বিরোধীদলীয় নেতা ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া গত বৃহস্পতিবার একটি বিবৃতি দিয়েছিলেন। সেই বিবৃতিতে ভারত প্রসঙ্গেও কিছু কথা বলা হয়েছিলো। সে কথার জবাব দিয়েছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ঐ বিবৃতিতে বিএনপি চেয়ারপারসন ভারত প্রসঙ্গে বলেছিলেন, ‘প্রভাবশালী প্রতিবেশী দেশ ভারতের সরকার ও জনগণের প্রতি আমার আহ্বান, তারা যেন বাংলাদেশের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের অনুভূতি, দাবি ও মনোভাবের প্রতি সম্মান দেখিয়ে বিশ্ব সম্প্রদায়ের অবস্থানের সঙ্গে একাত্ম থাকে।’ এর প্রতিক্রিয়ায় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গত ১৩ ডিসেম্বর বলেছেন, ‘আমরা (ভারত) বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক উভয়ের পারস্পরিক আস্থা, উভয়ের জন্য লাভজনক, হস্তক্ষেপবিহীন এবং উভয়ের সার্বভৌমত্বের সঙ্গে সম্মান প্রদর্শন করে পরিচালনা করে থাকি। বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক বিস্তৃত ও বহুমুখী। ভারত সব সময়ই বাংলাদেশের জনগণের ইচ্ছাকে সম্মান প্রদর্শন করে, ভবিষ্যতেও অবশ্যই এটি করবে।’
বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিবৃতির জবাবে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র যে বক্তব্য রেখেছেন তা খুবই চমৎকার। এমন সঙ্গত বক্তব্যের জন্য আমরা ধন্যবাদ জানাতে পারি। তবে প্রসঙ্গত এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, চমৎকার বক্তব্য তখনই অর্থপূর্ণ হয়ে ওঠে, যখন আচরণ বক্তব্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়। ভারত তো বক্তব্যের মাধ্যমে আমাদের সার্বভৌমত্ব ও জনগণের ইচ্ছার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেছে, কিন্তু আচরণের ক্ষেত্রে সব সময় কি তার প্রতিফলন ঘটে? আমাদের নির্বাচনকালীন বর্তমান সংকটের সময় বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং। তিনি তার আচরণের মাধ্যমে আমাদের সার্বভৌমত্ব ও জনগণের ইচ্ছার প্রতি সম্মান প্রদর্শনে সমর্থ হননি। বিশেষ করে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের সাথে বৈঠকের সময় তিনি অভিমত ব্যক্ত করেছেন, যে আচরণ প্রদর্শন করেছেন তা একটি স্বাধীন দেশের জনগণের জন্য খুবই অপমানজনক ও আপত্তিকর। তিনি হয়তো ধারণা করেছিলেন এরশাদ মুখ খুলবেন না, কিন্তু এরশাদ মুখ খোলায় আমরা সুজাতা সিং তথা ভারতের অভিপ্রায় জানতে পেরেছি। ফলে বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিবৃতিকে আমাদের কাছে যথার্থ ও সময়োপযোগী বলে মনে হয়েছে। এ জন্য আমরা তাকে সাধুবাদ জানাতে পারি।
বিরোধীদলীয় নেত্রীর বিবৃতি যে যথার্থ ছিল, তা আমরা ভারতীয় পত্রিকার বক্তব্য থেকেও উপলব্ধি করতে পারি। কলকাতার টেলিগ্রাফ পত্রিকাও জানিয়ে দিয়েছে যে, বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগকে সমর্থন দিচ্ছে ভারত। ১০ ডিসেম্বর পত্রিকাটিতে লেখা ‘হাউ ইন্ডিয়া মাইট ফাইন্ড ইটস ওন ব্যালেন্স ইন এশিয়া’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। একটি দেশ যখন এভাবে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে নাক গলায়, তখন এ কথা বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় যে, তারা আমাদের সার্বভৌমত্ব ও জনগণের ইচ্ছার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করছেন। আমরা ভারতের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক চাই, একই সাথে চাই সম্মানজনক ও সঙ্গত আচরণ। বিষয়টি তারা উপলব্ধি করলেই মঙ্গল।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন