শনিবার, ১৬ নভেম্বর, ২০১৩

গোটা বিশ্বকে বুড়ো আঙুল দেখাচ্ছে সরকার


সিরাজুর রহমান
বিএনপির পাঁচ নেতার গ্রেফতারের প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশে ব্রিটিশ হাইকমিশনার বরার্ট গিবসন বলেছেন, ‘বাংলাদেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের মধ্যে গঠনমূলক সংলাপের পরিবর্তে আমাদের অব্যাহতভাবে সঙ্ঘাতমূলক কার্যকলাপ দেখতে হচ্ছে। এটি আমাদের হতাশ করেছে। কারণ বাংলাদেশের বেশির ভাগ সাধারণ মানুষ মনে করে, দুই দল সংলাপের মাধ্যমে সব দলের অংশ নেয়ার ভিত্তিতে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন করতে সক্ষম হবে। 
ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস এক বিবৃতিতে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র অবাধ, ন্যায্য এবং বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের পথে অগ্রগতির ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করছে। বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, ‘অবাধ, ন্যায্য ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের উপায় খুঁজে বের করার জন্য বড় দলগুলোকে অবশ্যই গঠনমূলক সংলাপে বসতে হবে 
ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জুন এবং কানাডার হাইকমিশনার হেদার ক্রুডেন হুবহু অনুরূপ বিবৃতি দিয়েছেন। উল্লেখ্য যে, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ অন্যান্য দেশ ও সংস্থা ইতঃপূর্বেই সংলাপের মাধ্যমে সব দলের গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পন্থা নিরূপণের পরামর্শ দিয়েছে বাংলাদেশকে। 
ভারতীয় সংবাদ সংস্থা পিটিআইর খবর অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা সম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংকে বলেছেন, ‘বাংলাদেশে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে কী করণীয় তা দেশটির রাজনীতিকদেরই স্থির করা উচিত বলে ওয়াশিংটন মনে করে। তবে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও সবার অংশ নেয়ার মাধ্যমে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। আর তার পথ সুগম করতে এবং দ্বন্দ্ব মেটাতে দুই প্রধান দলের সংলাপে অংশ নেয়া উচিত। 
বলা হয় সাধারণ মানুষের রাজনৈতিক স্মৃতি দুর্বল। কিন্তু এত দুর্বল হওয়ার কথা নয় যে ২০০৬-০৭ সালের কথাও এরা ভুলে যাবে। খালেদা জিয়ার বিএনপি সরকারের শেষ বছরে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে বিরাট ষড়যন্ত্র চলছিল। ভারতের হাইকমিশনার বীণা সিক্রি এবং যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত হ্যারি কে টমাস খুবই ঘন ঘন আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনার সাথে বৈঠক করছিলেন। দুটি পত্রিকার সম্পাদক সে ষড়যন্ত্রের দার্শনিক গুরুর ভূমিকায় অভিনয় করছিলেন। ভেতরে ভেতরে সেনাপ্রধান মইন ইউ আহমেদও সম্পৃক্ত ছিলেন সে ষড়যন্ত্রে। 
বিএনপি সরকার মেয়াদ শেষে ২৮ অক্টোবর (২০০৬) পদত্যাগ করে। প্রায় সাথে সাথেই শেখ হাসিনার লগি-লাঠি-বৈঠার লাগাতার আন্দোলন শুরু হয়ে যায়। প্রকাশ্য দিবালোকে লাঠিপেটা করে বেশ কয়েকজন মানুষ খুন করা হয়। সড়ক রেল ও নদীপথে পরিবহন অবরোধ করে দেশের অর্থনীতি অচল করে দেয়া হয়। এমনকি বঙ্গভবনের বিদ্যুৎ টেলিফোন ও পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদকে সপরিবারে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। নাটমঞ্চের কিউরমতো কিউ অনুযায়ী সেনাপ্রধান হাসিনার ১৯৯৫-৯৬ সালের আন্দোলনের ফসল তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে বরখাস্ত করে মার্কিন নাগরিক ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে একটি বর্ণচোরা সামরিক সরকারকে বহাল করতে রাষ্ট্রপতিকে বাধ্য করা হয়। ২০০৭ সালের ১৫ এপ্রিল হাসিনা সে সরকারকে তার (সর্বশেষ) আন্দোলনের ফসল বলে বর্ণনা করেন। 
সে সরকারের কিছু কিছু লক্ষ্যের কথা স্মরণ করা প্রয়োজন। এরা প্রথমেই ক্যান্টনমেন্টে খালেদা জিয়ার বাড়ি অবরোধ করে রাখে এবং তাকে সৌদি আরবে নির্বাসনে পাঠানোর চেষ্টা করে। পত্রিকা সম্পাদক দার্শনিক গুরুদ্বয়ের মাইনাস টু (প্রকৃত পক্ষে মাইনাস ওয়ান) তত্ত্ব অনুযায়ী হাসিনাকে বিশ্ব ভ্রমণে যেতে দেয়া হলেও খালেদা জিয়াকে কারাবন্দী করে রাখা হয়। ডিজিএফআই বিএনপি স্থায়ী কমিটির পাঁচজন সদস্যকে ছিনতাই করে গুলশানে সাইফুর রহমানের বাড়িতে নিয়ে যায় এবং মধ্য রাতের পরে নতুন নেতৃত্বে বিএনপি পুনর্গঠিত হয়েছে বলে মিডিয়ায় ঘোষণা দেয়া হয়। এই সব কিছুতে ব্যর্থ হয়ে গোপালগঞ্জী প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সহযোগিতায় বিএনপিকে বাদ দিয়ে নির্বাচন করারও চেষ্টা হয়েছিল। 
গাড়ি ভাঙচুর, ককটেল নিক্ষেপ নানা সাজানো অভিযোগে মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিএনপির কয়েকজন শীর্ষ নেতাকে আগেও গ্রেফতার করেছে এই সরকার। কিন্তু গত সপ্তাহে এ দলের স্ট্যান্ডিং কমিটির চারজন সদস্য এবং খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসকে গ্রেফতার, বিএনপির প্রধান কার্যালয়, খালেদা জিয়ার অফিস এবং বাসভবন পুলিশ দিয়ে অবরুদ্ধ করা, বাসভবনের পানি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা এবং খাবার সরবরাহ সীমিত করায় অনেকেই সন্দেহ করছেন যে, শেখ হাসিনা আবারো এক-এগারোর টেকনিক কপি করতে যাচ্ছেন। 

সরকার একঘরে হয়ে পড়েছে 
কিন্তু হাসিনা ভুলে যাচ্ছেন যে এক-এগারোর প্রধান উপাদানটি বর্তমান সময়ে অনুপস্থিত। দিল্লি আর ওয়াশিংটন ২০০৬-০৭ সালে যেকোনো উপায়ে শেখ হাসিনাকে গদি দেয়ার ব্যাপারে একমত ছিল। এই দুই মহাশক্তির প্রভাবে অন্যান্য দেশ সমর্থন না দিলেও নীরব ছিল। সেটিকে মৌণং সম্মতি লক্ষণংবিবেচনা করা ভারত আর যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে কঠিন ছিল না। বিগত পাঁচ বছরে এক দিকে পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্রকে দফায় দফায় অপমান এবং সাহায্যদাতা দেশ ও সংস্থাগুলোর বিশ্বাস ভঙ্গ করা এবং অন্য দিকে স্বদেশে ব্যাপক রাজনৈতিক হত্যা ও মানবাধিকারের চূড়ান্ত অবমাননা প্রভৃতি কারণে আওয়ামী লীগ সরকার বিশ্বব্যাপী একঘরে হয়ে পড়েছে। মজার ব্যাপার এই, একঘরে হাসিনা সরকারকে অন্ধ সমর্থন দিতে গিয়ে ভারতও প্রকারান্তরে একঘরে হয়ে পড়েছে। প্রেসিডেন্ট ওবামার দরবারে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ধরনাও এক নম্বর পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্রের মন গলাতে পারেনি। ওবামা ভারতকে বাংলাদেশে ফাঁকা মাঠে গোল করতে দিতেরাজি হননি। 
মনমোহন সিং প্রেসিডেন্ট ওবামাকে বলেছিলেন, ‘আমরা বাংলাদেশে যেকোনো ধরনের বিদেশী হস্তক্ষেপের বিপক্ষে। আমরা চাই যে, সব পক্ষের অংশগ্রহণে একটি শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষ নিজেদের ভবিষ্যৎ নিজেরাই নির্ধারণ করুক।কিন্তু একই সাথে ভারতের মিডিয়া এবং পররাষ্ট্রনীতির বাহন যেকোনো উপায়ে শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রীর গদিতে বহাল রাখার চেষ্টা গোপন করছে না। এ দিকে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের অন্যতম কলমজীবী মুনতাসির মামুনের একটি সাম্প্রতিক কলামের শিরোনাম ছিল : আমাদের ভাগ্য নির্ধারণ করবে কে? আমরা না বিদেশীরা?’ অর্থাৎ ভারত বাংলাদেশকে পরদেশ এবং আওয়ামী লীগ ভারতকে বিদেশ মনে করে না। এবং ঠিক এ কারণেই বাংলাদেশের মানুষ ভারত আর আওয়ামী লীগের আঁতাতকে অশুভ বলে বিবেচনা করে। 
শত ফুটো কলসিতে পানি ঢালা হলে বহুমুখী ধারায় নানা দিকে ছিটকে বেরোয় সে পানি। প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগ সরকারের কথাবার্তাও সে রকম বিশৃঙ্খল, পরস্পর বিরোধী এবং অর্থহীন। প্রধানমন্ত্রী হাসিনা প্রকাশ্যে বলে বেড়াচ্ছেন তিনি প্রধানমন্ত্রীত্ব চান না, চান দেশের মানুষের শান্তি; কিন্তু দেশের মানুষ তাকে প্রায় একবাক্যে বলে দিচ্ছে দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠায় প্রথম ধাপ হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ। ওই দিকে হুমকিবাজ হানিফ আর, মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু আর বুনোমন্ত্রী মাহমুদ হাছান প্রমুখের বেয়াদবি ইতরামির সীমা ছুঁই ছুঁই করছে। সজীব ওয়াজেদ জয় তার মাকে অনুকরণ করেই অশালীন ভাষায় কথা বলছেন। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এ দলটির মনোভাব এ রকম মনে হয় : তারা জানে বাংলাদেশের মানুষ আর ভোট দিয়ে তাদের নির্বাচিত করবে না। তার কারণ একটিও গুরুত্বপূর্ণ প্রতিশ্রুতি পালনে সরকারের ব্যর্থতা, তাদের আকাশচুম্বী দুর্নীতি এবং ট্রানজিট, করিডোর আর অবাধে বন্দর ব্যবহারের অনুমতি দিয়ে বাংলাদেশের কষ্টার্জিত স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব কার্যত ভারতের হাতে তুলে দেয়া এবং দেশব্যাপী সহিংসতা ও রক্তারক্তির কারণ সৃষ্টি করা। 

হাসিনা কি হুকুমের আসামি নন? 
তবু তারা গদি আঁকড়ে থাকতে চায়। প্রধানমন্ত্রীর মার্কিন পুত্র জয়ের কথাবার্তায় স্পষ্ট হয়ে যায় যে, আওয়ামী লীগ আরো ১৫ থেকে ২০ বছর ক্ষমতায় থাকতে চায়। সাদা চোখে তার দুটো কারণ দেখা যায়। প্রথমত, বিগত পৌনে পাঁচ বছরের দুর্নীতিতে তাদের পেট ভরেনি। বাংলাদেশের কিছু সম্পদ এখনো অবশিষ্ট আছে। সেটিও এরা হাতিয়ে নিতে চায়। দ্বিতীয়ত, তাদের ভারতীয় পৃষ্ঠপোষকেরা বাংলাদেশকে পুরোপুরি অ্যানেক্স’ (ভারতের সাথে সংযুক্ত) করা না গেলেও নিদেন এই দেশটিকে তারা একটি করদ রাজ্যে পরিণত করতে চায়। তাদের সে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে শেখ হাসিনার গদিতে থাকা দরকার। ভারত জানে বাংলাদেশের অন্য কোনো রাজনীতিক, এমনকি সাধারণ মানুষও হাসিনার মতো ঔদার্যদেখিয়ে এই দেশটিকে ভারতের হাতে তুলে দিতে রাজি হবে না। 
গদি লাভের সময় থেকেই বিচক্ষণ পর্যবেক্ষকেরা বর্তমান সরকারের ফ্যাসিস্ট চরিত্র লক্ষ করেছেন। যতই দিন যাচ্ছে তাদের মনোভাব ও আচরণ ক্রমেই বেশি আগ্রাসী ও মারমুখো হয়ে উঠছে। প্রধানমন্ত্রীর পুত্র জয় এখনো মন্ত্রী-প্রধানমন্ত্রী এমনকি সংসদ সদস্যও হননি। কিন্তু তার সাম্প্রতিক কথাবার্তায় ফ্যাসিবাদী সুর স্পষ্ট লক্ষ করা যায়। আমেরিকা থেকে বাংলাদেশে এসেই তিনি ঘোষণা করেছিলেন যে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগই জয়ী হবে বলে তার কাছে ইনফরমেশনআছে। সর্বশেষ তিনি বলেছেন যে গ্রেফতার হওয়া পাঁচজন শীর্ষ বিএনপি নেতা বোমাবাজি করার ইচ্ছা পোষণ করছিলেন বলে তার কাছে প্রমাণ আছে। এই সর্বজ্ঞঅর্বাচীনের কোনো কোনো উক্তি তার মায়ের প্রায়োশিক কথাবার্তার চেয়েও বেশি বিরক্তিকর হয়ে উঠছে। 
ছাত্রলীগ, যুবলীগ আর আওয়ামী লীগের লোকজনের তাণ্ডব এখন আর কারোই অজানা থাকছে না। বিরোধী দল ও জোটের মিছিল ও সমাবেশে পুলিশের পাহারায় নূরুল কবীর বলেছেন, সরকারের লোকেরাই বিআরটিসি বাসে আগুন লাগায় বলে তার কাছে প্রমাণ আছে। স্পষ্ট হয়ে গেছে যে বিরোধী দলের হরতালকে বিতর্কিত করার লক্ষ্যে সরকার ও শাসক দলের হুকুমেই আওয়ামী লীগের ক্যাডারেরা দুষ্কৃতি ও অপকর্মগুলো অনেক দিন আগে থেকেই বিরোধী দলের নেতাদের গ্রেফতারের অজুহাত হিসেবে প্রধানমন্ত্রী ও তার মন্ত্রীরা হুকুমের অপরাধীকথাটা আবিষ্কার করেছেন। মনে হচ্ছে জয়ও সে যুক্তিতে দীক্ষা নিয়েছেন। এ কথা তাকে মনে করিয়ে দেয়া দরকার, বাংলাদেশে হাজার হাজার রাজনৈতিক হত্যা, গুম এবং পর্বত-প্রমাণ দুর্নীতি হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ, অন্ততপক্ষে সায় ছাড়া এসব সম্ভব হতো না। সরকারের (এবং জয়ের) যুক্তি অনুযায়ী সেসব অপরাধের জন্য শেখ হাসিনা অন্তত হুকুমের আসামি। বিচার একচু না হলে শেখ হাসিনারও এখন জেলে থাকাই উচিত। 

খালেদা জিয়া এখন কী করবেন? 
প্রবন্ধের শুরুতে বিশ্বসমাজের প্রতিনিধি কূটনীতিকদের কিছু উক্তি উদ্ধৃত করছি। এরা বলেছেন, সবার গ্রহণযোগ্য এবং (বিশ্বসমাজের) বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের পদ্ধতি নিরূপণের জন্য বড় দল দুটোর মধ্যে সংলাপ অত্যাবশ্যক। এবং বিশেষ করে পাঁচ নেতার গ্রেফতারের পরপরই তাদের প্রতিক্রিয়াগুলো থেকে স্পষ্ট যে, গ্রেফতারগুলোকে এরা সংলাপের পথের কাঁটা বিবেচনা করেন। তা ছাড়া তৎক্ষণাৎ প্রায় সমস্বরে তাদের প্রতিক্রিয়া থেকে মনে হয় যে, ঘটনাবলির এই বিবর্তনে তারা রীতিমতো উদ্বিগ্ন। 
ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনের প্রবক্তা সুজিত ঘোষ গত সোমবার একটি বিবৃতি দিয়েছেন। বিবৃতিতে প্রথমবারের মতো সংলাপকথাটার উল্লেখ আছে। কিন্তু পুরনো কথাবার্তার জঞ্জালে সে কথাটি হারিয়ে গেছে বলাই সঙ্গত হবে। অন্তত বিবৃতি থেকে এ ধারণা পাওয়া যায়নি শেখ হাসিনাকে সঙ্ঘাতের পথ ত্যাগ করে সংলাপের পথ ধরার পরামর্শ ভারত দেবে কি না। সুতরাং এুনি আশাবাদী হওয়ার কারণ ঘটেনি। 
ইতোমধ্যে বিএনপির এবং ১৮ দলের জোটের নেত্রী খালেদা জিয়াকে সহকর্মীদের থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখাই বিএনপির পাঁচ নেতাকে গ্রেফতারের মুখ্য উদ্দেশ্য। নেতাকর্মীদের বিএনপির প্রধান কার্যালয়ে ঢুকতে দিচ্ছে না পুলিশ। অন্য নেতাদের বাড়িতে তল্লাশি চলছে। তাদের ধরপাকড় করে, নিদেন গ্রেফতার আতঙ্ক দিয়ে তাদের আত্মগোপন করে থাকতে বাধ্য করে আন্দোলন ও হরতালে বাধা দেয়াই সরকারের লক্ষ্য বলে মনে হয়। ও দিকে বেগম জিয়ার অফিস ও ভাড়া করা বাসা পুলিশ ও গোয়েন্দারা যেভাবে ঘিরে রেখেছে তাতে আবারো তাকে নির্বাসনে পাঠানোর কিংবা কারাবন্দী করার চেষ্টা হতে পারে। 
কিন্তু এ ধরনের চেষ্টা ২০০৭-০৮ সালে সফল হয়নি। বর্তমানেও হবে বলে আশা করা যাবে না। খালেদা জিয়ার উচিত হবে এখন থেকে নির্দেশ দিয়ে রাখা যে যদি তাকে গ্রেফতার করা হয় বা নির্দলীয় সরকারের অধীনে ছাড়া নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয় তা হলে স্থানীয় পর্যায়ের নেতারা অবিরাম হরতাল ও দেশ অবরোধ কর্মসূচি কার্যকর করবেন। দেশবাসীকে মনে রাখতে হবে যে, একাত্তরে শেখ মুজিব আপসে ধরা দিয়ে পাকিস্তানে চলে গিয়েছিলেন আর আওয়ামী লীগের গোটা নেতৃত্ব পালিয়ে গিয়েছিল ভারতে। কিন্তু আমাদের মুক্তিযুদ্ধ তাদের জন্য থেমে থাকেনি। বর্তমানেও চলছে একটি মুক্তিযুদ্ধ। বাংলাদেশের গণতন্ত্র-পাগল মানুষকে প্রয়োজন বোধে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সংগ্রাম করে ভারত-আওয়ামী লীগ ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দিতে হবে। (লন্ডন, ১৩.১১.১৩) 
ত্রুটি স্বীকার : গত শুক্রবার শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সম্বন্ধে প্রবন্ধে আর বেগম খালেদা জিয়ার একটি সাক্ষাৎকার প্রসঙ্গে অনবধানতাবশত ৭ নভেম্বরের স্থলে ৭ মার্চ লেখা হয়েছিল। কয়েকজন সহৃদয় পাঠক এ ত্রুটির দিকে আমার মনোযোগ আকর্ষণ করেছেন। আমি তাদের কাছে কৃতজ্ঞ। 


0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads