শুক্রবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০১৩

জননিরাপত্তায় পুলিশের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ


একদলীয় দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে। এক ব্যক্তির ক্ষমতায় যাওয়ার চিন্তা বাস্তবায়ন করতেই কাজ করছে বর্তমান নির্বাচন কমিশন। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি হচ্ছেন ১৫৪ জন প্রার্থী এমন রেকর্ড উপহার দিচ্ছেন নিক। সিটি করপোরেশনকে দুই ভাগ করেও যেখানে নির্বাচন দেয়ার সাহস করেননি বর্তমান সরকার, সেখানে কি করে একদলীয় সংসদ নির্বাচন গ্রহণযোগ্য করাবেন তা সরকার ও কমিশনকে আবার ভেবে দেখা দরকার। শাসক যখন শোষক হয় তখন শোষণের হাত থেকে বাঁচতে গণআন্দোলনের বিকল্প নেই। যতই দিন যায় ততই জনগণ ফুঁসে উঠছে, গণ-আন্দোলনকে ঠেকাতে সরকারের নির্দেশে প্রাণ দিতে হচ্ছে শিশু, নারীসহ যুবকদের। তারপরেও ক্ষমতার লোভে রক্তের মূল্য নেই শাসক শ্রেণীর কাছে। প্রধানমন্ত্রী বলেই যাচ্ছেন, মানুষের মৃত্যু দেখলে খারাপ লাগে, ক্ষমতার লোভ নেই, ক্ষমতা দেয়ার মালিক আল্লাহ, মদিনা সনদ অনুযায়ী দেশ চলবে, মানুষ মারার রাজনীতি বন্ধ করুন, আগুনে পোড়া মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়ান, অনবরত এরকম চটকদার বক্তৃতা করলেও কাজ করেন তার উল্টো। কোনটা বিশ্বাস করবÑ কথা, নাকি কাজ। কথা ও কাজ দুটির মধ্যে তো কোনো মিল নেই। মনে হয় এ কথাগুলো অভিনয় করে বলেছেন কিংবা আফ্রিকার টোগোল্যান্ডের ভাষায় বলেছেন, সেখানে নাঅর্থ হ্যাঁ। নেলসন ম্যান্ডেলার আদর্শের নসিহত করলেও তিনি কেন যেন নিজের মতকে জনগণের ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা করছেন। বিদেশী বন্ধুর কারণে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোকঘোষণা করলেও পুলিশের গুলিতে নিজ দেশের শত শত মানুষের মৃত্যুও তার বিবেককে নাড়া দেয় না। অভিভাবক হিসেবে তিনি কি এই হত্যাকাণ্ডের দায় এড়াতে পারেন? নিশ্চয়ই নয়।
একদলীয় সিদ্ধান্তে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা যেন সহিংস ঘোষণার ভিন্ন নাম। সংবিধানের দোহাই দিয়ে জনমতকে উপেক্ষা করে দেশটাকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। কুরআনের চেয়েও সংবিধানকে অধিক গুরুত্ব দেয়া আদৌ ঠিক নয়। সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের মুখে প্রায়শই শুনতে হচ্ছে দেশের জনগণ তাদের পক্ষে আছে, তাহলে হরতাল আর অবরোধে গোটা দেশ যখন অচল হয়ে যায়, পুলিশের নাকের ডগায় বাসে আগুন লাগানোর পর কেউ যখন গ্রেফতার হয় না, তাহলে সহসাই বুঝে নেবো নৌকা সমর্থক জনগণই এই অপকর্মের সাথে জড়িত। এরাই হয়তো সুষ্ঠু, অবাধ, গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্যই মাঠে নেমেছে। তাই যদি হয় তাহলে কার বুকে গুলি চালানো হচ্ছে? নিজ দলের জনগণকে তো কেউ গুলি করে না। মূল কথা হলো পুলিশের গুলি প্রমাণ করে দেশের জনগণ সরকারের বিপক্ষে আন্দোলন করছে। বেশির ভাগ মিডিয়া এক সময় প্রচার করে হরতালে জনজীবনে কোনো প্রভাব পড়েনি সে কারণেই হয়তো বা হরতাল ও অবরোধকারীরা ক্রমে আন্দোলন জোরদার করতে সক্ষম হয়েছে। কেননা, সম্প্রতি কয়েক দফা হরতাল ও অবরোধের বিষয়ে বারবার প্রচারিত হচ্ছে জনজীবনে প্রভাবের কথা। অসত্য তথ্য প্রচারে জনগণকে বিভ্রান্ত না করে যা ঘটে তা যথাযথ প্রচার করাই দায়িত্ববোধের পরিচয়। রাতের অন্ধকারে পথিক পথ চলতে গিয়ে ভয়ে যেমন উচ্চৈঃস্বরে গান গায় তেমনি সরকারও জনসমর্থন হারিয়ে শুধু মিডিয়ার সামনে সাহসী বীরের অভিনয় করছে। এ ধরনের নাটক থেকে বেরিয়ে জনগণকে মুক্তি দেয়া প্রয়োজন।
গণতান্ত্রিক দেশে জননিরাপত্তা দেয়া সরকারের দায়িত্ব। পুলিশ সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য সহযোগিতার অর্থে জনগণের বন্ধু। জননিরাপত্তার মৌলিক দায়িত্ব পুলিশের কাঁধে। সেই পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জনগণের মুখোমুখি করে দেশ চালানো হচ্ছে, যার ফলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে সাধারণ মানুষ এবং সাধারণ মানুষের হাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নিহতের তালিকা লম্বা হচ্ছে। ব্লগার চক্র যেমন এ দেশের জনগণের একটি অংশ, তেমনিভাবে ইসলামি দলগুলোর কর্মী, সমর্থক, দাড়ি-টুপিওয়ালা সাধারণ মানুষও এ দেশের জনগণের বৃহৎ একটি অংশ। শাহবাগীদের সভাস্থলে তিনস্তরে নিরাপত্তা প্রদান করা হয় অথচ বিরোধীদল, ইসলামি দলগুলোসহ সব নাগরিকের সভাস্থলে নিরাপত্তার কথা ভাবারও সুযোগ নেই। দীর্ঘ দিন থেকে সরকারদলীয় পুলিশ ও আওয়ামী কর্মীদের হাতে সারা দেশে গণহত্যায় নির্বিচারে যারা প্রাণ হারাল, তারা তো পাকিস্তানি কিংবা বিদেশী নাগরিক নন, আর বিদেশী নাগরিক হলেই কি এভাবে প্রশ্নবিদ্ধ বিচার বা বিনাবিচারে প্রাণ দিতে হবে! ১৮ দলীয় জোট, জামায়াত-শিবির এবং হেফাজতসহ ইসলামী সমমনা ১২ দলের সভা, মানববন্ধন, বিােভ মিছিলে যেভাবে গুলি চালানো হয়, তাতে বোঝা যায় বর্তমান সরকার সুশাসনে বিশ্বাসী নয়। পুলিশ জনগণের বন্ধুএ কথাটি আজ অসত্য প্রমাণিত হলো। বন্ধু যখন শত্রু হয় তার দ্বারা অভাবনীয় তি হয়। নিরাপত্তাকর্মীরা যেমন নিজেদের অসহায় মনে করছে তেমনি তাদের কর্মকাণ্ডে গ্রেফতার করার পর পুলিশ হেফাজতে যখন পায়ে গুলি করা হয়, বাড়িতে ঢুকে মৃত্যু নিশ্চিত করে ছাদ থেকে ফেলে দেয়া হয়, রাতের অন্ধকারে দেয়াল টপকিয়ে মই ব্যবহার করে তুলে নেয়া হয়, যাত্রীবাহী বাস থেকে নামিয়ে গুলি করে ফেলে রাখা হয়, মাহমুদুর রহমানের মতো কলম-সৈনিককে অফিস থেকে গ্রেফতার করে মিথ্যা মামলায় রিমান্ডে নেয়া হয়, দিগন্ত টিভি ও ইসলামিক টিভির সম্প্রচারকে অন্যায়ভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়, তখন নিশ্চিন্তে বলা যায় দেশ থেকে ন্যায়বিচার বিদায় নিয়েছে। গণতন্ত্র কবরে যেতে চলছে। অভিভাবক চোরের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী শত্রুতে পরিণত হয়েছে। এভাবে একটি দেশ চলতে পারে ?
জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বলতে শুধু নৌকা সমর্থক গোষ্ঠীকে বুঝায় না। জনগণকে পাখির মতো গুলি করে স্থায়ী নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, যা গণহত্যার শামিল। গণহত্যা বলে ভুল করলাম কি না জানি না, কেন না ৫ মের সমাবেশে অসংখ্য মানুষ নিহত হওয়ার পরেও সরকার সেটাকে গণহত্যা বলতে নারাজ। বর্তমানে রাজনীতিতে ব্যবহৃত অনেক শব্দের সাধারণ অর্থ প্রকাশ পায় না। এ জন্য দরকার আওয়ামী ডিজিটাল অভিধান। সরকারদলীয় এমপি, মন্ত্রী, আমলা ও কিছু কিছু মিডিয়াকর্মীর অতি তোষামোদি অপব্যাখ্যা নীতির কারণে জনগণ আজ বিভ্রান্ত। সংবিধানের বিভিন্ন অংশের ব্যাখ্যা সরকারের কাছে এক রকম, অন্যদের কাছে আরেক রকম। দলতন্ত্র, জনতন্ত্র, গণতন্ত্র, ব্যাখ্যাতত্ত্ব এ রকম বহু তন্ত্র আর তত্ত্ব থেকে আমরা কবে মুক্তি পাবো জানি না। দেশ আমার, সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রীর এ নীতির অবসান হলেই জনগণ প্রকৃত স¦াধীনতার ফল একটু হলেও ভোগ করবে বলে আমার বিশ্বাস।


 

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads