সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৩

এমপি’র মানুষখেকো বাড়ি!


যারা জনতার প্রতিনিধি তারা তো গণআকাক্সক্ষা পূরণের অঙ্গীকার করেই জনগণের কাছে ভোট প্রার্থনা করে থাকেন। কিন্তু জনগণের ভোটে নির্বাচিত হওয়ার পর জনপ্রতিনিধিরা যদি অঙ্গীকার ভঙ্গ করেন এবং ঘোষিত ইশতেহার পাশ কাটিয়ে নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত থাকেন, তাহলে তারা কি জনগণের সাথে ওয়াদা ভঙ্গ করেন না? ওয়াদা ভঙ্গকারী এমন রাজনৈতিক নেতাদের কী বিশেষণে অভিহিত করা যায়? এদেরকে কি আবারও ভোট দিয়ে নির্বাচিত করা যায়? এসব প্রশ্ন এখন জনমনে ব্যাপকভাবে জেগে উঠছে। বিশেষ করে মহাজোট সরকারের মন্ত্রী-এমপিদের হলফনামায় সম্পদের যে বিবরণী প্রকাশ করা হয়েছে তাতে দেশের জনগণ বিস্মিত। একজন জনপ্রতিনিধির সম্পদ বিগত ৫ বছরে কি করে শত গুণ বৃদ্ধি হয়ে যায়? এ তো হলো সম্পদের ঘোষিত বিবরণী, যা ঘোষণা না করলেই নয়। কিন্তু এর বাইরেও যে তারা কত সম্পদ অর্জন করেছেন, সেই বিবরণী হয়তো কোনো এক সময়ে জানা যেতে পারে। হলফনামায় সম্পদের বিবরণী প্রকাশের পর নির্বাচন কমিশনের আচরণ জনমনে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। আওয়ামী লীগের নেতারা এসে চাপ দিলেন, আর নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট থেকে উধাও হয়ে গেল মন্ত্রী-এমপিদের সম্পদের বিবরণ। এতে বিরোধী দলের অভিযোগই সত্য বলে প্রতীয়মান হয় যে, সরকার ও নির্বাচন কমিশন দোসরের মত কাজ করছে। আসলে সাম্প্রতিক সময়ে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের আচরণ থেকে পর্যবেক্ষক মহল একথা বিশ্বাস করতে পারছেন না যে, এই সরকার ও কমিশনের অধীনে কোনো অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে মন্ত্রী-এমপিরা শুধু যে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন তা নয়, বিশালকায় বাড়ি নির্মাণের প্রতিযোগিতায়ও যেন তারা নেমে পড়েছিলেন। এ প্রসঙ্গে সরকারি দলের এমপি শাহরিয়ার আলমের নাম উল্লেখ করা যেতে পারে। রাজশাহী-৬ আসনের এই এমপি বাঘার আড়ানী পৌর এলাকায় আলিশান বাড়ি নির্মাণ করে রীতিমত হৈ চৈ ফেলে দিয়েছেন। শুধু বাড়ি নির্মাণ করেই তিনি ক্ষান্ত থাকেননি, সেই বাড়ি দেখানোর জন্য রাজশাহীর সর্বত্র উন্মুক্ত আমন্ত্রণও জানান। আয়োজন করেন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের। গত বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি শাহরিয়ার আলমের বাড়ি দেখার অনুষ্ঠানে ভিড়ের মধ্যে হুড়োহুড়িতে পদদলিত হয়ে মোসলেম উদ্দিন (৬২) নামে এক মুক্তিযোদ্ধার করুণ মৃত্যু ঘটে। সেখানে আহত হন আরও ১৫ দর্শনার্থী। অনুষ্ঠান থেকে ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় শোয়েব আলী (৫৫) নামে আরও একজন মারা যান বলে পত্রিকান্তরে প্রকাশিত রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়। অনুষ্ঠানে মানুষ মৃত্যুর পর থেকেই স্থানীয়রা অনেকেই মানুষখেকো বাড়ি বলে আখ্যা দিলেও শাহরিয়ার আলমের বাড়ির জৌলুস কমেনি। বরং দিন দিনই বাড়ির সৌন্দর্য বাড়ানো হয়েছে। পৌর এলাকায় বাঁশ-ছনের বেড়া ও ভাঙাচোরা টিন-চালার অসংখ্য বাড়ি-ঘর বিদ্যমান। চিনি কলের আখ ক্রয়কেন্দ্র, রেলস্টেশন, পোস্ট অফিসসহ হাতেগোনা পাকা ইমারতের আড়ানীতে আধুনিক ভবন বলতে কেবলই এমপি শাহরিয়ারের বাসভবনটি সবার দৃষ্টি কাড়ে। এই ভবনটি বিদেশি জিনিসপত্রে সাজানো। কার্পেট ইরানের, মালয়েশিয়ার ঝাড়বাতি, পানির ট্যাপকল সিঙ্গাপুরের, দরজা-জানালার লক ইতালির, গার্ডেন ও প্রাচীরের লাইট ফিটিংস জাপানের। আলিশান এই বাড়ি দেখে জনমনে প্রশ্ন- কত কোটি টাকা খরচ হয়েছে এর নির্মাণে? জনতা যেখানে থাকে বাঁশ-ছন আর ভাঙা টিনের ঘরে, সেখানে জননেতা থাকেন এমন আলিশান ভবনে, যে ভবন আবার মানুষও খায়! এত ব্যবধান দেখে প্রশ্ন জাগে, এমপি কিংবা মন্ত্রী হলেই কি আর টাকা-পয়সার অভাব থাকে না? কিন্তু এতো তারা কোথায় পায়? কথা ছিল মন্ত্রী-এমপিরা প্রতি বছর তাদের অর্থ-সম্পদের হিসাব দেবেন। কিন্তু তা তারা দেননি। ফলে উপলব্ধি করা যায় যে, স্বাভাবিক পথে এত অর্থ-সম্পদ উপার্জন সম্ভব নয়। তাই অর্থ-সম্পদের অস্বাভাবিক উৎসগুলো সম্পর্কে জনগণ জানতে চায়, কিন্তু জনপ্রতিনিধিরা তা জানাতে চান না। আসলে জনগণের আশা-আকাক্সক্ষার সাথে জনপ্রতিনিধিদের আচরণ মিলছে না। সেবার বদলে শোষণেই এখন তারা ব্যস্ত। তারপরও তারা জনপ্রতিনিধি! শোষণের মেয়াদ শেষে আবারও তারা জনপ্রতিনিধি হতে চান। কিন্তু জনগণ তো এমন প্রতিনিধি চায় না। তাই কি এতো ছলাকলা, চাতুর্য ও নির্বাচনী প্রহসন! এমন প্রহসন তো জনগণ কখনো মেনে নেবে না। বিষয়টি শাসকগোষ্ঠী উপলব্ধি করলেই মঙ্গল।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads