শনিবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

বিতর্কিত নির্বাচন কমিশন ও আগামী নির্বাচন


বর্তমান নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই প্রধান নির্বাচন কমিশনার রকিব উদ্দীন আহমদ গণমাধ্যমের সাথে আলাপকালে বলেছেন, ‘সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনটা জনগণ মেনে নিয়েছে’ সংবিধানের যে সংশোধনী নিয়ে দেশে-বিদেশে তীর্যক বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে, আর এ সংশোধন প্রক্রিয়া নিয়ে সমালোচনার অন্ত নেই। এমনকি দেশের সকল বিরোধী দল এই সংশোধনীর বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে, সেখানে দেশের একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান হয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের এহেন গর্হিত মন্তব্য সচেতন মহলকে বেশ ভাবিয়েই তুলেছে এবং তার নিরপেক্ষতা ও গ্রহণযোগ্যতাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। মূলত বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ পুনর্গঠিত কমিশনের নিয়োগ স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় হয়নি। শামসুল হুদা কমিশনের মেয়াদ পূর্তিতে নির্বাচন কমিশনের পুনর্গঠনের জন্য প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানকে দিয়ে সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে একটি লোক দেখানো সংলাপের আয়োজন করেছিল। সে সংলাপে স্বয়ং বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া উপস্থিত হয়ে রাষ্ট্রপতি আয়োজিত সংলাপে কমিশন পুনর্গঠনে রাষ্ট্রপতিকে প্রয়োজনীয় এবং অতিমূল্যবান পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু রাষ্ট্রপতি রাজনৈতিক দলগুলোর কোন পরামর্শই আমলে নেয়নি বরং একটি বশংবদ সার্চ কমিটির মাধ্যমে একটি আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। আর সেটি হলো রকিব কমিশন। আর এ কমিশনের কাজই হলো সরকারের দলের দলীয় ইস্তেহার বাস্তবায়ন করা।
সংবিধানে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত কেয়ারটেকার সরকার পদ্ধতি বাতিল করা হয়েছে। সরকারি দলের অবস্থান হলো নির্বাচনকালীন সময়ে আর দলনিরপেক্ষ সরকারের প্রয়োজন নেই বরং নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন ও শক্তিশালী করার মাধ্যমে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব। কিন্তু সে পরীক্ষায় অবতীর্ণ হওয়ার আগেই কুপোকাত হয়েছে রকিব কমিশন। যেহেতু কেয়ারটেকার সরকারের পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থান একটি রাজনৈতিক ইস্যু তাই প্রধান নির্বাচন কমিশনার রকিব উদ্দীন ‘সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী জনগণ মেনে নিয়েছে’ বলে মন্তব্য করে প্রকারান্তরে নিজের নিরপেক্ষতা এবং স্বপদে বহাল থাকার অধিকার হারিয়েছেন বলেই মনে হচ্ছে। কিছু দিন আগে খবর বেড়িয়েছিল যে, রকিব কমিশন দলীয় সরকারের অধীনেই নির্বাচন অনুষ্ঠানের যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। এ সংবাদ প্রকাশের পর বর্তমান নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে সমালোচনা যখন তুঙ্গে, চামড়া বাঁচানোর জন্য কমিশনের পক্ষে বলা হয়েছে, ‘ দলীয় ও নির্দলীয় উভয় সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সার্বিক প্রস্তুতি কমিশনের রয়েছে’। যেখানে বিরোধী দলগুলো নির্দলীয় কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে রাজপথে দীর্ঘদিন আন্দোলন করে আসছে, সেখানে নির্বাচন কমিশন কোন বিবেচনায় দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের প্রস্তুতি গ্রহণ করলো তা কারো বোধগম্য নয়। তবে নির্বাচন কমিশন যে, সরকারি দলের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে চলেছে তা বোধ হয় সন্দেহাতীত ভাবেই বলা যায়। আর এর অকাট্য প্রমাণও রকিব কমিশন অনেক দিয়েছে।
জাতীয় নির্বাচনে সেনা মোতায়েন আমাদের দেশের অতি পুরনো ঐতিহ্য। আওয়ামী লীগ যে নির্বাচনের মাধ্যমে ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় এসেছে সে নির্বাচনেও সেনা মোতায়েন করা হয়েছিল। বিরোধী দল সংসদ নির্বাচনসহ প্রয়োজনবোধে সকল নির্বাচনেই সেনা মোতায়েনের পক্ষে। কিন্তু সরকারি দল বরাবরই এর বিপরীতে অবস্থান নিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যখন রাজনৈতিক সমাধান প্রয়োজন তখন আরপিও সংশোধনের সময় নির্বাচন কমিশন সরকারী দলের দিক নির্দেশনা মোতাবেক নির্বাচনকালীন সময়ে সেনা মোতায়েনের বিধান আরপিওতে সংযোজন করা হয়নি বরং এ বিষয়ে সরকারি দল যে ব্যাখ্যা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন সে রেকর্ডটা বাজিয়েছে মাত্র। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক জামায়াতের কয়েকজন শীর্ষ নেতা দ-িত হওয়ার সাথে সাথেই নির্বাচন কমিশন প্রজ্ঞাপন জারী করে দ-িত নেতাদের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দিয়েছে। অথচ সুপ্রিম কোর্টে তাদের দ-ের আপীল নিষ্পত্তির অপেক্ষায় আছে। সম্প্রতি মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগ জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করে আদেশ দিয়েছে। জামায়াতের পক্ষে আপীল বিভাগে স্থগিতাদেশ চেয়ে আবেদনও করা হয়েছিল। কিন্তু আপীল বিভাগে চেম্বার জজ তা খারিজ করে দিয়েছেন। এরপর নির্বাচন কমিশন বলছে জামায়াতের নিবন্ধন এখনও বহাল আছে। ঘ্যাচাং করে নাকি জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের সুযোগ নেই। নির্বাচন কমিশনের এ অবস্থান সংবিধান ও আইনের প্রতি সংগতিপূর্ণ। যেহেতু সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগে বিষয়টি নিষ্পত্তির অপেক্ষায় আছে তাই তা নিষ্পতি হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত জামায়াতের নিবন্ধের উপর হস্তক্ষেপ করার কোন সুযোগ নেই। কিন্তু আপীল নিষ্পত্তির আগেই ট্রাইব্যুনালে দ-িত জামায়াত নেতাদের ভোটাধিকার কোন আইনে বাতিল করা হলো এর সমুচিত জবাব কী রকিব সাহেবদের কাছে আছে? অভিজ্ঞমহল মনে করছে আগামী নির্বাচন থেকে জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের বঞ্চিত করতেই সরকারের নীলনকসা ও পরিকল্পনা অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন শীর্ষ নেতাদের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দিয়েছে। আর জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করলে বিরোধী দলের রাজনীতিতে যে নতুন মেরুকরণ হবে তাতে সরকারের আম-ছালা দু’ই যাবার আশংকায় সরকারের নির্দেশেই নির্বাচন কমিশন জামায়াতের নিবন্ধন বহাল রাখার কথা বলছে। মূলত সরকার বর্তমান নির্বাচন কমিশনকে দিয়ে দলীয় এজেন্ডায় বাস্তবায়ন করছে। আর আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন সরকারের আজ্ঞামত সব কিছুই করছে। একেই বলে স্বাধীন ও শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন?
সম্প্রতি খবর বেরিয়েছে যে, জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন কমিশন স্রোতের বিপরীতেই চলতে শুরু করেছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অনুপস্থিতিতে বিভিন্ন মহল থেকে ইসিকে শক্তিশালী করার কথা বলা হলেও বর্তমান কমিশন নিজের ক্ষমতাকে খর্ব করতে উঠেপড়ে লেগেছে বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। নির্বাচন কমিশন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) ৪১টি ধারার ৫৭টি সংশোধনী প্রস্তাব করে গত মাসে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। সম্পূরক হিসাবে প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষমতা (৯১-ই ধারা) বিলোপের প্রস্তাবও আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে। এই প্রস্তাবের সংগে বিরোধী দলের নেতারা দ্বিমত পোষণ করলেও ইসি তাদের অবস্থানে অনড়। নির্বাচন কমিশনের যুক্তি, যে আইন প্রয়োগযোগ্য নয়, তা রেখে কী লাভ? ইসি নিজের অবস্থানে পক্ষে আরও যুক্তি উপস্থাপনের চেষ্টা করছে।
বর্তমান নির্বাচন কমিশন ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে গুরুত্বপূর্ণ কাজের ক্ষেত্রে প্রচলিত নিয়ম মেনে চলেনি। সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্বিন্যাসের ক্ষেত্রে সংবিধানে ১১৯ অনুচ্ছেদে ইসিকে একক ক্ষমতা দেয়া হলেও কমিশন তা প্রয়োগ করেনি বরং তারা এ কাজটি করার আগে রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে পরামর্শ করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, একাজে কারো পরামর্শ নেয়ার প্রয়োজন ছিল না। অন্যদিকে আরপিও সংশোধনের এখতিয়ার সংসদের। আর এ সংক্রান্ত খসড়া আইন প্রণয়নের এখতিয়ার আইন মন্ত্রণালয়ের। এ বিষয়ে ইসির কোন ক্ষমতা না থাকা সত্ত্বেও এ কাজটি তারা এককভাবে করেছে এবং কমিশনকে দুর্বল করার প্রস্তাবও করা হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলো সংসদ নির্বাচনের প্রধান অংশীদার হলেও এ কাজটি করার আগে ইসি তাদের সাথে কোন আলোচনা বা পরামর্শ করেনি। পরামর্শ নেয়া হয়নি নাগরিক সমাজ বা বিশেষজ্ঞদেরও। আগের কমিশন এ ধরনের কাজ করার আগে রাজনৈতিক দল ও বিশেষজ্ঞদের সাথে পরামর্শ করেছিল। এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের দায়সারা গোছের ব্যাখ্যা হলো, আরপিও সংশোধনের যে প্রস্তুাব করা হয়েছে তা বাস্তবায়িত হলে কমিশন কী হারাবে, আর কী পাবে, সে বিষয়ে কয়েক দিনের মধ্যে আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা দেয়া হবে। ইসি মনে করে, কমিশন যে প্রস্তাব দিয়েছে তাতে ইসির ক্ষমতা খর্ব হবে না। তবে কমিশনের বক্তব্যের সাথে একমত হতে পারেননি সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ টি এম শামসুল হুদা চৌধুরী। তার মতে, কমিশন এখন যেখানে আছে, তার চেয়ে আরও বেশী শক্তিশালী করতে হবে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, কাজ হচ্ছে পুরোপুরি উল্টোটা। কমিশন নিজের ক্ষমতা ছেড়ে দিতে চাইছে। তার মতে, আরপিও সংশোধনের ব্যাপারে আর কারো সাথে না হলেও অন্তত রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে পরামর্শ করা উচিত। এ ক্ষেত্রে কমিশন আগের ধারাবাহিকতা রক্ষা করেনি। এভাবে চললে কমিশনের প্রতি মানুষের আস্থা ও বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট হবে। সে ক্ষেত্রে সুষ্ঠু নির্বাচন করা কঠিন হবে।
সরকার ২০১১ সালে সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বিলোপ করে। বিদ্যমান আইন অনুযায়ী দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে। এ প্রেক্ষাপটে সরকারি দল, বিরোধী দল এবং নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে ইসিকে শক্তিশালী করার পক্ষে কথা বলা হচ্ছে। বিরোধী দলগুলো কেয়ারটেকার সরকারের দাবিতে রাজপথে দীর্ঘদিন আন্দোলন করে আসছে। রাজনৈতিক দলগুলোর এই পরস্পর বিরোধী অবস্থানের সময় নির্বাচন কমিশনকে যেখানে দৃঢ়তা ও নিরপেক্ষতা দেখানো সময়ের দাবি ছিল সেখানে নিজেদের ক্ষমতা খর্বের প্রস্তুাব দেশের মানুষকে মোটেই আশান্বিত করেনি।
মূলত আরপিও ৯১-ই ধারায় আচরণবিধি লংঘনের দায়ে প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষমতা ইসির রয়েছে। বর্তমান কমিশন ধারাটি বাতিলের সুপারিশ চূড়ান্ত করেছে। ২০০৮ সালে এ ধারাটি আরপিও তে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর থেকে নির্বাচনী আচরণবিধি লংঘন এবং সহিংসতার মাত্রা অস্বাভাবিকভাবে কমে যায়। অভিজ্ঞমহলের ধারণা, ইসির প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষমতা বিলোপ করা হলে অতীতের মত নির্বাচনে আচরণবিধি লংঘনের ঘটনা বেড়ে যাবে, যা সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াবে। নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, আরপিও সংশোধনের বেশ কিছু প্রস্তাব সময়োপযোগী নয়। ১২ ধারায় বলা আছে, সরকারি বা আধা সরকারি প্রতিষ্ঠানের সার্বক্ষণিক কর্মকর্তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণের অযোগ্য হবেন। ইসির প্রস্তুাবে খ-কালীন কর্মকর্তাদেরও এর তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এতে যোগ্য প্রার্থীদের অনেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণের অযোগ্য হবেন। ২৬ ধারায় ব্যালট পেপারে সিলের সংগে কলম দিয়ে টিক চিহ্ন দেয়ার প্রস্তুাব করা হয়েছে। কিন্তু অভিজ্ঞমহল বলছেন, ভোটে টিক চিহ্নের বিধান মোটেই যুগোপযোগী নয়। কারণ, মানুষ সিল দিয়ে ভোট দিতে অভ্যস্ত। ২০০৮ সালের নির্বাচনে দলের তৃণমূল কমিটির তৈরি করা প্যানেল থেকে চূড়ান্ত প্রার্থী মনোনয়ন দেয়া বাধ্যতামূলক ছিল। বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে আইন থেকে ‘বাধ্যতামূলক’ শব্দটি বাদ দিয়ে তৃণমূল প্যানেলকে ‘বিবেচনায়’ নেয়ার বিধান চালু করে। যে কারণে বর্তমানের তৃণমূলের প্রার্থী প্যানেলটি অর্থহীন হয়ে পড়েছে। বিশেষজ্ঞ মহল যোগ্য প্রার্থীর সুবিধার্থে আগের বিধানটি ফিরিয়ে আনার প্রস্তাব করলেও কমিশন তা গ্রহণ করেনি।
কমিশন নির্বাচনী অপরাধের সাজা কমিয়ে আনার প্রস্তুাব করেছে। যেসব ক্ষেত্রে অপরাধের জন্য সাত বছরের কারাদ-ের বিধান আছে, ইসি তা কমিয়ে ৫ বছর করার প্রস্তাব করেছে। পাঁচ বছরের সাজাকে দু’ থেকে তিন বছরে কমিয়ে আনার প্রস্তাব করা হয়েছে। ফলে অধিকাংশ নির্বাচনী অপরাধ নির্বাহী হাকিম পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা যাবে। মোবাইল কোর্ট আইন অনুযায়ী, নির্বাহী হাকিমেরা নির্বাচনী অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ দু’ বছরের সাজা ও জরিমানা করতে পারবেন। কমিশন সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের মতে, প্রশাসনের দলীয়করণের সংস্কৃতিতে নির্বাহী হাকিমের কাছ থেকে নিরপেক্ষ ভূমিকা আশা করা যায় না। বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই তাদের ক্ষমতাসীন দলের হয়ে কাজ করার আশঙ্কা থাকে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রস্তাবিত আরপিও বাস্তবায়িত হলে গুরুতর অপরাধীরা লঘুদ- নিয়ে পার পেয়ে যেতে পারে। আরপিওর ৮১ ধারায় ভোট কেন্দ্র দখল, ব্যালট বাক্স ছিনতাইয়ের জন্য সর্বোচ্চ পাঁচ বছর এবং সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দ-ের প্রস্তাব করা হয়েছে। অর্থাৎ যেকোন ব্যক্তির ক্ষেত্রে এ ধরনের অপরাধ করে ন্যূনতম সাজা ও জরিমানা দিয়ে পার পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। বিদ্যমান আইনে এই অপরাধের সর্বোচ্চ সাত বছরের এবং সর্বনি¤œ তিন বছরের সাজা ও অর্থদ-ের বিধান রয়েছে। কমিশন আচরণবিধি সংশোধনের যে প্রস্তাব করেছে তাতে দলীয় প্রধান এবং মনোনীত ২০ জন নেতা/ব্যক্তির দেশব্যাপী নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে। অর্থাৎ দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে প্রধানমন্ত্রীসহ ২০ জন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী এ সুবিধা পাবেন। এতে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড হবে না বলেই মনে করা হচ্ছে। এ বিষয়ে সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম শাখাওয়াত হোসেনের মন্তব্য, ‘বর্তমান কমিশন করণীয় কাজ ফেলে উল্টোপথে চলছে। তাদের কর্মকা- সন্দেহজনক। তারা অপরাধের যে শাস্তির সুপারিশ করেছে, তাতে নির্বাচনী অপরাধ উৎসাহিত হবে বলেই মনে হয়’।
বর্তমান নির্বাচন কমিশন যেভাবে নির্বাচনের মাঠ সাজাচ্ছে তা পুরোপুরিই ক্ষমতাসীনদের পক্ষেই যাচ্ছে বলেই মনে হচ্ছে। মূলত রকিব কমিশন আওয়ামী লীগের দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নেই তৎপর রয়েছে বলেই সচেতন মহলের ধারণা। এ ব্যাপারে কমিশন আইন সংবিধানের কোন ধার ধারছে না বরং কমিশনের দলীয় মনোবৃত্তির কারণেই নতুন করে বিতর্কের জন্ম দেয়া হচ্ছে। গত কয়েকদিন আগে একটি বহুল প্রচারিত জাতীয় দৈনিকে মন্তব্য করা হয়েছে যে, বিরোধী দল যাতে নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে সে জন্য সরকারের পক্ষ থেকেই নানাবিধ বিতর্কের জন্ম দেয়া হচ্ছে। যাতে বিরোধী দল ছাড়া নির্বাচন করে এককভাবে ক্ষমতায় আসা যায়। যদি কোন কারণে নির্বাচন যদি না হতে পারে তাহলে তো বিদায়ী সরকারকে অনির্দিষ্ট কালের জন্য ক্ষমতায় থাকার সাংবিধানিক বিধান করে রাখা হয়েছে। সম্প্রতি আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা মোহাম্মদ নাসিম সে কথা প্রকাশ্যভাবেই বলেছেন। পরিবেশ ও বনমন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ বলেছেন, ‘গাধার মতো বিএনপি সবার আগে নির্বাচনে আসবে’। আসলে এ ধরনের অশালীন মন্তব্য করে মূলত বিরোধী দলকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। অভিজ্ঞমহল বর্তমান নির্বাচন কমিশনের বিতর্কিত কর্মকা-কে সরকারের সে পরিকল্পনারই ধারাবাহিকতা মনে করছেন। ফলে বর্তমান নির্বাচন কমিশন বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। যা কারো কাম্য নয়।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads