বাংলাদেশ এখন চরম
অশান্তির ভেতর দিয়ে অতিবাহিত করছে। সারা দেশে আগুন জ্বলছে। দেশের যোগাযোগব্যবস্থা
ভেঙে পড়েছে। রাজধানী ঢাকা ছাড়া আর কোথাও সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেই। প্রখ্যাত প্রবীণ
সাংবাদিক এবিএম মূসা বলেছেন, শেখ হাসিনা ‘এখন রিপাবলিক অব ঢাকার প্রধানমন্ত্রী।’ তিনি ও তার সমর্থকেরা বলছেন, সব কিছু স্বাভাবিক এবং সরকারের নিয়ন্ত্রণে
আছে। সরকারে থাকলে নাকি নাকের ডগার ওপর মাছি বসলেও বোঝা যায় না। দেশ আগুনে জ্বলুক, মানুষ মরুক, গদি ঠিক থাকলেই চলে।
দেশ
ঠিকভাবে চলছে না; এটা সারা দেশের মানুষ জানে।
শুধু জানেন না প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভা। অতীতে অনেকেই বাস্তবতা উপলব্ধি করেননি।
কয়েক মাস ধরে নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা নিয়ে আলাপ-আলোচনা ও সমঝোতার জন্য
বন্ধুরাষ্ট্রগুলো কম চেষ্টা করেনি। কিছুতেই কিছু হয়নি। কারণ প্রধানমন্ত্রী বলে
দিয়েছেন, তিনি সংবিধানের বাইরে এক
চুলও নড়বেন না। অথচ সংবিধানটি সংশোধন করেছে তার দল একা এবং কারো মতামত না নিয়ে।
তিনি একাই নাকি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সারা দেশের মানুষ বলছে, এ সংশোধনী আনা ঠিক হয়নি। কিন্তু ‘গণতন্ত্র গণতন্ত্র’ বলে মুখের ফেনা তুলে ফেলেছে এ সরকার।
জাতিসঙ্ঘের মহাসচিবের বিশেষ দূত তারানকো এর আগেও এসেছেন সমঝোতার পথ খুঁজে বের
করতে। কিন্তু কোনো সমঝোতা হয়নি। মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা বিসওয়াল
এসেও চেষ্টা করেছেন। লোকে বলে, প্রধানমন্ত্রী নাকি
মার্কিন রাষ্ট্রদূত মজিনাকে দেখা করার অনুমতি দেননি ছয় মাস ধরে। আমরা তো সমঝোতার
কোনো পথ দেখছি না। সাংবাদিক মূসা সাহেব বলেছিলেন, ‘সমস্যার সমাধান রাস্তাতেই হবে। আলোচনায় কিছু হবে না।’
আওয়ামী
ঘরানার বুদ্ধিজীবী, লেখক, কবি, সাংবাদিক
ও শিকেরা মনে করেন, বিষয়টি নির্বাচন নয়।
বিষয়টি হচ্ছে আদর্শগত। তারা মনে করেন, আওয়ামী
লীগ ও তার ঘরানার লোকেরা মুক্তিযুদ্ধের সপরে লোক আর বাকিরা সবাই মুক্তিযুদ্ধের
বিরোধী। যদি ধরে নিই যে, আওয়ামী জোট ৪০ শতাংশ
ভোট পায়, তাহলে ৬০ শতাংশ ভোট কারা পায়? ৬০ শতাংশ ভোটারের ক’জন মুক্তিযুদ্ধবিরোধী? শুনেছি, ভারতও
মনে করে, আওয়ামী লীগ ছাড়া বাকিরা
ভারতের বন্ধু নয়। তাই ভারত চায়, যেভাবেই হোক, আওয়ামী লীগ ভোটে জিতুক। কাদের সিদ্দিকী
বলেছেন, দিল্লি শেখ হাসিনাকে
ভালোবাসলেও মতায় বসাতে পারবে না। ক’দিন
আগে সুজাতা সিং এসেছিলেন শেখ হাসিনার অধীনেই সব দলকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করানোর
জন্য। তিনি জেনারেল এরশাদকে বলেছেন, ‘নির্বাচনে
অংশ না নিলে জামায়াত মতায় চলে আসবে।’ কিন্তু
তিনি কোনো দলকেই রাজি করাতে পারেননি।
নির্বাচনকালীন
সরকারের ধরন ও প্রকৃতি নিয়ে বাংলাদেশ এখন মহাটালমাটাল অবস্থায় নিপতিত। দেশের
প্রধান বিরোধী দল ও তার জোট নির্দলীয় নির্বাচনী সরকার না হলে নির্বাচনে যাবে না
বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে। তরিকত ফেডারেশন নামের একটি ুদ্র ধর্মীয় গ্রুপ নির্বাচনে
অংশ নেবে বলে জানিয়েছে। এদের একটি ম্যাগাজিন আছে যার সম্পাদক একজন বিদেশী মহিলা, নাম মাসুদা ভাট্টি। অভিযোগ আছে, ইনি ভারতের সাথে যোগাযোগ রা করেন। অপর দিকে
মতাসীন আওয়ামী লীগ ও তার জোট কথিত গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখা এবং সংবিধানের
দোহাই দিয়ে একতরফা নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বাহ্যত দলের বা জোটের সিদ্ধান্ত
বলে মনে হলেও প্রধানমন্ত্রীই নাকি কারো কথা বা পরামর্শ না শুনে একাই নির্বাচন করার
জন্য গোঁ ধরেছেন। তাই তিনি একতরফা নির্বাচনের পথে এগিয়ে যাচ্ছেন। টিভি টকশোতে
দেখলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামী
ঘরানার একজন শিক যিনি তার দলের পে সাফাই গাইবার জন্য নিয়মিত টকশোতে আসেন, তিনি একটি সত্য কথা বলে ফেলেছেন। কৌশলগত
কারণে হলেও তার এমন কথা বলা উচিত হয়নি। শিক মহোদয় বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী এখন যদি বিরোধী দলের দাবি
মেনে নেন, তা হলে নির্বাচনের আগেই তার
দলের পরাজয় হয়ে যাবে। তাই এ সময়ে দাবি মানা তার পে অসম্ভব। প্রধানমন্ত্রী তার
অবস্থান থেকে এক চুলও নড়বেন না। প্রধানমন্ত্রীর অবস্থানের সমর্থনে নির্বাচন কমিশন
তড়িঘড়ি করে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করেছেন। অথচ বিএনপি ও ১৮ দলীয় জোট বলেছিল, বিনা সমঝোতায় তফসিল ঘোষণা করলে তারা কঠোর
আন্দোলনে যাবেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছিলেন, তিনি সমঝোতার জন্য অপো করবেন। কারণ তিনি একটি শান্তিপূর্ণ
নির্বাচন দেখতে চান। তিনি চান সব দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক। কিন্তু দেখা গেল, তিনি তার কথা রাখতে পারেননি। তফসিল ঘোষণার
পর জ্বালাও পোড়াও শুরু হয়ে গেলে তিনি বললেন, বিরোধী
দল নির্বাচনে অংশ নিলে তফসিল পরিবর্তন করবেন। ইতোমধ্যে সহিংস আন্দোলনের ফলে বহু
জীবন ঝরে গেছে, বহু সম্পদ ধ্বংস হয়ে গেছে।
কিন্তু সরকারের টনক নড়েনি। সরকার বিগত ৮-৯ মাসে আন্দোলনরত কয়েক শ’ মানুষকে হত্যা করে বিরোধী দলের নেত্রীকে
গণহত্যাকারী হিসেবে অভিযুক্ত করেছে।
প্রশ্ন
হলো, শেখ হাসিনা এমন ধ্বংসাত্মক
রাজনীতির পথে এগিয়ে গেলেন কেন? তিনি বারবার বলছেন, ‘আমি শান্তি চাই, মতা চাই না।’ এত প্রাণহানি আর সহ্য করতে পারছেন না। এ কথা বলে তিনি পবিত্র
ওমরাহ পালনের জন্য মক্কা শরিফ গেলেন আত্মীয়স্বজন নিয়ে। অনেকেই ধারণা করেছিলেন, ফিরে এসে মতা ত্যাগ অথবা বিরোধী দলের সাথে
ফলপ্রসূ আলোচনা শুরু করবেন। না, কিছুই হলো না। ওমরাহর
নমুনা হিসেবে মাথায় কালো আর সাদা রঙের ওমরাহ টুপি পরতে শুরু করেছেন। এর আগেও তিনি
নির্বাচনের আগে ওমরাহ বা হজ করে হিজাব পরেছেন। তার দলের লোকেরা প্রচার করেছেন, শেখ হাসিনা নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়
ও কুরআন তিলাওয়াত করে থাকেন। এমনকি তিনি তাহাজ্জুদের নামাজও পড়েন। কিন্তু আওয়ামী
বুদ্ধিজীবীরা এসব পছন্দ করেন না। তবে অনেকেই ভোটের কৌশল হিসেবে এমন আচরণ সমর্থন
করেন।
টকশোতে
দেখলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বহুল
পরিচিত অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলছেন,চলমান
রাজনীতিতে সমঝোতার কোনো সম্ভাবনা নেই। বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক সঙ্কটকে ছোট
ক্যানভাসে বা ছোট গণ্ডিতে দেখলে সমঝোতার কোনো প্রয়োজন নেই। দেশে-বিদেশে সবাই বলছেন, দেশের স্বার্থেই সমঝোতা দরকার ও অপরিহার্য।
কিন্তু অধ্যাপক মামুন তা মনে করেন না। তিনি বিষয়টিকে দেখছেন তার নিজস্ব রাজনৈতিক
আদর্শের দিক থেকে। তিনি বলছেন, এ সঙ্কট নির্বাচনী বা
দলীয় সঙ্কট নয়। আদর্শগত কারণেই নাকি এ সঙ্কট দেখা দিয়েছে। সে আদর্শ হচ্ছে
মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ। তারা মনে করছেন, আওয়ামী
লীগ ও তার ঘরানার লোকেরা মুক্তিযুদ্ধের সপরে শক্তি আর বিএনপি ও ১৮ দলীয় জোট
মুক্তিযুদ্ধের বিপ বা মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তি। অনেকে কিছুতেই সমঝোতা চান না। একজন
মন্ত্রী তো বলেই দিয়েছেন, মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়ে
গেছে। সুতরাং তিনি মনে করেন, এই দুই বিপরীত
চিন্তাধারার মধ্যে সমঝোতার কোনো প্রশ্ন ওঠে না। মনে হলো, সমঝোতা না হলেই তিনি খুশি। মুনতাসীর মামুন
একটি বিখ্যাত শিতি পরিবারের সদস্য। আমার যতদূর মনে পড়ে, তার বাবা চট্টগ্রাম পোর্ট ট্রাস্টের সচিব
ছিলেন। সময়টা মনে হয়, ১৯৬২-৬৫ সালের দিকে।
তিনি খুবই বিনয়ী মানুষ ছিলেন। এ কারণে তার সাথে আমার খুবই ভালো সম্পর্ক ছিল। তার
চাচা প্রেসিডেন্ট জিয়ার একান্ত অনুগত সাবেক আমলা ও মন্ত্রী, মহীউদ্দীন খান আলমগীর ফেনীর বিখ্যাত
রাজনীতিক ও সমাজসেবক খাজা আহমদ সাহেবের ভাতিজি জামাই। খাজা সাহেবেরাও বিখ্যাত
পরিবারের সদস্য। মুনতাসীর মামুন নাকি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে পারেননি। ওই সময়ে
তিনি রাজধানী ঢাকায়ই ছিলেন। কিন্তু তাতে কী আসে-যায়, এখন তার ভেতর মুক্তিযুদ্ধের চেয়ে ‘কয়েক হাজার গুণ বেশি’ চেতনা আছে। এখন তো চার দিকে শুনি, মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করা বড় বিষয় নয়, চেতনা থাকাটা জরুরি। ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’ বলতে এসব অমুক্তিযোদ্ধার অনেকে মূলত ধর্মের
বিরুদ্ধে কথা বলেন। আমরা বলে থাকি, বাংলাদেশের
৯০ শতাংশ মুসলমান এবং সে জন্যই দেশটি স্বাধীন হতে পেরেছে। পাকিস্তান থেকে বেরিয়ে
এসেছে ধর্মত্যাগ করার জন্য নয়। কিন্তু ‘চেতনা’বাদীরা প্রচার করেন, বাংলাদেশ ‘বাঙালি’দের দেশ। ইসলাম বা
মুসলমানিত্ব এখানে মূল বিষয় নয়। এর পেছনে একটা গভীর ষড়যন্ত্র আছে। অনেকের মতে, ভারত চায় বাংলাদেশের জনগণের ধর্মীয় চেতনাটা
ধীরে ধীরে লোপ পাক এবং কালক্রমে তরুণ প্রজন্ম ধর্মহীন হয়ে পড়–ক। তখন বাংলাদেশের স্বাধীন অস্তিত্বই
হুমকির মুখে পড়বে। দিল্লির একটি সুদূরপ্রসারী দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা রয়েছে। ভারত
হয়তো মনে করে, বাংলাদেশে ইসলাম যদি আদর্শ
হিসেবে শক্তিশালী হয়, তা হলে একে ‘পোষ মানানো’ কঠিন হবে। এমনকি আমাদের পার্বত্য চট্টগ্রামকে আমাদের কাছ থেকে
কেড়ে নিয়ে পশ্চিমাদের সহযোগিতায় একটি খ্রিষ্টান রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায় কোনো কোনো
বহিঃশক্তি। যেমন, পশ্চিমারা ইন্দোনেশিয়ার একটি
দ্বীপে গোলযোগ লাগিয়ে সে দ্বীপকে স্বাধীন করেছে। কারণ দ্বীপটি খ্রিষ্টান অধ্যুষিত
ছিল। আওয়ামী লীগ ও তার বুদ্ধিদাতারা এখন যা করছেন, তাতে আগামী ৫০ বছরে এ দেশের স্বাধীনতা কতটুকু থাকে আল্লাহই
জানেন। আসলে অসচেতন কোনো জাতির স্বাধীনতা থাকে না। এ ব্যাপারে ভারতেরও একটা
অবস্থান আছে, যা ভারত স্পষ্ট করতে চায় না।
হয়তো কালক্রমে করবে। ভারত মনে করে, তারা
সমর্থন না করলে বাংলাদেশ স্বাধীন হতোনা ন’মাসে
এবং মুক্তিযুদ্ধ একটা দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধে পরিণত হতো। যেমন, কাশ্মির ও ফিলিস্তিনে যুদ্ধ চলছে। এমনকি
ভারতের পূর্বাঞ্চলেও স্বাধীনতা আন্দোলন চলছে। শেখ হাসিনা আজ না বুঝেই ভারতের
খপ্পরে পড়েছেন। যা হোক, গওহর রিজভীর নাম আমরা
হঠাৎ শুনতে পেয়েছি। ইনি উড়ে এসে জুড়ে বসেছেন। ভদ্রলোককে এনেছেন প্রধানমন্ত্রীর
ছেলে জয়। ইনি একজন আন্তর্জাতিক এনজিও আমলা। ভাড়া খাটা তার কাজ।
আমরা
বিশ্বাস করি, ভারতীয় লবির কিছু কবি-সাহিত্যিক, শিক, বুদ্ধিজীবী
ছাড়া বাংলাদেশের ১০০ ভাগ মানুষই দেশের স্বাধীনতার জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত এবং
তারা ওই লবির বিরুদ্ধে লড়াই করে যাচ্ছেন। মুক্তিযুদ্ধ দেখেছি এবং এর ভেতরেই ছিলাম।
এর আগে অনেকবার বলেছি, ১৯৭১ সালে হিংস্র এবং
রাজনৈতিক জ্ঞান ও বিবেকবর্জিত পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও তাদের দোসরদের হাত থেকে
বাঁচার জন্য অনেকেই পালিয়ে বেড়িয়েছেন। আবার অনেক বন্ধু পাকিস্তানিদের সহযোগিতা
করতে বাধ্য হয়েছেন পালাতে না পেরে। যেমন জামায়াতের তৎকালীন এক নেতা খুররম মুরাদ
সাহায্য করেছেন শ্রদ্ধেয় আবুল মনসুর আহমদ সাহেবের ছেলে মাহফুজ আনামকে। তিনি খুররম
মুরাদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। সেই সময়ে মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন বহু মানুষ একে
অপরকে সাহায্য করেছেন। এ রকম বহু ঘটনা আছে। আবার অনেকেই নিষ্ঠুরতার শিকার হয়েছেন।
অনেক গবেষক বলেছেন, যুদ্ধকালে নিষ্ঠুরতা
কমবেশি উভয় দিক থেকে ওয়াই স্বাভাবিক। এক দল জিতেছে, আরেক দল হেরে গেছে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ১৯৩ জন
যুদ্ধাপরাধীকে বঙ্গবন্ধু ছেড়ে দিয়েছিলেন আন্তর্জাতিক চাপের কারণে; তেমনি বাংলাদেশে স্থায়ী বাসিন্দা কিছু
বাঙালি যুদ্ধাপরাধী ছিল যাদের কোনো বিচার বঙ্গবন্ধু করেননি জাতীয় ঐক্য ও সংহতির
জন্য। জিয়াউর রহমান ও জাতীয় ঐক্য ও সংহতির রাজনীতি করেছেন। ১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠিত
তার রাজনৈতিক দল বিএনপি আজ জাতীয়তাবাদী ইসলামি শক্তির প্রতীক। দেশের কোটি কোটি
মানুষ এ দলকে সমর্থন করে। নির্বাচনে এটা বারবার প্রমাণিত হয়েছে। বাংলাদেশের
জনসংখ্যার ৯০ ভাগ মুসলমান। তবে কিছু আরবি নামধারী মানুষ ইসলাম ও মুসলমানের
বিরুদ্ধে গোপনে অবস্থান নিয়েছেন। এদের বেশির ভাগই শিতি ও নিজেদের কথিত সেকুলার (ধর্মহীন)
বলে উচ্চকণ্ঠে প্রচার করে থাকেন। এদের মধ্যে বেশ কিছু ভালো মানুষও আছেন, কিন্তু তারা বিভ্রান্ত। এদের অনেকেই বলে
থাকেন, ‘আমরা মুসলমান, আল্লাহ রাসূলে বিশ্বাস করি। কিন্তু
ধর্মচর্চা করি না বা ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করি না।’ তবে একেবারেই ইসলামে বিশ্বাস করে না এমন লোকও কয়েক শ’ থাকতে পারেন। এরা কখনোই প্রকাশ্যে ইসলামের
বিরোধিতা করেন না।
আমি
নিজেও পুরো যৌবনকাল বাম চিন্তাধারার সাথে জড়িত ছিলাম। আমার কিছু শিকের প্রভাবে পড়ে
মনে করতাম, সমাজতন্ত্র কায়েম হলে
মানুষের দুঃখ-দুর্দশা দূর হবে। তবে কখনোই ধর্মবিরোধী ছিলাম না। মওলানা ভাসানীর
ইসলামি সমাজতন্ত্র ও হক্কুল এবাদে বিশ্বাস করতাম। এখনো ইসলামি সমাজতন্ত্রে বিশ্বাস
করি। আমি হজরত আবু জর গিফারি রা:-এর একজন ভক্ত। বিশ্বাস করি, ইসলাম একটি বিপ্লবী ধর্ম। কার্ল মার্কস এবং
এম এন রায়ও বলেছেন, ইসলাম একটি রেডিক্যাল
ধর্ম।
আমার
আজকের বিষয় হলো, চলমান সঙ্কটের সমাধানের জন্য
একটা সমঝোতা। দেশবাসী সমঝোতা চায়। এর সমাধান শেখ হাসিনার হাতেই। কিন্তু তিনি এমন
আচরণ করছেন, যা দেশকে সঙ্ঘাতের দিকে ঠেলে
দিয়েছে। জাতিসঙ্ঘ ও বিশ্বের সব মিত্র দেশ নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে একটা উইন ‘উইন সিচুয়েশন’ চায়। সে পথ অবশ্যই আমাদের খুঁজে বের করতে
হবে। নির্বাচন হতেই হবে। জরুরি অবস্থাও নয়, সামরিক
হস্তপেও নয়। নিশ্চয়ই সমাধান আছে। তবে এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীকেই বেশি ছাড় দিতে
হবে। তাকে অনুরোধ করব, শিকড়বিহীন দালাল
বুদ্ধিজীবীদের খপ্পরে পড়ে নিজের পারিবারিক ঐতিহ্য ধ্বংস করবেন না। দেশের একটি
বৃহত্তম জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক দলের নেত্রী বেগম জিয়াকে অনুরোধ করব, কিছুটা হলেও নমনীয় হোন এবং নির্বাচন করুন।
যদি আপনারা সমঝোতার পথ খুঁজে না পান, সবচেয়ে
বেশি তিগ্রস্ত হবে বাংলাদেশ। তখন আমরা বিশ্ববাসী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ব।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন