শনিবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০১৩

চমকের পর চমক, সাথে কিছু ধমক


আমরা চমকের পর চমক দেখছি; কিন্তু এগুলো আনন্দ নয় আশঙ্কার, উল্লাস নয় উদ্বেগের। কারণ আমাদের রাজনীতিকদের মান যে কতটা নেমে গেছে এবং সে কারণে রাজনীতির সঙ্কট এখন কত জটিল, সেটাই নির্দেশ করছে এসব চমক। দেশপ্রেমিক ও নীতিবান মানুষ এসব চমক দেখে চমকে উঠছেন নানা শঙ্কায়। এ দিকে দেশের নেতা-নেত্রীরা চমক দেখালে কী হবে, বিদেশের বিশিষ্টজনেরা একের পর এক ধমক দিচ্ছেন বাংলাদেশের নেতৃবৃন্দকে। তাদের কেউ এখানে এসে, কেউ বা না এসেই; কেউ কথার মাধ্যমে আর কেউ বা লেখালেখি করে ধমকাচ্ছেন। ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং এসে ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ নিয়ে ধমকিয়েছেন। এখন জাতিসঙ্ঘের বিশেষ দূত তারানকো নিরপেক্ষরূপে এসেছেন। একনাগাড়ে পাঁচ দিন থাকবেন ভালো করে ধমক লাগাবেন বলে। এসব কিছু স্বাধীন বাংলাদেশের মান-ইজ্জতের পরিপন্থী; কিন্তু বারবার এমন ধমক খাওয়া যে মর্যাদাহানিকর, আমাদের সরকারসহ জাতীয় নেতৃত্ব কি তা উপলব্ধি করছেন? নাকি চমক দেখানোর প্রহসনেই নিমগ্ন থাকবেন?
ভারত আর রাখঢাক না করে আওয়ামী লীগকে খোলামেলা সমর্থন দিয়ে জাতিকে চমক লাগিয়েছে। এত দিন কূটনীতির প্রচ্ছন্ন ভাষায় চালাকির পরিচয় দিয়ে এবারে রাজনীতির ভাষা ব্যবহার করে দিল্লি যে বোকামির পরিচয় দিয়েছে, তা হয়তো চাণক্যপুরীর নব্যচাণক্যরা বুঝতে পারছেন না।
যা হোক, সুজাতা সিং বলে দিলেন, এ দেশের কোনো মন্ত্রী বা কর্তার মতোÑ “নির্ধারিত তফসিলেই সংসদ নির্বাচন হতে হবে। আর এতে সম্ভাব্য সর্বাধিক সংখ্যকদলের অংশগ্রহণ প্রয়োজন।তিনি কিন্তু সব দলঅংশ নেয়ার দরকার বোধ করেননি। বিষয়টি তাৎপর্যপূর্ণ ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে মনে করা যায়।
সুজাতা সিং বাংলাদেশে মধ্যস্থতা নয়, মেসেজ দিতে এসেছিলেন। এটি তার নিজেরই উক্তি। এ দেশের সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে মধ্যস্থতা করার মতো যোগ্যতা ও নিরপেক্ষতা বৃহত্তম প্রতিবেশী দেশের থাকাই কাম্য; কিন্তু বাস্তবে নয়াদিল্লির নগ্ন পক্ষপাতিত্ব এবং বাংলাদেশের ঘরোয়া বিষয়ে হস্তক্ষেপের প্রবণতা ভারতকে সেই সম্মানজনক ও আস্থাভাজন অবস্থানে পৌঁছা থেকে বঞ্চিত করেছে। ভারত যে এ দেশের বিশেষ একটি দলের প্রতি আসক্ত এবং কোনো কোনো দলের প্রতি বিদ্বেষী, তা সুজাতা সিং প্রকাশ করে দিলেন। ভারতের কোনো শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তার এমন পক্ষ-বিপক্ষ নিয়ে বক্তব্য দেয়া আরেক চমক।
সুজাতা কী মেসেজ দিতে এসেছিলেন? সোজা কথায়, তা হলোÑ এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনমতের বিরুদ্ধে গিয়ে হলেও দলীয় সরকারের অধীনেই নির্বাচনে রাজি হতে হবে। কারণ আওয়ামী লীগ না জিতলে জামায়াত জঙ্গি-মৌলবাদীরা মাথাচাড়া দেবে।
বাংলাদেশে কোন দল জিতবে, কারা হারবেÑ এটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে নির্ধারণের বিষয়। কোন দল উত্তম, কোন দল অধমÑ স্বাধীনভাবে সে সিদ্ধান্ত নেয়ার মালিক স্বাধীন এ দেশের জনগণ। বাংলাদেশ মধ্যযুগের মতো দিল্লির কোনো প্রদেশ নয় যে, সেখান থেকে অবতীর্ণ প্রত্যাদেশমাফিক ভেতো বাঙ্গালদের চলতে হবে। একই সাথে এ কথাও বলা প্রয়োজন, শীর্ষ জঙ্গিদের গ্রেফতার, বিচার, মৃত্যুদণ্ড হয়েছিল জামায়াতসমর্থিত ও বিএনপি নেতৃত্বাধীন সরকারের সময়েই। আর মৌলবাদী বলতে সেকুলাররা কথিত পলিটিক্যাল ইসলামকে বুঝিয়ে থাকেন। যা হোক, বাংলাদেশের মানুষ নিজেরাই স্থির করবে, এ রাষ্ট্রের আদর্শ কী হবে, ধর্মনিরপেক্ষতা না ইসলাম, বাঙালি না বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ। ১৬ কোটি মানুষ অজ্ঞ, মূর্খ ও অথর্ব নয় যে, নিজেদের জন্য আদর্শ, সরকারপদ্ধতি, নির্বাচন পরিচালনাব্যবস্থা ইত্যাদি বেছে নেয়ার যোগ্যতা তাদের নেই। সার্বভৌম দেশের স্বাধীন জাতির জন্য অবমাননাকর বাইরের কারো ডিকটেশান বা প্রেসক্রিপশন দেয়া।
প্রসঙ্গত লক্ষণীয়, ভারত সরকার একবারও বলেনি যে, বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের জনদাবি মোতাবেক সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করা দায়িত্ব।
এ দিকে সরকার ও তাদের শরিক দল জাতীয় পার্টি যেন পাল্লা দিয়ে চমক দেখাতে শুরু করেছে। এসব চমক অনেক ক্ষেত্রে প্রকাশ্যে যে অর্থ বহন করছে, নেপথ্যে হয়তো তার তাৎপর্য ভিন্ন। জনগণকে বোকা বানিয়ে আড়ালে বিশেষ কোনো মতলব হাসিলও চমকের উদ্দেশ্য বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।
Somersaultist
বা ডিগবাজিবিশারদ হিসেবে এরশাদ এবার যে পরিচিতি অর্জন করছেন, তা স্বৈরশাসক, বিশ্ববেহায়া, ফিনিক্স পাখি প্রভৃতি বিশেষণকে ছাড়িয়ে গেছে। অপ্রত্যাশিতভাবে কথা, ভূমিকা বা অবস্থান বদলের কারণে আগেও মাঝে মধ্যে Unpredictable অভিধায় তিনি অভিহিত হতেন। তবে এবার এ দিক দিয়ে রেকর্ড গড়েছেন একটার পর একটা চমক দেখিয়ে। কথায় বলে রাজনীতিতে শেষ কথা নেই। বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিশেষ করে এরশাদের কোনো শেষ কথা আছে, তা শুধু তার দল নয়, পরিবারের লোকজনও বিশ্বাস করার কথা নয়।
একটি পত্রিকা শুক্রবার লিড রিপোর্টে এরশাদের এই স্বভাব এবং এবারের সংশ্লিষ্ট ঘটনাবলির চমক প্রসঙ্গে লিখেছে, “মঙ্গলবার নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়ে ২৬ ঘণ্টার আত্মগোপন, বুধবার বিকেলে আবার দৃশ্যমান, ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিংয়ের সঙ্গে বৈঠক, তার পর সরকার ছাড়ার ঘোষণা, বৃহস্পতিবারের মধ্যে দলের মন্ত্রী-উপদেষ্টাদের পদত্যাগের নির্দেশ, বাড়ির সামনে র‌্যাব-পুলিশের আগমন, রাত সাড়ে সাতটায় স্ত্রী স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী রওশন এরশাদের গৃহ প্রবেশÑ বোঝাপড়া এবং সর্বশেষ রাত সাড়ে ১১টায় গ্রেফতারের চেষ্টা করলে আত্মহত্যার হুমকিদিয়ে ঘুমাতে যান এরশাদ।
এখানেই শেষ নয়। এরশাদের মনে কী আছে, কখন কোন দিকে তার মতির গতি পরিবর্তিত হবে, তা আলেমুল গায়েব ছাড়া কেউ জানেন না। নতুন কোনো ঘোষণা দিয়ে বা সিদ্ধান্ত নিয়ে তার আরো চমক লাগানো বিচিত্র নয়।
প্রধান বিরোধী দলকে সর্বদলীয়সরকারের বটিকা গেলাতে না পারা, বিরোধী দলের একটানা হরতাল ও অবরোধ, মহাজোট মিত্র এরশাদের এই আছি এই নেইমনোভাব, নিজেদের মধ্যে ভয়াবহ কোন্দল ও বিদ্রোহ প্রভৃতি মিলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দিশেহারা। এক দিকে দৃশ্যত বিএনপিকে নানা প্রলোভনে নির্বাচনী ফাঁদে ফেলতে চায়, অন্য দিকে দলটিকে ডাণ্ডা মেরে ঠাণ্ডা করার কোনো চেষ্টাই বাকি রাখছে না। এর সাথে চলছে নেপথ্যে দুই দলের সাধারণ সম্পাদকদের সংলাপ, বিএনপির সাথে সমঝোতার সম্ভাবনা এখনো আছে, অনেক বিএনপি নেতা নির্বাচনে আসতে আগ্রহী, ইত্যাকার প্রচার প্রপাগান্ডা। হানিফ, কামরুল, সুরঞ্জিতের মতো ফ্রি স্টাইল বক্তা নেতারা এ কাজ করলে তাদের বক্তব্য বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করা কঠিন। তাই জাতীয় রাজনীতির যাত্রামঞ্চের বিবেকচরিত্রের রূপদানকারী, মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের (ওকে) মাধ্যমে আড়ালে সংলাপ চলছে, অপেক্ষা করুন, নতুন খবর আসছেপ্রভৃতি কথা ছড়ানো হয়। সরকারের ক্রমবর্ধমান দমনপীড়ন আর একতরফা নির্বাচনের ভয়ানক জেদের পাশে ওকের আশাবাদে অনেকেই বিভ্রান্ত হচ্ছিলেন; কিন্তু এই প্রচারণার বেলুন ফুটো হয়ে যায় ৩ ডিসেম্বর মির্জা ফখরুলের বিবৃতিতে। আত্মগোপনাবস্থায় তিনি বলেন, সংলাপ চলার প্রপাগান্ডা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও অসদুদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
নির্বাচনকালীন সর্বদলীয়সরকার গঠনের মাধ্যমে যে চমক দেখানোর আয়োজন হয়েছিল, তা শুরুতেই ম্লান হয়ে গেছে। কারণ বাস্তবে এটি আগে থেকেই ক্ষমতাসীন মহাজোটের বর্ধিত সংস্করণ। আদর্শিকভাবে আওয়ামী লীগের সাথে একাত্ম, এমন বুদ্ধিজীবীদেরও কেউ কেউ কলামে লিখলেন, এই সরকার পরিমাণে বেড়েছেমাত্র; কিন্তু মানোন্নয়ন হয়নি।
এ দিকে বিরোধী দলের প্রচণ্ড আন্দোলন আর সরকারের অবর্ণনীয় দমননীতির মধ্যে সিইসি তার আগের আশ্বাস ভেঙে হঠাৎ নির্বাচনী শিডিউল ঘোষণা দিলেন। এবার রাজনৈতিক রঙ্গমঞ্চে একই সাথে ট্র্যাজেডি, কমেডি, প্রহসন আর সব কিছু মিলে একধরনের মেলোড্রামা অভিনীত হতে থাকে। এক দিকে পুলিশের গুলিতে আন্দোলনরত মানুষ মরছে, পিটুনিতে ভাঙছে হাত-পা; অন্য দিকে বোমায় আহত আর আগুনে পোড়া মানুষের আহাজরি; আরেক দিকে ঢাকঢোল-সানাই বাজিয়ে বিয়ের মতো উৎসব করে মনোনয়নপত্র কেনা ও জমার হিড়িক। বলা নিষ্প্রয়োজন, এ উৎসবে আওয়ামী লীগ ছাড়া কোনো দল ছিল না (জাপা উৎসব করার উৎসাহ পায়নি)। একদলীয় নির্বাচন’-এর অভিযোগটা যে অবাস্তব নয়, এমন অবস্থা তার প্রমাণ।
এবারকার নির্বাচন নিয়ে যেসব চমক, তার একটি হলো সংসদের ৩০০ আসনে মোট মিলিয়ে মাত্র এক হাজার ১২১ জন প্রার্থী হয়েছিলেন। গড়ে এক আসনে চারজনেরও কম। প্রার্থীদের মধ্যে শেষ পর্যন্ত বৈধ হলেন সাড়ে আট শর মতো। স্বৈরশাসনামলের চরম প্রহসনমূলক নির্বাচন কিংবা ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির চরম বৈরী পরিস্থিতিতে অনুষ্ঠিত নির্বাচনেও প্রার্থী এত কম ছিলেন না।
বাংলাদেশ আমলে সংসদের বিভিন্ন নির্বাচনে অংশ নেয়া দল ও প্রার্থীর সংখ্যা নি¤œরূপ :
১৯৭৩-১৪টি দল ও ১২০৯ জন। ১৯৭৯-২৯টি দল ও ২৫৪৭ জন। ১৯৮৬-২৮টি দল ও ১৯৮০ জন। ১৯৮৮-৮টি দল ও ১১৯২ জন। ১৯৯১-৭৫টি দল ও ২৭৮৭ জন। ১৯৯৬ (১৫ ফেব্রুয়ারি) ১৪৫০ জন। ২০০১-৫৪টি দল ও ১৯৩৫ জন। ২০০৮ : ৩৮টি দল ও ১৫৬৭ জন।
এত ঢোলবাদ্য, নাচগান, হই হুল্লোড় আর মনোনয়নপত্র বেচে আওয়ামী ফান্ডে কোটি টাকা সংগ্রহের পর কী দেখা গেল? ৫ জানুয়ারির জেদের নির্বাচনে শেষাবধি বৈধ প্রার্থী মাত্র ৮৪৭ জন। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে পার্লামেন্ট নির্বাচনে সর্বনি¤œ রেকর্ড। হয়তো সান্ত্বনা, তবুও একটা রেকর্ড গড়ে জাতিকে চমক দেখানো গেল। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে গেছেন ৩৩ জন। এটি সম্ভবত আরেক রেকর্ড।
এর মধ্যে আরো চমক আছে। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত মানে অপ্রতিদ্বন্দ্বী কিংবা জনপ্রিয় হওয়া নয়। আসলে প্রার্থীই পাওয়া যায়নি এই বহুল বিতর্কিত নির্বাচনে। এটি সবার কাছে স্পষ্ট।
সরকার রাজনৈতিক নানা অনিয়মের মাধ্যমে সাংবিধানিক নিয়ম রক্ষার এ নির্বাচন করছে। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিতদের মধ্যে সর্বপ্রথম যার নাম জাতি শুনতে পেল, তিনি আর কেউ ননÑ বহুলালোচিত সদ্য সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর। লক্ষ্মীপুরে আওয়ামী লীগের একজন বড় নেতা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেনÑ এমন খবরের পর জানা গেল, ঋণখেলাপে তিনিও বাতিল। তা হলে এখন সে আসনে কী হবে? এটি নজিরবিহীন ঘটনা। ফেনীর একসময়ের দোর্দণ্ড প্রতাপশালী আওয়ামী নেতা জয়নাল হাজারী স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন জেলার সব আসনে। তার প্রতিনিধি কোনো মতে মনোনয়নপত্র দাখিল করার পর নিজ দলের লোকজনের আক্রমণের মুখে পড়েন। কোনো মতে মানুষটি রক্ষা পেয়েছেন। পরে জয়নাল হাজারী হেলিকপ্টারে ফেনী যান রিটার্নিং অফিসারের অফিসে; কিন্তু বিল বাকি আছে বলে তার সব মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে যায়। তা সত্ত্বেও তিনি স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে হুঙ্কার দিয়েছেন, আমি নির্বাচন করবই।
দেশে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল ৪১টি। এর মাত্র ১৫টি অংশ নিচ্ছে এবার নির্বাচনে। আওয়ামী নেতৃত্বাধীন মহাজোটেরও অনেকে নেই। ইসলামী ঐক্যজোট, জাকের পার্টি, ইসলামিক ফ্রন্ট এতে অংশ নিচ্ছে না। এমনকি দ্বিতীয় বড় শরিক জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার এবং এ দলের মন্ত্রীদের পদত্যাগের সিদ্ধান্ত হয়েছে। দৈনিক পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠায় শিরোনাম : স্বাধীনতার পর সবচেয়ে কম মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে। আট আসনে একজন করে প্রার্থী।এরপর রিপোর্টে জানানো হয়েছেÑ ‘নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ৪১টি দলের মধ্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি (এরশাদ) ছাড়া নামসর্বস্ব হাতেগোনা কয়েকটি দলের প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দেন।
এখন চরম উত্তাল বাংলাদেশ। অবরোধ-হরতালে অচল দেশ। অবর্ণনীয় সারা দেশের পরিস্থিতি। তবুও আওয়ামী লীগ নেতা মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেছেন, দেশের কোথাও অবরোধ হচ্ছে না। জনগণ তাদের স্বাভাবিক কাজকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। যানবাহন, অফিস-আদালত, কলকারখানাÑ সবই স্বাভাবিক নিয়মে চলছে। ৩ ডিসেম্বর দলের কেন্দ্রীয় অফিসের সামনে সমাবেশে তিনি কথাগুলো বলেন। শুধু এই মহানগর নেতা নন, দলের শীর্ষস্থানীয় নেতা আমির হোসেন আমুও বললেন, দেশের পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। আর সরকারের একান্ত বাধ্যগত সুবোধ সিইসি পর্যন্ত বলেছেন, ‘পরিস্থিতি ভালোর দিকে। এসব উদ্ভট ও অবাস্তব কথা শুনে মানুষ হাসবে না কাঁদবে, বুঝে উঠতে পারছে না।
ক্ষমতাসীন মহাজোটের দ্বিতীয় বড় শরিক জাতীয় পার্টি প্রধান এরশাদ ৩ ডিসেম্বর সংবাদ সম্মেলন ডেকে জানান, দেশে নির্বাচনের কোনো পরিবেশ নেই। প্রার্থীদের নেই জীবনের নিরাপত্তা। কারণ আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে। এ অবস্থায় তিনি সংসদ নির্বাচন থেকে তার দল সরে আসার ঘোষণা দেন। পরদিন এরশাদ আবার জোর দিয়ে বলেন, বিরাজমান পরিস্থিতিতে জাপা নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত বদলাবে না। অথচ ভয়াবহ অবরোধ সত্ত্বেও একই দিন একজন মন্ত্রী বললেন, দেশে আইনশৃঙ্খলার উন্নতি হয়েছে। আর মন্ত্রিসভা সেই দিন তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলল, ‘আইনশৃঙ্খলার অবস্থা ভালো।অনেকেই এটিকে মর্মান্তিক রাজনৈতিক চমক বলে অভিহিত করছেন।

পাদটীকা :
এরশাদ সংসদ নির্বাচনে নিজ দলের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতে বললেও সর্বদলীয়সরকার থেকে দলীয় মন্ত্রীদের কেন সাথে সাথে পদত্যাগ করতে বলেননি? এ নিয়ে নানা জল্পনার মধ্যে এক নাগরিকের মন্তব্য : পদত্যাগ করতে বললে স্বাস্থ্যমন্ত্রীকেও তা করতে হবে। স্বাস্থ্যের অবস্থা ভালো না থাকলেও বাইচান্সমন্ত্রী হওয়ার পর মাত্র দুই সপ্তাহ না পার হতেই যদি বিদায় নেন, তা হলে নির্ঘাত গৃহবিবাদ। এরশাদের এমনিতেই দলে ঘোরতর বিবাদ কাজী জাফর ইস্যুতে। উনি কদিক সামলাবেন? আগেই বলে দিয়েছেন, ‘আমি আছি উভয় সঙ্কটে।
দুই : সুজাতা সিং দিল্লি থেকে ঢাকায় উড়ে এসেছিলেন মেসেজরূপী লাড্ডু নিয়ে। অবশ্য এ দেশের নির্দিষ্ট কয়েকজনের জন্যই তা এনেছেন। বহুল প্রচলিত প্রবাদ : দিল্লি কা লাড্ডু যো খা সো পস্তায়া; যো নেহি খায়া সো ভি পস্তায়া।কিন্তু সুজাতার ভূমিকায় বোঝা যাচ্ছে, আসলে যারা এখন সে লাড্ডু খাবেন, তাদের পস্তাতে হবে ঠিকই। তবে যারা খাবেন না, তাদের আখেরে পস্তাতে হবে না। 


 

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads