বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
গত পর্বে বাউল রশিদ বয়াতির কথা বলতে গিয়ে বিখ্যাত মমতাজ প্রসঙ্গ এসেছিল। তখন মমতাজ আজকের মতো ছিল না, বাসাইলের সুন্নাতে গিয়েছিল। সেখানে দর্শকেরা খুশি হয়ে তাকে চিরতরে ৫-৬ শ’ টাকা দিয়েছিল, আমিও দিয়েছিলাম এক হাজার। চিরতরে নিয়ে অনেক প্রশ্ন এসেছে। অনেক ফোন পেয়েছি। আসলে কেন জানি না আমার যেকোনো লেখাই পাঠকেরা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়ে। পছন্দ হলে যেমন খুশি হয়, বুঝতে না পারলে প্রশ্ন করে। পাঠকের আগ্রহ আমাকে আরো নিষ্ঠাবান করেছে। কোনো কিছু লিখতে গেলেই এখন দশ দিকে ভাবতে হয়। কিছু কিছু শব্দ প্রয়োগ করে নিজেই তা আবার অদলবদল করি। মনে হয় গ্রামের সোজাসাপটা কোনো শব্দ প্রয়োগ করেই আমি তো খালাস, কিন্তু পাঠক যদি বুঝতে না পারে, শব্দটা যদি তাদের পরিচিত না হয়? সেই কবে থেকে শুনে আসছি, এক দেশের বুলি আরেক দেশের গালি। চিরতরে কথাটিও তেমন হয়েছে। চিরতরে তা চিরজীবনই জানি। ধোপাকে কাপড়, ভিুককে পয়সা দাও দুই দেয়ার মধ্যে একটা সাময়িক আরেকটা চিরতরে। ধোপাকে মানুষ কাপড় দেয় পরিচ্ছন্ন পরিপাটি ফিরে পাওয়ার আশায়। ফকিরকে পয়সা দেয় চিরতরে। সেটা আর ফিরে পাওয়ার আশা করে না। তেমনি গায়ক, নায়ক কারো কলাকৌশলে মুগ্ধ হয়ে কেউ কিছু দিলে সেটাও চিরতরে দেয়। চিরতরে ব্যাপারটা আমার প্রথম নজরে আসে কিশোরগঞ্জের ইটনার জয়সিদ্ধিতে। ইটনার জনাব ফজলুর রহমান কৃষক শ্রমিক জনতালীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তাকে খুব বেশি দিন চিনতাম না। এ দেশে এখনো অনেক নেতা বেঁচে আছেন, যাদের ’৬০-৬২ সাল থেকে চিনি। ফজলুর রহমানের সাথে আমার প্রথম পরিচয় ’৮৮-৮৯ সালে। দীর্ঘ নির্বাসনের মাঝে অনেক চেষ্টা-তদবির করে আন্তর্জাতিক রিফিউজি কার্ড নিয়ে ’৮৯ সালে লন্ডনে গিয়েছিলাম। সেই সময় ঢাকা থেকে বড় ভাই লতিফ সিদ্দিকী ফজলুর রহমানকে নিয়ে গিয়েছিলেন। ’৭৫-এর পর ফজলুর রহমান জনাব তোফায়েল আহমেদের মতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলেন। জনাব তোফায়েল আহমেদ ’৬৬-৬৭ এর দিকে, ফজলুর রহমান ’৭৭-৭৮ সালে ছাত্রনেতা হিসেবে সারা দেশে যথেষ্ট নাম করেছিলেন। ফজলু-চ্ন্নুু, জালাল-জাহাঙ্গীর দুই ভাগ হয়েছিল ছাত্রলীগ। গায়কদের গান রাস্তাঘাটে বাজে, তেমন করে নেতাদের বক্তৃতার রেকর্ড বাজবে- এটা আমার কাছে খুব একটা রুচিকর মনে হয় না। কিন্তু ফজলুর রহমানের বক্তৃতার রেকর্ড এক সময় রাস্তাঘাটের মানুষ কান পেতে শুনত। প্রায় একই বক্তৃতা সব জায়গায় করায় একসময় আমার আর ভালো লাগত না। সেবার লন্ডনযাত্রায় সভানেত্রী শেখ হাসিনার সাথে দলের বেগম সাজেদা চৌধুরী গিয়েছিলেন।
আমি তখন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কার্যকরী পরিষদের এক নম্বর সদস্য। লতিফ ভাই এবং ফজলুর রহমান কিছুই না। কী এক হলে বিপুল জনসমাগমে সংবর্ধনার আয়োজন হয়েছিল। শুনেছি লন্ডনে ২০-৫০ জন হলেই বিরাট ব্যাপার। কিন্তু আমার সে সংবর্ধনায় লোক ধরার জায়গা ছিল না। বাঙালি বীর দেখতে বহু বাঙালি ভিড় করেছিল। মনে হয় দুই আড়াই হাজারের কম হবে না। সেই সভাতে বড় ভাই লতিফ সিদ্দিকী পরিবারের প থেকে বিশ্বমানবতার কল্যাণে আমাকে উৎসর্গ করেছিলেন। তার সেই বক্তৃতার ক্যাসেট এখনো আছে। সে দিনের সেই দোয়া আশীর্বাদ আর আজকের গালাগালে তাজ্জব না হয়ে পারি না। তোমার দলের নেতারা যখন যেমন তখন তেমন। সৈয়দ আশরাফ সেদিন মঞ্চের নিচে গুটি সুটি হয়ে বসেছিল। সেখান থেকে মঞ্চে তুলে নিয়ে বক্তৃতা করিয়েছিলাম। কত গুণবাচক বাক্য প্রয়োগ করেছিল সেদিন, আজ মনে হয় সবই ছাগলের নাদা। যাক, যে কারণে লন্ডন পর্যন্ত যাওয়া তা হলো ফজলুর রহমান। আগে একবার তিনি কিশোরগঞ্জের এমপি হিসেবে বর্ধমানে গিয়েছিলেন বলে মনে হয়। যদি তার সাথে বর্ধমানে দেখা হয়ে থাকে তাহলে লন্ডনে দ্বিতীয় দেখা। ’৯৬ সালে তিনি স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করেছিলেন। সাধ্যমতো আমরা সহযোগিতা করেছিলাম। কিন্তু সামান্য ভোটে হেরেছিলেন। তারপর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ থেকেও নির্বাচন করেছেন, জয়ী হতে পারেননি। আমি বারবার তার নির্বাচনী এলাকা ইটনা-মিঠামইন, অষ্টগ্রামের গ্রামে গ্রামে ঘুরে যে দুর্বলতা দেখেছি সেটা হলো, যারা তার জন্য কাজ করেন তিনি পরে আর তাদের সাথে যোগাযোগ রাখেন না। কেউ পা ভেজালে আমরা তার জন্য মাজা পানিতে নামি। নির্বাচন করতে গিয়ে ছোটখাটো ঠুকাঠুকিতে দু’চারজন মামলা-মোকদ্দমায় পড়লে তাদের যে খোঁজখবর নেয়া, মামলা-মোকদ্দমার দেখাশোনা করা, তা করেন না। আর ভদ্রলোক খুব একটা নিজের বুদ্ধিতে চলেন না, চলেন স্ত্রীর ধমকে এবং ভাইস্তাদের পরামর্শে। সে যাক, প্রত্যেকের নিজস্ব ঢঙ থাকে, সত্তা থাকে। তারও তেমন, তবে শুধু সাজানো মঞ্চে বক্তৃতা ছাড়া তাকে কোনো কাজে পাইনি। মাঝেসাজে এমনও হয়েছে আমার সাথে কোথাও গেলে তার খাওয়াদাওয়া, গাড়ির তেল, ফেরার পথে বউয়ের জন্য কাপড়, মিষ্টি যখন যেটা পেরেছি দেওয়ার চেষ্টা করেছি। যা সব সময় করি, সবার জন্য করি। কিন্তু তার বাড়িতেও জেনারেটরের তেল, বাজারঘাট, এদিক, ওদিক যাওয়ার স্যালো ভাড়া দিতে হয়েছে, তখন ভালো লাগেনি। কোনো কোনো সময় দেখেছি কয়েক দিন কাজ করে বিদায়ের সময় তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তার পরও কোনো রকম চলছিল। কিন্তু হঠাৎ ওয়ান-ইলেভেনের সময় কাউকে কিছু না বলে কিংস পার্টি হয়ে গেলেন। জনাব ফেরদৌস আহমেদ এক সময়ের খুবই ত্যাগী অতি প্রগতিবাদী নেতা ছিলেন। যে কারণে অনেকের সাথে তার মিলত না। তার পরও যথেষ্ট সম্মান করতাম। কিন্তু রাজনৈতিক কৃষ্টিসভ্যতা জলাঞ্জলি দিয়ে আমাদের সেক্রেটারিকে কিংস পার্টিতে নিয়ে নিলেন। কত জায়গায় আমাদের কত নিবেদিত কর্মীকে তার দলে নেয়ার টোপ ফেললেন। দু-একজন টোপে ধরাও দিলো। কেউ টোপ গিলল, কারো ঠোঁটে লাগতেই টোপ ছিঁড়ে গেল। আমার বহু পুরনো বিশ্বস্ত লোক অধ্যাপক শামসুল হুদা, যাকে ছাড়া স্বাধীনতা ’৭১ লিখতে পারতাম কি না বলা যায় না, সে পুরো টোপ গিলে লটকে গিয়েছিল। টাঙ্গাইল পৌরসভার চেয়ারম্যান মিরনের ভাই হিরণ কিংস পার্টি, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হয় হয় আর কি। বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদে যে বিশ্বজিৎ নন্দী ফাঁসির আদেশ মাথায় নিয়ে ১২-১৩ বছর ফাঁসির সেলে কাটিয়েছে, যার জন্য ব্যক্তিগতভাবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর কাছে ছোটাছুটি করেছি। বর্তমান মহামান্য রাষ্ট্রপতি শ্রী প্রণব মুখার্জি দিনরাত পরিশ্রম করেছেন। ব্রেজনেভের কাছে চিঠি লিখেছি, সেই বিশ্বজিৎ নন্দীকে এক খোট্টায় ধরাশায়ী করে কিংস পার্টিতে প্রায় নিয়ে নিয়েছিলেন। কিংস পার্টি বেশি দিন টেকেনি। ২০০৮ সালের নির্বাচনে জনাব ফজলুর রহমান চারদলীয় জোটের পল্টনে বেগম খালেদা জিয়ার সভায় মঞ্চে ওঠেন। বক্তৃতা করেন তার নতুন কমান্ডার বেগম খালেদা জিয়া। তেমন সুবিধা করতে পারেননি। সারাজীবন জিয়াউর রহমানের নামে গিল্লা গেয়ে একদিনে কী করে তার পে বলেন? স্বার্থান্ধ হয়ে বললেও জোর পাবেন কী করে? যুক্তি পাবেন কোথায়? কথায় কথায় মাঝে মধ্যে তোমার নাম এসে যাওয়ায় খুবই বিব্রত হতেন। যেমন আমাদের একজন প্রচারক শাহীন এক সময় জাতীয় পার্টি লাঙ্গলের প্রচার করতে গিয়ে কখনো সখনো গামছা বলে বিব্রত হতো, তেমনি জনাব ফজলুর রহমানও হয়েছেন। কত রঙঢঙে তোমার প্রশংসা করেছেন, নিজে দেখেছেন অন্যকে স্বপ্ন দেখিয়েছেন, সেই ফজলুর রহমান তোমাকে গালি দিয়ে জিয়াউর রহমানের পে বলেন। জানি না এখন কেমন বলেন, দল ত্যাগ করার পর বক্তৃতা শুনিনি। তবে ভদ্রলোক দোজখের আগুনে পড়েছেন। জাতীয় একটি দলের সাধারণ সম্পাদক থেকে প্রমোশন নিয়েছেন কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি। কিন্তু দলের নেতাকর্মীরা মেনে নেয়নি। কী করে মানবে? শিবির পরিবর্তন করলেই তো আদর্শগতভাবে এক দলের লোক অন্য দলের হয় না। তাই দ্বন্দ্ব চরমে। হয়তো তুমি মনে করবে এসব কথা কেন বলছি? কথা ছিল ৫-৬ শ’ টাকা চিরতরে। ঐ কথায় এসব এলো কেন? তোমাকে জানাতে ইচ্ছে করে তাই পাগলের মতো সব কিছু বলি। যেটা ভালো লাগবে সেটা মনে রাখবে, যেটা অপ্রয়োজন মনে হবে রাখবে না, মন থেকে মুছে ফেলবে। চিরতরে ৫-৬ শ’ টাকার ঘটনার উৎপত্তি ফজলুর রহমানের জয়সিদ্ধির বাড়িতে। জয়সিদ্ধি, সে এক বিখ্যাত জায়গা। ইটনা খুবই প্রসিদ্ধ এক জনপদ। আনন্দমোহন বসুর বাড়ি জয়সিদ্ধিতে, যিনি ময়মনসিংহ আনন্দমোহন কলেজের প্রতিষ্ঠাতা। ব্রিটিশ ভারতে সাত প্রিভি কাউন্সিল সদস্যের মধ্যে তিনি ছিলেন একজন। ভারতের রাজ্যসভার সদস্য ভুপেশ দাসগুপ্তও ইটনার মানুষ। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভুপেশ দাসগুপ্তের অবদান অবিস্মরণীয় ভোলার মতো নয়। এখনো তাকে মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা দেয়া হয়েছে কি না জানি না।
একবার আমরা প্রায় দুই সপ্তাহ ফজলুর রহমানের এলাকায় সফরে ছিলাম। অষ্টগ্রাম, মিঠামইন, ইটনার গ্রামে গ্রামে ঘুরছিলাম। আবদুল্লাহপুর, ঢাকি, কাটখাল, ঘাগরা, রায়টুটি, ইলংজুরী, আদমপুর, দামপাড়া, ধনপুর, মৃগা. পাঁচহাট এ রকম কত জায়গায় যে মিটিং করেছি তার কোনো শেষ নেই। সেই সফরে আমাদের সাথীসঙ্গীদের মধ্যে গান গাওয়ারাও ছিল। মাঝে মাঝেই এলাকার গায়কদের সাথে তাদের প্রতিযোগিতা হতো। মাঝে মধ্যে আমিও গান শুনতাম। একদিন খুব একটা ভালো গানের পর সখিপুরের আলী আজগর সাহেবের ছেলে ঘোষক আলমগীর সগর্বে ঘোষণা করল গাড়ির চালক হোসেন ছাব্বির আহমেদ বাবুর গানে সন্তুষ্ট হয়ে তাকে চিরতরে ১০০ টাকা দান করলেন। তার পরও গান চলেছিল, আমি ছিলাম না। পরদিন সকালে চিরতরে নিয়ে প্রশ্ন করতেই এক ছেলে বলল, কাকা, সেদিন বাবু ভাইকে ৪০০ টাকা দিয়েছিল। বাবু ভাই মনে করেছে সন্তুষ্ট হয়ে যারা টাকা দিয়েছে তারা আর চাইবে না বা ফেরত নেবে না। কিন্তু অন্যেরা যাতে উৎসাহী হয়ে টাকা দেয় সে জন্য যে হোসেন টাকা দিয়েছিল তা সে জানত না। আরো দু-একজন দিয়েছিল। তাতে ৪০০-সাড়ে ৪০০ হয়েছিল। তাই ঘুম থেকে উঠেই মহা আনন্দে তিন-সাড়ে তিন শ’ খরচ করে ফেলেছিল। একটু পরই হোসেন তার টাকা চায়, ফেরত চায় আরো তিন-চারজন। গান গেয়ে রাতে টাকা পেয়েছে সেই ফুর্তিতে সাড়ে তিন শ’ খাইয়ে ফেলেছে, এখন দুই-আড়াই শ’ ফেরত দিতে হয়। মাঝখানে নিজের পকেট থেকে তি। ওর পরই চিরতরের শুরু। যে যা দেবে চিরতরে দিতে হবে। ক্যানভাসারের ওষুধ বেচার মতো নিজেদের লোক দিয়ে অন্যের পকেট কাটা যাবে না। এটা প্রায় ১২-১৩ বছর আগের ঘটনা। এখন জানাশোনা প্রায় সব জায়গাতেই চিরতরে কথাটা চালু হয়ে গেছে।
মাঝখানে ৬০ ঘণ্টা এক মারাত্মক হরতাল পেরিয়ে এসেছি। হরতালের শুরুতে তোমার কন্যা এই প্রথম বিরোধী দলের নেত্রীর সাথে ৩৭ মিনিটের এক টেলিফোন আলাপ করেছেন। উভয় নেত্রীর সে আলাপ ভবিষ্যতে কোটি টাকার সিনেমা হবে। তুমি তো জানো না এখন ইলেকট্রনিক মিডিয়ার ছড়াছড়ি। চ্যানেল আইয়ের তৃতীয় মাত্রার জিল্লুর রহমান শুরু থেকেই রাজনৈতিক মোরগের লড়াইয়ের সূচনা করেছে, অন্যান্য চ্যানেলেও দুই বিপরীতমুখী রাজনৈতিক লোক বসিয়ে তাদের জনসমক্ষে খাটো করতে একে অপরকে লাগিয়ে দিয়ে তামাশা দেখে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং বিরোধী দলের নেত্রীর কথায় যুক্তি ছিল। কিন্তু যেভাবে কথা হয়েছে তা অত উঁচু মাপের নেতার মতো ছিল না। তবে তুমি যদি থাকতে তাহলে তোমার কন্যাকে কিছুতেই জয়ী করতে পারতে না। এত গলা করেন কিন্তু সেদিন বিরোধীদলীয় নেতার সাথে গলার জোর দেখাতে পারেননি। সামনে ভয়াবহ কঠিন সময়। কারো প্রতি কারো শ্রদ্ধা নেই, দেশবাসীর প্রতি কোনো মায়া মমতা নেই। তুমি দেশবাসীর জন্যে ফাঁসিতে ঝুলতে প্রস্তুত ছিলে। আর তোমার কন্যা মতার জন্য দেশ পুড়ে ছারখার করে দিচ্ছে। ৭ মার্চ তুমি বলেছিলে, ‘আমি প্রধানমন্ত্রীত্ব চাই না, আমি মানুষের অধিকার চাই।’ তোমার কন্যা মানুষের অধিকার চায় না। আজীবন প্রধানমন্ত্রী থাকতে চায়। কেউ না মানলেও আইয়ুব-ইয়াহিয়া-মোনায়েমের মতো থাকতে চায়। যে কারণে সঙ্ঘাত অনিবার্য। ৩১ অক্টোবর ইটিভিতে গিয়েছিলাম। পাশে ছিল আওয়ামী লীগের অ্যাডভোকেট শ. ম. রেজাউল করিম। আমাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে নাসরীন কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে যে সংগ্রাম পরিষদ হয়েছিল, তাতে একজন নিবেদিত নেতাকর্মী হিসেবে দারুণ ভূমিকা রেখেছিল। বেশ অভিজ্ঞ, সংবিধান সম্পর্কে জানাশোনা আওয়ামী ঘরানার লোক বললে বেশি বলা হবে না। পাশে বসে কিছুটা বিব্রত বোধ করছিল। স্বাভাবিকভাবে আমাদের ঘিরে যারা বড় হয়েছে, তারা এখনো সামনাসামনি অসম্ভব সম্মান করে। সে দিন রেজাউল করিমকেও এর ব্যতিক্রম দেখিনি। উপস্থাপক প্রথম প্রশ্ন করতে গিয়ে অজ্ঞতাবশত বলে ফেলেছিলেন, আপনারা তো ১৮ দলের সাথেই আছেন। তাহলে বর্তমান দুই নেত্রীর টেলিফোন সংলাপের পর আপনার মন্তব্য কী? তুমি তো জানো না আসলে এখন সবাই দলকানা। একটা ইলেকট্রনিক মিডিয়ার উপস্থাপক মনে হয় নিজেকে সম্রাটের চাইতে মতাবান মনে করেÑ তা না হলে অমন প্রশ্ন করবে কেন, আপনারা তো এখন ১৮ দলের সাথে। আমরা ১৮ দলের সাথে থাকলে সংখ্যা তো ১৯ হতোÑ এটা জেনেও ভদ্রলোক প্রশ্নটি করে বসেছিলেন। কারণ অনেকেই জামায়াতকে যেমন বিএনপির সাথে দিয়ে দিয়েছে, তারাও লুফে নিয়েছে। আমাদেরকেও ১৮ দল বা বিএনপির সাথে পাঠিয়ে দিতে পারলেই যেন বেঁচে যায়। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ নেই, আমরা নেই, ড. কামাল হোসেন নেইÑ আওয়ামী লীগের থাকে কী? তাই উত্তর দিতে গিয়ে বলেছিলাম, আমি ১৮ দলের সাথে গেলে মহাজোট সরকার তিন মাসও থাকত না। একেবারে শেষের দিকে অ্যাডভোকেট শ. ম. রেজাউল করিম তার শেষ মন্তব্যে বলেছিল, নেতা আমার গুরু যেমন বললেন ১৮ দল বা বিএনপির সাথে তিনি এবং তার মতো বলিষ্ঠ নেতারা গেলে মহাজোট টিকত না, তেমনি তারা আওয়ামী লীগে থাকলে আজকের অবস্থা হতো না। আমি তার কথা নিয়ে আর কোনো আলোচনা করিনি। মাপের ব্যাস-কমের কারণে রেজাউলও যেমন আমার কথার প্রতিবাদ করেনি, অন্য ব্যাখ্যা দিতে যায়নি। আমিও তার দু-একটি কথার সমর্থন ছাড়া কোনো ভুল ধরতে যাইনি। কিছু পণ্ডিত সব জায়গায় জামায়াতের কথা বলে চলেছে।
জামায়াত যদি সত্যিই অত শক্তিশালী হয় তাহলে ভবিষ্যৎ কোথায়? তোমার কবর দেয়া আওয়ামী নেতাদের কথা কেউ এখন বিশ্বাস করে না। তারা সত্য বললেও লোকজন সত্য বলে মানতে চায় না। এই আস্থার অভাব তোমার কন্যা আর পূরণ করতে পারবেন না। সব কিছু তার হাতছাড়া হয়ে গেছে। তোমার যেকোনো কথা বাংলার মানুষ যেমন জীবন দিয়ে বিশ্বাস করত, তেমনি তোমার কন্যার কথা কেউ বিশ্বাস করে না। তোমার কন্যা যতই চালাকি করুন জিয়াউর রহমানের স্ত্রী, বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াও অভিজ্ঞতার দিক থেকে কম নন। অনেকে হয়তো ভুলে গেছেন, তুমিও দেখোনি। এরশাদবিরোধী আন্দোলনের একপর্যায়ে বিরোধী দলের সাথে প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের বৈঠক হয়েছিল। সেই বৈঠকে পূর্ব বাংলার মুখ্যমন্ত্রী, প্রবীণ রাজনীতিক জনাব আতাউর রহমান খান প্রেসিডেন্টের সাথে থাকায় বেগম খালেদা জিয়া তাকে বেঈমান বিশ্বাসঘাতক বলে আলোচনা থেকে চলে এসেছিলেন। তখন বেগম খালেদা জিয়া অত অভিজ্ঞ ছিলেন না। রাজনীতিতে ছিলেন খুবই নবীন। তার পরও বিরোধী দলের সাথে আন্দোলন করতে করতে একপর্যায়ে আতাউর রহমান খান এরশাদের মন্ত্রিসভায় যোগ দিয়ে বিরোধীদের সাথে আলোচনায় সরকারি প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত দেখে চোখেমুখে জবাব দিয়েছিলেন। আতাউর রহমান খানের প্রবীণত্ব ও বয়সের কথা বিবেচনা করে আমি, তুমি হয়তো সরাসরি ওভাবে চলে আসতে পারতাম কি না সন্দেহের অবকাশ আছে। কিন্তু বেগম জিয়া তা পেরেছিলেন। বহু কাক্সিত ফোনালাপ হয়েছে, ৬০ ঘণ্টার হরতালও হয়েছে, এখন কী হবে আল্লাহই জানেন।
দেশের রাজনীতির কথা রাজনীতিবিদদের বলার সাধ্য নেই। তবে নতুন খবর আমেরিকার রাষ্ট্রদূত ভারতে গিয়েছিলেন। শুনছি চীনেও যাবেন। যে চীন কোনো দিন বাংলাদেশ নিয়ে ঔৎসুক্য দেখায়নি, বিশেষ করে নির্বাচন নিয়ে চীন কথা বলছে, জাপান বলেছে, জাতিসঙ্ঘের মহাসচিব বান কি মুন তো সেই কবে তার শঙ্কা ব্যক্ত করেছেন। এ রকম অবস্থায় দেশবাসী ভীষণ শঙ্কিত। গত তিন-চার দিন বাজারে কিছু পাওয়া যায়নি। দু’দিন ভর্তাভাত খেয়েছি। আমার ভর্তাভাত খাওয়ার অভ্যাস আছে। ছেলেবেলায় কতবার ফেনাভাত খেয়েছি, লাউপাতা ভর্তা খেয়েছি। কিন্তু কষ্ট হয় ছেলেমেয়ে নিয়ে। দীপ, কুঁড়ি না হয় একটু বড় হয়েছে কিন্তু আল্লাহর দান কুশিমণিটা গোশত ছাড়া খাবার মুখে তুলতে চায় না। এমনিতেই ওকে কিছু বলা যায় না, মন খারাপ করে, আমাদের খারাপ লাগে। এক দু-দিন ভালো করে খাবার না খেলে কেন যেন শুকনো মনে হয়। এমনিতেই বাজারে সব কিছু আগুন, গরিব মানুষের সে যে কী কষ্ট! দেখার কেউ নেই। ধীরে ধীরে অনুভূতি ভোঁতা হয়ে আসছে। ৬০ ঘণ্টা হরতালে ১৫-২০টা প্রাণ ঝরে গেল, সরকারের কোনো আকার-বিকার নেই। সমালোচনা হচ্ছে, বিরোধী দল ঘরে বসে শুধু হরতাল দিচ্ছে। জনসম্পৃক্ততা কই? হরতালের প্রতি আমারও সমর্থন নেই। কিন্তু রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড যেখানে প্রায় বন্ধ সেখানে রাজনৈতিক দল কি করবে? আজ বেগম খালেদা জিয়া যা করছেন, তোমার কন্যা বিরোধী দলে থাকলে এর চেয়ে কী কম করতেন? কোনোমতেই নয়। তাই তোমাকে করজোড় অনুরোধ করছি, আমার কথা শোনো, তোমার মেয়েকে পদত্যাগ করতে বলো। তার পদত্যাগ ছাড়া কোনো সমাধান নেই। যত আগে পদত্যাগ করবেন ততই তার সম্মান রা হবে। যত দেরি হবে তত হানি হবে।
গত পর্বে বাউল রশিদ বয়াতির কথা বলতে গিয়ে বিখ্যাত মমতাজ প্রসঙ্গ এসেছিল। তখন মমতাজ আজকের মতো ছিল না, বাসাইলের সুন্নাতে গিয়েছিল। সেখানে দর্শকেরা খুশি হয়ে তাকে চিরতরে ৫-৬ শ’ টাকা দিয়েছিল, আমিও দিয়েছিলাম এক হাজার। চিরতরে নিয়ে অনেক প্রশ্ন এসেছে। অনেক ফোন পেয়েছি। আসলে কেন জানি না আমার যেকোনো লেখাই পাঠকেরা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়ে। পছন্দ হলে যেমন খুশি হয়, বুঝতে না পারলে প্রশ্ন করে। পাঠকের আগ্রহ আমাকে আরো নিষ্ঠাবান করেছে। কোনো কিছু লিখতে গেলেই এখন দশ দিকে ভাবতে হয়। কিছু কিছু শব্দ প্রয়োগ করে নিজেই তা আবার অদলবদল করি। মনে হয় গ্রামের সোজাসাপটা কোনো শব্দ প্রয়োগ করেই আমি তো খালাস, কিন্তু পাঠক যদি বুঝতে না পারে, শব্দটা যদি তাদের পরিচিত না হয়? সেই কবে থেকে শুনে আসছি, এক দেশের বুলি আরেক দেশের গালি। চিরতরে কথাটিও তেমন হয়েছে। চিরতরে তা চিরজীবনই জানি। ধোপাকে কাপড়, ভিুককে পয়সা দাও দুই দেয়ার মধ্যে একটা সাময়িক আরেকটা চিরতরে। ধোপাকে মানুষ কাপড় দেয় পরিচ্ছন্ন পরিপাটি ফিরে পাওয়ার আশায়। ফকিরকে পয়সা দেয় চিরতরে। সেটা আর ফিরে পাওয়ার আশা করে না। তেমনি গায়ক, নায়ক কারো কলাকৌশলে মুগ্ধ হয়ে কেউ কিছু দিলে সেটাও চিরতরে দেয়। চিরতরে ব্যাপারটা আমার প্রথম নজরে আসে কিশোরগঞ্জের ইটনার জয়সিদ্ধিতে। ইটনার জনাব ফজলুর রহমান কৃষক শ্রমিক জনতালীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তাকে খুব বেশি দিন চিনতাম না। এ দেশে এখনো অনেক নেতা বেঁচে আছেন, যাদের ’৬০-৬২ সাল থেকে চিনি। ফজলুর রহমানের সাথে আমার প্রথম পরিচয় ’৮৮-৮৯ সালে। দীর্ঘ নির্বাসনের মাঝে অনেক চেষ্টা-তদবির করে আন্তর্জাতিক রিফিউজি কার্ড নিয়ে ’৮৯ সালে লন্ডনে গিয়েছিলাম। সেই সময় ঢাকা থেকে বড় ভাই লতিফ সিদ্দিকী ফজলুর রহমানকে নিয়ে গিয়েছিলেন। ’৭৫-এর পর ফজলুর রহমান জনাব তোফায়েল আহমেদের মতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলেন। জনাব তোফায়েল আহমেদ ’৬৬-৬৭ এর দিকে, ফজলুর রহমান ’৭৭-৭৮ সালে ছাত্রনেতা হিসেবে সারা দেশে যথেষ্ট নাম করেছিলেন। ফজলু-চ্ন্নুু, জালাল-জাহাঙ্গীর দুই ভাগ হয়েছিল ছাত্রলীগ। গায়কদের গান রাস্তাঘাটে বাজে, তেমন করে নেতাদের বক্তৃতার রেকর্ড বাজবে- এটা আমার কাছে খুব একটা রুচিকর মনে হয় না। কিন্তু ফজলুর রহমানের বক্তৃতার রেকর্ড এক সময় রাস্তাঘাটের মানুষ কান পেতে শুনত। প্রায় একই বক্তৃতা সব জায়গায় করায় একসময় আমার আর ভালো লাগত না। সেবার লন্ডনযাত্রায় সভানেত্রী শেখ হাসিনার সাথে দলের বেগম সাজেদা চৌধুরী গিয়েছিলেন।
আমি তখন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কার্যকরী পরিষদের এক নম্বর সদস্য। লতিফ ভাই এবং ফজলুর রহমান কিছুই না। কী এক হলে বিপুল জনসমাগমে সংবর্ধনার আয়োজন হয়েছিল। শুনেছি লন্ডনে ২০-৫০ জন হলেই বিরাট ব্যাপার। কিন্তু আমার সে সংবর্ধনায় লোক ধরার জায়গা ছিল না। বাঙালি বীর দেখতে বহু বাঙালি ভিড় করেছিল। মনে হয় দুই আড়াই হাজারের কম হবে না। সেই সভাতে বড় ভাই লতিফ সিদ্দিকী পরিবারের প থেকে বিশ্বমানবতার কল্যাণে আমাকে উৎসর্গ করেছিলেন। তার সেই বক্তৃতার ক্যাসেট এখনো আছে। সে দিনের সেই দোয়া আশীর্বাদ আর আজকের গালাগালে তাজ্জব না হয়ে পারি না। তোমার দলের নেতারা যখন যেমন তখন তেমন। সৈয়দ আশরাফ সেদিন মঞ্চের নিচে গুটি সুটি হয়ে বসেছিল। সেখান থেকে মঞ্চে তুলে নিয়ে বক্তৃতা করিয়েছিলাম। কত গুণবাচক বাক্য প্রয়োগ করেছিল সেদিন, আজ মনে হয় সবই ছাগলের নাদা। যাক, যে কারণে লন্ডন পর্যন্ত যাওয়া তা হলো ফজলুর রহমান। আগে একবার তিনি কিশোরগঞ্জের এমপি হিসেবে বর্ধমানে গিয়েছিলেন বলে মনে হয়। যদি তার সাথে বর্ধমানে দেখা হয়ে থাকে তাহলে লন্ডনে দ্বিতীয় দেখা। ’৯৬ সালে তিনি স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করেছিলেন। সাধ্যমতো আমরা সহযোগিতা করেছিলাম। কিন্তু সামান্য ভোটে হেরেছিলেন। তারপর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ থেকেও নির্বাচন করেছেন, জয়ী হতে পারেননি। আমি বারবার তার নির্বাচনী এলাকা ইটনা-মিঠামইন, অষ্টগ্রামের গ্রামে গ্রামে ঘুরে যে দুর্বলতা দেখেছি সেটা হলো, যারা তার জন্য কাজ করেন তিনি পরে আর তাদের সাথে যোগাযোগ রাখেন না। কেউ পা ভেজালে আমরা তার জন্য মাজা পানিতে নামি। নির্বাচন করতে গিয়ে ছোটখাটো ঠুকাঠুকিতে দু’চারজন মামলা-মোকদ্দমায় পড়লে তাদের যে খোঁজখবর নেয়া, মামলা-মোকদ্দমার দেখাশোনা করা, তা করেন না। আর ভদ্রলোক খুব একটা নিজের বুদ্ধিতে চলেন না, চলেন স্ত্রীর ধমকে এবং ভাইস্তাদের পরামর্শে। সে যাক, প্রত্যেকের নিজস্ব ঢঙ থাকে, সত্তা থাকে। তারও তেমন, তবে শুধু সাজানো মঞ্চে বক্তৃতা ছাড়া তাকে কোনো কাজে পাইনি। মাঝেসাজে এমনও হয়েছে আমার সাথে কোথাও গেলে তার খাওয়াদাওয়া, গাড়ির তেল, ফেরার পথে বউয়ের জন্য কাপড়, মিষ্টি যখন যেটা পেরেছি দেওয়ার চেষ্টা করেছি। যা সব সময় করি, সবার জন্য করি। কিন্তু তার বাড়িতেও জেনারেটরের তেল, বাজারঘাট, এদিক, ওদিক যাওয়ার স্যালো ভাড়া দিতে হয়েছে, তখন ভালো লাগেনি। কোনো কোনো সময় দেখেছি কয়েক দিন কাজ করে বিদায়ের সময় তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তার পরও কোনো রকম চলছিল। কিন্তু হঠাৎ ওয়ান-ইলেভেনের সময় কাউকে কিছু না বলে কিংস পার্টি হয়ে গেলেন। জনাব ফেরদৌস আহমেদ এক সময়ের খুবই ত্যাগী অতি প্রগতিবাদী নেতা ছিলেন। যে কারণে অনেকের সাথে তার মিলত না। তার পরও যথেষ্ট সম্মান করতাম। কিন্তু রাজনৈতিক কৃষ্টিসভ্যতা জলাঞ্জলি দিয়ে আমাদের সেক্রেটারিকে কিংস পার্টিতে নিয়ে নিলেন। কত জায়গায় আমাদের কত নিবেদিত কর্মীকে তার দলে নেয়ার টোপ ফেললেন। দু-একজন টোপে ধরাও দিলো। কেউ টোপ গিলল, কারো ঠোঁটে লাগতেই টোপ ছিঁড়ে গেল। আমার বহু পুরনো বিশ্বস্ত লোক অধ্যাপক শামসুল হুদা, যাকে ছাড়া স্বাধীনতা ’৭১ লিখতে পারতাম কি না বলা যায় না, সে পুরো টোপ গিলে লটকে গিয়েছিল। টাঙ্গাইল পৌরসভার চেয়ারম্যান মিরনের ভাই হিরণ কিংস পার্টি, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হয় হয় আর কি। বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদে যে বিশ্বজিৎ নন্দী ফাঁসির আদেশ মাথায় নিয়ে ১২-১৩ বছর ফাঁসির সেলে কাটিয়েছে, যার জন্য ব্যক্তিগতভাবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর কাছে ছোটাছুটি করেছি। বর্তমান মহামান্য রাষ্ট্রপতি শ্রী প্রণব মুখার্জি দিনরাত পরিশ্রম করেছেন। ব্রেজনেভের কাছে চিঠি লিখেছি, সেই বিশ্বজিৎ নন্দীকে এক খোট্টায় ধরাশায়ী করে কিংস পার্টিতে প্রায় নিয়ে নিয়েছিলেন। কিংস পার্টি বেশি দিন টেকেনি। ২০০৮ সালের নির্বাচনে জনাব ফজলুর রহমান চারদলীয় জোটের পল্টনে বেগম খালেদা জিয়ার সভায় মঞ্চে ওঠেন। বক্তৃতা করেন তার নতুন কমান্ডার বেগম খালেদা জিয়া। তেমন সুবিধা করতে পারেননি। সারাজীবন জিয়াউর রহমানের নামে গিল্লা গেয়ে একদিনে কী করে তার পে বলেন? স্বার্থান্ধ হয়ে বললেও জোর পাবেন কী করে? যুক্তি পাবেন কোথায়? কথায় কথায় মাঝে মধ্যে তোমার নাম এসে যাওয়ায় খুবই বিব্রত হতেন। যেমন আমাদের একজন প্রচারক শাহীন এক সময় জাতীয় পার্টি লাঙ্গলের প্রচার করতে গিয়ে কখনো সখনো গামছা বলে বিব্রত হতো, তেমনি জনাব ফজলুর রহমানও হয়েছেন। কত রঙঢঙে তোমার প্রশংসা করেছেন, নিজে দেখেছেন অন্যকে স্বপ্ন দেখিয়েছেন, সেই ফজলুর রহমান তোমাকে গালি দিয়ে জিয়াউর রহমানের পে বলেন। জানি না এখন কেমন বলেন, দল ত্যাগ করার পর বক্তৃতা শুনিনি। তবে ভদ্রলোক দোজখের আগুনে পড়েছেন। জাতীয় একটি দলের সাধারণ সম্পাদক থেকে প্রমোশন নিয়েছেন কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি। কিন্তু দলের নেতাকর্মীরা মেনে নেয়নি। কী করে মানবে? শিবির পরিবর্তন করলেই তো আদর্শগতভাবে এক দলের লোক অন্য দলের হয় না। তাই দ্বন্দ্ব চরমে। হয়তো তুমি মনে করবে এসব কথা কেন বলছি? কথা ছিল ৫-৬ শ’ টাকা চিরতরে। ঐ কথায় এসব এলো কেন? তোমাকে জানাতে ইচ্ছে করে তাই পাগলের মতো সব কিছু বলি। যেটা ভালো লাগবে সেটা মনে রাখবে, যেটা অপ্রয়োজন মনে হবে রাখবে না, মন থেকে মুছে ফেলবে। চিরতরে ৫-৬ শ’ টাকার ঘটনার উৎপত্তি ফজলুর রহমানের জয়সিদ্ধির বাড়িতে। জয়সিদ্ধি, সে এক বিখ্যাত জায়গা। ইটনা খুবই প্রসিদ্ধ এক জনপদ। আনন্দমোহন বসুর বাড়ি জয়সিদ্ধিতে, যিনি ময়মনসিংহ আনন্দমোহন কলেজের প্রতিষ্ঠাতা। ব্রিটিশ ভারতে সাত প্রিভি কাউন্সিল সদস্যের মধ্যে তিনি ছিলেন একজন। ভারতের রাজ্যসভার সদস্য ভুপেশ দাসগুপ্তও ইটনার মানুষ। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভুপেশ দাসগুপ্তের অবদান অবিস্মরণীয় ভোলার মতো নয়। এখনো তাকে মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা দেয়া হয়েছে কি না জানি না।
একবার আমরা প্রায় দুই সপ্তাহ ফজলুর রহমানের এলাকায় সফরে ছিলাম। অষ্টগ্রাম, মিঠামইন, ইটনার গ্রামে গ্রামে ঘুরছিলাম। আবদুল্লাহপুর, ঢাকি, কাটখাল, ঘাগরা, রায়টুটি, ইলংজুরী, আদমপুর, দামপাড়া, ধনপুর, মৃগা. পাঁচহাট এ রকম কত জায়গায় যে মিটিং করেছি তার কোনো শেষ নেই। সেই সফরে আমাদের সাথীসঙ্গীদের মধ্যে গান গাওয়ারাও ছিল। মাঝে মাঝেই এলাকার গায়কদের সাথে তাদের প্রতিযোগিতা হতো। মাঝে মধ্যে আমিও গান শুনতাম। একদিন খুব একটা ভালো গানের পর সখিপুরের আলী আজগর সাহেবের ছেলে ঘোষক আলমগীর সগর্বে ঘোষণা করল গাড়ির চালক হোসেন ছাব্বির আহমেদ বাবুর গানে সন্তুষ্ট হয়ে তাকে চিরতরে ১০০ টাকা দান করলেন। তার পরও গান চলেছিল, আমি ছিলাম না। পরদিন সকালে চিরতরে নিয়ে প্রশ্ন করতেই এক ছেলে বলল, কাকা, সেদিন বাবু ভাইকে ৪০০ টাকা দিয়েছিল। বাবু ভাই মনে করেছে সন্তুষ্ট হয়ে যারা টাকা দিয়েছে তারা আর চাইবে না বা ফেরত নেবে না। কিন্তু অন্যেরা যাতে উৎসাহী হয়ে টাকা দেয় সে জন্য যে হোসেন টাকা দিয়েছিল তা সে জানত না। আরো দু-একজন দিয়েছিল। তাতে ৪০০-সাড়ে ৪০০ হয়েছিল। তাই ঘুম থেকে উঠেই মহা আনন্দে তিন-সাড়ে তিন শ’ খরচ করে ফেলেছিল। একটু পরই হোসেন তার টাকা চায়, ফেরত চায় আরো তিন-চারজন। গান গেয়ে রাতে টাকা পেয়েছে সেই ফুর্তিতে সাড়ে তিন শ’ খাইয়ে ফেলেছে, এখন দুই-আড়াই শ’ ফেরত দিতে হয়। মাঝখানে নিজের পকেট থেকে তি। ওর পরই চিরতরের শুরু। যে যা দেবে চিরতরে দিতে হবে। ক্যানভাসারের ওষুধ বেচার মতো নিজেদের লোক দিয়ে অন্যের পকেট কাটা যাবে না। এটা প্রায় ১২-১৩ বছর আগের ঘটনা। এখন জানাশোনা প্রায় সব জায়গাতেই চিরতরে কথাটা চালু হয়ে গেছে।
মাঝখানে ৬০ ঘণ্টা এক মারাত্মক হরতাল পেরিয়ে এসেছি। হরতালের শুরুতে তোমার কন্যা এই প্রথম বিরোধী দলের নেত্রীর সাথে ৩৭ মিনিটের এক টেলিফোন আলাপ করেছেন। উভয় নেত্রীর সে আলাপ ভবিষ্যতে কোটি টাকার সিনেমা হবে। তুমি তো জানো না এখন ইলেকট্রনিক মিডিয়ার ছড়াছড়ি। চ্যানেল আইয়ের তৃতীয় মাত্রার জিল্লুর রহমান শুরু থেকেই রাজনৈতিক মোরগের লড়াইয়ের সূচনা করেছে, অন্যান্য চ্যানেলেও দুই বিপরীতমুখী রাজনৈতিক লোক বসিয়ে তাদের জনসমক্ষে খাটো করতে একে অপরকে লাগিয়ে দিয়ে তামাশা দেখে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং বিরোধী দলের নেত্রীর কথায় যুক্তি ছিল। কিন্তু যেভাবে কথা হয়েছে তা অত উঁচু মাপের নেতার মতো ছিল না। তবে তুমি যদি থাকতে তাহলে তোমার কন্যাকে কিছুতেই জয়ী করতে পারতে না। এত গলা করেন কিন্তু সেদিন বিরোধীদলীয় নেতার সাথে গলার জোর দেখাতে পারেননি। সামনে ভয়াবহ কঠিন সময়। কারো প্রতি কারো শ্রদ্ধা নেই, দেশবাসীর প্রতি কোনো মায়া মমতা নেই। তুমি দেশবাসীর জন্যে ফাঁসিতে ঝুলতে প্রস্তুত ছিলে। আর তোমার কন্যা মতার জন্য দেশ পুড়ে ছারখার করে দিচ্ছে। ৭ মার্চ তুমি বলেছিলে, ‘আমি প্রধানমন্ত্রীত্ব চাই না, আমি মানুষের অধিকার চাই।’ তোমার কন্যা মানুষের অধিকার চায় না। আজীবন প্রধানমন্ত্রী থাকতে চায়। কেউ না মানলেও আইয়ুব-ইয়াহিয়া-মোনায়েমের মতো থাকতে চায়। যে কারণে সঙ্ঘাত অনিবার্য। ৩১ অক্টোবর ইটিভিতে গিয়েছিলাম। পাশে ছিল আওয়ামী লীগের অ্যাডভোকেট শ. ম. রেজাউল করিম। আমাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে নাসরীন কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে যে সংগ্রাম পরিষদ হয়েছিল, তাতে একজন নিবেদিত নেতাকর্মী হিসেবে দারুণ ভূমিকা রেখেছিল। বেশ অভিজ্ঞ, সংবিধান সম্পর্কে জানাশোনা আওয়ামী ঘরানার লোক বললে বেশি বলা হবে না। পাশে বসে কিছুটা বিব্রত বোধ করছিল। স্বাভাবিকভাবে আমাদের ঘিরে যারা বড় হয়েছে, তারা এখনো সামনাসামনি অসম্ভব সম্মান করে। সে দিন রেজাউল করিমকেও এর ব্যতিক্রম দেখিনি। উপস্থাপক প্রথম প্রশ্ন করতে গিয়ে অজ্ঞতাবশত বলে ফেলেছিলেন, আপনারা তো ১৮ দলের সাথেই আছেন। তাহলে বর্তমান দুই নেত্রীর টেলিফোন সংলাপের পর আপনার মন্তব্য কী? তুমি তো জানো না আসলে এখন সবাই দলকানা। একটা ইলেকট্রনিক মিডিয়ার উপস্থাপক মনে হয় নিজেকে সম্রাটের চাইতে মতাবান মনে করেÑ তা না হলে অমন প্রশ্ন করবে কেন, আপনারা তো এখন ১৮ দলের সাথে। আমরা ১৮ দলের সাথে থাকলে সংখ্যা তো ১৯ হতোÑ এটা জেনেও ভদ্রলোক প্রশ্নটি করে বসেছিলেন। কারণ অনেকেই জামায়াতকে যেমন বিএনপির সাথে দিয়ে দিয়েছে, তারাও লুফে নিয়েছে। আমাদেরকেও ১৮ দল বা বিএনপির সাথে পাঠিয়ে দিতে পারলেই যেন বেঁচে যায়। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ নেই, আমরা নেই, ড. কামাল হোসেন নেইÑ আওয়ামী লীগের থাকে কী? তাই উত্তর দিতে গিয়ে বলেছিলাম, আমি ১৮ দলের সাথে গেলে মহাজোট সরকার তিন মাসও থাকত না। একেবারে শেষের দিকে অ্যাডভোকেট শ. ম. রেজাউল করিম তার শেষ মন্তব্যে বলেছিল, নেতা আমার গুরু যেমন বললেন ১৮ দল বা বিএনপির সাথে তিনি এবং তার মতো বলিষ্ঠ নেতারা গেলে মহাজোট টিকত না, তেমনি তারা আওয়ামী লীগে থাকলে আজকের অবস্থা হতো না। আমি তার কথা নিয়ে আর কোনো আলোচনা করিনি। মাপের ব্যাস-কমের কারণে রেজাউলও যেমন আমার কথার প্রতিবাদ করেনি, অন্য ব্যাখ্যা দিতে যায়নি। আমিও তার দু-একটি কথার সমর্থন ছাড়া কোনো ভুল ধরতে যাইনি। কিছু পণ্ডিত সব জায়গায় জামায়াতের কথা বলে চলেছে।
জামায়াত যদি সত্যিই অত শক্তিশালী হয় তাহলে ভবিষ্যৎ কোথায়? তোমার কবর দেয়া আওয়ামী নেতাদের কথা কেউ এখন বিশ্বাস করে না। তারা সত্য বললেও লোকজন সত্য বলে মানতে চায় না। এই আস্থার অভাব তোমার কন্যা আর পূরণ করতে পারবেন না। সব কিছু তার হাতছাড়া হয়ে গেছে। তোমার যেকোনো কথা বাংলার মানুষ যেমন জীবন দিয়ে বিশ্বাস করত, তেমনি তোমার কন্যার কথা কেউ বিশ্বাস করে না। তোমার কন্যা যতই চালাকি করুন জিয়াউর রহমানের স্ত্রী, বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াও অভিজ্ঞতার দিক থেকে কম নন। অনেকে হয়তো ভুলে গেছেন, তুমিও দেখোনি। এরশাদবিরোধী আন্দোলনের একপর্যায়ে বিরোধী দলের সাথে প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের বৈঠক হয়েছিল। সেই বৈঠকে পূর্ব বাংলার মুখ্যমন্ত্রী, প্রবীণ রাজনীতিক জনাব আতাউর রহমান খান প্রেসিডেন্টের সাথে থাকায় বেগম খালেদা জিয়া তাকে বেঈমান বিশ্বাসঘাতক বলে আলোচনা থেকে চলে এসেছিলেন। তখন বেগম খালেদা জিয়া অত অভিজ্ঞ ছিলেন না। রাজনীতিতে ছিলেন খুবই নবীন। তার পরও বিরোধী দলের সাথে আন্দোলন করতে করতে একপর্যায়ে আতাউর রহমান খান এরশাদের মন্ত্রিসভায় যোগ দিয়ে বিরোধীদের সাথে আলোচনায় সরকারি প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত দেখে চোখেমুখে জবাব দিয়েছিলেন। আতাউর রহমান খানের প্রবীণত্ব ও বয়সের কথা বিবেচনা করে আমি, তুমি হয়তো সরাসরি ওভাবে চলে আসতে পারতাম কি না সন্দেহের অবকাশ আছে। কিন্তু বেগম জিয়া তা পেরেছিলেন। বহু কাক্সিত ফোনালাপ হয়েছে, ৬০ ঘণ্টার হরতালও হয়েছে, এখন কী হবে আল্লাহই জানেন।
দেশের রাজনীতির কথা রাজনীতিবিদদের বলার সাধ্য নেই। তবে নতুন খবর আমেরিকার রাষ্ট্রদূত ভারতে গিয়েছিলেন। শুনছি চীনেও যাবেন। যে চীন কোনো দিন বাংলাদেশ নিয়ে ঔৎসুক্য দেখায়নি, বিশেষ করে নির্বাচন নিয়ে চীন কথা বলছে, জাপান বলেছে, জাতিসঙ্ঘের মহাসচিব বান কি মুন তো সেই কবে তার শঙ্কা ব্যক্ত করেছেন। এ রকম অবস্থায় দেশবাসী ভীষণ শঙ্কিত। গত তিন-চার দিন বাজারে কিছু পাওয়া যায়নি। দু’দিন ভর্তাভাত খেয়েছি। আমার ভর্তাভাত খাওয়ার অভ্যাস আছে। ছেলেবেলায় কতবার ফেনাভাত খেয়েছি, লাউপাতা ভর্তা খেয়েছি। কিন্তু কষ্ট হয় ছেলেমেয়ে নিয়ে। দীপ, কুঁড়ি না হয় একটু বড় হয়েছে কিন্তু আল্লাহর দান কুশিমণিটা গোশত ছাড়া খাবার মুখে তুলতে চায় না। এমনিতেই ওকে কিছু বলা যায় না, মন খারাপ করে, আমাদের খারাপ লাগে। এক দু-দিন ভালো করে খাবার না খেলে কেন যেন শুকনো মনে হয়। এমনিতেই বাজারে সব কিছু আগুন, গরিব মানুষের সে যে কী কষ্ট! দেখার কেউ নেই। ধীরে ধীরে অনুভূতি ভোঁতা হয়ে আসছে। ৬০ ঘণ্টা হরতালে ১৫-২০টা প্রাণ ঝরে গেল, সরকারের কোনো আকার-বিকার নেই। সমালোচনা হচ্ছে, বিরোধী দল ঘরে বসে শুধু হরতাল দিচ্ছে। জনসম্পৃক্ততা কই? হরতালের প্রতি আমারও সমর্থন নেই। কিন্তু রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড যেখানে প্রায় বন্ধ সেখানে রাজনৈতিক দল কি করবে? আজ বেগম খালেদা জিয়া যা করছেন, তোমার কন্যা বিরোধী দলে থাকলে এর চেয়ে কী কম করতেন? কোনোমতেই নয়। তাই তোমাকে করজোড় অনুরোধ করছি, আমার কথা শোনো, তোমার মেয়েকে পদত্যাগ করতে বলো। তার পদত্যাগ ছাড়া কোনো সমাধান নেই। যত আগে পদত্যাগ করবেন ততই তার সম্মান রা হবে। যত দেরি হবে তত হানি হবে।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন