সোমবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০১৩

জেলখানায় কাদের মোল্লার মৃত্যু পরোয়ানা


জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার আপীল আদালতের রায় অবিশ্বাস্য গতিতে লেখা সম্পন্ন হবার পর প্রকাশিত হয়েছে। এই রায় ট্রাইব্যুনাল প্রদত্ত তার যাবজ্জীবন কারাদ-কে সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগে সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারপতি মহোদয়গণ মৃত্যুদ-ে রূপান্তরিত করেছেন এবং রায়ের কপিটি সুপ্রীম কোর্টের রেজিস্ট্রার স্বয়ং ট্্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রারের নিকট স্বশরীরে হস্তান্তর করেছেন। ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার তা যথাযথ অনুস্বাক্ষর করে ফাঁসির রায় কার্যকর করার জন্য কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষের নিকট পৌঁছে দিয়েছেন। এর আগে জনাব আব্দুল কাদের মোল্লাকে রায় ঘোষণার পরই কাশিমপুর কারাগার থেকে কেন্দ্রীয় কারাগারে আনা হয়েছে এবং জানা গেছে যে তাকে কনডেম সেলে রাখা হয়েছে এবং ফাঁসির মঞ্চও এমনভাবে প্রস্তুত রাখা হয়েছে যাতে যে কোন সময় তাকে ফাঁসি দেয়া যায়। বলাবাহুল্য, জনাব কাদের মোল্লাকে যেদিন ট্রাইব্যুনালের রায়ে যাবজ্জীবন কারাদ- দেয়া হয়েছিল সেদিন সরকারসৃষ্ট শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চ থেকে এই রায়ের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হয় এবং তার ফাঁসি দাবি করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের নিকট স্মারকলিপি পেশ করা হয় এবং তাদের তরফ থেকে জাগরণ মঞ্চের দাবির যৌক্তিকতা স্বীকার করে তা পূরণের আশ্বাস দেয়া হয়। কাকতালীয়ভাবে আপীল বিভাগের সংখ্যাগরিষ্ঠ রায়ের মধ্যে গণজাগরণ মঞ্চের দাবি ও সরকারি প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন ঘটেছে এবং এর মাধ্যমে বাংলাদেশের বিচার বিভাগে ইচ্ছায় হোক অনিচ্ছায় হোক একটি অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়েছে।
জনাব কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকর করার প্রক্রিয়া যে গতিতে শুরু করা হয়েছে তাও প্রণিধানযোগ্য। আইন প্রতিমন্ত্রী প্রায় প্রত্যেকদিন বলছেন যে, এই ফাঁসি তারা যে কোন সময় দিয়ে দেবেন। আপীল বিভাগের রায় প্রকাশিত হবার পূর্বেও তিনি ফাঁসির কথা এমনভাবে বলছেন যেন তিনি বা তারা রায়টি লিখেই দিয়েছেন এবং আদালতের মাননীয় বিচারপতিদের কাজ হচ্ছে শুধু স্বাক্ষর করা। বাংলাদেশের কারাগারে ফাঁসির দ-প্রাপ্ত এমন বহু ব্যক্তি আছেন যারা বছরের পর বছর ধরে মাথায় এই দ-ের খড়গ নিয়ে সেখানে অবস্থান করছেন। তাদের দ- কার্যকর হচ্ছে না এবং আদালত বা সরকারের পক্ষ থেকেও ত্বরিতগতিতে দূরের কথা কচ্ছপের গতিতেও ডেথ ওয়ারেন্ট তৈরী করে কার্যকর করার জন্য জেল কর্তৃপক্ষের নিকট তা হস্তান্তর করা হচ্ছে না। আবার এমনও দেখা গেছে যে খুনের দায়ে মৃত্যুদ-াদেশপ্রাপ্ত দলীয় ব্যক্তিদের রাষ্ট্রপতি বিনা আবেদনে, স্বপ্রণোদিত হয়ে অনুকম্পা প্রদর্শন করে আদালতের মৃত্যুদ-াদেশ মওকুফ করে দিয়েছেন। এখানে মানুষ হত্যা বা মানবতাবিরোধী অপরাধের বিষয়টি উপেক্ষিত হচ্ছে। এর কারণটি এদেশের সাধারণ মানুষের কাছে যেমনি, বিশ্বসম্প্রদায়ের কাছেও পরিষ্কার নয়।
বাংলাদেশে বর্তমানে ১৯৭১ সালে সংঘটিত তথাকথিত মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য জামায়াত নেতাদের যে বিচার চলছে ও তাদের দ- প্রদান করা হয়েছে তা রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য এবং গতিশীল একটি জীবন ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা হিসেবে ইসলামকে ধ্বংস করার জন্যে নিছক একটি সাজানো নাটক ছাড়া আর কিছুই নয়। এই নাটকের প্রযোজক এবং পরিচালক আমাদের প্রতিবেশী ভারত এবং তারই বশংবদÑ শিখ-ী আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ সরকার। উভয় দেশের কিছুসংখ্যক নাস্তিক ও বামপন্থী বুদ্ধি ব্যবসায়ী এবং আদর্শহীন সুবিধাবাদী রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক নেতাকর্মী এদের অনুপ্রেরণার উৎস। এই বিচার যখন শুরু করা হয়েছিল তখন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা, আইন বিশেষজ্ঞ, যুদ্ধাপরাধ বিশেষজ্ঞ এবং নিরপেক্ষ ও খ্যাতিমান ব্যক্তি ও সংস্থাসমূহের তরফ থেকে বাংলাদেশের বিতর্কিত আইন, ট্রাইব্যুনালের গঠন প্রণালী এবং বিচার প্রক্রিয়া বিচারাধীন ব্যক্তিদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিতকরণ প্রভৃতি নিয়ে অব্যাহতভাবে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল এবং এই বিচারকে এখনও পর্যন্ত তারা ন্যায় ও নীতিভ্রষ্ট, অস্বচ্ছ এবং আন্তর্জাতিক মানের পরিপন্থী বলে গণ্য করে আসছেন। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার তাদের একগুঁয়েমী অব্যাহত রেখেছেন এবং রাজনৈতিক প্রতিহিংসা, ইসলামবিদ্বেষ ও ক্ষমতালিপ্সা তাদের এতই মোহগ্রস্ত করে রেখেছে যে, তারা সকল ন্যায়নীতি ও মানবিক মূল্যবোধকে পদাঘাত করে চলছেন। এর অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে এই যে, এই সরকার তাদের বিবেককে এখন আর কাজে লাগান না, দিল্লীর নির্দেশে তারা উঠ-বস করেন। আমাদের বুদ্ধিজীবীদের একাংশও তাদের মগজ বিক্রি করে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধীতে পরিণত হয়েছেন। ফলে যুক্তি, ন্যায়-অন্যায় বোধ তারা হারিয়ে ফেলেছেন।
পাঠকদের হয়তো মনে থাকতে পারে যে, সাবেক মার্কিন ফাস্টলেডি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারী ক্লিনটনের সাথে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দীর্ঘ একটি টেলিফোন সংলাপ হয়েছিল এবং তার ট্রান্সক্রিপ্ট পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। আমি গত মঙ্গলবারের আমার এই কলামেও এর অংশবিশেষ উদ্ধৃত করেছি। হিলারী ক্লিনটন প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে বাংলাদেশে তার সরকার কর্তৃক সূচিত যুদ্ধাপরাধের বিচার বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা চেয়েছিলেন। এর জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন যে, ওয়াশিংটনে নিযুক্ত ভারতীয় দূত তাকে এ ব্যাপারে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিবেন। কেননা ভারতীয় অনুরোধে বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু করা হয়েছে। তার এই জবাবটি বাংলাদেশের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় ব্যাপকভাবে প্রকাশিত হয়েছে। আমি আমাদের তথাকথিত সেক্যুলার রাজনীতিক অথবা বুদ্ধিজীবীদের এমন কাউকে পাইনি যিনি প্রধানমন্ত্রীর এই জবাবের যৌক্তিকতার উপর প্রশ্ন তুলেছেন এবং বলেছেন যে, একটি স্বাধীন দেশের সরকারের একটি সিদ্ধান্ত কেন আরেকটি দেশের নির্দেশে গ্রহণ করা হবে এবং এই সিদ্ধান্তের পটভূমিকা ও ব্যাখ্যা বিদেশীদের কাছে কেন আরেকটি দেশের রাষ্ট্রদূত দিতে যাবেন? বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বের সমাপ্তি সম্ভবত এখানেই ঘটেছে। প্রসঙ্গত বলা প্রয়োজন যে, কাদের মোল্লাসহ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষস্থানীয় যেসব নেতার বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে যুদ্ধাপরাধের বিচার হচ্ছে বা হয়েছে, তাদের কেউই এই অপরাধের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন না। ভারত-বাংলাদেশ মিলে ১৯৭৩ সালে যুদ্ধাপরাধীদের যে তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছিল এবং যাদের বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন প্রণয়ন করা হয়েছিল তাদের কেউই ঐ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না। এমনকি স্থানীয় কলাবরেটর হিসেবে যারা কাজ করেছেন, কলাবরেটর আইনে যাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল তাদের তালিকায়ও তারা ছিলেন না। আবার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর থেকে এসব মামলা শুরু করা পর্যন্ত প্রায় চার দশক পর্যন্ত বাংলাদেশের প্রত্যন্ত কোনো থানায় তাদের বিরুদ্ধে কোনো জিডিও হয়নি। তদুপরি বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর চার দশকের মধ্যে তারা কোনো অপরাধ করেছেন, কারোর কোনো ক্ষতি করেছেন, দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছেন, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি করেছেন এমন কোনো অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত হয়নি। বরং তারা ভাল মানুষ হিসেবে সর্বত্র পরিচিত ছিলেন। জাতি ও সমাজের কল্যাণে হাজার হাজার শিক্ষা, সমাজসেবা ও চিকিাৎসামূলক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। জামায়াতের দু’জন মন্ত্রী ৫ বছর ক্ষমতায় ছিলেন। তারা দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার অথবা দলপ্রীতি, করেছেন এমন কোনো নজির তন্ন তন্ন করেও খুঁজে পাওয়া যায়নি। তারা সৎ, নিষ্ঠাবান, ধর্মপ্রাণ ও যোগ্য ব্যক্তি হিসেবে সর্বত্র অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। জাতির উচিত ছিল তাদের পুরস্কৃত করা। কিন্তু তার পরিবর্তে আওয়ামী লীগ তাদের নিন্দিত করে, শাস্তি দিয়ে বাংলাদেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনে সৎ, ধর্মপ্রাণ ও যোগ্য লোকের আগমনকে একটি অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করে চিরদিনের জন্য নিরুৎসাহিত করার পথ অবলম্বন করেছেন, তাও আবার একটি বিদেশী রাষ্ট্রের নির্দেশনায়। এর চেয়ে নিন্দনীয় ও নির্লজ্জ আচরণ আর কিছু হতে পারে বলে আমি মনে করি না। সরকার শুধু অভিযুক্ত ব্যক্তিদের হাত-পা বেঁধে বিচার করেননি তারা তাদের সাক্ষীদের অপহরণ করেছেন, ভয়-ভীতি ও প্রলোভন দেখিয়ে তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষী সংগ্রহ করেছেন, ভুয়া ব্যক্তিদের এনে ক্যামেরা ট্রায়ালের নামে মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদান করিয়েছেন। সাক্ষী হাজির না করে আদালতকে দিয়ে তদন্ত কর্মকর্তার মিথ্যা ও বানোয়াট লিখিত বক্তব্যকে সাক্ষীর জবানবন্দী হিসেবে গ্রহণ করিয়েছেন। কসাই মোল্লার অপরাধকে ঐ সময়ের কিশোর কলেজছাত্র কাদের মোল্লার ঘাড়ে চাপিয়ে তার মৃত্যুদ- দিয়েছেন। একইভাবে দেলোয়ার শিকদারের অপরাধকে মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর উপর চাপিয়ে দিয়ে তার বিচার করেছেন। এর চেয়ে ন্যায়ভ্রষ্ট ও নীতিভ্রষ্ট বিচার আর হতে পারে না। নিউএজ পত্রিকার সম্পাদক জনাব নূরুল কবির ২০-২-২০১৩ তারিখে বাংলাভিশনের নিউজ এন্ড ভিউজ অনুষ্ঠানে যথার্থই বলেছেন, ‘কাদের মোল্লার রায় আমি তিনবার পড়েছি, তাতে একজন সাক্ষীও পাওয়া যায়নি যে, ১০০% Confirm হয়ে কাদের মোল্লাকে ১৯৭১ সালের কোন ঘটনা বা অপরাধ সংঘটন করতে দেখেছেন।’ কিন্তু সাক্ষী থাকুক বা না থাকুক সাক্ষ্যের বিশ্বাসযোগ্যতা যতই সন্দেহজনক হোক বিচারের রায়তো আগেই ঠিক করা ছিল এবং প্রভুরাই তা বলে দিয়েছেন বলে সাধারণ মানুষের ধারণা।
বিষয়টি আরো পরিষ্কার হয়েছে ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং-এর সাম্প্রতিক বাংলাদেশ সফরকালে। সুজাতার জামায়াতবিদ্বেষ যে, এতই প্রকট তা আগে কেউ অনুমান করতে পারেননি। জেনারেল এরশাদ যখন নির্বাচনকালীন সরকার থেকে বেরিয়ে এসে একতরফা নির্বাচনে না যাবার সিদ্ধান্ত নেন তখন অত্যন্ত নির্লজ্জভাবে সুজাতা সিং তাকে নির্বাচনে আসার অনুরোধ করেন এবং বলেন যে, তিনি যদি নির্বাচনে না আসেন তাহলে জামায়াত-শিবির তার সুযোগ নেবে এবং ক্ষমতায় এসে যাবে এবং তা বাংলাদেশের জন্য অকল্যাণ বয়ে আনবে। সুজাতা সিং প্রতিবেশী ভারতের কোন রাজনীতিক নন, সরকারের মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রীও নন। তিনি একজন সরকারি কর্মকর্তা। বাংলাদেশের রাজনীতিতে তার নাক গলানোর ধরন, প্রকৃতি এবং দল সম্পর্কে তার মন্তব্য সারা বিশ্ববাসীকে হতবাক করেছে। একজন সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে সমস্ত প্রটোকল উপেক্ষা করে রাজকীয় প্রটেকশনে তিনি যেভাবে প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী এবং আমাদের রাজনৈতিক নেতাদের সাথে কথা বলেছেন, তা দেখে অবাক না হয়ে পারা যায় না। প্রশ্ন উঠছে আমরা কি এখনো স্বাধীন আছি। যদি থাকি তাহলে আরেকটি দেশের সচিব পর্যায়ের একজন কর্মকর্তার কথায় আমরা উঠবস করি কিভাবে? আরো আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে এই যে, এই সুজাতা সিংই তার সফরের সময় খাবারের টেবিলে আলোচনার প্রাক্কালে বলেছেন যে, জামায়াত নেতাদের দু-তিনজনকে ফাঁসি দেয়া তাদের কাম্য। কেননা তা না হলে তাদের প্রেস্টিজ থাকবে না। ভারতের প্রেস্টিজ রক্ষার জন্য বাংলাদেশের একটি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের ফাঁসি দিতে হবে সুজাতার এই মন্তব্য বিশ্বমানবতার জন্য একটি কলঙ্ক। এই কলঙ্কের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকের কর্তব্য বলে আমি মনে করি।
শেষ করার আগে আরেকটি কথা বলার লোভ সংবরণ করতে পারছি না। ২০০৪ সালে হোটেল শেরাটনের সামনে যাত্রীবাহী বাসে গান পাউডার দিয়ে নিরীহ ১১ জন যাত্রীকে পুড়িয়ে মারার একটি মামলায় আওয়ামী লীগ নেতা মির্জা আযম, জাহাঙ্গীর কবির নানক ও ঢাকার সাবেক মেয়র হানিফের পুত্র সাঈদ খোকনসহ দলটির ১৮ জন নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়েছিল। ঐ বছরই এই মামলার দুইজন আসামী শফিকুল ইসলাম ও মুহাম্মদ মাসুমকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নেয়া হয়েছিল। এই দুই আসামী আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়ে মির্জা আযম, জাহাঙ্গীর কবির নানক ও সাঈদ হোসেন খোকনসহ অন্যান্য আওয়ামী লীগ, যুবলীগ নেতাদের এর সাথে সম্পৃক্ত থাকার বিষয়টি উল্লেখ করেন। বাসের ড্রাইভার আনিসুর রহমান ও কন্ডাক্টর শহীউদ্দিন আদালতে ঘটনার সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দী দেন। পরবর্তীকালে কেয়ারটেকার সরকারের আমলে শেখ ফজলুল করিম সেলিম ও ওবায়দুল কাদের এবং তৎকালীন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জলিলও রিমান্ডকালে তাদের জবানবন্দীতে এই ঘটনায় আযম, নানক, খোকনসহ আওয়ামী লীগ নেতাদের সম্পৃক্ততা থাকার কথা স্বীকার করেছেন এবং তারা এও বলেছেন যে, আওয়ামী লীগ প্রধানের নির্দেশ ও সম্মতিতেই তারা তা করেছেন। তাদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী ইউটিউবে সারা দুনিয়ায় প্রচারিত হয়েছে। এই অপরাধটি আদালত আমলে নেয়নি বলে মনে হয়। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্ট এবং টিভি চ্যানেলের খবরে দেখা যায় যে, সাক্ষ্য প্রমাণের অভাবে আদালতের তরফ থেকে এই ১৮ জন ব্যক্তিকেই খালাস দিয়ে দেয়া হয়েছে। গণহত্যার এই আসামীদের খালাস দেয়ার বিষয়টি বিস্ময়কর। এখন পাঠকরা বিচার করুন আমাদের দেশে বিচার ব্যবস্থা এবং বিচারিক প্রক্রিয়া কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে?

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads