হিজাব পরার অপরাধে ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হাফসা ইসলামকে বেসরকারি উচ্চতর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এ নিয়ে দেশের ঈমানদার মুসলমানদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলেছে, হিজাব বা নেকাব তাদের ড্রেসকোডের আওতায় পড়ে না। কিন্তু ৯০ শতাংশ মুসলমানের দেশে হিজাব বাদ দিয়ে ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের ড্রেসকোড কিভাবে অনুমোদন করলো? তারা কি জানে না যে, মুসলমান নারীদের জন্য পর্দা মেনে চলা বা হিজাব পরা ফরজ। এ ছাড়া মুসলমান নারীরা গণতান্ত্রিক অধিকার অনুসারেও ইসলামী পোশাক পরিধানের দাবি করতে পারেন। শুধু তাদের ধর্মে নয়, জাতিসংঘ সনদেও ধর্মীয় পোশাকের অধিকার সংরক্ষিত রয়েছে। এমতাবস্থায় ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ হিজাবকে কোন যুক্তিতে তাদের ড্রেসকোডের বাইরে রাখার দুঃসাহস পেলো, আমরা জানি না। তবে কি এ দেশের মুসলমানদের অন্তরে আঘাত দেবার জন্যই ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে? আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতের সেনাবাহিনীতে শিখ সম্প্রদায়ের লোকেরা তাদের ধর্মানুসারে পাগড়ি পরে, হাতে বালা পরিধান করে, মাথায় লম্বা চুল ও দাড়ি রাখে। এমনকি সাধারণ শিখরাও সঙ্গে কৃপাণ বহনের অধিকার সংরক্ষণ করে। তাহলে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ইসলামী বিধান অনুসারে নারীরা হিজাব পরিধানের অধিকার হারাবে কেন? আমরা মনে করি, ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ উদ্দেশ্যমূলকভাবে মুসলমানদের মনে আঘাত দেবার জন্য তাদের ড্রেসকোড তৈরি করেছে। অথচ এ ড্রেসকোড শতকরা ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে কোন ভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। আমরা আরও মনে করি, এ দেশ থেকে ইসলামী মূল্যবোধ মুছে ফেলার জন্য সর্বগ্রাসী যে আগ্রাসন শুরু হয়েছে, তারই অংশ হিসেবে ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ড্রেসকোড থেকে হিজাবকে দূরে রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
পশ্চিমা বিশ্ব নারীদের উপভোগের সামগ্রী হিসেবে ব্যবহারের জন্য তাদের বেহায়াপনা ও উলঙ্গপনার প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ফলে নারীরা আজ স্বাধীনতার খোলসে যেমন নানাভাবে নির্যাতিত হচ্ছে, তেমনি তারা একশ্রেণীর পুরুষের ভোগের সামগ্রীতে পরিণত হয়ে নিজেদের আত্মমর্যাদা ও সম্ভ্রম বিসর্জন দিতে বাধ্য হচ্ছে। অথচ ইসলামে নারীর যে মহান মর্যাদা দেয়া হয়েছে, তা বিশ্বের অন্যান্য ধর্মবিশ্বাস ও আধুনিক সভ্যতার ইতিহাসে প্রায় বিরল। কিন্তু একটি মহল ইসলামকে হেয়প্রতিপন্ন করার জন্য নানাভাবে ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করে চলেছে। মুসলমান নারীদের ইসলামী মূল্যবোধ ও হিজাব থেকে দূরে রাখার গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ড্রেসকোড প্রণয়নকে আমরা আখ্যায়িত করতে চাই। এ ড্রেসকোড বাতিল না করলে হয়তো অবিলম্বে এ দেশে এর বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলন গড়ে উঠবে। আমরা ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের শুভ বুদ্ধির উদয় হবে বলে মনে করছি। কারণ এ দেশের বেশির ভাগ মানুষ ধর্মবিশ্বাসী। তারা ধর্মীয় অনুশাসন গভীরভাবে মেনে চলে। বাহ্যিকভাবে অনেককে ধর্মানুরাগী মনে না হলেও ধর্মের প্রতি কোনও মহল খড়গহস্ত হলে তাদের উপযুক্ত শিক্ষা দিতে তারা পিছপা হয় না। হিজাব পরার অপরাধে ড্রেসকোডের দোহাই দিয়ে হাফসা ইসলামকে ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করে কর্তৃপক্ষ যে অমার্জনীয় অপরাধ করেছে তা শুধু ধৃষ্টতাই নয়, সুস্পষ্টভাবে ধর্মদ্রোহিতা এবং ইসলামী বিধানের বিরুদ্ধাচরণ। এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো মুসলমানের ধর্মীয় কর্তব্য বৈকি।
ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয় বা কোনও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ড্রেসকোড অবশ্যই থাকতে পারে। তার সঙ্গে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের ধর্মবিশ্বাসের বিষয়টিও বিবেচনায় রাখা জরুরি। কেননা, সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্মবিশ্বাস ও ঐতিহ্যগত মূল্যবোধকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে কেউ ইচ্ছেমতো নিয়ম-নীতি তৈরি করতে পারে না। ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ হিজাব বাদ দিয়ে ছাত্রীদের যে ড্রেসকোড তৈরি করেছে, তাতে এ দেশের ৯০ ভাগ মানুষের ধর্মবিশ্বাস ও ঐতিহ্যকে ভীষণভাবে উপেক্ষা করাই নয়, তাদের ধর্মবোধ বা ঈমানের ওপর আঘাত করা হয়েছে। এর পরিণাম শুভ হতে পারে না। তাছাড়া তাদের এ রকম বিতর্কিত ড্রেসকোড সম্পর্কে আগাম ঘোষণাও দেয়া হয়নি। আগাম ঘোষণা থাকলে কোনও ধর্মপ্রাণ মুসলমান ছাত্রী সেখানে ভর্তি হতো কি না সেটা ভেবে দেখতে পারতো। ভর্তি হওয়া ছাত্রীকে সেখান থেকে বের করে দেয়াও অপরাধ বলে গণ্য হতে পারে। আমরা মনে করি, ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অন্যের গণতান্ত্রিক, মানবিক ও ধর্মীয় অধিকার সংরক্ষণে যতœবান ও সচেতন থাকবে।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন