সোমবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

অবৈধ অস্ত্র ও মাদকের ছড়াছড়ি


আওয়ামী সরকারের বিগত সাড়ে ৪ বছর ধরে সীমান্ত পথে ভারত থেকে ব্যাপক হারে বিপুল পরিমাণের অবৈধ ক্ষুদ্র অস্ত্র বাংলাদেশে ঢুকছে। আকারে ছোট হওয়ায় বিভিন্ন ধরনের পিস্তল, রিভলবার ইত্যাদি চোরাইপথে আনা ও লুকিয়ে রাখা সহজ এবং ব্যবহারকারীদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে এসব ক্ষুদ্র অস্ত্র। যশোরের চৌগাছা, ঝিকরগাছা, শার্শা ও সাতক্ষীরার কলারোয়া, সাতক্ষীরা সদর, দেবহাটা, কালীগঞ্জ ও শ্যামনগর উপজেলাসহ বিশাল এলাকার ভারতীয় সীমান্ত পথ দিয়ে প্রতিদিন অবৈধ অস্ত্র, মাদকসহ বিভিন্ন চোরাচালান পণ্য বাংলাদেশে ঢুকছে। দেশের ভেতরে অবৈধ অস্ত্র ও মাদক প্রবেশের অন্যতম প্রধান এলাকা যশোর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবৈধ অস্ত্র ও মাদক প্রবেশ, ক্রয়, বিক্রয়, এসবের ব্যবহার নিয়ে একাধিক দৈনিকে বিস্তারিত খবর প্রকাশিত হয়েছে। এতে সংশ্লিষ্টদের স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে বলা হয়েছে যে, চোরাচালান হয়ে আসা অস্ত্রের তুলনায় আটক হওয়া অস্ত্রের পরিমাণ খুবই নগণ্য। অবৈধ অস্ত্রসহ যারা ধরা পড়ে, তারাও আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে যায়। অবৈধ অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালীদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখের সামনে প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া চালায়, করে খুন, জখমও। সংশ্লিষ্ট একজন গবেষকের বরাত দিয়ে এ কথাও বলা হয়েছে যে, পার্বত্য বান্দরবান, পার্বত্য রাঙ্গামাটি ও পার্বত্য খাগড়াছড়ির পর ভারত থেকে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি অবৈধ অস্ত্র আসে যশোর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্ত পথ দিয়ে। সীমান্তের ওপারে ভারত থেকে বাংলাদেশে অবৈধ অস্ত্র প্রবেশ ও সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ার খবর দু’একদিনের নয়। আওয়ামী সরকারের গত সাড়ে ৪ বছর ধরেই প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু সরকার ও সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলরা দেশে অবৈধ অস্ত্রের প্রবেশ বন্ধ করতে পারেনি কেন? এমনকি বিভিন্ন সময়ে অবৈধ অস্ত্রসহ যেসব সন্ত্রাসী বিজিবি, পুলিশ, র‌্যাব ও গোয়েন্দাদের হাতে ধরা পড়েছে এবং এখনও ধরা পড়ছে, তারা কিভাবে আবারও বেরিয়ে আসছে? এই আওয়ামী দলবাজি আর কতদিন চলবে? এটাই কি আওয়ামী দেশপ্রেম এবং আওয়ামী সু-শাসন? যশোরের স্থানীয় পুলিশের পদস্থ সূত্রের বরাত দিয়ে খবরে বলা হয়েছে, ক্রেতার কাছে অবৈধ অস্ত্র পৌঁছে দিতে গিয়ে কেউ কেউ ধরা পড়লেও অস্ত্র ব্যবসায়ী ও তাদের গ্যাং লিডারদের খোঁজ পাওয়া যায় না।
বাংলাদেশে ভারত থেকে আসা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের তৈরি অবৈধ অস্ত্রের বেচাকেনা সেই সাথে ব্যবহারও দিন দিন বেড়ে চলেছে। এদিকে জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বরাবরের মতো এবারও দাগী অপরাধী ও শীর্ষ সন্ত্রাসীরা ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালীদের মদদে দেশে ফিরতে শুরু করেছে, অনেকে কারাগার থেকেও বেরিয়ে আসছে এবং তাদের অশুভ কর্মকা-ও লক্ষণীয় হয়ে উঠছে। রাজনৈতিক হত্যাকা-সহ এদের সন্ত্রাসী তৎপরতা বেড়ে চলার জনমনে উদ্বেগ-আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে। অথচ সন্ত্রাসী ও মাসলম্যানরা ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয় পেতে শুরু করেছে। সচেতন নাগরিক সমাজের যশোর জেলা শাখার শীর্ষ সূত্রের বরাত দিয়ে খবরে বলা হয়েছে, সারা দেশের মতো যশোরেও অবৈধ অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা পাচ্ছে। আওয়ামী নেতারা নিজেদের আধিপত্য ধরে রাখতে এ কাজ সব সময় করে আসছেন। অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরাও ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, কমিশনবাজি, টেন্ডারবাজি, দখলবাজি, অস্ত্র ও মাদক ব্যবসা চালানোর কাজে ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতাদের ব্যবহার করে। এই একই পরিস্থিতি যে সারা দেশেই বিরাজ করছে, এটা আর বিশদ ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন নেই। বিভিন্ন সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কিছু কিছু অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করলেও, তা যে দেশে বিগত সাড়ে ৪ বছরে ঢুকেপড়া অবৈধ অস্ত্রের অতিনগণ্য অংশ, এটা এখন সংশ্লিষ্ট বাহিনীর পক্ষ থেকেও স্বীকার করা হচ্ছে। নির্বাচনকালীন সরকার প্রশ্নে মতভেদ নিয়ে রাজনেতিক পরিস্থিতি আরও সংঘাতময় হয়ে ওঠার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এই অবস্থায় সারা দেশে সব ধরনের অস্ত্রের চাহিদা, অনুপ্রবেশ ও বেচাকেনা যে বেড়েছে, তা ইতোমধ্যে প্রকাশিত খবরাখবরে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
বাস্তবতার নিরিখে এটাও এখন আর অস্পষ্ট নয় যে, সীমান্তপথে ভারত থেকে অবৈধ অস্ত্রের অবাধ প্রবেশ আওয়ামী সরকারের সাড়ে ৪ বছরে কেবল বেড়েই চলেছে। এই অবস্থার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিবি) পক্ষ থেকে উপযুক্ত প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে, এমনটা আর মনে করা যাচ্ছে না। অবৈধ অস্ত্র ও মাদক চোরাচালানীরা সুযোগ সুবিধা বুঝেই অবৈধ অস্ত্র ও মাদক নিয়ে আসবে, তা অস্বাভাবিক নয়। তবে অবৈধ অস্ত্র ও মাদকের অনুপ্রেবশ বন্ধে উপযুক্ত কৌশল গ্রহণ করা যাচ্ছে না কেন? যে কেনো মূল্যে সীমান্তপথে অবৈধ অস্ত্র ও মাদকের অনুপ্রবেশ রোধ করতে হবে। এজন্য বিজিবিকে সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক কৌশলী পদক্ষেপ নিতে হবে। দেশের আইনশৃঙ্খলার বৃহত্তর স্বার্থে এর কোনো বিকল্প থাকতে পারে না। দেশের ভেতরে অবৈধ অস্ত্র ও মাদক আনা-নেয়া, ক্রয়-বিক্রয় এবং অস্ত্র ভাড়ায় খাটানোর তৎপরতা বন্ধ করতে হবে। সর্বোপরি অবৈধ অস্ত্র ও মাদকের বাহক মাত্র নয়, বরং অস্ত্র ও মাদক বিক্রেতা ও প্রকৃত ব্যবসায়ী ও গ্যাং লিডারদের শনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এজন্য পুলিশ, র‌্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে আরও তৎপর হতে হবে। নির্বাচন সামনে রেখে বিশেষ প্রভাবশালী, গডফাদারদের মদদে কর্মী-ক্যাডার নামধারী সন্ত্রাসীরা যখন বেপরোয়া হয়ে উঠবে, তখন যে কোনো মানুষ যে কোনো সময় অস্ত্রবাজদের শিকারে পরিণত হতে পারে। বিগত সাড়ে ৪ বছরের মতো সেই পরিস্থিতি শুধু উদ্বেগজনক নয়, হয়ে উঠবে আরও ভয়াবহ ও বিধ্বংসী। তাই, সময় থাকতে ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads