বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর, ২০১৩

১৫ নভেম্বর : আওয়ামী লীগের ভোট ডাকাতির কলঙ্কজনক দিন


১৫ নভেম্বর গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি কলঙ্কজনক দিন। ১৯৯৯ সালের এই দিনে জনতার রায় ছিনতাই করার ঘৃণ্য কাজে আওয়ামী লীগও যে কম পারদর্শী নয়, তা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়। ১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পর ভোটের আগে মানুষকে দেয়া প্রতিশ্রতিগুলোর কথা যেমন: কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য, জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাপ্য রাষ্ট্রীয় সম্মান এবং সম্মানী দেয়া, আধুনিক সার্বজনীন শিা এবং কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নেয়ার কথা স্মরণ করানোর কারণে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তমকে তীব্রভাবে তিরস্কার করেছিলেন তার দলীয় এবং সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ওয়াজেদ। পাগল-ছাগলহিসেবে গালাগাল করা হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের এই বীর সেনানীকে। 
সারা জীবন নিঃস্বার্থভাবে যে দলটার জন্য বঙ্গবীর কাজ করেছেন, মানুষের আপদে-বিপদে পাশে থেকেছেন; তিনি সেই দলের সম্মানজনক কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের পদ ছেড়ে দিলেন, ত্যাগ করলেন বহুজনের কাছে লোভনীয় লাভজনক সংসদ সদস্য পদ। তিনি বললেন, যে ভোটারেরা তাকে নির্বাচিত করে সংসদে পঠিয়েছেন, এ অপমান তাদের। সে জন্যই তিনি অপমানের প্রতিবাদে অবলীলায় সব কিছু ত্যাগ করে সাধারণ মানুষের কাতারে দাঁড়ালেন। সরকারদলীয় মনোনয়নের বিপে উপনির্বাচনে বঙ্গবীর মুক্তিযুদ্ধের সময় তার চারণভূমি সখিপুর-বাসাইলের ভোটারের কাছে তাদের অপমানের উচিত জবাব দেয়ার জন্য আবেদন জানালেন। অভাবনীয় সাড়া দিলো এ এলাকার বীর জনতা। 
সখিপুর-বাসাইলের বীর জনতা সরকারের ওয়াদা ভঙ্গের প্রতিবাদে একাট্টা হয়, জনতার প্রার্থী হিসেবে বঙ্গবীর ১৯৯৯ সালের ১৫ নভেম্বর উপনির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ হন। বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী নির্বাচন কমিশনের প্রতীক তালিকায় গামছাঅন্তর্ভুক্ত করতে সমর্থ হলেও প্রার্থিত প্রতীক গামছানা দিয়ে সরকারের ক্রীড়নক রিটার্নিং অফিসার বঙ্গবীরকে পিঁড়িপ্রতীক বরাদ্দের মাধ্যমে নির্মম রসিকতা করেন। কচি কচি শিশুরা নিজেরাই সে দিন ছড়া বানিয়েছিলÑ ‘শেখ হাসিনার শাড়ি ছিঁড়া, গামছা নিয়া দিছে ফিড়া। 
নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে সংশয়ে পড়ে যান বঙ্গবীর। ফুঁসে উঠে টাঙ্গাইলের বীর জনতা। মা-বোনেরাও দৃঢ়তার সাথে এই বীরের পাশে দাঁড়ান। তারা বলেন, ‘একাত্তরে আপনে আমাগো ইজ্জত বাঁচাইছেন, এইবার আমরা আপনার ইজ্জত বাঁচামু।বঙ্গবীর পিঁড়ি প্রতীক নিয়েই নির্বাচনে লড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। সাথে সাথে গোটা নির্বাচনী এলাকার দৃশ্য পাল্টে যায়। ঘরে ঘরে পিঁড়ি বানানোর ধুম পড়ে যায়। গোটা রাষ্ট্রযন্ত্র, ১০২ জন এমপি, ২৮ জন মন্ত্রী, সারা দেশ থেকে ভাড়া করা হাজার হাজার সন্ত্রাসী, জড়ো করে সরকার। মানুষ বলতে থাকে- সখিপুরের বেগুন সস্তা, তার চেয়েও সস্তা হাসিনা সরকারের মন্ত্রী। নানান মজার ঘটনা ঘটতে থাকে এলাকায়। এক প্রবীণ আওয়ামী লীগ কর্মীর বাড়িতে গিয়ে এক মহিলা মন্ত্রী বসার জন্য চেয়ার চাইলে সেই মন্ত্রীকে পিঁড়ি দেয়া হয় বসার জন্য। ভোটের দিন আকাম-কুকাম করতে গিয়ে অনেক জাঁদরেল মন্ত্রী, এমপি, নেতা বিুব্ধ জনতার রোষানলে পড়লেন। 
জেতার সম্ভাবনা না দেখে সরাসরি ডিজিটাল পদ্ধতিতে ঘোষণা দিয়ে নিজেদের বিজয়ডংকা বাজিয়েছিলেন সেই সরকার। মুক্তিযুদ্ধে যে এলাকার বীর জনতা পাকিস্তানি হানাদারদের বঙ্গবীরের নেতৃত্বে গোহারা হারিয়েছিল সেই এলাকার মানুষের পবিত্র গণতান্ত্রিক অধিকার তৎকালীন হাসিনা সরকার ডাকাতি করেছিল। সেই দিন মানুষ স্লোগান দিয়েছিল শেখ হাসিনা ভোট চোর, ধরা পড়ল সখিপুর।ন্যক্কারজনক এই ভোট ডাকাতির কারণে তখনকার প্রধান নির্বাচন কমিশনার আবু হেনা ফলাফলের গেজেট নোটিফিকেশন জারি করতে অস্বীকৃতি জানালেন। তখনকার সব পত্রপত্রিকায় এই নির্বাচনের ভোট ডাকাতির খবর প্রকাশিত হয়। প্রখ্যাত সাংবাদিক মতিউর রহমান চৌধুরী এই নির্বাচনকে ভোটের মৃত্যুহিসেবে অভিহিত করেছিলেন, লিখেছিলেন ফাতেমার মানত পূরণ হলো নাশিরোনামে এক সাড়াজাগানো মর্মস্পর্শী নিবন্ধ। 
সেই দল, সেই সরকার আবার গণতন্ত্রের দোহাই দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করে তাদের দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ল্েয গণমানুষের উৎকণ্ঠা উপো করে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে পবিত্র সংবিধানের সংশোধনী এনেছে। এত বছর পর আবারো সেই সরকার গোটা দেশকে সখিপুর বাসাইলের সেই কলঙ্কিত ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি করতে দলীয় সরকারের অধীনে ডাকাতির নির্বাচন করার অপতৎপরতায় লিপ্ত। 
বিএনপি শাসনামলে মাগুরা উপনির্বাচনের ভোটচুরিকে হার মানানো ১৯৯৯ সালের ১৫ নভেম্বর সখিপুর-বাসাইল উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভোট ডাকাতির ইতিহাস নানা কারণে তেমনভাবে আলোচনায় উঠে আসতে পারেনি; কিন্তু সখিপুর-বাসাইলের বীর জনতা প্রতি বছর এই দিনকে প্রচণ্ড বিােভ নিয়ে পালন করে প্রতিবাদ দিবস হিসেবে। ভোট ডাকাতির প্রতিবাদ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে এ বছর সখিপুর উপজেলা মাঠে আয়োজন করা হয়েছে বিশাল জনসভা। এ সভায় সভাপতিত্ব করবেন মহান মুক্তিযুদ্ধের কিংবদন্তি কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম। বক্তব্য রাখবেন দেশবরেণ্য ব্যক্তিবর্গ ও জাতীয় নেতৃবৃন্দ। বাংলাদেশে যেন আর কোনো দিন কোনো সরকার মাগুরা বা সখিপুর-বাসাইল উপনির্বাচনের মতো কলঙ্কজনক অধ্যায়ের পুনরাবৃত্তি না করতে পারে আওয়ামী লীগের ভোট ডাকাতির দিবসে এটাই সব গণতান্ত্রিক মানুষের কামনা। 


0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads