অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন গণতন্ত্রের
পূর্বশর্ত। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের ভিত্তিতে রাষ্ট্র
পরিচালিত হয়। যেকোনো গণতান্ত্রিক দেশে প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটাধিকারের ভিত্তিতে জাতীয়
সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং জাতীয় সংসদে একক বা যৌথভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন
লাভকারী এক বা একাধিক দল সরকার গঠনের সুযোগ পায়। এ ক্ষেত্রে আমাদের দেশেও একই নীতি
অনুসৃত হয়।
আমাদের
দেশে জাতীয় সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠান ও পরিচালনার দায়িত্ব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান
হিসেবে নির্বাচন কমিশনকে দেয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশন দায়িত্বটি পালনের ক্ষেত্রে সব
নির্বাহী কর্তৃপক্ষের সহায়তা লাভ করে থাকে। তাছাড়া জাতীয় সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠান
ও পরিচালনার জন্য যে বিপুল কর্মচারীর প্রয়োজন হয়, তা নির্বাচন কমিশনের অনুরোধে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক সাংবিধানিক
বাধ্যবাধকতায় কার্যকর করা হয়।
সংবিধানের
পঞ্চদশ সংশোধনী-পরবর্তী নির্বাচন কমিশন একজন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অনধিক
চারজন কমিশনার সমন্বয়ে গঠিত। নির্বাচন কমিশনারেরা রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিয়োগ লাভ করে
থাকলেও বর্তমানে যারা নির্বাচন কমিশনার হিসেবে কর্মরত, তাদের সবার নিয়োগ প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ
অনুযায়ীই কার্যকর হয়েছে।
সংবিধান
এবং বিভিন্ন নির্বাচনী আইন ও বিধির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনকে যে ক্ষমতা দেয়া হয়েছে
তা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন
অনুষ্ঠান ও পরিচালনার জন্য পর্যাপ্ত। এখন প্রশ্নÑ বর্তমান নির্বাচন কমিশন সে ক্ষমতা প্রয়োগে কতটুকু আন্তরিক? জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে
দু’ধরনের বিধান যথা- (ক) মেয়াদ
অবসানের কারণে সংসদ ভেঙে গেলে ভেঙে যাওয়ার পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে এবং (খ) মেয়াদ
অবসান ব্যতীত অন্য কোনো কারণে সংসদ ভেঙে গেলে ভেঙে যাওয়ার পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে
নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে মর্মে উল্লেখ থাকলেও বর্তমান জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রথমোক্ত
বিধানের অধীনে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রথমোক্ত বিধান অনুযায়ী সংসদ ভেঙে যাওয়ার
পূর্ববর্তী ৯০ দিন সময় নির্বাচন অনুষ্ঠান ও পরিচালনার জন্য নির্বাচন কমিশনের জন্য
সংবিধান দ্বারা নির্ধারিত। সংবিধানের অনুচ্ছেদ নং ৭২(৩) এর বিধান অনুযায়ী পাঁচ বছর
মেয়াদ পূর্তিতে বর্তমান সংসদ আপনাআপনি ২৪ জানুযারি, ২০১৪ ভেঙে যাবে। সে হিসেবে নির্বাচন কমিশনকে ২৭ অক্টোবর, ২০১৩ থেকে ২৪ জানুযারি, ২০১৪ এর মধ্যবর্তী সময়ে নির্বাচন সম্পন্ন
করতে হবে। এ সময়ের মধ্যে কখন, কিভাবে ও কী পদ্ধতিতে
নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা এককভাবে নির্বাচন কমিশনের
কিন্তু বাস্তব ক্ষেত্রে আমরা দেখতে পাই নির্বাচনপূর্ব সময়ে উপনীত হওয়ার পরও সংসদ
ভেঙে দেয়া হয়নি, পূর্বের আচরণবিধি বাতিল করে
নতুন আচরণবিধি প্রণয়ন করা হয়েছে, সংসদ অধিবেশন চলেছে, প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীরা সরকারি সুযোগ-সুবিধা
ব্যবহার করে আগের মতো সভা সমাবেশ করে ভোট প্রার্থনা করছেন এবং মন্ত্রিসভা
অন্তর্বর্তী রূপ না নিয়ে তফসিল ঘোষণার পূর্বপর্যন্ত পূর্বের কলেবরে দায়িত্ব পালন করে
গেছে।
নির্বাচন
অনুষ্ঠান বিষয়ে বিগত ছয় মাসে বিভিন্ন সময়ে প্রধানমন্ত্রী সংসদ ও সংসদের বাইরে যে
বক্তব্য দিয়েছিলেন তা অবলোকনে দেখা যায়, তিনি
প্রথমত বলেছিলেন সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্বাচন হবে। অতঃপর বলেছিলেন নির্বাচনকালীন ৯০ দিন
সময় উপনীত হওয়ার পূর্বে সংসদ অধিবেশন আর বসবে না এবং মন্ত্রিসভা স্বল্পসংখ্যক
সদস্য নিয়ে অন্তর্বর্তী মন্ত্রিসভা হিসেবে দৈনন্দিন কাজ সম্পাদন ব্যতীত কোনো
নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে না। কিন্তু পরে দেখা গেল ৯০ দিন সময়সীমার
মধ্যে উপনীত হওয়ার পরও সংসদ অধিবেশন চলেছে এবং গত ২৪ নভেম্বর, ২০১৩ তফসিল ঘোষণার পূর্ব পর্যন্ত
মন্ত্রিসভা অন্তর্বর্তী রূপ পায়নি। তা ছাড়া তফসিল ঘোষণার পূর্বক্ষণে নির্বাচনকালীন
সময়ের মধ্যে অবস্থান সত্ত্বেও পূর্বের আচরণবিধি বাতিল করে নতুন আচরণবিধি প্রণয়নকরত
নির্বাচনপূর্ব সময় বলতে সংবিধান, আইন ও প্রচলিত
বিধিবিধানের ব্যত্যয়ে তফসিল ঘোষণা হতে নির্বাচনের ফলাফল গেজেট বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের
প্রকাশের দিন পর্যন্ত সময়কে বুঝানো হয়েছে।
নির্বাচন, সংসদ বহাল থাকা না-থাকা, সংসদ অধিবেশন চলা না-চলা, মন্ত্রিসভা অন্তর্বর্তী রূপ না-নেয়া, সংসদ সদস্যদের পদত্যাগ কার্যকর হওয়া না-হওয়া
প্রভৃতি বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য অসঙ্গতিপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও দুঃখজনকভাবে
নির্বাচন কমিশন একটি সাংবিধানিক স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিজ অবস্থান সুসংহত
বিবেচনায় নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালনে এখন পর্যন্ত দেশবাসীকে আশ্বস্ত করতে সমর্থ
হয়নি।
নির্বাচন
কমিশন কর্তৃক তফসিল ঘোষণা-পরবর্তী দেখা গেল দেশের বৃহৎ বিরোধী দল বিএনপি ও এর
জোটভুক্ত দলগুলো নির্বাচন তফসিল প্রত্যাখ্যান করে নির্বাচন বর্জনের পথে এগিয়ে
চলছে। নির্বাচন কমিশনের সাথে নিবন্ধিত সব রাজনৈতিক দলকে অন্তর্ভুক্ত করে (ইনকুসিভ)
এবং প্রধান বিরোধী দল ও এর জোটকে বাদ দিয়ে (এক্সকুসিভ) এ দু’ধরনের নির্বাচন করার পথ নির্বাচন কমিশনের
জন্য খোলা থাকলেও কার্যত যে তারা এক্সকুসিভ নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, তা দেশবাসীর সামনে অনেকটা স্পষ্ট।
নির্বাচন
এক্সকুসিভ বা ইনকুসিভ যা-ই হোক না কেন, স্বাধীন
ও নিরপেক্ষ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচন কমিশনকে প্রমাণ করতে হবে তারা
সব দলের জন্য সমসুযোগ সম্বলিত মাঠ (লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড) নিশ্চিত করতে পেরেছে।
এ
কথাটি অনস্বীকার্য যে, নগ্ন দলীয়করণের কারণে
প্রশাসন, পুলিশ, বিচার বিভাগসহ অপর সব বিভাগের কর্মকর্তা ও
কর্মচারীরা দু’টি প্রধান আওয়ামী ও
জাতীয়তাবাদী ধারায় বিভক্ত। কিছু দিন আগে প্রধানমন্ত্রী সচিবদের সাথে সচিবালয়ে
মতবিনিময়কালে অন্তত চারজন সচিব উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার জন্য আওয়ামী লীগকে
দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসতে হবে বললে প্রধানমন্ত্রী তাদের সেভাবে কাজ করতে বলেন।
এ চারজনসহ আওয়ামী শিবিরের প্রতি অনুগত আরো বেশ কিছু সচিব রয়েছে যারা শুধু দলবাজই
নয় দুর্নীতিগ্রস্তও। এদের নিরপেক্ষতা কিভাবে নিশ্চিত করা হবে সে বিষয়ে নির্বাচন
কমিশন কি কোনো উপায় উদ্ভাবন করেছে? একটি
বিশেষায়িত মন্ত্রণালয়ে সচিব নিয়োগে জ্যেষ্ঠ প্রায় ২০০ কর্মকর্তার মেধা, দক্ষতা, সততা
উপেক্ষিত হওয়াসহ অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের সচিব নিয়োগেও অতিক্রান্তের ঘটনা ঘটেছে। উভয়
ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণে সৎ, যোগ্য
ও দক্ষ কর্মকর্তাদের পদায়নে এবং দলবাজ ও দুর্নীতিগ্রস্তদের বিতাড়নে নির্বাচন কমিশন
কী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে তা দেখার জন্য দেশবাসী অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।
নির্বাচনকালীন
৯০ দিন সময়ে উপনীত হওয়ার পর এবং তফসিল ঘোষণার পরও দেখা যাচ্ছে পূর্বের যারা
বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, জেলা পুলিশ সুপার ও থানার ভারপ্রাপ্ত
কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন তাদের সবাই নিজ পদে বহাল রয়েছেন। এরা
নির্বাচনসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এবং অবাধ, সুষ্ঠু
ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান ও পরিচালনায় এদের দায়িত্ব অপরিসীম।
উপরে
বর্ণিত কর্মকর্তাদের সম্পর্কে যতটুকু ধারণা পাওয়া গেছে, তাতে প্রতীয়মান হয় এরা দলীয় সরকারের
আনুকূল্যে অনুগত হিসেবে বিশেষ বিবেচনায় নিয়োগ পেয়েছেন। এ অবস্থায়ই দেখা গেল
নির্বাচন কমিশন থেকে পত্র দেয়া হয়েছে নির্বাচনসংশ্লিষ্ট কোনো কর্মকর্তাকে বদলি করা
যাবে না। স্বভাবতই প্রশ্ন দেখা দেয়, নির্বাচন
ইনকুসিভ দূরের কথা এক্সকুসিভ হলেও লেজুড়বিত্তি ও গৃহপালিতের ভূমিকায় অবতীর্ণের
নিমিত্ত ক্ষমতাসীন দলের বাইরে যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন তাদের জন্য কি
সমসুযোগ সম্বলিত মাঠ নিশ্চিত করা যাবে?
নির্বাচন
কমিশনের পক্ষ থেকে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২
এ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞায় বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা বাহিনীগুলো অন্তর্ভুক্ত না
হওয়া সত্ত্বেও প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যদের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠানের বেশ কিছুকাল আগেই
আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে নিয়োজিত করার জন্য উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। প্রতিরক্ষা
বাহিনীগুলো জাতীয় প্রতিষ্ঠান এবং জাতীয় ঐক্য ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক। তারা দেশে নয়
বিদেশেও শান্তিরক্ষী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশকে সম্মান ও
মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এক্সকুসিভ নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রতিরক্ষা
বাহিনীগুলোকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে নিয়োজিত করা হলে প্রশ্ন দেখা দেবে দেশের বৃহৎ
বিরোধী দল এবং এর জোটভুক্ত দলগুলোর বর্জনের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে সহযোগিতা
করে তারা কাদের বৈধতা দেয়ার প্রয়াস নিচ্ছেন? এ
ধরনের প্রয়াস তাদের ভাবমর্যাদা যে ম্লান করবে এ কথাটি বিবেচনায় নিয়ে এক্সকুসিভ
নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রতিরক্ষা বাহিনীগুলোর মোতায়েন না হওয়াই তাদের ও দেশের উভয়ের
জন্য মঙ্গলজনক। এখানে উল্লেখ্য যে, নির্বাচন
এক্সকুসিভ বা ইনকুসিভ যা-ই হোক না কেন, নির্বাচন
কমিশন না চাইলে সরকারের পক্ষে নির্বাচনের শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় প্রতিরক্ষা
বাহিনীগুলোর নিয়োজিত করার কোনো সুযোগ নেই। ইতোপূর্বে দেখা গেছে, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে সেনা
মোতায়েন যৌক্তিক ভেবে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক সরকারকে অনুরোধ করা হলেও সে অনুরোধ
প্রত্যাখ্যাত হয়েছিল। সে সময়ের নির্বাচন কমিশন তখন সরকারের বিরুদ্ধে সংবিধান
লঙ্ঘনের অভিযোগ উত্থাপন করেছিল। পূর্বের এ অভিজ্ঞতাটির আলোকে এক্সকুসিভ নির্বাচনের
ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের পক্ষে কোনোভাবেই প্রতিরক্ষা বাহিনীগুলোকে আইনশৃঙ্খলা
রক্ষায় নিয়োজিত করার ব্যাপারে সরকারের বরাবরে অনুরোধ বাস্তবসম্মত হবে না। তা ছাড়া
প্রধান বিরোধী দলের অংশগ্রহণ ব্যতীত এক্সকুসিভ নির্বাচন গণতন্ত্রের রীতি অনুযায়ী
আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হিসেবে বিবেচনার সুযোগ না থাকায় প্রতিরক্ষা
বাহিনীগুলোর মোতায়েন উভয়কে একযোগে বিতর্কিত করার অবকাশ সৃষ্টি করবে।
তফসিল
ঘোষণার সময় প্রধান নির্বাচন কমিশনারের ভাষণ বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে প্রচারকালীন
দেখা গেছে, তার পেছনে বাম দিকে নির্বাচন
কমিশনের পতাকা এবং ডান দিকে জাতীয় পতাকা উড্ডীন ছিল। সংবিধান অনুযায়ী জাতীয়
পতাকাসংক্রান্ত বিধানাবলি আইন দ্বারা নির্ধারিত হয়ে থাকে। সংবিধানে যেকোনো বিধি
আইনের অন্তর্ভুক্ত মর্মে উল্লেখ রয়েছে। সাংবিধানিক পদধারী কারা গাড়িতে এবং
অফিসকক্ষে জাতীয় পতাকা উড়াতে পারবেন তা পতাকা আইনে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে।
পতাকা আইনে এ বিষয়ে যে তালিকা দেয়া আছে তাতে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের নাম
অন্তর্ভুক্ত নেই। তাই দেশবাসীর প্রশ্নÑ ভাষণ
দানকালীন তিনি কী করে সংবিধান ও আইনের লঙ্ঘন করেছেন? আর তফসিল ঘোষণার মাধ্যমে নির্বাচনী কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে
শুরু হওয়ার সন্ধিক্ষণে তার দ্বারা সংবিধান ও আইনের লঙ্ঘন কী করে নিশ্চয়তা দেয় যে, তিনি পরবর্তীতে এক্সকুসিভ বা ইনকুসিভ
যেকোনো ধরনের নির্বাচনের ক্ষেত্রে সবার জন্য সমসুযোগ সম্বলিত মাঠের ব্যবস্থা করতে
পারবেন?
নির্বাচনকালীন
সরকার পৃথিবীর সব সংসদীয় গণতান্ত্রিক দেশে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে স্বল্পসংখ্যক
সদস্য সমন্বয়ে গঠিত হয়ে থাকে। ২৯ সদস্য সমন্বয়ে গঠিত বর্তমান নির্বাচনকালীন
সরকারকে স্বল্পসংখ্যক সদস্য সমন্বয়ে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার কি বলা যাবে? পৃথিবীর অন্যান্য দেশে নির্বাচনকালীন
অন্তর্বর্তী সরকার দৈনন্দিন কাজ ব্যতীত কোনো নীতিনির্ধারণী কাজ করে না। কিন্তু
আমাদের এখানে দেখা গেল নির্বাচনকালীন সরকার অন্তর্বর্তী রূপ তো নেয়-ই-নি বরং
রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয়ে সংবিধানের ব্যত্যয়ে অনির্বাচিত চারজন রাজনৈতিক ব্যক্তিকে
প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
এ
বিষয়ে প্রশ্নÑ প্রথমত, এ নিয়োগের সুযোগ কোথায় এবং দ্বিতীয়ত, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রীর
দায়িত্বের সাথে এ ধরনের উপদেষ্টা নিয়োগ সাংঘর্ষিক নয় কি? এ ধরনের উপদেষ্টা নির্বাচনের নিরপেক্ষতার
ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তাই এ বিষয়ে দেশবাসী নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে
সুস্পষ্ট ইতিবাচক অবস্থান প্রত্যাশা করে। তা ছাড়া ইতোপূর্বে এ সব উপদেষ্টার দেখা
গেছে মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনকালীন দেশের স্বার্থের চেয়ে নিজ স্বার্থকে
প্রাধান্য দিয়েছেন। তাই প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা হিসেবে নিজ স্বার্থ সংরক্ষণ
ব্যতীত এরা দেশের জন্য যে কোনো অবদান রাখতে পারবেন না এ বিষয়ে দেশবাসী নিশ্চিত।
নির্বাচনের
তফসিল ঘোষণার পরও দেখা যাচ্ছে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন সভা-সমাবেশ ও
শোভাযাত্রার মাধ্যমে এক দিকে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন অপর দিকে প্রধান
বিরোধী জোটের নির্বাচন বর্জনের ঘোষণাকে অযৌক্তিক প্রমাণের প্রয়াস নিচ্ছেন। তাদের এ
ধরনের কর্মকাণ্ডে প্রতিরক্ষা বাহিনীগুলো ব্যতীত অপরাপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর
কার্যক্রম তাদের জন্য অনুকূল এবং তাদের বিরোধীদের জন্য প্রতিকূল এমনই দেখা যাচ্ছে।
এক্সকুসিভ
বা ইনকুসিভ উভয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে সব অংশগ্রহণকারী দলের জন্য সমসুযোগ সম্বলিত
মাঠের ব্যবস্থা করতে হলে নির্বাচন কমিশন যে প্রকৃতই স্বাধীন, নিরপেক্ষ এবং দক্ষ এর প্রমাণ তাদের রাখতে
হবে। কিন্তু তাদের কার্যক্রম দেখলে প্রতীয়মান হয়, এ যাবৎকাল পর্যন্ত এ ধরনের কোনো প্রমাণ তারা রাখতে পারেননি।
তাই বর্তমান নির্বাচন কমিশন যে সব প্রতিদ্বন্দ্বী দলের জন্য এক্সকুসিভ বা ইনকুসিভ
উভয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে সমসুযোগ সম্বলিত মাঠের বা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের ব্যবস্থা
করে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান ও পরিচালনায় অপারগ তা নিয়ে কি আর বিতর্কের অবকাশ আছে?
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন