মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৩

যে নির্বাচন নির্বাচনই নয়!


গত ২২ ডিসেম্বর সচিবালয়ে কানাডিয়ান হাইকমিশনার হিদার ক্রুডেনের সাথে বৈঠকের পর অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বেশ কিছু বিষয়ে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন। দশম সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা কোনো নির্বাচনই না। ভোটার ছাড়া এ নির্বাচন গ্রহণযোগ্য নয়। অর্থমন্ত্রীর এমন বক্তব্যে প্রশ্ন জাগে-তা হলে কোটি কোটি টাকা খরচ করে, জনগণের জান-মালের নিরাপত্তা বিঘিœত করে, গণতন্ত্রের টুঁটি চেপে অর্থহীন একটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে সরকার এতটা একরোখা কেন? অর্থমন্ত্রী অবশ্য আত্মপক্ষ সমর্থন করতে গিয়ে বলেছেন, সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণে নির্বাচন করতেই হবে।
সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণে ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতেই হবে, এমন বক্তব্যের সাথে দ্বিমত পোষণ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। ২২ ডিসেম্বর এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বলেন, সরকারের সদিচ্ছা থাকলে এখনো সমঝোতা সম্ভব। সমঝোতার মাধ্যমে সবার অংশগ্রহণে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য এমনকি সংবিধানের কোনো সংশোধনী প্রয়োজন হলে তা-ও করা সম্ভব। কারণ সংসদ এখনো বহাল আছে। বিএনপি নেতারা মনে করছেন, পরাজয়ের ভয়ে সরকার বিরোধীদলহীন একপেশে নির্বাচনের ব্যাপারে বদ্ধপরিকর। ‘সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা’, ‘সংলাপ’ ইত্যাদি আসলে তাদের প্রতারণার হাতিয়ার মাত্র। পাঁচটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে শোচনীয় পরাজয়, জনমত জরিপের ফলাফল এবং গোপন প্রতিবেদনের হিসাব সরকারের মধ্যে সৃষ্টি করে এক ধরনের পরাজয়-আতঙ্ক। এ কারণে দমন-পীড়নের পাশাপাশি বিরোধী জোটকে নির্বাচনের বাইরে রাখার জন্য গ্রহণ করে একের পর এক অপকৌশল। যার পরিণতি লক্ষ্য করা যায় ভোট ছাড়াই ১৫৪ আসনে বিজয়ের বার্তা এবং সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে এইচএম এরশাদের আটক-জীবন। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, তাকে দেশত্যাগে বাধ্য করা হতে পারে। এসব কারণে ৫ জানুয়ারির নির্বাচন যে একটি প্রহসন ও গণতন্ত্র হত্যার নির্বাচন তা জনগণের কাছে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
সরকারের পরিকল্পিত ৫ জানুয়ারির দশম সংসদ নির্বাচন শুধু যে দেশের জনগণের কাছেই একটি প্রহসন বলে মনে হচ্ছে তা কিন্তু নয়, বিদেশের পর্যবেক্ষকদের কাছেও এই নির্বাচনের কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই। ফলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পর, কমনওয়েলথ এবং যুক্তরাষ্ট্রও এই নির্বাচনে তাদের কোনো পর্যবেক্ষক না পাঠানোর কথা জানিয়ে দিয়েছে। এসব দৃশ্য অবলোকন করেই হয়তো আমাদের অর্থমন্ত্রী বলতে বাধ্য হয়েছেন যে, এটা কোনো নির্বাচনই নয়। এটা যদি কোনো নির্বাচনই না হয়ে থাকে, তা হলে এই নির্বাচন সম্পন্ন করার ব্যাপারে আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নিয়ে এত তোড়জোর চালানো হচ্ছে কেন? নির্বাচনকে সামনে রেখে এখন দেশজুড়ে কেন চালানো হচ্ছে গ্রেফতার অভিযান? প্রতিদিন গ্রেফতার হচ্ছে শত শত মানুষ। এদের বেশিরভাগই ১৮ দলীয় জোটের নেতা-কর্মী। গ্রেফতার এড়াতে বিরোধীদলের শীর্ষ পর্যায় থেকে মাঠ পর্যায়ের নেতারা এখন আর নিজ বাড়িতে থাকতে পারছেন না। অনেকের মোবাইল ফোনও রয়েছে বন্ধ। যাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে তাদের জড়ানো হচ্ছে জটিল মামলায়। পত্রিকার প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, নেতা-কর্মীদের বাড়িতে না পেয়ে তাদের বাড়ি-ঘরে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটছে। বগুড়া, দিনাজপুর, জয়পুরহাট, নাটোর, সাতক্ষীরা, লক্ষ্মীপুর, চট্টগ্রাম, সিলেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ অন্তত ৩৫ জেলায় এখন ব্যাপক ধরপাকড় চলছে। দেশজুড়ে এমন গ্রেফতার আতঙ্ক সৃষ্টির মাধ্যমে সরকার বিরোধীদলের নেতা-কর্মীদের নিষ্ক্রিয় করে রাখতে চাইছে। এর লক্ষ্য সাজানো নির্বাচনকে ইচ্ছেমত নির্বিঘেœ সম্পন্ন করা। যে নির্বাচন কোনো নির্বাচনই নয়, তা নিয়ে বিরোধী দলকে অবদমন করতে চাইলেই কি তারা নীরব হয়ে যাবে? অথচ ইতিহাস বলে, নির্যাতন-নিপীড়নের মাত্রা যত বাড়ে জনমনে ক্ষোভ-বিক্ষোভও ততই বৃদ্ধি পায়। ফলে সরকারের কৌশল সফলতা পায় না বরং তাদের পরাজয়ই ত্বরান্বিত হয়। তাই সরকারের শুভাকাক্সক্ষী হিসেবে আমরা বলতে চাই, যে নির্বাচন দেশে-বিদেশে স্বীকৃতি পাবে না, সেই নির্বাচন নিয়ে জবরদস্তিমূলক আচরণ বন্ধ করে বরং সবার জন্য গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচনের ব্যবস্থা করাই সরকারের জন্য লাভজনক হবে। এতে সহিংস ও সংক্ষুব্ধ পরিবেশ থেকে মুক্তি পাবে জনগণ, গণতন্ত্র ও মুক্ত হবে অনাকাক্সিক্ষত শংকা থেকে। তবে সরকারের মধ্যে তেমন বোধোদয় ঘটে কি না সেটাই এখন দেখার বিষয়।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads