তা একমাত্র সৃষ্টিকর্তাই ভালো জানেন। রাজধানীর
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মতাসীন আওয়ামী লীগের জনসভা থাকায় যানজটের দৃশ্য টিভিতে
দেখেছি। এই জনসভায় আশাব্যঞ্জক ঘোষণা আসেনি। শান্তির পথে কারো কোনো চেষ্টাই নেই।
তবে এই জনসভায় দফতরবিহীন মন্ত্রী তোষামোদ করে নিজেকে ধন্য মনে করেছেন। বলেছেন যে, ‘বঙ্গবন্ধুর কন্যা যখন বলেছেন তখন নির্বাচন হবেই। বিধি মতোই
নির্বাচন হবে। আসমান জমিনে নামতে পারে। জমিন আসমানে উঠতে পারে। দরিয়া শুকাইয়্যা
যেতে পারে। কিন্তু শেখ হাসিনার কথা নড়চড় হতে পারে না।’ বিরোধীদলীয় নেত্রীকে উদ্দেশ করে তিনি বলেছেন, ‘দেশ বড়ই মসিবতের মধ্যে আছে তাকে নিয়ে। মানুষ যখন ঘুমায় তখন উনি
জাইগ্যা থাকেন। মানুষ যখন জাইগ্যা থাকে তখন উনি ঘুমান। আমরা আলোচনার কথা বললাম। আর
উনি কইলেন হরতালের কথা। আপনি আলোচনা চান না হরতাল চান তা বুঝাইয়া বলেন।’ স্তাবক মন্ত্রী-এমপিদের এসব তোষামোদের কারণেই সরকারপ্রধান নির্দলীয়
নিরপে সরকারের দাবি প্রত্যাখ্যান করে চলেছেন।
এশিয়া ফাউন্ডেশন ও ডেইলি স্টারের যৌথ জরিপেও দেখা যায় যে, দেশের ৭৭ শতাংশ মানুষই আগামী নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই হওয়া উচিত বলে মনে করেন। ৭৭ শতাংশ মানুষ সবাই নিশ্চয় বিরোধী দলের সমর্থক নয়। তবুও সংখ্যাগরিষ্ঠের জনমত উপো করে একদলীয় নির্বাচনের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে সরকার। ব্যবসায়ীদের উদ্যোগে প্রধান দু’দলের মহাসচিবপর্যায়ে সংলাপের কথা উঠলেও তাতে কোনো ভরসা নেই। শারদীয় শুভেচ্ছার নামে ঢাকায় বনানীর এক অভিজাত রেস্টুরেন্টে ভারতীয় হাইকমিশনের কর্মকর্তাদের সাথে বিএনপির কিছু নেতার বৈঠকেও রাজনৈতিক সঙ্কটের সুরাহা হয়নি। মার্কিন দূতাবাসের পার্টিতে নির্বাচন পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হলেও তাতেও কোনো অগ্রগতি হয়েছে বলে শোনা যায়নি। সরকারে অংশ নেয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। দেশী-বিদেশী চাপে এক সময় সংলাপের পরিবেশ তৈরি হয়েছিল। উভয় দলের শীর্ষ নেতানেত্রীর রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও আন্তরিকতার অভাবে তা পণ্ড হয়ে গেছে। সঙ্কট সমাধানে তাদের সদিচ্ছা ও আন্তরিকতা জনগণের চোখে পড়েনি। সংলাপ নিয়ে লালফোনে একদফা বাহাস হয়েছে। আমন্ত্রণের নামে ধীরে-সুস্থে ‘আক্রমণ’ চালানো হয়েছে। অসৎ উদ্দেশ্যে লোক দেখানো আমন্ত্রণ জানিয়ে দেশবাসীর সমবেদনা সংগ্রহের বৃথা চেষ্টা করা হয়েছে। দীর্ঘ কথোপকথন গোপনে রেকর্ড করে গণমাধ্যমে প্রকাশ করায় তা জনগণের হাসির খোরাক জুগিয়েছে। প্রমাণিত হয়েছে, ফোনালাপের পুরো প্রচেষ্টাই ছিল একটি প্রহসনমূলক নাটক। এটা রাজনৈতিক সঙ্কটকে আরো ঘনীভূত করেছে। সমাধানের পথ থেকে জাতিকে আরো দূরে ঠেলে দিয়েছে। ব্রিটেনের প্রভাবশালী পত্রিকা ইকোনমিস্ট বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনীতিকে পুতুলনাচের সাথে তুলনা করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ওই প্রতিবেদনে এরা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেত্রীর ফোনালাপকে আখ্যায়িত করেছে ‘স্রেফ ঝগড়া’ হিসেবে। এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই, চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট, দীর্ঘ অচলাবস্থা ও সাংঘর্ষিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছেÑ উচ্চ আদালতের আংশিক রায়ের দোহাই দিয়ে নিজেদের সুবিধামতো তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে; পছন্দমতো সংবিধান সংশোধন করার ফলে; মতাকে চিরস্থায়ী করতে রাষ্ট্রীয় প্রশাসনকে দলীয়করণ করার ফলে; সংখ্যাগরিষ্ঠতার সুযোগে জনমত উপো করে স্বৈরাচারী আচরণ করার কারণে; ভিন্নমত দমনে অসহিষ্ণু ও বেপরোয়া হওয়ার দরুন এবং প্রকাশ্যে এমনকি ঘরোয়া পরিবেশেও সভা-সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে গণতন্ত্রের টুঁটি চেপে ধরার ফলে দেশে রাজনৈতিক সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে।
ভারতের আসাম থেকে প্রকাশিত দৈনিক নববার্তা প্রসঙ্গ বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচন নিয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে উদ্ধৃত করে রিপোর্টটি লিখেছেন ভাস্কর দেব। ২১ অক্টোবর প্রকাশিত ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, আগামী নির্বাচনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ জোটকে মতায় ফিরিয়ে আনতে চায় ভারত। এ জন্য বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনে দিল্লি খরচ করবে এক হাজার কোটি রুপি। দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার ইতোমধ্যে এ ব্যয়ের প্রস্তাব পাস করেছে বলে ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এই বিশাল ব্যয়ের মূল কারণ হিসেবে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা ‘আইএসআই’ এবং ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা র-এর মধ্যে মতা প্রদর্শনের ছায়াযুদ্ধের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। দৈনিক নববার্তা প্রসঙ্গ ছাড়াও সম্প্রতি টাইমস অব ইন্ডিয়াও জানিয়েছে যে, বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনে ভারত তার পরীতি ও পুরনো বন্ধুপ্রতিম দলকেই মতায় ফিরিয়ে আনতে চায়। দিল্লির স্বার্থ রায় এই সিদ্ধান্তের কোনো বিকল্প নেই। এসব খবর সত্য হলে তা খুবই উদ্বেগজনক। আমাদের গণতন্ত্রের প্রতি এক রকম ষড়যন্ত্র এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকিস্বরূপ। এমন নয় যে, বাংলাদেশের দরিদ্র জনগণের জন্য হঠাৎ ভারতের দরদ উথলে উঠেছে। পার্শ্ববর্তী একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের জনমতকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে সাধারণ নির্বাচনে এক হাজার কোটি রুপি বিনিয়োগ করার পেছনে স্বার্থ কী? এই অর্থ কি তারা নিঃস্বার্থভাবে ব্যয় করবে? নিশ্চয় নয়। তার মানে হলো, বাংলাদেশের জনগণের ভোটে সরকার পরিবর্তনে বিশ্বাসী নয় ভারত। বরং তারা বাংলাদেশের নির্বাচনী ফলাফল নির্ধারণ করতে চায়। নিজেদের স্বার্থে নির্বাচনী ফলাফল পাল্টে দিতে চায়। বিনিময়ে আগামী পাঁচ বছরে তারা ‘পুষিয়ে নেয়া’র ছক আঁটছে। সিলেট ও পঞ্চগড় সীমান্তে ভারতীয় পতাকাবাহী হেলিকপ্টারের আকাশসীমা লঙ্ঘন করে বাংলাদেশ ভূখণ্ডে প্রবেশ নতুন প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে। ভারতীয় বিএসএফের নাকের ডগায় বাংলাদেশ সীমান্তের ব্যারিকেড ভেঙে গাড়ি ঢুকে পড়ার মতো উদ্বেগজনক ঘটনা ঘটছে। রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগে বেপরোয়া হয়ে উঠছে তারা। পাশের দেশে গণেশ উল্টে গেলে তাদের বড়ই মুসিবত। বিরোধী জোট মতায় এলে জঙ্গিবাদ ফিরে আসবে বলে ব্যাপক অপপ্রচার চালাচ্ছে তারা। রেডিক্যাল মুসলিমের নাম ভাঙিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে চাইছে। নিজেদের চিরশত্রু পাকিস্তানের ‘আইএসআই’কে জড়িয়ে বাংলাদেশের জঙ্গিবাদ নিয়ে গণমাধ্যমে অপপ্রচার চালাচ্ছে। বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের নামে অপপ্রচার করছে। স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলাচ্ছে। মায়ের চেয়ে মাসির দরদ দেখাতে চাইছে বেশি, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
এশিয়া ফাউন্ডেশন ও ডেইলি স্টারের যৌথ জরিপেও দেখা যায় যে, দেশের ৭৭ শতাংশ মানুষই আগামী নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই হওয়া উচিত বলে মনে করেন। ৭৭ শতাংশ মানুষ সবাই নিশ্চয় বিরোধী দলের সমর্থক নয়। তবুও সংখ্যাগরিষ্ঠের জনমত উপো করে একদলীয় নির্বাচনের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে সরকার। ব্যবসায়ীদের উদ্যোগে প্রধান দু’দলের মহাসচিবপর্যায়ে সংলাপের কথা উঠলেও তাতে কোনো ভরসা নেই। শারদীয় শুভেচ্ছার নামে ঢাকায় বনানীর এক অভিজাত রেস্টুরেন্টে ভারতীয় হাইকমিশনের কর্মকর্তাদের সাথে বিএনপির কিছু নেতার বৈঠকেও রাজনৈতিক সঙ্কটের সুরাহা হয়নি। মার্কিন দূতাবাসের পার্টিতে নির্বাচন পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হলেও তাতেও কোনো অগ্রগতি হয়েছে বলে শোনা যায়নি। সরকারে অংশ নেয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। দেশী-বিদেশী চাপে এক সময় সংলাপের পরিবেশ তৈরি হয়েছিল। উভয় দলের শীর্ষ নেতানেত্রীর রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও আন্তরিকতার অভাবে তা পণ্ড হয়ে গেছে। সঙ্কট সমাধানে তাদের সদিচ্ছা ও আন্তরিকতা জনগণের চোখে পড়েনি। সংলাপ নিয়ে লালফোনে একদফা বাহাস হয়েছে। আমন্ত্রণের নামে ধীরে-সুস্থে ‘আক্রমণ’ চালানো হয়েছে। অসৎ উদ্দেশ্যে লোক দেখানো আমন্ত্রণ জানিয়ে দেশবাসীর সমবেদনা সংগ্রহের বৃথা চেষ্টা করা হয়েছে। দীর্ঘ কথোপকথন গোপনে রেকর্ড করে গণমাধ্যমে প্রকাশ করায় তা জনগণের হাসির খোরাক জুগিয়েছে। প্রমাণিত হয়েছে, ফোনালাপের পুরো প্রচেষ্টাই ছিল একটি প্রহসনমূলক নাটক। এটা রাজনৈতিক সঙ্কটকে আরো ঘনীভূত করেছে। সমাধানের পথ থেকে জাতিকে আরো দূরে ঠেলে দিয়েছে। ব্রিটেনের প্রভাবশালী পত্রিকা ইকোনমিস্ট বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনীতিকে পুতুলনাচের সাথে তুলনা করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ওই প্রতিবেদনে এরা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেত্রীর ফোনালাপকে আখ্যায়িত করেছে ‘স্রেফ ঝগড়া’ হিসেবে। এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই, চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট, দীর্ঘ অচলাবস্থা ও সাংঘর্ষিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছেÑ উচ্চ আদালতের আংশিক রায়ের দোহাই দিয়ে নিজেদের সুবিধামতো তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে; পছন্দমতো সংবিধান সংশোধন করার ফলে; মতাকে চিরস্থায়ী করতে রাষ্ট্রীয় প্রশাসনকে দলীয়করণ করার ফলে; সংখ্যাগরিষ্ঠতার সুযোগে জনমত উপো করে স্বৈরাচারী আচরণ করার কারণে; ভিন্নমত দমনে অসহিষ্ণু ও বেপরোয়া হওয়ার দরুন এবং প্রকাশ্যে এমনকি ঘরোয়া পরিবেশেও সভা-সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে গণতন্ত্রের টুঁটি চেপে ধরার ফলে দেশে রাজনৈতিক সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে।
ভারতের আসাম থেকে প্রকাশিত দৈনিক নববার্তা প্রসঙ্গ বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচন নিয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে উদ্ধৃত করে রিপোর্টটি লিখেছেন ভাস্কর দেব। ২১ অক্টোবর প্রকাশিত ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, আগামী নির্বাচনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ জোটকে মতায় ফিরিয়ে আনতে চায় ভারত। এ জন্য বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনে দিল্লি খরচ করবে এক হাজার কোটি রুপি। দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার ইতোমধ্যে এ ব্যয়ের প্রস্তাব পাস করেছে বলে ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এই বিশাল ব্যয়ের মূল কারণ হিসেবে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা ‘আইএসআই’ এবং ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা র-এর মধ্যে মতা প্রদর্শনের ছায়াযুদ্ধের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। দৈনিক নববার্তা প্রসঙ্গ ছাড়াও সম্প্রতি টাইমস অব ইন্ডিয়াও জানিয়েছে যে, বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনে ভারত তার পরীতি ও পুরনো বন্ধুপ্রতিম দলকেই মতায় ফিরিয়ে আনতে চায়। দিল্লির স্বার্থ রায় এই সিদ্ধান্তের কোনো বিকল্প নেই। এসব খবর সত্য হলে তা খুবই উদ্বেগজনক। আমাদের গণতন্ত্রের প্রতি এক রকম ষড়যন্ত্র এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকিস্বরূপ। এমন নয় যে, বাংলাদেশের দরিদ্র জনগণের জন্য হঠাৎ ভারতের দরদ উথলে উঠেছে। পার্শ্ববর্তী একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের জনমতকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে সাধারণ নির্বাচনে এক হাজার কোটি রুপি বিনিয়োগ করার পেছনে স্বার্থ কী? এই অর্থ কি তারা নিঃস্বার্থভাবে ব্যয় করবে? নিশ্চয় নয়। তার মানে হলো, বাংলাদেশের জনগণের ভোটে সরকার পরিবর্তনে বিশ্বাসী নয় ভারত। বরং তারা বাংলাদেশের নির্বাচনী ফলাফল নির্ধারণ করতে চায়। নিজেদের স্বার্থে নির্বাচনী ফলাফল পাল্টে দিতে চায়। বিনিময়ে আগামী পাঁচ বছরে তারা ‘পুষিয়ে নেয়া’র ছক আঁটছে। সিলেট ও পঞ্চগড় সীমান্তে ভারতীয় পতাকাবাহী হেলিকপ্টারের আকাশসীমা লঙ্ঘন করে বাংলাদেশ ভূখণ্ডে প্রবেশ নতুন প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে। ভারতীয় বিএসএফের নাকের ডগায় বাংলাদেশ সীমান্তের ব্যারিকেড ভেঙে গাড়ি ঢুকে পড়ার মতো উদ্বেগজনক ঘটনা ঘটছে। রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগে বেপরোয়া হয়ে উঠছে তারা। পাশের দেশে গণেশ উল্টে গেলে তাদের বড়ই মুসিবত। বিরোধী জোট মতায় এলে জঙ্গিবাদ ফিরে আসবে বলে ব্যাপক অপপ্রচার চালাচ্ছে তারা। রেডিক্যাল মুসলিমের নাম ভাঙিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে চাইছে। নিজেদের চিরশত্রু পাকিস্তানের ‘আইএসআই’কে জড়িয়ে বাংলাদেশের জঙ্গিবাদ নিয়ে গণমাধ্যমে অপপ্রচার চালাচ্ছে। বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের নামে অপপ্রচার করছে। স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলাচ্ছে। মায়ের চেয়ে মাসির দরদ দেখাতে চাইছে বেশি, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন