বর্তমান ক্ষমতাসীন জোটভুক্ত নয় Ñএমন রাজনৈতিক
দলের সংখ্যাই দেশে বেশি। তাদের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতাও সুদীর্ঘ। সরকারবিরোধী জোট ও
অন্যান্য বিরোধী দল সবাই কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে একমত। আবার সরকারি
জোটের একটি বড় শরিকও দৃশ্যত ওই দাবিতে সম্মত। এরকম একটি পরিস্থিতিতে দাবি আদায়ের
জন্য সংগ্রামের কর্মপন্থা নির্ধারণ এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ পদ্ধতির প্রতিটি পর্যায়ে
বিরোধী জোট নেতাদের বিচক্ষণতা যেমন গুরুত্বপূর্ণÑ
তদ্রƒপ সিদ্ধান্ত নিতে বিলম্ব করাও
ঝুঁকিপূর্ণ।
রাজনৈতিক সিদ্ধান্তপ্রণেতাদের অবশ্যই কঠোর ও বাস্তববাদী হতে হবে। অন্তত হীনম্মন্যতা দূর করতে অনুধাবন করা দরকার, একুশ শতকের রাষ্ট্রব্যবস্থা ও রাজনীতি চরম বাস্তববাদের (super realism) মধ্য দিয়েই পরিচালিত হচ্ছে।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে চরম বাস্তববাদের অন্যতম উদাহরণ হলোÑ বর্তমান ‘মেয়াদ উত্তীর্ণ’ প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং। ন্যূনতম সৌজন্যবোধ উপেক্ষা করে বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়াকে তার ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে বিতাড়িত করা হয়েছিল। শাপলা চত্বরের গণহত্যাকে উপহাস ও তাচ্ছিল্য করে দেয়া বক্তব্য চক্ষুলজ্জাকে কবর দিয়েছে।
এগুলো ক্ষমতার স্বার্থে বাস্তববাদের উদাহরণ। আরো অনেক নজির আছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে স্কাইপ সংলাপ উপেক্ষা করা রাজনৈতিক বাস্তবতাকে প্রমাণিত করেছে।
যা হোক, বিরোধী জোট নেতাদের বাস্তববাদী হওয়ার ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পণ্ডিতেরা বলেন, রাজনৈতিক বাস্তবতা (political realism) হলো একটি স্বার্থের ধারণা। কারণ স্বার্থই একমাত্র মাপকাঠি যার দ্বারা রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক ঘটনাবলির পার্থক্য নির্ণয় করা সম্ভব। নাগরিকসমাজে কিছু পক্ষপাতদুষ্ট সুশীল আছেন, যারা রাজনীতিবিদদের সিদ্ধান্তকে ও কর্মকাণ্ডকে ‘দলীয় হীনস্বার্থ’, ‘নিজ মতের অগ্রাধিকার’, ‘ব্যক্তিগত অভিপ্রায়’ ইত্যাদি আখ্যা দিয়ে খাটো করার চেষ্টায় লিপ্ত।
সঙ্কটকালে কর্মপন্থা নির্ধারণ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণকালে তাদের কথায় দ্বিধা করা কোনো দক্ষ, বিচক্ষণ রাজনীতিবিদের পরিচয় বহন করে না। দেশপ্রেমের প্রকৃত ধারায় যৌক্তিক এবং বাস্তবমুখী সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
গণতন্ত্র মূলত দলীয় স্বার্থই জাতীয় স্বার্থ। যে রাজনৈতিক দলের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ও কর্মকাণ্ড জাতীয় স্বার্থকে নস্যাৎ করে; রাষ্ট্রব্যবস্থাকে বহিঃশক্তি দ্বারা পরিচালিত করে, সেটি নিঃসন্দেহে জাতীয় স্বার্থের জন্য ভালো দল নয় Ñগ্রহণযোগ্যও নয়। আর যে রাজনৈতিক দল সাংগঠনিক উদ্দেশ্যকে জাতীয় স্বার্থের অনুকূলে দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবোধের ভিত্তিতে পরিচালিত করে, সেটি জাতির কাক্সিক্ষত। একজন রাজনীতিবিদের আচরণ, সামাজিক যোগাযোগ প্রক্রিয়া, দেশপ্রেম ও জনস্বার্থমুখিতা যেভাবে একটি দল বা সংগঠনের প্রতিচ্ছবি, তদ্রƒপ একটি দল বা সংগঠনও রাষ্ট্র ও জাতীয় স্বার্থের প্রতিচ্ছবি হওয়া উচিত।
দু’টি রাজনৈতিক জোট পরস্পরবিরোধী স্বার্থ নিয়ে একে অপরের সম্মুখীন অবস্থায় নিজ স্বার্থকে যতটুকু সম্ভব বেশি পূরণ করার জন্য একটি দল যে কর্মপন্থা গ্রহণ করবে, তা অনেকটাই নির্ভর করবে অপর দলটি অনুরূপভাবে তার স্বার্থসিদ্ধির জন্য যে কর্মপন্থা গ্রহণ করবে, তার ওপর।
বর্তমানে দেশে যে সঙ্কট দেখা যাচ্ছেÑ এতে রাজনীতিতে এ ধরনের দ্বান্দ্বিক পরিস্থিতিতে অতি পরিচিত। এরকম পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট দলগুলো নিজ নিজ স্বার্থকে সর্বাধিক মাত্রায় আদায় করার জন্য তার ব্যবহারযোগ্য বিকল্পগুলো থেকে সর্বোত্তম বিকল্পটি কর্মপন্থা হিসেবে মনোনীত করবে-সেটাই স্বাভাবিক। বর্তমানে বিরোধী জোটের সামনে কঠোর সংগ্রামই উত্তম বিকল্প বলে অনুভূত হচ্ছে। তবে সে ক্ষেত্রে এটাও লক্ষণীয়, আন্দোলনের কোন পর্যায়কে যেকোনোভাবেই তৃতীয় শক্তি দীর্ঘমেয়াদে ক্ষমতায় আরোহণের সিঁড়ি হিসেবে যাতে ব্যবহার করতে না পারে।
বর্তমানে বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি পক্ষ বহিঃশক্তি দ্বারা সুফল নিচ্ছে; অপরপক্ষ বা বিরোধী জোটও যদি মনে করে বহিঃশক্তিই তাকে মসনদে আসীন করবে, তবে ভুলও হতে পারে। বাংলাদেশ প্রসঙ্গে দিল্লি কী চিন্তা করে, তা স্পষ্ট। আর ওয়াশিংটন ‘উত্তম বিকল্প’ বেছে নেবে বলেই আপাত পর্যবেক্ষণে মনে হয়।
ওয়াশিংটন-দিল্লি দ্বিপক্ষীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় সংখ্যায় অনেক। ওই দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের মধ্যে বাংলাদেশ নামে এই ছোট্ট দেশটিও অন্তর্ভুক্ত। বাংলাদেশে ওয়াশিংটনের যে স্বার্থ আছে, তা আদায়ের জন্য দিল্লির সাথে সুসম্পর্কই যথেষ্ট। সে বিবেচনায় বর্তমান বিরোধী জোট ক্ষমতায় আরোহণের সিঁড়ি হিসেবে ওয়াশিংটনকে পরম বন্ধু ভাবার কোনো যৌক্তিক কারণ আছে বলে মনে হয় না। তবে কৌশলগত বন্ধু হতে পারে। দাবি আদায় করতে হলে নিজ পায়ে দাঁড়াতে হবে। তিন দিন হরতালে প্রতিচিত্র দেখে মনে হয়েছে নিজ পায়ে যথেষ্ট শক্তি আছে। সারা দেশে মজলুম-সংগ্রামপ্রিয় মানুষকে পরিকল্পিত ও পরিমিত নির্দেশনা দিলে এবং সময়োপযোগী বাস্তববাদী সিদ্ধান্ত নিলে অবশ্যই সুফল আশা করা যায়।
সিদ্ধান্তপ্রণেতাদের লক্ষ্য যেমন স্থির করতে হবে সেই সাথে মনে রাখা দরকার, একটি শোষিত সমাজের সংগ্রাম ও আন্দোলনের উজ্জীবনী শক্তিও নষ্ট হয়ে যায় বিভিন্ন কারণে। ক. কেন্দ্রীয় কর্তৃত্ব ও পরিকল্পনায় ভরসা না পাওয়া। খ. সিদ্ধান্ত ও কর্মসূচিতে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর মতের প্রতিফলন না পাওয়া। গ. প্রতিপক্ষের কর্মকাণ্ড প্রতিহত করতে না পারার হতাশা থেকে সৃষ্ট মনোবল হারানো।
রাজনীতির এই কঠিন মুহূর্তে বিরোধী জোটের সিদ্ধান্ত প্রণয়নকারী নেতৃবৃন্দ জাতির জন্য এখন এক ধরনের মুক্তির দূত। তা করতে না পারলে জাতি, জাতীয়তাবোধ, ধর্ম ও নৈতিকতা দীর্ঘমেয়াদে মহাবিপদে পড়বে।
দেখার বিষয় হলোÑ প্রধানমন্ত্রী তার অভিপ্রায় অনুযায়ী নির্বাচন করলে, অথবা যেকোনো উপায়ে পুনঃক্ষমতায় আরোহণ করলে দেশ দীর্ঘমেয়াদে অশান্তির দাবানলে পুড়বে, নাকি শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে। যদি অশান্তির সঙ্কেত সুস্পষ্ট হয়, তাহলে সব ক্ষুদ্র রাজনৈতিক দল, সুশীলসমাজ ও নাগরিকদের উচিত বৃহত্তর রাজনীতিতে তুলনামূলক ইতিবাচক পক্ষকে সমর্থন করা।
বিরোধী জোটভুক্ত রাজনীতিকদের ভুলে গেলে চলবে না, দ্বান্দ্বিক রাজনীতির পরিমণ্ডলে আশ্বাস দেয়া, অনুরোধ করা, দোষারোপ, রাজি হওয়া, আলোচনা, মতপ্রকাশ, অস্বীকার করা, দাবি জানানো, সতর্ক করা, ভীতি প্রদর্শন ও বল প্রয়োগ এসব কিছুই হতে হবে কৌশল ও কলাপূর্ণ। কিছু কিছু রাজনৈতিক সঙ্কটে দরকষাকষি কিংবা সঙ্ঘাতময় পরিস্থিতিতে ঠেলে দেয়ার ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে উভয় পক্ষেরই প্রচেষ্টা থাকে প্রতিপক্ষকে নতি স্বীকারে বাধ্য করা।
রাজনৈতিক সিদ্ধান্তপ্রণেতাদের অবশ্যই কঠোর ও বাস্তববাদী হতে হবে। অন্তত হীনম্মন্যতা দূর করতে অনুধাবন করা দরকার, একুশ শতকের রাষ্ট্রব্যবস্থা ও রাজনীতি চরম বাস্তববাদের (super realism) মধ্য দিয়েই পরিচালিত হচ্ছে।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে চরম বাস্তববাদের অন্যতম উদাহরণ হলোÑ বর্তমান ‘মেয়াদ উত্তীর্ণ’ প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং। ন্যূনতম সৌজন্যবোধ উপেক্ষা করে বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়াকে তার ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে বিতাড়িত করা হয়েছিল। শাপলা চত্বরের গণহত্যাকে উপহাস ও তাচ্ছিল্য করে দেয়া বক্তব্য চক্ষুলজ্জাকে কবর দিয়েছে।
এগুলো ক্ষমতার স্বার্থে বাস্তববাদের উদাহরণ। আরো অনেক নজির আছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে স্কাইপ সংলাপ উপেক্ষা করা রাজনৈতিক বাস্তবতাকে প্রমাণিত করেছে।
যা হোক, বিরোধী জোট নেতাদের বাস্তববাদী হওয়ার ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পণ্ডিতেরা বলেন, রাজনৈতিক বাস্তবতা (political realism) হলো একটি স্বার্থের ধারণা। কারণ স্বার্থই একমাত্র মাপকাঠি যার দ্বারা রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক ঘটনাবলির পার্থক্য নির্ণয় করা সম্ভব। নাগরিকসমাজে কিছু পক্ষপাতদুষ্ট সুশীল আছেন, যারা রাজনীতিবিদদের সিদ্ধান্তকে ও কর্মকাণ্ডকে ‘দলীয় হীনস্বার্থ’, ‘নিজ মতের অগ্রাধিকার’, ‘ব্যক্তিগত অভিপ্রায়’ ইত্যাদি আখ্যা দিয়ে খাটো করার চেষ্টায় লিপ্ত।
সঙ্কটকালে কর্মপন্থা নির্ধারণ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণকালে তাদের কথায় দ্বিধা করা কোনো দক্ষ, বিচক্ষণ রাজনীতিবিদের পরিচয় বহন করে না। দেশপ্রেমের প্রকৃত ধারায় যৌক্তিক এবং বাস্তবমুখী সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
গণতন্ত্র মূলত দলীয় স্বার্থই জাতীয় স্বার্থ। যে রাজনৈতিক দলের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ও কর্মকাণ্ড জাতীয় স্বার্থকে নস্যাৎ করে; রাষ্ট্রব্যবস্থাকে বহিঃশক্তি দ্বারা পরিচালিত করে, সেটি নিঃসন্দেহে জাতীয় স্বার্থের জন্য ভালো দল নয় Ñগ্রহণযোগ্যও নয়। আর যে রাজনৈতিক দল সাংগঠনিক উদ্দেশ্যকে জাতীয় স্বার্থের অনুকূলে দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবোধের ভিত্তিতে পরিচালিত করে, সেটি জাতির কাক্সিক্ষত। একজন রাজনীতিবিদের আচরণ, সামাজিক যোগাযোগ প্রক্রিয়া, দেশপ্রেম ও জনস্বার্থমুখিতা যেভাবে একটি দল বা সংগঠনের প্রতিচ্ছবি, তদ্রƒপ একটি দল বা সংগঠনও রাষ্ট্র ও জাতীয় স্বার্থের প্রতিচ্ছবি হওয়া উচিত।
দু’টি রাজনৈতিক জোট পরস্পরবিরোধী স্বার্থ নিয়ে একে অপরের সম্মুখীন অবস্থায় নিজ স্বার্থকে যতটুকু সম্ভব বেশি পূরণ করার জন্য একটি দল যে কর্মপন্থা গ্রহণ করবে, তা অনেকটাই নির্ভর করবে অপর দলটি অনুরূপভাবে তার স্বার্থসিদ্ধির জন্য যে কর্মপন্থা গ্রহণ করবে, তার ওপর।
বর্তমানে দেশে যে সঙ্কট দেখা যাচ্ছেÑ এতে রাজনীতিতে এ ধরনের দ্বান্দ্বিক পরিস্থিতিতে অতি পরিচিত। এরকম পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট দলগুলো নিজ নিজ স্বার্থকে সর্বাধিক মাত্রায় আদায় করার জন্য তার ব্যবহারযোগ্য বিকল্পগুলো থেকে সর্বোত্তম বিকল্পটি কর্মপন্থা হিসেবে মনোনীত করবে-সেটাই স্বাভাবিক। বর্তমানে বিরোধী জোটের সামনে কঠোর সংগ্রামই উত্তম বিকল্প বলে অনুভূত হচ্ছে। তবে সে ক্ষেত্রে এটাও লক্ষণীয়, আন্দোলনের কোন পর্যায়কে যেকোনোভাবেই তৃতীয় শক্তি দীর্ঘমেয়াদে ক্ষমতায় আরোহণের সিঁড়ি হিসেবে যাতে ব্যবহার করতে না পারে।
বর্তমানে বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি পক্ষ বহিঃশক্তি দ্বারা সুফল নিচ্ছে; অপরপক্ষ বা বিরোধী জোটও যদি মনে করে বহিঃশক্তিই তাকে মসনদে আসীন করবে, তবে ভুলও হতে পারে। বাংলাদেশ প্রসঙ্গে দিল্লি কী চিন্তা করে, তা স্পষ্ট। আর ওয়াশিংটন ‘উত্তম বিকল্প’ বেছে নেবে বলেই আপাত পর্যবেক্ষণে মনে হয়।
ওয়াশিংটন-দিল্লি দ্বিপক্ষীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় সংখ্যায় অনেক। ওই দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের মধ্যে বাংলাদেশ নামে এই ছোট্ট দেশটিও অন্তর্ভুক্ত। বাংলাদেশে ওয়াশিংটনের যে স্বার্থ আছে, তা আদায়ের জন্য দিল্লির সাথে সুসম্পর্কই যথেষ্ট। সে বিবেচনায় বর্তমান বিরোধী জোট ক্ষমতায় আরোহণের সিঁড়ি হিসেবে ওয়াশিংটনকে পরম বন্ধু ভাবার কোনো যৌক্তিক কারণ আছে বলে মনে হয় না। তবে কৌশলগত বন্ধু হতে পারে। দাবি আদায় করতে হলে নিজ পায়ে দাঁড়াতে হবে। তিন দিন হরতালে প্রতিচিত্র দেখে মনে হয়েছে নিজ পায়ে যথেষ্ট শক্তি আছে। সারা দেশে মজলুম-সংগ্রামপ্রিয় মানুষকে পরিকল্পিত ও পরিমিত নির্দেশনা দিলে এবং সময়োপযোগী বাস্তববাদী সিদ্ধান্ত নিলে অবশ্যই সুফল আশা করা যায়।
সিদ্ধান্তপ্রণেতাদের লক্ষ্য যেমন স্থির করতে হবে সেই সাথে মনে রাখা দরকার, একটি শোষিত সমাজের সংগ্রাম ও আন্দোলনের উজ্জীবনী শক্তিও নষ্ট হয়ে যায় বিভিন্ন কারণে। ক. কেন্দ্রীয় কর্তৃত্ব ও পরিকল্পনায় ভরসা না পাওয়া। খ. সিদ্ধান্ত ও কর্মসূচিতে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর মতের প্রতিফলন না পাওয়া। গ. প্রতিপক্ষের কর্মকাণ্ড প্রতিহত করতে না পারার হতাশা থেকে সৃষ্ট মনোবল হারানো।
রাজনীতির এই কঠিন মুহূর্তে বিরোধী জোটের সিদ্ধান্ত প্রণয়নকারী নেতৃবৃন্দ জাতির জন্য এখন এক ধরনের মুক্তির দূত। তা করতে না পারলে জাতি, জাতীয়তাবোধ, ধর্ম ও নৈতিকতা দীর্ঘমেয়াদে মহাবিপদে পড়বে।
দেখার বিষয় হলোÑ প্রধানমন্ত্রী তার অভিপ্রায় অনুযায়ী নির্বাচন করলে, অথবা যেকোনো উপায়ে পুনঃক্ষমতায় আরোহণ করলে দেশ দীর্ঘমেয়াদে অশান্তির দাবানলে পুড়বে, নাকি শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে। যদি অশান্তির সঙ্কেত সুস্পষ্ট হয়, তাহলে সব ক্ষুদ্র রাজনৈতিক দল, সুশীলসমাজ ও নাগরিকদের উচিত বৃহত্তর রাজনীতিতে তুলনামূলক ইতিবাচক পক্ষকে সমর্থন করা।
বিরোধী জোটভুক্ত রাজনীতিকদের ভুলে গেলে চলবে না, দ্বান্দ্বিক রাজনীতির পরিমণ্ডলে আশ্বাস দেয়া, অনুরোধ করা, দোষারোপ, রাজি হওয়া, আলোচনা, মতপ্রকাশ, অস্বীকার করা, দাবি জানানো, সতর্ক করা, ভীতি প্রদর্শন ও বল প্রয়োগ এসব কিছুই হতে হবে কৌশল ও কলাপূর্ণ। কিছু কিছু রাজনৈতিক সঙ্কটে দরকষাকষি কিংবা সঙ্ঘাতময় পরিস্থিতিতে ঠেলে দেয়ার ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে উভয় পক্ষেরই প্রচেষ্টা থাকে প্রতিপক্ষকে নতি স্বীকারে বাধ্য করা।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন