সোমবার, ২ ডিসেম্বর, ২০১৩

মিয়ানমার ও ফিলিপাইনের পর অ্যাঙ্গোলায়


একপেশে এই বিশ্ব ব্যবস্থায় ন্যায় ও সত্যের দুর্ভিক্ষ চলছে। যার জোর বেশি, যার প্রোপাগান্ডার শক্তি ব্যাপক তার ইচ্ছাই সত্য বলে মেনে নিচ্ছে বর্তমান সভ্যতা। প্রকৃত সত্য কি, ন্যায় কি তা জানার মতো সাহস ও নৈতিক শক্তি যেন হারিয়ে ফেলেছে বর্তমান সময়ের মানুষ। ফলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির এই যুগেও আমাদের বসবাস আলো ঝলমলে এক জাহেলিয়াতে। নইলে সাম্প্রদায়িকতা ও সন্ত্রাসের মতো ঘটনায় শুধু মুসলমানদের অভিযুক্ত করা হবে কেন? আর কেউ কি সন্ত্রাস করছে না? সাম্প্রদায়িক হিংসার অনল জ্বলছে না? ন্যায় ও সত্যবিমুখ বর্তমান সভ্যতার চ্যাম্পিয়নদের কাছে এ প্রশ্নের কোনো জবাব নেই। অথচ ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে, সত্য ও ন্যায়ের বিকাশ না ঘটলে কোনো সমাজ ও সভ্যতায় কাক্সিক্ষত শান্তি আসতে পারে না। এই কারণেই হয়তো বর্তমান বিশ্ব ব্যবস্থার কুশীলবরা নানাভাবে শান্তির ললিতবাণী উচ্চারণের পরও বিশ্বে ক্ষোভ ও হিংসার মাত্রা বেড়েই চলছে। তাই বিশ্বের বিবেকবান মানুষকে এখন ন্যায় ও সত্যের পক্ষে মেরুদ- সোজা করে দাঁড়াতে হবে। এটাই সময়ের দাবি।
বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় নানাভাবে মুসলমানরা নির্যাতন ও নিপীড়নের শিকার হচ্ছে। ফলে ‘মুসলিম’ ও ‘মজলুম’ শব্দ এখন সমার্থক হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত ২৪ নবেম্বর অ্যাঙ্গোলায় পবিত্র ধর্ম ইসলামকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। মুসলমানদের মসজিদ ভেঙে ফেলা হয়েছে। এমন ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক মুসলিম সংস্থাসমূহ। এর আগে মিয়ানমার ও ফিলিপাইনে মুসলিম সংখ্যালঘুদের ওপর নজিরবিহীন নিষ্ঠুর আচরণ করা হয়েছে। কাশ্মীর ও ফিলিস্তিনে দীর্ঘদিন ধরে চলছে মুসলমানদের ওপর জুলুম-নির্যাতন। এমন কি উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত সুইডেনেও মুসলমানদের মসজিদে হামলার ঘটনা ঘটেছে। সুইডেনের স্টকহোমের দক্ষিণে অবস্থিত ফিতজা মসজিদে ভাঙচুরের পর ভেতরে শূকরের মল নিক্ষেপ করা হয়েছে। বর্তমান সভ্যতায় এসব ঘটনার প্রতিকার না হওয়ায় মুসলমানরা একদিকে জুলুম-নির্যাতনের শিকার হচ্ছে, অপরদিকে তাদের কোণঠাসা করার জন্য চলছে অপপ্রচার ও কৌশলী প্রোপাগান্ডা। এসব অপকর্ম ও অপপ্রচারের বিরুদ্ধে মুসলমানদের শুধু নিন্দা জানালে চলবে না, এর সঙ্গত ও জ্ঞানদীপ্ত জবাব দানের যোগ্যতাও অর্জন করতে হবে।
অ্যাঙ্গোলায় মুসলমানদের মৌলিক অধিকার ক্ষুণ হওয়ার পর অ্যাঙ্গোলার কর্তৃপক্ষ অবশ্য দেশটিতে ইসলাম ধর্ম নিষিদ্ধের খবর অস্বীকার করে। কিন্তু এতে আশ্বস্ত হয়নি ওআইসিসহ আন্তর্জাতিক মুসলিম অভিভাবক সংস্থাসমূহ। ওআইসি ইতোমধ্যে অ্যাঙ্গোলার মুসলমানদের ধর্মীয় অধিকার হরণ, মসজিদ ধ্বংস ও মুসলিম নির্যাতনের খবরে উদ্বেগ ও হতাশা প্রকাশ করেছে। পাশাপাশি দেশটিতে মুসলমানদের প্রকৃত অবস্থা জানার জন্য একটি তদন্তকারী দল পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে। উল্লেখ্য যে, গত রোববার আফ্রিকান এবং অ্যাঙ্গোলার সংবাদসংস্থা ও সংবাদপত্রসমূহে অ্যাঙ্গোলার সংস্কৃতিমন্ত্রী রোসাক্রুজের একটি বক্তব্য উদ্ধৃতি করে দেশটিতে ইসলাম ধর্ম নিষিদ্ধের খবরটি প্রকাশিত হয়। রোসাক্রুজ সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, “ইসলাম ধর্মকে বৈধতা দেয়ার যে প্রক্রিয়া বিচার ও মানবাধিকার মন্ত্রণালয় শুরু করেছিল তা অনুমোদিত হয়নি। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত মসজিদসমূহ বন্ধ থাকবে।” এদিকে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর মুসলিম স্কলারস (আইইউএমএস) এ ধরনের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করার জন্য অ্যাঙ্গোলার সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। পাশাপাশি এ ঘটনার নিন্দা জানানোর জন্য জাতিসংঘ ও আফ্রিকান ইউনিয়নের প্রতি দাবি জানানো হয়েছে। মুসলিম কাউন্সিল অব অ্যাঙ্গোলার প্রেসিডেন্ট ডেভিড জ্যা এএফপি’র সাথে এক সাক্ষাৎকারে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, অ্যাঙ্গোলার ৬০টি মসজিদের সবগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে এবং গত দু’বছরে ৮টি মসজিদ ধ্বংস করা হয়েছে। এ মুসলিম নেতা আরো জানান, জনসম্মুখে মুসলিম নারীদের ওড়না পরতে দেয়া হয় না। অ্যাঙ্গোলার আইনে ইসলামী প্রতিষ্ঠানসমূহের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। দীর্ঘদিনের ধর্মীয় বৈষম্যের ধারাবাহিকতায় এসব করা হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, যে কেউ ইসলাম ধর্মের অনুসরণ করতে চাইবে তাকেই অ্যাঙ্গোলার আইনের বিরুদ্ধাচারী হওয়ার হুমকিতে পড়তে হবে। এই হলো বর্তমান বিশ্ব সভ্যতায় মুসলমানদের মানবাধিকার লাভের চিত্র। এরপরও মুসলমানদের সন্ত্রাসী ও সাম্প্রদায়িক হিসেবে চিহ্নিত করার প্রচারণা অব্যাহত রয়েছে। এটাই কি বর্তমান সভ্যতার সত্য ও ন্যায়? এরপরও কি আমাদের ভাবতে হবে যে, আমরা এক উন্নত সভ্যতার বাতাবরণে বসবাস করছি? এসব প্রশ্ন বর্তমান সভ্যতা ও বিশ্বব্যবস্থার ধারক-বাহকদের মনে কোনো বোধোদয় ঘটাতে সক্ষম হয় কিনা সেটাই এখন দেখার বিষয়।
কিছুদিন আগে প্রায় সকল পত্র-পত্রিকায় এই মর্মে একটি খবর প্রকাশিত হয়েছে যে, ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ যুবলীগ, ছাত্রলীগের এক হাজার কর্মীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে নাশকতা সৃষ্টির জন্য মাঠে নামিয়েছে। তারা বিরোধীদলীয় বিক্ষোভকারীদের সাথে মিশে গিয়ে নাশকতামূলক কাজকর্ম পরিচালনা করছে। এই ভয়াবহ খবরটির সত্যতা যাচাই করা মিডিয়ার কাজ ছিল। কিন্তু তাদের বেশির ভাগ সেটা না করে সন্দেহের বশবর্তী হয়ে পক্ষাবলম্বন করে সরকারের সাথে সুর মিলিয়ে বিরোধী দলকে এর জন্য দোষারোপ করছে। সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, হত্যা, গুম, অগ্নিসংযোগ ভাংচুর অত্যন্ত নিন্দনীয় কাজ। সরকার এই নিন্দনীয় কাজকে উৎসাহিত করছেন এবং তার দোষ চাপাচ্ছেন বিরোধী দলের উপর। মই বেয়ে, গ্রীল কেটে, দরজা ভেঙে, অফিস তছনছ ও লুটপাট করে বিএনপির সহকারী মহাসচিব জনাব রিজভী আহমেদকে গভীর রাতে পুলিশ যেভাবে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের দোতলা থেকে গ্রেফতার করেছে তার নজির ইতিহাসে নেই। এই অবস্থা দেখেও কি আমরা ষোল কোটি মানুষ নাশকতার সরকারি ভার্সনে বিশ্বাস করবো? আমরা তা বিশ্বাস করতে পারি না। আবার ‘হুকুমের আসামী’ হিসেবে যদি কাউকে গ্রেফতার করতে হয়ে তাহলে আমার বিশ্বাস সর্বপ্রথম আওয়ামী লীগ প্রধান ও তার শীর্ষ নেতৃবৃন্দকেই গ্রেফতার করা বাঞ্ছনীয়। তারা লগি- বৈঠার আন্দোলন করেছেন, প্রকাশ্য দিবালোকে পিটিয়ে মানুষ হত্যা করেছেন। যুবলীগের নানক, আযম, পঙ্কজ প্রমুখ শেরাটন হোটেলের সামনে গাড়িতে আগুন দিয়ে ১৩ জন লোককে জীবন্ত পুড়িয়ে মেরেছেন। আওয়ামী লীগ নেতাদেরই এ ব্যাপারে স্বীকারোক্তি রয়েছে। তারা হরতাল অবরোধে যে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছেন তা ইতিহাসে একটি কলঙ্কিত অধ্যায় সৃষ্টি করেছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে তাদেরকে এখন হুকুমের আসামী করবে কে? আমি মনে করি তারা যদি আইনের শাসনে বিশ্বাস করেন, সত্যনিষ্ঠ হন তাহলে আদালতে গিয়ে তাদের দোষ স্বীকার করে আত্মসমর্পণ করা উচিত। তারা হচ্ছেন সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, হত্যা, গুম, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগের গুরু ওস্তাদ। এখন যারা করছেন বা করার চেষ্টা করছেন তারা তাদের কাছ থেকেই তা শিখেছেন। আগের অপরাধের বিচার না করে পরের অপরাধের বিচার করতে গেলে এবং অপরাধীরা বিচারকের আসনে বসলে বিচার যেমন কলুষিত হয় তেমনি নৈরাজ্যও বাড়ে আমরা এর কোনটিই চাই না।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads