সোমবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

খালেদা জিয়ার বলা জনগণের কথা শুনুন


নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের প্রশ্নে ১৮ দলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কঠোর অবস্থানে কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। গত রোববার ও সোমবার রংপুর ও রাজশাহীতে অনুষ্ঠিত বিশাল দুটি জনসমাবেশে তিনি ঘোষণা করেছেন, নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান যুক্ত করে সংবিধান সংশোধন না করা হলে লাগাতার হরতাল এবং রাজপথ-রেলপথ অবরোধসহ প্রচ- আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি মানতে সরকারকে বাধ্য করা হবে। সংসদের চলমান অধিবেশনেই সংবিধান সংশোধনের দাবি জানিয়ে তিনি বলেছেন, নাহলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ক্ষমতাসীনদের একতরফা নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রচেষ্টাকে  প্রতিহত করবে ১৮ দলীয় জোট। দুটি ভাষণেই সাম্প্রতিক ইতিহাসের পর্যালোচনাও করেছেন খালেদা জিয়া। নিজেদের ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা থেকে সংকট কাটিয়ে ওঠার এবং সমঝোতা প্রতিষ্ঠার জন্য জাতিসংঘ মহাসচিব এবং মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির পরামর্শের প্রতি উপেক্ষা দেখানো পর্যন্ত বিভিন্ন তথ্যের উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে এখনও যদি নির্দলীয় সরকারের প্রস্তাব আসে তাহলে বিএনপি এবং ১৮ দলীয় জোট আলোচনায় অংশ নিতে রাজি আছে। গণতন্ত্রসম্মত সে পথে পা বাড়ানোর আহবান জানিয়ে তিনি বলেছেন, ক্ষমতাসীনদের ইচ্ছা ও পরিকল্পনা অনুযায়ী একতরফা নির্বাচন করতে দেয়া হবে না। নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবি না মানলে ক্ষমতাসীনদের বিদায় তো নিতে হবেই, পালানোর পথও খুঁজতে হবে বলেও সাবধান করে দিয়েছেন বিরোধী দলের নেত্রী। ভাষণে সরকারের গণতন্ত্রবিরোধী ও ফ্যাসিস্ট বিভিন্ন কর্মকা-েরও তীব্র সমালোচনা করেছেন তিনি। দৈনিক আমার দেশ-এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতারসহ  সরকারবিরোধী গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করার নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেছেন, সরকারের ফ্যাসিস্ট নীতির কারণে কোনো মানবাধিকার সংস্থাও স্বাধীনভাবে তৎপরতা চালাতে পারছে না। সরকারের ইসলাম ও মুসলমান বিরোধী নীতি ও কার্যক্রমের উল্লেখ করতে গিয়ে খালেদা জিয়া বলেছেন, মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের কর্মীদের ওপর পরিকল্পিত বর্বরতা চালানো হয়েছে। কিন্তু আলেমদের হত্যা করে সরকারের শেষ রক্ষা হবে না। রংপুর ও রাজশাহীর সমাবেশে দুর্নীতি ও অপশাসনসহ দেশের আরও কিছু বিষয়েও বলেছেন খালেদা জিয়া। কিন্তু দ্রুত ঘনীভূত হয়ে ওঠা রাজনৈতিক সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে প্রাধান্যে এসেছে নির্বাচনকালীন সরকার। উচ্চ আদালতের দেয়া একটি বিতর্কিত রায়ের একটি মাত্র অংশের ভিত্তিতে ক্ষমতাসীনরা যেভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী এনেছেন বহুল আলোচিত বলে সে সম্পর্কে পুনরাবৃত্তিতে যাওয়ার নিশ্চয়ই দরকার পড়ে না। এখানে বরং অন্য দুটি তথ্যের উল্লেখ করা দরকার। প্রথম তথ্যটি হলো, সংকট কাটিয়ে ওঠার সদিচ্ছা রয়েছে বলে খালেদা জিয়া তার দাবিতে অনেক ছাড় দিয়েছেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা হুবহু পুনর্বহাল করার পরিবর্তে তিনি বলেছেন, নির্বাচনকালীন সরকারকে অবশ্যই নির্দলীয় হতে হবে এবং শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রীর পদে বহাল রেখে যে নামেই কোনো সরকার করা হোক না কেন সে সরকারের অধীনে তারা নির্বাচনে অংশ নেবেন না। খালেদা জিয়ার এই বক্তব্য দেশি-বিদেশি সব মহলেই প্রশংসিত ও সমর্থিত হয়েছে। কিন্তু ঘাড় বাঁকিয়ে রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি এমনকি এই ঘোষণা পর্যন্ত দিয়ে বসেছেন যে, নির্বাচনকালীন সরকারের প্রশ্নে তারা সংবিধান থেকে ‘এক চুল’ও নড়বেন না। এর মধ্য দিয়ে আর যা-ই হোক, সমঝোতামুখী সামান্য সদিচ্ছারও প্রকাশ ঘটেনি। সংকটও ঘনীভূত হচ্ছে এই কঠোর মনোভাব ও অবস্থানের কারণে। এজন্যই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের পাশাপাশি গণচীনসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রের পক্ষে নেয়া সমঝোতার চেষ্টা সফল হতে পারেনি। প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুনের পরামর্শের প্রতিও উপেক্ষা দেখিয়ে চলেছেন। প্রধানমন্ত্রীর এই কঠোর নেতিবাচক মনোভাব এবং বিরোধী দলের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক বক্তব্যের পরিণতিতে সমঝোতার সব উদ্যোগই ব্যর্থ হয়ে গেছে। এদিকে রাজনৈতিক পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি ঘটছে অবিশ্বাস্য দ্রুততার সঙ্গে। দেশ এগিয়ে চলেছে অনিবার্য সংঘাতের দিকে। মূলত সে কারণেই বেগম খালেদা জিয়ার সর্বশেষ আহবানকে আমরা গুরুত্বপূর্ণ মনে করি। তিনি শুধু আহ্বান জানাননি, একই সঙ্গে সম্ভাব্য পরিণতি সম্পর্কেও সতর্ক করে দিয়েছেন। এটা জনগণেরও কথা। আমরা আশা করতে চাই, জাতিসংঘের পাশাপাশি দেশি-বিদেশি সকল মহলের আহবান ও পরামর্শের প্রতি প্রধানমন্ত্রী সম্মান দেখাবেন এবং সংঘাত এড়িয়ে দেশকে শান্তি ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেয়ার ব্যাপারে সদিচ্ছার প্রকাশ ঘটাবেন। নির্বাচনকালীন সরকারের বিধান যুক্ত করে তাকে অবশ্যই সংবিধান সংশোধন করতে হবে। গণতন্ত্রের ব্যাপারে ন্যূনতম সদিচ্ছা থাকলে ক্ষমতাসীনদের উচিত খালেদা জিয়ার দেয়া শেষ সুযোগটুকুকে কাজে লাগানো।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads