শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

থামছে না আওয়ামী লীগের কূটবুদ্ধির খেলা


আওয়ামী লীগ নামের দলটির রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বিবেচনায় আনলে একটি বিষয় স্পষ্ট হয়ে যাবে : দলটি ক্ষমতায় থাকলে ক্ষমতায় টিকে থাকতে যেমন অনৈতিক নানা কূটবুদ্ধি আর কূটকৌশলের আশ্রয় নেয়, তেমনি ক্ষমতায় যাওয়ার বেলায়ও একই কাজ করে। আজকে ক্ষমতায় আসীন এ দলটির এ ধরনের কর্মকাণ্ড একেবারেই থামছে না, বরং সময়ের সাথে তা আরো বেড়েই চলেছে। ফলে থামছে না আওয়ামী লীগের চির-অবলম্বিত কূটবুদ্ধি আর কূটকৌশল। এসব কূটকৌশল অবলম্বনে নীতি-নৈতিকতার বিষয়টি থাকে তাদের বিবেচনার বাইরে। সেই সাথে তাদের অবলম্বিত পথটিই সর্বোত্তম বলে জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তোলার জন্য এ দলের নেতাকর্মীরা একযোগে প্রচার-প্রচারণায় নামেন গোয়েবলসীয় কায়দায়। এভাবে তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে দলটি যখন মরিয়া হয়ে ওঠে, তখন দেশে জন্ম দেয় নানা ধরনের রাজনৈতিক জটিলতা আর সঙ্কট। এতে দেশ ও জাতি হয় ক্ষতিগ্রস্ত, বাড়ে রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতালাভের পর বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের বিষয়টিকে আওয়ামী লীগের একক অর্জন বলে চালিয়ে দেয়ার সরকারি নীতি দিয়ে এই দলীয় কূটকৌশলের সূচনা, যা দেশের মানুষ স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারেনি। সরকার তখন ভিন্ন মত দমন-পীড়নের জন্য সৃষ্টি করে নানা বাহিনী। একসময় ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার ব্যর্থ চেষ্টায় সাংবিধানিক ক্যুর মাধ্যমে আনা হলো একদলীয় বাকশালী শাসন। গণতন্ত্রের কফিনে চেষ্টা চলল শেষ পেরেকটি ঠুকে দেয়ার। এর পরের ইতিহাস আমাদের জানা। জাতিকে মুখোমুখি হতে হলো অনেক অনাকাক্সিত দুঃখজনক ঘটনার। অনেক ঘটনা-বিঘটনা মোকাবেলা করে আমরা ফিরে এলাম গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায়। এ প্রক্রিয়ায় দেশ শাসনের ক্ষমতায় অনেকটা ধারাবাহিকভাবে গেল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। আজকের এই সময়টায় ক্ষমতায় আসীন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় একটি জোট। সবার প্রত্যাশা ছিল এই সরকারের মেয়াদ শেষে দেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আর এ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আমরা পাবো গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত আরেকটি সরকার। সে সরকার দেশ চালাবে জনগণের চাওয়া-পাওয়ার বিষয়টি মাথায় রেখে। কিন্তু বর্তমান সরকারের নানামুখী কূটবুদ্ধিতাড়িত নানা পদক্ষেপ সেই জনপ্রত্যাশা ধূলিসাৎ করে দিয়েছে। বর্তমান সরকার মইন উদ্দিন-ফখরুদ্দীনের বিতর্কিত এক সরকারের আয়োজিত একটি নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় আসে। নানা ভুলত্রুটি উপেক্ষা করে বর্তমান সরকারকে দেশবাসী মেনে নেয়। সেই সাথে তাদের প্রত্যাশা ছিল, আগামীতে একটি নির্দলীয় সরকারের অধীনে একটি নির্বাচনের মাধ্যমে পরবর্তী সরকার গঠিত হবে প্রকৃত জনসমর্থনের ওপর ভর করে। কিন্তু বর্তমান সরকার শুরু থেকেই সে দিকে না গিয়ে ভিন্ন পথে হাঁটতে শুরু করে। জনগণকে দেয়া প্রতিশ্রুতির কথা বেমালুম ভুলে গিয়ে দমন-পীড়নের মাধ্যমে বিরোধী মত-পথের মানুষকে নিশ্চিহ্ন করে চিরকাল ক্ষমতায় টিকে থাকার পথকেই বেছে নেয়। চলে ভিন্নমতের গণমাধ্যমের ওপর নানামাত্রিক আঘাত। অভিযোগ ওঠে ভিন্নমতের ও বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গুম, অপহরণ ও হত্যার। চরম দলীয়করণ চলে প্রশাসনের সর্বত্র। পুলিশি নির্যাতন চলে চরম মাত্রায়। সর্বোপরি আদালতের দোহাই দিয়ে সংবিধান থেকে বিদায় করা হয় তাদেরই আন্দোলনের ফসল নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা। এর মাধ্যমে চরম রাজনৈতিক সঙ্কট সৃষ্টি করে দেশবাসীকে ঠেলে দেয়া হয়েছে এক চরম শঙ্কায়। শুধু দেশবাসীই বা বলি কেন, বিদেশীরাসহ জাতিসঙ্ঘ কর্মকর্তারাও এ নিয়ে নানা আশঙ্কায় আশঙ্কিত। এখন সরকারের অনড় অবস্থানÑ সংবিধানের কোনো সংশোধন করা হবে না। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ তথা আরপিওর ছোটখাটো সংশোধন চলতে পারে। যদি তা চলে তবে ধরে নিতে হবে তা চলবে সরকারি দলের স্বার্থেই, গণতন্ত্রের স্বার্থে নয়। আর সরকার জোর দিয়ে বলছে, বিদ্যমান সরকারের অধীনেই বিদ্যমান সংবিধানের আওতায়ই হতে হবে আগামী নির্বাচন। আগামী জানুয়ারির মধ্যেই হবে সে নির্বাচন। বিরোধী দল বলছেÑ দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে দেয়া হবে না। সংবিধান সংশোধন করে নির্দলীয় নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করে সে সরকারের অধীনে হতে হবে আগামী নির্বাচন। দেশী-বিদেশী সবার তাগিদÑ দুই দলের আলোচনার মাধ্যমে এ ব্যাপারে একটি সমঝোতায় পৌঁছতে হবে। নইলে রাজপথে রক্ত ঝরবে। নির্বাচনে সব দলের অংশ নেয়া নিশ্চিত হবে না। তাই সবার কাছে এ নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না। সত্যি বলতে কি একমাত্র সরকারি জোটের কয়েকটি দল ছাড়া দেশের বাকি সব দল চায় নির্দলীয় সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন হোক। সরকারি জোটের শরিক দল জাতীয় পার্টি চায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন। সুশীলসমাজও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে। একটি জাতীয় দৈনিকের জরিপ মতে, দেশের ৯০ শতাংশ মানুষ চায় আগামী নির্বাচন হোক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। এমনই যখন অবস্থা তখন বিরোধী দল বলছে, নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার গঠন প্রশ্নে সরকারি দলের সাথে যেকোনো সময় যেকোনো জায়গায় আলোচনায় বসতে রাজি। গত ১২ সেপ্টেম্বর বর্তমান সংসদের সর্বশেষ অধিবেশন বসেছে। এই অধিবেশনে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার গঠনের জন্য সংবিধান সংশোধন না করলে এরা কঠোর লাগাতার আন্দোলনে যাবেন। আন্দোলনের মাধ্যমে এরা সরকারকে তখন পদত্যাগে বাধ্য করবেন। তবে সরকারি দলের এ ব্যাপারে কোনো মাথাব্যথা নেই। তারা বলছেন, বিএনপির আন্দোলনের মুরোদ নেই। আর আন্দোলন কিভাবে সামাল দিতে হয়, আওয়ামী লীগ তা জানে। আন্দোলনের চূড়ান্ত ফল কী দাঁড়ায় তা জানার জন্য সময়ের অপেক্ষা ছাড়া আমাদের হাতে আর কোনো বিকল্প নেই। তবে আন্দাজ-অনুমান করি, সেই আন্দোলনে জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা প্রবল। কে বিজয়ী হবে, কে হবে বিজিত সে প্রশ্ন পরে। বিএনপি আন্দোলনের জন্য কতটুকু প্রস্তুত হচ্ছে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে সরকারপক্ষ সে আন্দোলন কঠোরহস্তে দমনের জন্য যে তৈরি হচ্ছে, তা এরই মধ্যে স্পষ্ট হয়ে গেছে। আগামী সরকারবিরোধী আন্দোলনে সরকার আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় আরো কঠোর হবে তা অনুমান করতে কারো অসুবিধা হয় না। এরই মধ্যে শোনা যাচ্ছে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চট্টগ্রাম বণিক সমিতির সাথে এক মতবিনিময় সভায় বলেছেনÑ সরকার হরতালবিরোধী কঠোর আইন করার কথা ভাবছে। এই আইনে রাজনৈতিক দলগুলোকে বাধ্য করা হবে হরতালের ক্ষয়ক্ষতি বহন করতে কিংবা হরতাল করার কারণে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বাতিল করা হবে। কিছু দিন আগে আইনমন্ত্রীও হরতালবিরোধী কঠোর আইন প্রণয়নের কথা বলেছেন। বাতাসের খবর, হরতাল আহ্বানকারী দলের নেতাদের পাঁচ বছর জেলের শাস্তির বিধানও করা হচ্ছে। এ থেকে মনে হয়, সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রশ্নে আসলেই অনড় অবস্থান নিয়েছে। সরকার শুধু ক্ষমতায় নানা কূটকৌশলে টিকে থাকার অপপ্রয়াস হিসেবে বারবার আইন সংশোধন করেছে। সহজে আগামী নির্বাচনে জয় লাভ করার লক্ষ্যেই এসব আইনের সংশোধন বলে বিভিন্ন মহল থেকে প্রবলভাবে সমালোচিত হয়েছে। এ নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে নানামাত্রিক বিতর্ক। সংবিধান সংশোধন থেকে শুরু করে অধ্যাদেশ জারি করে তথ্যপ্রযুক্তি সংশোধন, সন্ত্রাসবিরোধী আইন ও বার কাউন্সিল আইন সংশোধন করা হয়েছে বর্তমান সরকারের আমলে। এসব আইন সংশোধন জনস্বার্থে নয়, বরং করা হয়েছে শত ভাগ দলীয় স্বার্থে। ক্ষমতায় টিকে থাকা, বিরোধী মতাবলম্বীদের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেই এসব উদ্যোগ। বিরোধী দলের নেতাকর্মী ও ভিন্ন মতাবলম্বী সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীদের হয়রানির হাতিয়ার করে তোলা হয়েছে এসব সংশোধিত আইনকে। সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করার মুখ্য উদ্দশ্য যে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করে ক্ষমতায় টিকে থাকা, সে এক বহুল আলোচিত বিষয়। সে ব্যাপারে পুনরুল্লেখ পাঠক-সাধারণের বিরক্তির কারণ ঘটাতে চাই না। সবগুলো আইন সংশোধনীতে সরকারের অসৎ উদ্দেশ্য জড়িয়ে রয়েছে। তবে এগুলোর বিস্তারিতে যাওয়ার অবকাশ এখানে নেই। তবে সংক্ষেপে বার কাউন্সিল আইন সংশোধনে সরকারের গোপন অভিলাষের বিষয়টি এখানে উল্লেখ করতে চাই। উল্লেখ্য, গত বছর ২১ অক্টোবর রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশ লিগ্যাল প্র্যাকটিশনার্স অ্যান্ড বার কাউন্সিল (অ্যামেন্ডমেন্ট) অ্যাক্ট ২০১২অধ্যাদেশ জারি করেন। এটি পরে আইনে পরিণত করা হয়। আমরা জানি, বার কাউন্সিল নতুন আইনজীবীদের তালিকাভুক্ত করে থাকে। আইনজীবীদের তালিকাভুক্ত করার জন্য পাঁচ সদস্যের একটি নিয়োগ কমিটি বা এনরোলমেন্ট কমিটি গঠনের জন্য আইন সংশোধন করা হয়। সংশোধিত আইনে বলা হয়, নিয়োগ কমিটির চেয়ারম্যান হবেন প্রধান বিচারপতির মনোনীত আপিল বিভাগের একজন বিচারক। এ ছাড়া হাইকোর্ট বিভাগের দুজন বিচারক, অ্যাটর্নি জেনারেল ও বার কাউন্সিলের একজন সদস্য কমিটির সদস্য হিসেবে থাকবেন। তাদের মধ্যে হাইকোর্টের দুই বিচারককেও প্রধান বিচারপতি মনোনীত করবেন। বার কাউন্সিলের সভাপতি হিসেবে অ্যাটর্নি জেনারেল পদাধিকার বলে ওই কমিটিতে আসবেন। এ ছাড়া তিনি বার কাউন্সিলের অন্য একজন সদস্যকে এনরোলমেন্ট কমিটির জন্য মনোনীত করবেন। এর আগের আইনে বার কাউন্সিলের এই নিয়োগ কমিটির সদস্যসংখ্যা ছিল তিন। তাদের মধ্যে একজন বিচারক। বাকিরা বার কাউন্সিলের মনোনীত সদস্য। কমিটিকে আরো শক্তিশালী করতে এই আইন সংশোধন করা হয়েছে বলে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হলেও ওই বছর বার কাউন্সিলের নির্বাচনে ১৪টি পদের মধ্যে ১৩টি পদে বিএনপিসহ জোটের নেতারা জয়লাভ করায় সরকার নিজেদের স্বার্থে এই আইন সংশোধন করে কমিটিকে সরকারের নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা চালায়। এই আইন পরিবর্তনে প্রতিবাদী আইনজীবীরা এর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেন। তাদের অভিযোগ, সরকার জোর করে বার কাউন্সিলকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয়ার কৌশল করতে এই আইন সংশোধন করেছে। তাদের অভিযোগ যে মিথ্যে নয় তা সহজবোধ্য। এ দিকে ড. মুহাম্মদ ইউনূস যখনই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজনীয়তার কথা বললেন তখন সরকার ধরে নিয়েছে আগামী নির্বাচনে ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও তার সমর্থকেরা বিরোধী দলের হয়েই কাজ করবেন। অতএব তা হতে দেয়া যায় না। ফলে আরো জোরদার করে তোলা হলো ইউনূসবিরোধী প্রচার-প্রচারণা। রাজস্ব বোর্ড এখন রাতদিন কাজ করছে ড. ইউনূস কোথায় কর ফাঁকি দিয়েছেন তার ফিরিস্তি বের করার জন্য। কিন্তু এই কর ফাঁকি রহস্য উদঘাটনে রাজস্ব বোর্ড এখন মাঠে নামল কেন? বলা হচ্ছে, তিনি যদি কর ফাঁকি দিয়ে থাকেন তবে এই কর ফাঁকি দিয়েছেন আরো বহু আগে। তখন রাজস্ব বোর্ড কোথায় ছিল? অপর দিকে ড. মুহাম্মদ ইউনূসবিরোধী প্রচারণায় এবার নতুন কৌশল নিয়ে মাঠে নামছে সরকার। এ কাজে লাগানো হচ্ছে দেশের প্রায় তিন লাখ মসজিদের ইমামকে। এ জন্য তাদের হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে ১৬ পৃষ্ঠার একটি বুকলেট বা পুস্তিকা। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের নিজস্ব প্রেস থেকে এ পুস্তিকা ছাপা হয়েছে। বিতরণের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত এই ধর্মীয় প্রচার-প্রকাশনা সংস্থার জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের। কিন্তু পুস্তিকার গায়ে লেখা রয়েছে আনজুমানে খাদেমুত তরীকাহ, ঢাকানামের একটি ভুঁইফোড় সংগঠনের নাম। বুকলেটটি বিতরণ করতে গিয়ে বিভ্রান্তিতে পড়েছেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মাঠকর্মীরা। তার পরও চাকরির স্বার্থে বিভিন্ন মসজিদ ড. ইউনূস, বিএনপি, জামায়াত ও হেফাজতবিরোধী সমালোচনা সংবলিত পুস্তিকাটি বিতরণ করছে। এমনকি বইটিতে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে সমকামিতা সমর্থনের অভিযোগ তোলা হয়েছে। জুমার খুতবায় বয়ানের মাধ্যমে দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষের কাছে বিষয়টি প্রচারের জন্য এই বুকলেট ছাপানো হয়েছে। এ ব্যাপারে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক সামীম মোহাম্মদ আফজল বলেছেনÑ ‘কারা, কী উদ্দেশ্যে বুকলেটটি ছেপেছে, তার বিষয়বস্তু সেখানেই বিস্তারিত রয়েছে। এ বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই।জানি না, এ ধরনের অপকৌশল ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ভাবমর্যাদার কতটুকু ক্ষতি করবে, তবে এটুকু স্পষ্ট আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য কূটকৌশলের আশ্রয় নিয়ে কতটুকু নিচে নামতে পারে সেটুকু আন্দাজ-অনুমান এ দেশের মানুষ এ থেকে সহজেই অনুমান করতে পারবে। এ দিকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রধান বিরোধী দল বিএনপিকে বেকায়দায় ফেলতে সরকারের ছত্রছায়ায় বিএনএফ বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট নামের নতুন এক রাজনৈতিক দল দাঁড় করানো হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অখ্যাত এই সংগঠন রাজনৈতিক দল হিসেবে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন পেতে নানা তৎপরতা চালাচ্ছে। বিএনপি নেতাদের দাবি, বিএনপিকে বেকায়দায় ফেলতে সরকারের এই অপপ্রয়াস। কওমি মাদরাসার স্বীকৃতি নিয়েও চলছে ভোটের রাজনীতি। কওমির শিক্ষা সনদ স্বীকৃতি দিতে চলতি সংসদ অধিবেশনে বিল তোলা হতে পারে। সরকারবিরোধী ধর্মভিত্তিক দল ও হেফাজতে ইসলাম হুমকি দিয়ে অভিযোগ করে আসছে, এই আইনের মাধ্যমে কওমি মাদরাসার স্বকীয়তা বিনষ্ট করার চেষ্টা করা হবে। সরকার এই স্বীকৃতি দিয়ে কওমি মাদরাসাকে পক্ষে টানার কিংবা তাদের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে। এও এক ধরনের ভোটের রাজনীতি। ইতোমধ্যে হেফাজতে ইসলাম বলেছে, স্বীকৃতির নামে কওমি মাদরাসাগুলোর স্বকীয়তা ধ্বংস করার চেষ্টা করা হলে এরা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামবেন। আলেমসমাজও একই ধরনের হুমকি দিয়েছে। নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বিনষ্ট করার লক্ষ্যেই মূলত দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন আয়োজনের জন্য বর্তমান সরকার মরিয়া। একই উদ্দেশ্যে সরকার সংসদ সদস্যদের সদস্যপদ নির্বাচনের সময় বহাল রেখে নির্বাচনে যেতে চাইছে। আরপিও সংশোধন করে নির্বাচন কমিশনকে আরো দুর্বল করতে গিয়ে প্রবল সমালোচনার মুখে পড়েছে। একতরফাভাবে জাতীয় সংসদের বিভিন্ন আসনের সীমানা পাল্টিয়েছে। মন্ত্রীদের সরকারি সুযোগ-সুবিধা বহাল রেখে নির্বাচনী প্রচারণার সুযোগ সৃষ্টি করতে চাইছে। প্রশাসনে চালিয়েছে ব্যাপক দলীয়করণ; এমনিতেই এ সরকারের আমলে ব্যাপক দলীয়করণ প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন সময় উল্টাপাল্টা ও অযৌক্তিক পদোন্নতি এবং বিপুলসংখ্যক কর্মকর্তাকে ওএসডি করে প্রশাসন চরম বিশৃঙ্খল করে রাখা হয়েছে। এখন শেষ সময়ে এসে কয়েক দিন আগে ভোটের সঙ্কীর্ণ রাজনৈতিক চিন্তাতাড়িত হয়ে সরকার আরো ৭০ জন ডেপুটি সেক্রেটারিকে জয়েন্ট সেক্রেটারি পদে পদোন্নতি দিয়েছে। এর ফলে অনুমোদিত প্রশাসনিক কাঠামো অনুযায়ী যুগ্মসচিবের যতটি পদ রয়েছে, তার চেয়ে কর্মকর্তা সংখ্যা তিন-চার গুণে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকার ভালো করে জানে যুগ্মসচিবের পদ রয়েছে ২৫০টি। সেখানে যুগ্মসচিবের সংখ্যা ৯৪৩। তার পরও চলে সর্বশেষ এই পদোন্নতি। সর্বশেষ এই ৭০ জনকে যুগ্মসচিবে পদোন্নতি দেয়ার তিন মাসেরও কম সময় আগে রেকর্ড পরিমাণ ৩৪৫ জনকে যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতি দেয় সরকার। সরকারের এই অযৌক্তিক পদোন্নতির ফলে অনুমোদিত ১২০টি পদের বিপরীতে অতিরিক্ত সচিবের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৩৯ জন, ২৫০টি পদের বিপরীতে যুগ্মসচিবের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক হাজার ১৩ এবং ৮৩০টি পদের বিপরীতে উপসচিবের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৩১৬। এসবই করা হয়েছে দলীয়করণ আর ভোটের রাজনীতি মাথায় রেখে। এভাবে যেখানেই যাবেন দেখবেন, থামছে না আওয়ামী লীগ সরকারের কূটবুদ্ধি খেলা; বরং সময়ের সাথে তা বেড়েই চলেছে। কিন্তু সরকার সাধারণ মানুষ তথা ভোটার সাধারণকে যতই বোকা ভাবুক, আসলে এরা এতটা বোকা নন। সরকারি দল বলি কিংবা বিরোধী দল বলি কে কোন উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে কোন পদক্ষেপ নেয় সাধারণ মানুষ তা যথার্থ উপলব্ধি করতে সক্ষম। রাজনৈতিক দলগুলোর বলাবলির বাইরে সাধারণ মানুষের উপলব্ধির নিজস্ব একটা ক্ষেত্র আছে। তাই বলা হয় জনগণ কখনো ভুল করে না, ভুল করেন তাদের নেতানেত্রীরা। ফলে জনগণ কখনো কোনো নেতাকে কাছে টানে, আবার কখনো দূরে ঠেলে। অতএব কূটবুদ্ধির খেলা ছেড়ে সোজা পথে চলার অভ্যাস করাই রাজনৈতিক দল ও নেতানেত্রীদের জন্য সর্বোত্তম। যাদের সে উপলব্ধি আছে, তারাই শেষ পর্যন্ত নিশ্চিত সাফল্য পায়, অন্যেরা নয়।


0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads