রবিবার, ৩০ জুন, ২০১৩

সরকারের অবস্থান কেন জনমতের বিরুদ্ধে


বর্তমান নবম জাতীয় সংসদের আরো একটি অধিবেশন গত পরশু সমাপ্ত হয়েছে। দেশের সাধারণ মানুষের প্রত্যাশিত নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার অধীনে আগামী সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার জনদাবির প্রশ্নটি অমীমাংসিতই রয়ে গেল। সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে এ সম্পর্কে একটি সমঝোতা হবে চলতি অধিবেশনেÑ দেশের সাধারণ মানুষ এমনটিই কামনা করেছিল। কিন্তু তা আর হলো না। তা ছাড়া ভবিষ্যতে একটা সমঝোতা হবে, এমন আশাবাদী হওয়ার কোনো আভাস-ইঙ্গিত দেশবাসী পাচ্ছে না। কারণ এখনো সরকার ও বিরোধী দল আগের পরস্পর বিপরীত মেরুর অবস্থানেই থেকে গেছে বলে মনে হয়। গত পরশু সমাপ্ত সংসদ অধিবেশনে সংসদ নেত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়ার ভাষণ থেকে এমন আভাসটিই পাওয়া গেল।
জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া তার ভাষণে বলেন, ‘নির্বাচন সময়ের নির্দলীয় সরকার ইস্যুর সমাধান ক্ষমতাসীন সরকারকেই করতে হবে। আমরা কোনো দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবো না। বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে দলীয় সরকার নির্বাচনের সময় লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের নিশ্চয়তা দিতে পারে না। তবে আমরা মনে করিÑ সঙ্ঘাত নয়, সমঝোতার মাধ্যমে এ বিষয়ে একটা সমাধানে পৌঁছা যেতে পারে। এ জন্য প্রয়োজন সংলাপ আর সরকারের সদিচ্ছা। সরকারি দলের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে উত্তেজনাকর বক্তব্য দিয়ে বলা হয়েছে, তারা ক্ষমতায় থেকেই নির্বাচন করবেন। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমতায় রেখেই নির্বাচন হবে। এসব যুক্তিহীন ও গায়ের জোরের কথায় সমস্যার কোনো সমাধান হবে না। নির্বাচন সময়ের নির্দলীয় সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ সরকারকেই নিতে হবে। আশা করব, দেশের স্বার্থে এবং গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা রক্ষার স্বার্থে সরকার নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের আয়োজন করবে; নইলে তা করতে সরকার বাধ্য হবে।’
অপর দিকে বিরোধী দলের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবির জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত পরশু সংসদে বলেছেন, ‘বিশ্বের অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশে যেভাবে নির্বাচন হয় বাংলাদেশেও সেভাবে নির্বাচন হবে। মানুষ বিরোধী দলকে যদি ভোট দেয়, তারা ক্ষমতায় আসবে। গণতন্ত্রের পথে আমাদের অন্তত একবার পা বাড়াতে হবে। গণতান্ত্রিক বিধিব্যবস্থা না থাকলে অর্থনীতির চাকা এগিয়ে যাবে না। জ্বালাও-পোড়াও হলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয় না, মানুষের ওপর আস্থা ও বিশ্বাস রাখতে হবে। বিরোধী দল কেন এই আস্থা রাখতে পারছে না?’
প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য নিয়ে নানা বিতর্ক তোলার অবকাশ আছে। এসব বিতর্ক সাড়ে চার বছর ধরে মানুষ শুনে আসছে। আর বিরোধী দল কেন আজ সরকারি দলের ওপর আস্থা রাখতে পারছে না, সেই জবাব সরকারি দলেরও ভালো করেই জানা। তবে তা মুখে আনতে চান না তারা। তবে চার দিকে সাধারণ মানুষ ও দেশ-বিদেশের বিভিন্ন মহলে এসব নিয়ে বেশুমার আলোচনা হয়। সরকার মনে হয় এখনো তা উপলব্ধি করতে পারেনি। পারেনি বলেই আমরা প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন করতে শুনিÑ কেন সরকারি দলের মানুষের ওপর বিরোধী দল আস্থা রাখতে পারছে না?
সে যা-ই হোক, নির্বাচন সময়ের নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার আজ জনদাবিতে পরিণত। একটি জাতীয় দৈনিকের জরিপ মতে, দেশের ৯০ শতাংশ মানুষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফিরে পেতে চায়। আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক ডাকসু ভিপি সুলতান মনসুরও বলেছেন, প্রকৃত আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ৯০ শতাংশও চায় নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার। তা না হলে দলের পরীক্ষিত নেতারা দলের মনোনয়ন পাবেন না বলেই তারা মনে করেন। আওয়ামী লীগকে মনে রাখতে হবে, এই জনদাবি মানতে যত দেরি হবে দলের জনপ্রিয়তা ততই কমবে। এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন জরিপে উল্লেখ করা হয়েছে, সরকারি দলের আশঙ্কাজনক জনপ্রিয়তা কমে যাওয়ার কথা। সরকারি দলের নেতারা এসব জরিপকে সাজানো বলে গালমন্দ করলেও চার সিটি করপোরেশন নির্বাচন তা প্রমাণ করেছে।
আমরা মনে করি, বিরোধী দলের নেত্রীর সংসদে দেয়া বক্তব্য অনুযায়ী এ সমস্যা সমাধানের একমাত্র সুষ্ঠু উপায় হচ্ছেÑ সংলাপ ও সরকারের সদিচ্ছা। এ উপলব্ধি নিয়ে সরকারপক্ষ এ ক্ষেত্রে ইতিবাচক পদক্ষেপ নেবেÑ সেই কামনা আমাদের।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads