বিএনপি চেয়ারপার্সন ও ১৮ দলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সংলাপের তাগিদ দিয়ে তাকে লেখা যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরীর পত্রের জবাব দিয়েছেন বলে জানা গেছে। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরানুযায়ী বেগম জিয়া তার পত্রে বলেছেন, বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে বিশ্ব নেতারা যে অনিশ্চয়তা ও উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের মানুষও একইভাবে উদ্বিগ্ন। তিনি পত্রে বলেছেন যে তিনি মনে করেন চলমান এই সংকট নিষ্পত্তির একমাত্র পন্থা হবে একটি অর্থবহ সংলাপের মাধ্যমে সমাধান বের করা। এ ব্যাপারে তিনি জাতিসংঘের ভূমিকার গুরুত্ব ব্যাখ্যা করেছেন এবং বলেছেন যে, জাতিসংঘ অতীতেও উদ্যোগ নিয়েছিল এবং এখনো উদ্যোগ নিলে বিএনপি তাতে সাড়া দেবে। বিএনপি জোট সংলাপে প্রস্তুত থাকলেও সরকারি নির্লিপ্ততা কার্যকর সংলাপের পথে প্রধান প্রতিবন্ধক বলে বেগম জিয়া তার পত্রে উল্লেখ করেছেন।
বেগম জিয়ার এই অবস্থানের সাথে আমরাও একমত পোষণ করি। সরকার তার মেয়াদের শেষ পর্যায়ে এসে পৌঁছেছেন এবং ইতোমধ্যে পুনরায় ক্ষমতায় ফিরে আসার সমস্ত ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করে নিয়েছেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করে ক্ষমতায় এসে তারা তাদের ইচ্ছামতো সংসদে ব্রুট মেজরিটির সুযোগ নিয়ে সংবিধান সংশোধন করে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করেছেন। শুধু তাই নয় সংবিধানে তারা এমন একটি নির্বাচনী ব্যবস্থা সংযোজন করেছেন যাতে সংসদ এবং মন্ত্রিপরিষদ বহাল রেখেই নির্বাচন করা যায়। দেশের শতকরা ৯০ ভাগ মানুষ আওয়ামী লীগ কর্তৃক এককভাবে সংশোধিত সাংবিধানিক এই ব্যবস্থার অধীনে নির্বাচনে যেতে চান না। কেননা সরকারি দল ও বিরোধী দলের প্রার্থীদের জন্য এখানে Level Playing ground এর কোন ব্যবস্থা নেই। এছাড়াও ইউনিয়ন থেকে রাজধানী পর্যন্ত সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, দফতর-অধিদফতর, বিভাগ, এজেন্সি, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন সর্বত্র এই সরকার দলীয়করণের এমন জাল বিস্তার করেছেন যা ছিঁড়তে না পারলে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন করা কিছুতেই সম্ভবপর নয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকেও তারা দলীয় ভিত্তিতে এমনভাবে বিন্যাস করেছেন যাতে পোলিং কর্মকর্তাদের নিয়োগের ক্ষেত্রে আওয়ামী সমর্থকরা প্রাধান্য পায়। দলীয় পুলিশ ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তো আছেই। এই অবস্থায় দেশে একটা নির্দলীয় নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে পারে না এবং এই বাস্তবতার প্রেক্ষিতে দেশের ৯০ ভাগ মানুষ, দেশপ্রেমিক বুদ্ধিজীবী, আইনজ্ঞ ও সুশীল সমাজের সদস্যরা মনে করেন যে, নির্দলীয় সরকারের অধীনে ছাড়া অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। সরকার এক্ষেত্রে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের জন্য গোঁ ধরে আছেন। ফলে দেশ সংঘাতের মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়েছে। সংলাপ ছাড়া এ সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। সংলাপের বিকল্প হচ্ছে তীব্র গণআন্দোলন ও সরকার পতনের একদফা কর্মসূচি। জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ দেশী-বিদেশী বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ সংলাপের আহ্বান জানিয়েছেন। বান কি মুনের বিশেষ দূতও দু’নেত্রীর সাথে এ ব্যাপারে দেখা করেছেন। মহাসচিব প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেত্রীর সাথে টেলিফোনে আলাপও করেছেন। কিন্তু সরকার সংলাপের ইতিবাচক কোনও সাড়া দিচ্ছেন না। আমরা সরকারের এই বেপরোয়া মনোভাবের তীব্র নিন্দা জানাই। যদি সংলাপ না হয় তাহলে দেশে যে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়বে তার জন্য সরকারই দায়ী হবেন বলে আমরা মনে করি। সরকারের কোন কোন মন্ত্রী বলে বেড়াচ্ছেন যে, আন্দোলন করার ক্ষমতা বিরোধী দলের নেই। তারা মনে করেন যে, গত পৌনে পাঁচ বছরে সরকার বিরোধী দলের ওপর যে অত্যাচার নিপীড়ন চালিয়েছে এবং হাজার হাজার মামলা, লাখ লাখ বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মীদের মামলায় জড়ানো হয়েছে তাতে বিরোধী দল কোমর সোজা করে আন্দোলন করতে পারবে না। এটা সরকারি দল ও সরকারের আত্মতুষ্টি হতে পারে কিন্তু বাস্তব তা নয়। এই আত্মতুষ্টির কাছে আত্মসমর্পণ না করার জন্য আমরা সরকারকে অনুরোধ করবো। তা না হলে আন্দোলনের জোয়ারে তারা ভেসে যেতে পারেন। কাজেই সময় থাকতে সমঝোতা ও সংলাপের মাধ্যমে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করার জন্য আমরা সরকারের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন