অব্যক্ত কিছু কারণসহ (যেমন নির্বাচনকালীন সরকার সম্পর্কে সরকার ও বিরোধীদলীয় জোটের বিবাদ-মীমাংসায় কূটনৈতিক উদ্যোগকে সুযোগদান) হজযাত্রীদের হাজী ক্যাম্পে আগমন ও বিমান আরোহণে যাতে বাধার সৃষ্টি না হয় সে জন্য রাজপথে প্রতিবাদ বিােভ দুই ঈদের মধ্যে স্থগিত রেখেছিলেন সংসদীয় বিরোধী দলনেতা ও ১৮ দলীয় জোটনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। শুধু গণসংযোগ, বিভাগীয় বা জেলা শহরগুলোতে সফর ও জনসভার মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখেছিলেন সরকারবিরুদ্ধ প্রাক-নির্বাচন বাগ্যুদ্ধের তৎপরতা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও সদলবলে ও সপুত্র অবতীর্ণ হয়েছিলেন সভা-সমিতি ও বিলবোর্ড রাজনীতির মাধ্যমে বিরোধীদলীয় জোটের গোষ্ঠীর ফয়তা আর তার সরকারের গুণকীর্তনের প্রাক-নির্বাচন প্রচারযুদ্ধে। কিন্তু মন্ত্রিসভা ও প্রধানমন্ত্রীর দফতরী কর্মকর্তাদের মধ্যকার নয়া বাকশালপন্থীদের তর সইলো না। এই আপেকি শান্তিভঙ্গের কারণ ঘটল যখন দেশের সর্বোচ্চ আদালতের গরমের ছুটি শেষ হতে না হতেই ১৭ সেপ্টেম্বর সকাল ৯টা ৩৬ মিনিটে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত যুদ্ধাপরাধের কয়েদি জামায়াত নেতা আবদুল কাদের মোল্লার আপিল আবেদনের রায় ঘোষিত হলো। সরকারপও ইতোমধ্যে জরুরিভাবে যুদ্ধাপরাধ বিচারের এ দেশীয় আইনটি সংশোধন করে ওই জামায়াত নেতার সাজা বৃদ্ধির জন্য আপিল করেছেন। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে কয়েদি জামায়াত নেতার আবেদন অগ্রাহ্য হলো আর ট্রাইব্যুনালের সিদ্ধান্ত বহাল রেখে সাজা বাড়িয়ে কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় ঘোষণা হলো। অনিবার্য প্রতিক্রিয়া : সারা দেশে রাজপথে ফেটে পড়ল ১৮ দলীয় বিরোধী জোটের দ্বিতীয় প্রধান শরিক জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীদের প্রতিবাদ বিােভ ভাঙচুর আগুন, আর পরদিন সকাল থেকে ৪৮ ঘণ্টার লাগাতার হরতালের ঘোষণা। ফলাফল : হরতালের প্রথম দিন রাজধানীসহ সারা দেশ অচল হয়ে পড়ে। দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশের সাথে হরতাল সমর্থকদের বিচ্ছিন্ন সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে হরতাল চলাকালে ইটের আঘাতে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছে। হরতাল সমর্থকেরা মিছিল ও পিকেটিং করার চেষ্টা চালালেই পুলিশ সেখানে গুলি ও টিয়ার শেল নিপে করে। পুলিশের গুলি, টিয়ার শেল, লাঠিপেটা, ইটপাটকেল নিপে, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় নারী ও শিশুসহ শতাধিক আহত হয়েছে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেফতার হয়েছেন তিন শতাধিক নেতাকর্মী। সীতাকুণ্ড ও সাতকানিয়ায় হরতাল সমর্থকদের সাথে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। সীতাকুণ্ডে পুলিশের গুলি, রাবার বুলেট ও টিয়ার শেলের আঘাতে নারী ও শিশুসহ ১৫ জন আহত হন। পাঁচ পুলিশ সদস্যও আহত হন। পাইকারি বাজার ও খুচরা বাজারের খবর : রাজনৈতিক অস্থিরতায় ব্যবসা-বাণিজ্যে চরম মন্দা ভাব দেখা দিয়েছে। বিনিয়োগ পরিস্থিতি তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। স্থবির হয়ে পড়ছে বেশির ভাগ কলকারখানার উৎপাদন। ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ছোট-বড় অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। প্রতিকূল পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন হাজার হাজার কর্মজীবী মানুষ। অভ্যন্তরীণ সরবরাহব্যবস্থায় ব্যাঘাতের কারণে বেড়ে যাচ্ছে নিত্যপণ্যের দাম। চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম ও যোগাযোগব্যবস্থা ব্যাহত হওয়ায় আমদানি-রফতানিতে পড়ছে নেতিবাচক প্রভাব। ২২ সেপ্টেম্বর দাপট দেখাতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ শিার্থীদের ল্য করে গুলিবর্ষণ ও ককটেল নিপে করেছে পুলিশ ও ছাত্রলীগ ক্যাডারেরা। এতে তিনজন গুলিবিদ্ধসহ ১০ শিার্থী আহত হয়েছে। জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় ঘোষণায় প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক-ভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ওয়েবসাইটে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বলেছেÑ আবদুল কাদের মোল্লার বিচার সম্পন্ন হওয়ার পর আইন সংশোধন করে তাকে যে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেয়া হয়েছে, তা আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচারের মানদণ্ডের লঙ্ঘন। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে সংঘটিত নৃশংসতার নিরপে ও স্বচ্ছ বিচারের উদ্যোগ সমর্থন করে এবং বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে (আইটিসি) অভিযুক্ত আসামিদের পে বা বিপে অবস্থান গ্রহণ করেনি। কিন্তু বিচারের পর আইনের পরিবর্তন এবং সেটি পূর্ববর্তী সময় থেকে কার্যকর করার বিষয়টি আন্তর্জাতিক আইনের দৃষ্টিতে ন্যায়বিচারের মৌলিক ধারণার সাথে সাংঘর্ষিক। বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল কভেন্যান্ট অন সিভিল অ্যান্ড পলিটিক্যাল রাইটসে (আইসিসিপিআর) স্বার করেছে। এই সংশোধনীটি ওই বিধানেরও সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। সাম্য প্রতিষ্ঠা এবং আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করার জন্য সুনির্দিষ্ট মৌলিক অধিকার হরণকারী সংবিধান সংশোধনী বাতিল করা উচিত। বাংলাদেশের সংবিধানে আইনের পূর্ববর্তী প্রয়োগের বিরুদ্ধে কিছু সুরা থাকলেও ওই সংশোধনীটি যুদ্ধাপরাধের জন্য অভিযুক্ত ব্যক্তির েেত্র প্রযোজ্য নয় বলা হয়েছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ দীর্ঘ দিন থেকেই আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘনকারী এই সংশোধনীটি বাতিলের আহ্বান জানিয়ে আসছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ সব পরিস্থিতিতেই মৃত্যুদণ্ডকে চরম নির্মম ও মর্যাদাহানিকর শাস্তি বিবেচনা করে। যেসব েেত্র মৃত্যুদণ্ডযোগ্য শাস্তির বিধান রয়েছে, সেসব মামলার বিচার আরো নিরপে মানদণ্ডে সম্পন্ন হওয়া উচিত। যুক্তরাজ্যের লন্ডনভিত্তিক অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ওয়েবসাইটে পোস্ট করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়। ‘গত ফেব্র“য়ারিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি) মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। আমরা সুপ্রিম কোর্টের রায় এবং মোল্লাকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান নিশ্চিত করতে সরকারের দৃশ্যমান নিরন্তর উদ্যোগে খুবই উদ্বিগ্ন। আমরা তার মৃত্যুদণ্ডাদেশ হ্রাস করার জন্য এবং মৃত্যুদণ্ডাদেশ বিলুপ্ত করার প্রথম পদপে হিসেবে দণ্ড কার্যকর বিলম্বিত করার জন্য বাংলাদেশ কর্তৃপরে কাছে অনুরোধ করছি। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত কাদের মোল্লার যে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন তাতে আপিল করার কোনো সুযোগ নেই। আপিলের সুযোগ ছাড়া মৃত্যুদণ্ডাদেশ আরোপ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের আওতায় বাংলাদেশের বাধ্যবাধকতার সাথে সাংঘর্ষিক। বিচারিক আপিলের অধিকার ছাড়া মৃত্যুদণ্ডাদেশ আরোপ মানবাধিকার আইনের লঙ্ঘন। বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে তির শিকার ব্যক্তিদের বিচার পাওয়ার যে অধিকার রয়েছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে একটি মানবাধিকার লঙ্ঘন, আরেকটি মানবাধিকার লঙ্ঘনের অজুহাত হতে পারে না। ফাঁসি সহিংসতার সংস্কৃতির আলামত, এর সমাধান নয়। এই প্রথম বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত কারাদণ্ডপ্রাপ্ত কোনো আসামিকে সরাসরি মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিলেন। বাংলাদেশে এটিই প্রথম কোনো মৃত্যুদণ্ডাদেশ, যেখানে আপিলের কোনো অধিকার নেই।’ এ ছাড়া জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার মামলায় রিভিউয়ের সুযোগ দেয়া উচিত বলে মত দিয়েছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধাপরাধবিষয়ক অ্যাম্বাসেডর অ্যাট লার্জ স্টিফেন জে র্যাপ। ঢাকার ইংরেজি দৈনিক নিউ এজসহ সংবাদমাধ্যমের সাথে টেলিফোনে আলাপকালে তিনি এ মত দেন। তিনি বলেন, যদিও আমি ট্রাইব্যুনালের বিচারপ্রক্রিয়ার আরো বেশ কিছু দিক নিয়ে উদ্বিগ্নÑ তবে এখন আমার সবচেয়ে বড় উদ্বেগের ব্যাপার হচ্ছে, আমি মনে করি, মৃত্যুদণ্ডের েেত্র কাদের মোল্লার রিভিউর সুযোগ পাওয়া উচিত। মৃত্যুদণ্ডের েেত্র প্রথম সিদ্ধান্তই শেষ সিদ্ধান্ত হওয়া উচিত নয়। যেকোনো পরিস্থিতিতে বিশ্বের যেকোনো দেশে কাউকে যখন মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়, তখন তাকে তা চ্যালেঞ্জের সুযোগ দেয়া হয়। সাধারণত অন্য আদালতে অন্য পর্যায়ে এ সুযোগ দেয়া হয়; কিন্তু এখানে সে সুযোগ নেই। আমি মনে করি এটি স্বচ্ছপ্রক্রিয়া নয়। কাদের মোল্লার েেত্র যেসব তথ্যপ্রমাণ হাজির করা হয়েছে, তা তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার েেত্র যথেষ্ট কি না তার পরীার জন্য রিভিউয়ের প্রয়োজন রয়েছে। অন্য দিকে বিবিসি বাংলা জানিয়েছে, বিচারপ্রক্রিয়া নিয়ে যে নানা ধরনের বিতর্ক চলছে, সেই পটভূমিতে প্রতিবেশী দেশ ভারত স্পষ্ট করে এই বিচারের সমর্থনে এগিয়ে এসেছে। এই বিচারপ্রক্রিয়ার নানা সীমাবদ্ধতা নিয়ে যেসব অভিযোগ উঠেছে, সেসব পদ্ধতিগত বিষয় নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে ভারত রাজি নয় বলে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সৈয়দ আকবর উদ্দিন বলেন, ‘যদিও এটা বাংলাদেশ তথা সে দেশের মানুষের অভ্যন্তরীণ বিষয় ও তারাই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন। তার পরও আমরা মনে করি এখন যাদের বিচার চলছে তারা ১৯৭১-এ যে নৃশংস অপরাধ করেছিলেন বিচার নিশ্চিত করে তারা যে এর কোসার বা নিষ্পত্তি চাইবেনÑ সেটা আমরা উপলব্ধি করি। বিচারপ্রক্রিয়ার খুঁটিনাটি বা আলাদা করে প্রতিটি মামলার ভেতরে আমরা ঢুকতে চাই না; কিন্তু পাশাপাশি আমরা এটাও বলতে চাই, বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থার ওপর আমাদের সম্পূর্ণ আস্থা আছে এবং আমাদের বিশ্বাস, এই বিচারের মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষ ন্যায়বিচার পাবেন।’ এর আগে যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে ঢাকার শাহবাগে যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল, তার প্রতি প্রকাশ্যেই সংহতি জানিয়েছিলেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সালমান খুরশিদ কিংবা ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিবশঙ্কর মেনন। বস্তুত বাংলাদেশে শুধু যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়ার প্রশ্নে নয়, বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচনপ্রক্রিয়ার প্রশ্নেও ভারতের সাথে পাশ্চাত্য বিশ্বের মতভেদ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।এ দেশের সংবাদভাষ্যকাররা বলছেনÑ প্রায় দুই বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাাতের সুযোগ না পাওয়া, নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে সরকারের বৈরী সম্পর্ক, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাতিসঙ্ঘ এবং সর্বশেষ জন কেরির আলোচনা উদ্যোগে সরকারপরে সাড়া না দেয়ার ঘটনা। মার্কিন নেতৃত্বে বিশ্বায়ন প্রক্রিয়াধীন ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়’ থেকে বাংলাদেশ সরকারকে অনেকখানি বিচ্ছিন্ন করে একেবারেই ভারতমুখাপেী বানিয়ে ফেলেছে। দূতাবাসপাড়ায় কানাঘুষায় আরো শোনা যায়, বাংলাদেশে রাজনৈতিক সঙ্কটমোচনে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রশ্নে চীনসহ পাশ্চাত্য মহলের তরফে বিরোধী দলনেতার সাথে প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি সংলাপের জন্য যে চাপ সৃষ্টি হয়েছে, তাকে ভারত সরকার বাংলাদেশে তার প্রভাববলয়ে ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অনধিকার চর্চা’ হিসেবে দেখছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্ভবত ফেরার পথে ওমরাহ পালনেও যাচ্ছেন না, ২৮ সেপ্টেম্বর জাতিসঙ্ঘ ভবনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সাথে শলাপরামর্শের পর সরাসরি দেশে ফিরছেন। কারণ ইতোমধ্যে গার্মেন্টশ্রমিকদের নিয়ে আওয়ামী লীগের জন্য নতুন ভোটব্যাংক তৈরি করার অভিলাষে আরেক মহাগোলযোগ পাকিয়ে তুলেছেন শেখ হাসিনার নৌমন্ত্রী পরিবহন শ্রমিক নেতা ও এক কালের গণবাহিনীর কমান্ডার শাজাহান খান। তার তদারকি ও উৎসাহে গঠিত হয়েছে ‘গার্মেন্টশ্রমিক সমন্বয় পরিষদ’। ঘটনাচক্রে ১৭ সেপ্টেম্বর আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় ঘোষণার দিনেই ওই সমন্বয় পরিষদের প্ররোচনায় গাজীপুরে পোশাকশ্রমিকেরা বেতনভাতা বৃদ্ধির দাবিতে কর্মবিরতি, বিােভ, মহাসড়ক অবরোধ ও ভাঙচুর করেছেন। ওই দিন পুলিশের সাথে আন্দোলনরতদের সংঘর্ষ হলে পুলিশসহ কয়েকজন আহত হন। ওই সমন্বয় পরিষদ মালিক, শ্রমিক ও সরকারসহ সংশ্লিষ্টদের সাথে কোনো ধরনের আলোচনা ছাড়াই গার্মেন্টশ্রমিকদের আট হাজার টাকা মজুরির একতরফা ঘোষণা দেয়। তার পর থেকে প্রত্যহই চলছে দেশের বিভিন্ন জায়গায় শ্রমিক বিােভ, সড়ক অবরোধ, সংঘর্ষ, ভাঙচুর। খবরের কাগজের হেডলাইনে আসছেÑ ন্যূনতম মজুরি আট হাজার টাকা করার দাবি। গাজীপুরে শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষ পুলিশসহ আহত ২৩। গাজীপুর কালিয়াকৈরে পোশাক কারখানায় আগুন ও ভাঙচুর। পুড়ে গেছে যমুনা ডেনিমসের কোটি কোটি টাকার সম্পদ। সব কারখানায় ছুটি ঘোষণা। আতঙ্ক। আনসার ক্যাম্পে হামলা অস্ত্র গুলি লুট আগুন। ঢাকা গাজীপুর সাভারে শ্রমিক অসন্তোষ। সংঘর্ষে আহত শতাধিক। যানবাহন ভাঙচুর। ঢাকায় শ্রমিক সমাবেশ নিয়ে তুলকালাম সড়ক অবরোধ : ৪০০ কারখানা ছুটি। ২৩ সেপ্টেম্বর সরকার, শ্রমিকপ ও মালিকপরে দীর্ঘ ত্রিপীয় বৈঠক করে সব কারখানা ফের খোলার ঘোষণা দিয়ে একটা ওয়েজবোর্ড গঠনের মীমাংসা দিয়ে আন্দোলনরত শ্রমিকদের কাজে ফেরার আহ্বান জানান নৌমন্ত্রী। তাতে ফল হয়নি। নৌমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া না দিয়ে ২৪ সেপ্টেম্বরেও রাজধানী ও আশপাশের শিল্পাঞ্চলগুলোতে ব্যাপক বিােভ করেছে শ্রমিকেরা। আশুলিয়া, গাজীপুর, কালিয়াকৈর, শ্রীপুর, জঙ্গি, নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা ও টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে কারখানা এবং যানবাহন ভাঙচুর, পুলিশের সাথে শ্রমিকদের সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার বেশ কিছু ঘটনা ঘটেছে। এতে শ্রমিক, পুলিশ, সংবাদকর্মী, পথচারীসহ দেড় শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বড়াই করে বলছেন, বিএনপির আন্দোলন করে দেশ অচল করে দেয়ার মতো মুরোদ নেই, অসার হুমকি দিচ্ছে বিরোধী জোট। বিএনপির সেই শক্তি পরীার সময় আসার আগে এখনই দেশ অচল হওয়ার কিছু বাকি আছে কি?
শুক্রবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৩
দেশ অচল হওয়ার কিছু বাকি আছে কি?
Posted on ২:০৭ PM by Abul Bashar Manik
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন