সোমবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

জয়ের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে গিয়েই প্রধানতঃ সরকারের এই লেজে-গোবরে দশা


প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় পূর্ণাঙ্গ রাজনীতিতে যোগ দিয়েছেন বলে মনে হয়। রাজনীতিতে এসেই এবার তিনি তিন দিনের মধ্যেই একটি চমক দেয়ার ঘোষণা করেছেন। কিন্তু তিন দিন পার হয়ে সপ্তম দিন অতিবাহিত হবার পরও আমরা যারা এই চমক দেখার অপেক্ষায় ছিলাম তারা এখনো তা দেখতে পাইনি। অবশ্য এর মধ্যে তিনি পঞ্চম দিনের মাথায় আরো একটি ঘোষণা দিয়েছেন এবং বলেছেন যে, আসলে তিনি কোন চমক দেখানোর কথা বলেননি। মিডিয়াগুলো তাকে ভুল বুঝেছে, তার কথা সত্যও হতে পারে। আর আমরা যারা টিভির দর্শক ও পত্রিকার পাঠক তারা শুনতে এবং পড়তে ভুলও করতে পারি। তবে এখানে একটি বিষয় প্রণিধানযোগ্য। জয় রাজনীতি শুরু করেছেন এবং সম্ভবত তিনি রাজনৈতিক যোগ্যতার দিক থেকে তার মাকেও ছাড়িয়ে যেতে পারবেন। বিরোধী দলগুলোর সমালোচনায় তার জিহ্বার যে ধার দেখা যাচ্ছে তা অনন্য এবং রাজনীতির বর্তমান ধারা অব্যাহত রাখার জন্যে তার যে কোন বিকল্প নেই ইতোমধ্যে তিনি তা দেশবাসীকে বুঝাতে শুরু করেছেন।
সজীব ওয়াজেদ জয় বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর শুধু পুত্রই নন তিনি তার একজন উপদেষ্টাও। উপদেষ্টা হিসেবে তিনি রাষ্ট্রের তরফ থেকে কোন বেতন-ভাতা গ্রহণ করেন কিনা আমি জানি না, গ্রহণ করে থাকলে রাষ্ট্রের একজন বেতনভুক্ত কর্মকর্তা বা সুবিধাভোগী হিসেবে রাষ্ট্রীয় খরচায় তার দলীয় প্রচারণা এবং ভোট ভিক্ষায় হয়ত অনেকেই আপত্তি করবেন, তবে তার মায়ের স্থাপিত দৃষ্টান্তের প্রেক্ষাপটে এটাকে অস্বাভাবিক বলা যায় না। একটি ব্যাপারে সম্ভবত তার ব্যাপারে কথা উঠতে পারে। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একজন নাগরিক এবং মার্কিন একজন মহিলাকে বিয়ে করেছেন। এই অবস্থায় রাজনীতিতে তার অংশগ্রহণ এবং ভবিষ্যতে পার্লামেন্ট নির্বাচনের প্রতিযোগিতায় অনেক বিতর্কের সৃষ্টি হতে পারে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের সংবিধানে কিছু বিধিনিষেধ আছে। এই সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদের ২নং ধারার (গ) উপধারা প্রণিধানযোগ্য। এতে বলা হয়েছে (A person shall be disqualified for election or for being a member of parliament who....c) acquires the citizenship of, or affirms or acknowledges allegiance to a foreign state.
অর্থাৎ যদি কোন ব্যক্তি কোন বিদেশী রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন অথবা তার আনুগত্য স্বীকার করেন তাহলে তিনি পার্লামেন্টের সদস্য পদে নির্বাচন করতে অথবা পার্লামেন্ট সদস্য হতে পারবেন না।
জয় একজন মার্কিন নাগরিক এবং এই হিসেবে তিনি বাংলাদেশে পার্লামেন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারেন না। তবে এখানে তার জন্য একটি আশার কথা আছে। এই অনুচ্ছেদের (ছ) উপ অনুচ্ছেদের ২ (ক) ধারায় একটি সমাধানের কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে-
'Notwithstanding anything contained in Sub-clause c of Clause 2 of this article, if any person being a citizen of Bangladesh by birth acquires the citizenship of a foreign state and thereafter such person (i) in the case of dual citizenship gives up the foreign citizenship or (ii) in other cases again accepts the citizenship of Bangladesh for the purpose of this article he shall not be deemed to acquire the citizenship of a foreign state.
অর্থাৎ যদি জন্মসূত্রে বাংলাদেশী কোন নাগরিক কোন বিদেশী নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন এবং তিনি দ্বৈত নাগরিক হন এবং তিনি বিদেশী নাগরিকত্ব বর্জন করেন তাহলে এই অনুচ্ছেদে বর্ণিত বিধিনিষেধ তার উপর প্রযোজ্য হবে না।’ এখন জয়ের ক্ষেত্রে এ ব্যাপারে কিছু জটিলতা আছে। জয় অনেকের মতে মার্কিন নাগরিকত্ব গ্রহণ করা ছাড়াও মার্কিন নাগরিক বিয়ে করেছেন এবং ঐ সূত্রে তার নাগরিকত্ব পরিহার করা কঠিন ব্যাপার। তিনি তার নাগরিকত্ব পরিহার করলেও স্ত্রীর নাগরিকত্বের সূত্রে তিনি মার্কিন আইন অনুযায়ী সে দেশের নাগরিকই থেকে যাবেন। জয়কে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হলে সম্ভবত তার স্ত্রীকেও মার্কিন নাগরিকত্ব পরিত্যাগ করে খাঁটি বাংলাদেশী নাগরিক হতে হবে। এই ব্যাপারে আইন বিশেষজ্ঞরা আরো ভাল বলতে পারেন।
জয়ের চমক নিয়ে আমি কথা বলছিলাম। জয় আসলেই চমক সৃষ্টি করতে পারেন। তিনি গত ঈদের আগে তার পৈত্রিক বাড়ি রংপুরের পীরগঞ্জে গিয়েছিলেন। সেখানে জনসভা করেছেন এবং বলেছেন যে, তার মাকে সাহায্য করার জন্য রাজনীতিতে আসছেন। তার মাও তার সাথে ছিলেন। তিনি তার পিতার রক্ত সম্পর্কের আত্মীয়দের অনেকের সাথে কথাও বলেছেন। পীরগঞ্জ আসনে তিনি নির্বাচন করবেন বলে এলাকাবাসী একটি ধারণাও পেয়েছিলেন। আমি একাধিকবার পীরগঞ্জ সফর করেছি। রংপুরে জয় ও প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে বিভিন্ন মহলে কিছু গুঞ্জরন আছে এবং সেটা ড. ওয়াজেদ মিঞাকে নিয়ে। আমি অনেককে বলতে শুনেছি যে, ড. ওয়াজেদ মিঞা অসুস্থ হয়ে যখন হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছিলেন তখন তার একমাত্র পুত্র জয় একবারের জন্যও তাকে দেখতে আসেননি। কিংবা আসলেও পত্র-পত্রিকায় তার কোন রিপোর্ট প্রকাশিত হয়নি। তিনি যখন মৃত্যুবরণ করেন তখন তার জানাযায় কিংবা দাফনে জয়কে দেখা যায়নি। এটা মিডিয়াগুলোর কারসাজি না আসলেই ব্যস্ততার জন্যে সুদূর আমেরিকা থেকে পিতার দাফনে যোগ দিতে তার অপারগতা তা বোধগম্য নয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও তিনি যে পৈত্রিক বাড়িতে গিয়েছেন এবং পিতার পদচারণায় মুখরিত পীরগঞ্জে গিয়ে ভোট ভিক্ষা করেছেন তাতে অনেকে খুশিই হয়েছেন। তারা বলছেন, অন্তত: ভোটের জন্য হলেও তো বাপ-দাদার ভিটায় তিনি গিয়েছেন।
সজিব ওয়াজেদ জয়কে আমরা পত্রিকায় বহুবার দেখেছি। এর মধ্যে ভাল মন্দ উভয় অবস্থাই ছিল। তবে মার্কিন একটি সাময়িকীতে কার্ল সিওভাক্কোর সাথে তার লিখিত একটি নিবন্ধ তাকে সবচেয়ে বেশি সমালোচনার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছিল। রাজনীতিতে তিনি এই নিবন্ধের মাধ্যমে যে বিতর্কের সৃষ্টি করেছিলেন তা তার  জন্য শুভসঙ্কেত না অশুভ সঙ্কেত সময়ই তা বলে দেবে। তবে একথা ঠিক যে, তার আবির্ভাব এই দেশের ৯০ শতাংশ মানুষের ধর্মবিশ্বাস ও চিন্তা-চেতনাকে অনুপ্রাণিত করেনি, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আহত করেছে। তার কথাবার্তা, চালচলন ইহুদি, খৃস্টান ও হিন্দুদের অনুপ্রাণিত করেছে। মুসলমান এবং আলেম ওলামাদের নিরুৎসাহিত করেছে। একসময়ে তার দলের সাধারণ সম্পাদক ও এলজিআরডি মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফ গর্ব করে বলেছেন যে, তিনি হিন্দুও নন মুসলমানও নন। তার এই বক্তব্যের সমান্তরালে জয় বলেছিলেন যে, তিনি চান ২০ বছরের মধ্যে একজন হিন্দু প্রধানমন্ত্রী হোক। তার মায়ের নেতৃত্বে গঠিত সরকার গত পৌনে পাঁচ বছরে তার এই লক্ষ্যমাত্রার অনুকূলে অনেক কাজ করেছেন। আমাদের দেশের গুরুত্বপূর্ণ পদমসূহের বেশীরভাগ এখন হিন্দুদের দখলে। তারা যদি যোগ্য হন তাহলে আমি এতে আপত্তির কিছু দেখি না। কিন্তু দলীয় দৃষ্টিভঙ্গিকে সামনে রেখে যোগ্যতা সম্পন্ন মুসলিম কর্মকর্তাদের বাদ দিয়ে তাদের পদায়ন জাতীয় আকাক্সক্ষার পরিপন্থী। কেউ যদি আমাকে এজন্যে সাম্প্রদায়িক বলেন তাহলে এই অভিধা গ্রহণে আমার কোন আপত্তি নেই।
আমি জয়ের নিবন্ধের কথা বলছিলাম। নিবন্ধটি সম্পর্কে পাঠকদের একটা ধারণা দেয়া দরকার। প্রবন্ধটির একজন Co-author হচ্ছেন কার্ল সিওভাক্কো। কার্ল সিওভাক্কো একজন মার্কিন ইহুদী এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সশস্ত্র বাহিনীর তিনি একজন কর্মকর্তাও, সজীব ওয়াজেদ জয় তাকে সাথে নিয়ে যে নিবন্ধটি রচনা করেছেন তাতে বিশ্বের দরবারে বাংলাদেমের ভাব মর্যাদাকে ধুলায় মিশিয়ে দেয়া হয়েছে বলে অনেকে মনে করেন। এই নিবন্ধে তিনি ইসলামকে, কুরআন-সুন্নাহকে এবং আলেম সমাজকে সর্বোপরি এ দেশের ৯০ শতাংশ মুসলমানকে যথাক্রমে জঙ্গিবাদের উৎস এবং জঙ্গি তৎপরতার সাথে সম্পৃক্ত বলে প্রমাণ করতে চেয়েছেন। শুধু তাই নয় তিনি বাংলাদেশের সেনাবাহিনীকেও এই জঙ্গি তৎপরতার পৃষ্ঠপোষক ও পাদপীঠ বলে উল্লেখ করেছেন এবং বলেছেন যে, জঙ্গিবাদ সেনাবাহিনীকে গ্রাস করে ফেলছে। তার দৃষ্টিতে তার মায়ের শাসনামল তথা ২০০১ সাল পর্যন্ত যেখানে মাদরাসা ব্যাকগ্রাউন্ডের সেনা কর্মকর্তার সংখ্যা ছিল ৫ শতাংশের কম। সেখানে ২০০১-২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত তথা চারদলীয় জোট সরকারের আমলে সেনাকর্মকর্তাদের রিক্রুটমেন্টের শতকরা ৩৫ ভাগ মাদরাসাগুলো সরবরাহ করেছে। তার মতে ইসলামী জঙ্গিবাদের উৎস হচ্ছে এ দেশের মসজিদ-মাদরাসা, মক্তবসমূহ। বিএনপি, ইসলামীদলসমূহ এবং এদেশের ইসলামভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলো শুধু জঙ্গিবাদকে লালনই করছে না বরং পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশে শরীয়া আইন প্রতিষ্ঠার নামে জঙ্গিবাদকে আরো সুদৃঢ় করছে। আবার তাদের এই তৎপরতা শুধু বাংলাদেশ ভূখ-েই সীমাবদ্ধ থাকছে না যে হারে সেনাবাহিনীতে জঙ্গির অনুপ্রবেশ ঘটছে তাতে করে আগামী দিনে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষীবাহিনীর মাধ্যমে সারা বিশ্বে জঙ্গিবাদ ছড়িয়ে পড়বে। কেননা এই মিশনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অন্যতম মুখ্য ভূমিকা রয়েছে। জয় জেএমবি, জেজেএমবি, হুজি, প্রভৃতি সংস্থাকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সামরিক শাখা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন এবং বলেছেন যে, তারা গণতন্ত্র ও সক্যুলারিজমের পরিবর্তে দেশে শরীয়াভিত্তিক একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চায়। তিনি তার নিবন্ধে আওয়ামী লীগ ছাড়া দেশের সকল জাতীয়তাবাদী ইসলামী শক্তিকে স্বাধীনতা বিরোধী ও জঙ্গিবাদের পৃষ্ঠপোষক বলে মনে করেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে তিনি কেন কার্ল সিওভাক্কোর ন্যায় একজন ইহুদি মার্কিন সামরিক কর্মকর্তাকে নিয়ে তার নিবন্ধে এতকথা বলতে গেলেন এবং তাও হারভার্ড ইন্টারন্যাশনাল রিভিউ নামক একটি খ্যাতিমান সাময়িকীতে? অনেকে অভিযোগ করেছেন যে, পাশ্চাত্যের ইসলামবিদ্বেষী ইহুদি-খৃস্টানরা মুসলিম দেশসমূহে তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য কিছু দালাল, শিখ-ী খুঁজে বেড়ায় এবং ইহুদী, মুশরিক খৃস্টানরা সম্ভবত তার মধ্যে এর বৈশিষ্ট্য খুঁজে পেয়ে থাকবেন। আবার তিনিও এধরনের একটি সুযোগের সন্ধানে ছিলেন। কেননা তার মা বহু বছর ধরেই জঙ্গি জুজুর ভয় দেখিয়ে বাংলাদেশের ক্ষমতায় টিকে থাকার  জন্য সারা দুনিয়ার ইহুদী, খৃস্টান এবং মুশরিকদের সমর্থন আদায়ে সক্রিয় ছিলেন। ক্ষমতায় থাকাকালে তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ইতঃপূর্বে লাখ লাখ পুস্তিকা ছাপিয়ে বাংলাদেশকে জঙ্গিরাষ্ট্র প্রমাণের চেষ্টা করেছেন এবং একটি প্রতিবেশী দেশের সহায়তায় ও অর্থানুকূল্যে দেশের অভ্যন্তরে কিছু জঙ্গি গ্রুপ সৃষ্টি করে তাদের দিয়ে বোমা ফাটিয়ে তার প্রচারণার স্বপক্ষে প্রমাণ তৈরির চেষ্টা করেছেন। তারই ধারবাহিকতায় অনেকে মনে করেন যে, জয় যুক্তরাষ্ট্রের একজন ইহুদি (তার আত্মীয়দের ভাষায় খৃস্টান) বিয়ে করেছেন এবং ইহুদি লবির সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে জঙ্গিদের’ হাত থেকে বাংলাদেশকে বাঁচানোর’ শ্লোগান তুলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পাশ্চাত্যের দেশগুলোর কাছ থেকে সহযোগিতা ভিক্ষায় নেমেছেন। এক্ষেত্রে তিনি যা প্রমাণ করেছেন তা হচ্ছে তার নিজের ধর্মবিশ্বাসের ওপর তার কোন সম্মানবোধ নেই। বিদেশীদের সহায়তায় তার পরিবারকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখাই হচ্ছে তার প্রধান লক্ষ্য। জয়ের দৃষ্টিতে বাংলাদেশের সমগ্র রাজনৈতিক ব্যবস্থা অরক্ষিত। তিনি বাংলাদেশের ইসলামী জাগরণকে অভূতপূর্ব বলে মনে করেন। তার ভাষায় বিএনপি, জামায়াত জোটের পাঁচ বছরের শাসনামলে বোরখার বিক্রি ৫০০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি প্রশ্ন করেছেন আওয়ামী লীগ কি এই ইসলামী জোয়ার প্রতিহত করতে পারবে? তিনি নিজেই তার জবাব দিয়েছেন অবশ্যই পারবে এবং এজন্যে পাঁচ দফা একটি কর্মপরিকল্পনাও দিয়েছেন। এই কর্মপরিকল্পনা হচ্ছেঃ ১. মাদরাসার পাঠ্যসূচীর আধুনিকায়ন; ২. ধর্মনিরপেক্ষ ইলেমেন্টারি স্কুল ও হাসপাতাল তৈরী করা; ৩. ধর্মনিরপেক্ষমনা ছাত্রদের সেনাবাহিনীতে ভর্তির হার বৃদ্ধি করা: ৪. চরমপন্থী আলেম-ওলামাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা: এবং ৫. বাংলাদেশ থেকে দারিদ্র্য ও নিরক্ষরতা দূরীকরণ। এই ব্যবস্থাগুলো গ্রহণ করা হলে বাংলাদেশে ইসলামের পুনর্জাগরণ আন্দোলন আর থাকবে না এবং এই দেশে একটি ধর্মনিরপেক্ষ সমাজব্যবস্থা কায়েম করা সহজ হবে। গত পৌনে পাঁচ বছরে জয়ের এই কর্মপরিকল্পনা তার মা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে এদেশে আলেম ওলামা, খ্যাতনামা ইসলামী চিন্তাবিদ, মাদরাসা, মক্তব, রাজনীতিবিদ এবং ইসলামী প্রতিষ্ঠানসমূহকে ধ্বংস করার যে নজির স্থাপন করেছেন ইতিহাসে তা বিরল। সংবিধান থেকে তিনি আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস উঠিয়ে দিয়েছেন এবং ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধকরণ সংক্রান্ত সংবিধানের বাতিলকৃত অনুচ্ছেদ ফিরিয়ে এনেছেন। দেশের সর্ববৃহৎ ইসলামী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করেছেন এবং তার শীর্ষ নেতাদের মিথ্যা ও বানোয়াট মামলায় বিতর্কিত আইনে বিচারের প্রহসন করে মৃত্যুদ- ও যাবজ্জীবন কারাদ-ের ব্যবস্থা করেছেন। জামায়াত-শিবির, হেফাজতে ইসলাম, বিএনপি ও ছাত্রদল-যুবদলের ওপর তার অত্যাচারের খড়গও অব্যাহতভাবে চালু রয়েছে। গত পৌনে পাঁচ বছরের রাজনৈতিক নিগ্রহ ফেরাউনের অত্যাচারকেও হার মানিয়েছে। জয় একটি তাৎপর্যপূর্ণ কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, মাদরাসার ছাত্র বেড়ে গেছে। তিনি ব্যবধান কমানোর আন্দোলন শুরু করেছেন এবং বর্তমান সরকারের আমলে এক্ষেত্রে ‘মারাত্মক’ উন্নতি হয়েছে। তিনি তার বর্তমান কার্যক্রমকে হাইলাইট করতে গিয়ে বলেছেন যে, কাজ করে ভোট পাওয়া যায় না, প্রচারের উপরেই নির্বাচনী জয় নির্ভর করে। জয় তাই এখন প্রচারে নেমেছেন। আমি তার সাফল্য কামনা করি। এখন অন্য প্রসঙ্গে আসি।
জয়ের নির্বাচনী প্রচারণায় বিরোধী দলের উপর এখন তীব্র আক্রমণ চলছে। বলা হচ্ছে যে, বিএনপি-জামায়াত জোট যদি আবার ক্ষমতায় আসে, তাহলে দেশ পুনরায় অন্ধকার যুগে ফিরে যাবে এবং জঙ্গি তৎপরতায় নিমজ্জিত হবে। জয় অথবা তার দল জঙ্গি তৎপরতা সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা রাখেন কিনা আমি জানি না। জঙ্গি শব্দটি বাংলা নয়, উর্দু এবং বাংলায় এর অর্থ হচ্ছে সন্ত্রাস। তারা সন্ত্রাসকে ধর্মের সাথে জুড়ে দিয়ে বিশ্ববাসীর সামনে মুসলমানদের সন্ত্রাসী হিসেবে উপস্থাপন করছেন এবং এটা করতে গিয়ে তারা যে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের জন্ম দিচ্ছেন তা কারোর কাছেই গোপন থাকছে না। ছাত্রলীগ, যুবলীগ, শ্রমিকলীগের চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, অগ্নিসংযোগ এবং ধর্ষণের মতো ঘটনাকে আপনি কোন চোখে দেখবেন? ইসলামে সন্ত্রাস বা জঙ্গিপনার কোন স্থান নেই। সন্ত্রাস, জঙ্গিপনা অথবা মানুষ হত্যার ব্যাপারে কুরআন, হাদীসের কোন নির্দেশনা কেউ দেখাতে পারবেন না। সমগ্র দুনিয়ার আলেম সমাজ এর প্রতিবাদ করেছেন এবং বলেছেন যে, যারা সন্ত্রাস করে, বোমাবাজি করে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে চায় তারা প্রকৃতপক্ষে  ইসলামের দুশমন। যারা সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, মানুষ খুন, গুম ও প্রতিপক্ষকে নির্মূল করে তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চায় তারা কি? সারা দেশে ছাত্রলীগের ৮৭টি জেলা কমিটি রয়েছে। গত প্রায় পাঁচ বছর ধরে আদর্শ, ছাত্রত্ব ও মেধার বদলে এসব কমিটির বদলে প্রাধান্য পাচ্ছে অর্থ। টাকার বিনিময়ে পদ কিনে নেতারা টাকা উপার্জনে বেপরোয়া। এর সাথে যুক্ত হয়েছে নৈতিক অবক্ষয়। ছাত্রলীগের  গঠনতন্ত্রে শিক্ষা, শান্তি ও প্রগতির কথা বলা হয়েছে। কিন্তু তাদের আচরণে এর কোনটিই নেই। ছাত্রলীগ গত পৌনে পাঁচ বছরে বিভিন্ন প্রতিদ্বন্দ্বী দলের ৬৭ জন নেতা-কর্মীকে হত্যা করেছে। এর একটিরও বিচার হয়নি। তাদের হাতে নিজ দলের নিহত কর্মীর সংখ্যা ১৭, তাদেরও বিচার হয়নি। তারা বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অভ্যন্তরীণ কোন্দলে ৬৭৭টি রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়িয়েছে, প্রকাশ্যে মারাত্মক দেশীয় ও আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করেছে। গত পরশু সিলেটে সিপিবি’র সমাবেশে ছাত্রলীগ হামলা করে ২৫ জনকে আহত করেছে। এর আগে এমসি কলেজের হোস্টেল জালিয়ে দিয়েছে। সেখানে শিবিরকর্মীদের হত্যা করেছে। কিন্তু এর কোন বিচার হয়নি এবং হওয়ার সম্ভাবনাও নেই। তাদের এই জঙ্গিবাদ সম্পর্কে জয় কি বলবেন?
তার দলের সরকারের আমলে দুর্নীতিকে তারা মায়ের দুধের মতো হালাল করে নিয়েছেন। বাংলাদেশে দুর্নীতিমুক্ত কোন খাত এখন অবশিষ্ট নেই। শেয়ারবাজার, হলমার্ক, ডেসটিনি, পদ্মা সেতু, বিস্্মিল্লাহ গ্রুপ, ইউনিপেটুইউ, বিডিআর হত্যা, সীমান্ত হত্যা, রেলওয়ের কালো বিড়াল প্রভৃতির কথা নাইবা বললাম। এখন ভালো স্কুলে ভর্তি করতে হলে ৫০ হাজার থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিতে হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে লাগে ৫০ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা। নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনুমতিতে লাগে দুই লাখ, সরকারি চাকরির জন্য দশ লাখ, পুলিশ কনস্টেবলের চাকরির জন্য লাগে ৭০ হাজার থেকে ৪ লাখ, পুলিশের বদলিতে লাগে ৫০ হাজার থেকে ৩০ লাখ, পুলিশ দিয়ে নির্যাতনে লাগে ৩০-৫০ হাজার টাকা, তাদের দিয়ে খুন করাতে লাগে ২-৫ লাখ, এই হচ্ছে বাংলাদেশের বাস্তবতা। এই অবস্থায় জয়ের রাজনীতি তাকে আসলে কি বিজয়ী করতে পারবে?

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads