নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি প্রসঙ্গে ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে এমনভাবে প্রচারণা চালানো হচ্ছে যা শুনে মনে হতে পারে যেন এটা কেবলই বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামীসহ ১৮ দলীয় জোটের দাবি। অন্যদিকে দাবিটি জানাচ্ছে ছোট-বড় সব দলই। এমনকি বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার বিশিষ্টজনরাও বলে চলেছেন, নির্দলীয় সরকারের অধীনে না হলে সে নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে না। উদাহরণ দেয়ার জন্য গত ১৪ সেপ্টেম্বর রাজধানীতে অনুষ্ঠিত সুজনÑ সুশাসনের জন্য নাগরিক আয়োজিত সেমিনারে এবং গত ২৪ সেপ্টেম্বর বরিশালে অনুষ্ঠিত নাগরিক ঐক্যের সমাবেশে দেয়া কয়েকজন রাজনীতিকের বক্তব্য উল্লে¬খ করা যায়। দুটি অনুষ্ঠানেই অন্যদের মধ্যে বক্তৃতা করেছেন গণফোরামের সভাপতি ও দেশের প্রথম সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেন। এছাড়া বরিশালের সমাবেশে বিকল্প ধারার সভাপতি ও সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রফেসর বদরুদ্দোজা চৌধুরী এবং কৃষক-শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা কাদের সিদ্দিকী বক্তৃতা করেছেন। এদিকে সুজনের সেমিনারে বলেছেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা, সাবেক সচিব ও সাবেক নির্বাচন কমিশনারসহ বিশিষ্ট কয়েকজন। অনুষ্ঠান পৃথক হলেও সাধারণভাবে সবাই অভিন্ন ভাষায় ও সুরে বলেছেন এবং বর্তমান নবম জাতীয় সংসদ ভেঙে দেয়ার এবং নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানিয়েছেন। প্রথমে ড. কামাল হোসেনের বক্তব্য উল্লে¬খ করা যাক। তিনি বলেছেন, পঞ্চদশ সংশোধনীর জন্য জনগণের কোনো ম্যান্ডেট ছিল না। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী মেনিফেস্টোতেও বলা হয়নি যে, সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা হবে। কিন্তু তা সত্ত্বেও ক্ষমতাসীনরা সংবিধান সংশোধন করেছেন এবং সে সংবিধানের অধীনেই নির্বাচন করতে চাচ্ছেন। এমন অবস্থার কারণেই ড. কামাল হোসেন বলেছেন, জনগণের সঙ্গে এর চাইতে বড় বেঈমানী ও প্রতারণা আর কিছু হতে পারে না। বিরোধী দলের দাবি অনুযায়ী সংবিধান সংশোধনের আহ্বান জানিয়ে তিনি আরও বলেছেন, সংবিধান এমন কোনো বিষয় নয় যে, তা পরিবর্তন করা যাবে না। তাছাড়া পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে ৫০টির বেশি এমন অনুচ্ছেদ যুক্ত করা হয়েছে যেগুলো পরিবর্তনের যোগ্য নয়। একই কারণে এই সংবিধানও বাস্তবসম্মত নয়। কোনো কোনো বক্তা এমনকি সংবিধানকেই ছুঁড়ে ফেলতে চেয়েছেন।
অন্য নেতারাও একবাক্যে বলেছেন, বর্তমান সংসদ বহাল রেখে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হতে পারবে না। এজন্য সংসদ ভেঙে দেয়ার পরই নির্বাচন করতে হবে। শেখ হাসিনার দলীয় সরকারের অধীনে দেশে কোনো নির্বাচন হতে দেয়া হবে না। দেশের সিংহভাগ মানুষ যা চায় সরকারকে তাই মানতে হবে। জনগণ উন্নয়নের ফিরিস্তি শুনতে চায় না। দিনবদলের কথা বলে ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ শেয়ার কেলেঙ্কারি ও দুর্নীতি-লুটপাট করে নিজেদের ভাগ্যই কেবল বদল করেছে। ক্ষমতাসীনদের অবশ্যই জনতার কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হবে। বক্তারা আরও বলেছেন, ইচ্ছাকৃতভাবে রাজনৈতিক সংকট তৈরি করে পাতানো নির্বাচন কারো কাম্য নয়Ñ এই কথাটা প্রধানমন্ত্রীকে উপলব্ধি করতে হবে। জাতীয় নির্বাচন নিয়ে যে সংকট তৈরি করা হচ্ছে তার ফলে তৃতীয় শক্তির আবির্ভাব ঘটতে পারে বলেও তারা আশংকা প্রকাশ করেছেন। বলেছেন, দুই নেত্রীর এই রশি টানাটানির অবসান না ঘটলে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয় দলকেই জনগণ আপদ হিসেবে মনে করবে এবং তার ফলে দল দুটিকে দেশ থেকে বিদায় নিতে হতে পারে।
সরকারের পক্ষ থেকে একতরফা নির্বাচন অনুষ্ঠানের যে প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে সেটা সম্ভব হলে দেশ মারাত্মক সংকটের মধ্যে পড়বে বলে তারা সতর্ক করে দিয়েছেন। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী প্রসঙ্গে সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকের তীব্র সমালোচনা করে তারা বলেছেন, বিচারপতিদের রায় কখনো দ্ব্যর্থবোধক হয় না, হয় একার্থবোধক। কিন্তু ক্ষমতাসীনদের ইঙ্গিতে দ্ব্যর্থবোধক রায় দেয়ার মাধ্যমে খায়রুল হকই দেশের রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি করেছেন। তার লক্ষ্য ছিল সরকারকে সন্তুষ্ট করে নতুন কোনো চাকরি পাওয়া এবং আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া। তিনি চাকরিও পেয়েছেন, বিপুল পরিমাণ ত্রাণ ও নগদ অর্থ পেয়ে লাভবানও হয়েছেন। কিন্তু তার ওই রায়ের কারণে দেশ পড়েছে মারাত্মক রাজনৈতিক সংকটে। এজন্যই বক্তারা একদিকে সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিতে আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন, অন্যদিকে সর্বোচ্চ আদালতের মাননীয় বিচারপতিদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, তাদের উচিত সুয়োমোটো রুল দিয়ে সংকট কাটিয়ে ওঠার পদক্ষেপ নেয়া।
দুটি সমাবেশের বক্তারা আরো কিছু বিষয়ে বললেও রাজনৈতিক অঙ্গনে বিশেষ গুরুত্ব অর্জন করেছে তাদের সংবিধান ও নির্বাচন সংক্রান্ত বক্তব্যটুকু। বস্তুত, দুটি বিষয়েই তারা সঠিক বলেছেন। কারণ, সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর পর্যালোচনায় দেখা গেছে, খায়রুল হকের নেতৃত্বে দেয়া দ্ব্যর্থবোধক রায়ে পরবর্তী দুটি সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হতে পারে বলে অভিমত প্রকাশ করা হলেও ক্ষমতাসীনরা শুধু তাদের পছন্দের অংশটুকুই বেছে নিয়েছেন। রায়ের দোহাই দিয়ে তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাই বাতিল করে দিয়েছেন। শুধু তা-ই নয়, সংশোধিত সংবিধানের ব্যাখ্যাও তারা নিজেদের মনের মতো করেই প্রকাশ করে চলেছেন। যেমন সম্প্রতি সচিবদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক সভায় প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন, ১২ সেপ্টেম্বর থেকে চলমান অধিবেশনই হবে বর্তমান সংসদের শেষ অধিবেশন। এরপর আর কোনো অধিবেশন না বসলেও সংসদ বহাল থাকবে। অর্থাৎ এমপিরা এমপি পদে বহাল থেকেই নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন। দ্বিতীয় এক সিদ্ধান্তে প্রধানমন্ত্রী জানিয়ে রেখেছেন, নির্বাচনের সময় পর্যন্ত তো বটেই, নতুন সরকার দায়িত্ব না নেয়া পর্যন্তও তিনিই প্রধানমন্ত্রীর পদে বহাল থাকবেন। মন্ত্রিসভায় কারা থাকবেন সেটাও তার ইচ্ছার ওপরই নির্ভর করবে। ওদিকে অন্য ক্ষমতাসীনরাও যার-যার মতো করে ব্যাখ্যা হাজির করার প্রতিযোগিতায় নেমেছেন। তাদের এসব ব্যাখ্যা শুনে বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না যে, সংসদ নির্বাচনের প্রচারণা চালানোর সময় পুলিশ ও প্রশাসনকে তারা যথেচ্ছভাবেই ব্যবহার করবেন। এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনও তার আচরণবিধিতে পরিপূর্ণ স্বাধীনতা দিয়ে রেখেছে। ফলে নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে বলে যতো প্রচারণাই চালানো হোক না কেন বাস্তবে সেটা হবে সম্পূর্ণ একতরফা একটি একদলীয় নির্বাচন। মূলত অমন আশংকার ভিত্তিতেই ড. কামাল হোসেন, প্রফেসর বদরুদ্দোজা চৌধুরী এবং কাদের সিদ্দিকীসহ রাজনীতিক ও বিশিষ্টজনরা প্রথমে সংসদ ভেঙে দেয়ার এবং তারপর নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানিয়েছেন। দেশপ্রেমিক পর্যবেক্ষকরাও বিশিষ্টজনদের মূল কথাগুলোর সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে সরকারের উচিত শেষ অধিবেশন হিসেবে বর্ণিত সংসদের চলমান অধিবেশনেই সংবিধানে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা এবং নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিধান যুক্ত করা। এমন বিধানও যুক্ত করতে হবে যাতে সংসদ ভেঙে দেয়ার পরই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বলার অপেক্ষা রাখে না, গণতন্ত্রসম্মত এ পথটিতে যাওয়ার পরিবর্তে ক্ষমতাসীনরা যদি নিজেদের ইচ্ছাপূরণের চেষ্টা চালান তাহলে দেশে সংঘাত-সহিংসতা ছড়িয়ে পড়বে, যার পরিণতি কারও জন্যই শুভ হবে না।
পর্যবেক্ষকরা তাই সময় থাকতে উদ্যোগী হওয়ার জন্য ক্ষমতাসীনদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, যতো দল ও মহলের পক্ষ থেকেই আহ্বান জানানো হোক না কেন, ক্ষমতায় যেহেতু আওয়ামী লীগ রয়েছে সেহেতু শুভ বা সম্ভাবনাময় কিছুই আসলে আশা করা যায় না। এর প্রমাণও ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে পাওয়া যাচ্ছে। নিউইয়র্ক যাওয়ার প্রাক্কালে ১৭ আগস্ট সিলেটের গোলাপগঞ্জে অনুষ্ঠিত এক সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী বিরোধী দলের নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবি তো নাকচ করেছেনই, তিনি সেই সাথে যথারীতি আক্রমণাত্মক ও উস্কানিমূলক বক্তব্যও রেখেছেন। একদিকে নিজের নেতৃত্বে পরিকল্পিত সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিয়েছেন, অন্যদিকে শুনিয়েছেন রণহুংকার। বলেছেন, বেগম খালেদা জিয়া নাকি কথিত যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর জন্য আন্দোলন করছেন! কিন্তু আন্দোলন করে তিনি যেমন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করতে পারেননি, তেমনি ভবিষ্যতেও পারবেন না বলে ঘোষণা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় বাংলার মাটিতেই কার্যকর করা হবে। বিএনপি-জামায়াত আবারও ক্ষমতায় এলে দেশ নাকি জঙ্গিবাদে ভরে যাবে, নতুন নতুন ‘হাওয়া ভবন’ থেকে দুর্নীতি ও লুটপাট চালানো হবেÑ এ ধরনের অনেক কথা বলে জনগণকে ভয়ও দেখিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। মূল কথায় তিনি বলেছেন, তার ইচ্ছানুযায়ী সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং খালেদা জিয়া বা অন্য কেউই সে নির্বাচন বানচাল করতে পারবেন না।
বলার অপেক্ষা রাখে না, বিরোধী দলের পক্ষ থেকে যখন একের পর এক ছাড় দেয়া হচ্ছে এবং বিভিন্ন রাষ্ট্রের পাশাপাশি জাতিসংঘও যখন সংলাপের মাধ্যমে সমঝোতা প্রতিষ্ঠার এবং সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য তাগিদ দিয়ে চলেছে তেমন এক সময়ে প্রধানমন্ত্রীর এ ধরনের মনোভাব আর যা-ই হোক সমঝোতার জন্য মোটেও ইতিবাচক নয়। উল্লে¬খযোগ্য বিষয় হলো, প্রধানমন্ত্রী শুধু নন, আওয়ামী লীগের অন্য নেতারাও একই সুরে ও ভাষায় কথা বলে চলেছেন। ‘কালো বিড়াল’ নামে কুখ্যাত হয়ে ওঠা সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত থেকে দলের লন্ডনপ্রবাসী সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামসহ পর্যন্ত অন্য সকলেও সমঝোতার সম্ভাবনাকে নস্যাতই করে চলেছেন। যেমন গত ১১ সেপ্টেম্বর লন্ডনে একদলীয় অনুষ্ঠানে সৈয়দ আশরাফ বলেছেন, আগামী নির্বাচন শুধু একটি নির্বাচন নয়, একটি যুদ্ধ এবং সে যুদ্ধে আওয়ামী লীগকে অবশ্যই জিততে হবে। এদিকে দেশের ভেতরেও শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ও ‘শেষ যুদ্ধের’ ডাক দিয়েছেন। গত ১৬ ও ১৭ সেপ্টেম্বর ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইলের বিভিন্ন সমাবেশে তিনি ঘোষণা করেছেন, আগামী নির্বাচন হবে ‘একাত্তরের শেষ যুদ্ধ’। এই যুদ্ধে রাজাকারসহ স্বাধীনতাবিরোধীদের ‘শেষ’ করে ফেলা হবে।
শুনতে ফ্যাসিস্টসুলভ মনে হলেও এভাবেই সমঝোতার সব সম্ভাবনা নস্যাৎ করার প্রতিযোগিতায় নেমেছেন ক্ষমতাসীনরা। অন্যদিকে বিএনপির চেয়ারপারসন ও ১৮ দলীয় জোটের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কিন্তু এখনো, এত প্রত্যক্ষ উস্কানি ও হুমকির পরও সমঝোতা ও আলোচনার দরজা খোলাই রেখেছেন। নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবি আদায়ের জন্য পা বাড়িয়ে থাকা নেতা-কর্মীদের তিনি রাশ টেনে ধরে আছেন, জনগণের প্রতিও রাজপথে নেমে আসার জন্য তিনি আহ্বান জানাচ্ছেন না। তিনি বরং জাতীয় সংসদের চলমান অধিবেশনেই নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান যুক্ত করে সংবিধান সংশোধন করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বলেছেন, ক্ষমতাসীনরা রাজি হলে যে কোনো সময় তারা এ বিষয়ে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত রয়েছেন। আর যদি সংবিধান সংশোধন এবং নির্বাচনকালীন সরকারের বিধান যুক্ত না করা হয় তা হলেই প্রচ- আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি মানতে সরকারকে বাধ্য করা হবে বলে সতর্ক করেছেন তিনি।
বলা দরকার, মূলত ক্ষমতাসীনদের একগুঁয়েমির কারণেই রাজনৈতিক সংকট ঘনীভূত হয়ে উঠেছে এবং দেশ এগিয়ে চলেছে সংঘাতের দিকে। এমন অবস্থা অবশ্যই কাম্য হতে পারে না। ক্ষমতাসীনদের বরং সংকট কাটিয়ে ওঠার ব্যাপারেই বেশি উদ্যোগী হওয়া উচিত। এ ব্যাপারে বিরোধী দলের নেত্রী যথেষ্ট ছাড় দেয়া সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রীর মনোভাবে সামান্য পরিবর্তন হয়নি। তিনি বরং নির্বাচনকালীন সরকারের প্রশ্নে সংবিধান থেকে ‘এক চুল’ও নড়বেন না বলে ঘোষণা দিয়ে বসে আছেন। দেশপ্রেমিক পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, প্রধানমন্ত্রীর উচিত বেগম খালেদা জিয়ার আহ্বানে সাড়া দেয়া, সংঘাত এড়িয়ে দেশকে শান্তি ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেয়ার ব্যাপারে সদিচ্ছার প্রকাশ ঘটানো এবং সব দলের জন্য লেভেল প্লে¬য়িং ফিল্ড তৈরি করা। এজন্য নির্বাচনকালীন সরকারের বিধান যুক্ত করে তাকে অবশ্যই সংবিধান সংশোধন করতে হবে। তাকে একথাও বুঝতে হবে, বেগম খালেদা জিয়া এবং বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ ১৮ দলীয় জোট শুধু নয়, ড. কামাল হোসেন, প্রফেসর বদরুদ্দোজা চৌধুরী এবং কাদের সিদ্দিকীসহ রাজনীতিক ও বিশিষ্টজনরাও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের একই দাবিতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন। তারাও সংবিধানে সংশোধনী আনার দাবি জানাচ্ছেন। ফলে সব মিলিয়েই দাবিগুলো জাতীয় দাবিতে পরিণত হয়েছে। ওদিকে জাতিসংঘ মহাসচিব এবং মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং তাদের আগে-পরে চীন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন দেশও নির্বাচনকালীন সরকারের ব্যাপারে সমঝোতার আহ্বান জানিয়ে চলেছে। সুতরাং প্রধানমন্ত্রী এবং তার সঙ্গী-সাথীরা চাইলেই একতরফা নির্বাচন করতে পারবেন না। পারলেও সে নির্বাচন ্তার মধ্য দিয়ে গঠিত কোনো সরকার দেশে ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গ্রহণযোগ্যতা পাবে না। এজন্যই সময় একেবারে পেরিয়ে যাওয়ার আগে প্রধানমন্ত্রীর উচিত সকলের দাবি ও আহ্বান অনুযায়ী পদক্ষেপ নেয়া। নাহলে পরিণতি তাদের জন্য শুভ হবে নাÑ যে কথাটা ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে সবাই বলে চলেছেন।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন