দশম জাতীয় সংসদের নির্বাচন নিয়ে সব মিলিয়ে যা শুরু হয়েছে তাকে তামাশা ও রসিকতা কিংবা ব্যঙ্গাত্মক নাটক ধরনের কোনো শব্দ দিয়েই বোঝানোর উপায় নেই। এমন অবস্থার একটি কারণ হিসেবে সকল মহলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ‘নির্বাচিত’ হওয়ার বিষয়টি ব্যাপকভাবে আলোচিত-সমালোচিত হচ্ছে। হতেই হবে। কারণ, ক্রিকেট খেলার মতো সেঞ্চুরির রেকর্ড স্থাপিত হয়েছে এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে। ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৪টি আসনেই দ্বিতীয় কোনো প্রার্থী পাওয়া যায়নি। সে কারণে একটি ‘ফুল’ বা সম্পূর্ণ এবং একটি ‘হাফ’ সেঞ্চুরির রেকর্ড তৈরি হয়েছে। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ১৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যা থেকে পরের দু’দিন পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন পালাক্রমে জানিয়েছে, কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় ১৫৪ জন প্রার্থী ‘বিজয়ী’ অর্থাৎ সংসদ সদস্য হিসেবে ‘নির্বাচিত’ হতে চলেছেন। ‘বিজয়ী’ প্রার্থীদের বেশির ভাগÑ ১২৭ জনই আওয়ামী লীগের। আওয়ামী মহাজোটের তথা ‘সর্বদলীয় সরকারে অংশ নেয়া দলগুলোরও কয়েকজন রয়েছেন। এদের মধ্যে ওয়ার্কার্স পার্টির দু’জন, ইনু জাসদের তিন জন এবং জাতীয় পার্টির (মঞ্জু) একজন ‘নির্বাচিত’ হয়েছেন। কৌতূহলোদ্দীপক ব্যতিক্রম ঘটানোর ক্ষেত্রেও যথেষ্টই দেখিয়েছেন ক্ষমতাসীনরা। যেমন রীতিমতো ঘোষণা দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেও এবং লিখিতভাবে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের জন্য আবেদন জানালেও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এবং এরশাদের ভাই ও সাবেক মন্ত্রী জিএম কাদেরের আবেদন বাতিল করেছেন রিটার্নিং অফিসাররা। অর্থাৎ নিজেরা না চাইলেও এরশাদ এবং তার ভাইকে জোর করেই এমপি বানানোর পদক্ষেপ নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। একইভাবে জাতীয় পার্টির অন্য ২১ জনও ‘বিজয়ী’ হয়েছেন! এখন প্রস্তুতি চলছে বাকি ১৪৬ আসনে নির্বাচন আয়োজন করার। সবকিছুর পেছনে যে ক্ষমতাসীনদের ইচ্ছাই কাজ করেছে সে সম্পর্কে জানতে বাকি নেই সাধারণ মানুষেরও। ঘটনাপ্রবাহে ক্ষমতাসীনদের পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনকে নিয়েও তুমুল সমালোচনা চলছে। কারণ, অভিযোগ উঠেছে, ‘অথর্ব’, ‘মেরুদ-হীন’ এবং ‘সেবাদাস’ হিসেবে চিহ্নিত কমিশনই আসলে দশম সংসদ নির্বাচনকে তামাশার বিষয়ে পরিণত করে ছেড়েছে। এমন মন্তব্য অযথা করা হয়নি। উদাহরণ দিতে গিয়ে বলা হচ্ছে, কোনো প্রার্থী বা দল আইন লংঘন করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া দূরের কথা, ইসি নিজেই নির্বাচনী আইন মানছে না। যেমন আইন হলো, কোনো দল নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালে সে দলের সব প্রার্থীর প্রার্থিতাও স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যাবে। সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এটিএম শামসুল হুদার উদ্ধৃতি দিয়ে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, এই আইন অনুযায়ী এরশাদ নিজে যেহেতু চিঠি দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন সেহেতু জাতীয় পার্টির সব প্রার্থীর মনোনয়নপত্রই বাতিল হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু সেটা না করে উল্টো সিইসি বলেছেন, প্রত্যেক ব্যক্তি-প্রার্থীর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন সংশ্লিষ্ট এলাকার রিটার্নিং অফিসাররা। বলাবাহুল্য, আইনের এমন ব্যাখ্যা কেবল সেবাদাসদের পক্ষেই দেয়া সম্ভব। কারণ, ব্যক্তি-প্রার্থীর ব্যাপারে পৃথকভাবে সিদ্ধান্ত নেয়ার সুযোগ থাকলে ইসির পক্ষ থেকে বিভিন্ন দলকে নিবন্ধন ও প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হতো না। এটা দেয়ার উদ্দেশ্যই হলো, যাতে কোনো ব্যক্তি-প্রার্থী বিশেষ কোনো দলের প্রতীক ও নাম ব্যবহার করে নির্বাচনে না দাঁড়াতে পারেন। কিন্তু জাতীয় পার্টির বিদ্রোহী প্রার্থীদের ক্ষেত্রে কমিশন মূল একটি আইনই লংঘন করেছে। কথা শুধু এটুকুই নয়। আওয়ামী লীগের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ‘নির্বাচিত’ সর্বশেষ তিন জনের বেলায় দেখা গেছে, দলটির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান এইচ টি ইমামের বেআইনী চিঠির ভিত্তিতে ইসি তাদের ‘নির্বাচিত’ ঘোষণা করেছে। এই চিঠি এইচ টি ইমাম পাঠিয়েছেন পেছনের তারিখ দিয়ে। উল্লেখ্য, এ তিন জনকে মিলিয়েই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ‘নির্বাচিত’দের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৫৪।
এভাবেই সম্ভাবনাময় এবং গণতন্ত্রের ও জাতীয় স্বার্থে প্রয়োজনীয় একটি নির্বাচনকে ছেলেখেলার বিষয় বানানোর কর্মকা- চালানো হচ্ছে। সরকারি দল নিজেদের ইচ্ছামতো কাটাছেঁড়া করা সংবিধানকে আঁকড়ে ধরায় এবং সে সংবিধানের ভিত্তিতে কথিত সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষার দোহাই দেয়ার ফলেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ‘নির্বাচিত’ হওয়ার ধুম পড়ে গেছে। অন্যদিকে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ ১৮ দলীয় জোট এই নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে। বিরোধী দলগুলো শুধু ঘোষণা দিয়ে বসে থাকেনি, দিনের পর দিন ধরে অবরোধও চালিয়ে যাচ্ছে। জনগণ সর্বান্তকরণে সমর্থন করায় ও অংশ নেয়ায় অবরোধে অচল হয়ে পড়েছে সারা দেশ। প্রশাসন ভেঙ্গে পড়েছে। ঘটনাপ্রবাহে অনেকেরই ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন অবস্থার কথা মনে পড়ছে। অথচ বিরোধী দলের দাবি ও প্রস্তাব মেনে নিলে সহজেই এমন অবস্থা এড়ানো যেতো। দেশে সত্যি উন্নয়নের জোয়ার বইয়ে দিয়ে থাকলে এবং ভোট পাওয়ার ব্যাপারে সামান্য আশা ও সম্ভাবনা থাকলেও সে পথেই পা বাড়াতেন ক্ষমতাসীনরা। অন্যদিকে প্রকৃত পরিস্থিতি তাদের বিপরীতে এবং কল্পনার অনেক বাইরে চলে গেছে বলেই তারা এমনকি জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূত অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকোকে পর্যন্ত খালি হাতে ফিরিয়ে দিয়েছেন। মহাসচিব বান কি মুন এবং মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির আহ্বান ও পরামর্শেও সাড়া দেননি প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী ও তার সঙ্গী-সাথীরা বরং এমন এক নির্বাচন অনুষ্ঠানের নামে মাতামাতি করে চলেছেন যে নির্বাচনে কারো সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করেই ১৫৪ জন প্রার্থী ‘নির্বাচিত’ হয়েছেন! আমরা মনে করি, ‘সেঞ্চুরি’ হাঁকানোর মাধ্যমে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় ‘নির্বাচিত’ হওয়ার রেকর্ড করাই শেষ হতে পারে না। এ কথাও বুঝতে হবে যে, এভাবে ‘নির্বাচন’ করতে এবং তার মাধ্যমে সরকার ও সংসদ গঠন করতে চাইলে সংকট বরং অনেক বেশি মারাত্মক হয়ে উঠবে। সে জন্যই প্রধানমন্ত্রীর উচিত সময় একেবারে পেরিয়ে যাওয়ার আগেই নির্বাচনের তফসিল বাতিল করে সবকিছু এমনভাবে পুনরায় নির্ধারণ করা, যাতে সব রাজনৈতিক দল অংশ নিতে পারে। সে নির্বাচন অবশ্যই হতে হবে নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে এবং নির্বাচনকালীন সে সরকারের প্রধানমন্ত্রীর পদে শেখ হাসিনা থাকতে পারবেন না। আমরা আশা করতে চাই, বিশেষ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে দ্রুত তৎপর হবেন এবং ধ্বংসাত্মক পরিণতি থেকে দেশ ও জাতিকে রক্ষা করবেন।
এভাবেই সম্ভাবনাময় এবং গণতন্ত্রের ও জাতীয় স্বার্থে প্রয়োজনীয় একটি নির্বাচনকে ছেলেখেলার বিষয় বানানোর কর্মকা- চালানো হচ্ছে। সরকারি দল নিজেদের ইচ্ছামতো কাটাছেঁড়া করা সংবিধানকে আঁকড়ে ধরায় এবং সে সংবিধানের ভিত্তিতে কথিত সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষার দোহাই দেয়ার ফলেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ‘নির্বাচিত’ হওয়ার ধুম পড়ে গেছে। অন্যদিকে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ ১৮ দলীয় জোট এই নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে। বিরোধী দলগুলো শুধু ঘোষণা দিয়ে বসে থাকেনি, দিনের পর দিন ধরে অবরোধও চালিয়ে যাচ্ছে। জনগণ সর্বান্তকরণে সমর্থন করায় ও অংশ নেয়ায় অবরোধে অচল হয়ে পড়েছে সারা দেশ। প্রশাসন ভেঙ্গে পড়েছে। ঘটনাপ্রবাহে অনেকেরই ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন অবস্থার কথা মনে পড়ছে। অথচ বিরোধী দলের দাবি ও প্রস্তাব মেনে নিলে সহজেই এমন অবস্থা এড়ানো যেতো। দেশে সত্যি উন্নয়নের জোয়ার বইয়ে দিয়ে থাকলে এবং ভোট পাওয়ার ব্যাপারে সামান্য আশা ও সম্ভাবনা থাকলেও সে পথেই পা বাড়াতেন ক্ষমতাসীনরা। অন্যদিকে প্রকৃত পরিস্থিতি তাদের বিপরীতে এবং কল্পনার অনেক বাইরে চলে গেছে বলেই তারা এমনকি জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূত অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকোকে পর্যন্ত খালি হাতে ফিরিয়ে দিয়েছেন। মহাসচিব বান কি মুন এবং মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির আহ্বান ও পরামর্শেও সাড়া দেননি প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী ও তার সঙ্গী-সাথীরা বরং এমন এক নির্বাচন অনুষ্ঠানের নামে মাতামাতি করে চলেছেন যে নির্বাচনে কারো সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করেই ১৫৪ জন প্রার্থী ‘নির্বাচিত’ হয়েছেন! আমরা মনে করি, ‘সেঞ্চুরি’ হাঁকানোর মাধ্যমে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় ‘নির্বাচিত’ হওয়ার রেকর্ড করাই শেষ হতে পারে না। এ কথাও বুঝতে হবে যে, এভাবে ‘নির্বাচন’ করতে এবং তার মাধ্যমে সরকার ও সংসদ গঠন করতে চাইলে সংকট বরং অনেক বেশি মারাত্মক হয়ে উঠবে। সে জন্যই প্রধানমন্ত্রীর উচিত সময় একেবারে পেরিয়ে যাওয়ার আগেই নির্বাচনের তফসিল বাতিল করে সবকিছু এমনভাবে পুনরায় নির্ধারণ করা, যাতে সব রাজনৈতিক দল অংশ নিতে পারে। সে নির্বাচন অবশ্যই হতে হবে নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে এবং নির্বাচনকালীন সে সরকারের প্রধানমন্ত্রীর পদে শেখ হাসিনা থাকতে পারবেন না। আমরা আশা করতে চাই, বিশেষ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে দ্রুত তৎপর হবেন এবং ধ্বংসাত্মক পরিণতি থেকে দেশ ও জাতিকে রক্ষা করবেন।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন