‘বিয়ের সময় হাতে লাগানো মেহেদীর রং শুকায়নি এখনো। স্বামী-সংসারে আর থাকা হলো না নববধূ কনার। যৌতুকের বলি হয়ে পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হয়েছে পরপারে।’ এমন ঘটনাটি ঘটেছে চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলায়। আঞ্জুমান আক্তার কনা নামে এক গৃহবধূকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। যৌতুকের জন্য নির্যাতন করে শ্বশুর বাড়ির লোকজন তাকে হত্যা করেছে বলে ওই গৃহবধূর মা মঞ্জুরা বেগম বাদী হয়ে স্বামী, শ্বশুর-শাশুড়িকে আসামী করে মিরসরাই থানায় একটি মামলা করেছেন। গত বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলার খৈয়াছরা ইউনিয়নের উত্তর আমবাড়ীয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ কনার লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠিয়েছে। তবে পুলিশ তদন্তের আগে এ বিষয়ে কোন ধরনের মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
কনার মা সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, তার মেয়েকে যৌতুকের জন্য হত্যা করা হয়েছে। এদিকে কনার স্বামী ওমর ফারুককে তার বক্তব্য নিতে ফোন করে এ প্রতিবেদক সাংবাদিক পরিচয় দিতেই তিনি ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। তবে পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্ত পরিবারের লোকজন পুলিশের কাছে দাবি করেছে কনা গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছে।
গত শুক্রবার কনার শ্বশুর বাড়িতে গিয়ে পরিবারের কাউকে পাওয়া যায়নি। তবে নুরুল আবছার ও আব্দুল কাদের নামে দুই গ্রামবাসী জানান, ‘শুনেছি তাদের পরিবারে ঝগড়া-ঝাঁটি হয়েছে। এরপর আর কিছু জানি না।’ এদিকে গৃহবধূর মামাতো ভাই কামরুল হাসান অভিযোগ করেন, ‘খৈয়াছরা ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আজিজুল হক ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করছেন।’ অভিযোগ অস্বীকার করে আজিজুল হক জানান, ‘এসব চালাকি মেয়ের মায়ের। সে মেয়ের গহনাগুলো বিক্রি করে দিয়েছে।’ গহনার জন্যই ঘটনাটি ঘটেছে কিনা, জানতে চাইলে তিনি এড়িয়ে যান।
উপজেলার ধূম ইউনিয়নের মোবারক ঘোনা গ্রামে গিয়ে কনার মা মঞ্জুরা বেগম এবং তার স্বজনদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বিয়ের সময় দুই ভরি সোনা এবং ফার্নিচার যৌতুক হিসেবে দেয়া হয়েছে স্বামীকে। বর্তমানে পুনরায় ১ লাখ টাকা দাবি করেছে। যৌতুকের দাবিকৃত টাকা না দেয়ায় কনাকে তারা নির্যাতন করে হত্যা করেছে। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার সকালে কনা মাকে ফোন করে বলেছিল, ‘মা, আমাকে এখান থেকে নিয়ে যাও, না হয় ওরা আমাকে মেরে ফেলবে’। মা মঞ্জুরা মেয়েকে সান্ত¦না দিয়ে বলেছিল, ‘তোর বাবা দেশে আসুক তারপর একটা বোঝা-পড়া হবে।’ মায়ের দেয়া সে সময় পর্যন্ত বাঁচা হলো না কনার। বৃহস্পতিবার রাতে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
এ প্রসঙ্গে মিরসরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইমতিয়াজ এমকে ভূঁইয়া বলেন, ‘এ ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে।’ তবে তদন্তের আগে হত্যা সম্পর্কে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি ওসি।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন