দেশব্যাপী জনসংযোগের অংশ হিসেবে ১৮ দলীয় নেত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া গত রোববার নরসিংদীতে আয়োজিত বিশাল জনসমুদ্রে পুনরায় সরকারকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন যে, বর্তমান সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে পারে না এবং দেশের মানুষ এই ধরনের নির্বাচন মেনে নেবে না। তিনি ১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়কের দাবিতে আওয়ামী লীগের ১৭৩ দিনের হরতাল, অবরোধ, সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ প্রভৃতির কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেছেন যে, আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করে ক্ষমতায় গিয়ে আজীবন ক্ষমতায় থাকার জন্য দেশবাসীর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন এবং সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা উঠিয়ে দিয়ে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের বিধি সংযোজন করেছেন। তিনি আরো বলেছেন, সরকার দেশের উন্নয়ন করেনি। তার প্রশ্ন উন্নয়নের টাকা গেল কই? তিনি তত্ত্বাবধায়ক মেনে নেয়ার জন্যে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। অন্যথায় পালানোর পথ তৈরি করার কথা বলেছেন।
আমি এখানে একটি অপ্রাসঙ্গিক কথা বলি। আমি যখন এই নিবন্ধটি লিখছিলাম তখন আমার মেয়ে বলছিল যে, এইবার যদি দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ হারে তাহলে আগামী দিনে আওয়ামী লীগ পুনরায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহাল করার জন্য ১৭৩ দিন নয়, ২৭৩ দিন হরতাল করতেও দ্বিধাবোধ করবে না। কেননা এটাই আওয়ামী লীগের চরিত্র। এই কথাটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ, যদিও আমি বিশ্বাস করি যে, বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে পারে না এবং তাতে কেউ অংশগ্রহণ করবে না।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক আকাশে ঈশান কোণে যে মেঘ ঘনীভূত হতে শুরু করেছে তাতে একটি মহাবিপর্যয়ের আভাস আমরা দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হচ্ছে যে, এই বিপর্যয় ও দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য বাস্তব ও কার্যকর কোন প্রস্তুতির লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। সরকারের একগুঁয়েমি পরিস্থিতিকে আরো ভয়াবহ করে তুলছে। আমাদের রাজনৈতিক অঙ্গনে যে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে তা নিরসনের জন্যে সরকারি উদ্যোগ নেই। উদ্যোগ না থাকাটাই স্বাভাবিক। কেননা এই সংকট সরকারই সৃষ্টি করেছে। এবং বিদেশীরা যে উদ্যোগ নিয়েছেন তার ফলাফল যে ভাল হবে সে ব্যাপারে আশাবাদী হওয়ার লক্ষণও নেই। জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন প্রধানমন্ত্রী এবং বিরোধীদলীয় নেত্রীকে টেলিফোন করে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের লক্ষ্যে একটি গ্রহণযোগ্য পদ্ধতিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সংলাপের উপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। জাতিসংঘ মহাসচিবের দূত ঢাকায় এসে উভয় নেত্রীর সাথে কথা বলেছেন। এতে অবস্থার কি কোন পরিবর্তন হয়েছে? মহাসচিবের টেলিফোনের আগে সরকারের শীর্ষ নেতারা পার্লামেন্ট ভেঙ্গে দিয়ে নির্বাচনের কথা বলেছিলেন। কিন্তু টেলিফোনের পর প্রধানমন্ত্রী সচিব সম্মেলনে যে ঘোষণা দিয়েছেন তাতে সংলাপের পথ রুদ্ধ হয়ে গেছে বলে মনে হয়। তিনি বলেছেন, আগামী ২৭ অক্টোবর থেকে ২৪ জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই সময় পার্লামেন্ট বহাল থাকবে, কিন্তু পার্লামেন্টের কোন অধিবেশন বসবে না। তার মন্ত্রিসভাও বহাল থাকবে। তার এই ঘোষণার তাৎপর্য অনুধাবন করা অত্যন্ত কঠিন। পার্লামেন্ট যদি বহাল থাকে তাহলে নির্বাচনের যৌক্তিকতা কোথায়? একটি পদ খালি হলেই তা পূরণের জন্য নির্বাচনের প্রশ্ন আসে। পদটিই যদি খালি না হয় এবং সেই পদে আসীন ব্যক্তি সরকারের সকল সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে নির্বাচন করেন তাহলে সুবিধাবঞ্চিত বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা তার বিরুদ্ধে নির্বাচনে প্রতিযোগিতা করা কি অর্থহীন নয়? দ্বিতীয়তঃ প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে, সংসদ বহাল থাকলেও কোন অধিবেশনে বসবে না। তাহলে সংসদ বহাল রাখার যৌক্তিকতা কি, তা ভেঙ্গে দেয়া হবে না কেন? কেউ কেউ এর পেছনে প্রচ্ছন্ন কিছু উদ্দেশ্যের কথা বলেছেন। এর একটি হচ্ছে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য তিনি যে সময় কাঠামো ঘোষণা করেছেন তার শেষ পর্যায়ে গিয়ে হয়ত পার্লামেন্ট ভেঙে দেয়া হতে পারে এবং এই ক্ষেত্রে তার সরকারের মেয়াদ আরো তিন মাস অর্থাৎ এপ্রিল মাসের শেষ পর্যন্ত সম্প্রসারিত হতে পারে। এক্ষেত্রে বিরোধী দলসমূহকে পঙ্গু করার যে অপকর্ম ও অপকৌশলগুলো বাকী আছে সরকার সেগুলো সেরে নিয়ে এপ্রিল মাসের শেষ সপ্তাহে নির্বাচন করতে পারেন। আবার দ্বিতীয় অপকৌশলটি হচ্ছে সংসদকে বহাল রেখে শেষ মুহূর্তে নির্বাচন বাতিল করে বর্তমান সংসদের মেয়াদ আরো পাঁচ বছর বাড়িয়ে দেয়া হতে পারে। এই কাজে আওয়ামী লীগের অভিজ্ঞতা রয়েছে। আওয়ামী লীগের তৎকালীন প্রধান ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর পিতা শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৫ সালে নির্বাচন পিছিয়ে সংসদের মেয়াদ দুই বছর বাড়িয়ে দিয়েছিলেন এবং নিজেকে আজীবন প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেছিলেন। সকল রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করে একদলীয় বাকশাল প্রতিষ্ঠা এবং চারটি দৈনিক পত্রিকা বাদে বাকী সকল পত্রিকা বন্ধ করার বিষয়টিতো সকলেরই জানা। তার কন্যা শেখ হাসিনা অনেক দিক থেকেই তাকে ডিঙ্গিয়ে গেছেন বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা অভিযোগ করেছেন এবং এ প্রেক্ষিতে তিনি আরো অগ্রসর হয়ে পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচন স্থগিত করে বিদ্যমান সংসদের মেয়াদ বৃদ্ধি এবং নিজেকে আজীবন প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা অস্বাভাবিক কিছু নয় বলে মনে হয়।
প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষা করার জন্যে তার দলকে ভোট দেয়ার আহ্বান দেশব্যাপী সফর করছেন এবং বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেছেন। নিজের সরকারের সাফল্য গাঁথা প্রচার করছেন। তার বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। একজন প্রধানমন্ত্রী হয়ে সিডিউল ঘোষণার আগে সরকারি পয়সায় ভ্রমণ করে দলের জন্য ভোট চাওয়া সভ্য দেশে কল্পনা করা যায় না। আরেকটি অসভ্য কাজ দেখেছি। আমি জানি না এটা কতদূর সত্য। তবে ফেসবুকে এর সচিত্র রিপোর্ট এসেছে এবং সেটা হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী গোয়ালন্দের পতিতালয়ে গিয়ে পতিতাদের কাছে ভোট ভিক্ষা করছেন। একটি দেশের নারী প্রধানমন্ত্রীর জন্য এর চেয়ে লজ্জাজনক আর কিছুই হতে পারে না।
নিউএজ সম্পাদক জনাব নুরুল কবির একটি টেলিভিশন চ্যানেলের টকশোতে একটি মূল্যবান কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন ১৯৯৬ সালে বিএনপিকে যেভাবে রাজপথের আন্দোলনে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা মেনে নিতে বাধ্য করেছিল বিএনপিও এবার আওয়ামী লীগকে যদি সেভাবে বাধ্য করতে পারে তবে বিদ্যমান রাজনৈতিক সঙ্কটের একটা সমাধান হতে পারে। আর না পারলে ইতিহাস তার আপন গতিতে চলবে। এখানে একটি কথা পরিষ্কারভাবে উপলব্ধি করা প্রয়োজন এবং সেটি হচ্ছে আওয়ামী লীগের অবস্থান।
তারা সংবিধানের কথা বলেন, কিন্তু সংবিধানের বর্তমান অবস্থা তারাই এককভাবে তৈরি করেছেন। প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে গত পরশু একটি ক্লারিফিকেশন দিয়েছেন। সংবিধান সংশোধন তথা কেয়ারটেকার সরকার বাতিল করে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের বিধি অন্তর্ভুক্ত করার আগে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। তার মতে সেই কমিটি বিরোধী দল সংবিধান বিশেষজ্ঞ, আইনজ্ঞ, সুশীল সমাজ, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী ও সকল শ্রেণী পেশার মানুষের সাথে পরামর্শ করে কেয়ারটেকার পদ্ধতি বিলোপের সুপারিশ করেছিলেন। তার এই কথাটি যে ডাহা অসত্য প্রধানমন্ত্রী নিজে অবশ্যই তা জানার কথা। সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের নেতৃত্বে এই ব্যাপারে যে কমিটি হয়েছিল, সেই কমিটি বিভিন্ন শ্রেণী পেশার লোকের সাথে মতিবিনিময় করেছিলেন এটা সত্য। কিন্তু তাদের শতকরা ৯৯ ভাগ আরো দুটি জাতীয় নির্বাচন কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে অনুষ্ঠানের পরামর্শ দিয়েছিল। তাদের পরামর্শ নিয়ে সুরঞ্জিৎ সেনগুপ্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে দেখা করার একদিন আগেও বলেছিলেন যে কেয়ারটেকার সরকার পদ্ধতি সংবিধানে থাকছে। কিন্তু দেখা করার পরের দিনই তার অবস্থান পাল্টে যায়। এর অর্থ কি? প্রধানমন্ত্রী সকল জনমতকে উপেক্ষা করে নিজেই কেয়ার টেকার পদ্ধতি উঠিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে সংবিধান সংশোধন করেছেন। অবশ্য অনেকে বলেন কেয়ারটেকার ব্যবস্থা সম্পর্কে ২০০১ সালের নির্বাচনে পরাজিত হবার পরই শেখ হাসিনার মোহমুক্তি ঘটেছিল। নির্বাচনে হেরে তিনি তার পছন্দের প্রেসিডেন্ট, কেয়ারটেকার সরকার প্রধান, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও সেনা প্রধানকে বিশ্বাসঘাতক ও বেঈমান বলে আখ্যায়িত করেছিলেন। ঐ সময়েই তার নির্দেশে কেয়ারটেকার সরকারের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছিল এবং এই মামলা তিনি ক্ষমতায় আসার পর সুবিধা অনুযায়ী মুভ করে বিচারপতি খায়রুল হককে প্রায় দশ লাখ টাকার অবৈধ সুবিধা দিয়ে রায় তার অভিলাষ অনুযায়ী আদায় করেছিলেন। যদিও সংক্ষিপ্ত রায় প্রকাশের পর বিচারপতি খায়রুল হক অবসরে গিয়ে ১৬ মাসের মাথায় সম্পূর্ণ অনিয়মতান্ত্রিকভাবে পূর্ণাঙ্গ রায়ে স্বাক্ষর দিয়েছিলেন। এই রায়ে সংক্ষিপ্ত রায়ের অনেক কিছু বাদ দিয়ে শেখ হাসিনার অনেক রাজনৈতিক বক্তব্য স্থান পেয়েছিল বলে অভিযোগ আছে। প্রধানমন্ত্রী উন্নয়নের কথা বলেন, তার উন্নয়নের ফিরিস্তি প্রকাশের জন্যে একবার দেখা গেলো রাজধানীর প্রায় সকল বিলবোর্ডগুলো রাতারাতি তার দল দখল করে নিয়েছে। দেশব্যাপী সমালোচনার ঝড় উঠলো। কিভাবে বিলবোর্ডগুলো কারা দখল করলো সরকার বা আওয়ামী লীগ অথবা মহাজোট কেউ তা স্বীকার করলেন না। তারপর হঠাৎ এক রাতে সুড়সুড় করে বিলবোর্ডগুলো নেমে গেলো। এখন দেখা যাচ্ছে চট্টগ্রাম আর রাজশাহীর বিলবোর্ডগুলো দখল হয়ে গেছে এবং সেখানে সরকারের উন্নয়নের ডুগডুগি বাজানো হচ্ছে। উন্নয়ন মানুষ বিলবোর্ডে দেখে না। সরেজমিনে প্রত্যক্ষ করে ও উপলব্ধি করে। দেশের মানুষ তাদের উন্নয়ন উপলব্ধি করতে পারছেন না। আর উন্নয়নের অর্থ ৬৪টি জেলার ৫ শতাধিক উপজেলার ৫ সহ¯্রাধিক ইউনিয়নকে বাদ দিয়ে রাজধানীসহ গোটা কয়েক বিভাগীয় শহরে হাজার হাজার কোটি ব্যয়/অপব্যয় করে ফ্লাইওভার নির্মাণ করা নয়। তিনি বিদ্যুৎ খাতে ব্যাপক উন্নয়নের কথা বলেন কিন্তু দৈনিক যখন ৪/৫ বার কমপক্ষে ১ ঘণ্টা করে লোডশেডিং-এর নির্যাতন আমরা ভোগ করি তখন লজ্জায় মুখ লুকানোর জায়গা পাই না। শহর, নগর, গ্রামগঞ্জে রাস্তাঘাটে হাঁটা যায় না, যানবাহন চলতে পারে না। উন্নয়নের এত অর্থ গেল কোথায়? তার এই উন্নয়ন মোল্লা নাসিরুদ্দীনের মাংস চুরির ঘটনাকে স্মরণ করিয়ে দেয়। একদিন বাজারে গিয়ে মোল্লা নাসির ভাল মাংস পেয়ে খুশী হয়ে একসের মাংস কিনে বাড়ি ফিরে স্ত্রীকে ভাল করে রান্নার নির্দেশ দিয়েছিলেন। মোল্লার স্ত্রী মাংস রান্না করলেন। কিন্তু রান্না করা মাংস তার এতই ভাল লাগল যে তিনি পুরো মাংসটাই খেয়ে ফেললেন। মোল্লা খেতে এসে যখন মাংস চাইলেন তখন স্ত্রী বললেন, মাংস বিড়ালে খেয়ে ফেলেছে। মোল্লা জিজ্ঞাসা করলেন বিড়াল কি পুরো মাংসই খেয়ে ফেলেছে? মোল্লার স্ত্রী হ্যাঁ সূচক জবাব দিলেন। বিড়ালটি কাছেই ছিল। মোল্লা নাসিরুদ্দীন বিড়ালটিকে দাঁড়িপাল্লায় চড়িয়ে দেখলেন যে বিড়ালটির ওজন ঠিক একসের। মোল্লা বললেন, এটিই যদি সেই বিড়াল হয় তাহলে মাংস কোথায়, আর এটিই যদি সেই মাংস হয় তাহলে বিড়াল কোথায়? আওয়ামী লীগের গত পৌনে পাঁচ বছরের যদি এটিই উন্নয়ন হয় তবে বিনিয়োগের অর্থ গেল কোথায়? আর যদি এটিই বিনিয়োগ হয় তাহলে উন্নয়ন গেল কোথায়? কেন না গ্রামেগঞ্জে, রাস্তাঘাটে, শহরের কোন অলিতে গলিতে এই উন্নয়নের লক্ষণ আমরা দেখি না। তবে একটি ক্ষেত্রে তারা সফল এবং সেটি হচ্ছে বিরোধী দল ও মতের দমন, সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, চুরি ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, গুম, খুন, টেন্ডারবাজি, দখল বাণিজ্য, ভর্তি বাণিজ্য, সরকারি সম্পত্তি গ্রাস, শিক্ষাঙ্গনে অস্থিরতা, ব্যাপক দুর্নীতি ও দলীয়করণ প্রভৃতি।
বিরোধী দলের সামনে এখন অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ। তত্ত্বাবধায়ক বা নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের পুনঃপ্রতিষ্ঠা, নির্বাচন কমিশনের সংস্কার ও তাকে ঢেলে সাজানো, জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের সংস্কার, জামায়াতের নিবন্ধন পুনর্বহাল, রাষ্ট্রযন্ত্রকে দলীয় প্রভাবমুক্তকরণ, ভোটার তালিকা সংশোধন ও ভুয়া ভোটার মুক্তকরণ, শীর্ষ নেতৃবৃন্দসহ জামায়াত-শিবির, বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদলের নেতা-কর্মীকে বিনা শর্তে কারামুক্তি। তাদের বিরুদ্ধে আনীত সকল মামলা প্রত্যাহার এবং সরকারের রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস ও বিরোধী দল নির্যাতনের অবসান। এই ন্যূনতম দাবিগুলো মেনে নেয়া না হলে এই দেশে নির্বাচনী পরিবেশ ফিরে আসতে পারে না। সরকারের যে আচরণ, তাতে তারা জনদাবির প্রতি কোন রকম সম্মান প্রদর্শনে রাজি হবেন বলে মনে হয় না। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি সম্প্রতি সংলাপের তাগিদ দিয়ে দুই নেত্রীকে চিঠি দিয়েছেন। তার এই চিঠির জবাবে বিরোধী দল ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে। কিন্তু সংলাপ কিসের জন্য? গেরো দিয়েছেন সরকারি দল, তা খুলবার দায়িত্বও সরকারি দলের। এখানে বিদেশী কোন রাষ্ট্র বা সংস্থার ভূমিকা নগন্য। তারা যা করতে পারেন তা হচ্ছে নৈতিক চাপ। কিন্তু শেখ হাসিনা এই চাপের থোড়াই তোয়াক্কা করেন। এই অবস্থায় নিউএজ সম্পাদক নুরুল কবিরের মন্তব্যই আমার সঠিক বলে মনে হয়। ১৮ দলীয় জোট যদি দুর্বার আন্দোলন করতে পারে তাহলেই সঙ্কটের সমাধান সম্ভব। জামায়াত মাঠে আছে এবং সরকারি নির্যাতন ভোগ করছে। বিএনপি যদি অভ্যন্তরীণ সকল ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে এবং এজেন্সিগুলোর প্ররোচনা উপেক্ষা করে সামনে এগিয়ে মাঠে নামতে পারে তাহলেই শুধু একটি দুর্বার আন্দোলন গড়ে উঠতে পারে এবং দেশবাসী এখন তাই চায়।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন