অনেক কারণেই সামনের দিনগুলো
হতে পারে রক্তঝরা। কিন্তু আমরা অনেকেই সে কথা না ভেবে কেবলই ভাবছি ভোটের কথা। ভোট
গণতন্ত্রের জন্য অপরিহার্য। গণতন্ত্র নির্ভর করে জনমত, রাজনৈতিক দল এবং অবাধ নিরপেক্ষ ভোটের ওপর। আমরা গণতন্ত্র চাই কেবল
রাজনৈতিক কারণে নয়। গণতন্ত্র মানুষকে দেয় সবচেয়ে বেশি ব্যক্তিস্বাধীনতা। আর
ব্যক্তিস্বাধীনতা কেবল রজনৈতিক কারণেই যে প্রয়োজন,
তা নয়। জ্ঞান-বিজ্ঞানচর্চা এবং সাহিত্য ও শিল্পকলার ক্ষেত্রেও তা
প্রয়োজন। কারণ ব্যক্তিস্বাধীনতা মানুষকে দেয় তার সাংস্কৃতিক স্বাধীনতা। এক দলের
রাজত্ব গণতন্ত্রের অস্বীকৃতি মাত্র। বাকশাল আর যা-ই হোক, একটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ছিল না। আওয়ামী লীগ যেন আবার ধাবিত হতে
যাচ্ছে বাকশালেরই দিকে। আওয়ামী লীগের শক্তির উৎস বাংলাদেশের মানুষ নয়। এর প্রকৃত
শক্তির উৎস হলো ভারত। আওয়ামী লীগের রাজনীতি বিশ্লেষণ করতে হলে তাই ভারতের কথা না
এসেই পারে না। আর ভারতের নীতির কারণেই আমাদের আগামী দিনগুলো হয়ে ওঠা সম্ভব
রক্তঝরা।
ভারত বলতে আমরা বুঝছি, হিন্দু ভারতকে। হিন্দুত্বকে বাদ দিয়ে ভারতের মূলনীতিকে বিশ্লেষণ করা চলে না। তাই ভারতের কথা বলতে গেলে অনিবার্যভাবে আসে হিন্দুত্বের কথা। আর এক কথায়, হিন্দু সংস্কৃতির কথা। হিন্দু সংস্কৃতির একটা বড় বৈশিষ্ট্য হলো বর্ণশ্রম বা জাতিভেদপ্রথা বা কাস্ট সিস্টেম। বিষয়টি নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। সব হিন্দু সংস্কৃতিকে বুঝতে হলে এই বর্ণব্যবস্থাকে উপলব্ধি করতে হয়। প্রাচীন হিন্দুসমাজে সম্ভবত প্রথমে ছিল ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্র। ব্রাহ্মণদের কাজ ছিল ধর্মকর্ম ও উচ্চচিন্তা। তাদের সাধারণভাবে বলা যায় পুরোহিত ও শিক্ষিত শ্রেণী। ক্ষত্রিয়দের কাজ ছিল ক্ষেত্র বা দেশ রক্ষার জন্য যুদ্ধ করা। বৈশ্যদের কাজ ছিল ব্যবসায়-বাণিজ্য আর শূদ্রদের কাজ ছিল কায়িক শ্রম। শূদ্ররা বিবেচিত ছিল সবচেয়ে ঘৃণ্য ও নীচু শ্রেণীর মানুষ হিসেবে। মহাভারতের একটি শ্লোকে বলা হয়েছেÑ ব্রাহ্মণরা হয় ফর্সা। ক্ষত্রিয়রা হলো রক্তাভ, বৈশ্যরা হলো পীতাভ আর শূদ্ররা হলো কৃষ্ণকায়। অর্থাৎ প্রাচীনকালে বর্ণব্যবস্থার উদ্ভব হয়তো হতে পেরেছিল মানবধারার পার্থক্যজনিত কারণেই। হিন্দু ধর্ম সম্পর্কে মন্তব্য করতে যেয়ে নৃতাত্ত্বিক ক্রোয়েবার (Kroeber) বলেছেন : যে অর্থে খ্রিষ্ট ধর্ম, ইসলাম ধর্ম, বৌদ্ধ ধর্র্ম একটি ধর্ম, হিন্দু ধর্ম ঠিক সে অর্থে ধর্ম নয়। হিন্দু ধর্মের কোনো একজন প্রতিষ্ঠাতা নেই। এর মধ্যে কোনো সুনির্দিষ্ট বিশ্বাসের বুনিয়াদ নেই। বিদেশীকে হিন্দু ধর্ম এড়িয়ে যেতে চায়। গ্রহণ করতে চায় না। হিন্দু ধর্ম প্রচার করা চলে না। কেউ হিন্দু হতে পারে না। হিন্দু ধর্মের মধ্যে কোনো বিশ্বজনীন আবেদন নেই। (A. L. Kroeber, Anthropology, Indian Edition, 1967, p. 752)। এই উপমহাদেশের ইতিহাস আলোচনা করলে আমরা দেখতে পাই, মধ্য এশিয়া থেকে লোক এসে গড়ে তুলতে পেরেছে বিশাল সাম্র্রাজ্য। কুশানেরা মধ্য এশিয়া থেকে এসেছিল এবং এরা ছিল তুর্কি পরিবারভুক্ত ভাষাভাষী। হিন্দু ধর্ম বিদেশীদের এড়িয়ে যেতে চাইলেও শক্তিমান বিদেশীকে আবার করেছে কিছুটা মান্য। কুশানেরা পেয়েছে বিশেষ মান্যতা। আর পরে এরা বিবেচিত হয়েছে ক্ষত্রিয় রূপে। এই উপমহাদেশের মুসলমানেরা মূলত এসেছিল মধ্য এশিয়া থেকে। এরাও ছিল তুর্কি ভাষাভাষী। কিন্তু এরা হয়ে ওঠেনি ক্ষত্রিয়। এর কারণ, ইসলাম ধর্মের স্বাতন্ত্র্য। আর এই স্বাতন্ত্র্য সৃষ্টি করতে পেরেছে এই উপমহাদেশের রাজনীতিতে বিশেষ জটিলতা। যার জের এখনো চলেছে। ভারতের উত্তর প্রদেশে (ইউপি) চলেছে হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গা, যার একটি বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারছে এ দেশের মুসলিম-মানসে। আওয়ামী লীগ ভারতবান্ধব দল। এ দেশের বিরাটসংখ্যক মুসলমানের কাছে আওয়ামী লীগ বিবেচিত হতে পারছে হিন্দুবান্ধব দল হিসেবে। যা সৃষ্টি করতে পারছে রাজনৈতিক জটিলতা। আর হতে পারে রক্তঝরার একটি কারণ। গত বছর দুর্গাপূজার সময় শেখ হাসিনা বলেছিলেন, দুর্গাপূজা হলো বাঙালি সংস্কৃতির উৎস। আওয়ামী লীগের বাঙালি জাতীয়তাবাদ আর হিন্দুত্বের মধ্যে পার্থক্য টানা হয়ে উঠেছে কঠিন। ভারতে ছাত্রদের পড়ানো হচ্ছে ‘বৃহত্তর ভারতের’ ‘গ্রেটার ইন্ডিয়া’র কথা। বৃহত্তর ভারতের এই ধারণার মধ্যে আসছে সমগ্র দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কথা। যেখানে একসময় পড়েছিল হিন্দু ধর্ম তথা সভ্যতার প্রভাব। কিন্তু দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিরাট অংশজুড়ে মানুষ এখন গ্রহণ করেছে ইসলাম। মালয়েশিয়ার জনসমষ্টির শতকরা ৬৬ ভাগ হলো মুসলমান। মালয়েশিয়ায় ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে সরকারিভাবে ঘোষণা করা হয়েছে। মালয়েশিয়ার মোট জনসমষ্টির শতকরা ১০ ভাগের কাছাকাছি হলো ভারত থেকে যাওয়া হিন্দু (মূলত তামিল)। এরা চাচ্ছে মালয়েশিয়ার রাজনীতিতে ভারতের হস্তক্ষেপ। ভবিষ্যতে ভারত মালয়েশিয়ার রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করতে চাইতে পারে। ইন্দোনেশিয়ার বলি (বালি) দ্বীপের হিন্দুরা চাচ্ছে সে দেশে বাড়–ক ভারতীয় প্রভাব। এই বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ভারত প্রভাব বিস্তার করতে যেয়ে জড়িয়ে পড়তে পারে যুদ্ধে। যে কারণেও আগামী দিনগুলো হতে পারে রক্তঝরা। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে ভারত নাকি গড়ে তুলছে শক্তিশালী সামরিক ঘাঁটি, যেখানে ইতোমধ্যেই নিতে হয়েছে পারমাণবিক অস্ত্র। নিকোবার দ্বীপপুঞ্জ থেকে ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা দ্বীপ মোটেও দূরে অবস্থিত নয়।
ভারত করে চলেছে বিপুল সমর আয়োজন। মাত্র ক’দিন আগে ভারত তার নিজের তৈরী বিমানবাহী রণতরী আইএনএস বিক্রান্ত সাগরে ভাসালো। (ভারতের আগে কেবল যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, রাশিয়া, ফ্রন্স ও চীন এ ধরনের বৃহৎ রণতরী নির্মাণে সক্ষম হয়েছে), যা প্রমাণ করছে তার সামরিক শক্তি বাড়িয়ে তোলার চেষ্টাকে। বিমানবাহী জাহাজ যতটা না লাগে একটা দেশের আত্মরক্ষার কাজে, তার চেয়ে বেশি কাজে আসে অন্য দেশকে আক্রমণে। ক’দিন আগে খবরের কাগজে দেখলাম ভারত সরকার বাংলাদেশ ও পাকিস্তান সীমান্তে ড্রোন ওড়ানোর ব্যবস্থা করছে। যা তার সমর প্রস্তুতিরই পূর্বাভাস বলে মনে করা যায়। পাকিস্তান সীমান্তে ড্রোন ওড়ানোর একটা কারণ হতে পারে, স্বাধীনতাকামী শিখদের ওপর নজরদারি করা। এরা পাকিস্তান থেকে কোনো সমরাস্ত্র পেতে পারছে কি না, সেটার তথ্য সংগ্রহ করা। কিন্তু বাংলাদেশের সীমান্তে ড্রোন ওড়ানোর প্রয়োজনীয়তা আমাদের কাছে স্বচ্ছ হতে পারছে না। আমরা জানি না, আমাদের দেশে আগামী নির্বাচন যথা সময়ে হতে পারবে কি না। কারণ আমাদের সংবিধান মতে সংসদের মেয়াদকাল পাঁচ বছরের বেশি হতে পারবে না। কেবল যুদ্ধের কারণে এর ব্যতিক্রম হতে পারে। ভারত যদি বাংলাদেশের সীমান্তে একটা যুদ্ধাবস্থার সৃষ্টি করে, তবে বাড়বে আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদের আয়ু। ভারতের পত্রপত্রিকার বিভিন্ন খবরেও এমন সংশয় প্রকাশ করা হচ্ছে বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন নিয়ে।
ভারত স্বাধীন হওয়ার আগে পণ্ডিত জওয়াহেরলাল নেহরু ‘দ্য ডিসকভারি অব ইন্ডিয়া’ নামে একটি বই লেখেন। বইটি খুব প্রসিদ্ধি পায়। এই বইয়ের একটি অধ্যায়ে বলা হয়েছে, পৃথিবীতে ছোট রাষ্ট্রগুলোর কোনো ভবিষ্যৎ নেই। তাদের শেষ পর্যন্ত মিশে যেতে হবে বড় রাষ্ট্রগুলোর সাথে। মনে হয়, নেহরুর এই বিশ্বাস কাজ করছে ভারতের পররাষ্ট্রনীতি গঠনে। ভারতীয় সংবিধানের ৩৬৭ নম্বর ধারার ৩ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘ভারত ব্যতীত যেকোনো রাষ্ট্র বিদেশী রাষ্ট্র। কিন্তু ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রয়োজনে কোনো রাষ্ট্রকে বিদেশী রাষ্ট্র নয় বলে ঘোষণা করতে পারেন।’ ভারতের সংবিধানের এই অংশ মোটেও স্বচ্ছ নয়। ভারত যেকোনো রাষ্ট্র দখল করে তাকে ভারতের অংশ হিসেবে ঘোষণা করতে পারে। ভারতের সংবিধানে এই সুযোগ রাখা হয়েছে। অন্য কোনো দেশের সংবিধানে এ রকম কোনো সুযোগ রাখা হয়েছে কি না, আমরা তা জানি না। ভারতের প্রতিবেশী রাষ্ট্ররা তাই সঙ্গতভাবেই ভাবতে পারে, ভারত একটা বিপজ্জনক প্রতিবেশী। ১৯৭৫ সালের ৬ এপ্রিল ভারত সিকিম জয় করে। এবং ভারতীয় সংবিধানের ৩৬৭ নম্বর ধারার ৩ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সিকিমকে পরিণত করে ভারতের একটি অঙ্গরাষ্ট্রে। ঘটনাটি ঘটেছিল শেখ মুজিব নিহত হওয়ার পাঁচ মাস আগে।
বাংলাদেশের ভবিষ্যতে ঠিক কী ঘটতে যাচ্ছে, আমাদের মতো অবিশেষজ্ঞদের পক্ষে তার অনুমান করা হয়ে উঠেছে কঠিন। বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান (Geographical Position) তাকে সামরিক দিক থেকে করে তুলেছে গুরুত্বপূর্ণ। চীনের সাথে চলেছে ভারতের সীমান্তবিরোধ। চীন চাচ্ছে, বাংলাদেশে তার প্রভাব বাড়াতে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও চাচ্ছে না যে, বাংলাদেশ থাকুক ভারতের প্রভাববলয়ে। সেও চাচ্ছে, বাংলাদেশে তার রাজনৈতিক প্রভাব বাড়াতে। বাংলাদেশ ভূম লীয় রাজনৈতিক (Geopolitical) কারণে হয়ে উঠেছে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। সেটাও হতে পারে আগামী দিনগুলো বাংলাদেশে রক্তঝরার বিশেষ কারণ। আমরা এখন ভোট নিয়ে খুব ভাবছি। দেশে গণতান্ত্রিক জীবন বিধান (Way of living) গড়তে হলে ভোট অবশ্য অপরিহার্য। কিন্তু বাংলাদেশকে তার জাতীয় নীতি রচনা করতে হলে অবশ্যই বিবেচনা করতে হবে ভূম লীয় রাজনীতিকে।
আমার ভাবনা ধারণা অনেকের সাথেই মেলে না। এর একটা সাধারণ কারণ হচ্ছে, মানুষের চিন্তাধারা নির্ভর করে তার আপন অভিজ্ঞতার ওপর। সবার জীবনের অভিজ্ঞতা এক নয়। তাই হতে পারে মতপার্থক্য। রাজনীতি অঙ্কের হিসাব নয়। তাই এখানে মতের অমিলটাও হতে পারে যথেষ্ট। আমরা রাজনীতি যা আলোচনা করতে পারি, তা হলো মূল প্রবণতা; কিন্তু মূল প্রবণতা সম্পর্কেও দেখা দিতে পারে মতভেদ। ইতিহাসের সব ঘটনা সবার কাছে একই রকম গুরুত্ববহ হয় না। ১৯৭২ সালের জানুয়ারি মাসে ঘটনাচক্রে আমি ছিলাম কলকাতায়। এ সময় কলকাতায় ট্রামে বাসে অনেককে বলতে শুনেছি, ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে স্বীকার করে ভুল করলেন। কারণ বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি হয়ে উঠতে পারে ভারতের পরিপন্থী। কিন্তু ইন্দিরা গান্ধী যে স্বেচ্ছায় বাংলাদেশের পূর্ণস্বাধীনতাকে স্বীকার করেছিলেন, তা নয়। তিনি বাংলাদেশের পূর্ণস্বাধীনতাকে মেনে নিয়েছিলেন নিজের ইচ্ছায় নয়, সে সময়ের আন্তর্জাতিক চাপে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চাপে। তা না হলে, মার্কিন মেরিন সৈন্যরা সপ্তম নৌবহর থেকে অবতরণ করত বাংলাদেশে। সেটা ছিল ঠা া লড়াইয়ের যুগ। ভারত ও সোভিয়েত ইউনিয়ন তখন ছিল একই অক্ষে। সে সময় কেউ ভাবতে পারেনি যে, আর মাত্র ১৯ বছরের মধ্যেই মহাশক্তিধর সোভিয়েত ইউনিয়ন তার অভ্যন্তরীণ অসঙ্গতির জন্য ভেঙে পড়বে করুণভাবে। সবাই ১৯৭২ সালে কলকাতায় ছিল না। আমার কলকাতার অভিজ্ঞতা আমাকে ভাবিয়েছে ভিন্নভাবে। আমার কাছে মনে হয়েছিল আর এখনো মনে হয়, ভারত যেন ভেতরে ভেতরে করে চলেছে বাংলাদেশকে কব্জা করবার পরিকল্পনা। ইতিহাসে পড়েছিলাম, লর্ড ওয়েলসি তার সময়ের (১৭৫৮-১৮৩৫) তদানীন্তন ভারতের শক্তিগুলোকে ব্রিটিশ অধীনতা পাশে আবদ্ধ করার জন্য গ্রহণ করেছিলেন ‘অধীনতামূলক মিত্রতার’ (Subsidiary Alliance) নীতি। ভারত সরকারও যেন সেই একই রকম নীতি অনুসরণ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে। কলতাকায় শুনেছিলাম, তাজউদ্দীন সরকার ইন্দিরা গান্ধীকে কথা দিয়েছিল যে, বাংলাদেশ রাখবে কেবল হালকা অস্ত্রধারী মিলিশিয়া বাহিনী। কিন্তু বাংলাদেশের থাকবে না ভারী অস্ত্রধারী প্রকৃত সেনাবাহিনী। তাই অতীতের এসব কথা যখন আমার মনে পড়ে, তখন ভারতের নীতি সম্বন্ধে আমার মনে জেগে উঠতে চায় বহুবিধ জিজ্ঞাসা। বর্তমানে আমাদের দেশে অনেক চিন্তক ব্যক্তি বলছেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিদেশী হস্তক্ষেপ অকাম্য। কিন্তু বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিদেশী হস্তক্ষেপ শুরু হতে পেরেছে প্রায় জন্মলগ্ন থেকেই। ১৯৭১ সালের ৩০ মার্চ ইন্দিরা গান্ধী ভারতের পার্লামেন্ট বলেছিলেন, পূর্ব বাংলার মানুষের স্বাধীনতা সংগ্রামে ভারত তাদের পাশে থাকবে। তার এই আশ্বাসে ভারতের কলকাতা শহরে গঠিত হতে পেরেছিল প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার। এখনো ভারতবান্ধব সরকারের পাশে আছে ভারত। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহকে উপলব্ধি করতে হলে ভারত-গুণক (India factor) বাদ দেয়া চলে না। যদিও আমাদের দেশের বেশির ভাগ পত্রপত্রিকা ও টেলিটকে গ্রহণ করা হয় না ভারত-গুণককে। তবে ভারতের নীতির কারণে আবারো রক্তঝরা হয়ে উঠতে পারে ভারতের পশ্চিম ও পূর্ব প্রান্তর।
ভারত বলতে আমরা বুঝছি, হিন্দু ভারতকে। হিন্দুত্বকে বাদ দিয়ে ভারতের মূলনীতিকে বিশ্লেষণ করা চলে না। তাই ভারতের কথা বলতে গেলে অনিবার্যভাবে আসে হিন্দুত্বের কথা। আর এক কথায়, হিন্দু সংস্কৃতির কথা। হিন্দু সংস্কৃতির একটা বড় বৈশিষ্ট্য হলো বর্ণশ্রম বা জাতিভেদপ্রথা বা কাস্ট সিস্টেম। বিষয়টি নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। সব হিন্দু সংস্কৃতিকে বুঝতে হলে এই বর্ণব্যবস্থাকে উপলব্ধি করতে হয়। প্রাচীন হিন্দুসমাজে সম্ভবত প্রথমে ছিল ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্র। ব্রাহ্মণদের কাজ ছিল ধর্মকর্ম ও উচ্চচিন্তা। তাদের সাধারণভাবে বলা যায় পুরোহিত ও শিক্ষিত শ্রেণী। ক্ষত্রিয়দের কাজ ছিল ক্ষেত্র বা দেশ রক্ষার জন্য যুদ্ধ করা। বৈশ্যদের কাজ ছিল ব্যবসায়-বাণিজ্য আর শূদ্রদের কাজ ছিল কায়িক শ্রম। শূদ্ররা বিবেচিত ছিল সবচেয়ে ঘৃণ্য ও নীচু শ্রেণীর মানুষ হিসেবে। মহাভারতের একটি শ্লোকে বলা হয়েছেÑ ব্রাহ্মণরা হয় ফর্সা। ক্ষত্রিয়রা হলো রক্তাভ, বৈশ্যরা হলো পীতাভ আর শূদ্ররা হলো কৃষ্ণকায়। অর্থাৎ প্রাচীনকালে বর্ণব্যবস্থার উদ্ভব হয়তো হতে পেরেছিল মানবধারার পার্থক্যজনিত কারণেই। হিন্দু ধর্ম সম্পর্কে মন্তব্য করতে যেয়ে নৃতাত্ত্বিক ক্রোয়েবার (Kroeber) বলেছেন : যে অর্থে খ্রিষ্ট ধর্ম, ইসলাম ধর্ম, বৌদ্ধ ধর্র্ম একটি ধর্ম, হিন্দু ধর্ম ঠিক সে অর্থে ধর্ম নয়। হিন্দু ধর্মের কোনো একজন প্রতিষ্ঠাতা নেই। এর মধ্যে কোনো সুনির্দিষ্ট বিশ্বাসের বুনিয়াদ নেই। বিদেশীকে হিন্দু ধর্ম এড়িয়ে যেতে চায়। গ্রহণ করতে চায় না। হিন্দু ধর্ম প্রচার করা চলে না। কেউ হিন্দু হতে পারে না। হিন্দু ধর্মের মধ্যে কোনো বিশ্বজনীন আবেদন নেই। (A. L. Kroeber, Anthropology, Indian Edition, 1967, p. 752)। এই উপমহাদেশের ইতিহাস আলোচনা করলে আমরা দেখতে পাই, মধ্য এশিয়া থেকে লোক এসে গড়ে তুলতে পেরেছে বিশাল সাম্র্রাজ্য। কুশানেরা মধ্য এশিয়া থেকে এসেছিল এবং এরা ছিল তুর্কি পরিবারভুক্ত ভাষাভাষী। হিন্দু ধর্ম বিদেশীদের এড়িয়ে যেতে চাইলেও শক্তিমান বিদেশীকে আবার করেছে কিছুটা মান্য। কুশানেরা পেয়েছে বিশেষ মান্যতা। আর পরে এরা বিবেচিত হয়েছে ক্ষত্রিয় রূপে। এই উপমহাদেশের মুসলমানেরা মূলত এসেছিল মধ্য এশিয়া থেকে। এরাও ছিল তুর্কি ভাষাভাষী। কিন্তু এরা হয়ে ওঠেনি ক্ষত্রিয়। এর কারণ, ইসলাম ধর্মের স্বাতন্ত্র্য। আর এই স্বাতন্ত্র্য সৃষ্টি করতে পেরেছে এই উপমহাদেশের রাজনীতিতে বিশেষ জটিলতা। যার জের এখনো চলেছে। ভারতের উত্তর প্রদেশে (ইউপি) চলেছে হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গা, যার একটি বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারছে এ দেশের মুসলিম-মানসে। আওয়ামী লীগ ভারতবান্ধব দল। এ দেশের বিরাটসংখ্যক মুসলমানের কাছে আওয়ামী লীগ বিবেচিত হতে পারছে হিন্দুবান্ধব দল হিসেবে। যা সৃষ্টি করতে পারছে রাজনৈতিক জটিলতা। আর হতে পারে রক্তঝরার একটি কারণ। গত বছর দুর্গাপূজার সময় শেখ হাসিনা বলেছিলেন, দুর্গাপূজা হলো বাঙালি সংস্কৃতির উৎস। আওয়ামী লীগের বাঙালি জাতীয়তাবাদ আর হিন্দুত্বের মধ্যে পার্থক্য টানা হয়ে উঠেছে কঠিন। ভারতে ছাত্রদের পড়ানো হচ্ছে ‘বৃহত্তর ভারতের’ ‘গ্রেটার ইন্ডিয়া’র কথা। বৃহত্তর ভারতের এই ধারণার মধ্যে আসছে সমগ্র দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কথা। যেখানে একসময় পড়েছিল হিন্দু ধর্ম তথা সভ্যতার প্রভাব। কিন্তু দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিরাট অংশজুড়ে মানুষ এখন গ্রহণ করেছে ইসলাম। মালয়েশিয়ার জনসমষ্টির শতকরা ৬৬ ভাগ হলো মুসলমান। মালয়েশিয়ায় ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে সরকারিভাবে ঘোষণা করা হয়েছে। মালয়েশিয়ার মোট জনসমষ্টির শতকরা ১০ ভাগের কাছাকাছি হলো ভারত থেকে যাওয়া হিন্দু (মূলত তামিল)। এরা চাচ্ছে মালয়েশিয়ার রাজনীতিতে ভারতের হস্তক্ষেপ। ভবিষ্যতে ভারত মালয়েশিয়ার রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করতে চাইতে পারে। ইন্দোনেশিয়ার বলি (বালি) দ্বীপের হিন্দুরা চাচ্ছে সে দেশে বাড়–ক ভারতীয় প্রভাব। এই বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ভারত প্রভাব বিস্তার করতে যেয়ে জড়িয়ে পড়তে পারে যুদ্ধে। যে কারণেও আগামী দিনগুলো হতে পারে রক্তঝরা। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে ভারত নাকি গড়ে তুলছে শক্তিশালী সামরিক ঘাঁটি, যেখানে ইতোমধ্যেই নিতে হয়েছে পারমাণবিক অস্ত্র। নিকোবার দ্বীপপুঞ্জ থেকে ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা দ্বীপ মোটেও দূরে অবস্থিত নয়।
ভারত করে চলেছে বিপুল সমর আয়োজন। মাত্র ক’দিন আগে ভারত তার নিজের তৈরী বিমানবাহী রণতরী আইএনএস বিক্রান্ত সাগরে ভাসালো। (ভারতের আগে কেবল যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, রাশিয়া, ফ্রন্স ও চীন এ ধরনের বৃহৎ রণতরী নির্মাণে সক্ষম হয়েছে), যা প্রমাণ করছে তার সামরিক শক্তি বাড়িয়ে তোলার চেষ্টাকে। বিমানবাহী জাহাজ যতটা না লাগে একটা দেশের আত্মরক্ষার কাজে, তার চেয়ে বেশি কাজে আসে অন্য দেশকে আক্রমণে। ক’দিন আগে খবরের কাগজে দেখলাম ভারত সরকার বাংলাদেশ ও পাকিস্তান সীমান্তে ড্রোন ওড়ানোর ব্যবস্থা করছে। যা তার সমর প্রস্তুতিরই পূর্বাভাস বলে মনে করা যায়। পাকিস্তান সীমান্তে ড্রোন ওড়ানোর একটা কারণ হতে পারে, স্বাধীনতাকামী শিখদের ওপর নজরদারি করা। এরা পাকিস্তান থেকে কোনো সমরাস্ত্র পেতে পারছে কি না, সেটার তথ্য সংগ্রহ করা। কিন্তু বাংলাদেশের সীমান্তে ড্রোন ওড়ানোর প্রয়োজনীয়তা আমাদের কাছে স্বচ্ছ হতে পারছে না। আমরা জানি না, আমাদের দেশে আগামী নির্বাচন যথা সময়ে হতে পারবে কি না। কারণ আমাদের সংবিধান মতে সংসদের মেয়াদকাল পাঁচ বছরের বেশি হতে পারবে না। কেবল যুদ্ধের কারণে এর ব্যতিক্রম হতে পারে। ভারত যদি বাংলাদেশের সীমান্তে একটা যুদ্ধাবস্থার সৃষ্টি করে, তবে বাড়বে আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদের আয়ু। ভারতের পত্রপত্রিকার বিভিন্ন খবরেও এমন সংশয় প্রকাশ করা হচ্ছে বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন নিয়ে।
ভারত স্বাধীন হওয়ার আগে পণ্ডিত জওয়াহেরলাল নেহরু ‘দ্য ডিসকভারি অব ইন্ডিয়া’ নামে একটি বই লেখেন। বইটি খুব প্রসিদ্ধি পায়। এই বইয়ের একটি অধ্যায়ে বলা হয়েছে, পৃথিবীতে ছোট রাষ্ট্রগুলোর কোনো ভবিষ্যৎ নেই। তাদের শেষ পর্যন্ত মিশে যেতে হবে বড় রাষ্ট্রগুলোর সাথে। মনে হয়, নেহরুর এই বিশ্বাস কাজ করছে ভারতের পররাষ্ট্রনীতি গঠনে। ভারতীয় সংবিধানের ৩৬৭ নম্বর ধারার ৩ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘ভারত ব্যতীত যেকোনো রাষ্ট্র বিদেশী রাষ্ট্র। কিন্তু ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রয়োজনে কোনো রাষ্ট্রকে বিদেশী রাষ্ট্র নয় বলে ঘোষণা করতে পারেন।’ ভারতের সংবিধানের এই অংশ মোটেও স্বচ্ছ নয়। ভারত যেকোনো রাষ্ট্র দখল করে তাকে ভারতের অংশ হিসেবে ঘোষণা করতে পারে। ভারতের সংবিধানে এই সুযোগ রাখা হয়েছে। অন্য কোনো দেশের সংবিধানে এ রকম কোনো সুযোগ রাখা হয়েছে কি না, আমরা তা জানি না। ভারতের প্রতিবেশী রাষ্ট্ররা তাই সঙ্গতভাবেই ভাবতে পারে, ভারত একটা বিপজ্জনক প্রতিবেশী। ১৯৭৫ সালের ৬ এপ্রিল ভারত সিকিম জয় করে। এবং ভারতীয় সংবিধানের ৩৬৭ নম্বর ধারার ৩ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সিকিমকে পরিণত করে ভারতের একটি অঙ্গরাষ্ট্রে। ঘটনাটি ঘটেছিল শেখ মুজিব নিহত হওয়ার পাঁচ মাস আগে।
বাংলাদেশের ভবিষ্যতে ঠিক কী ঘটতে যাচ্ছে, আমাদের মতো অবিশেষজ্ঞদের পক্ষে তার অনুমান করা হয়ে উঠেছে কঠিন। বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান (Geographical Position) তাকে সামরিক দিক থেকে করে তুলেছে গুরুত্বপূর্ণ। চীনের সাথে চলেছে ভারতের সীমান্তবিরোধ। চীন চাচ্ছে, বাংলাদেশে তার প্রভাব বাড়াতে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও চাচ্ছে না যে, বাংলাদেশ থাকুক ভারতের প্রভাববলয়ে। সেও চাচ্ছে, বাংলাদেশে তার রাজনৈতিক প্রভাব বাড়াতে। বাংলাদেশ ভূম লীয় রাজনৈতিক (Geopolitical) কারণে হয়ে উঠেছে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। সেটাও হতে পারে আগামী দিনগুলো বাংলাদেশে রক্তঝরার বিশেষ কারণ। আমরা এখন ভোট নিয়ে খুব ভাবছি। দেশে গণতান্ত্রিক জীবন বিধান (Way of living) গড়তে হলে ভোট অবশ্য অপরিহার্য। কিন্তু বাংলাদেশকে তার জাতীয় নীতি রচনা করতে হলে অবশ্যই বিবেচনা করতে হবে ভূম লীয় রাজনীতিকে।
আমার ভাবনা ধারণা অনেকের সাথেই মেলে না। এর একটা সাধারণ কারণ হচ্ছে, মানুষের চিন্তাধারা নির্ভর করে তার আপন অভিজ্ঞতার ওপর। সবার জীবনের অভিজ্ঞতা এক নয়। তাই হতে পারে মতপার্থক্য। রাজনীতি অঙ্কের হিসাব নয়। তাই এখানে মতের অমিলটাও হতে পারে যথেষ্ট। আমরা রাজনীতি যা আলোচনা করতে পারি, তা হলো মূল প্রবণতা; কিন্তু মূল প্রবণতা সম্পর্কেও দেখা দিতে পারে মতভেদ। ইতিহাসের সব ঘটনা সবার কাছে একই রকম গুরুত্ববহ হয় না। ১৯৭২ সালের জানুয়ারি মাসে ঘটনাচক্রে আমি ছিলাম কলকাতায়। এ সময় কলকাতায় ট্রামে বাসে অনেককে বলতে শুনেছি, ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে স্বীকার করে ভুল করলেন। কারণ বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি হয়ে উঠতে পারে ভারতের পরিপন্থী। কিন্তু ইন্দিরা গান্ধী যে স্বেচ্ছায় বাংলাদেশের পূর্ণস্বাধীনতাকে স্বীকার করেছিলেন, তা নয়। তিনি বাংলাদেশের পূর্ণস্বাধীনতাকে মেনে নিয়েছিলেন নিজের ইচ্ছায় নয়, সে সময়ের আন্তর্জাতিক চাপে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চাপে। তা না হলে, মার্কিন মেরিন সৈন্যরা সপ্তম নৌবহর থেকে অবতরণ করত বাংলাদেশে। সেটা ছিল ঠা া লড়াইয়ের যুগ। ভারত ও সোভিয়েত ইউনিয়ন তখন ছিল একই অক্ষে। সে সময় কেউ ভাবতে পারেনি যে, আর মাত্র ১৯ বছরের মধ্যেই মহাশক্তিধর সোভিয়েত ইউনিয়ন তার অভ্যন্তরীণ অসঙ্গতির জন্য ভেঙে পড়বে করুণভাবে। সবাই ১৯৭২ সালে কলকাতায় ছিল না। আমার কলকাতার অভিজ্ঞতা আমাকে ভাবিয়েছে ভিন্নভাবে। আমার কাছে মনে হয়েছিল আর এখনো মনে হয়, ভারত যেন ভেতরে ভেতরে করে চলেছে বাংলাদেশকে কব্জা করবার পরিকল্পনা। ইতিহাসে পড়েছিলাম, লর্ড ওয়েলসি তার সময়ের (১৭৫৮-১৮৩৫) তদানীন্তন ভারতের শক্তিগুলোকে ব্রিটিশ অধীনতা পাশে আবদ্ধ করার জন্য গ্রহণ করেছিলেন ‘অধীনতামূলক মিত্রতার’ (Subsidiary Alliance) নীতি। ভারত সরকারও যেন সেই একই রকম নীতি অনুসরণ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে। কলতাকায় শুনেছিলাম, তাজউদ্দীন সরকার ইন্দিরা গান্ধীকে কথা দিয়েছিল যে, বাংলাদেশ রাখবে কেবল হালকা অস্ত্রধারী মিলিশিয়া বাহিনী। কিন্তু বাংলাদেশের থাকবে না ভারী অস্ত্রধারী প্রকৃত সেনাবাহিনী। তাই অতীতের এসব কথা যখন আমার মনে পড়ে, তখন ভারতের নীতি সম্বন্ধে আমার মনে জেগে উঠতে চায় বহুবিধ জিজ্ঞাসা। বর্তমানে আমাদের দেশে অনেক চিন্তক ব্যক্তি বলছেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিদেশী হস্তক্ষেপ অকাম্য। কিন্তু বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিদেশী হস্তক্ষেপ শুরু হতে পেরেছে প্রায় জন্মলগ্ন থেকেই। ১৯৭১ সালের ৩০ মার্চ ইন্দিরা গান্ধী ভারতের পার্লামেন্ট বলেছিলেন, পূর্ব বাংলার মানুষের স্বাধীনতা সংগ্রামে ভারত তাদের পাশে থাকবে। তার এই আশ্বাসে ভারতের কলকাতা শহরে গঠিত হতে পেরেছিল প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার। এখনো ভারতবান্ধব সরকারের পাশে আছে ভারত। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহকে উপলব্ধি করতে হলে ভারত-গুণক (India factor) বাদ দেয়া চলে না। যদিও আমাদের দেশের বেশির ভাগ পত্রপত্রিকা ও টেলিটকে গ্রহণ করা হয় না ভারত-গুণককে। তবে ভারতের নীতির কারণে আবারো রক্তঝরা হয়ে উঠতে পারে ভারতের পশ্চিম ও পূর্ব প্রান্তর।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন