নির্বাচন না যাওয়ার
ঘোষণা দেয়া জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদকে বাগে আনতে প্রাণান্ত চেষ্টা
করছে সরকার। যেকোনো মূল্যেই হোক, তাকে নির্বাচনে ফেরাতে
একাধিকবার টেলিফোনসহ দফায় দফায় বৈঠক করে যাচ্ছেন সরকারের শীর্ষ ব্যক্তিরা। এরশাদ
নির্বাচনে এলে সর্বোচ্চ ছাড় দেয়ার মনোভাব নিয়েই তাকে ‘ম্যানেজ’ করার চেষ্টা চলছে। তারই ধারাবাহিকতায় গতকালও এরশাদ ও জাতীয় পার্টির সিনিয়র প্রেসিডিয়াম
সদস্য রওশন এরশাদের সাথে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ছাড়া জাতীয় পার্টির
সিনিয়র নেতাদের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করেছেন সরকারের নীতিনির্ধারকেরা। সরকার ও
জাতীয় পার্টির একাধিক সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
আওয়ামী
লীগের বিভিন্নপর্যায়ের নেতাদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, নির্বাচন থেকে সরে সর্বদলীয় সরকার থেকে
মন্ত্রীদের পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে সরকারকে বেশ বেকায়দায় ফেলে দিয়েছেন এরশাদ।
এরশাদের এমন ‘ইউটার্ন’ রীতিমতো অবাক করেছে আওয়ামী লীগ ও সরকারের
শীর্ষ ব্যক্তিদের। তার এমন ঘোষণার জন্য কোনোভাবেই প্রস্তুত ছিল না সরকার। শুধু তাই
নয়, বিরোধী দলের নির্বাচন বর্জনের
পর এরশাদের এমন ঘোষণা আগামী একতরফা নির্বাচনকেই অনিশ্চিত করে দিয়েছে। তাই এরশাদকে
যেকোনো মূল্যেই ফেরাতে বদ্ধপরিকর আওয়ামী লীগ। সেই লক্ষ্যে সর্বোচ্চ ছাড় দিয়ে
সমঝোতার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এ ক্ষেত্রে মঞ্জুর হত্যা মামলাসহ এরশাদের বিভিন্ন
মামলা এবং নির্বাচনে আসন ভাগাভাগি নিয়ে সৃষ্ট সমস্যা সমাধানের নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে
মতাসীনদের প থেকে। প্রয়োজনে এরশাদ আরো বেশি কিছু চাইলেও সরকার তা মেনে নেবে বলে
ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে। বিষয়টি সরাসরি তদারক করছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এমনকি তিনি টেলিফোনে এরশাদের সাথে কথাও বলেছেন। এ
সমঝোতা চেষ্টার কারণেই ঘোষণার তৃতীয় দিন গতকাল শুক্রবারও জাতীয় পার্টির মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপদেষ্টারা আনুষ্ঠানিকভাবে
পদত্যাগ করেননি।
সরকারের
একাধিক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা আশা করছেন, প্রধানমন্ত্রীর এ উদ্যোগ সফল হবে এবং শেষ
পর্যন্ত জাতীয় পার্টি নির্বাচনে থাকবে। তবে কোনো কারণে এরশাদকে বাগে আনতে না পারলে
কঠোর অবস্থানে যাবে সরকার। সে ক্ষেত্রে পুরনো মামলাগুলো সচল করে প্রয়োজনে তাকে
গ্রেফতার করা হবে। একই সাথে জাতীয় পার্টিতে চিহ্নিত আওয়ামী লীগপন্থী দুই নেতাকে
দিয়ে নতুন জাতীয় পার্টি গঠনে সহায়তা করবে সরকার। এভাবে এরশাদকে ‘সাইজ’ করা
হবে।
দলের
কয়েকজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ প্রতিবেদককে বলেন, এরশাদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে খুব
বিপদে ফেলে দিয়েছেন। তিনি তফসিল ঘোষণার আগে নির্বাচনে না যাওয়ার কথা বললে সরকার
নির্বাচন নিয়ে নতুন করে চিন্তা করত। কিন্তু তফসিলের পর সর্বদলীয় সরকারে যোগদান করে
এবং মনোনয়ন ফরম জমা দিয়ে তিনি সরে পড়তে চাইছেন। এটি সরকারের জন্য রীতিমতো
বিব্রতকর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এটিকে খুব সিরিয়াসলি নিয়েছেন। তাই কোনোভাবে
নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে পারলে তিনি এ অপমানের প্রতিশোধ না নিয়ে ছাড়বেন না। তবে
আপাতত তা নিয়ে চিন্তা না করে তাকে সরকার ও নির্বাচনে ফেরানোকেই গুরুত্ব দিচ্ছেন
প্রধানমন্ত্রী। ইতোমধ্যেই এ ব্যাপারে ইতিবাচক অগ্রগতিও হয়েছে। গত দুই দিনে এরশাদের
আলোচিত বক্তব্য নিয়ে গতকাল নতুন করে নমনীয় ব্যাখা দিয়েছেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব এ
বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার ও এরশাদ নিজেই। এ সময় রুহুল আমিন হাওলাদার সাংবাদিকদের
বলেন, চলমান সঙ্কট নিয়ে সরকারের
সাথে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। আমরা আশা করছি শিগগিরই এর ইতিবাচক সমাধান আসবে। রুহুল
আমিন হাওলাদারের এমন বক্তব্য সরকারের সাথে দর কষাকষি ও সমঝোতায় অগ্রগতি বলে মনে
করা হচ্ছে।
আওয়ামী
লীগের একজন সিনিয়র নেতা গতকাল এ প্রতিবেদককে বলেন, এরশাদ আওয়ামী লীগকে বিপদে ফেলে কোথায় যাবেন? তার যাওয়ার আর কোনো জায়গা নেই। তিনি এক
অদৃশ্য রশিতে বাঁধা। তাই সাময়িক লাফালাফি শেষে নিজ মুখেই আবার জাতির কাছে ক্ষমা
চেয়ে নির্বাচনে ফেরার ঘোষণা দিতে বাধ্য হবেন। এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। তারপরও
আপাতত এরশাদের সাথে দেনা-পাওনার হিসাব যতটুকু মিটিয়ে ফেলা যায় সে চেষ্টা করছে
আওয়ামী লীগ। যেহেতু নির্বাচন করার বিষয়ে মতাসীনেরা অনড় এবং এর বিকল্প ভাবছে না, তাই জাতীয় পার্টিকে ‘বাগে’ আনার
বিকল্প কিছুও ভাবছে না। ইতোমধ্যে কিছুটা সফলতাও এসেছে। জাপার মন্ত্রীরা গতকাল
পর্যন্ত সর্বদলীয় সরকার থেকে পদত্যাগ না করা সফলতার একটি দিক। এরশাদসহ জাতীয়
পার্টির প্রার্থীরা প্রার্থিতা প্রত্যাহারও করেননি। আওয়ামী লীগ নেতাদের মতে, রওশন এরশাদের সাথে প্রধানমন্ত্রীর ইতিবাচক
আলোচনা হয়েছে। এখন আনুষ্ঠানিক ঘোষণার বাকি মাত্র। এগুলো স্বস্তির বিষয় আওয়ামী
লীগের কাছে।
তবে
বিশ্লেষকদের মতে, এরশাদের নির্বাচন বর্জনের
ঘোষণায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের যা ক্ষতি হওয়ার তা হয়ে গেছে। এখন এরশাদ নির্বাচনে
অংশ নিলেও পুরো জাতি ধরে নেবে এরশাদকে ভয়ভীতি দেখিয়ে জোর করে নির্বাচনে বাধ্য করা
হয়েছে, যা নির্বাচনের পরও নতুন
সঙ্কটের জন্ম দিতে পারে।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন