মঙ্গলবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

বেগম জিয়ার ছোট্ট এক দাবি ও ধৈর্য পরীক্ষা


এবারের রমজানে মিসরে মতার অবৈধ দখলদার মিসরীয় মীরজাফর চক্রের সাথে ইসরাইলি-মার্কিন যোগসাজশের বদৌলতে মারমুখী সন্ত্রাসবিরোধীনিরাপত্তা বাহিনী আর্মার্ড কার, পানি কামান, টিয়ার শেল কামান ও রাইফেল-বন্দুকসহযোগে রাজধানী কায়রোর পার্কে, সড়ক চত্বরে, মসজিদে মতাবঞ্চিত অবস্থান ধর্মঘটকারী ইখওয়ান বা মুসলিম ব্রাদারহুড অনুসারী জনতার ওপর সশস্ত্র হামলা করেছে, রক্তাক্ত হয়েছে রাজপথ, হতাহত হয়েছে হাজারো মানুষ। হাসপাতালে দেখা গেছে সারি বেঁধে কাফনে ঢাকা লাশ। মিসরজুড়ে বিােভে ফেটে পড়েছে মানুষ। গণরোষের মেলা বসেছে রাজপথে। যে যেখানে সেখানে বসেই সপরিবারে ঈদ পালন করেছেন প্রতিবাদী জনস্রোতে শামিল মিসরীয়রা। একে অন্যের সাথে কোলাকুলি করেছে, শিশুরা খেলা করেছে, আহার্য-পানীয় ভাগাভাগি করে ুণিœবৃত্তি নিবারণ করেছে। এটুকুই মাত্র সুযোগ পেয়েছেন তারা। এরপর আবারো ঘটেছে তাদের ঘিরে ফেলে মিসরীয় সেনা-পুলিশের রক্তয়ী সশস্ত্র আক্রমণ। ঘটেছে নির্বিচার গণহত্যা। রাজধানীর রাজপথ নিজেদের জন্য নিরুপদ্রব করতে সম হয়েছে মিসরীয় মীরজাফর চক্র, নানা জায়গায় হানা দিয়ে কারাবন্দী করেছে বিপুল ইখওয়ান নেতাকর্মীদের। কিন্তু ঘরে ঘরেই মিসরজুড়ে জ্বলছে প্রতিরোধের বহ্নিশিখা। বাংলাদেশেও এবারের রমজানে রাজনৈতিক ইসলামের বিরুদ্ধে আঞ্চলিক ব্রাহ্মণ্যবাদী-ইহুদিবাদী শক্তির দোসর মতাসীন সরকারের র‌্যাব-পুলিশের গ্রেফতারবাণিজ্য মামলা-হামলা সমানে চলেছে। নিয়মতান্ত্রিকভাবেই মতায় এসে ভারতপন্থী মহাজোট সরকার মতার মেয়াদের ক্রান্তিলগ্নে পৌঁছে মরিয়া হয়ে উঠেছে ভোটদাতাদের মধ্যে রাজনৈতিক ইসলামের প্রভাব নির্মূল করার ল্েয। রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতের নিবন্ধন অসাংবিধানিক ও অবৈধ বলে হাইকোর্টের রায় ঘোষণা হয়েছে রমজানের মধ্যে। শুধু নিবন্ধন নয়, তাদের রাজনৈতিক তৎপরতা নিষিদ্ধ করারও দাবি তুলেছেন মতাসীন জোটের মধ্যে উগ্র ধর্মনিরপেতাবাদী নেতাকর্মীরা। সেই ল্েয প্রশাসনিক প্রক্রিয়ারও সূচনা করেছে কোনো কোনো কর্তৃপ। এর আগে রমজানের শুরুতেই তথাকথিত যুদ্ধাপরাধ বিচারের ট্রাইব্যুনাল হুকুমের আসামি হিসেবে জামায়াতের সাবেক আমির নবতিপর বৃদ্ধ গোলাম আযমকে ৯০ বছর কারাবাসের সাজা দিয়েছেন। পর্যবেণে জামায়াতকে একটি অপরাধী চক্রসাব্যস্ত করে জামায়াতসংশ্লিষ্ট কোনো ব্যক্তিকে সরকারি চাকরি না দেয়ার সুপারিশ করেছেন। তাতেও সন্তুষ্ট না হয়ে সরকারের উকিলেরা ঈদের পর ট্রাইব্যুনালের পর্যবেণের পরিপ্রেেিত দলটিকে নিষিদ্ধ করার আরজি দাখিল করেছেন সুপ্রিম কোর্টে আর অধ্যাপক গোলাম আযমের সাজা অপর্যাপ্তবলে তার ফাঁসি চেয়ে আপিল আবেদন পেশ করেছেন। দলটির নেতাকর্মীরা চুপ করে বসে থাকেননি। আইনিপ্রক্রিয়ায় প্রতিকারমূলক পদেেপর পাশাপাশি রাজপথে নেমেছে। রমজানের মধ্যে এবং ঈদের পরে হরতাল ভাঙচুর হয়েছে। ঝটিকা মিছিল করেছেন তারা। পিকেটিং ছাড়াই নিরুত্তাপ হরতাল পালিত হয়েছে প্রায় সবখানে। আবার ককটেল ফাটিয়ে, ইটপাটকেল ছুড়ে দাঙ্গা পুলিশ কিংবা ছাত্রলীগ-যুবলীগের পিস্তল বাহিনীর সাথে সংঘর্ষ ঘটেছে অনেক জায়গায়। খুনোখুনি, হতাহত হয়েছে পুলিশসহ উভয় প। ৫০ হাজারের মতো জামায়াত-শিবিরকর্মী পঙ্গু হয়ে ঘরে বসে, সমসংখ্যক জেলে বন্দী। গ্রেফতার আতঙ্কে পুরুষশূন্য হয়েছে অনেক গ্রাম। আবার পাল্টা থানা আক্রমণও ঘটেছে। এক কথায় একটা এট্রিশনবা সহ্যশক্তি নাশের সঙ্ঘাত চলেছে রোজার মধ্যে ও ঈদের পরে নির্বিচারে রাষ্ট্রের দমনমতা প্রয়োগকারী মতাসীন নেতৃত্ব ও দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে। তুলনামূলকভাবে রমজানের মধ্যে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এবং তার নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের অন্য শরিকেরা (জামায়াত বাদে) ছিল মোটামুটি শান্ত, বাগ্যুদ্ধরত। ইফতার পার্টি ছিল তাদের জনসংযোগের অন্যতম মাধ্যম। এ ছাড়া কূটনৈতিক যোগাযোগ বাড়ানো, নানা দিবস পালন, আলোচনা সভা, দলীয় ও অঙ্গসংগঠনগুলোর বৈঠকি তৎপরতা চলেছে (তলে তলে অদূরবর্তী সাধারণ নির্বাচনের প্রস্তুতি মাথায় রেখে মনোনয়নবাণিজ্যের ধরনাও চলেছে ব্যক্তিপর্যায়ে)। ১৮ দলীয় জোটনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া রমজানের নাজাতপর্বে সৌদি আরবে ওমরাহ পালনরত থাকায় জোট নেতৃত্ব ধৈর্যধারণ করেছে। জামায়াত ১৮ দলীয় জোটের শরিকদের ধাপে ধাপে আন্দোলনের এই কৌশলের সবুরমেনে নিয়েছে। জোট নেতৃত্ব সমস্বরে বলে চলেছে, মতাসীন দল একঘরে হয়ে পড়েছে, প্রশাসন অচল, অর্থনীতি মুখথুবড়ে পড়েছে। সুষ্ঠু নিরপে সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে মতা বদলের ল্েয তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের জন্য রমজানের মধ্যে চলমান সংসদে সাংবিধানিক পদপে না নিলে ঈদের পরই সরকার পতনের একদফা আন্দোলনের কঠোর কর্মসূচি দিয়ে মাঠে নামবেন সংসদীয় বিরোধী দলনেতা খালেদা জিয়া। সরকার বাহাদুর সে আওয়াজ আমলে নেয়নি। পাল্টা জোরগলায় আওয়াজ তুলেছেÑ সংশোধিত সংবিধান মোতাবেক শেখ হাসিনার তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রিত্বের অধীনেই নির্বাচনে আসতে হবে বিরোধী জোটকে। না হলে যারা আসবে তাদের নিয়েই নির্বাচন অনুষ্ঠান করে ফের মতায় আসবে মতাসীন দল। দুই পইে চলেছে আস্ফালন, টেলিবিতর্কও জমে উঠেছিল সেই ধাঁচে। মাঝখানে অবশ্য একটা ব্যতিক্রমধর্মী উপাদান যুক্ত হয়েছিল রাজনৈতিক বিবৃতি আর টকশোর বাগ্যুদ্ধে। সেই ধারা এখনো অব্যাহত রয়েছে। কদর্য দোষারোপের রাজনীতির যে রেওয়াজ এ দেশে মতার বাগ্যুদ্ধে অপরিহার্য হাতিয়ার হয়ে দাঁড়িয়েছে, সেটা কয়েক দিনের জন্য শিকেয় তুলে রেখে ইতিবাচক বিলবোর্ডরাজনীতির একটা নজির চালু করার নির্দেশ দিয়েছিলেন সরকারপ্রধান। সেই নির্দেশ মোতাবেক হাল আমলে সরকার বাহাদুর কী কী সৎকর্ম সাধন করেছে বা কতগুলো দর্শনীয় উন্নয়নকাণ্ড ঘটিয়েছে এবং মতাসীন দলের অতীত কীর্তি কী ঐতিহাসিক স্যা বহন করে, তার নানা ধাঁচের সিংহনাদ বা নারায়ে তদবিরসংবলিত শেখ কুলগৌরবের সচিত্র নকশা রাজধানীর মোড়ে মোড়ে বিরাটাকার হোর্ডিং তৈরি করে টাঙানোর দ্রুত ব্যবস্থা করা হয়েছিল। সচিত্র নকশায় সাধারণভাবে ছিল জাতিরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের ছবির সাথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি। কয়েকটি বিলবোর্ডে প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা: দীপু মনি এবং ভারতের কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীর ছবি ব্যবহার করা হয়। বিলবোর্ডগুলোয় উন্নয়নের অঙ্গীকার ধারাবাহিকতা দরকারবলে আওয়ামী লীগকে আবার মতায় পাঠাতে জনগণের প্রতি আহ্বানও জানানো হয়েছে। বর্তমান সরকারের আমলে দারিদ্র্য বিমোচন, শিা, স্বাস্থ্য, খাদ্যনিরাপত্তা, যোগাযোগ, অর্থনীতি, বাণিজ্য, কূটনীতি, সামাজিক নিরাপত্তা, ডিজিটাল বাংলাদেশ, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠাসহ যুগান্তকারী পরিবর্তন এবং বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহসহ বিভিন্ন সেক্টরে অর্জন ও অগ্রগতির দাবি করা হয়েছে এসব বিলবোর্ডে। কোনো কোনোটিতে এ সরকারের অর্জনের পাশাপাশি বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের কাজের সাথে তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। বিলবোর্ডগুলো কার পে লাগানো হয়েছে, সরকার বা কোন মন্ত্রণালয়, আওয়ামী লীগ বা কোন সহযোগী সংগঠন, কার দায়িত্বে এই বিজ্ঞপ্তি, সেসব কারোরই নাম নেই কোনো বিলবোর্ডে। যেন ভুতুড়ে কারবার। হতবুদ্ধি বিলবোর্ডের বরাদ্দপ্রাপ্ত ইজারাদার বা ভাড়াটে এবং তাদের সাথে চুক্তিবদ্ধ বিজ্ঞাপনদাতা বা বিজ্ঞাপনী সংস্থাগুলো দেখল : কে বা কারা নিজ স্থানে বহাল ঈদের বাজারের বিভিন্ন পণ্য ও প্রতিষ্ঠানের হোর্ডিংয়ের ওপর ওই সব ডিজিটাল ব্যানারবসিয়ে দিয়েছে। যাদের বিলবোর্ড খাড়া ছিল তাদের কারো সাথে কথা না বলে ৯০ শতাংশ বিলবোর্ড দখল করে সরকারের উন্নয়নচিত্র বসানো হয়েছে। ঈদের আগে এটা করায় অনেক পণ্যের বিজ্ঞাপন দেয়া যায়নি। অনেক বিজ্ঞাপনদাতা চুক্তিভঙ্গের দায়ে ঈদের আগে তাদের কাছে ভাড়া দেয়া বিলবোর্ডের মাসিক ভাড়া দিতে অস্বীকার করেছেন। সরকারি বিলবোর্ড বাণিজ্যিক বিজ্ঞাপনের ওপরই বসিয়ে দেয়া হয়েছে। ঈদ সামনে রেখে যারা বিলবোর্ড ভাড়া নিয়েছিল, তাদের পণ্যের ওপর এ ধরনের প্রচারণা চিত্র সাঁটিয়ে দেয়ায় তারা ঘোর আপত্তি তুললেন। সরকারি কর্তৃপ ও আওয়ামী লীগ নেতারা চুপ। বিলবোর্ড রাজনীতির এমন আকস্মিক আবির্ভাবে বিরোধী দলের নেতারা আরো একটা মওকা পেলেন তাদের বাগ্যুদ্ধ চাঙ্গা করার। মিডিয়ায় আর গোলটেবিলে, ঘরোয়া সভায় টেলিটকে রমজানের নাজাতপর্বে তারা শোরগোল তুললেন : গত চার বছরে দেশের কোনো উন্নয়ন আওয়ামী লীগ করতে পারেনি। এখন তারা বিলবোর্ড দিয়ে বলছে, পুরো দেশ উন্নয়নের জোয়ারে ভাসছে। গত সাড়ে চার বছরে সরকারের অপশাসন, দুর্নীতি ও ব্যর্থতার চিত্র জনগণ দেখেছে। এখন বিলবোর্ডের মাধ্যমে উন্নয়নের ঢোল বাজানো হচ্ছে। বিরোধী দল বলল, বিলবোর্ডে উন্নয়নের ফিরিস্তি দিয়ে সরকারের শেষ রা হবে না। মতাসীন দল চর দখলের মতো বিলবোর্ড দখল করেছে। মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে আইয়ুব খানের শেষ রা হয়নি, তেমনি বিলবোর্ড দিয়ে মিথ্যা প্রচারণা চালালেও প্রধানমন্ত্রীর শেষ রা হবে না। ঈদের ছুটির আমেজ যখন শেষ হয়ে কাজে ফিরেছেন নগরবাসী তখন বৈঠকে বসে পূর্বঘোষিত আন্দোলন কৌশলের কিছুটা পরিবর্তন করলেন বিএনপি ঘরানার নেতৃবৃন্দ। সংশয়বাদী কেউ কেউ বললেন, বিলবোর্ড বিতর্কে আওয়ামী ঘরানাকে কিছুটা কাবু করতে পারার সাফল্য থেকেই এই কৌশল পরিবর্তন। নির্দলীয় সরকারের দাবিতে আপাতত কঠোর কর্মসূচি দেবে না বিএনপি নেতৃত্বাধীন বিরোধী জোট। সভা-সমাবেশ ও জেলা সফরের মধ্য দিয়ে গণসংযোগ কর্মসূচির দিকে প্রথমে যাবে তারা। সাংগঠনিকভাবে দলকে শক্তিশালী করে কোরবানির ঈদ শেষে নতুন করে এক দফার আন্দোলন কর্মসূচি চূড়ান্ত করবে। ওই সময় থেকেই দাবি আদায়ে কঠোর কর্মসূচি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকেরা। ১৭ আগস্ট দলের স্থায়ী কমিটির সাথে বৈঠকে চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া আপাতত কঠোর আন্দোলনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। সরকারকে শেষবারের মতো সময় দেয়ার কৌশল হিসেবেই এ মুহূর্তে লাগাতার আন্দোলনে যাচ্ছে না বলে দলের একাধিক নীতিনির্ধারক সাংবাদিকদের জানান। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভায় লাগাতার কর্মসূচি না দিয়ে গণসংযোগ কর্মসূচির দিকেই গুরুত্ব দেয়া হয়। এ ল্েয বিএনপির কেন্দ্রীয়ভাবে গঠিত ৩০টি সাংগঠনিক টিমকে শিগগিরই তৃণমূলে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। আর এ মাসের মধ্যেই ঢাকার বাইরে বেশ কয়েকটি জেলায় খালেদা জিয়া জনসভা করবেন। কঠোর আন্দোলনে বা একদফায় যাওয়ার আগে সরকারকে শেষবারের মতো সময় দেয়ার কৌশল হিসেবেই তারা এ মুহূর্তে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাদের আশা, শিগগিরই নির্দলীয় সরকারের ব্যাপারে মতাসীনেরা বিরোধী দলের সাথে সংলাপে বসার উদ্যোগ নেবেন। যদি সরকার সহসাই এই উদ্যোগ না নেয় তবে আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে কঠোর আন্দোলনে যাবে বিরোধী জোট। সেই আন্দোলনকে ধাপে ধাপে একদফার আন্দোলনে রূপ দেয়ার কৌশলও চূড়ান্ত করা হয়েছে। ১৮ দলীয় জোটের বৈঠকে আরো বিশদ আলোচনা করে এই নতুন আন্দোলন কৌশলই জামায়াতসহ সবাই মেনে নিলো। লজিক দেয়া হলোÑ আগস্টের বাকি কয়েক দিন আর সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহ যেতে না যেতেই শুরু হবে হজযাত্রীদের আসা, হাজী ক্যাম্পের তৎপরতা। তারপর থাকবে কোরবানি ঈদের পশুর হাটের দিকে পাবলিকের মন। দুর্বার আন্দোলন এখনই শুরু করলে তাতে ছেদ পড়বে, অযথা শক্তি ক্ষয় হবে। তাই এক ধাক্কায় ২৫ অক্টোবরের পরপরই সরকারকে ফেলে দেয়ার জন্য আন্দোলনের ব্লিজক্রিগ ঘটাতে দুই ঈদের মধ্যে সারা দেশে গণসংযোগের জোর প্রস্তুতি করা যাবে, যার ত্রে তৈরি হয়েছে পাঁচ নগর করপোরেশন নির্বাচনে বিরোধী জোটের বিজয়ের মধ্য দিয়ে। এ ছাড়া কূটনৈতিক মহলেও ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া হবে বিরোধী জোটের পে যদি মতাসীন জোটকে সংসদের অক্টোবর অধিবেশনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি মেনে নিয়ে সংবিধান সংশোধনের সময় ও সুযোগ দেয়া হয়। মতাসীন জোট কিন্তু তেমন সময় বা সুযোগের তোয়াক্কা করেনি। ১৮ আগস্ট হঠাৎ করেই দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর জরুরি সংবাদ সম্মেলন আয়োজনের বিষয়ে গণমাধ্যমকে জানানো হয়। দুই পৃষ্ঠার লিখিত বক্তৃতায় বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে সাফ জানিয়ে দিলেন। বললেন, ‘জনগণের ভোট নিয়ে আমরা সংবিধান সংশোধন করেছি। তাই যা হবে সংবিধান অনুযায়ীই হবে। সংবিধান থেকে এক চুলও নড়ব না।একটি সংবাদভাষ্যের মন্তব্যÑ নির্দলীয় সরকারের দাবিতে ঈদের পর একদফার হুমকি দিলেও বাস্তবে এর কোনো প্রতিফলন নেই। সভা-সমাবেশের মতো হোমিওপ্যাথিক কর্মসূচি ঘোষণা করায় তৃণমূল নেতাকর্মীরা হতাশ ও ুব্ধ। সরকারি দলও বিরোধী দলের কৌশলকে দুর্বলতা ভেবেছে। দাবি আদায়ে চলমান আন্দোলনের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়নি। এ ধরনের পানসে ও ম্যাড়মেড়ে কর্মসূচি দিয়ে আওয়ামী লীগকে দাবি আদায়ে বাধ্য করা সম্ভব নয়। কর্মসূচির ধরন দেখে উল্টো প্রধানমন্ত্রী হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, তারা সংবিধান থেকে এক চুলও নড়বেন না। সারা দেশের বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা ছিল, ঈদের পর লাগাতার হরতাল, অবরোধসহ কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। কিন্তু সরকারের শেষ সময়ে এসে হোমিওপ্যাথিক কর্মসূচি কেউ মেনে নিতে পারছেন না। কারণ হিসেবে তৃণমূল নেতারা বলেন, গত বছর দাবি আদায়ে তিন মাসের আলটিমেটাম দেন খালেদা জিয়া। এরপর ৪ মে শাপলা চত্বর থেকে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেয়া হয়। দুই দফা আলটিমেটাম আর দফায় দফায় কঠোর আন্দোলনের হুঙ্কার দিয়ে এমন পানসে কর্মসূচি কোনোমতেই কাম্য নয়। এ ছাড়া মাসব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করায় তারা আরো হতাশ। আগামী অক্টোবর পর্যন্ত কঠিন কোনো কর্মসূচি না থাকায় সাধারণ মানুষও বিএনপির প্রতি নাখোশ। এ নিয়ে সাধারণ মানুষের নানা প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হচ্ছে তৃণমূল নেতাদের। প্রধানমন্ত্রীর জরুরি সংবাদ সম্মেলনের অবশ্য লাগসই জবাবই এসেছে ১৮ দলীয় জোটের বৈঠকে দেশনেত্রীর তরফে। ১৯ আগস্ট হুঁশিয়ারি দিয়ে সংসদীয় বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া বললেন, এত আস্ফালন, এত উঁচু কণ্ঠে কথা ভালো নয়। জনগণের আন্দোলনে এমন বাতাস সৃষ্টি হবে তাতে চুল এলোমেলো হয়ে যাবে। তখন চুল তো থাকবেই না, নিজেদের অস্তিত্ব নিয়ে টানাটানি হয়ে পড়বে। এ জন্য যা ঘটবে এর দায়দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে। আমাদের দাবি ছোট্ট। এই ছোট্ট দাবিটি হলো, তত্ত্বাবধায়ক বা অন্য যে নামেই হোক নির্দলীয় নিরপে সরকারের অধীনে নির্বাচন। (প্রকাশিত জরিপেই দেখা যায়) দেশের ৯০ শতাংশ মানুষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায়। এ মুহূর্তে এই সংখ্যা আরো বেড়েছে। গণভোট দিলেও মানুষ নির্দলীয় সরকারের পে রায় দেবে। এখনো সময় আছে, সংসদ অধিবেশন ডেকেছেন। এই অধিবেশনেই বিল আনুন। সংবিধানে নির্দলীয় নিরপে সরকারের বিধানটি প্রবর্তন করুন। নয়তো পরে পস্তাতে হবে। তখন আমাদের হাতেও কিছু থাকবে না। বাগি¦তণ্ডা, হুমকি ও পাল্টা হুমকির ফলাফল কার পক্ষে যাচ্ছে বা যাবে, সেটা দেখার জন্য শেষ অক্টোবর পর্যন্ত অপেক্ষা করতেই হবে।


0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads