শুক্রবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০১৩

জনপ্রিয়রা একতরফা নির্বাচন করে না


প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলে থাকেন আওয়ামী লীগ ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করছে। তিনি বলেছেন, ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যই সংবিধানে পঞ্চদশ সংশোধনী পাস করা হয়েছে। অথচ এখন দেখতে পাচ্ছি, প্রতিযোগিতাহীন একতরফা ভোটারবিহীন নির্বাচনে ১৫৪ জন প্রার্থী বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেন। লজ্জার মাথা খেয়ে তারা এখন বিজয়ের ঢেঁকুর তুলছেন। কোথায় গেল ভোটের অধিকার! কোথায় গেল ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম। উল্টো যারা ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন চালাচ্ছেন, তাদের বিরুদ্ধে নির্মম দমন-পীড়ন চলছে। এই দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও সোচ্চার হতে বাধ্য হয়েছে। এমনকি খোদ জাতিসঙ্ঘ পর্যন্ত সরব হয়েছে। জাতিসঙ্ঘ মানুষের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য বাংলাদেশের বিবদমান গোষ্ঠীদ্বয়ের মধ্যে সমঝোতার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।
দুঃখজনক হলেও সত্য, সরকার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তাদের হীন উদ্দেশ্য চরিতার্থ করে চলছে। ৭১ সালে ইয়াহিয়া খান ভারতে অবস্থানরত আওয়ামী লীগ সদস্যদের শূন্য আসনে ভোটারবিহীন একতরফা উপনির্বাচনে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় কিছু লোককে পাস করিয়ে নিয়েছিলেন। বর্তমান পরিস্থিতি অনেককে সে কথা মনে করিয়ে দেয়।
আওয়ামী লীগের অপশাসন, ভ্রান্ত ও গণবিরোধী নীতির ফলে বাংলাদেশ এখন বধ্যভূমিতে পরিণত হয়েছে। ভারতের স্বার্থরক্ষক বলে পরিচিত দলটি দেশের মানুষের সমস্যা সমাধানে সম্পূর্ণ ব্যর্থ। অন্ধ ভারতপ্রীতি এবং তোষণ নীতি ছাড়াও আধিপত্য বিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে। ফলে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সামাজিক বিশৃঙ্খলা একটি নেতিবাচক ভৌতিক পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। রাজনৈতিক দূরদৃষ্টির অভাব, সরকার ও মন্ত্রীদের অদক্ষতা ও লোভ সামগ্রিকভাবে আওয়ামী লীগকে আজকের অবস্থানে এনেছে। জনগণের স্বার্থের কথা এরা যেন বেমালুম ভুলে গেছেন। জনস্বার্থের কথা পরিহার করে এখন তারা শুধু ক্ষমতা ও স্বার্থের পেছনে দৌড়াচ্ছেন। ফলে দলের জনপ্রিয়তায় নেমেছে ধস। নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, এমন আতঙ্ক কাজ করছে যে, নির্বাচনে তাদের ভরাডুবি হবেই। বাংলাদেশের জনগণ হতে পারে দরিদ্র কিন্তু রাজনৈতিকভাবে খুব সচেতন ও পরিপক্ব; রাজনীতিবিদদের শঠতা সহজেই ধরে ফেলতে পারঙ্গম। সাধারণ জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনে সরকারের ভূমিকা সম্পর্কে জনগণ এবেবারেই হতাশ। বলা বাহুল্য, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিএনপি নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রধান ও প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী।
আওয়ামী লীগ বুঝতে পেরেছে, বিএনপির কাছে তাদের পরাজয় অবশ্যম্ভাবী। এটা ভেবেই বিএনপির বিরুদ্ধে আদাজল খেয়ে প্রোপাগান্ডায় দলটিকে আইএসআইয়ের সাথে যুক্ত করে বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে এবং অপপ্রচার চালাচ্ছে। নির্বাচনে বাঁকাপথে চলার হীন উদ্দেশ্যে মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়া বিভ্রান্ত ও হতাশ নেতারা বিএনপির সুনাম ুণœ করা ও বিএনপিকে হেয় করে জয়লাভের জন্য মরিয়া হয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছেন।
নির্বাচনী প্রচারণার নামে ভারতের বিজেপি আইএসআই ও পাকিস্তানকে টার্গেট করে উগ্রপন্থী হিন্দুদের মুসলমানদের ওপর চড়াও হতে উসকানি দেয়। আওয়ামী লীগ একই কায়দায় ঘৃণা ও বিদ্বেষ ছড়িয়ে আন্তর্জাতিকপর্যায়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে। প্রচার করা হচ্ছে যে, বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান নাকি আইএসআইয়ের কাছ থেকে টাকা পাচ্ছে। ভারতের প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় এ ধরনের প্রপাগান্ডা চালানো হচ্ছে। এর উদ্দেশ্য হলো, প্রতিবেশী দেশের নেতাদের খুশি করে বাংলাদেশে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়া। এ দিকে ভারতীয় নেতারা ঘোষণা করেছেন, তারা বাংলাদেশের নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করবেন না। আগামী দিনে তারেক রহমান বিএনপির নেতৃত্বে আসতে পারেন এবং নির্বাচনে বিএনপির জয়লাভের সম্ভাবনা রয়েছে। ক্ষমতা হারানোর ভয়ে তার বিরুদ্ধে বেপরোয়া অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।
লেখক বিশ্লেষকদের উচিত শুধু বিশেষ দেশকে খুশি করার জন্য বিবেকের বিরুদ্ধে সীমা ছাড়িয়ে না লেখা। যে মুহূর্তে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য জনগণ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে, তখন তথ্যপ্রমাণ ছাড়া একতরফা প্রপাগান্ডা না করে দেশপ্রেমিক লেখক বিশ্লেষকদের উচিত নিজের দেশ সম্পর্কে ভাবা ও লেখা। আওয়ামী লীগ কোনোভাবেই মানুষের মন জয় করে নির্বাচনে জয়লাভ করতে পারবে না। দলের নেতৃত্ব বর্তমানে নির্বাচনে পরাজয় আতঙ্কে ভুগছে এবং বেসামাল হয়ে পড়েছে। এ কারণে প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির বিরুদ্ধে বেপরোয়া অপপ্রচার ছাড়াও বিরোধী দলের বিরুদ্ধে মারমুখী হয়ে উঠছে।
আমাদের অভ্যন্তরীণ নির্বাচনী প্রচারণায় পাকিস্তান বা আইএসআইকে কোনো পক্ষ যুক্ত করা উচিত নয়। পাকিস্তান ও বাংলাদেশ পরস্পরের সার্বভৌমত্বকে শ্রদ্ধা করবেÑ এটাই প্রত্যাশিত। অমর্যাদাকর প্রচারণা অব্যাহতভাবে চালালে একটা সময় তার বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। যাদের কোনো রাজনৈতিক দূরদৃষ্টি নেই, যোগ্যতা নেই, জনগণের সমস্যা নিয়ে তাদের মাথা ব্যথাও নেই। এক দেশের বিরুদ্ধে বিষোদগার করে অন্য দেশকে খুশি করাই তাদের অগ্রাধিকার। তাদের ব্যর্থতা, অদক্ষতা ও দুর্নীতিপরায়ণতা দেশে-বিদেশে সবারই জানা। বিদেশী গোয়েন্দা সংস্থা এবং উগ্রবাদী গোষ্ঠীর নানা প্রকার পরামর্শেই হীন অপপ্রচারে কেউ কেউ লিপ্ত। এ ধরনের প্রচারণা শুধু নিন্দনীয় নয়, ক্ষমার অযোগ্য অপরাধও বটে। বাংলাদেশের জনগণ দেশপ্রেমিক ও আগ্রাসনবিরোধী। প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনে জয়লাভ করতে পারবে না বলেই নিরঙ্কুশ জয় লাভে প্রতিযোগিতাহীন একতরফা নির্বাচনসহ নানা বাহানা ও কৌশলের আশ্রয় নেয়া হচ্ছে। তার পরিণতি হচ্ছে সঙ্ঘাত আরো বৃদ্ধি পাওয়া। এর দ্বারা সরকারের অগণতান্ত্রিক চরিত্রই ফুটে উঠেছে। সরকারের বর্তমান অবস্থান হলো নির্বাচনকালীন। অতএব, এটা হবে নির্বাহী ক্ষমতাহীন। অর্থাৎ নির্বাচন ব্যতিরেকে অন্য কোনো মৌলিক কাজ করা গণতান্ত্রিক শিষ্টাচার ও সংস্কৃতি বিরুদ্ধ। প্রধানমন্ত্রী তার পূর্ব ঘোষণায় বলেছিলেন, ‘নির্বাচনকালীনসরকারের কাজ হবে শুধু রুটিন ওয়ার্ক। অথচ সে কথা বেমালুম ভুলে গিয়ে স্বাভাবিক সরকারের মতোই সব গুরুত্বপূর্ণ কাজই করে চলছেন।


 

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads