৩ অক্টোবর। নির্দলীয় সরকারের দাবিতে বিরোধী দলের দ্বিতীয় দফা
হরতালের আগের দিন রাত পৌনে ৯টা। একটি অনলাইন পত্রিকায় দেখতে পেলাম, ককটেল বিস্ফোরণে দিগন্ত টিভির যুগ্ম বার্তা সম্পাদক কাজী লুৎফুল
কবীরসহ ছয়জন আহত। দৌড়ে গেলাম টেলিভিশনের সামনে। প্রায় সব চ্যানেল দেখলাম; কিন্তু কোথায়ও পেলাম না কোনো তথ্য। সাংবাদিকতা পেশায় দুই যুগেরও
বেশি ধরে কর্মরত কাজী লুৎফুল কবীর। তার আহত হওয়ার খবরের জন্য ছোট্ট একটু জায়গা হলো
না দেশের এত চ্যানেলে! অবাক হওয়ার মতো ঘটনা। তার হাত ধরে অনেক সংবাদকর্মী নিজেদের
অবস্থান পাকাপোক্ত করেছেন গণমাধ্যমে। তা হলে কেন এমনটি হলো? অথচ হরতালকে ঘিরে ৭১ টিভির সামনে ককটেল বিস্ফোরণে আহত সাংবাদিকদের
নিয়ে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। মন্তব্য করে আলোচনা-সমালোচনার পাত্র বনে যানÑ খ্যাতিমান বুদ্ধিজীবী, লেখক ও
কলামিস্ট ফরহাদ মজহার। তিনি যে বক্তব্য দিয়েছেন,
তা সঠিকভাবে ও পুরোটা গণমাধ্যম প্রকাশ করেনি। অনেক উসকানিদাতা
বুদ্ধিজীবী রয়েছেন, যারা সরকারের পে কথা বলায়
তাদের বিরুদ্ধে কোনো পদপে নেয়নি সরকার! ট্রাইব্যুনালের বিচারপতির স্কাইপ সংলাপ
আমার দেশ পত্রিকা প্রকাশের দায়ে ‘তথ্য অধিকার
আইনে’ যদি মাহমুদুর রহমান গ্রেফতার হতে পারেন; তা হলে দুই নেত্রীর ‘ফোনালাপ’ গণমাধ্যমে প্রকাশ করা কি আইনের পরিপন্থী নয়? মাননীয় তথ্যমন্ত্রী কি বিরোধীদলীয় নেতার অনুমতি নিয়েছেন? সংবাদ সম্মেলন করে তিনি শীর্ষ দুই নেতার টেলিকনফারেন্স জনগণের জন্য
প্রকাশের পে অবস্থান নিয়ে, পরে তা কৌশলে এড়িয়ে গেছেন। এক
দেশে দুই নিয়ম হয় না। সংবিধানের ব্যবহার কি শুধু সরকার ও তার দলের জন্য? বিরোধী দল ও তাদের নেতাকর্মীদের জন্য আইনের শাসন প্রযোজ্য নয় কি?
৭১ টিভিসহ সাংবাদিক ও সংবাদমাধ্যমের ওপর হামলার তীব্র নিন্দা জানাই। কাজী লুৎফুল কবীর কেমন সাংবাদিক? দুই যুগেরও বেশি কাজ করছেন গণমাধ্যমে। বিভিন্ন প্রিন্ট মিডিয়ায় কাজ করেছেন পেশাদারিত্বের সাথে। ‘বৈশাখী টেলিভিশন’ ও বন্ধ হওয়া ‘চ্যানেল ওয়ানে’ সিনিয়র জার্নালিস্ট হিসেবে কাজ করেছেন দীর্ঘ দিন। বন্ধ হওয়া দিগন্ত টিভির যুগ্ম বার্তা সম্পাদকের দায়িত্বে আছেন তিনি। দীর্ঘ পথপরিক্রমায় পেশাদার অনেক সাংবাদিক কর্মরত আছেন দিগন্ত টিভিতে। আমরা দিগন্তে কাজ করতে গিয়ে, সত্য প্রকাশ ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনে ‘সাংবাদিকতার এথিকস’ মেনে চলার চেষ্টা করেছি। আহত হয়েছি; কিন্তু সত্য প্রকাশে আপস করিনি। এসব পেশাদার সংবাদকর্মীর অবমূল্যায়নের দায়ভার কার? সরকারের কর্মকাণ্ডের অবিকৃত চিত্র তুলে ধরাই ছিল দিগন্তের ‘অপরাধ’। বিনিময়ে দিগন্তে কর্মরত দীর্ঘ দিনের পেশাদার সাংবাদিকেরা এখন প্রতিহিংসার রাজনীতি ও মিডিয়া আগ্রাসনে অবরুদ্ধ। অনেক আশা স্বপ্ন নিয়ে গণমাধ্যম পেশাকে বেছে নিয়েছিলাম। দেশের জন্য কাজ করব, সত্য প্রকাশ করব নির্ভয়ে; কিন্তু তা কতটা পেরেছি? ২০১১ সালের ১৮ জানুয়ারি বাণিজ্যমেলায় রিপোর্ট করতে গিয়ে সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছি। দীর্ঘ দিন হাসপাতালের বিছানায় প্রতীার প্রহর গুনেছি। এত বড় একটা ঘটনার জন্য সরকারের প থেকে দেখতে আসা দূরের কথা; একটা প্রতিবাদও করা হয়নি। ‘অপরাধ’, আমি দিগন্ত টিভির সংবাদকর্মী। অথচ ব্যক্তিজীবনে নিজেকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক মনে করতাম। সাংবাদিকেরা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। এপ্রিলে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে একুশে টিভির সাংবাদিক আহত হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে সরকারের মন্ত্রী ও নারী নেত্রীরা মাঠে নেমেছেন বন্দনায়। অথচ তাকে বাঁচাতে দিগন্ত টিভির ক্যামেরাম্যান খলিলুর রহমান গুরুতর আহত হলেও কারো মাতামাতি ছিল না খলিলকে নিয়ে। গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের ওপর হামলায় উদ্বেগ প্রকাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেন, ‘গণমাধ্যমের মালিক ও হর্তাকর্তারা দেশের সঙ্কটময় মুহূর্তে পপাতিত্ব করে অপসাংবাদিকতা করছেন। এ কারণেই গণমাধ্যম বারবার হামলার শিকার হচ্ছে।’ এ কথা সত্য, বিশ্বের বহু দেশেই সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। তবে বেশির ভাগ দেশেই গণমাধ্যম তথা সংবাদকর্মীরা জাতীয় ইস্যুতে ঐক্যবদ্ধ। ব্যতিক্রম হচ্ছে বাংলাদেশে। অতীতেও সাংবাদিকেরা হামলা-মামলার শিকার হয়েছেন; কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনা সব রেকর্ডকে ছাড়িয়ে গেছে। মহাজোট সরকার মতায় আসার পর সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যার ঘটনা সবার জানা। এর প্রতিবাদে বিভক্ত সাংবাদিক সমাজ ঐক্যবদ্ধ হতে গিয়েও শেষ পরিণতি আরো মন্দ হয়েছে। লোভ-লালসা, মতার দম্ভ আর রাজনৈতিক সম্পৃক্ততায় কিছু সুবিধাভোগী নেতা ব্যক্তিস্বার্থে সাংবাদিক সমাজকে বিভাজনের দিকে ঠেলে দিয়েছেন।
যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবিতে সৃষ্ট ‘শাহবাগ আন্দোলন’ গণমাধ্যম, দেশ ও জাতিকে বিভক্তির দিকে ঠেলে দেয়। জাতীয় দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার ওপর হামলা, দিগন্ত ও ইসলামিক টিভি বন্ধ করার দাবি ওঠে সেই শাহবাগ থেকে। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতসহ শাহবাগ থেকে উসকানিমূলক বক্তব্য নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে গণমাধ্যমে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ‘লাইভ টেলিকাস্ট’ করা হয়। তখন তো কাউকে তেমন সমালোচনা করতে দেখা যায়নি। বিভিন্ন চ্যানেল বন্ধ, পত্রিকা বন্ধ, সাগর-রুনি হত্যার বিচার হচ্ছে না। এসবের প্রতিবাদ করে বিশিষ্ট কলামিস্ট ও বুদ্ধিজীবীরা কটূক্তির শিকার, নিগৃহীত হচ্ছেন। মতিঝিলের হেফাজত সমাবেশকে ঘিরে মিডিয়ার অপপ্রচার ও উদাসীনতা জনগণের আস্থা অর্জনে ব্যর্থতার ফলে হামলার শিকার হচ্ছেন সংবাদকর্মীরা।
দেশ এখন দুই ভাগে বিভক্ত; গণমাধ্যম ও সাংবাদকর্মীদের বেলাও সে রকম ল করা যাচ্ছে। ৫ মে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশকে কেন্দ্র করে রাতের আঁধারে বন্ধ হয়ে যায় জনপ্রিয় টিভি চ্যানেল দিগন্ত। সংসদসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তথ্যমন্ত্রী বিষয়টিকে ‘সাময়িক’ বলে মন্তব্য করেন। যে সাময়িকের কোনো সীমারেখা নেই। ফলে দিগন্তে কর্মরত শত শত সাংবাদিক, কর্মকর্তা-কর্মচারী নিমজ্জিত হয়েছেন অনিশ্চয়তায়। দিগন্তের সংবাদকর্মীদের নিয়ে সরকার কিংবা সাংবাদিক সমাজের অনেক পুরোধার মাথাব্যথা নেই।
দলীয় প্রভাব ও মতার পালাবদলে মিডিয়ার মালিক অনেকেই। সংবাদকর্মীরা কামলা খাটছেন। কাজ করছেন মালিকদের ইচ্ছে পূরণে।
সংবাদপত্র, ম্যাগাজিন ও টিভি স্টেশনের বিশেষ কিছু ইস্যুতে নিজস্ব মতামত থাকতে পারে। সেটা কর্তৃপ তুলে ধরার নজিরও আছে। মিডিয়ায় সম্পাদনা পরিষদ এবং মালিকপরে মতামতের ওপর ভিত্তি করেই সংবাদ সংগ্রহ ও সম্প্রচার করা প্রচলিত ধারারই অংশ। আমাদের স্বাধীন দেশের গণমাধ্যম স্বাধীনভাবে কাজ করছে কি না তা আর বলার অপো রাখে না। সাংবাদিকেরা জাতির বিবেক, এটি কি শুধু কথার কথা; যা প্রবাদেই সীমাবদ্ধ? সাংবাদিকতা এখন পুঁজিবাদের দখলে। পেশাগত দায়িত্ব পালনে নিজের বিবেক এবং জাতীয় স্বার্থ মতাধর রাজনীতির কাছে জিম্মি। চ্যানেলের মালিকদের স্বার্থরা প্রধান। ‘জার্নালিজম এথিকস’ যেন হারিয়ে গেছে। ‘হলুদ’ সাংবাদিকতার বিষয়টি অনেকের জানা।
কয়েকটি চ্যানেল ‘হলুদ’ সাংবাদিকতাকেও ছাড়িয়ে গেছে। লাইভ অনুষ্ঠানের নামে, কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে ব্যক্তিকেন্দ্রিক উপস্থাপন, সম্মানিত ব্যক্তিদের চরিত্রহরণ, অপছন্দের দলের কর্মসূচিকে ‘তাণ্ডব’ বলা, মিডিয়া মোগলদের দ্বন্দ্বে একে অন্যকে ঘায়েলের চেষ্টা, বিজ্ঞাপন না পেলে নেতিবাচক প্রতিবেদন, পাওয়ার পর ইতিবাচক, এসবের নাম কি বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা? এই অবস্থায় সাংবাদিকদের ওপর থেকে আস্থা হারিয়ে ফেলছেন সাধারণ মানুষ। আক্রমণের শিকার হচ্ছেন সংবাদকর্মীরা। কিছু মিডিয়া এতটা নিচে নেমেছে যে, জাতীয় স্বার্থের চেয়ে ব্যক্তিস্বার্থ এখন বড় বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটা সঙ্ঘাতের রাজনীতিকে উস্কে দিচ্ছে। বর্তমান ‘ডিজিটাল যুগে’ দেশে অসংখ্য সাপ্তাহিক ও মাসিক পত্রিকা, অনলাইন পোর্টাল, টিভি চ্যানেল, রেডিও।
বেশির ভাগ গণমাধ্যমে সময়-সময়ে সত্য সংবাদকে ধামাচাপা দেয়া হচ্ছে। এরজন্য কি আমরা সাংবাদিকরাই দায়ী? এ দায়ভার কেন আমরা নেবো? কোনো শক্তির গোপন আঁতাতকে প্রতিষ্ঠা করতে, কিংবা ওপরের নির্দেশে ও মালিকের চাপে হলুদের চাইতেও ভয়াবহ ‘রঙের’ সাংবাদিকতার চর্চায় কেন লিপ্ত হবো আমরা?
সাংবাদিক ইউনিয়ন, নেতৃবৃন্দ ও বিভিন্ন মিডিয়ায় কর্মরত প্রিয় সহকর্মীদের বলছি; সত্য প্রকাশে আপস করবেন না। মানুষকে বোকা বানানো সহজ নয়! তথ্যপ্রযুক্তি ও মুঠো ফোনের বদৌলতে ঘরে ঘরে ও জনে জনে মুহূর্তেই পৌঁছে যাচ্ছে সর্বশেষ খবরাখবর। সাধারণ মানুষ কিক করতে শিখে গেছে, কি করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়া নেয়া হয়। নিজেদের অবস্থান জানান দিতে সত্য ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনে আন্তরিকতার পরিচয় দিন। নীতি ও আদর্শের প্রশ্নে আপসহীন সাংবাদিকতা পেশায় অঙ্গীকারবদ্ধ আর মানবতাবোধের আদর্শে ঋদ্ধ থাকতে হবে।
৭১ টিভিসহ সাংবাদিক ও সংবাদমাধ্যমের ওপর হামলার তীব্র নিন্দা জানাই। কাজী লুৎফুল কবীর কেমন সাংবাদিক? দুই যুগেরও বেশি কাজ করছেন গণমাধ্যমে। বিভিন্ন প্রিন্ট মিডিয়ায় কাজ করেছেন পেশাদারিত্বের সাথে। ‘বৈশাখী টেলিভিশন’ ও বন্ধ হওয়া ‘চ্যানেল ওয়ানে’ সিনিয়র জার্নালিস্ট হিসেবে কাজ করেছেন দীর্ঘ দিন। বন্ধ হওয়া দিগন্ত টিভির যুগ্ম বার্তা সম্পাদকের দায়িত্বে আছেন তিনি। দীর্ঘ পথপরিক্রমায় পেশাদার অনেক সাংবাদিক কর্মরত আছেন দিগন্ত টিভিতে। আমরা দিগন্তে কাজ করতে গিয়ে, সত্য প্রকাশ ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনে ‘সাংবাদিকতার এথিকস’ মেনে চলার চেষ্টা করেছি। আহত হয়েছি; কিন্তু সত্য প্রকাশে আপস করিনি। এসব পেশাদার সংবাদকর্মীর অবমূল্যায়নের দায়ভার কার? সরকারের কর্মকাণ্ডের অবিকৃত চিত্র তুলে ধরাই ছিল দিগন্তের ‘অপরাধ’। বিনিময়ে দিগন্তে কর্মরত দীর্ঘ দিনের পেশাদার সাংবাদিকেরা এখন প্রতিহিংসার রাজনীতি ও মিডিয়া আগ্রাসনে অবরুদ্ধ। অনেক আশা স্বপ্ন নিয়ে গণমাধ্যম পেশাকে বেছে নিয়েছিলাম। দেশের জন্য কাজ করব, সত্য প্রকাশ করব নির্ভয়ে; কিন্তু তা কতটা পেরেছি? ২০১১ সালের ১৮ জানুয়ারি বাণিজ্যমেলায় রিপোর্ট করতে গিয়ে সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছি। দীর্ঘ দিন হাসপাতালের বিছানায় প্রতীার প্রহর গুনেছি। এত বড় একটা ঘটনার জন্য সরকারের প থেকে দেখতে আসা দূরের কথা; একটা প্রতিবাদও করা হয়নি। ‘অপরাধ’, আমি দিগন্ত টিভির সংবাদকর্মী। অথচ ব্যক্তিজীবনে নিজেকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক মনে করতাম। সাংবাদিকেরা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। এপ্রিলে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে একুশে টিভির সাংবাদিক আহত হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে সরকারের মন্ত্রী ও নারী নেত্রীরা মাঠে নেমেছেন বন্দনায়। অথচ তাকে বাঁচাতে দিগন্ত টিভির ক্যামেরাম্যান খলিলুর রহমান গুরুতর আহত হলেও কারো মাতামাতি ছিল না খলিলকে নিয়ে। গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের ওপর হামলায় উদ্বেগ প্রকাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেন, ‘গণমাধ্যমের মালিক ও হর্তাকর্তারা দেশের সঙ্কটময় মুহূর্তে পপাতিত্ব করে অপসাংবাদিকতা করছেন। এ কারণেই গণমাধ্যম বারবার হামলার শিকার হচ্ছে।’ এ কথা সত্য, বিশ্বের বহু দেশেই সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। তবে বেশির ভাগ দেশেই গণমাধ্যম তথা সংবাদকর্মীরা জাতীয় ইস্যুতে ঐক্যবদ্ধ। ব্যতিক্রম হচ্ছে বাংলাদেশে। অতীতেও সাংবাদিকেরা হামলা-মামলার শিকার হয়েছেন; কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনা সব রেকর্ডকে ছাড়িয়ে গেছে। মহাজোট সরকার মতায় আসার পর সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যার ঘটনা সবার জানা। এর প্রতিবাদে বিভক্ত সাংবাদিক সমাজ ঐক্যবদ্ধ হতে গিয়েও শেষ পরিণতি আরো মন্দ হয়েছে। লোভ-লালসা, মতার দম্ভ আর রাজনৈতিক সম্পৃক্ততায় কিছু সুবিধাভোগী নেতা ব্যক্তিস্বার্থে সাংবাদিক সমাজকে বিভাজনের দিকে ঠেলে দিয়েছেন।
যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবিতে সৃষ্ট ‘শাহবাগ আন্দোলন’ গণমাধ্যম, দেশ ও জাতিকে বিভক্তির দিকে ঠেলে দেয়। জাতীয় দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার ওপর হামলা, দিগন্ত ও ইসলামিক টিভি বন্ধ করার দাবি ওঠে সেই শাহবাগ থেকে। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতসহ শাহবাগ থেকে উসকানিমূলক বক্তব্য নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে গণমাধ্যমে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ‘লাইভ টেলিকাস্ট’ করা হয়। তখন তো কাউকে তেমন সমালোচনা করতে দেখা যায়নি। বিভিন্ন চ্যানেল বন্ধ, পত্রিকা বন্ধ, সাগর-রুনি হত্যার বিচার হচ্ছে না। এসবের প্রতিবাদ করে বিশিষ্ট কলামিস্ট ও বুদ্ধিজীবীরা কটূক্তির শিকার, নিগৃহীত হচ্ছেন। মতিঝিলের হেফাজত সমাবেশকে ঘিরে মিডিয়ার অপপ্রচার ও উদাসীনতা জনগণের আস্থা অর্জনে ব্যর্থতার ফলে হামলার শিকার হচ্ছেন সংবাদকর্মীরা।
দেশ এখন দুই ভাগে বিভক্ত; গণমাধ্যম ও সাংবাদকর্মীদের বেলাও সে রকম ল করা যাচ্ছে। ৫ মে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশকে কেন্দ্র করে রাতের আঁধারে বন্ধ হয়ে যায় জনপ্রিয় টিভি চ্যানেল দিগন্ত। সংসদসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তথ্যমন্ত্রী বিষয়টিকে ‘সাময়িক’ বলে মন্তব্য করেন। যে সাময়িকের কোনো সীমারেখা নেই। ফলে দিগন্তে কর্মরত শত শত সাংবাদিক, কর্মকর্তা-কর্মচারী নিমজ্জিত হয়েছেন অনিশ্চয়তায়। দিগন্তের সংবাদকর্মীদের নিয়ে সরকার কিংবা সাংবাদিক সমাজের অনেক পুরোধার মাথাব্যথা নেই।
দলীয় প্রভাব ও মতার পালাবদলে মিডিয়ার মালিক অনেকেই। সংবাদকর্মীরা কামলা খাটছেন। কাজ করছেন মালিকদের ইচ্ছে পূরণে।
সংবাদপত্র, ম্যাগাজিন ও টিভি স্টেশনের বিশেষ কিছু ইস্যুতে নিজস্ব মতামত থাকতে পারে। সেটা কর্তৃপ তুলে ধরার নজিরও আছে। মিডিয়ায় সম্পাদনা পরিষদ এবং মালিকপরে মতামতের ওপর ভিত্তি করেই সংবাদ সংগ্রহ ও সম্প্রচার করা প্রচলিত ধারারই অংশ। আমাদের স্বাধীন দেশের গণমাধ্যম স্বাধীনভাবে কাজ করছে কি না তা আর বলার অপো রাখে না। সাংবাদিকেরা জাতির বিবেক, এটি কি শুধু কথার কথা; যা প্রবাদেই সীমাবদ্ধ? সাংবাদিকতা এখন পুঁজিবাদের দখলে। পেশাগত দায়িত্ব পালনে নিজের বিবেক এবং জাতীয় স্বার্থ মতাধর রাজনীতির কাছে জিম্মি। চ্যানেলের মালিকদের স্বার্থরা প্রধান। ‘জার্নালিজম এথিকস’ যেন হারিয়ে গেছে। ‘হলুদ’ সাংবাদিকতার বিষয়টি অনেকের জানা।
কয়েকটি চ্যানেল ‘হলুদ’ সাংবাদিকতাকেও ছাড়িয়ে গেছে। লাইভ অনুষ্ঠানের নামে, কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে ব্যক্তিকেন্দ্রিক উপস্থাপন, সম্মানিত ব্যক্তিদের চরিত্রহরণ, অপছন্দের দলের কর্মসূচিকে ‘তাণ্ডব’ বলা, মিডিয়া মোগলদের দ্বন্দ্বে একে অন্যকে ঘায়েলের চেষ্টা, বিজ্ঞাপন না পেলে নেতিবাচক প্রতিবেদন, পাওয়ার পর ইতিবাচক, এসবের নাম কি বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা? এই অবস্থায় সাংবাদিকদের ওপর থেকে আস্থা হারিয়ে ফেলছেন সাধারণ মানুষ। আক্রমণের শিকার হচ্ছেন সংবাদকর্মীরা। কিছু মিডিয়া এতটা নিচে নেমেছে যে, জাতীয় স্বার্থের চেয়ে ব্যক্তিস্বার্থ এখন বড় বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটা সঙ্ঘাতের রাজনীতিকে উস্কে দিচ্ছে। বর্তমান ‘ডিজিটাল যুগে’ দেশে অসংখ্য সাপ্তাহিক ও মাসিক পত্রিকা, অনলাইন পোর্টাল, টিভি চ্যানেল, রেডিও।
বেশির ভাগ গণমাধ্যমে সময়-সময়ে সত্য সংবাদকে ধামাচাপা দেয়া হচ্ছে। এরজন্য কি আমরা সাংবাদিকরাই দায়ী? এ দায়ভার কেন আমরা নেবো? কোনো শক্তির গোপন আঁতাতকে প্রতিষ্ঠা করতে, কিংবা ওপরের নির্দেশে ও মালিকের চাপে হলুদের চাইতেও ভয়াবহ ‘রঙের’ সাংবাদিকতার চর্চায় কেন লিপ্ত হবো আমরা?
সাংবাদিক ইউনিয়ন, নেতৃবৃন্দ ও বিভিন্ন মিডিয়ায় কর্মরত প্রিয় সহকর্মীদের বলছি; সত্য প্রকাশে আপস করবেন না। মানুষকে বোকা বানানো সহজ নয়! তথ্যপ্রযুক্তি ও মুঠো ফোনের বদৌলতে ঘরে ঘরে ও জনে জনে মুহূর্তেই পৌঁছে যাচ্ছে সর্বশেষ খবরাখবর। সাধারণ মানুষ কিক করতে শিখে গেছে, কি করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়া নেয়া হয়। নিজেদের অবস্থান জানান দিতে সত্য ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনে আন্তরিকতার পরিচয় দিন। নীতি ও আদর্শের প্রশ্নে আপসহীন সাংবাদিকতা পেশায় অঙ্গীকারবদ্ধ আর মানবতাবোধের আদর্শে ঋদ্ধ থাকতে হবে।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন