যতই দিন যাচ্ছে বাংলাদেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক সঙ্কট আর মতপার্থক্যও ততই বাড়ছে। সরকারের শেষ সময়কালে আবারও স্পষ্ট এবং তীব্র হয়েছে অচলাবস্থার বিষয়টি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদ ও মন্ত্রিসভা রেখেই আগামী নির্বাচনের যে পরিকল্পনা প্রকাশ করেছেন তা সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দল। এতে আগামী নির্বাচন কিভাবে অনুষ্ঠিত হবে, সে সম্পর্কে ঐকমত্যের সমস্যা ও অস্পষ্টতা থেকেই যাচ্ছে। নিকট ভবিষ্যতের রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিয়ে দেশে-বিদেশে বিরাজমান আশঙ্কারও সুরাহা তো হচ্ছেই না, বরং সেটা আরও প্রবল আকার ধারণ করেছে। ফলে জনমত ও শাসনতান্ত্রিক দিক বিবেচনা করে গ্রহণযোগ্য ও বৈধতাসম্পন্ন জাতীয় নির্বাচনের রূপরেখার ভিত্তিতে রাজনৈতিক সমঝোতার প্রয়োজনীয়তা এখন বাংলাদেশের সামনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই বিষয়টিকে ঘিরেই এখন চলছে দেশ-বিদেশে আলোচনা। জনমনেও সামনের নির্বাচনের নানা দিক তীব্রভাবে আলোচিত হচ্ছে। মোট কথা, সরকার যা-ই বলুক বা করতে চাক না কেন, সকলেই চাইছে, একটি গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক জাতীয় নির্বাচনÑযার মাধ্যমে নিয়মতান্ত্রিক ও শাসনতান্ত্রিকভাবে ক্ষমতার শান্তিপূর্ণ পালাবদল ঘটিয়ে প্রকৃত জনপ্রতিনিধিদের শাসন নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
পত্রিকান্তরে প্রকাশ, বর্তমান সরকারের ষষ্ঠ ও শেষ সচিব সভায় প্রদত্ত শাসনতান্ত্রিক ও রাজনৈতিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের বিষয়ে দল বা সরকারের পক্ষ থেকে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেয়ার বদলে আমলাতান্ত্রিক স্তরের শীর্ষব্যক্তি মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূঁইঞা সভা শেষে জানান, প্রধানমন্ত্রী স্পষ্টতই বলেছেন সংবিধান অনুযায়ী ২৭ অক্টোবর থেকে ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত পার্লামেন্ট থাকবে। তবে সংসদের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার ৯০ দিন আগে ওই সময়ের মধ্যে কোনো অধিবেশন বসবে না। তাই সংসদ থেকেও না থাকার মতো অবস্থা। অন্যদিকে নির্বাহী বিভাগে মন্ত্রিসভা থাকবে কিন্তু এ সময় মন্ত্রিসভা কোনো গুরুত্বপূর্ণ নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে না। সভায় প্রধানমন্ত্রী সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার দেশগুলোতে ক্ষমতার পালাবদল কিভাবে হয় ওই বিষয়টি সচিবগণকে দেখার জন্য তাগিদ দিয়েছেন।
তত্ত্বগতভাবে এটা ঠিক যে, বহু উন্নত ও আদর্শ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাসমূহে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা নেই। কিন্তু বাংলাদেশের পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। এখানে সরকারি দলকে বিরোধী দল বিশ্বাস করে না। ক্ষমতাসীনদের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনও বিশ্বাসযোগ্যতা লাভ করে না। অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতায় সাধারণভাবে সন্দেহ করা হয়, যে দল ক্ষমতায় থাকবে, তারাই নির্বাচনকে প্রভাবিত করে বিজয়ী হবে। এ কারণেই বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার উদ্ভব হয়। বিরোধী দল কোনো পরিস্থিতিতেই নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার অধীনে ছাড়া নির্বাচন মেনে নিতে চাইছে না। ভবিষ্যৎ নির্বাচন, ক্ষমতার গণতান্ত্রিক পালাবদল, সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা অবিকৃত ও গণতান্ত্রিকভাবে বজায় রাখা ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে সরকার ও বিরোধী দল স্পষ্টতই দুই পথে হাঁটছে। যদি সরকার তার প্রস্তাবিত পদ্ধতির ব্যাপারে দেশে-বিদেশে আস্থা ও সমর্থন আদায় করতে পারে, তাহলে এক ধরনের সমাধানের আশা করা যায়। এজন্য তাদেরকে বিরোধী দলকে নির্বাচনে অংশগ্রহণে রাজি করাতে হবে। অন্যদিকে বিরোধী দলকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের যৌক্তিকতা ও প্রয়োজনীয়তা দেশে-বিদেশে প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে সরকারকেও এই পদ্ধতি মানতে বাধ্য করতে হবে। অর্থাৎ সরকার ও বিরোধীদের মধ্যে কোনো একটি পক্ষকে নিজস্ব রাজনৈতিক পরিকল্পনা অনুযায়ী পরিস্থিতিকে সামাল দেয়ার ক্ষমতা দেখিয়ে টিকে থাকতে হবে অথবা উভয়কেই পৃথকধর্মী গতিপথ থেকে সরে কোনো একটি ঐক্যের জায়গায় সমঝোতার মাধ্যমে মিলিত হতে হবে। নচেৎ একদিকে অচলাবস্থা আরও ঘনীভূত হয়ে সঙ্কট ও সংঘাতে রূপ নিতে পারে এবং অন্যদিকে ভবিষ্যৎ নির্বাচনের ব্যাপারে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়ে শাসনের ধারাবাহিকতাকে ক্ষুণœ করতে পারে। এসব ব্যাপারে সঙ্কটমোচনে একমাত্র পথ আলোচনা, সংলাপ ও সমঝোতা, যে ব্যাপারে দেশ-বিদেশের নানা পক্ষ অব্যাহত তাগিদ দিয়ে চলেছে। কিন্তু রাজনৈতিক অঙ্গনের সমঝোতার পরিবেশ এখনও পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে নাÑভবিষ্যতেও দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। কেউই আশাবাদের সম্মিলিত বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে পারছেন না। ফলে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের নিকট-ভবিষ্যতের রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে ‘আশঙ্কা ও উৎকণ্ঠা’ই প্রধান কথা হয়ে আছে। মনে হচ্ছে, সমাধান নয়, আশঙ্কা ও উৎকণ্ঠাই যেন বিরাজমান রাজনৈতিক সঙ্কটের শেষ কথা! এই আশঙ্কা সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বিশিষ্টজনের মধ্যেও সঞ্চারিত হচ্ছে। উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য এবং বিরোধী দলের পাল্টা অবস্থানে নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা বাড়বে বলে মনে করছেন বিশিষ্টজনরা। সাংবিধানিক বিষয় নিয়ে বিতর্ক চললেও এর রাজনৈতিক সমাধান খুঁজে বের করার তাগিদ দিয়েছেন আইন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেছেন, পরিস্থিতি এখন ক্রমে সংঘাতের দিকে যাচ্ছে। বড় দুই দলের মধ্যে সমঝোতা না হলে সঙ্কট আরও ঘনীভূত হবে। তারা জানিয়েছেন, আইনের দিক দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বা সরকার অবস্থান নিলেও বিরোধী দল তাতে আস্থা রাখবে না। এক্ষেত্রে দুই পক্ষকেই সমঝোতার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। এ বিষয়ে প্রয়োজনে সব রাজনৈতিক দল ও পক্ষের সংলাপ হতে পারে বলেও মত দিয়েছেন বিশিষ্টজনরা।
গত সোমবার সরকারের মেয়াদের শেষ সচিব সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সচিবদের জানান, সংবিধান অনুযায়ী আগামী ২৭ অক্টোবর থেকে ২৪ জানুয়ারির মধ্যে। এই সময়ে বর্তমান সংসদ বহাল থাকলেও এর অধিবেশন বসবে না। মন্ত্রিসভা থাকবে তবে গুরুত্বপূর্ণ কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না। প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্যের বিষয়ে গতকাল এক প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী এ অবস্থান তুলে ধরে সমঝোতার সব পথ বন্ধ করে দিয়েছেন। সচিব সভায় প্রধানমন্ত্রীর তুলে ধরা নির্বাচন পরিকল্পনা ও বিরোধী দলের প্রতিক্রিয়ার বিষয়ে প্রবীণ আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল হক বলেন, আইনের দিক থেকে প্রধানমন্ত্রী হয়তো ঠিক বলেছেন। কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে তিনি কোন কথা না বলায় সংঘাত থেকেই গেল। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে সঙ্কট সমাধানের কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি। সঙ্কটের সমাধান না হলে সংঘাত আরও বাড়বে। তিনি বলেন, সংসদ বহাল রেখে নির্বাচন হলে স্বাভাবিকভাবেই যারা বর্তমানে এমপি রয়েছেন নির্বাচনে তাদের প্রাধান্য থাকবে। সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. কামাল হোসেন এ বিষয়ে বলেন, আমরা বার বার বলেছি জাতীয় সংলাপের কথা। এ সংলাপ বড় দুই দল এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দলের মধ্যে সংলাপ হতে পারে। সংলাপ হলে একটি সমাধান বের হয়ে আসবে। দেশের মানুষ একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চায়। আট কোটি ভোটার এ নিয়ে উদ্বিগ্ন। এসব দিক বিবেচনা করেই রাজনৈতিক দলগুলোকে সমঝোতায় আসা উচিত। সেটি যদি না হয় তাহলে সঙ্কট আরও বাড়বে। নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা বাড়বে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান বলেন, সমস্যা সমাধানের আশা থাকলেও প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ অবস্থান এবং বিরোধী দলের বক্তব্য শুনে মনে হয়েছে আমরা যেখানে ছিলাম সেখানেই আছি। কোন পরিবর্তন হয়নি। তিনি মনে করেন সঙ্কট সমাধানের একমাত্র পথ আলোচনা। এই আলোচনার জন্য সব পক্ষ থেকে রাজনৈতিক দলগুলোকে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। কিন্তু তারা এ বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছেন না। সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সময় এখনও ফুরিয়ে যায়নি। আলোচনার মাধ্যমে দলগুলো সমাধান বের করতে পারে। তারা যদি সমঝোতায় না পৌঁছান তাহলে রাজনৈতিক সংঘাত অনিবার্য হয়ে উঠবে। নির্বাচন নিয়ে সংশয় দূর হবে না। চলমান পরিস্থিতি বিষয়ে সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও সিনিয়র আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক বলেন, সমঝোতার সময় আরও আগেই ফুরিয়ে গেছে। তারপরও বলছি-সমঝোতা হলে দেশের জন্য মঙ্গল। তিনি বলেন, সিরিয়ায় এখন যে অবস্থা চলছে তা থেকে আমাদের অবস্থা খুব ভাল না। সেখানকার পরিস্থিতি এমন যে মধ্যস্থতায়ও অনেকে আসতে চাইছেন না। আমাদের এখানে এমন পরিস্থিতি হলেও মধ্যস্থতায় অনেকে আসতে চাইবেন না।
সরকারপন্থী ছাড়া সকলেই মূলত একই কথা বলছেন, একই আশঙ্কা করছেন। সঙ্কটের আঁচ অনুভব করছেন। বিপদের গন্ধ পাচ্ছেন। এমন কি, আপাত দৃষ্টিতে সরকার-ঘেঁষা বলে সন্দেহ করা হয়, এমন ব্যক্তিরাও এখন সরকারের পরিকল্পনার বিরোধিতা করছেন। উদাহরণস্বরূপ, নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সর্বশেষ অবস্থান বিশ্লেষণ করে রচিত ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম-এর লেখাটির কথা বলা যায়। গতকাল বৃহস্পতিবার ডেইলি স্টারে প্রকাশিত এক মন্তব্য প্রতিবেদনে তিনি উভয় পক্ষকে সমঝোতায় পৌঁছানোর তাগিদ দিয়েছেন। না হয় অবাধ আর স্বচ্ছতার পরিবর্তে দাঙ্গা-হাঙ্গামা আর ভয়ের নির্বাচনের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি। মাহফুজ আনাম ইংরেজিতে যা লিখেছেন, তার সরল বাংলা হলো, নির্বাচনের ব্যাপারে শেখ হাসিনার সর্বশেষ ঘোষণায় ৪টি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। ১. বর্তমান সংসদের মেয়াদের ভেতরেই নির্বাচন। ২. নির্বাচনের সময় সংসদ ভেঙে দেয়া হবে না। ৩. বর্তমান সরকারই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হিসেবে ক্ষমতায় বহাল থাকবে। ৪. নির্বাচনের সময় নির্দলীয় সরকারের ব্যবস্থাকে চূড়ান্তভাবে প্রত্যাখ্যান। তিনি লিখেছেন, বর্তমান সংসদের মেয়াদের মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাই। সরকারের মেয়াদের মধ্যে কখন নির্বাচন হবে তার সিদ্ধান্ত নেয়ার এখতিয়ার প্রধানমন্ত্রীর রয়েছে। জনগণের ম্যান্ডেট চাওয়ার যে কোন প্রচেষ্টা যদি তা তাড়াতাড়িও হয় তা স্বাগত পাওয়ার যোগ্য। সমস্যা হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের দ্বিতীয় পয়েন্টে। যেখানে তিনি বলেছেন, নতুন সংসদ না আসা পর্যন্ত বর্তমান সংসদ বহাল থাকবে। এ ব্যবস্থায় বর্তমান সব সংসদ সদস্য স্বপদে থাকাবস্থায়ই নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন। তারা সে সময় বিশেষাধিকার এবং প্রটোকল পাবেন। সরকারি ব্যবস্থাপনা স্বাভাবিকভাবেই সংসদ সদস্যকে অন্য প্রার্থীদের চেয়ে আলাদা গুরুত্ব দেবে। এসব বিষয় গণতান্ত্রিক নির্বাচনী ব্যবস্থার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। যে ব্যবস্থার দাবি হচ্ছে ভোটার, আইন এবং নির্বাচন কমিশনের চোখে সব প্রার্থী সমান। সর্বশেষ কথা হচ্ছে অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশ যেমন ইন্ডিয়া, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড এবং বৃটেনসহ কোনো দেশেই এ ধরনের ব্যবস্থা প্রচলিত নেই। এসব দেশে সংসদ ভেঙে দিয়েই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। প্রধানমন্ত্রী যে বলছেন, অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশের মতোই আমাদের এখানে নির্বাচন হবে, তা সত্য নয়। বিশ্বের অন্যান্য দেশ যে ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি, আমরা কেন তা গ্রহণ করবো।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের তৃতীয় পয়েন্ট সঠিক। সব গণতান্ত্রিক দেশেই ক্ষমতায় থাকা সরকার নির্বাচনকালীন সময়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করে থাকে। ওই সরকার দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। যখন ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকা নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের আয়োজন করে থাকে। যেসব দেশের কথা ইতঃপূর্বে বলেছি সেসব দেশে এভাবেই নির্বাচন হয়।
সুতরাং আমরা কেন অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশের রীতি অনুসরণ করবো না। কারণ- ১. কোনো গণতান্ত্রিক দেশেই বিরোধী দল ধারাবাহিকভাবে সংসদ বয়কট করে না। ২. অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশে সরকার বিরোধী দলকে এভাবে নিপীড়ন করে না। প্রত্যেক সময়ে বিরোধী সংসদ সদস্য পুলিশের পিটুনির শিকার হন। এটাই হচ্ছে আমাদের গণতন্ত্রের দুঃখজনক ছবি। ৩. কোনো গণতান্ত্রিক দেশে সংসদ নেতা ও বিরোধী দলের নেতা এভাবে পরস্পরের প্রতি আক্রমণ করেন না। চিন্তা করে দেখুন গত ২৩ বছরে আমাদের দুই নেত্রী দেশের সঙ্কট নিয়ে একবারও সংলাপে বসেননি। অথচ প্রধানমন্ত্রী অথবা বিরোধীদলীয় নেত্রী হিসেবে তারাই আমাদের নেতৃত্ব দিয়েছেন। ৪. অন্য কোন গণতান্ত্রিক দেশেই এমন পরিস্থিতি হয় না যে বিরোধী দলের আনা কোন প্রস্তাব পাস তো দূরের কথা আলোচনাই হয় না। ৫. নির্বাচনের এক মাসের মধ্যেই কোনো দেশে বিরোধী দল সরকার পতনের ডাক দেয় না। ৬. অর্থনীতির কথা চিন্তা না করে কোন গণতান্ত্রিক দেশেই ধারাবাহিকভাবে হরতাল দেয়া হয় না। ৭. কোনো গণতান্ত্রিক দেশে দেশের প্রতিষ্ঠানগুলোকে রাজনৈতিক উদ্দেশে ব্যবহার করা হয় না। এ তালিকা কেবল বাড়ানোই সম্ভব।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর অবস্থান পুরনো এবং আমরা আগেই বলেছি প্রধানমন্ত্রীর ওই অবস্থান ভুল। যদি এখন বিএনপি ক্ষমতায় থাকতো এবং বর্তমান সরকার যে কারণ দেখিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করেছে একই কারণ দেখিয়ে তা বাতিল করতো, তবে কি আওয়ামী লীগ সেই নির্বাচনে অংশ নিতো? বিচারক হওয়ার বহু আগে বিচারপতি কেএম হাসান বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এ কারণ দেখিয়ে, আওয়ামী লীগ তার অধীনে নির্বাচনে যায়নি। আর আওয়ামী লীগ প্রধানকে নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে বিএনপি মেনে নেবে আমরা কি এতটা কল্পনাপ্রবণ হতে পারি?
মাহফুজ আনাম যে প্রশ্নের মাধ্যমে তার বক্তব্য শেষ করেছেন, সে একই প্রশ্ন এখন সবাই করছে। এবং আশা করছে, রাজনৈতিক সঙ্কট ও অচলাবস্থার অবসান।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন