মঙ্গলবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৩
সবাই আগে দেশ ও জাতির কথা ভাবুন
Posted on ৫:২৮ PM by Abul Bashar Manik
কোথায় যাচ্ছে দেশ? জনগণের কী হবে? সব দলের অংশগ্রহণে নির্দলীয়, নিরপে নির্বাচন হবে তো? নাকি প্রধান বিরোধী দলকে বাইরে রেখে একতরফা
নির্বাচনের মাধ্যমে সঙ্ঘাত দীর্ঘমেয়াদি রূপ নেবে? আন্দোলনের জান-মালের তি হবে? কারো কাছে এসব প্রশ্নের জবাব আছে বলে মনে হয় না
প্রিয় দেশ আজ গভীর
সঙ্কটে পতিত। নেতৃত্বের ব্যর্থতা, কিছু মানুষের
অবিবেচনাপ্রসূত কর্মকাণ্ডের ফলে চার দিকে আগুন জ্বলছে। মতার লোভের জন্য হানাহানি, ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ, সরকারের একগুঁয়েমি, দমনপীড়ন, নির্যাতন, রাজনীতিকদের অবিবেচনা
প্রসূত কর্মকাণ্ড মিলে বীভৎসতার মহোৎসব চলছে। এক দিকে পুলিশের হাজার হাজার টিয়ার
শেল ও গুলি, অন্য দিকে পেট্রলবোমা, ককটেল, আগুন।
নির্দলীয় ও নিরপে সরকারের অধীনে সব দলের অংশগ্রহণে, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দাবিতে দুই মাসব্যাপী
আন্দোলনে শতাধিক মানুষের মহামূল্যবান প্রাণহানি ঘটেছে। গত ৫ মে হেফাজত ইসলামের
ঢাকা অবরোধ ও সমাবেশকে কেন্দ্র করে সরকারের বিভিন্ন বাহিনীর গুলিতে অনেক তাজা
প্রাণ ঝরে গেছে। তারও পেছনে ফিরে গেলে দেখা যায় ‘যুদ্ধাপরাধী’ ট্রাইব্যুনালের রায়কে
কেন্দ্র করে দুই শতাধিক রাজনৈতিক কর্মী, সাধারণ
মানুষ ও পুলিশ বাহিনীর সদস্যের প্রাণ হারিয়ে গেছে। একদল গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, নির্দলীয়-নিরপে নির্বাচনের দাবিতে মতাসীন
সরকারকে দাবি মানতে বাধ্য করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, অন্য
দল সংবিধান রার কথা বলে প্রধান বিরোধী দলকে নির্বাচন থেকে বাইরে রেখে যেনতেনভাবে
একতরফা নির্বাচন করার প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছে। সরকারের নির্যাতনের ভয়ে বিরোধী
দলের প্রায় সব বড় নেতাই গা ঢাকা দিয়েছেন। প্রধান বিরোধী দল বিএনপির কেন্দ্রীয়
কার্যালয় কয়েক মাস থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে অবরুদ্ধ। এমনকি গভীর রাতের
অন্ধকারে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের গেটের তালা ও রুমের দরজা ভেঙে ঘুমন্ত অবস্থায়
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও দলের মুখপাত্র রুহুল কবির রিজভীকে গ্রেফতার করা হয়। এটি
গণতন্ত্রের ভাষা হতে পারে না। এভাবে হানাহানি-হিংসাত্মক কার্যকলাপকেই উৎসাহিত করা
হচ্ছে। কেন বারবার প্রধান বিরোধী দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের নামে মামলা? কেন তাদের গ্রেফতার করে রিমান্ডে নেয়া
হচ্ছে? গণতন্ত্রের খোলসে আমরা কী
আবার স্বৈরতন্ত্রে ফিরে যাচ্ছি? আমরা কি পারি না দেশ ও
জনগণের স্বার্থে নিজস্ব অবস্থান থেকে ছাড় দিতে? আমরা
কি পারি না একে অপরকে আস্থায় এনে সহাবস্থানের সুবাতাস বইয়ে দিতে? আমরা কি পারি না দলীয় সঙ্কীর্ণতার ঊর্ধ্বে
উঠে দল-মত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধভাবে অসহায় জনগণকে একটু শান্তিতে বাঁচতে দিতে? মনে রাখতে হবে, সংবিধানের জন্য জনগণ নয়, জনগণের জন্যই কিন্তু সংবিধান। রাজনীতির
জন্য জনগণ নয়, জনগণের কল্যাণের জন্যই
রাজনীতি। আর রাজনীতিবিদদের মনোবাঞ্ছা পূরণ করা জনগণের কর্ম নয়, জনগণের সুখ-দুঃখে পাশে থাকাই রাজনীতিবিদদের
প্রধান ল্য হওয়া উচিত। সবার আগে দেশ ও জনগণ। কিন্তু আমরা আগেও দেখেছি এখনো দেখছি
মতায় থাকা আর মতায় আসার জন্য জনগণকে জিম্মি করা। মানুষকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা। আগে
দেখেছি ঢাকার ব্যস্ততম রাজপথে বাসে গান পাউডার দিয়ে পুড়িয়ে ১১ জন নিরপরাধ মানুষকে
হত্যা করতে। এখন চলছে যাত্রীভরা বাসে পেট্রলবোমা মেরে মানুষ মারার বীভৎসতা।
যাত্রীর নিরাপদ বাহন রেলের ফিশপ্লেট তুলে ফেলে যাত্রীদের মৃত্যুর মুখোমুখি করে
দেয়া। যাদের জন্য রাজনীতি, তাদেরই কেন আমরা
পুড়িয়ে মারছি? এদের ভোটেই রাজনীতিবিদেরা
মতায় আসে আর মতা থেকে নামে। গণতন্ত্রের নামে, সংবিধান
রার নামে কেন এই বীভৎসতা? নষ্ট রাজনীতির
হানাহানি-রেষারেষিতে পড়ে আর কত মায়ের বুক খালি হবে? জানি এর কোনো উত্তর কারো জানা নেই। রাজনীতিবিদেরা যার যার
অবস্থান থেকে তাদের কর্মকাণ্ডের পে ‘নিরেট
যুক্তি’ তুলে ধরবেন।
পরিস্থিতি দেখে
দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, এক-এগারোর কুশীলবেরা
এখনো নেতা-নেত্রীর ওপর ভর করে আছে। মনে হচ্ছে সুযোগ-সন্ধানী ওই সব দূরাত্মা ওঁৎ
পেতে আছে। তবে এবারের ছোবল কিন্তু আগের চেয়েও বিষাক্ত ও ভয়াবহ হওয়ার সম্ভাবনাই
বেশি। দুই নেত্রীকে রাজনৈতিকভাবে ধ্বংস করার সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নিয়ে তারা
এগিয়ে যাচ্ছে। মনে হয়, মতার মোহে অন্ধ
ব্যক্তিরা তা বুঝতে পারছেন না। কিন্তু যখন তারা ষড়যন্ত্রর্ বুঝতে পারবেন, তখন আর করার কিছুই থাকবে না। নির্বাচনকালীন
সরকারের মন্ত্রিসভায় আওয়ামী লীগের দু’জন
সংস্কারপন্থীকে দেখে কিন্তু ঘরপোড়া গরুর কপালে সিঁদুর দেখার গল্পটি মনে পড়ে যাচ্ছে।
বেশ কিছু দিন থেকে উভয়পক্ষকে বারবার সতর্ক করা হচ্ছে। সরকারের মেয়াদ শেষ হয়ে
গেলেও মতা ছাড়তে নারাজ। মতাকে আরো পাকাপোক্ত করার জন্য ১৯৯০ সাল থেকে চালু হয়ে আসা, নিরপে নির্বাচনের ল্েয গঠিত তত্ত্বাবধায়ক
ফর্মুলা বাতিল করে নিজের অধীনে নির্বাচন করার জেদ। প্রধান বিরোধী দলকে মিছিল, মিটিং করতে দিচ্ছে না। প্রতিনিয়ত তাদের বাক
ও নাগরিক অধিকার হরণ করা হচ্ছে। বিরোধী দলের মহাসচিবসহ শীর্ষস্থানীয় নেতাদের নামে
মামলার পর মামলা দায়ের এবং গ্রেফতার করে হয়রানি করা হচ্ছে। বিরোধী দলের মিছিল
দেখলেই রাবার বুলেট, টিয়ার শেল, সরাসরি গুলিবর্ষণ করে নেতাকর্মীদের আহত-নিহত
করা হচ্ছে। অন্য দিকে সরকারি দলের অন্যায় সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করতে হরতাল-অবরোধ
কর্মসূচিতে যানবাহন ভাঙচুর, গাড়ি জ্বলছে, নিরীহ যাত্রীরা পুড়ে মরছেন। জনগণ অসহায়
আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ এবং আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য সরকারের
এজেন্টরাই নাশকতা করে মানুষকে পুড়িয়ে মারছে বলে জনগণ বলাবলি করছে। গণতান্ত্রিক
অধিকার রুদ্ধ করে দিয়ে সহিংসতার দিকে ঠেলে দেয়ার দায় সরকারকেই নিতে হবে। তাই এর
থেকে উত্তরণে সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে। মতাসীন দলেরই দায় বেশি। তারা আন্তরিকভাবে
চাইলেই সব দলের অংশগ্রহণে নিরপে নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে স্থিতিশীলতা ফিরে আসতে
পারে। এ মুহূর্তে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান সবার কাম্য।
দেশের ও জনগণের
স্বার্থে সমস্যা আমাদেরই সমাধান করতে হবে। বিদেশীদের মোড়লিপনা করার জন্য
টেনে আনতে হবে কেন? এ দেশের
রাষ্ট্রপরিচালনা ও রাজনীতির ভবিষ্যৎ কী হবে, তা
বিদেশীরা ঠিক করবেন কেন? বিদেশীরা ভালো চাওয়ার
মধ্যে শুভঙ্করের ফাঁক থেকে যায়।
গার্মেন্ট শিল্প
দেশের জন্য অনেক বড় সুযোগ এনে দিয়েছে। দেশের প্রধান রফতানি এই গার্মেন্ট
খাত। প্রায় অর্ধ কোটি শ্রমিকের কর্মসংস্থান এবং দেশের এক-দশমাংশ মানুষের খেয়ে পরে
বেঁচে থাকার অর্থ জোগায় এ গার্মেন্ট খাত। তাই যতটা পারা যায় বৈষম্য কমিয়ে
মালিক-শ্রমিক স্বার্থ রা করে শ্রমবান্ধব পরিবেশে ঐক্যবদ্ধভাবে এ শিল্পকে এগিয়ে
নিতে হবে। শ্রমিকদের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। গার্মেন্ট শিল্প বাঁচলেই
শ্রমিকেরা বাঁচবে- এ সত্যটি শ্রমিকদেরও উপলব্ধি করতে হবে। শ্রমিকেরা দিন-রাত
পরিশ্রম করে এ শিল্পকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। তাই তাদের প্রাপ্য মজুরি দিতে গড়িমসি করা
মানবতাপরিপন্থী। তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার যুগে অন্যান্য দেশ গার্মেন্ট খাতে
এগিয়ে যাচ্ছে। অনেক দেশ ঘাপটি মেরে বসে আছে আমাদের বহির্বিশ্বের অর্ডারগুলো নিয়ে
নেয়ার জন্য। তাই কারো ইন্ধনে বা প্ররোচনায় নিজেদের রুটি-রুজির এ খাতকে ধ্বংস করে
দেয়া বুদ্ধিমানের কাজ হতে পারে না। মালিক-শ্রমিক-জনগণ সবাইকে এ ষড়যন্ত্রকে শক্ত
হাতে মোকাবেলা করতে হবে।
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন