নির্বাচনকালীন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় আগামী ২৬ ডিসেম্বর থেকে সরকার দেশব্যাপী সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন বলে জানা গেছে। আগামী বছর ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত এই বাহিনী মাঠে অবস্থান করবেন। পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত খবরানুযায়ী গত শুক্রবার বিকেলে নির্বাচন কমিশনের নির্বাচনী আইন-শৃঙ্খলা বিষয়ক বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার জনাব কাজী রকিবউদ্দিন আহমদ সাংবাদিকদের বলেছেন যে, নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ করতে সশস্ত্র বাহিনী কাজ করবে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং ডিসিদের (রিটার্নিং অফিসার) পরামর্শে সেনা মোতায়েনের এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি আরো জানিয়েছেন যে, পরিস্থিতি মোকাবেলায় ইতোমধ্যেই কোন কোন জেলায় সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। তিনি বলেছেন, ২২ ডিসেম্বর থেকে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও সন্ত্রাসী গ্রেফতারসহ সব ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে। প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী অপরাধীদের তাৎক্ষণিক শাস্তির ব্যবস্থা করতে সেনাবাহিনী ও বিজিবি’র সঙ্গে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা কাজ করবেন এবং যেসব প্রার্থী নিরাপত্তা চেয়ে আবেদন করেছেন তাদেরও নিরাপত্তা দেয়া হবে।
আমরা একতরফা ও পাতানো নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের সরকারি সিদ্ধান্তকে জনগণের ভোটাধিকার হরণ এবং সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথে আরো একটা পদক্ষেপ বলে মনে করি। ৩০০ আসনের একটি জাতীয় নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ১৫৪টি আসনে একটি দলের সংসদ প্রার্থীদের বিজয়ী হওয়া সংসদীয় গণতন্ত্র ও নির্বাচনের ইতিহাসে একটি বিরাট পরিহাস ছাড়া আর কিছুই হতে পারে না। জামায়াত, বিএনপিসহ ১৮ দলীয় জোট এবং ক্ষমতাসীন মহাজোটের অন্যতম অঙ্গ জাতীয় পার্টির বৃহত্তর অংশ সরকারের পাতানো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে না। জাতীয় পার্টি প্রধান জেনারেল এরশাদ তার দলীয় প্রার্থীদের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের নির্দেশ দেয়ার পর অন্যায়ভাবে তাকে গ্রেফতার করে সিএমএইচ-এ বন্দী করে রাখা হয়েছে। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের পরও টেকনিক্যাল ত্রুটির দোহাই দিয়ে সরকারি নির্দেশে নির্বাচন কমিশন তাদের প্রার্থিতা বহাল রেখেছেন। ভয়, ভীতি, প্রলোভন সরকারিভাবে নির্বাচনের হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে। এ অবস্থায় বিরোধীদলগুলো নির্বাচন প্রত্যাখ্যান নয়, নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছে। সাধারণ ভোটাররাও সরকারের এই পাতানো নির্বাচনে ইচ্ছুক নয়। ১৫৪টি আসনে বিনা ভোটে এমপি নির্বাচিত হবার ঘটনা এবং দেশব্যাপী বিরোধী দলের ডাকে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অবরোধ ও হরতাল পালন সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করে যে, দেশের মানুষ নির্বাচনের নামে সরকারের প্রতারণায় বিশ্বাস করে না। সরকারের ক্ষমতার লোভ, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা, নির্যাতন, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস, হত্যা, গুম, অগ্নিসংযোগ এবং যৌথবাহিনীর তল্লাশির নামে বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মীদের যেভাবে হত্যা ও নির্যাতন করা হচ্ছে এবং বুলডোজার দিয়ে তাদের বাড়িঘর গুঁড়িয়ে দেয়া হচ্ছে আমাদের দেশে এর নজির নেই। এটা শুধু সুশাসন, মানবতা ও গণতন্ত্রের চরম অবমাননা নয়, নিকৃষ্টমানের মানবতাবিরোধী অপরাধও। এসব তৎপরতায় এবং জনগণ ও বিরোধী সব রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীকে জড়িত করা হোক তা কাম্য নয় এবং তা কেউ চাচ্ছেও না। যে নির্বাচনে ভোটারদের ভোটাধিকার প্রয়োগ ছাড়াই ১৫৪ জন তথা ৫১ শতাংশেরও বেশী প্রার্থী নির্বাচিত হয়ে যান সেই নির্বাচন গণতন্ত্রের দৃষ্টিতে নির্বাচন বলে গণ্য হতে পারে না, এটা নির্বাচনের নামে কলঙ্ক। বিদ্যমান অবস্থায় ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৪টি আসনে বিনা ভোটে প্রার্থী নির্বাচিত হওয়ায় ১৪৬টি পাতানো আসনে সরকার আগামী ৫ জানুয়ারি নির্বাচন করতে যাচ্ছেন এবং এই নির্বাচনে সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে আমাদের সেনাবাহিনীর ভাবমর্যাদা ক্ষুণœ হবে বলে আমরা মনে করি। সেনাবাহিনী সরকারকে সাহায্য করবেন এটা যেমন সত্য, তেমনি জনগণের মুখোমুখি হয়ে সরকার কর্তৃক তাদের ভোটাধিকার হরণ এবং মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘনের ক্ষেত্রেও তারা সরকারকে সহায়তা করে অমানবিক তৎপরতায় অংশ নিবেনÑ এটা কারো কাম্য হতে পারে না। সেনাবাহিনীকে আমরা জনগণের বন্ধু এবং স্বাধীনতার রক্ষক বলে মনে করি। এই অবস্থার প্রেক্ষাপটে নির্বাচনী তৎপরতা বন্ধ করে নতুন সিডিউল ঘোষণা করে সব দলের অংশগ্রহণে সেনা তত্ত্বাবধানে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আমরা সরকারকে আহ্বান জানাচ্ছি।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন