মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচন জয় পরাজয়ের হিসাব-নিকাশ

আমাদের দেশে বর্তমানে জাতীয় নির্বাচন বলতে শুধু সংসদ সদস্যদের সাধারণ নির্বাচনকে বোঝায়। সংসদ সদস্যদের সাধারণ নির্বাচন মেয়াদ অবসানের কারণে সংসদ ভেঙে গেলে প্রতি পাঁচ বছর অন্তর অনুষ্ঠিত হয়। আমাদের দেশে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারব্যবস্থা বহাল থাকাকালীন রাষ্ট্রপতি সরাসরি জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হতেন। তখন রাষ্ট্রপতির নির্বাচনকে জাতীয় নির্বাচন হিসেবে বিবেচনার অবকাশ ছিল। আমাদের বর্তমান সংসদীয় পদ্ধতির সরকারব্যবস্থায় রাষ্ট্রপতি প্রত্যক্ষভাবে জনগণের ভোটের পরিবর্তে সংসদ সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত হন। বাংলাদেশের যেসব নির্বাচন স্থানীয় শাসনব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত সেগুলো হলো ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশন। আমরা সচরাচর স্থানীয় শাসনকে স্থানীয় সরকার বলে থাকি। এ বিষয়ে দেশের সর্বোচ্চ আইন সংবিধানের প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ করলে দেখা যায় সংবিধানের চতুর্থ ভাগের তৃতীয় পরিচ্ছেদে স্থানীয় শাসনশব্দ দুটি ব্যবহৃত হয়েছে, যার ইংরেজি অর্থ করা হয়েছে Local Government| Local Government শব্দটির শাব্দিক অর্থ স্থানীয় সরকারবিধায় সাধারণ্যে স্থানীয় শাসন’-এর স্থলে স্থানীয় সরকারশব্দ দুটি ব্যাপকভাবে পরিচিতি লাভ করেছে। এমনকি স্থানীয় শাসনব্যবস্থা সংশ্লেষে যেসব আইন ও বিধি প্রণীত হয়েছে সেসব আইন ও বিধিতেও স্থানীয় সরকার শব্দদ্বয় ব্যবহৃত হয়েছে। যেমনÑ স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন ২০০৯; স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) নির্বাচন বিধিমালা ২০১০; স্থানীয় সরকার (উপজেলা পরিষদ) অধ্যাদেশ ২০০৮; স্থানীয় সরকার (উপজেলা পরিষদ) নির্বাচন বিধিমালা ২০০৮; স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) (সংশোধন) আইন ২০১০; স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) নির্বাচন বিধিমালা ২০১০ এবং স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন ২০০৯ ও স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) নির্বাচন বিধিমালা ২০১০। সংবিধানে স্পষ্টত উল্লেখ রয়েছে যে, বাংলা ও ইংরেজি পাঠের মধ্যে বিরোধের ক্ষেত্রে বাংলা পাঠ প্রাধান্য পাবে। সেই নিরিখে সর্বত্র স্থানীয় সরকার’-এর পরিবর্তে স্থানীয় শাসনশব্দদ্বয়ের ব্যবহার যুক্তিযুক্ত বিবেচিত হয়। আমাদের দেশে বর্তমানে জাতীয় নির্বাচন বলতে শুধু সংসদ সদস্যদের সাধারণ নির্বাচনকে বোঝায়। সংসদ সদস্যদের সাধারণ নির্বাচন মেয়াদ অবসানের কারণে সংসদ ভেঙে গেলে প্রতি পাঁচ বছর অন্তর অনুষ্ঠিত হয়। আমাদের দেশে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারব্যবস্থা বহাল থাকাকালীন রাষ্ট্রপতি সরাসরি জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হতেন। তখন রাষ্ট্রপতির নির্বাচনকে জাতীয় নির্বাচন হিসেবে বিবেচনার অবকাশ ছিল। আমাদের বর্তমান সংসদীয় পদ্ধতির সরকারব্যবস্থায় রাষ্ট্রপতি প্রত্যক্ষভাবে জনগণের ভোটের পরিবর্তে সংসদ সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত হন। নির্বাচন কমিশনকে জাতীয় নির্বাচন পরিচালনার ক্ষেত্রে সাংবিধানিকভাবে যেসব দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হলো রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচন অনুষ্ঠান, সংসদ সদস্যদের নির্বাচন অনুষ্ঠান, সংসদ নির্বাচনের জন্য নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ এবং রাষ্ট্রপতির পদের এবং সংসদের নির্বাচনের জন্য ভোটার তালিকা প্রস্তুতকরণ। স্থানীয় শাসনব্যবস্থা অথবা সরকারব্যবস্থার অধীনে নির্বাচন কমিশন নির্বাচন অনুষ্ঠানের যেসব দায়িত্ব পালন করে থাকে সেসব নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনকে স্থানীয় সরকারসংক্রান্ত বিভিন্ন আইনের অধীনে প্রদান করা হয়েছে। যদিও স্থানীয় সরকার নির্বাচনসংক্রান্ত ইউনিয়ন পরিষদ (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা ২০১০, উপজেলা পরিষদ (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা ২০০৮, পৌরসভা (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা ২০১০ এবং সিটি করপোরেশন (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা ২০১০-এ চারটির প্রতিটিতে পৃথকভাবে বলা হয়েছেÑ নির্বাচনী প্রচারণায় কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী নিজ ছবি ও প্রতীক ব্যতীত কোনো রাজনৈতিক দলের নাম বা প্রতীক বা কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের নাম বা ছবি ছাপাতে কিংবা ব্যবহার করতে পারবেন না; কিন্তু কার্যক্ষেত্রে আমরা দেখি স্থানীয় শাসনব্যবস্থা বা স্থানীয় সরকারের এ চারটি নির্বাচনে ব্যানার, পোস্টার, লিফলেট ও দেয়াল লিখনে প্রার্থীর নাম ও প্রতীকের সাথে রাজনৈতিক দলের নাম ও প্রতীক এবং নেতৃবৃন্দের নাম উল্লেখ না থাকলেও সরকারের পদধারী নন এমন অনেক নেতৃবৃন্দ নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণ করে প্রার্থীর প্রতি দলীয় সমর্থন যে রয়েছে তা জনসম্মুখে প্রকাশ করে দলের সুস্পষ্ট অবস্থান তুলে ধরেন। স্থানীয় শাসন বা সরকারব্যবস্থার অধীন অনুষ্ঠিত কোনো নির্বাচনে রাজনৈতিক দলের সংশ্লিষ্ট হওয়ার সুযোগ না থাকলেও দুই দশকের অধিক সময় ধরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলোতে দেখা গেছে, রাজনৈতিক দলের সমর্থনহীন নির্বাচনের সংখ্যা নগণ্য। আরো পরিতাপের বিষয়, বিধিমালা অনুযায়ী স্থানীয় শাসন বা সরকারের যেকোনো নির্বাচনকে রাজনৈতিক রূপ দিলে সেটি অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে এবং এই অপরাধের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে ছয় মাস কারাদণ্ড অথবা অনধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করা যাবে মর্মে বিধিতে বলা হয়েছে; কিন্তু এ পর্যন্ত আমাদের কোনো নির্বাচন কমিশন এসব নির্বাচন রাজনৈতিক দলের পরিচিতি পাওয়া সত্ত্বেও এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করে কোনো দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পেরেছে কি না তা অবলোকনের সুযোগ অদ্যাবধি দেশবাসীর হয়নি। স্থানীয় শাসন বা সরকার নির্বাচন বিষয়ে দীর্ঘ দিন ধরে দেশের প্রধান চারটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামায়াত আচরণবিধির বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে প্রার্থীর রাজনৈতিক পরিচয়কে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার অবলম্বন হিসেবে ব্যবহার করায় প্রশ্ন দেখা দিয়েছেÑ এসব নির্বাচনকে অরাজনৈতিক বলার সুযোগ কোথায়? আর যদি অরাজনৈতিক বলার সুযোগ না থেকে থাকে সে ক্ষেত্রে আচরণবিধিতে পরিবর্তন এনে এসব নির্বাচন রাজনৈতিক পরিচয়ে অনুষ্ঠিত হওয়া যথার্থ বিবেচিত হয়। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচন যথাÑ রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, বরিশাল ও গাজীপুরের নির্বাচন যে দলীয় ভিত্তিতে হয়েছে সে বিষয়ে দেশের সচেতন জনগোষ্ঠীর কারো মধ্যে কোনো ধরনের দ্বিমত নেই। জাতীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে অনুষ্ঠিত এ পাঁচটি নির্বাচনের জয়-পরাজয়কে আগামী জাতীয় নির্বাচনের জয় বা পরাজয়ের মাপকাঠি বিবেচনায় দেশের বড় দুটি রাজনৈতিক দল ও উভয়ের নিজ নিজ জোট নির্বাচনগুলোতে জয়ের ব্যাপারে মরিয়া হয়ে সর্বশক্তি নিয়োগ করেছিল। উপরিউক্ত পাঁচটি নির্বাচনের প্রথমোক্ত চারটি একই দিনে অনুষ্ঠিত হয়েছিল এবং এ চারটি নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীদের উল্লেখযোগ্য ভোটের ব্যবধানে পরাজয় আগামী জাতীয় সংসদ সাধারণ নির্বাচন বিষয়ে তাদের নেতৃস্থানীয় অনেককেই শঙ্কিত করে তোলে। আর সেই শঙ্কার বিষয়টিকে মাথায় রেখেই গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে জনসমর্থনকে তাদের প্রার্থীর অনুকূলে আনার জন্য সম্ভাব্য সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণের পরও যখন দেখা গেল তাদের প্রার্থী উপরিউক্ত চারটি নির্বাচনের চেয়ে আরো ব্যাপকতর ব্যবধানে পরাভূত হয়েছেন তখন তারা নতুন করে পরাজয়ের কারণ অনুসন্ধানে বিভিন্নধর্মী বিশ্লেষণ শুরু করেছেন। আওয়ামী লীগের প্রত্যক্ষ রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত এমন একাধিক ব্যক্তির কেউ বা এ পরাজয়ের জন্য আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের পদে বহাল থাকাকালীন দুর্নীতিকে দায়ী করেছেন, কেউ বা দলীয় সভানেত্রীর সরকারি পদের সাথে সঙ্গতিহীন, অসংলগ্ন, অসৌজন্যমূলক ও দাম্ভিকতাপূর্ণ কথাবার্তাকে দায়ী করেছেন, কেউ বা জাতীয় নেতাদের সাথে কর্মীদের দূরত্বকে দায়ী করেছেন, কেউ বা উফশী (হাইব্রিড) মন্ত্রী ও নেতাদের অতিকথনকে দায়ী করেছেন, কেউ বা শেয়ারবাজার, কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ, টেলিযোগাযোগ, পদ্মা সেতু, রেলের কালো বিড়াল, হলমার্ক, ডেসটিনি প্রভৃতি দুর্নীতিকে দায়ী করেছেন। কেউ বা নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়নকে দায়ী করেছেন, কেউ বা প্রশাসন, পুলিশ ও বিচার বিভাগসহ সরকারের সব পর্যায়ের দলীয়করণকে দায়ী করেছেন, কেউ বা স্থানীয় শাসনব্যবস্থার অধীন নির্বাচিত প্রার্থীদের সাথে স্থানীয় সংসদ সদস্যদের বিরোধকে দায়ী করেছেন, কেউ বা আওয়ামী লীগের ক্রমনিমজ্জিত ভাবমূর্তিকে দায়ী করেছেন, কেউ বা আওয়ামী লীগের ঘরে ঘরে চাকরি দেয়ার এবং দশ টাকা সের চাল খাওয়ানোর নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের ব্যর্থতাকে দায়ী করেছেন, কেউ বা দুর্নীতিবাজদের সাথে আওয়ামী লীগের আপসকামিতাকে দায়ী করেছেন, কেউ বা দলীয় কোন্দলকে দায়ী করেছেন, কেউ বা দলের ত্যাগী ও জ্যেষ্ঠ নেতাকর্মীদের নিষ্ক্রিয়তাকে দায়ী করেছেন, কেউ বা নিকৃষ্টদের পদ-পদবি দিয়ে পুরস্কৃত করে উৎকৃষ্টদের বঞ্চিত করাকে দায়ী করেছেন, আবার কেউ বা আওয়ামী লীগারেরা মূল্যায়িত না হয়ে বামরা মূল্যায়িত হওয়াকে দায়ী করেছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অভিমতÑ উপরিউক্ত কারণগুলোর যেকোনো একটি কারণ পরাজয়ের জন্য বিচ্ছিন্নভাবে দায়ী নয়; বরং পরাজয়ের পেছনে সবগুলো কারণেরই কমবেশি অবদান রয়েছে। অনেকের অভিমতÑ এ পাঁচ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নয়, আওয়ামী লীগেরই পরাজয় ঘটেছে। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে পরাজয়ের দায় নিরূপণে বিবেচনায় নেয়া প্রয়োজন আমাদের বড় দুটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রের চর্চা নেই। উভয় দলে সভানেত্রী ও চেয়ারপারসনের সিদ্ধান্ত দলীয় সিদ্ধান্ত হিসেবে স্বীকৃত। তাই দলের সাফল্য ও ব্যর্থতার কৃতিত্ব ও দায় বহুলাংশে নিজ নিজ দলের সভানেত্রী ও চেয়ারপারসনের ওপর বর্তায়। উপরিউক্ত পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের শোচনীয় পরাজয়ের পর আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে আক্ষেপ করে বলতে শোনা গেছে তার সরকারের উন্নয়ন এবং প্রার্থীদের সততা ও যোগ্যতাকে কেন জনগণ মূল্যায়ন করে দেখল না তা অনুসন্ধান করে দেখতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর এ অনুসন্ধানের উদ্যোগ পরাজয়ে ব্যথিত না হয়ে বরং আত্মপ্রত্যয়ী হয়ে জয়ের লক্ষ্যে কাজ করার নব উদ্যম হলেও তার অবশ্যই বিবেচনায় নেয়া প্রয়োজন পরাজয়ের কারণ হিসেবে যেসব বক্তব্য উচ্চারিত হয়েছে তার বিহিত করা দরকার। এ ছাড়াও বিচার বিভাগসহ সরকারের বিভিন্ন বিভাগে জ্যেষ্ঠ, দক্ষ, যোগ্য ও মেধাবীদের অবদমিত করে যেভাবে কনিষ্ঠ, অদক্ষ, অযোগ্য ও দুর্নীতিগ্রস্তদের তথাকথিত দলীয় বিবেচনায় মূল্যায়ন করে লোভনীয় পদ দেয়া হয়েছে; তা ভোটের বাজারে কী ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে অন্তত সেটুকু বিবেচনায় নিয়ে যদি ব্যবস্থা গ্রহণে তিনি উদ্যোগী হন বোধকরি ডুবন্ত তরী বহুকষ্টে তীরে পৌঁছে সম্মানহানি থেকে কিছুটা হলেও রেহাই দেবে। আমাদের রাজনীতিতে দেশের বৃহত্তর সংখ্যালঘুদের আওয়ামী লীগের ভোটব্যাংক বিবেচনা করা হয়; কিন্তু বর্তমানে বাস্তবতা হলো এ ভোটব্যাংক যেকোনো নির্বাচনে বিজয়ের ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের পক্ষে যতটা না অবদান রাখছে তার চেয়ে আওয়ামীবিরোধী শিবিরের বিজয়ের ক্ষেত্রে অধিক অবদান রাখছে সম্মিলিতভাবে জামায়াত, হেফাজত ও গ্রামীণ ভোটব্যাংক। আগামী সংসদ নির্বাচনে এ সম্মিলিত ভোটব্যাংক যে জয় নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দেখা দেবে সে বিষয়ে নিরপেক্ষ রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মধ্যে কোনো সংশয় নেই। আমাদের দেশসহ পৃথিবীর সব দেশের জনগণ প্রতিষ্ঠানবিমুখ। আর এ প্রতিষ্ঠানবিমুখতা বড় হয়ে দেখা দেয় একটি দল একবার নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠনের পর দ্বিতীয়বার ভোটারদের সম্মুখীন হলে যখন তারা প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির ব্যবধান খুঁজে দেখার চেষ্টা করে। এ প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির ব্যবধান ব্যাপক হলে জয়ের আশা যে তিরহিত হয় তা ইতঃপূর্বে একাধিকবার উপলব্ধি করা গেছে। যারা ব্যক্তিগত ও পারিবারিকভাবে দীর্ঘ দিন ধরে আওয়ামী লীগকে সমর্থন করে আসছিলেন, আওয়ামী লীগের নবম সংসদ নির্বাচনে অভাবনীয় বিজয়ের পর প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, বাম ঘরানার মন্ত্রী, উফশী মন্ত্রী ও নেতা এবং অনির্বাচিত মন্ত্রীদের দৌরাত্ম্যে তারা সবাই কোণঠাসা, অবমূল্যায়িত, উপেক্ষিত ও নিষ্পেষিত। আর এভাবে পরীক্ষিত ও ত্যাগীরা যদি অবহেলিত ও উপেক্ষিত হয় তা যেকোনো দলের জয় নয়, বরং পরাজয়কেই নিশ্চিত করে তোলে। পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তুলনামূলকভাবে অন্তত চারটির ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা সার্বিক বিচারে জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য বিবেচিত হলেও কেন তারা জনগণ দিয়ে প্রত্যাখ্যাত হয়েছেন সেই হিসাব-নিকাশ করার সময় বোধকরি অত্যাসন্ন। এ হিসাব-নিকাশের ক্ষেত্রে নিজ নিজ জোটের ভোটব্যাংকের বাইরে সর্বাগ্রে বিবেচনায় নেয়া প্রয়োজন Swing vote (দোদুল্যমান ভোট)। এসব ভোটার নির্বাচনের আগ মুহূর্তে বিদায়ী সরকারের শাসনকালের কার্যক্রম পর্যালোচনাপূর্বক ভোটদান বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকে। আমাদের বড় দুটি রাজনৈতিক জোটের সমর্থকের বাইরে যে Swing vote রয়েছে তা শতাংশের হিসাবে তাদের সমর্থিত ভোটের চেয়ে বেশি। তাই এ Swing vote যে দল বা জোটের দিকে যাবে তারাই হবে নির্বাচনে বিজয়ী। এ বাস্তবতায় আগামী সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হলে ফলাফল কী হবে পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ফলাফল যে তারই বহিঃপ্রকাশ, এমনটি ভাবা অমূলক নয়। 


0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads