এক ব্যক্তির ক্ষমতা লিপ্সা বাংলাদেশের ৫৫ হাজার বর্গমাইলের ১৬ কোটি মানুষকে যখন প্রজ্জ্বলিত অগ্নিকু-ে নিক্ষেপ করেছে তখন বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত একটি তাৎপর্যপূর্ণ কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন যে, ‘চীন বাংলাদেশকে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে চায়’ বাংলাদেশের বিদ্যমান অবস্থায় জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ যেখানে সারা দুনিয়ার বন্ধুপ্রতীম সংস্থা ও রাষ্ট্রগুলো দুই নেত্রী তথা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মধ্যে ফলপ্রসূ সংলাপের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান এবং সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি নিরপেক্ষ ও অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তরের ওপর গুরুত্বারোপ করছেন সেখানে চীনা রাষ্ট্রদূত কর্তৃক বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রশ্ন উত্থাপন করায় নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে চীন কি বাংলাদেশকে এখন স্বাধীন মনে করে না, অথবা বিদ্যমান অবস্থায় তারা কি বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হবার আশঙ্কা করছেন? চীনা রাষ্ট্রদূতের মন্তব্যটি রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে এতোই গুরুত্বপূর্ণ যে, দেশপ্রেমিক প্রত্যেকটি মহল এ বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা প্রকাশ করছেন এবং স্বাধীন বাংলাদেশের রাজনৈতিক আকাশের ঈশাণ কোণে মেঘের আনাগোনা দেখতে পাচ্ছেন।
চীন আমাদের একটি বন্ধুপ্রতীম দেশ। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশের মানুষ চীনাদের বন্ধুত্বকে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করে। বাংলাদেশ স্বাধীন হবার অব্যবহিত পর জাতিসংঘে বাংলাদেশের সদস্যভুক্তি প্রশ্নে চীন ভেটো প্রদান করেছিল এবং বলেছিল যে, বাংলাদেশ এখনও স্বাধীন হয়নি, কেননা ঐ দেশে তখনও বিদেশী বাহিনী উপস্থিত রয়েছে। ফলে প্রথম দফায় চীনা ভেটোর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভ করতে পারেনি। এই প্রেক্ষাপটে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিবুর রহমান ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মিসেস ইন্দিরা গান্ধীকে বাংলাদেশ ভূখ- থেকে ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহারের চূড়ান্ত নোটিশ দেন এবং ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহারের পর বাংলাদেশ জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভ করে। এই দফায় চীন বাংলাদেশকে পরিপূর্ণ সহযোগিতা প্রদান করে। কিন্তু এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ৪২ বছর পর আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা যখন অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের সকল পথ বন্ধ করে বিরোধীদলকে বাইরে রেখে একতরফা ও সাজানো নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার সকল পদক্ষেপ চূড়ান্ত করেছেন এবং সকল রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নির্মম নির্যাতনের শিকার বানিয়েছেন তখন চীনা রাষ্ট্রদূত কর্তৃক স্বাধীনতার প্রশ্ন তোলায় দেশপ্রেমিক মহলের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মাত্রা অনেক বৃদ্ধি করে দিয়েছে। এর কারণ অনুসন্ধান করা দরকার। এ প্রসঙ্গে ২০০৮ সালের নির্বাচনে এই সরকারের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ এবং ক্ষমতায় আরোহণের বিষয়টি প্রণিধানযোগ্য। ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস, দুঃশাসন, নির্যাতন এবং দলীয় সন্ত্রাসী বাহিনী গঠন ও তাদের মাধ্যমে খুন, গুম, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, সীমাহীন দুর্নীতি ও রাজনৈতিক প্রতিহিংসার যে ব্যাপক দৃষ্টান্ত তারা স্থাপন করেছেন তারই প্রেক্ষাপটে ২০০১ সালের নির্বাচনে দেশের মানুষ তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে পরিচালিত নির্বাচনে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটকে ক্ষমতাসীন করে। চারদলীয় জোটের ক্ষমতার মেয়াদ পূর্তির পর ২০০৬ সালের শেষের দিকে দলটি অত্যন্ত বেপরোয়া হয়ে উঠে এবং নানা ছুতায় ব্যাপক সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের আশ্রয় নেয়। তারা দেশব্যাপী অবরোধ সৃষ্টি করে। লগি-বৈঠার আন্দোলনের ডাক দেয় এবং প্রকাশ্যে রাজপথে সাপের মতো পিটিয়ে মানুষ হত্যা করে। ট্রেনের বগিতে আগুন ধরিয়ে দেয় বাসের মধ্যে গানপাউডার ছিটিয়ে আগুন জ্বালিয়ে মানুষকে পুড়িয়ে মারে। বন্দর অবরোধ করে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিকে ধ্বংসের মুখে নিক্ষেপ করে। তাদের এই ধ্বংসাত্মক আন্দোলনের ফল হিসেবে সেনাসমর্থিত এক এগারোর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করে। তারা এই সরকারকে তাদের আন্দোলনের ফসল হিসেবে অভিনন্দন জানায়। এই সরকার অনিয়মতান্ত্রিক ও অসাংবিধানিকভাবে দু’বছর পর্যন্ত ক্ষমতা আঁকড়ে রাখে এবং এই সরকারই শেখ হাসিনাকে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও অর্থনীতির জন্য বিপজ্জনক বলে আখ্যা দেয়। তারা মাইনাস টু থিওরি অনুসরণ করে দুই নেত্রীকে নির্বাসনে পাঠানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করে কিন্তু বেগম জিয়ার দৃঢ় অবস্থানের কারণে তা ব্যর্থ হয়। পরবর্তীকালে বৈদেশিক হস্তক্ষেপ বিশেষ করে ভারতীয় কূটচালে ২০০৮ সালের শেষের দিকে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। শেখ হাসিনা এক এগারোর সরকারের আদেশ অধ্যাদেশ ও সংবিধান বহির্ভূত সকল কার্যক্রমের বৈধতা দেয়ার অঙ্গীকার এবং পর্দার অন্তরালে ভারতীয় রোডম্যাপ অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ব্রিটেনের প্রভাবশালী সাপ্তাহিক দ্যা ইকোনমিস্টের ভাষায়- বস্তায় বস্তায় ভারতীয় অর্থ, ভারতীয় উপদেশ এবং সহযোগিতায় আওয়ামী লীগ বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতায় নির্বাচনে জয়লাভ করে। বিএনপি-জামায়াত জোট পরাজয় বরণ করে। নির্বাচনের ফলাফলে মানুষ হতভম্ব হয়ে পড়ে। তারা বলতে শুরু করে যে, ১৯৯৬-২০০১ সালের নিন্দিত আওয়ামী লীগ নন্দিত হবার জন্য এমন কোন কাজ করেনি যে, তারা এত বিপুল সংখ্যাধিক্যে জয়লাভ করবে। তাদের কাছে আঁতাত এবং ভোট কারচুপির বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে ওঠে। বিষয়টি আরো পরিষ্কার হয় যখন হিলারি ক্লিনটন ও শেখ হাসিনার টেলিফোন সংলাপের ট্রান্সক্রিপ্ট পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়। সেখানে কোন কোন বিষয়ে শেখ হাসিনার একগুঁয়েমি মনোভাবে তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন বিরক্ত হয়ে বলতে বাধ্য হয়েছিলেন যে, ‘ম্যাডাম প্রধানমন্ত্রী, আমি ভেবেছিলাম আমাকে এতদূর যেতে হবে না। কিন্তু আমার দুর্ভাগ্য, আমি ভুল ভেবেছিলাম। আপনি জানেন এবং আমরাও জানি কিভাবে আপনার সরকার ক্ষমতায় এসেছে। ভুলে যাবেন না, নির্বাচনের পর আমরা বলেছিলাম, সেটা অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে এবং আপনাকে সাহায্য করেছিলাম। প্রধানমন্ত্রী, আপনি জানেন দিল্লীতে আমাদের বন্ধুদের নির্দেশে কিভাবে ফলাফল আগেই ঠিক করা হয়েছিল। তারা যেভাবে চেয়েছিল সেভাবেই আমরা চলেছিলাম। প্লিজ, আপনি এটা ভুলে যাবেন না যে, জেনারেল মইন যিনি আপনাকে ক্ষমতায় এনেছিলেন তিনি এখন আমেরিকাতে আছেন এবং আপনি যতখানি কল্পনা করতে পারেন, তার চেয়েও বেশি আমরা জানি।
বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার যে ভারত কর্তৃক চাপিয়ে দেয়া একটি সরকার তা আরো পরিষ্কার হয়েছে ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ২৫, ২৬ তারিখে বিডিআর বিদ্রোহের সময়। এ সময়ে বাংলাদেশে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল তাতে ভারতের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও বর্তমান প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখার্জী প্রকাশ্যে ঘোষণা করেছিলেন যে, শেখ হাসিনার সরকারকে রক্ষা করার জন্য প্রয়োজনবোধে ভারত সেনা হস্তক্ষেপ করবে। একটি স্বাধীন দেশে সেনা হস্তক্ষেপের এই হুমকির তাৎপর্য বোঝা খুব দুরূহ কোন ব্যাপার নয়। একই সময়ে ভারতের একজন সাবেক সেনা ‘প্রধান’ ও ‘র’ এর সিনিয়ার উপদেষ্টা শিব শংকর চৌধুরী ভারতীয় প্রভাবশালী একটি পত্রিকায় একটি নিবন্ধে বলেছিলেন যে, ‘বাংলাদেশকে ভারতীয় রাডারের দৃষ্টিসীমার বাইরে যেতে দেয়া যায় না।’ তিনি জোর দিয়ে বলেছেন যে, ‘১৯৭১ সালে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ নিয়ে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়নি, তা এখনো অব্যাহত আছে’। জেনালে শংকরের এই মন্তব্য উপেক্ষা করার মতো নয়।
সাধারণ বাংলাদেশীদের মধ্যে এখন একটি ধারণা প্রচলিত আছে যে, বর্তমানে শেখ হাসিনা যে সরকার পরিচালনা করছেন সেই সরকার পুতুল সরকার ছাড়া আর কিছুই নয়। এই সরকারের সকল সিদ্ধান্ত আসে নয়াদিল্লী থেকে এবং প্রধানমন্ত্রী হাসিনার সরকার তা বাস্তবায়ন করে মাত্র। প্রতিদানে ভারত সরকার বিদ্যমান বাংলাদেশ সরকারকে টিকে থাকার নিশ্চয়তা দিচ্ছে। বর্তমানে নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশে যা কিছু ঘটছে বিরোধী রাজনৈতিক দল ও রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের ওপর যে অত্যাচার-নিপীড়ন চলছে তাও ভারতীয় নীল-নকশা অনুযায়ী চলছে বলে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর ধারণা। এই ধারণা কতটুকু সত্য বাস্তব অবস্থাই তা বলে দেয়। ভারত এবং বাংলাদেশ উভয়ই দু’টি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হচ্ছে যে, ভারত বাংলাদেশের ব্যাপারে অতিরিক্ত নাক গলানোর অভিযোগ উঠেছে। এই দেশটি বাংলাদেশ থেকে তার সকল স্বার্থ উদ্ধার করে নিয়েছে এবং শেখ হাসিনাকে পাপেট হিসেবে ক্ষমতায় বসিয়ে তার পুরোপুরি আধিপত্য বজায় রাখার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছে। তার এই অবস্থান সম্পর্কে বিদেশীরা যে অবহিত নয় তা নয়। চীন এই সম্পর্কে পুরোপুরি অবহিত রয়েছে। আবার কোন কোন দেশের কূটনৈতিক প্রধানরা বাংলাদেশের সঙ্কট নিয়ে আলোচনার জন্য শুধু যে দিল্লী যাচ্ছেন তা নয়, এদেশের মেরুদ-হীন রাজনীতিকদের কেউ কেউ তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে দিল্লী যেতেও দেখা যাচ্ছে। আগামীকাল ৪ ডিসেম্বর ভারতের বিদেশ সচিব শ্রীমতি সুজাতা সিং ঢাকা আসছেন বলে শোনা যাচ্ছে। কেউ কেউ বলছেন যে, ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর তরফ থেকে একদলীয় নির্বাচনে উৎসাহ দেয়ার জন্য তাকে বাংলাদেশে পাঠানো হচ্ছে। পাঠকদের মধ্যে কেউ কেউ নিশ্চয়ই জানে যে, সত্তরের দশকের প্রথমদিকে সিকিমকে ভারতের অন্তর্ভুক্তির ব্যাপারে লেন্দুপ দর্জিকে যিনি সবচেয়ে বেশি অনুপ্রেরণা দিয়েছিলেন তিনি ছিলেন ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ এর তৎকালীন মহাপরিচালক। সেই মহাপরিচালকের কন্যা হচ্ছেন এই সুজাতা সিং। কাজেই এই সঙ্কটময় সময়ে সুজাতার বাংলাদেশ সফরকে যদি কেউ রহস্যময় সফর বলে আখ্যায়িত করেন তাহলে বিস্ময়ের কিছু নেই। ভারত বাংলাদেশকে স্বাধীনতা যুদ্ধে সাহায্য করেছে এটি সত্যি। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ভারতীয় বাহিনীর কাছে পাকিস্তান বাহিনীর আত্মসমর্পণের পর দিল্লীর লালকেল্লায় অনুষ্ঠিত এক জনসভায় ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী এর একটি কারণ বিশ্লেষণ করেছেন। তিনি ঘোষণা করেছিলেন, ‘হিন্দুস্থান হাজার সালকা বদলা লে লিয়া। হাজার সালকা স্বপনা সফল হুয়া।’ এখন পাঠকরাই বুঝুন আমাদের অবস্থা কোথায়? চীন যদি বাংলাদেশকে পরাধীন মনে করে তার স্বাধীনতার পুনর্বহাল চায় তাহলে তাকে দোষ দেয়ার কিছু আছে কি?
দুই
বাংলাদেশে এখন সরকারবিরোধী আন্দোলন চলছে। এই আন্দোলন হরতাল অবরোধে রূপ নিয়েছে এবং সরকারের নির্যাতন নিপীড়ন ও একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় যাবার লিপ্সা বন্ধ না হলে সহিংস অসহযোগে রূপান্তরিত হবার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। ব্যাপকভাবে গাড়ি ভাংচুর হচ্ছে, গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হচ্ছে এবং নিরপরাধ মানুষ আহত নিহত হচ্ছে। পুলিশ দেখামাত্র গুলী করছে। হাজার হাজার লোক গুলীবিদ্ধ হয়ে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। সরকার গাড়ি ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের জন্য বিরোধী দলকে দায়ী করছেন। তারা বিরোধী দলের জন্য নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির সকল পথ রুদ্ধ করে দিয়েছেন, রাজনীতিকে অন্ধকার জগতের দিকে ঠেলে দিয়েছেন। সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি ও তৃতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কার্যালয় পুলিশ বন্ধ করে দিয়েছে। দলগুলোর দফতর পুলিশী তত্ত্বাবধানে রয়েছে রাজনৈতিক সন্ত্রাসে। পুলিশের গুলীতে অথবা সংঘর্ষে কিংবা অগ্নিসংযোগের ফলে যে সব হতাহতের ঘটনা ঘটছে তার জন্য সরকার হুকুমের আসামী হিসেবে বিরোধী দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে আসামী করে তাদের গ্রেফতার করছেন, রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন চালাচ্ছেন ও কারারুদ্ধ করে রাখছেন। হুকুমের আসামী হিসেবে সম্ভবত এখন বিএনপি-জামায়াতের এমন কোন শীর্ষ ও মধ্যম শ্রেণীর নেতানেত্রী নেই যার বিরুদ্ধে সরকার মামলা করেনি। পুলিশ গুলী করে মানুষ হত্যা করছে মিডিয়ায় তা এখন খুব একটা প্রাধান্য পাচ্ছে না, প্রাধান্য পাচ্ছে আগুনে পুড়ে মানুষ মরছে বা আহত হয়েছে তা। যারা যানবাহন, দোকানপাট কিংবা কলকারখানায় আগুন লাগাচ্ছে তারা কিন্তু ধরা পড়ছে না। ধরা পড়লেও তাদেরকে পুলিশ রহস্যজনকভাবে ছেড়ে দিচ্ছে। কিছুদিন আগে প্রায় সকল পত্র-পত্রিকায় এই মর্মে একটি খবর প্রকাশিত হয়েছে যে, ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ যুবলীগ, ছাত্রলীগের এক হাজার কর্মীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে নাশকতা সৃষ্টির জন্য মাঠে নামিয়েছে। তারা বিরোধী দলীয় বিক্ষোভকারীদের সাথে মিশে গিয়ে নাশকতামূলক কাজকর্ম পরিচালনা করছে। এই ভয়াবহ খবরটির সত্যতা যাচাই করা মিডিয়ার কাজ ছিল। কিন্তু তাদের বেশির ভাগ সেটা না করে সন্দেহের বশবর্তী হয়ে পক্ষাবলম্বন করে সরকারের সাথে সুর মিলিয়ে বিরোধী দলকে এর জন্য দোষারোপ করছে। সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, হত্যা, গুম, অগ্নিসংযোগ ভাংচুর অত্যন্ত নিন্দনীয় কাজ। সরকার এই নিন্দনীয় কাজকে উৎসাহিত করছেন এবং তার দোষ চাপাচ্ছেন বিরোধী দলের উপর। মই বেয়ে, গ্রীল কেটে, দরজা ভেঙে, অফিস তছনছ ও লুটপাট করে বিএনপির সহকারী মহাসচিব জনাব রিজভী আহমেদকে গভীর রাতে পুলিশ যেভাবে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের দোতলা থেকে গ্রেফতার করেছে তার নজির ইতিহাসে নেই। এই অবস্থা দেখেও কি আমরা ষোল কোটি মানুষ নাশকতার সরকারি ভার্সনে বিশ্বাস করবো? আমরা তা বিশ্বাস করতে পারি না। আবার ‘হুকুমের আসামী’ হিসেবে যদি কাউকে গ্রেফতার করতে হয় তাহলে আমার বিশ্বাস সর্বপ্রথম আওয়ামী লীগ প্রধান ও তার শীর্ষ নেতৃবৃন্দকেই গ্রেফতার করা বাঞ্ছনীয়। তারা লগি- বৈঠার আন্দোলন করেছেন, প্রকাশ্য দিবালোকে পিটিয়ে মানুষ হত্যা করেছেন। যুবলীগের নানক, আযম, পঙ্কজ প্রমুখ শেরাটন হোটেলের সামনে গাড়িতে আগুন দিয়ে ১৩ জন লোককে জীবন্ত পুড়িয়ে মেরেছেন। আওয়ামী লীগ নেতাদেরই এ ব্যাপারে স্বীকারোক্তি রয়েছে। তারা হরতাল অবরোধে যে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছেন তা ইতিহাসে একটি কলঙ্কিত অধ্যায় সৃষ্টি করেছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে তাদেরকে এখন হুকুমের আসামী করবে কে? আমি মনে করি তারা যদি আইনের শাসনে বিশ্বাস করেন, সত্যনিষ্ঠ হন তাহলে আদালতে গিয়ে তাদের দোষ স্বীকার করে আত্মসমর্পণ করা উচিত। তারা হচ্ছেন সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, হত্যা, গুম, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগের গুরু ওস্তাদ।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন